১৬ বছর বয়স | পর্ব – ৩১ (A cup of tea)

16 Min Read

“আমি কাছে আসলে এত কাপাকাপি শুরু করো কিসের জন্য! আমি কি তোমাকে খেয়ে ফেলব নাকি?”
আমি ঢোক গিলে বললাম, এ.. এ… একটু দূ…দূরে সরে ক…থা বলেন।
শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে সরে গেল।তারপর দরজা খুলে চলে গেল।
উনি বের হবার সাথে সাথে আমি বুকের উপর হাত দিয়ে হাপাতে লাগলাম। স্নোবেল দরজা খোলা পেয়ে আমার দিকে দৌড়ে আসলো তারপর এক লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে গেল। বুঝিনা উনি স্নোবেলকে কেন বাহিরে রেখে দেন! স্নোবেল লেজ নাড়তে নাড়তে আমার কোলে এসে বসলো।
ফ্রেস হয়ে নাস্তা করতে এলাম। নাস্তার টেবিলে বসে কোনোদিকে না তাকিয়ে শুধু মাথা নিচু করে নিজের প্লেটে মনোযোগ দিলাম। তবে এটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছি যে উনি আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছেন।
খাওয়া শেষ করে উঠতেই উনি গম্ভীর গলায় আমাকে বললেন, তোমার ফোন কোথায়?
আমি ওনার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, কেন?
“কোথায়?” উনি উওর না দিয়ে রেগে বললেন।
আমি দাত কিরমির করে মনে মনে গালি দিয়ে বললাম, আনছি।
আমি রুম থেকে ফোনটা এনে ওনার হাতে দিলাম। উনি নিজের ফোন বের করে টেবিলে রাখলেন তারপর আমার ফোনে কিছু টাইপ করতে লাগলেন।
আমি বিষয়টা বুঝতে চেষ্টা করতে লাগলাম যে গরিলাটা করছে টা কি!
হঠাৎই শাওনের ফোনটা বেজে উঠল। শাওন কল টা কেটে দিলো। তারপর আমার ফোনটা আমার দিকে ধরে বলল, এটা আমার নাম্বার। কল দেওয়ার সাথে সাথে ধরবা।
রাগমিশ্রিত কন্ঠে আমাকে থ্রেট দিয়ে দিল শাওন। আমি রেগে এক থাবা দিয়ে ফোনটা নিলাম।
শাওন ভ্রুকুচকে বলল, “কলেজে নামিয়ে দিয়ে আসব। আর কলেজ শেষে সেখান থেকে সোজা বাসায় আসবা। আর যদি এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে দেখি, Then you know me!”
আমি কপাল কুচকে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। হুকুম চালাচ্ছে দিন দিন।
উনি আমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। অর্থাৎ সেই বোরিং কলেজে বসে বসে পচতে লাগলাম।
|
|
কলেজ শেষ না করেই আমি শাওনের অফিসে রওনা হলাম। কারণ সুইটির বিষয়টা বার বার আমাকে ভয় পাইয়ে দিচ্ছে। না জানি সে কি সত্যি নিয়ে বসে আছে!
কিন্তু অফিস পর্যন্ত আমাকে আর যেতে হলোনা। আমি রাস্তাতেই একটা বড়ো হোটেলের সামনে শাওনকে দেখতে পেলাম। দেখার সাথে সাথে মুখে এমনিই একটা হাসি চলে এলো। আমি রিক্সা থামাতে বলে নেমে পরলাম। এখন কথা হচ্ছে রাস্তার ওপারে উনি। আর এত গাড়ি যে পার হতেও পারছি না।
তবে এই পার থেকেই দেখে বুঝতে পারছি যে উনি গোমড়া মুখ করে অন্যমনস্ক হয়ে আছেন।
“গারিলাটার আবার কি হলো!” মনে মনে বললাম আমি। তারপর রাস্তা পার হবার জন্য পা বাড়ানোর আগেই আমি থমকে গেলাম। আর মুখের হাসিটাও উবে গেল। কারন সেই মুহুর্তেই সুইটি এসে শাওনের হাত ধরে শাওনকে ওর দিকে ঘুরালো।
মেয়েটা অনেক কেদে কেদে কিছু বলছে হয়ত শাওনকে। আমি স্থিরভাবে দাড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। আমি শুধু সুইটির মুখটাই দেখতে পাচ্ছি। কারন ওরা মুখোমুখি দাড়ানো। শাওনকে সুইটি কাদতে কাদতে অনবরত হাত নাড়িয়ে কিছু বুঝাতে ব্যস্ত। এক পর্যায়ে এসে সুইটি শাওনের কাধে মাথা ঠেকিয়ে কাদতে লাগল।
এগুলো দেখার জন্য আমি আর ওখানে দাড়ালাম না। একটা রিক্সা দাড় করিয়ে উঠে বসলাম আর সোজা বাসাতে ফিরে এলাম।
স্নোবেল আমার দিকে এগিয়ে এসে লেজ নাড়তে লাগল। কিন্তু আজ ওর মাথায় আর হাত বুলিয়ে দিলাম না। এইভাবে আমার আর থাকতে ইচ্ছে করছে না।
আমি হুট করে দুই পায়ের উপর বসে হাটু জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলাম। স্নোবেল চিন্তিত হয়ে আমার চারিদিকে ঘুরতে লাগল। আর মুখ দিয়ে আস্তে আস্তে সান্ত্বনা দেওয়ার মত শব্দ করতে লাগলো। কিন্তু আমার কান্না আমি থামাতে পারলাম না। অনেক সময় ওভাবে থাকার পর আমি নাক মুখে পানি দিয়ে রুম থেকে বের হলাম। অন্যমনস্ক থাকলে হয়ত ভাল লাগতে পারে তাই রান্নাঘরে রান্না করতে চলে গেলাম। ফ্রিজের সব কুমড়ো একসাথে ভেজে নিলাম। তারপর ডাইনিং এ বসে খেতে আরম্ভ করলাম। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পরতে লাগল। আমি কুমড়ো কেন খাচ্ছি তা নিজেও জানিনা। স্নোবেল আমার দিকে দুঃখিত চোখে তাকিয়ে চুপচাপ ফ্লোরে বসে রইল।
আমি নিজের প্লেট ধুয়ে রুমে চলে এলাম। তারপর চুপচাপ শুয়ে এপাশ ওপাশ ফিরতে লাগলাম। অসহ্যকর এক অসস্তি আর কষ্ট আমাকে গ্রাস করে ফেলছে। স্নোবেল না খেয়েই আমার পাশে এসে শুয়ে পরল। আমি বিকাল থেকে শুরু করে রাত দশটা অব্দি শুয়েই রইলাম। শাওন সাধারণত আটটার আগে আগেই আসে কিন্তু আজ আসলো না। এজন্য আরো বেশিই খারাপ লাগতে শুরু করল। রাত আরোই বাড়তে লাগল আর আমি অপেক্ষা করতে করতে আমি ঘুমিয়ে পরলাম।
যখন চোখ খুললাম তখন সকাল হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে তারপর হুট করে মনে হলো শাওন কি আমার পাশে? মনে হতেই আমি পাশ ফিরলাম। কিন্তু না। উনি আজ আমার সাথে ঘুমান নি। স্নোবেলই চোখ খুলে শুয়ে আছে। আমাকে ঘুরতে দেখেই স্নোবেল মাথা তুলে লেজ নাড়তে লাগল।
তাহলে কি সুইটির সাথে ওনার সব ঠিক হয়ে গেছে? চিন্তা করেই আমার গলা শুকিয়ে গেল। নাকি উনি রাতে বাসাতে ফিরেই আসেন নি?
আমি তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে নেমে রুম থেকে বের হলাম। আর বের হতেই শাওনকে দেখতে পেলাম। উনি টেবিলে খাবার রেডি করছিলেন। আমার দিকে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে তারপর আবার খাবার রেডি করতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
“কখন এসেছিলেন আপনি রাতে?” আমি শান্ত গলায় প্রশ্ন করলাম।
শাওন আমার দিকে না তাকিয়েই বলল, at 12:30 maybe. Why?”
“এত দেরি কেনো?” আমি দরজার কাছে দাড়িয়েই অনেক ব্যস্ত হয়ে প্রশ্নটা করলাম।
শাওন এবার আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, তোমার এত concerned হবার কারন কি? কাজ ছিল আমার।
বলেই উনি নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে বললেন, ফ্রেস হয়ে খেতে বসো।
‘সত্যিই ত, আমার উদ্ধিগ্ন হওয়ার কারন কি! উনি যত রাতেই আসুক কিংবা সুইটির সাথে থাকুক সেটা ওনার ইচ্ছা।’ মনে মনে বললাম আমি। কিন্তু এই তীব্র কষ্ট সহ্য করতে পারছি না।
ফ্রেস হয়ে নাস্তা করতে এলাম। শাওন সাদা শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে চেয়ারে বসল আর নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। আমি ওনার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর নিজের প্লেটের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“তাকিয়ে না থেকে খাও।” শাওন ফোনের দিকে তাকিয়েই বলল।
আমি ওনার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালাম।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কি?
এই মুহূর্তে আমার একটা প্রশ্ন খুবই করতে ইচ্ছে করছে যে, ‘আমি যদি আপনাকে ছেড়ে চলে যাই আপনি কি আমাকে খুজবেন?’
কিন্তু প্রশ্নটা গলা অব্দিই আটকে রইল। মুখে বলতে পারলাম না।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল,”hey, is something wrong with the food?”
আমি ওনার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে প্লেটের দিকে তাকালাম এবং না সূচক মাথা নাড়লাম। তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে খেতে আরম্ভ করলাম।
“You are acting strange!” শাওন বলল।
আমি এবার ওনার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, “আমার একটা নাম আছে।”
“মানে?” শাওন পানির গ্লাস থেকে পানি খেতে খেতে বলল।
“মানে আমার নাম আছে। সারাক্ষণ হেই, ওই, গাধা, ষ্টুপিড এগুলো বলে ডাকেন কেন?” আমি বিরক্তির সাথে তাকিয়ে বললাম।
শাওন স্বাভাবিক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
আমার সত্যিই রাগ লাগছে। গরিলাটা এখন অব্দি আমাকে এগুলো বলেই ডেকেছে। অসভ্য গরিলা।
শাওন টেবিল ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল, জলদি করো।
বলেই শাওন নিজের রুমে চলে গেল। ভাব এমন নিচ্ছে যেন শুনতে পায়নি আমি কি বললাম। নাকি উনি আমার নামই জানে না!
শাওন আমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেল।
কিন্তু আমার কিছুই ভালো লাগছে না। কারন মনের মধ্যে যে কি চলছে সেটা কাউকেই বুঝাতে পারব না। শুধু জানতে ইচ্ছে করছে সুইটি কি বলল সেদিন ওনাকে!
ধুর, ইচ্ছে করছে কোথাও চলে যাই যেখানে কোনো অশান্তি নেই, চিন্তা নেই, কষ্ট নেই। কিন্তু এমন জায়গা এখন কোথায় পাব!
কলেজে ঢুকেও বের হয়ে এলাম। তারপর রাস্তা দিয়ে হাটতে লাগলাম। অনেক দূর অব্দি হেটে আসলাম। হঠাৎ পিছন থেকে একটা ছেলে বলে উঠল, হেলো।
আমি থেমে পিছনে তাকালাম।
আবার সেই ছেলেটা। অর্থাৎ সুইটির সেই হবু বর। আমি স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আবার ঘুরে হাটতে শুরু করলাম। একে ত সুইটির কথাগুলো ভুলতে চাচ্ছি তার উপর তার বরও এসে হাজির।
ছেলেটা এসে আমার সামনে দাড়িয়ে গেল। আমি হকচকিয়ে গেলাম।
ছেলেটা অনেক দুঃখিত চোখে তাকিয়ে বলল, সরি ওই দিনের জন্য। আমার জন্য হয়ত অনেক ঝামেলা পোষাতে হয়েছিল।
আমি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে গেলাম। আমি আসলে ওনার সাথে কথাই বলতে চাচ্ছি না।
“দেখুন আমি জানিনা আপনাদের মধ্যে কি ঝামেলা কিন্তু আমি এ বিষয় কোনো কথা বলতে চাইনা।” একটু চোখ নামিয়ে বললাম আমি।
“It’s ok. বাট আমার কিছু দরকারি কথা ছিল।” ছেলেটা অনুরোধের সুরে বলল।
আমি দ্বিধায় পরে ওনার দিকে তাকালাম আর বলতে লাগলাম, ”আমি শুনতে চাইনা তাই….”
ছেলেটা আমাকে থামিয়ে দিয়ে একটা বন্ধুসুলভ হাসির সাথে বলল, নেক্সট দেখাতে কিছু পরিশোধ করার কথা ছিল। A cup of tea, remember?
আমি ভ্রুকুচকে ওনার দিকে তাকালাম। উনি আমার পায়ের দিকে ইশারা করে একটা নিঃশব্দ হাসি দিল। অর্থাৎ সেই জুতোর বিষয় বলছেন উনি। আর সেটা আজ আমার পায়ে নেই। থাকলে আমি এখনি খুলে দিয়ে দিতাম।
ধুর ছাতা কেনো যে সেদিন বের হলাম! ঘরে বসে থাকলে এমন হত! কিন্তু আসল দোষ ত ওই গরিলাটার। আমার সাথে ওমন ব্যবহার দিল তাই ই ত আমি…!
“What are you thinking?” ছেলেটা প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম, আমি আপনাকে টাকা দিয়ে দিচ্ছি আপনি বরং খেয়ে আসুন।
ছেলেটা এবার একটু শব্দ করেই হেসে দিল। আমি বিব্রতকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
“ভয় নেই, এটাই আমাদের লাস্ট মিটিং, I Won’t show up Again.” ছেলেটা সিরিয়াস হয়ে বলল।
আমি দ্বিধায় পরে তাকিয়ে রইলাম।
উনি অনুরোধ সূচক চোখে তাকিয়ে রইলেন।
“চ..চলুন।” ইচ্ছে না থাকার সত্বেও যেতে হলো। আশা করি এটাই শেষ দেখা হবে।
একটা রেস্টুরেন্টে এসে ঢুকলাম। আমি খুব যে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি তাও না।
উনি একটা টেবিলের কাছে গিয়ে দাড়ালেন আর বললেন, এটাতে বসি!
আমি কিছু না বলে এগিয়ে গিয়ে বসলাম৷ কাচের দেয়ালের পাশেই টেবিলটা। উনি আমার মুখোমুখি বসলেন। তারপর হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কেমন আছ?
আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম। কারন উনি আমাকে তুমি করে কথা বলা শুরু করেছেন। নাকি আগে থেকেই বলত!
“কি?” ছেলেটা ঠোঁট উলটে বলল।
আমি বললাম, হ্যা আমি ভাল আছি। আ..আপনি?
ছেলেটা নিজের গালের দিকে ইশারা করে বলল, “ভাল নেই।”
ওনার গালে একটা ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগানো। যদিও আগে খেয়াল করেছিলাম কিন্তু প্রশ্ন করিনি।
আমি একটু বিব্রতকর হাসি দিয়ে বললাম, অহ আচ্ছা।
“কে করেছে জানো?” ছেলেটা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল।
আমি মনে মনে বললাম, আমি কেম্নে জানব!
কিন্তু মুখে কিছু না বলে তাকিয়ে রইলাম।
“শাওন করেছে।” ছেলেটা সিরিয়াস হয়ে বলল।
আমার চোখ বড়সড় হয়ে গেল।
“উনি কেন করবেন?” আমি প্রশ্ন করে উঠলাম।
“তোমার কি মনে হয় কেন করবে?” ছেলেটা উজ্জ্বল হাসির সাথে মেনু কার্ডটা হাতে নিতে নিতে বলল।
আমি বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইলাম।
ছেলেটা মেনু চেক করে আমাকে বলল, দুইটা হট কফি অর্ডার দিতে চাচ্ছি।
আমি কিছু না বলে চিন্তায় মগ্ন হয়ে রইলাম। উনি সুইটির জন্য এই ছেলেটার গায়ে হাত তুলেছেন!
ছেলেটা হাতে একটা তূরী বাজিয়ে বলল, কি হলো?
আমি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে বললাম, হ্যা বলুন।
ছেলেটা একটু মাথা চুলকে বলল, “আমরা এখনো একে অপরকে ভালো মত চিনি ই না!”
বলেই ছেলেটা হাসিমুখে বলল, “আমি সৌরভ, একজন আর্কিটেক্ট লাইক শাওন, and you?”
আমি একটু অবাক হলাম। উনিও আর্কিটেক্ট! তারপর বললাম, “আমি মিলা।”
“নাইচ নেইম। সো মিলা, এই রেস্টুরেন্টে সেল্ফ সার্ভিস। So you need to go there and place order.” সৌরভ আমাকে আঙুল দিয়ে রিসিপশনের দিকে ইশারা করে বলল।
আমি হ্যাসূচক মাথা নাড়িয়ে নিজের পার্স নিয়ে অর্ডার করতে চলে গেলাম। অর্ডার করে একবারে কফি হাতে নিয়েই ফিরে এলাম।
সৌরভ কাউকে ফোন করতে করতে কফি হাতে নিলো। কফি হাতে ধরেই আবার কাউকে ফোন দিতে লাগল৷ যা বুঝলাম তা হলো যাকে ফোন দিচ্ছে সে ধরছে না। বেচারা ভ্রুকুচকে কল করেই যাচ্ছে।
আমি কফি হাতে নিয়ে শুধু নাড়তেই লাগলাম। হঠাৎ সৌরভ বলে উঠল, “মিলা, তোমার ফোন আছে?”
আমি হ্যাসূচক মাথা নাড়লাম।
উনি হাত বাড়িয়ে বললেন, প্লিজ একটু দেওয়া যাবে?
আমি হ্যাসূচক মাথা নাড়িয়ে ব্যাগের মধ্যে থেকে ফোনটা বের করে ওনাকে দিলাম।
উনি আমার ফোন নিয়ে কি যেন করতে লাগলেন। উনিও কি আবার আমার ফোন নাম্বার নিবে নাকি?
চিন্তা করেই আমি চোখ বড়সড় করে বলে উঠলাম, কি করবেন আপনি?
সৌরভ আমার ফোনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, কি?
সৌরভ অট্টোহাসিতে ফেটে পরল আর বলল, শাওনের নাম্বার গরিলা লিখে সেভ করা!
আমি জলদিই ফোন টা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালাম কিন্তু উনি সরিয়ে নিলেন। তারপর হাসি থামিয়ে ঠোঁট উলটে বললেন, আমি তোমার ফোন দিয়ে একটু ফোন করব। ওকে?
আমি কিছু বললাম না। শুধু ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইলাম।
উনি ফোনটা নিয়ে নিজের কানে দিলেন। আমি আবার নিজের কফি নাড়তে লাগলাম।
আসলে সৌরভ শাওনকে ফোন করছিলো। কিন্তু উনি তুলছিলেন না। তাই সৌরভ আমার ফোনটা চেয়ে নিয়ে শাওনকে কল দিল।
শাওন মিটিং এ ছিল। আমার কল ঢুকতে দেখে রিসিভ করে কানে দিল।
সৌরভ ফোনটা কান থেকে নামিয়ে টেবিলে রেখে আমার দিকে একটা নিঃশব্দ হাসি দিয়ে বলল, I knew it, তোমার কল ধরবেই।
আমি ভ্রুকুচকে সৌরভের দিকে তাকালাম। কারন উনি কি বিষয় কথা বলছেন আমি বুঝলাম না।
“এখানে আসার জন্য ধন্যবাদ।” সৌরভ হাসিমুখে বলল।
শাওনের থমকে গেল।
আমি ওনার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালাম। সৌরভ সিরিয়াস চাহনির সাথে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “মিলা, আমি পছন্দ করি তোমাকে।”
শুনেই আমি চোখ বড়সড় করে ফেললাম। হঠাৎ কি বলছে এসব উনি!
শাওনের টেবিলের উপর থাকা হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেল কারণ ফোনের ওপাশ থেকে শাওন এগুলো সবই শুনছে।
আমি বললাম, “আপনি হঠাৎ এসব…!”
“I am serious.” শক্ত চোখ মুখ করে কথাটা বলল সৌরভ।
যদিও ওনাকে দেখে মনে হচ্ছেনা যে উনি মজা করছেন। কিন্তু আমি বিবাহিত তা ত উনি জানেন। আর তাছাড়া সুইটির সাথে ওনার সামনে বিয়ে তাও কেন উনি এমন ভাবে বলছেন?
“আমি জানি তুমি শাওনের সাথে ভাল নেই। তাই প্লিজ তুমি শাওনকে ছেড়ে দেও, I will marry you and believe me, you will be happy with me.” সৌরভ বলে উঠল।

চলবে…

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।