১৬ বছর বয়স | পর্ব – ৩৪ (Shawon is acting strange)

18 Min Read

আমি নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
শাওন মুখ সরিয়ে নিয়ে আবার আমার দিকে তাকালো। আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম কিন্তু চোখ নামিয়ে রাখলাম। ওনার দিকে তাকালাম না। বরং এখন আমার শরীর রীতিমতো কাপছে।
শাওন শান্ত গলায় বলল, এখনো ত আমি কিছুই করিনি।
আমি চমকে ওনার চোখের দিকে তাকালাম। আর একটা ঢোক গিললাম।
হঠাৎই পায়ের কাছে স্নোবেল এসে ঘুড়ঘুড় করতে লাগল। আমি নিচের দিকে তাকালাম। শাওন স্নোবেলের দিকে ভ্রুকুচকে তাকালো। সাথে সাথে আমি আমার হাত ছাড়িয়ে নিলাম। আর হাত ছাড়িয়ে আমি আর একটুও দাড়ালাম না। ওনাকে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে ওনার রুম থেকে বের হয়ে এলাম।


আজ আমাকে দুপুরের রান্না করতে হবে। সকাল থেকেই বাসা ফাকা ফাকা হয়ে গেল। কারন শাওনের মা, পিশিমনি আর কাকিমনি শপিং এ চলে গেছেন। পলক ওনাদের নিয়ে গেছেন। শাওনের বাবা অফিসে আর পিশামনির খবর নেই। মোট কথা ওনারা আসতে আসতে রান্না সব আমাকেই করে নিতে হবে। আর আজই বিকালে সবাই চলে আসবে।
আমি ওড়নাটা এক জায়গায় রেখে এপ্রোন পরে নিলাম। তারপর প্রথমে বেগুন গুলো তেলে ভেজে নিলাম। অনেক দিন পর বেগুন। ভেবেই মজা লাগছে। আমার অনেক পছন্দের।
কিন্তু এর পরেই ভাজবো কুমড়ো। কুমড়োর দিকে তাকিয়েই আমার গত রাতের কথা মনে পরে গেল। সাথে সাথে হার্ট বিট আবার বেড়ে গেল। আমি চোখ বড়সড় করে নিজেকে এক হাত দিয়ে বাতাস করতে লাগলাম।
কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছেনা। কি অসহ্য। আমি নিজের মাথা এদিক ওদিক ঝাকিয়ে সব চিন্তা দূর করে কুমড়ো গুলো লম্বালম্বি ভাবে ছুড়ি দিয়ে কাটতে লাগলাম। কিন্তু কাটতে গিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম। শাওনের ব্যবহার অনেক বদলে গেছে। উনি কি তাহলে আমাকে পছন্দ…!
আমার মুখে একটা হাসি চলে এলো। কিন্তু অন্যমনস্ক হয়ে থাকার কারনে ছুড়িতে হাত কেটে গেল।
আমি আস্তে করে “আহ” বলে হাতের দিকে ভ্রুকুচকে তাকালাম।
ওদিকে বেগুন গুলো চুলোর উপরে। সাথে সাথে এগিয়ে গিয়ে চুলো অফ করলাম। বেগুন ত মনে হয় পোড়ে নি। যাক বাবা!
হঠাৎ শাওন পিছন থেকে এসে আমার হাত ধরে টেনে ট্যাপের কাছে নিয়ে গেল।
“রান্না করতে না পারলে করতে আসো কেনো?” শাওন রেগে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল।
আমি হা হয়ে গেলাম আর বললাম,”পারিনা মানে? আপনি বেশি জানেন? আপনার চেয়ে ভাল পারি।”
“এজন্যই ত এই অবস্থা!” শাওন আমার আঙুল ট্যাপের নিচে ধরে রেখে বলল।
আবার গত রাতের কথা মনে পরে গেল আর আমি ফট করে চোখ সরিয়ে নিলাম।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, “কি?”
আমি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম, এখন ঠিক আছি। আপনি যান।
শাওন আবার আমার হাত ধরে নিল। তারপর টেনে নিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসালো। আর কোথা থেকে আবার সেই ব্যান্ডেজ, স্যাভলন আর তুলা নিয়ে এলো। তারপর আমার পাশে বসে ভ্রুকুচকে অতি মনোযোগের সাথে ড্রেসিং করতে শুরু করে দিলেন। ওনাকে এই প্রথম আমি নিজের এত কাছ থেকে দেখছি। এর আগে দেখেছি বলে মনে পরেনা। ইচ্ছে করছে ওনার গালে একটা কিস করে দিই। এমন একটা ইচ্ছা আসতেই আমি চোখ নামিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। দিন দিন কি সব চিন্তা আসছে আমার মাথায়!
উনি একটা ব্যান্ডেজ লাগিয়ে আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললেন, “রান্না করা লাগবে না তোমার।”
আমি চোখ পাকিয়ে বললাম, “ত! সবাই দুপুরে মুখ দেখা দেখি করে পেট ভরবে!”
“আমি করে নিব।” বলেই শাওন উঠে দাড়িয়ে রান্নাঘরে চলে গেল।
আমি অবাক হয়ে ওনার পিছন পিছন চলে এলাম।
উনি আমাকে দেখে এপ্রোন পরতে পরতে রেগে বললেন, আবার এখানে এসেছ কেনো?
আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, “একটা আঙুল কেটেছে। পুরো হাত কাটে নি। তাছাড়া এমন অনেক বার কেটেছে আমার বাড়িতে থাকতে, তাও রান্না করেছি আমি। হুহ।”
বলেই আমি আবার এগিয়ে গিয়ে ছুরি ধরলাম কুমড়ো কাটার জন্য। আর তখনি শাওন পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার দুই হাত ধরলো। আমি চমকে গেলাম।
শাওন পিছন থেকে আমার কানে শান্ত গলায় বলল, “সোজা ভাবে কথা শুনবা নাকি কাল রাতের মত কিছু করব।”
আমি চোখ বড়সড় করে সামনের দিকে তাকিয়ে কাপা গলায় বললাম,”শু… শুনবো। প্লিজ ছাড়ুন।”
শাওন আমাকে ছেড়ে দিল। আমি সাথে সাথে একটু সরে গিয়ে দাড়ালাম আর অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম।
উনি একে একে সব করতে লাগলেন। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। উনি সব কাজই অনেক সিরিয়াস হয়ে করেন এটা অনেক ভালো লাগে।
আমি ওনার রোস্ট বানানোর পদ্ধতিটা বেশ ভাল করে খেয়াল করলাম।রোস্টগুলো লবণ, টক দই, আদা ও রসুন দিয়ে কিছুসময় মাখিয়ে রাখলেন। তারপর কড়াইতে তেল দিয়ে তাতে সেগুলো বাদামি রঙ করে ভেজে তুলে নিলেন। তারপর কষানো সব বাটা মশলায় রোস্টগুলো দিয়ে দিলেন।
যাক এখন থেকে আমিও পারব। সব রেডি করে উনিই টেবিলে সাজিয়ে দিলেন। তারপর আমার দিকে তাকালেন। আমি ওনার দিকে তাকিয়েও চোখ সরিয়ে নিলাম।
উনি শার্টের ভাজ করা হাতা ঠিক করতে করতে চলে যেতে লাগলেন। ফট করে আমি বলে উঠলাম, “ধন্যবাদ অনেক।”
উনি ঘুরে আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালেন। তারপর আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন। আমি চোখ বড়সড় করে ফেললাম। এখন যদি আবার উনি আমাকে কাল রাতের মত…
ভেবেই আমি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেলাম আর চোখ সরিয়ে নিলাম। উনি এগিয়ে এসে আমার সামনে দাড়ালেন। আমি চোখ বড়সড় করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
শাওন কিছু না বলেই ফিরে চলে গেল।
আমি হাফ ছেড়ে নিজের রুমে চলে গেলাম।
আমি গোসল সেরে ডাইনিং এর সামনে দাড়াতে না দাড়াতেই কাকমনিরা শপিং করে হাজির হয়ে গেল। পলক সোফায় বসতে বসতে বলল, “ওহ কি সুন্দর গন্ধ বের হয়েছে খাবারের! মজা করে খাব আজ।”
আমি মিষ্টি হাসি দিলাম। যদিও এগুলো আমি কিছুই করিনি। সব শাওনই করেছে।
একটু পরেই সবাই খেতে বসে গেল। কাকমনি সবাইকে খাবার দিতে লাগলো। শাওন নিজের শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে আমার দিকে তাকালো।
আমি এক পাশে দাড়িয়ে ছিলাম। ওনার চোখে চোখ পরতেই চোখ সরিয়ে নিলাম।
পলক খাবার মুখে দিয়েই বলে উঠল, অহ ওয়াও! মিলা অনেক মজা হয়েছে সত্যি! তুমি অনেক ভাল রান্না করো!
পিশামনিও বলল, হ্যা ঠিক।
আমার শাশুড়ী কিছু না বলে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছেন।
যদিও এত তারিফ সব শাওনের পাওয়া উচিত। আমি শাওনের দিকে তাকালাম। উনি চুপচাপ খাচ্ছেন।
আমি ওনার দিকে তাকিয়েই থেমে থেমে বললাম, “আমি…. করিনি… রান্না।”
শাওন খাওয়া থামিয়ে আমার দিকে তাকালো। শুধু শাওন না সবাই তাকালো।
শুধু শাওনের মা নিজের প্লেটের দিকেই তাকিয়ে রইল।
কাকিমনি অবাক হয়ে বলল, তুই করিস নি ত ভুতে করেছে?
পিশামনি বুঝতে পেরে হাসতে লাগল।
কাকিমনি বুঝলো না। তাই আমাকে বলল, তুই করিস নি? ত কে?
আমি এক আঙুল দিয়ে শাওনকে দেখিয়ে দিলাম।
পলক শাওনের দিকে তাকিয়ে সুর টেনে বলল, “অহো~~~~~।”
শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো।
কিন্তু আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।
কাকিমনি হা হয়ে বলল, এত বউ পাগোল হয়ে গেলি কবে থেকে?
“What nonsense!” ভ্রুকুচকে বলে উঠল শাওন।
কিন্তু ইতিমধ্যে সবাই হেসে ডাইনিং কাপিয়ে তুলেছে।
“আমি আগেই বুঝেছি, এই রোস্ট দেখে।” শাওনের মা শক্তমুখে বললেন।
দেখে ত মনে হচ্ছে শাশুড়ী খুশি না কারন আমি শাওনকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছি।
সবাই মুচকি মুচকি হাসছে। আমি এদিকে ওদিকে তাকাতে লাগলাম।
পিশামনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, খেতে বসে পর দেরি করিস না।
বিকালে অনেকে চলে এলো। শাওনের সব কাজিনরাও এসে হাজির। সবার আসার পরই সেই শপিং করা জিনিস বের করে বসলো সবাই। আমি খানিক দূরে দাড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ শাওনের মা আমাকে শক্ত গলায় বললেন, দাঁড়িয়ে আছ কেন? দেখো কোন শাড়ি নিবা।
আমি হকচকিয়ে গেলাম। কাকিমনির মেয়ে নিপা এগিয়ে এসে হাসিমুখে বলল, হ্যা নেও জলদি।
শাওন তখনই সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিল। নিপা ওকে দেখে বলে উঠল, ব্রো, তোর বউকে কোনটাতে বেশি ভাল লাগবে?
আমি হকচকিয়ে গেলাম। শাওন ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকালো। আমি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলাম।
তখনি পলক আমার পাশে এসে বলে উঠল, লাল শাড়িটা।
নিপা একটু চিন্তা করে বলল, লালটা খারাপ না।
তারপর শাওনের দিকে তাকিয়ে বলল, তুই কি বলিস! লালটা? নাকি পিংকটা?
“লালটা ফালতু। আর আমি কেনো চয়েজ করতে যাব!” ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল শাওন।
আমি চোখ পাকিয়ে ওনার দিকে তাকালাম। তারপর এগিয়ে গিয়ে লালটা নিয়ে বললাম, এটাই ভাল। আমি এটাই নিব।
নিপা হাসিমুখে বলল, হ্যা, যেটা ভাল লাগে নেও।
পলক আমাকে বলল, জোস লাগবে তোমাকে।
আমি শাওনের দিকে ভ্রুকুচকে তাকালাম। শাওন গম্ভীর চোখে কিছুসময় আমার দিকে তাকিয়ে তারপর নিজের ফোন নিয়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে উপরে উঠে গেল৷
কিন্তু আমার ত পিংকটাই নিতে ইচ্ছে করছে! আমি মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
হঠাৎ পলক আমার হাতে পিংকটা ধরিয়ে দিল আর লাল টা নিয়ে নিল। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।
পলক হেসে বলল, “ভাইকে জেলাস দেখবো এটা আশাও করিনি কখনো।”
“মানে?” আমি প্রশ্ন করলাম।
পলক মিষ্টি হেসে আর কিছু না বলেই চলে গেল।
যাইহোক আমি পিংক শাড়ি পেয়ে খুশি এখন।
“এটা পরে এসো যাও।” শাওনের মা আমাকে বলে উঠল।
আমি খানিকটা চমকে গেলাম হঠাৎ ওনার গলা শুনে।
“কি হলো যাও!” ভ্রুকুচকে বলল শাওনের মা।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, যাচ্ছি।
“আর এটাও পরো।” বলেই একটা নেকলেসের বক্স ধরিয়ে দিলেম।
আমি শাড়ি আর নেকলেসের বক্স নিয়ে রুমে চলে এলাম।
শাড়িটা পরে চুলগুলো ঘাড় থেকে সরিয়ে নেকলেসটা পরে নিলাম। তারপর সাথে থাকা এক জোড়া চুড়িও হাতে পরে নিলাম।
তারপর মনোযোগ দিয়ে চুড়ির দিকে তাকিয়ে রইলাম। সত্যিই অনেক সুন্দর।
হঠাৎই ব্লাউজের ফিতায় টান পরলো। আমি চমকে আয়নার দিকে তাকালাম। সাথে সাথে চোখ বড়সড় হয়ে গেল। কারন শাওন আমার পিছনে দাঁড়ানো।
আর উনি এইমাত্র আমার পিঠের কাছের ব্লাউজের ফিতা খুলে দিয়েছেন।
আমি আয়না থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। কারন উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি নিজের দুই হাত একসাথে ধরে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। হঠাৎ করেই উনি আমার পিঠে কিস করে দিলেন। আমি শিউরে উঠে আয়নার তাকালাম। উনি গম্ভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর আমার ব্লাউজের ফিতায় হাত দিলেন। আমি মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
উনি আবার ফিতাটা বেধে দিলেন। আমি চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করেই রইলাম।
উনি আমার কানের কাছে এসে গম্ভীর গলায় বললেন, শাড়ি লালটাই ভালো বলেছিলা যে!
শুনেই আমি চোখ খুললাম কিন্তু মেঝের দিকেই তাকিয়ে রইলাম।
শাওন আমার কাছ থেকে সরে রুম থেকে বের হয়ে গেল। উনি বের হবার সাথে সাথে আমি জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বিছানায় গিয়ে বসলাম।এদিকে হার্টও এত জোরে বিট করছে বলার মত না। ওনার এই অদ্ভুত আচরণগুলোর মানে কি!
খানিক বাদেই আমি বেরিয়ে এলাম। দেখে সবাই বলল, ভাল লাগছে। কিন্তু আমার শাশুড়ী মা দেখে ভালো মন্দ কিছুই বললেন না। আমি বুঝিনা উনি কিসে খুশি হবেন!
সন্ধ্যার সময় কাকিমনি আমাকে ছাদ থেকে আচারের বোতল আনার জন্য বললেন। রোদে দিয়েছিলেন সেটা আজ। আমি খুশি মনে সিড়ি দিয়ে প্রথমে দোতালায় উঠলাম। দোতালার একদম কোনার সিড়ি দিয়ে উঠলেই ছাদ।
কিন্তু আমি শাওনের রুমের সামনে এসেই দাঁড়িয়ে পরলাম। কারন ভিতর থেকে শাওনের মায়ের বলা একটা কথা কানে এল।
“তুই কি এখনো সুইটিকে পছন্দ করিস? আর এই মেয়েটাকে কি পছন্দ করিস না?” শাশুড়ী মা শাওনের সামনে দাড়িয়ে বললেন।
আমি বুঝলাম যে উনি আমার কথাই বলছেন।
শাওন ওর রুমের সোফায় বসে ছিল। ওনার মায়ের প্রশ্নে উনি কোনো উওর দিলেন না। শুধু ভ্রুকুচকে তাকালেন।
শাওনের মা বিরক্ত হয়ে বললেন, ভাল না লাগলে বল ডিভোর্স করিয়ে দিই, তারপর যাকে ভাল লাগে তাকে বিয়ে কর। এভাবে আর কতদিন!
শাওন এবার ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠল, ওকে। করিয়ে দেও।
এটুকু শুনেই আমি থমকে কয়েকপা পিছিয়ে গেলাম।
শাওনের মা রেগে বলল, তাহলে পছন্দ করিস না? বল?
শাওন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, প্লিজ বন্ধ করো এসব জিজ্ঞেস করা।
আমি আর ওখানে না দাঁড়িয়ে সিড়ি দিয়ে নেমে নিজের রুমে চলে গেলাম। রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে চুপচাপ স্তম্ভিত হয়ে আয়নার সামনে এসে দাড়ালাম।
উনি আমাকে ডিভোর্স দিতে চান! এটা শুনে খারাপ লাগলেও চোখ দিয়ে পানি পরল না৷
কারন যথেষ্ট হয়েছে, আমি আর নিতে পারছি না। এখন সত্যিই আর নিতে পারছি না। আমাকে পছন্দই যখন করে না তখন আমার সাথে এগুলো করার মানে কি? মজা করছেন উনি আমার সাথে!
আমি একটা অত্যন্ত বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজের হাতের চুড়িগুলো খুললাম আর মেঝেতে ফেলে দিলাম। এই শাড়িও চাইনা আমি।
কাবাড থেকে থ্রিপিস নিয়ে পরে নিলাম আর শাড়িটা বিছানার এক পাশে ফেলে রাখলাম।
তারপর বেলকোনিতে গিয়ে বসে রইলাম। রাতের খাবারের জন্য নিপা দরজায় নক করল। আমি এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললাম।
“খেতে চলো। সবাই ত এসে গেছে।” নিপা হাসিমুখে বলেই চলে যেতে লাগল।
আমি নিপাকে ডেকে বললাম, নিপা।
নিপা ঘুরে তাকালো, কি?
“আমি দুপুরে অনেক খেয়েছি এখন আর খেতে ইচ্ছে করছে না। ঘুমাবো এখন।” আমি ম্লান হাসির সাথে বললাম।
নিপা ঠোঁট উলটে মাথা নাড়ল আর বলল, ওকে।
তারপর চলে গেল।
আমি এসে বিছানায় বসে রইলাম।
কিছুই ভালো লাগছে না। এদিকে স্নোবেলের আজও কোনো খবর নেই। কোথায় যায় কে জানে!
আজ আর ওকে খুজতে গেলাম না। কিন্তু এদিকে রাত যতই হচ্ছে ঘুম আর আসছে না। তাই উঠে বেলকোনিতে এলাম।
হঠাৎ শাওন এসে আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওর কাছে নিয়ে বলল, কি হয়েছে তোমার! খাও নি কেন?
আচমকা এমন টান দেওয়ায় অনেক চমকে গেলেও পরক্ষণেই নাক মুখ শক্ত করে ফেললাম।
“কেন এসেছেন এখানে?” বলে উঠলাম আমি।
শাওন কপাল কুচকে বলল, What do you mean?
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলাম। তারপর বললাম, আমাকে একা ছেড়ে দিন। প্লিজ।
বলেই আমি পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলাম। কিন্তু শাওন আমার এক হাত ধরে টেনে আবার ওর সামনে দাড় করিয়ে দিল। আর রেগে বলল, “আজীব বিহেভ করছ কেনো!”
আমি বিরক্তি সাথে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, কেন কথা শুনছেন না! আর ভালো লাগছে না আমার।
শাওন এবার রেগে আমার দুই বাহু ধরে দেয়ালের সাথে দাড় করিয়ে বলল, “আমাকে রাগিও না। তাহলে..”
“তাহলে কি করবেন?” আমি ওনাকে থামিয়ে দিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে উঠলাম।
আরো বললাম, আমাকে ভালো না লাগলে ভেঙে দিন এই বিয়েটা। ছেড়ে দিন আমাকে। এই সম্পর্কের যেহুতু কোনো মানে হয় না তাই আমাদের আলাদা হওয়াই ভালো। আপনাকে কষ্ট করে কিছু করতে হবেনা আমিই চলে যেতে পারব।
শাওন স্তম্ভিত হয়ে বলল, মানে!
“মানে, খেলা বন্ধ করুন আমাকে নিয়ে। আমি থাকতে চাইনা এভাবে।” আমি রেগে বলে উঠলাম।
শাওন ভ্রুকুচকে স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে বলল,”আমি খেলছি তোমার সাথে!”
আমি রেগে চোখ নামিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
“তুমি ডিভোর্স চাচ্ছ আমার থেকে?” বলল শাওন।
আমি ওনার চোখের দিকে না তাকিয়েই বললাম, “হ্যা চাচ্ছি। যেহুতু এসব কিছুর কোনো মানে নেই তাই আমি মনে করব এই সবকিছুই একটা স্বপ্ন ছিল।”
শাওন শক্ত মুখে বলে উঠল, “Well.”
আমি অনেক চমকে ওনার চোখের দিকে তাকালাম।
উনি এত সহজে কিভাবে ‘আচ্ছা’ বলে দিলেন?
শাওন প্রচন্ড রেগে বলল, “যেহেতু এটা পুরোটাই তোমার কাছে একটা স্বপ্ন সো আমি যদি তোমার সাথে কিছু না করেই তোমাকে ছেড়ে দিই তাহলে আমি প্রচুর পস্তাবো।”
আমি চোখ বড়সড় করে শাওন দিকে তাকালাম।
“কি বলছেন আপনি এসব!” চমকে বলে উঠলাম।
উনি এক টান দিয়ে আমার ওড়নাটা খুলে মেঝেতে ফেলে দিলেন।
আমি অনেক চমকে গেলাম। তারপর উনি জোর করে আমাকে কাধে তুলে নিলেন।
“কি করছেন? ছাড়ুন প্লিজ। নামান আমাকে।” আমি বলে উঠলাম।
শাওন আমাকে বিছানায় নিয়ে ফেলল। আমি অনেক ঘাবড়ে গেলাম। কি করতে চাচ্ছেন উনি আমার সাথে!
আমি একটা ঢোক গিলে বললাম, কি..কি জন্য আমাকে এখানে এনেছেন!
শাওন রাগমিশ্রিত একটা হাসি দিয়ে বলল, সেটা করার জন্য যেটা আমার অনেক আগেই করা উচিত ছিল।
আমি চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে বিছানা থেকে নামতে চাইলাম। কিন্তু শাওন আমার দুই হাত ধরে আমাকে বিছানার সাথে চেপে ধরল।
আমি ভয়ে রীতিমতো হাপাচ্ছি। উনি সাথে সাথে আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে কিস করলেন। আমি চমকে বলে উঠলাম, কি করছেন আপনি!
সারা শরীর শিউরে উঠল আমার।

চলবে…

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।