১৬ বছর বয়স | পর্ব – ১৪

20 Min Read

শাওন আরো কাছে আসতেই আমি চোখ বন্ধ করে শাওনের বাহু খামছে ধরে এক শ্বাসে বলে ফেললাম,”কারন আমি মনে করেছিলাম আপনি আমার শাড়ি খুলেছেন।”
“What?” বলেই শাওন আমার ঘাড়ের নিচ থেকে হাত টা সরিয়ে নিল। আর আমি সাথে সাথে সোফার হেন্ডেলে বারি খেলাম।
শাওন উঠে দাড়িয়ে আমার এক হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিল। আমি এক হাত দিয়ে মাথা ডলতে ডলতে বললাম,”কি করলেন এটা আপনি! আপনার কারনে টাক গুতো খেতে খেতে জীবন টা শেষ হয়ে গেল আমার!”
কথা গুলো বলতে বলতে শাওনের দিকে তাকালাম।
“তাও তুমি গাধা আছ আর গাধাই থাকবে।” শাওন বলে উঠল।
আমি মুখ হা করে বিড়বিড় করে বললাম,”গরিলাটা নিজেকে অনেক চালাক মনে করে।”
“কি?” শাওন ভ্রুকুচকে তাকালো।
আমি বললাম,”যাই হোক। আপনি সেরকমটা কিছুই করেন নি যেমনটা আমি ভেবেছিলাম তাই আপনাকে ক্ষমা করে দিলাম।”
শাওন এক পা এগিয়ে আসতেই আমি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বললাম,”আবার কি!”
শাওন দাতে দাত চেপে বলল,”কে ক্ষমা চেয়েছে তোমার কাছে?”
“আপনি না ‘সরি’ বলেছিলেন সকালে?!”
শাওন কিছু বলল না।
আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম,”এখন সত্যিই ঘুম এসেছে। আপনি আর কিছু বলবেন?”
শাওন গোমড়া মুখ করে তাকিয়ে রইল। তাই আমি শুয়ে পরতে পরতে বললাম,”তাহলে যাবার আগে কিচেনের লাইটটা অফ করে দিয়েন।”
শাওন লাইট অফ না করেই নিজের রুমে চলে গেল। তাই আমি নিজেই কষ্ট করে গিয়ে লাইটটা অফ করে এসে শুয়ে পরলাম।
খুব সকালে শাওন আমাকে এক হেচকা টান দিয়ে ঘুম থেকে উঠিয়ে বসিয়ে দিল। আমি বিরক্তির সাথে চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই বলতে লাগলাম,”এত রাতে আবার কি জন্য টানাটানি করছেন!”
“রাত না, সকাল এখন। আমি থাকতে থাকতে খাবার খেয়ে ঔষধ খাও। আমি কোনো রকম বাড়তি ঝামেলা চাচ্ছিনা তোমার জন্য।”
আমি চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই আছি এখনো। কোনো কথা কানে লাগছে না আমার।
শাওন রেগে আমার এক বাহু চেপে ধরতেই আমি চোখ খুলে বললাম,”উফফ…নেন সকাল সকাল ঘুমের সাথে সাথে আমার হাতটাও খেয়ে ফেলুন।”
শাওনের দিকে ভ্রুকুচকে তাকালাম। তারপর বললাম, “ছাড়ুন, উঠছি।”
ফ্রেস হয়ে একবারে গোসল সেরে টেবিলে এসে বসলাম। আবার সেই বিশ্ব বিখ্যাত সবজি। অর্থাৎ আবার কুমড়ো ভাজি। বাহ! আমি ত জানতাম যে কুমড়ো খেলে মানুষের চোখের জ্যোতি বাড়ে, এনার ত এত জ্যোতি বেড়েছে যে উনি কুমড়ো ছাড়া মনে হয় আর কোনো সবজিই চোখে দেখেন না!
একটা নিঃশ্বাস ফেলে খেতে আরম্ভ করলাম। শাওন আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে। কারন আমি পানি দিয়ে গিলে গিলে খাচ্ছি। এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই কারন আমি যে গিলে হলেও খাচ্ছি এটাই ওনার জন্য সৌভাগ্য।
শেষ করে ঔষধ টাও পানি দিয়ে গিলে নিলাম। ওই ছাতার ডাক্তারটা মনে হয় বলেছিল ঔষধ খাওয়াতেই থাকবেন যতদিন না মেয়েটা গলায় ঔষধ আটকে মরে।
শাওন খাওয়া শেষ করে নিজের কোট পরছিল এমন সময় সুমনা ফোন দিল।
-হ্যালো বল।
-শোন আজও মিলাকে নিয়ে আসিস ত।
শাওন আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল,ওকে কিসের জন্য আনব?
আমি বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইলাম।
“আনতে বলেছি তাই! অনেক দরকার আছে। তাই যা বলছি কর।”
শাওন ফোন কান থেকে নামিয়ে আমার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে বলল,”চলো আমার সাথে।”
অফিসে পৌছাতেই শাওনের কেবিনে সুমনাকে পাওয়া গেল। আমাকে দেখেই হাসিমুখে বলল,”যাক নিয়ে এসেছে তাহলে। আজ আমার তেমন কোনো কাজ নেই তাই আজ আমরা গল্প করব।” আমি এক গাল হেসে সুমনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন নিজের কোটটা ওর চেয়ারের পিছনে রেখে চেয়ারে বসতে বসতে বলল,”যত যা করার এই কেবিনের বাহিরে গিয়ে কর।”
সুমনা শাওনের দিকে তাকিয়ে হালকা মুখ বাকিয়ে বলল,”হ্যা যাচ্ছি। তোর সামনে গল্প করলে গল্প আর গল্প থাকেনা। সেটা মিশরের মমি হয়ে যায়। চলো মিলা।”
আমরা বেরিয়ে এলাম। প্রথমেই শাওনের এই ফ্লোরের সবার সাথে সুমনা আমার পরিচয় করিয়ে দিল। তার মধ্যে অনেক জন টাসকি খেল যে শাওন বিয়ে করেছে।
সবার কাজ ঘুরে ঘুরে দেখলাম। কত সুন্দর করে এরা ঘর বানিয়ে ফেলে। সুমনা এই ফ্লোরের নিচে কাজ করে। ওর ফ্লোর থেকেও ঘুরে আসলাম। অনেক দিন পর আজ অনেক ভাল লাগছে। এত দিন পোলট্রি মুরগীর মত লাগছিল।
দুপুরে ৩ জন একসাথে শাওনের কেবিনে খেতে বসলাম।
সুমনা বলল,”বাসায় বোরিং লাগে না?”
আমি বললাম,”ত লাগে না আবার!”
সুমনা একটু দুঃখ প্রকাশ করে বলল,”লাগার ই কথা। কি করো তাইলে সারাদিন! টিভি?”
আমি শাওনের দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বললাম,”তা আর দেখব কিভাবে।”
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের প্লেটে মনোযোগ দিল।
সুমনা বলল,”তাহলে গ্রামে কি করতা সারাদিন তাই বলো!”
আমি খুশিতে বলে উঠলাম,”সকালে উঠে সব রান্না শেষ করে স্কুল যাওয়া,এসে ফ্রেস হয়ে বকুলের সাথে ঘুরতে বের হওয়া, খেলা করা, গাছে উঠে বসে থাকা, মাঝে মাঝে গাছ থেকে ফল চুরি করা, পুকুরে গোসল করা, বিকালে মাঠে ক্রিকেট খেলা দেখতে যাওয়া আরো কত কি!”
আমি উৎসুকভাব নিয়ে কথাগুলো বলতে বলতে সুমনার দিকে তাকালাম। দেখলাম যে ও বাংলার পাঁচের মত মুখ করে আছে।
আমি চিন্তিত হয়ে বললাম,”কি হলো?”
সুমনা বলল,”এগুলাই?”
শাওন সুমনার দিকে একবার আর আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিল।
সুমনা আমার দিকে ছোটো ছোটো চোখ করে তাকিয়ে বলল,”তোমার বয়ফ্রেন্ড ছিল না?”
শাওন খাওয়া থামিয়ে সুমনার দিকে তাকালো।
আমি কপাল কুচকে বললাম,”ছেলে বন্ধু? না ছিল না।”
শাওন নিজের খাবার চামচে উঠতে উঠাতে বলল, “গাধা।”
আমি ভ্রুকুচকে শাওনের দিকে তাকালাম।
সুমনার বাংলার দশের মত মুখ করে আমার দিকে বলল,”বয় ফ্রেন্ড মানে লাভার। কিসের কি ছেলে বন্ধু?”
আমি বললাম,”ওওওও… না।”
“এজন্যই এই অবস্থা” বলে ম্লান হাসল সুমনা।
শাওনের খাওয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় ও নিজের ফাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল।
আমি না বুঝতে পেরে বললাম,”এই অবস্থা মানে!”
সুমনা কিছু বলার আগেই শাওন সুমনাকে বলল,”চুপচাপ খা তারপর যা। এখানে আমাকে বিরক্ত করিস না।”
সুমনা শাওনের দিকে তাকিয়ে একটু দুঃখপ্রকাশ করে বলল,”আহারে সত্যিই তোর জন্য কষ্ট হচ্ছে এখন।”
শাওন ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে সুমনার দিকে তাকালো আর বলল,”মানে!”
সুমনা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ক্লান্ত ভাবে বলল,”সত্যিই, কি আর বলব!”
পরোক্ষনেই আবার আমার দিকে তাকিয়ে জ্বলজ্বল চোখে বলে উঠল,”সমস্যা নেই আমি তোমাকে শিখাব।”
আমি প্রশ্নসূচক চোখে সুমনার দিকে তাকালাম।
শাওনও সুমনার দিকে তাকালো আর বলল,”তুই শিখাবি মানে!”
শাওনের কথায় কান না দিয়ে সুমনা বলল,”তুমি মুভি টুভি দেখো না?”
আমি না সূচক মাথা নাড়লাম। শাওন সুমনার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে। কারন সুমনার কথাবার্তা সুবিধার লাগছে না।
সুমনা একটা উজ্জ্বল হাসি দিয়ে আমাকে বলল,”সমস্যা নেই এখন থেকে দেখবা। অনেক জোস জোস মুভি আছে।”
শাওন আবার নিজের ফাইলের দিকে মনোযোগ দিল।
সুমনা বলে যেতে লাগল,”সবগুলো মুভিই আমি তোমাকে দেখাব। তার মধ্যে আজ আমি আর তুমি যেটা দেখব সেটা হলো ‘ফিফটি শেডস অব গ্রে’।”
শাওন থমকে গিয়ে সুমনার দিকে তাকালো।
আমি সুমনার দিকে তাকিয়ে অল্প হেসে বললাম, “আচ্ছা।”
শাওন আমাকে এক ধমক দিয়ে বলল,”Shut up গাধা।”
আমি চমকে উঠলাম। শাওন সুমনার দিকে রেগে তাকিয়ে বলল,”এসব কিছু দেখবে না ও। আর তুইও এখন চুপচাপ থাকবি। আর একটা সাউন্ড করবি না।”
আমি আর সুমনা দুইজনই শাওনের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইলাম। আমি এজন্যই ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছি কারন শুধু শুধু ধমকটা কেন দিল বুঝলাম না। আর সুমনা কেন তাকিয়ে আছে জানিনা।
সুমনা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”মিলা, অনেক ভাল একটা মুভি ত তাই দেখতে দিবেনা শাওন।”
শাওন ফাইল বন্ধ করে রেগে সুমনার দিকে তাকিয়ে বলল,”এগুলো বলে ওকে উসকে লাভ হবেনা। ও এসব মুভি দেখবে না।”
সুমনা চোখ পাকিয়ে বলল,”কেন? দেখবে না কেন শুনি? ওর জানা লাগবে না? অফিসে সবার মুখে gossip চলছে যে গত রাতে কি হয়েছে?”
বলেই সুমনা ফিক করে হেসে দিয়ে আবার বলল,”এখন ত সত্যি সত্যিই কিছু হওয়া উচিত, তাইনা?”
সুমনা মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। আমি আগা মাথা না বুঝে তাকিয়ে রইলাম সুমনার দিকে।
শাওন আরো একগুন রেগে বলল,”সেটা আমি বুঝে নিব।”
সুমনা বলল,”তোর বুঝতে হবে না। আমি আছি কি করতে!”
শাওন যতই রেগে আগুন হচ্ছে সুমনাও ততই ঘি ঢেলে যাচ্ছে।
“তোকে বললাম না আমি চুপ থাকতে।” শাওন বলল।
সুমনা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”চলো মিলা যাই এখানে থেকে আর লাভ নাই।”
“ও কোথাও যাবেনা।” শাওন সুমনার দিকে তাকিয়ে বলল।
“কেন যাবেনা?” সুমনা বলল। তাই আমিও বলে উঠলাম, “কেন যাব না?
শাওন কড়া চোখে তাকিয়ে বলল,”কারন আমি বলেছি তাই। তুমি যেতে পারবে না।”
আমিও রেগে বলে উঠলাম,”আমি যাবও আর মুভিটাও দেখব।”
সুমনা আমার এই কথা শুনে হাসিসহ জ্বলজ্বল চোখে আমার দিকে তাকালো। কিন্তু শাওন রাগে জ্বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি মনে মনে বললাম,”ওনার এত সমস্যা কেন! কি আছে এই 50 Shades of Grey মুভিতে!”
খাওয়া শেষ করে সুমনা একাই চলে গেল। আমাকে শাওন যেতেই দিল না। তাই মুখ গোমড়া করে আমি শাওনের সামনের চেয়ারে বসে রইলাম। শাওনের তাতে কিছু যায় আসে না। সে তার কাজে ব্যস্ত। আমি উঠে দাঁড়াতেই শাওন আমার দিকে না তাকিয়েই বলল,”এক পা ও বাহিরে গেলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।”
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে কাচের বড় দেয়ালের সামনে গিয়ে বসলাম। হালকা রোদ এসে পরছে নাক মুখে অনেক ভাল লাগছে। শাওন আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের কাজ করতে লাগল।
আমার চোখে ঘুম ঘুম ভাব চলে এলো। তাই চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে শুয়ে পরলাম।
অনেকক্ষন ঘুমিয়ে তারপর চোখ খুললাম। তারপর মাথা তুলে সামনের দিকে তাকালাম। ওয়াও! সন্ধ্যাকালীন শহরের দৃশ্য কতই না অসম্ভব সুন্দর। অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম। এক পর্যায়ে দেখা শেষ করে মুখ ঘুরিয়ে শাওনের টেবিলের দিকে তাকালাম। উনি নেই? গেলেন কোথায়? যেখানে যাক আমার কি? আমি চেয়ারটা টেনে জায়গা মত রাখলাম। তখন আমার চোখ গিয়ে পরল শাওনের টেবিলের উপর। ছোট ছোট ছবির মত আঁকা। এগুলা আবার কি? আমি হাতে নিলাম ফাইলটা
ইংলিশ এ হেয়ারস্টাইল লেখা আর সেটার অনেক গুলো ডিজাইন। তবে একটা ছবি দেখে আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইলাম। এটাতেও ইংলিশে হেয়ারস্টাইল লিখা আর সেটার প্রথম অক্ষর অর্থাৎ বড় হাতের এইচ(H) এর মধ্যেখানের দাগে খোলা চুলে একটা মেয়ে বসে আছে। আর তার গা টা সে সেই এইচ এর উপরের অংশে হেলিয়ে রেখেছে।
এছাড়াও আরো কতগুলো আঁকা আছে। কিন্তু কি এগুলো!
সুমনা দরজা ঠেলে ঢুকল। আমি তাকালাম। সুমনা বলল,”কি দেখছ ওটাতে?”
আমি বললাম,”জানিনা, কি এগুলো?”
সুমনা এগিয়ে এসে দেখে বলল,”ও এগুলো! এগুলোকে লগো বলে। বিভিন্ন কোম্পানির অফিসিয়াল কার্ড আর সাইনবোর্ডে যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। আমাদের কাজের মধ্যে লগো ডিজাইনও আছে। এটা হয়ত কোনো পার্লারের জন্য।”
আমি ফাইলের দিকে তাকিয়ে বললাম,”ওওওও….”
সুমনা সুন্দর একটা হাসি দিল। তারপর বলল,”শাওন কই! ওকে ত দেখছি না!”
“আমি ত জানি না। আমি ঘুমাচ্ছিলাম।” আমি বললাম।
সুমনা বলল,”যেখানেই হোক আছে। এখনি আসবে কারন একটু পরেই বাসা যেতে হবে।”
বলতে বলতেই শাওন দরজা ঠেলে ঢুকল।
“কই ছিলি!” সুমনা বলল।
শাওন বলল,”ছাদে, তোরা আবার কি পাকাচ্ছিস?”
সুমনা চোখ ছোট ছোট করে বলল,”আপাতত কিছুই না।”
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”মিলা আজ আমার বাসায় চল! যাবে?”
আমি খুশিতে মাথা ঝাকিয়ে বলে উঠলাম,”হ্যা যাব।”
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”ইন ইউওর ড্রিমস।”
সুমনাকে ভ্রুকুচকে বলল,”বাস্তবেই যাবে। কাহিনী করিস না।”
তারপর মুখ ফিরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”আজ আমরা অনেক মজা করব আর মুভিটাও দেখব!”
আমি হাসিমুখে তাকিয়ে রইলাম সুমনার দিকে। শাওন বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,”সুমনা ওর অর্ধেক মাথা এমনিই নষ্ট বাকি অর্ধেকও নষ্ট করিস না।”
আমি বলে উঠলাম,”আপনার মাথা নষ্ট আর আমি যেতে চাই।” শাওন নিজের কোট গায়ে দিতে দিতে বলল,”সেটা আমি বুঝব।”
আমি আর সুমনা গোমড়া মুখ করে রইলাম।
শাওন আমাদের পাত্তা না দিয়ে কেবিন থেকে বের হতে হতে বলল,”কুইকলি নিচে আসো।”
সুমনা আমাদের বিদায় জানিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে বসল। আমি শাওনের পাশে মেজাজ খারাপ করে বসে রইলাম। আবার সেই মুরগীর খামারে যেতে হবে। সুমনার সাথে যেতে পারলে ভাল হত। আর একটা বিষয় হচ্ছে ওই 50 shades of grey মুভি টা দেখে জানতে ইচ্ছা করছে যে মুভিটাতে এমন কি আছে!
আসলে মানুষ ঠিকই বলে। যেটা করতে মানা করা হয় সেটাই করার সুযোগ তারা খুঁজে। মানা করা কাজ করতে কেন যে এত মজা লাগে জানিনা। আমি শাওনের দিকে আড়চোখে তাকালাম। প্রতিবারের মত সে আজও মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।
আমাকে শুধু শুধু যেতে দিল না। আমি বন্ধ জালানা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম।
ফিরে এসে শাওন ফ্রেস হতে বাথরুমে ঢুকে গেল। আমি সোফায় বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। হঠাৎ করে সেই পাখি দুইটার কথা মাথায় এলো। শাওন আমার ল্যাগেজের সব নিজে রোদে দেওয়ার সময় ওই দুইটা পেয়ে নিয়ে নেয় নি ত? আমিও ত ভালো মত খেয়াল করি নি। আমি জলদি গিয়ে নিজের ল্যাগেজ খুললাম। সত্যিই নেই কোথাও। এখন! মেজাজ টা বিগড়ে যাচ্ছে। কি সমস্যা ওনার! আমার ওই দুইটা অনেক পছন্দ ছিল। আমি মুখ কালো করে চিন্তা করতে লাগলাম কি করা যায়। তারপর ফট করে নিজের ল্যাগেজ বন্ধ করে ওনার কাবাড খুললাম। ওনার জামা কাপড় এদিক সেদিন করে খুজতে লাগলাম। কোথাও ত নেই। তারপর ড্রায়ার গুলো খুলতে লাগলাম।
“কি করছ তুমি?”
শাওনের গলা শুনে আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। এখন কি করব!
শাওন আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার পিছনে দাঁড়িয়ে যে ড্রায়ারটা মাত্র খুলেছিলাম সেটা বন্ধ করতে করতে রেগে বলল,”তোমাকে আমি আমার জিনিসে হাত দিতে মানা করেছিলাম না।”
আমি ওনার দিকে না ঘুরে ওভাবেই হালকা মাথা নিচু করে ঢোক গিললাম। শাওন আমার এক বাহু চেপে ধরে আমাকে নিজের দিকে ঘুরালো।
আমি ওনার চোখের দিকে তাকালাম আর বললাম, “কি করছেন আপনি লাগছে আমার।”
শাওন আরো জোরে চেপে ধরে বলল,”লাগুক।”
আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,”আপনি সত্যিই অনেক খারাপ। সবসময় আমাকে ব্যথা দেন।”
শাওন আমাকে ধাক্কা দিয়ে কাবাডের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে কাবাড বন্ধ করল।
আমি মুখটা গোমড়া করে হাতটা ডলতে লাগলাম। শাওন আমার দিকে রেগে তাকাতেই আমি বললাম, “আমার ব্যাগ থেকে আপনি পাখি দুইটা নিয়েছেন কেন!”
শাওন কপাল কুচকে বলল,”what?”
আমি একটু এগিয়ে এসে হাত দিয়ে ইশারা করে বললাম,”এইযে এত টুকু টুকু পাখি দুইটা।”
“ফেলে দিয়েছি।” বলেই শাওন আমার পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। আমি ফট করে ওনার দিকে ঘুরে ওনার হাত ধরলাম৷ শাওন অবাক হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ধরে থাকা হাতের দিকে তাকালো। তারপর ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো।
আমি সাথে সাথে হাত ছেড়ে দিলাম। তারপর ছোট ছোট চোখ করে বললাম,”কোথায় ফেলেছেন?”
শাওন উত্তর না দিয়ে চলে গেল। আমি পিছন থেকে রেগে একটা ঘুষি দেখালাম আর মনে মনে বললাম, ‘গরিলা একটা।’
ফ্রেস হয়ে এসে ডাইনিং টেবিলে বসলাম। নাক মুখ কুচকে খাবার মুখে দিতে লাগলাম। আর চিন্তা করতে লাগলাম উনি ওই দুইটা কোথায় ফেলতে পারেন! আমার যতদূর মনে হয় অই রুমটার ডাস্টবিনেই আবার ফেলেছে পাখি দুইটা। ওনার নিজের রুমের ডাস্টবিন ত ফাকা।
কিন্তু ওই রুমে যেতে গেলে ত সমস্যা। আগে উনি ঘুমাতে যাক তারপর যাওয়া যাবে।
সোফায় বসে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। রাত ১১ টার দিকে শাওন নিজের রুমের লাইট বন্ধ করে শুয়ে পরল। তার একটু পরেই আমি উঠে চুপি চুপি ওই রুমের কাছে গেলাম। কিন্তু রুমের দরজা খুলছে না! কি ব্যাপার। চাবি দিয়ে দরজা লক করা? তাই ই হবে হয়ত। গরিলাটা চালাক আছে। কিন্তু আমিও কম চালাক না।
শাওনের রুমের ড্রেসিং টেবিলের সামনে আমার পার্লার ক্লিপ আছে কয়েকটা। কিন্তু উনি কি ঘুমিয়েছেন? মনে ত হয়।
আমি গুটি গুটি পায়ে শাওনের রুমে গিয়ে ঢুকলাম। বাহিরের হালকা আলো বেলকোনি দিয়ে ঢুকে রুমে এসে পরেছে। আমি পা টিপে টিপে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গেলাম। এক কোনা থেকে কয়েকটা পার্লার ক্লিপ নিয়ে শাওনের দিকে তাকালাম। বালিশ দুইহাত রেখে তার উপর মাথা দিয়ে উবুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে।
আমার শাওনের পাশের ড্রয়ারের দিকে চোখ পরল। যেটার উপর টেবিল ল্যাম্প থাকে। চাবিটা এটার মধ্যে নেই ত?
উনি ঘুমাচ্ছেই যখন, তখন চাবিটা একটু খুঁজেই দেখি কারন ড্রয়ারে থাকতেও পারে! না জানি এই ক্লিপ গুলো কাজ করবে কিনা!
আমি শাওনের পাশের ড্রয়ারের কাছে এগিয়ে গেলাম। হাটু ভাজ করে বসে একে একে ৩টা ড্রয়ার খুলতে লাগলাম। একদম উপরের টায় চাবি আছে এক জোড়া। আমি হাসি মুখে চাবিটা নিয়ে মনে মনে বললাম,”যাক আমার ধারনা ঠিক ছিল।” আমি ড্রয়ারটা আস্তে করে বন্ধ করে উঠে দাঁড়াতেই শাওন আমার এক হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে বিছানায় নিয়ে এলো। আর আমার দুই হাত বিছানার সাথে চেপে ধরল। আমি চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে বললাম আ… আপনি… ঘু…ঘু…ঘুমান নি!”

চলবে….

🚩🚩🚩🚩
এবার গত পর্ব নিয়ে কিছু কথা বলি। অনেকেই গত পর্ব নিয়ে আপসেট যে ১৬ বছরের মেয়ের মাথায় কিভাবে কিছুই না থেকে পারে। তাছাড়া আসেপাশে খেয়াল না করে মিলা কথা বলে কেন। এমন অনেক কিছু। তাই হয়ত খেয়াল করেছেন যে আমি গল্প Edit করেছি। অনেকে বলেছেন গ্রামের মেয়েদের ১৬ বছরেও বিয়ে হয়, এত অবুঝ হয় না তারা। এখন আমি আপনাদের সাথে একটা বিষয় শেয়ার করি।
আমার এক কাজিন সাইকোলজিস্ট। তার কাছে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে মানুষ আসে।
একদিন তিনি আমাকে বললেন, “জানিস শহরেরও এমন ছেলে মেয়ে পেয়েছি যারা এখনো জানেই না যে শারীরিক সম্পর্ক কি! এই সমস্যার জন্য এক স্বামী স্ত্রী আজও এসেছিল। শুধু এমন না এর আগেও অনেকে এসেছে তবে গ্রামের দিক থেকে।”
এখন বলেন!
আরেকটা বিষয় হচ্ছে অনেক মেয়ে আছে বাচ্চাদের মত করে। আমার নিজের ফ্রেন্ড ই আছে এমন। বাচ্চামি করতে বয়স লাগেনা। পার্থক্য হলো কেউ কেউ ইচ্ছা করে করেনা কারন এমনিই বাচ্চা বাচ্চা। আর কেউ কেউ ঢং করে করে।
যাতে সবাই বুঝতে পারেন যে আমি একদমি না বুঝে লিখিনি💗🥰। আশা করি আমার প্রেক্ষাপট টা বুঝবেন। দুঃখিত যদি গত পর্বে ভুল থাকে। তবে এটাই ফাইনাল Edit. আশা করি এখন ঠিক আছে💗।
আর মিলার বুঝে শুনে কথা বলা উচিত সেই বিষয় টার জন্য আমি কথাগুলা চেঞ্জ করে দিছি।
আর আমি কারো উপর রাগ করিনি। আমার প্রথম গল্প এটা তাই যথেষ্ট শেখার চেষ্টা করছি আপনাদের থেকে শুনে🤗💗। আপনাদের সবার মন্তব্যই মুল্যবান🥰। গতকাল অনেক ঝামেলার কারনে দিতে পারিনি গল্প। প্রতিদিন দিতে পারলে ত না দিয়ে থাকিনা। আর আমি ছোট করে পর্ব লিখে নিজেই শান্তি পাইনা🤣 তাই বড় লিখে তারপর দিই।
কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।