১৬ বছর বয়স | পর্ব – ২৯

15 Min Read

গাড়িতে বসে আমি আড় চোখে শাওনের দিকে তাকালাম। উনি সামনের দিকে তাকিয়ে নিজের সীট বেল্ট পরে নিলেন। তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলেন।
আমি স্নোবেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জালানার বাহিরে তাকিয়ে রইলাম। গাড়ির মধ্যে বিরাজ করছে অনেক নিস্তব্ধতা।
অনেকক্ষণ পর আমি নিস্তব্ধতা ভেঙে বলতে লাগলাম,”আপনি কি…”
“Shut up.” শাওন বলে উঠল। তার দৃষ্টি সামনেই আবন্ধ।
আমি চোখ পাকিয়ে বলে উঠলাম, আপনার মনে হয় না আপনি দিন দিন বেশিই মদন টাক হয়ে যাচ্ছেন?
শাওন কটমট চোখে আমার দিকে তাকালো।
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,”হ্যা, হ্যা, চুপ করছি।”
তারপর সারারাস্তা আর কথাই বললাম না।
ঢাকা ফিরে এসে এখন আমাকে আর সোফায় ঘুমাতে হয়না। পিশামনির তালা মেরে যাওয়া রুমটা এখন খোলা। এটাতেই এখন থাকি আমি আর স্নোবেল। আর ফিরে আসার সময় পিশামনি আমাকে কলেজের বিষয় জানিয়ে দিয়েছেন। উনি সব ভর্তির কাজ আগেই করে ফেলেছিলেন। ফোনও সাথে দিয়ে দিয়েছেন একটা। গরিলা কিছু করলেই নালিশ দিয়ে দিতে বলেছে। তাছাড়া এখন থেকে সারাদিন মনে হয় আর বোরিং কাটবে না। কলেজেই কাটবে সারাদিন।
কিন্তু এখন কাহিনী হচ্ছে আজই প্রথম যাচ্ছি কলেজে। আর পিশামনি ওনাকে বলে দিয়েছেন ফোন করে যেন আমাকে দিয়ে আসে। তাই গরিলাটা আমাকে আজ কলেজে নিয়ে যাবে। কষ্ট লাগছে যে স্নোবেল বাসাতে একা একা থাকবে সারাদিন।
শাওন কলেজ গেটের সামনে গাড়ি দাড় করালো। আমি শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, নামো।
আমি ঠোঁট উলটে বললাম, নেমে কোথায় যাব! কিছুই ত চিনি না।
“যেদিকে ইচ্ছে যাও, আমার দেরি হচ্ছে।” শাওন দাতেদাত চিপে কথাটা বলল।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলে নেমে পরলাম। সত্যিই দিন দিন মদন টাক হচ্ছেন উনি। অসহ্য।
আমি নেমে হেটে ভিতরে ঢুকলাম। অনেক বড় ক্যাম্পাস। কলেজ, অনার্স-মাস্টার্স সব একসাথে। এখন সাইন্সের ইন্টার প্রথম বর্ষ কোন রুমে! কে জানে! দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। আশেপাশে ছেলে মেয়ের অভাব নেই। কিন্তু জিজ্ঞেস করব কাকে?
“দাঁড়িয়ে আছ কেন?” শাওন বলল।
আমি চোখ বড়সড় করে পিছনে তাকালাম। হ্যা সত্যিই উনি!
শাওন আমার দিকে বিরক্তির সাথে হেটে এসে বলল, জিজ্ঞেস করলেই ত জানা যাবে কোন রুম! হা করে দাঁড়িয়ে থাকলে না।
আমি চোখ পিটপিট করে শাওনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“কি?” শাওন বলল।
আমি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললাম, কিছুই না।
শাওন সামনে এগিয়ে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করে নিলো। জানা গেল যে পাশের বিল্ডিং এর দোতালায় আমার ক্লাস।
আমি তাও “থ” মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
“এখন আবার বলো না যে কোলে করে ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে আসুন!” শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
আমি হাসিমুখে বললাম,”কোলে না, হেটে হেটে দিয়ে আসলেও হবে।”
শাওন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, চলো জলদি।
সত্যিই যতটা ভালো লাগবে মনে করেছিলাম তার চেয়ে বেশি বোরিং লাগছে। মরার কলেজ! স্নোবেলটা কি করছে কে জানে?
আমি কলেজ থেকে বের হয়ে এলাম। এখন সমস্যা হলো বাসার চাবিটা নিয়ে আসিনি। আর দরজার পাসওয়ার্ডও ত জানিনা! গরিলাটার ফোন নাম্বারও জানিনা। ওনার অফিসে চলে যাব?
কিন্তু যদি রেগে যায় আর আমাকে কাচা চিবিয়ে খেয়ে নেয়?
কিন্তু এখানে ত ভালও লাগছে না!
আমি শাওনের অফিসের সামনে এসে নামলাম।
শাওনে কেবিনে নেই! মিটিং এ নাকি কে জানে।
আমি কাধের লম্বা ফিতার সাইড ব্যাগটা সোফায় রাখলাম। তারপর সোফাতে মাথা হেলিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু ওনার আসার কোন নাম নেই। অপেক্ষা করতে করতে আমি সোফায় ঘুমিয়েও গেলাম।
একটা বড় ঘুম দিয়ে তারপর উঠলাম। এখনো আসেনি উনি!
আমি কেবিন থেকে বের হয়ে এলাম। আর একটা মেয়ের কাছে গিয়ে শাওনের কেবিন দেখিয়ে বললাম, উনি কোথায়?
মেয়েটা আমাকে চিনলো না। হয়তো নতুন বা আমার সাথে দেখা হয়নি।
মেয়েটা সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল, who are you?
আমি কি বলব বুঝলাম না।
মেয়েটা এবার এক পা এগিয়ে এসে বলল, চিনলাম না ঠিক! কে তুমি?
আমি চুপ করে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
মেয়েটা এবার অবাক হয়ে বলল, কি?
“আমি মিলা। ওনার…”
“ওনার?” মেয়েটা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
“এখানে কেন এসেছো?” শাওন বলে উঠল।
আমি আর মেয়েটা ঘাড় ঘুরিয়ে শাওনের দিকে তাকালাম।
শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
মেয়েটা বলে উঠল, স্যার, ইউ নো হার?
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে বললাম, আমার নাম মিলা, আর উনি আমাকে ভালো করেই চেনেন।
মেয়েটা আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন আমি ভুল কিছু বলে ফেলেছি।
“Get back to work.” মেয়েটাকে বলল শাওন।
আমি মেয়েটাকে মুখ ভেংচি দিলাম। মেয়েটা আর কিছু না বলে চলে গেল।
শাওন আমার দিকে এগিয়ে এসে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, কলেজে দিয়ে এসেছিলাম না তোমাকে?এখানে এসে বসে আছ কেনো?
আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম, ভালো লাগছিল না।
“হোয়াট!” রেগে গেল শাওন।
আমি যেন কিছুই জানিনা এমন ভান করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“এখনি যাও।” শাওন বলল।
“এত সময়ে শেষ হয়ে গেছে।” আমি বললাম।
শাওন এক পা এগিয়ে আসতেই আমি চোখ বড়সড় করে ফেললাম আর বললাম, যাচ্ছি যাচ্ছি। এত তেলে বেগুনে জ্বলার কি আছে?
বলেই আমি ওনার কেবিনে ঢুকে গেলাম আর নিজের ব্যাগ নিলাম। তারপর বের হয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেলাম। উনি চুপচাপ ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইলেন।
লিফটে করে কার পার্কিং এ এসে নামলাম।
মনে মনে শাওনকে গালি দিতে লাগলাম আর রাস্তা দিয়ে হাটতে লাগলাম। এখন আবার আমাকে কলেজ পাঠাচ্ছে। অসভ্য গরিলা।
ভাবতে ভাবতে হাটতে গিয়ে হঠাৎ একটা খাম্বার সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পরলাম আর হাত দিয়ে ব্যালেন্স করে নিলাম। কিছুসময় ওভাবেই হা হয়ে রইলাম। কি কপাল আমার! একটা নিঃশ্বাস ফেলে মাথায় চুলগুলো মুখ থেকে সরিয়ে নিলাম। তারপর ব্যাগটা তুলে উঠে দাড়িয়ে গা ঝারতে ঝারতে এগুতে গিয়েই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে আবার পরে যেতে লাগলাম কিন্তু সাথে সাথে সেই ব্যক্তি আমার হাত ধরে নিল। যদিও ব্যাগটা নিচে পরে গেল।
“যাক বাবা বাঁচলাম!” নিচের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম আমি।
“বলেছিলাম না, আমাদের আবার দেখা হবে!”
আমি সেই ছেলেটার গলা শুনে ফট করে তার মুখের দিকে তাকালাম আর হতভম্ব হয়ে গেলাম।
ছেলেটা হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি ওনার কাছ থেকে একটু সরে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের ব্যাগটা কাধে তুলে দাড়ালাম।
“আ…আপনি এখানে কিভাবে!” আমি হা হয়ে প্রশ্ন করলাম।
ছেলেটা এক পা এগিয়ে এসে হাসি মুখে বলল, প্রথম দেখাটা incidence, দ্বিতীয় দেখাটা coincidence, কিন্তু তৃতীয় দেখা means – Something else.
বলেই ছেলেটা একটু ঝুকে আমার দিকে তাকালো। আমি ওনার কথার আগা মাথা না বুঝে একটু পিছিয়ে গেলাম। ছেলেটা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আমার হাতের দিকে তাকালো। আর মুখের হাসিটা গায়েব হয়ে গেল। আর ফট করে আমার এক হাত ধরে বলল, আবার ছিলে গেছে?!
আমি হকচকিয়ে গেলাম কারন উনি হুট করে আমার হাতটা ধরে নিয়েছেন।
আমি বলতে লাগলাম, “আমার হাত….”
আমার কথা শেষ হবার আগেই পিছন থেকে শাওন ওই হাতটা ধরে এক টান দিয়ে আমাকে সরিয়ে নিয়ে এলো।
আমি অনেক চমকে গেলাম। আর শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন তীব্র রাগের সাথে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।
শাওনকে দেখে ছেলেটার মুখের হাসির আভা সরে এখন সিরিয়াস ভাব চলে এসেছে।
উফ! সবাই আজ আমার হাত নিয়ে টানাটানি করছে কেন!
“What the hell are you doing here?” শাওন রেগে বলল ছেলেটাকে।
ছেলেটা সিরিয়াস মুখে একটা হাসি এনে বলল, লং টাইম নো সি শাওন!
আমার চোখ বড়সড় হয়ে গেল! এনারা নিজেদের চেনে!
“Get the hell out of my sight.” রাগে দাতে দাত চিপে বলল শাওন।
আমি হা হয়ে দেখতে লাগলাম। এদিকে আমার হাতের কবজি উনি এত শক্ত করে ধরেছেন যে আমার লাগছে।
আমি ওনার হাতটা ধরে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই উনি হাতটা আরো শক্ত করে ধরে আমার দিকে কটমট চোখে তাকালেন।
“লাগছে ত আমার।” আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম।
সামনের ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে চিন্তিত হয়ে বলে উঠল, শাওন ডোন্ট প্যানিক!
শাওন ভ্রুকুচকে রেগে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, যেতে বলেছি।
ছেলেটা ধরে থাকা হাতের দিকে প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে বলল, What’s your relationship with her?
“That’s none of your business.” শাওন রেগে গেল।
এদিকে আমার হাত আর হাত থাকবে বলে মনে হয় না।
ছেলেটা অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, Don’t tell me that…she..?
শাওন কড়া চোখে তাকিয়ে বলল, yes, she is.
এটা শোনার পর ছেলেটার চেহারা দেখে মনে হলো সে এটা আশাই করেনি।
আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছি কিন্তু লাভ হচ্ছেই না।
ছেলেটা এবার হালকা হেসে বলল, ওর উপর আমার রাগটা না দেখালেই ভাল।
শাওন অন্য হাত দিয়ে ছেলেটার কলার ধরে বলল, Shut the f* up and get out.
আমি হা হয়ে গেলাম। এখন কি শাওন ওনাকেও মারবে নাকি, মিশুকে যেমন মেরেছিল!
“আপনি কি করছেন ছাড়ুন ওনাকে!” আমি বলে উঠলাম।
শাওন ওর কলার ধরা অবস্থাতেই আমার দিকে রেগে তাকিয়ে বলল, তোমাকে ত আমি পরে বুঝে নিচ্ছি।
বলেই সামনের ছেলেটার কলার ছেড়ে দিল শাওন।
ছেলেটা কিছু একটা চিন্তা করে নিজের কলার ঠিক করতে সিরিয়াস হয়ে বলল, কিসের জন্য এত রাগ! এজন্য যে ওর সাথে আমাকে দেখে ফেলেছ নাকি এজন্য যে সুইটির সাথে আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে?
শাওন অন্য হাতটা মুষ্ঠি বদ্ধ হয়ে গেল। আর অত্যন্ত রেগে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি বড়সড় চোখ করে ছেলেটার দিকে তাকালাম তারপর শাওনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম, ‘এজন্য উনি এত রেগে গেছেন! সুইটির সাথে এনার….!’
চিন্তা করেই অনেক বিরক্ত লাগছে আমার। কেন, তা জানি না! সুইটির জন্য এত মাথাব্যথা কিসের ওনার! অসহ্য।
শাওন রেগে কিছু একটা বলতে যাওয়ার আগেই আমি রেগে একটা নিঃশ্বাস ফেলে শাওনকে বলে উঠলাম, যথেষ্ট হয়েছে। এখন থামুন প্লিজ। আর হাত ছাড়ুন আমার।
শাওন ছেলেটাকে আর কিছু না বলে আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগল।
“উফ, লাগছে আমার!” আমি বলতে লাগলাম।
কিন্তু ওনার থামার বা হাত ছাড়ার কোনো নাম নেই। এদিকে ব্যাগটাও ঘাড় থেকে বার বার পরে যাচ্ছে।
উনি আমাকে টানতে টানতে নিয়ে অফিসের লিফটে উঠলেন। অনেকে হা করে তাকিয়ে রইল। উনি লিফটের একদম উপরের ফ্লোরে আসার জন্য বাটন চাপলেন।
আমি চোখ বড়সড় করে বললাম, উপর থেকে ফেলে দেবেন নাকি আমাকে? ছাদে কেন নিচ্ছেন?
উনি আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না। রেগে ফুলে ফেপে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে করে ক্লান্ত হয়ে গেছি। লিফট ছাদে এসে থামার সাথে সাথে উনি আমাকে টেনে নিয়ে একটা দেয়ালের সাথে দুই হাত চেপে ধরলেন।
“কি করছেন আপনি?” আমি বিরক্তির সাথে বললাম।
শাওন রেগে কড়া চোখে তাকিয়ে বলল, কিভাবে চেন তুমি ওকে? কি সম্পর্ক ওর সাথে তোমার?
উনি রেগে ফুসছেন ইতিমধ্যে। আমি কিছু না বলে রাগ মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। সুইটির জন্য এখন উনি আমাকে ধমকাচ্ছেন এটা আমার সহ্য হচ্ছেই না।
“Answer me damn it!” অনেক জোরে বলে উঠল শাওন। আমি প্রায় লাফিয়ে উঠলাম। আর ভীত চোখে ওনার দিকে তাকালাম।
“Further যদি ওর সাথে দেখি তাহলে আমি তোমার সাথে কি করব আমি নিজেও জানিনা।” দাতে দাত চিপে বলল শাওন।
আমি কিছুই বললাম না শুধু শুনেই গেলাম। আর একটা অদ্ভুত প্রশ্ন নিজেকে করতে লাগলাম, আমাকে উনি এত অপছন্দ করেন কেন? আমি কি এতই অসহ্য!
“Do you understand me?” শাওন রেগে বলল।
আমি কিছুই বললাম না। হালকা চোখ সরিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে রইলাম।
শাওন এবার আমার দুই বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলল, বুঝেছ তুমি?
আমি চমকে তাকালাম কিন্তু চুপ করেই রইলাম। আর সেই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরতে লাগল।
শাওন রেগে বলতে লাগল, বাহিরে যাওয়া বন্ধ তোমার। কলেজও যাওয়া বন্ধ। বাসাতেও একা থাকতে পারবা না। আমার সাথে কাল থেকে অফিস আসবা। আমার সামনে বসে Study করবা। দরকার হলে আমি পড়াবো তোমাকে।
আমি শুনে হা হয়ে গেলাম এটা চিন্তা করে যে, ওই সুইটি শাক চুন্নির জন্য আমার সব বন্ধ?
শাওন দাতে দাত চিপে বলল, Is that clear?
আমি এবার রেগে ফেপে বলে উঠলাম, না, কিচ্ছু ক্লিয়ার না। আমার যেখানে ইচ্ছা আমি সেখানে যাব। আপনি আমার বাহিরে যাওয়া কেনো আটকাবেন?
শাওন রেগে আমার আরো চলে আসতেই আমি পিছিয়ে গিয়ে সাহসী হবার ভান করে বললাম, ভ…ভয় পাইনা আমি।
শাওন আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল, আমি যা বলেছি তা করতে তুমি বাধ্য। By Hook or by crook.
বলেই শাওন সরে গিয়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল। আমি ছাদে ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম।
গাড়িতে বাসায় ফেরার সময় কেউ কারো সাথে কোনো কথা বললাম না। আর আমি ত বলতেও চাইনা। মুখ গোমড়া করে অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখলাম।
বাসায় এসে কোনো দিকে না তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম। স্নোবেল আমাকে দেখে অনেক খুশি। ওকে বিছানায় আমার পাশে উঠিয়ে দিলাম। আর ব্যাগটা বিছানার এক পাশে রেখে আমিও শুয়ে পরলাম। অনেক বিরক্তি লাগছে এখন। সুইটির চুল ছিড়তে পারতাম যদি তাহলে হয়ত ভাল লাগত!
স্নোবেলের দিকে ঘুরে ক্ষোভের সাথে বললাম, গরিলাটা আসলে মদনটাক।
স্নোবেল না বুঝে তাকিয়ে রইল। আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম। মনের মধ্যে আবার কেমন কেমন করছে। কিছুই ভাল লাগছে না। আমি লাইট বন্ধ করে শুয়ে পরলাম। আর আজ না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে নিজের চোখ ডলে উঠে বসলাম। তারপর হঠাৎ কিছু একটা মনে হতেই ডান হাতের দিকে তাকালাম। ব্যান্ডেজ করা! বুঝতে আর বাকি রইল না কে করেছে।
আমি নামার জন্য উঠতেই ওড়নাটায় টান খেলাম। তারপর ভ্রুকুচকে হাতের বাম দিকে ঘুরে তাকাতেই চমকে উঠলাম। ডান দিকে ঘুরে শুয়ে থাকার কারনে আমি খেয়ালই করিনি!
শাওন এখানে কেন ঘুমাচ্ছে? আমি হা হয়ে গেলাম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম যে এটা আমারই রুম। উনি এসেছেন তারমানে!
কিন্তু ঘুমাচ্ছে ত ঘুমাচ্ছে আমার ওড়না ওনার হাতের মুঠোয় চেপে ধরে ঘুমাচ্ছে। উনি কি বাচ্চা! উফ!
আমি ওনার কাছে গিয়ে ওড়নাটা হালকা করে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করলাম। লাভ হলো না। আরো শক্ত করে ধরে রাখল।
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম।
কিন্তু এক মিনিট স্নোবেলকে কোথায় পাঠিয়েছেন উনি? রুমের আশেপাশে তাকিয়ে কোথাও দেখলাম না।

চলবে…

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।