১৬ বছর বয়স | পর্ব – ২৩ (Strange feelings)

১৬ বছর বয়স

আমি পিছন ফিরে তাকালাম। দরজার হুকের সাথে ওড়নাটা বেধে গেছে। শাওন আমার দিকে ঘুরে তাকালো। আমিও শাওনের দিকে তাকালাম তারপর চোখ নামিয়ে নিলাম। আর ওড়নাটা জলদি করে টান দিয়ে ছাড়িয়ে নিলাম। তারপর বের হয়ে এলাম।
পিশামনি বলল, রেডি?
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।
“চল তাহলে যাই” বলেই পিশামশাই আমার ল্যাগেজটা তার হাতে নিয়ে বের হয়ে গেল। আমি ঘুরে পিছনে তাকালাম। শাওন রুমেই আছে বেরও হয় নি। আমি ঘরটার আশেপাশে তাকিয়ে তারপর বের হয়ে গেলাম।
শশুড়বাড়ি পৌছাতে সন্ধ্যা পার হয়ে গেল। আমাকে দেখে পিসিমনি আর কাকিমনি হাসিমুখে এগিয়ে এলেন। সবাইকে অনেক দিন পর দেখলাম। দুরে দাঁড়িয়ে শাওনের মা আমার দিকে মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে। এই মহিলাকে আমি বুঝতে পারিনা। যেমন ছেলে তেমন শাশুড়ী।
পিশামনি আমাকে বলল, যা গিয়ে ফ্রেস হয়ে আয়। আমি ব্যাগ টেনে নিয়ে উপরে চলে এলাম। অনেক দিন পর এই রুমটায় ঢুকলাম। রুমে এসে বিছানায় বসে সামনে তাকাতেই শাওনের ছবিটা চোখে পরল। মাঝারি সাইজের ফ্রেমে বাঁধানো ছবি। ছবিটা হয়তো কেউ হঠাৎ তুলেছে। কারন ছবিটা দেখে এমন মনে হয় যে কেউ ওনাকে পিছন থেকে ডেকেছে তখন উনি গম্ভীর মুখটা ঘুরিয়ে তাকিয়েছে। ঠিক সেই মুহুর্তে তোলা। যদিও এই ছবিটা আমি ফুলসজ্জার পরের দিন থেকেই নামিয়ে আলমারিটার উপরে রেখে দিয়েছিলাম। হয়ত কেউ আবার টাঙিয়েছে। এটা উঠিয়ে এইজন্যই রেখেছিলাম কারন আমি এই রুমে দরজা আটকে শাড়ি পরতাম তখন আনইজি লাগত। ছবিটার দিকে তাকিয়ে আমি একটা হাসি দিলাম। পরক্ষণেই যেন আবার কেমন কেমন লাগতে শুরু করল। আমি বুকে হাত দিলাম। আর মনে মনে বললাম, এমন লাগছে কেন? আবার জ্বর আসবে নাকি?
যাই আগে আগে ফ্রেস হয়ে নিই। আমি ফ্রেস হয়ে বাহিরে এলাম। তখনি নিচ থেকে ডাক পরল।
আমি নিচে এলাম। শাওনের বাবা মাত্র হয়ত অফিস থেকে এসেছেন। আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, তুমি এখানে? শাওনও এসেছে নাকি?
শাওন নামটা শোনার সাথে সাথে আবার সেই কেমন কেমন লাগছে। বুঝলাম না এমন কেন হচ্ছে!
আমি কিছু বলার আগেই পিশামশাই বলল, একাই এসেছে। আমি নিয়ে এসেছি।
শাওনের বাবা বলল, ও। তা কত দিন আছ?
পিশামশাই বলে উঠল, যতদিন তোমার ছেলে, মানে শাওন নিতে না আসে। এক মাস পর এলে এক মাস পর, পাঁচ হলে পাঁচ, বছর হলে বছর।
আমি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে পিশামনির দিকে তাকালাম। কারন উনি আমাকে কেন নিতে আসবেন?
শাওনের বাবা বিষয়টা না বুঝে পিশামনির দিকে হা করে তাকিয়ে রইল।
হঠাৎ আমার শাশুড়ী মা আমাকে বলে উঠল, এই মেয়ে তোমাকে সালোয়ার কামিজ কে কিনে দিয়েছে? আমি দিয়েছি বলে মনে পরেনা।
শাশুড়ী উওরের জন্য ভ্রুকুচকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে। আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
তখনি শাওনের বাবা বলে উঠল, আহা, থাক না! কেন মেয়েটাকে ধমকাচ্ছ? পরেছে ত পরেছে। তাতে কি সমস্যা!
শাশুড়ী মা সাথে সাথে শাওনের বাবাকে ধমক দিয়ে বলল, তুমি চুপ করো। ওকে শাড়ি দেওয়া মানে সেটাই ও পরবে। আজ সালোয়ার, কাল শার্ট-প্যান্ট, পরের দিন শর্টস এগুলো চলবেনা আমাদের বাড়িতে আর।
আমি চুপচাপ তাকিয়ে রইলাম। পিশামনি বলল, নেও বউদি ভাত দিলে দেও নাহলে গেলুম।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে এসে শুয়ে পরলাম। কিছু ভাল্লাগছে না। তার উপর আবার কেমন কেমন একটা লাগছে। বুঝতে পারছি না কেন! হয়তো গ্রামের বাড়ি ঘুড়ে আসলে ভালো লাগবে। কিন্তু যা শাশুড়ী আমার। ধানী লংকা একটা। যেতে দিবে কিনা!
—–
রাতে শাওনের বাসার কলিং বেল বেজে উঠল। শাওন এসে দরজা খুলে দিয়ে দাঁড়ালো।
সুমনা এসেছে। শাওন বলল, তুই?
সুমনা স্নোবেলকে দেখিয়ে বলল, নিয়ে এসেছি ওকে। গলায় একটা নেমপ্লেট দিতে গিয়েই একদিন দেরি হলো।
শাওন স্নোবেলের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইল। ওর গলায় একটা বেল্ট আর সেটাতে স্নোবেল লেখা।
সুমনা হাসিমুখে তাকিয়ে বলল, মিলা কই?
“নেই।” বলে দরজা থেকে সরে সোফাতে গিয়ে বসলো।
সুমনাও পিছনে পিছনে ঢুকে এসে বসতে বসতে বলল, মানে টা কি?
শাওন ভ্রুকুচকে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, না বোঝার কি আছে? পিশামনি নিয়ে গেছে।
সুমনা হা হয়ে গেল আর বলল, কেন? কতদিনের জন্য?
শাওন বিরক্তির সাথে বলল, আমি এখন ঘুমাবো। কাল আবার অফিস আছে। তুই আর কিছু বলবি?
সুমনা নাক মুখ কুচকে বলল, না। কিন্তু এত ইরিটেড হচ্ছিস কেন? তোর ত আরো খুশি হবার কথা!
শাওন উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলল, হ্যা অনেক খুশি আমি।
বলেই শাওন নিজের রুমে চলে গেল। সুমনা একটু সন্দেহের চোখে তাকিয়ে রইল। স্নোবেল সারা রুমে ঘুরে ঘুরে মিলাকে খুজছে।
সকালে উঠে শাওন রুম থেকে বের হতে হতে সোফার দিকে তাকালো। স্নোবেল আমার সোফার উপর মনমরা হয়ে বসে আছে। শাওন কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিচেনে চলে গেল।
খাবার বানিয়ে এক প্লেট ওর নিজের চেয়ারের সামনে রেখে অন্য প্লেট আমার চেয়ারের সামনে রাখতে গিয়ে থমকে গেল। প্রতিদিনের অভ্যাস এর জন্য আজ দুই প্লেট খাবার রেডি করা হয়ে গেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে স্নোবেলের দিকে তাকিয়ে তারপর স্নোবেলের খাওয়ার বাটিটায় প্লেটের ডিম আর আলুভাজি ঢেলে দিয়ে স্নোবেলকে উদ্দেশ্য করে হাত দিয়ে তূরী বাজালো।
স্নোবেল ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। শাওন ওকে ইশারায় খাবার দেখিয়ে দিল। কিন্তু স্নোবেল আবার আগের মত মনমরা হয়ে বসে রইল।
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে তারপর নিজে খেতে বসে গেল। কিন্তু কয়েকগাল মুখে দিয়ে আর খেল না।
|
|
|
আমি অনেক কষ্টে পিশামনিকে বলে ম্যানেজ করে একদম সকাল সকাল গ্রামে আসতে পারলাম। তাও বেশি দিনের জন্য না। শাশুড়ীটা এখন আমাকে আবার এত মিস কেন করছে বুঝলাম না। কোথাও যেতে দিতে চাচ্ছে না। জলদি চলে আসার আদেশ দিয়ে দিয়েছে। আমাকেও তা অবশ্যই মানতে হবে। গরিলার মা ত আরো বড় গরিলা।
শাওনের বাসা থেকে আমার গ্রামে আসতে তিরিশ থেকে চল্লিশ মিনিট লাগে। অনেক দিন পর গ্রামে এসে যে কি ভাল লাগছে তা বলার বাহিরে।
ঘরে ঢুকার সাথে সাথেই কাকিমনি আমাকে দেখে চমকে গেল।
“তুই এখনে?”
আমি হাসিমুখে বললাম, বেড়াতে এসেছি।
প্রভাতী আমার গলা শুনে নিজের রুম থেকে বের হয়ে আসলো। আমাকে দেখে ভ্রু কুচকে বলল, বেড়াতে এসেছিস নাকি তোকে বের করে দিয়েছে!
প্রভাতী হলো কাকিমনির মেয়ে। আমাকে সে সহ্যই করতে পারেন। পারার কথাও না। কারন এ বাড়িতে শুধু একজন ই আমাকে সহ্য করতে আর বুঝতে পারত সে হলো আমার দাদু। বাবা মায়ের মারা যাবার পরে তার কাছেই মানুষ হয়েছিলাম। আমার বয়স যখন তেরো তখন তিনিও চলে গেলেন। দাদুর কারনে কাকা, কাকি, প্রভাতী কেউই আমার উপর সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারত না। দাদু মারা যাবার পর আমার উপর তাদের ক্ষোভ শুরু। এর চেয়েও বড় কারন ছিল দাদুর আমার নামে লিখে যাওয়া সব সম্পত্তি।
আমি হাসিমুখে বললাম, বের করে দেয়নি আমি নিজেই এসেছি।
প্রভাতী মুখ ভেংচি দিয়ে আবার নিজের রুমে চলে গেল। আমি নিজের রুমে এসে খাটে শুয়ে পরলাম। অনেক দিন পর নিজের খাটে শুলাম। ডান দিকে তাকাতেই খোলা জালানাটা চোখে পরল। সত্যিই এখন মন ভালো লাগছে। এখন শান্তিতে গোসল করে নিলেই ভাল। আমি উঠে কাঠের আলমারিটা খুললাম। খুলেই কপাল কুচকে গেল। শুধু শাড়ি গুলো আছে থ্রিপিস গুলো গায়েব। বুঝতে আর বাকি রইল না যে প্রভাতী সব নিয়ে গেছে। কি আর করার। আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে শাড়ি নিয়ে গোসলে ঢুকে গেলাম।
|
|
|
সুমনা টেবিলে একটা টোকা মেরে বলল, “শাওন?”
শাওন চমকে সুমনার দিকে তাকালো। তারপর হুস হলো মিটিং চলছে।
শাওন একটু হকচকিয়ে গিয়ে তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, oh yeah. What were you saying?
সামনের একটা ছেলেকে বলল শাওন। ছেলেটা একটু হকচকিয়ে বলল, স্যার আবার explain করব?
সুমনা শাওনের দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল, He already explained the plan. What’s on your mine?
শাওন উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলল, That’s all for today.
তারপর বের হয়ে গেল। সুমনা হা করে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
শাওন নিজের কেবিনে চেয়ারে বসে বাম দিকের কাচের জালানার দিকে তাকিয়ে আছে। সুমনা এসে ঢুকল। শাওন ওর দিকে তাকিয়ে নিজের ল্যাপটপ খুলল। সুমনা কপাল কুচকে তাকিয়ে শাওনের সামনের চেয়ারে বসল।
“কি হয়েছে তোর? রাতে ঘুমাস নি?” সুমনা বলল।
শাওন ল্যাপটপে মনোযোগ স্থির রেখে বলল, ঘুমাবো না কেন?
“দেখে ত তাই মনে হচ্ছে!” সুমনা ভ্রুকুচকে বলল।
“কার ঘুম হয় নি?” রবিন কথাটা বলতে বলতে সুমনার পাশের চেয়ারে এসে বসল।
শাওন এবার চোখ সরিয়ে রবিনের দিকে তাকালো।
সুমনা বলল, শাওনের। কেমন আজীব ব্যবহার করছে!
রবিন একটা হাসি দিয়ে বলল, হোয়াট?
তারপর শাওনের দিকে তাকিয়ে বলল, কি হয়েছে রে?
শাওন এবার রাগী চোখে তাকিয়ে বিরক্তির সাথে বলল, বললাম ত কিছু হয়নি!
বলেই শাওন উঠে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল।
রবিন আর সুমনা ভ্রুকুচকে শাওনের যাওয়ার দিকে তাকালো। তারপর সুমনা কিছু একটা চিন্তা করে হেসে দিলো।
রবিন বলল, তোর আবার কি হলো?
সুমনা হাস্য উজ্জ্বল চোখে রবিনকে বলল, আমার না, জিজ্ঞেস কর আমাদের শাওনের কি হয়েছে!
রবিন বলল, বুঝতে পারছি না। complicated মনে হচ্ছে।
সুমনা মুচকি হাসির সাথে না সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে উঠল, ও মিলার প্রেমে পরে গেছে।
রবিন চোখ ছোটো-ছোটো করে সুমনার দিকে তাকিয়ে রইল।
সুমনা বলল, মিলাকে ফেরত নিয়ে গেছে যে পিশামনি। উনিও পারে বটে!
রবিন বলে উঠল, হোয়াট! কেনো?
সুমনা সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল, কিন্তু যতদূর আমার মনে হয়, সমস্যা হলো এটাই যে একটা পিচ্ছি মেয়ের প্রেমে যে ও পরে গেছে এটা ওর ঠিক হজম হচ্ছেনা।
রবিন ভ্রু নাচিয়ে বলল, তাহলে এখন হজমি গুলিয়ে খাইয়ে দিলেই ত হয়।
সুমনা বলল, ঠিক।
রবিন বলল, গেল কই ও?
“কই আর যাবে, ছাদে আছে হয়ত!” সুমনা হাসিমুখে বলল।
|
|
বকুল আমার রুমে এসে ঢুকে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল, কুত্তা তুই এসেছিস আমাকে জানাস ও নি?
আমি আয়নার সামনে মাথার চুল চিরুনি করছিলাম। ওর চিৎকারে চমকে গিয়ে ঘুরলাম।
ও এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমিও ধরলাম। বকুল আমার সাথে বিছানায় বসতে বসতে বলল, তোকে ফট করে বিয়ে দিয়ে বিদেয় করে দিলো আমি জানলামও না। কত চেষ্টা করেছি তোকে ফোন করার পাই ই নি। আর তুই বিন্দাস এসে থাকছিস, আমাকে একবার বললিও না। অসভ্য মেয়ে।
আমি চোখ মুখ কুচকে বললাম, আজ ই এসেছি আমি।
বকুল চোখ পাকিয়ে বলল, ত আগে আমার কাছে ত আসিস নি। আমিই এলাম। বরকে ছেড়ে আসতে ভাল্লাগে না তাইনা? এজন্য ঘরের মধ্যেই বসে আছিস।
বলেই বকুল হেসে দিলো।
তারপর বলল, এই শোন আমিও বিয়ে করে নিয়েছি।
বকুল লজ্জার হাসি হেসে আমার দিকে তাকালো।
আমি চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে বললাম, কবে?
“এক মাস হয়ে গেছে, তোকে ত পেলামও না যে দাওয়াত দিব।” বলেই আমার মাথায় একটা বারি দিল বকুল।
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, মিস করে গেলাম তাহলে।
“তবে তুই ভালো সময় এসেছিস, হাসির বিয়ে। কাল গায়ে হলুদ। মজা হবে।” বকুল হেসে হেসে বলল।
আমি অবাক হয়ে বললাম, সবাই বিয়ে করে নিচ্ছে!
বকুল বলল, ত করবে না?
তারপর বকুল আমাকে ওর এক বাহু দিয়ে একটু ধাক্কা দিয়ে বলল, তোর ফুলসজ্জার গল্প শুনব।
আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, কি?
বকুল মুখ ভেংচি দিয়ে বলল, নাটক করিস না। তোর টা বল তারপর আমি আমার টা বলছি।
আমি ওভাবেই তাকিয়ে রইলাম।
বকুল ভ্রু উঁচু করে বলল, লজ্জা পাচ্ছিস? তাহলে আগে আমার টা শোন। অনেক মজা পাবি।
আগ্রহ নিয়ে বকুল বলা শুরু করল, আমাকে ফুলসজ্জার ঘরে বসিয়ে দিয়ে সে কত রকমের নির্দেশনা দিলো বড় বড় মহিলারা। বলল, যত যাই হোক আজ স্বামীকে বাধা দিবা না, স্বামী যা বলে শুনবা। আরো কত কি! আমি হা করে তাকিয়ে আছি আর শুনছি কিন্তু বুঝতে আর পারছি না যে কি জন্য এত কিছু বলছে। পরে তারা চলে যাবার কিছুক্ষণ পর বর আমার এসে ঘরে ঢুকলো। কিন্তু গাধাটা অনেক লাজুক। আমি ঘোমটা তুলেই বসে ছিলাম কারন গরম লাগছিল। বর আমার মাথা নিচু করে এসে আমার ওপাশে বসে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বলল, আ..আমি ঘুমাতে গেলাম। তুমিও ঘুমিয়ে পরো।
এটুকু বলেই বকুল হেসে দিলো। আমি এখানে হাসির কিছুই পেলাম না।
বকুল বলল, আমিও ঘুমিয়ে পরলাম। কেমন ধরনের ফুলসজ্জা যে হলো বুঝলাম না। এভাবেই প্রতি রাতে এসে এক কোনায় শুয়ে পরে আর বলে আমি ঘুমালাম তুমিও ঘুমাও। কিন্তু একদিন কি হলো জানিস?
আমি না সূচক মাথা নাড়িয়ে বললাম, কি?
একদিন বৃষ্টিতে খুবই ভিজলাম, ভিজে বিড়াল হয়ে আম বাগান দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। উনি কোথা থেকে টপ করে এসে আমার হাত ধরে বললেন, জ্বর বানাতে চাও নাকি এভাবে ভিজছ কেন?
ওনাকে দেখে বুঝলাম উনি আমাকে খুজতে গিয়ে ভিজে চুপচুপ হয়ে গেছেন।
পরে আম বাগানের ওই ঘরে এসে দুইজন দাড়ালাম। মনে আছে সেই ঘরটা আমরা পুতুল খেলতাম?
আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম। বকুল আবার বলা শুরু করল, ভিজে গায়ে অনেক ঠান্ডাও লাগছিল। এদিকে সন্ধ্যেও নেমে এসেছিল। হঠাৎ খেয়াল করলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি ত না বুঝে বলে উঠলাম, কিছু লেগে আছে আমার মুখে?
উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে হাত ধরে টেনে ওনার কাছে নিয়ে এলেন। তারপর…”
তারপর বকুল যা বলল তা শুনে আমি ছিটকে দূরে সরে গিয়ে বললাম, ছি কি বলছিস তুই এসব।
বকুল লজ্জা পেয়ে কথা গুলো বলছিল। আমার ছি শুনে চোখ ও চোখ বড়সড় করে বলল, ঢং? তোর বর এগুলো করে না নাকি?
তারপর আবার লজ্জা লজ্জা পেয়ে বলতে লাগল, এরপর থেকে উনি আমার সাথে রাতে….
আমি চমকে ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, না আমি আর শুনতে চাইনা। তুই চুপ কর।
বকুল বলে উঠল, নাটক করিস আমার সাথে?
তখনি প্রভাতী এসে রুমে ঢুকল। আর রেগে বলল, কিসের চিল্লাচিল্লি এত?
বকুল ভ্রুকুচকে বলল, দুই বান্ধবী অনেক দিন পর এক জায়গায় হয়েছি। একটু ত চিল্লাবই।
প্রভাতী বলল, তোর বর তোকে খুজছে। গল্প না করে যা এখন।
বকুল নাক মুখ কুচকে বলল, উফ, এখন আবার কি হলো।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, শোন আজ আর আসা হবেনা। আমার শাশুড়ী অসুস্থ। তুই কাল রেডি থাকিস। বিকেল থেকে হলুদ। তোকে নিয়ে যাব। এখন বর ডাকছে। গেলাম।
বকুল হাসিমুখে বিদায় জানিয়ে বের হয়ে চলে গেল।
কিন্তু ওর বলা কথাগুলো হজম করতে না পেরে আমি সামনের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম।
|
|
সুমনা ছাদে এসে দেখলো শাওন রেলিং এ দুইহাত রেখে তার উপর নিজের মুখ রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। সুমনা ওর পাশে এসে দাড়িয়ে একটা কফির মগ এগিয়ে দিলো আর বলল, কফি।
শাওন ওর কথা শুনে উঠে সোজা হয়ে দাড়ালো আর কফি নিলো।
সুমনা বলল, “বিজনেস বিজনেসের জায়গায়, পারসোনাল প্রবলেম পারসোনাল প্রবলেমের জায়গায় রাইট? সো…যে জিনিস তোকে বেশি প্যারা দেয় সেটা এক নয় ছেড়ে দে নাহলে….” সুমনা থেমে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আবার বলল, “যেটা তুই করিস সবসময়, Deal with it face to face. Aren’t you good at dealing?”
শাওন ভ্রুকুচকে তাকালো। সুমনা ঘুরে চলে গেল।
শাওন ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তারপর কফির মগে চুমুক দিল।
আজ জলদিই বাসা ফিরে এলো শাওন। ঢুকে সোফার দিকে তাকাতেই স্নোবেলকে দেখল। সে এখনো আমার সোফাতেই বসে আছে। শাওন স্নোবেলের খাবার বাটির দিকে তাকিয়ে দেখল সে এখনো কিছু খায় নি।
শাওন এগিয়ে এসে ওর হাতের কোটটা সোফায় রেখে ভ্রুকুচকে স্নোবেলের দিকে তাকালো।
স্নোবেল দুই পায়ে মুখ রেখে মনমরা হয়ে বসে ছিল। শাওনকে দেখে মুখ তুলে ক্ষোভের সাথে থাকিয়ে দুইবার ঘেউঘেউ করে চুপ হয়ে গেল।
শাওন বিরক্তির সাথে বলে উঠল, যেমন মালিক তেমন কুকুর।
তারপর নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে নিজের টাইটা ঢিলে করে নিলো।
হঠাৎ করে ফোনে মেসেজের রিং আসলো পর পর কয়েকবার। ফোন হাতে নিয়ে ওপেন করতেই রবিনের মেসেজ পেল। কতগুলো ছবি পাঠিয়েছে whatsapp এ।
শাওন মেসেজে ঢুকলো। ছবিগুলো দেখে থমকে তাকিয়ে রইল। ওর আর আমার ছবি। যেদিন ও কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিল আর আমি ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তারপর ফোনটা পাশে রেখে উঠে বসলো।
তখনি স্নোবেল এসে শাওনের রুমে ঢুকলো আর বসে শাওনের দিকে তাকিয়ে রইল।
“What?” শাওন কপাল কুচকে বলল।
স্নোবেল উঠে হেটে হেটে বাথরুমের সামনে গিয়ে দাড়ালো। দরজাটা আগানো তাই ঢুকতে পারছে না। শাওন এসে ওর পিছনে দাড়িয়ে ওর দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে দরজাটা খুলে দিল। স্নোবেল বাথরুমে ঢুকে এক পাশে পাতিয়ে রাখা পলিথিনে টয়লেট 💩 করতে বসে গেল।
শাওন ঢুকে দেখে অবাক হয়ে গেল। স্নোবেল মুখ ঘুরিয়ে শাওনের দিকে ক্ষোভের সাথে তাকালো।
শাওন স্তম্ভিত হয়ে বলল, yeah yeah, I’m going. You go on.
বলেই শাওন বের হয়ে গেল।
রাতের খাওয়ার সময়ও স্নোবেল আমার সোফার উপর বসে আছে। শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল, I find no difference between them.
তারপর হাতে তূরী বাজিয়ে স্নোবেলকে বলল, hey, Come here and eat.
স্নোবেল ওভাবেই বসে রইল। শাওন স্নোবেলের দিক থেকে চোখ সরিয়ে আমার চেয়ারের দিকে তাকালো।
তারপর উঠে খাবারের বাটিটা নিয়ে স্নোবেলের সামনে রাখল।
স্নোবেল মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো। শাওন ভ্রুকুচকে বলল, I also dislike you. Disgusting. গেছে ত গেছে এটাকে নিয়ে যায়নি কেন বুঝিনা!
শাওন বিরক্তির সাথে নিজের রুমে চলে গেল।
সকালে আজ অনেক দেরি করে উঠল শাওন। তারপর রুম থেকে বের হয়ে সোফার দিকে তাকালো। স্নোবেল এখনো কিছু খায় নি।
শাওন ওর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে তারপর কিচেনে গিয়ে এক মগ কফি বানিয়ে নিয়ে ছাদে চলে গেল।
ভালই রোদ উঠেছে ছাদে। কফির মগে চুমুক দিয়ে পাশে তাকাতেই দেখল স্নোবেল বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অর্থাৎ সেও পিছন পিছন চলে এসেছে।
শাওন কিছুক্ষন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে তারপর সামনের দিকে তাকালো। অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে তারপর স্নোবেলের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল, লেটস গো।
|
|
আমি হলুদ শাড়ি পরে রেডি হয়ে বেরিয়ে এলাম। এখনো বকুল আসছে না। আমি হাটতে লাগলাম। হাসির বাড়ি যদিও চিনি কিন্তু বকুলের সাথেই যেতে চাচ্ছি। কিছুদূর যেতেই একটা দোকান চোখে পরল। আর কি দোকানের নামটা দেখে আমি তাকিয়ে রইলাম। শাওন স্টোর।
আবার কেমন কেমন লাগছে। উফ, যাই পানি খাই। পানি খেলে হয়ত ভালো লাগবে।
ফিরে এসে ঘরে ঢুকলাম। তখনি একটা ছেলে কন্ঠ কানে ভেসে এলো।
“আরে মিলা নাকি?” মিশু বলল।
আমি ওনাকে দেখে মাথা নাড়লাম। উনি আমার দিকে অন্য রকম চাহনিতে তাকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বলল, অনেক বড় হয়ে গেছ! সেই তিন বছর আগে তোমাকে লাস্ট দেখেছিলাম। আর অনেক সুন্দরও হয়ে গেছ!
প্রভাতী সামনেই দাড়িয়ে ছিল। ও উপহাস মূলক ভাবে বলল, হ্যা বিয়েও ত করেছে।
মিশু একটু চমকে গেল। তারপর প্রভাতীর দিকে তাকিয়ে বলল, কবে? কার সাথে?
প্রভাতী হাসতে হাসতে বলল, আর বলো না, ফুলসজ্জার দিন ই বর গেছে ছেড়ে চলে।
মিশু আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে বলল, কেমন ছেলে যে ফুলসজ্জায় এত সুন্দর মেয়েকে ছেড়ে চলে যায়?
আমার অসস্তি লাগছে ওনার কথা বার্তায়। তাই আমি বললাম, আমাকে যেতে হবে।
আমি ঘুরে দাঁড়ানোর সাথে সাথে রিহা বলল, দাড়াও, যাচ্ছ কোথায়?
আমি অনিচ্ছা থাকার সত্বেও ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললাম, হাসির হলুদে।
তারপর বের হয়ে গেলাম।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান অনেক সময় চলল। প্রায় সন্ধ্যেই হয়ে এলো। বকুল বলল, তোর বরকে আনিস নি? আমি ত ভুলেই গেছিলাম কাল তোর বরের কথা জিজ্ঞেস করতে। দেখিও নি।
আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, গরিলাটা আসেনি। আসবেও না।
বকুল বলল, গরিলা?
বকুল জোড়ে হেসে দিল। তারপর বলল, ঝগড়া করে বাপের বাড়ি এসেছিস নাকি? আমি এখনো রাগ করে একবারো যাই নি রে। যাব ভাবছি রাগ করে একদিন চলে।
বলেই বকুল হাসল। আমি বললাম, অনুষ্ঠান শেষ হতে ত আরো দেরি হবে। আমি ফিরে যাই এখন।
বকুল বলল, “হ্যা,একটু পরে আমিও যাব। কাল আসছি তোর গল্প শুনতে। ঝগড়া আর ফুলসজ্জা দুটোই শুনবো।”
আমি চোখ বড়সড় করে তাকালাম।
সত্যিই অনেকটাই অন্ধকার হয়ে গেছে। তবে চাঁদের আলোয় এভাবে হাটতে ভালই লাগছে।
হঠাৎ পিছন থেকে এসে কেউ আমাকে হাত ধরে টেনে এক পাশে নিয়ে এলো। আমি অনেক চমকে গেলাম।
“একা একা কোথায় যাচ্ছ?” একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল মিশু।
আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, বা..বাড়ি যাচ্ছি।
“একটু পরে যাও।” অন্যরকম সুরে বলেলেন উনি কথাটা।
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম, আ…আমি এখনি যাব।
বলেই ঘুরে চলে যেতে চাইতেই উনি আমার হাত ধরে টেনে এনে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।
আমি অনেক চমকে গেলাম আর ভয়ে শুকিয়ে গেলাম।
“কি করছেন আপনি ছাড়ুন আমাকে।” আমি ওনাকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করে বললাম।
উনি কোনো কথাই যেন কানে শুনতে পাচ্ছেন না। আমার শাড়ি উপর দিয়ে কোমড় এমন ভাবে খামচে ধরলেন যে আমি কেদেই দিলাম।
“কি করছেন আপনি ছাড়ুন আমাকে।”
উনি আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে অনেক জঘন্য একটা কথা বলার সাথে সাথে আমি একটা জোড়ালো ধাক্কায় ওনাকে সরিয়ে দিলাম।
উনি রেগে এসে আমার গলা চিপে ধরলেন। আমি দুই হাত দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। উনি আচমকা এক ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দিলেন। আমি পরে গেলাম আর কাশতে কাশতে ওনার দিকে তাকালাম।
উনি একটা জানোয়ারের চেয়েও খারাপভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। ভয়ে আমার পুরো গা শিউরে উঠছে। তখনি আমার শাওনের একটা কথা মনে পরে গেল। সেটা হলো, নিজেকে কিভাবে প্রটেক্ট করতে হয় জানোনা?
আমি ফট করে এদিক ওদিক তাকাতেই একটা ইট দেখতে পেয়ে গেলাম। উনি আমার কাছে এগিয়ে আসার আগেই আমি সেটা হাতে নিয়ে ওনার মাথায় ছুড়ে মারলাম।
সে ব্যথায় মাথা ধরে চিৎকার করে উঠল। আমি আর এক মুহুর্তের জন্য অপেক্ষা না করে পালিয়ে এলাম। এসেই নিজের রুমে ঢুকে বিছানা পরে জোরে জোরে কাদতে লাগলাম।
সত্যিই আমি আর এক মুহুর্তের জন্যও এখানে থাকতে চাই না। এত খারাপ কিভাবে হতে পারে মানুষ। আমি উঠে বসে দুই হাটুর মধ্যে মুখ গুজে কাদতে লাগলাম।
“কি হয়েছে তোমার?”
আমি শাওনের গলা শুনে চমকে মাথা তুলে তাকালাম। শাওন ওর ফোনের লাইটটা জ্বলিয়ে এক হাতে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি সাথে সাথে কাদতে কাদতে বিছানা থেকে নেমে এসে ওনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
শাওন একটু অবাক হয়ে বলল, কি হয়েছে?
আমি কাদতে কাদতে বললাম, এটা যেন স্বপ্ন না হয়। প্লিজ। এটা যেন…
শাওন শান্ত গলায় বলল, এটা স্বপ্ন না।
আমি শাওন পিছনের শার্ট খামচে ধরলাম দুই হাতে। আরো জোরে কাদতে কাদতে জড়ানো গলায় বললাম, আমি মনে করেছিলাম আপনি আসবেনই না।
শাওন আর কিছুই বলল না। চুপচাপ হাতে ফোনের লাইটটা ধরে দাঁড়িয়ে রইল।
আমি অনেক সময় পর কান্না থামালাম। কিন্তু ওনাকে ছাড়লাম না। যদি উনি ছাড়ার সাথে সাথেই চলে যায় তাহলে? যদি এটা স্বপ্ন হয় তাহলে? তাই আমি ধরেই রাখলাম।
হঠাৎ আমার খেয়াল হলো অনেকক্ষণ ধরে পায়ের কাছে কিছু একটা হেটে বেড়াচ্ছে। আমি দেখার জন্য শাওনকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায়ই মাথা নিচু করলাম।
স্নোবেল? তারমানে এটা সত্যিই স্বপ্ন না?
আমি জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই মুখ তুলে শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন আমার চোখের দিকে তাকালো। আমি সাথে সাথে ওনাকে ছেড়ে সরে দাড়ালাম। আর একপলক ওনার দিকে তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলাম। তারপর স্নোবেলের দিকে ঝুঁকলাম। কোমড়ের কাছে ব্যথার জ্বলে যাচ্ছে আমার। তাও ঝুকলাম। স্নোবেলের মাথায় হাত দিতেই সে মহাখুশিতে লাফাতে লাগল আর গোল গোল ঘুরে খুশি প্রকাশ করতে লাগল।
আমি হাসলাম। শাওন রুমের লাইট জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য সুইচ খুজে বের করে লাইটটা জ্বালিয়ে দিল।
আমি স্নোবেলের কাছ থেকে উঠে দাড়িয়ে শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন ওর শার্টের দিকে তাকিয়ে আছে। আজও আমি ওনার শার্ট ভাসিয়ে দিয়েছি।
“আ..আপনি যে সত্যিই আসবেন আমি…।” আমি এইটুকু বলেই শাওনের চোখে চোখ পরতেই থেমে গেলাম। আর অন্য দিকে তাকালাম। শাওন আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে আবার আমার দিকে তাকালো। তাকিয়েই ভ্রুকুচকে ফেলল।
আমি ওনার দিকে তাকালাম। ওনাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে থেমে থেমে বললাম, ক..কি.. দেখছেন এ..ভাবে?
শাওন আমার কাছে এসে দাড়িয়ে বলল, গলায় কি হয়েছে তোমার?
আমি সাথে সাথে নিজের গলায় হাত দিলাম। শাওন এবার আমার হাতের দিকে তাকালো। আমি শাওনের দিকে তাকিয়ে তারপর নিজের হাতের দিকে তাকালাম। হাতও ছিলে গেছে।
সাথে সাথে আমি আমার হাত দিয়ে কোমড়ের ব্যথা জায়গাটা ঢেকে রাখলাম। কিন্তু লাভ হলো না। উনি আমার হাত টেনে সরিয়ে আমাকে পিছনে ঘুরালেন। উনি আমার কোমড় স্পর্শ করার সাথে সাথে আমি কেপে উঠলাম।
উনি আমাকে টেনে আবার ওনার দিকে ঘুরিয়ে বললেন, কে করেছে এসব?
আমি শাওনের চোখের দিকে তাকালাম তারপর আবার চোখ নামিয়ে নিলাম। ওনার তাকানোতেই রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
“এ…গুলো এমনিই..”
আমার কথা শেষ হবার আগেই শাওন আমার দুই বাহু ধরে ওনার কাছে নিয়ে এসে জোরে বলে উঠলেন, “Who the hell dared to touch you?”
আমি চমকে উঠে ওনার চোখের দিকে তাকালাম। ওদিকে স্নোবেলও আমার দিকে তাকিয়ে চারবার ঘেউঘেউ করে উঠল।
আমি অবাক হয়ে স্নোবেলের দিকে তাকালাম। গরিলাটা স্নোবেলকে কবে হাত করে নিয়েছে?
শাওন আমাকে বাহু ধরে ওর আরো কাছে নিয়ে এসে কড়া চোখে তাকিয়ে বলল, কে করেছে?

চলবে…

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

Useful links

2024 © Golpo Hub. All rights reserved.