১৬ পৃষ্ঠায় | পর্ব – ৫

7 Min Read

সর্ণালি রান্নাঘরে এসে নিনি কে বলে,, তোমার আজ রান্না করতে হবে না, তুমি গিয়ে পরিপাটি হয়ে থাকো।” বলেই চলে যায় সর্ণালি। নিনির এখন চিন্তার ভর ধরেছে না জানি কি হয় তার এই মহিলাটির সাথে। নিনি আর রান্নাঘরে দাঁড়ালো না সে রুমে চলে যায়। সর্ণালি পুরো ঘর ভালোভাবে দেখলেন ঘর পরিষ্কারিই আছে তারপরেও দেখছে বলা তো যায় এই মিলিফু টা কখন কি হুট করে বলে দেয়। সাড়ে বারোটা বেজে আসলো সাথে সাথে দরজায় জোরে জোরে টোকা পড়ে। সিনান গিয়ে দরজা খুলে দিল মিলিফু কে দেখে সে লম্বা মুচকি হাসি দেয় হাসতে ইচ্ছা নেয় তারপরেও জোরপূর্বক হাসল। মিলিফু অত্যন্ত গম্ভীর মুখোভাব নিয়ে ঘরে ঢুকলো সর্ণালি দ্রুত এসে হাত থেকে ব্যাগটি নিয়ে নিল সিনান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,, এখানে থাকবে নাকি?”
অর্সা ও সর্ণালিও মুচকি হেসে বসতে বলেন মিলিফু বসেই ভালোভাবে চোখ বুলালো আশেপাশে। সর্ণালি অর্সাকে ইশারা করলো নিনি সাথে নিয়ে আসতে। অর্সা চলে যায় রুমে। সিনান গিয়ে পানি নিয়ে আনে মিলিফু এমনভাবে গ্লাসের দিকে তাকালো যেন পানি না স্বয়ং বিষ নিয়ে আসছে খেতে। সে পানি খেল না।
অর্সা নিনি কে নিয়ে আসে নিনিকে মিলিফুর সামনে দাঁড় করিয়ে হাসিমুখে বলে,, এনোনের বউ।” মিলিফু এইবার উঠে দাঁড়ায় নিনির কাছে এসে দুই আঙুল দিয়ে তার গাল চেপে ধরে এপাশ ওপাশ করে বলে,, চেহারা দিক দিয়ে ঠিকঠাক আছে মাইয়া।” নিনি এবার সম্পূর্ণ দৃষ্টিতে মিলিফুর দিকে তাকায়,, এক মোটা ফ্রেমের চশমা, চুল সবগুলো পাক ধরেছে, বয়সে ৬০/৬৫ মধ্যে পড়বে, অধিক সুস্বাস্থের অধিকারী মহিলা। নিনি চোখ সরিয়ে নেয়। মহিলাটি বলে,, রান্নাবান্না পারিনি বৌমা?” সর্ণালি হেঁসে বলল,, হ্যাঁ, বেশ ভালো রান্না পারে।” মহিলাটি কুটনি চোখে তাকিয়ে আছে নিনির দিকে বলে,, এই মেয়ে হেঁটে দেখাও।” সাথে সাথে সিনান মুখ কুঁচকে ফেলে সর্ণালি অর্সার দিকে তাকায় কি বলে এই মহিলাটি!
নিনি তার মাসি অর্সার দিকে এক পলক তাকায় অর্সা ইশারা করছে হেঁটে দেখাতে। নিনি হেঁটে দেখালো। এবার মহিলাটি বলে,, মাথার উপর থেকে ওড়নাটি সরাও দেখি মাইয়ার চুল কত বড়?”
নিনি তাও করলো মিলিফু দাঁড়িয়ে ধমকে বলেন,, কিরে মাইয়ার চুল এতো ছোট ক্যান? আমাদের সময় প্রত্যেকেরই চুল হাঁটু অব্দি লম্বা ছিল আর এই মেয়ের চুল পিট অব্দি কেন?” সিনান মনে মনে প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলে,, কেন এতো লম্বা চুল দিয়ে কি কাউকে কুয়া থেকে উঠাবে নাকি ***।” নিনি আবার মাথায় ওড়না দিয়ে দিল। চুল নিয়ে ঘটনা লম্বা হয়ে যাচ্ছে দেখে সিনান রুমে গিয়ে এনোন কে কল করে। অপাশ থেকে এনোন বলে,, হ্যালো?” সিনান দ্রুত বলে,, ভাইয়া তাড়াতাড়ি এসো ঘরে অনেক বড় ঝগড়া লাগছে।” হুট করে এমন কথা শুনাতে এনোন কিছু না বুঝে বলল,, মানে? কার সাথে ঝগড়া লাগল?” সিনান শুধু এতো টুকু বলে,, তাড়াতাড়ি আসো বলতে পারবো না এখানে।” বলেই টুপ করে ফোন কেটে দেয়। এনোন দ্রুত ফাইল বন্ধ করে ব্লেজার নিয়ে ঘরের জন্য বেরিয়ে যায়।
সবাই মিলিফু কে বুঝানো চেষ্টা করছে। ঘটনা থামানো চেষ্টা করছে কিন্তু এই কুটনি বুড়ি টা ঘটনা শান্ত করছে না বাড়াতে আছে।
দরজায় বেল পড়তেই সিনান গিয়ে দ্রুত দরজা খুলে। এনোন একহাতে মোবাইল ও অন্যহাতে ব্লেজার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এনোন কে সবাই চুপ করে গেলেও এই মিলিফু টি চুপ করে না হুট করে বলে বসে,, এই মেয়েটা এনোনের জন্য কুফা হয়ে দাঁড়াবে, ঘরের মধ্যে অলক্ষ্মী এনেছো।” এনোনের মাথা গরম হয়ে যায় এমন কথা শুনে গাম্ভীর্য ধরে রেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,, হয়েছে কি, এতো অশান্তি কেন?” কেউ কিছু বলে না। এনোন এবার জোরে বলে,, এমন মরা ছরা ও ফালতু কথা আমি নেক্সট টাইম থেকে যেন না শুনি, যদি কেউ বলে সে বাহিরে গিয়ে বলবে আবর্জনা দেখতে চাই না আমার ঘরে।” এ কথাটি সে কাকে বলতে চাইছে সবাই ভালোই বুঝলো, সিনান প্রশান্তির হাসি দেয়, নিনির কান্না পাচ্ছিল কিন্তু এনোনের কথা শুনে তার কান্না থেমে যায় অবাক হয় সে। এনোন নিজের রুমের দিকে যেতে চাইলে মিলিফু বললো,, বুঝছি এই মাইয়া টা আসার পর তুই কতটা পরিবর্তন হইছোছ, মাইয়া টা তোকে বশ করছে কিন্তু আমি থাকতে…।”
পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে এনোন ‘Nonsense’ বলে রুমে চলে যায়। মহিলাটি অপমানিত বোধ করলো বলল,, আমি এখনি গ্ৰামে ফিরে যাচ্ছি, আর কখনো আসবো না এখানে।” বলে ব্যাগ হাতে নিল। সিনান মনে মনে খুশি হয়ে যায়। কাউকে কোন কিছু বলার সুযোগ টুকু না দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় মিলিফু। সিনান দরজা বন্ধ করে দেয়। মিলিফু পেছনে ফিরে তাকায় দরজা বন্ধ হতে দেখে আরো বেশি অপমানিত বোধ করলো ব্যাগ শক্ত করে চেপে চলে যায়। নিনি সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে রুমে চলে যায়। দেখে এনোন মাত্র গোসল সেড়ে বের হয়েছে নিনি তার সামনে এসে মাথা নুয়ে মুগ্ধ গলায় বলে,, ধন্যবাদ আমার জন্য…।” এনোন কথার মাঝেই বলে,, এতো খুশি হওয়ার দরকার নেই, আমি আগেও বললাম আমার ঘরে আবর্জনা দেখতে চাই না, তাই বাহিরে এ কথাগুলো বলা, তোমার সাপোর্ট হয়ে বলিনি।” বলে সে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নিনি চুপ করে শুনলো এমন কথা সে আশা করিনি সে ভেবেছিল এনোন হয়ত তার পক্ষে হয়ে বলেছিল কিন্তু এখানে…।
রাত,,,,, 🌸
রাতে সবাই খাবার খেয়েই ঘুমোতে চলে যায়। দুপুরের ব্যাপারটি নিয়ে কেউ কোন কথা বলল না। চুপ করে ছিল। রুমে এসে এনোন ল্যাপটপ খুলে বসে। নিনি এনোনের দিকে এক পলক তাকিয়ে সোফা থেকে বালিশ নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। এনোন খেয়াল করলেও না দেখার ভান ধরে ছিল। বারান্দা সোফার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে নিনি। রাত গভীর হতে চলল। চারিদিকে নিস্তব্ধ হয়ে পরিবেশ। এনোন অফিসের কাজ সেরেই বারান্দায় আসে দেখে নিনি শীতে কাঁপছে। কাছে এসে কপালে হাত দেয় এনোন। জ্বর আসছে নিনির। সাথে সাথে ভড়কে উঠে এনোন। এ সময়ে জ্বর কিভাবে? তখনি হঠাৎ এনোনের মনে পড়লো গতকালের ঘটনা যখন সে নিনি কে বাথটাবে ডুবানোর পড় নিনি বলেছিল,, তিনবার গোসল করতে হচ্ছে আমার।” এই জন্যই হয়ত জ্বর আসছে তার। নিজের কাজে নিজেই বিরক্ত লাগছে এনোনের। সে আস্তে করে কোলে তুলে নেয় নিনিকে। বাচ্চাদের মত গুটিয়ে নিল নিনি এনোনের কোলে কিন্তু এখনো তার ঠোঁট দুটো কাঁপছে। এনোন তাকে রুমে নিয়ে গিয়ে শুয়ে দিয়ে আলমারি হতে কম্বল বের করে তার গায়ে টেনে দিল। শুয়ে দেওয়ার পর সে চিন্তা করলো এখন সে কোথায় ঘুমাবে? নিনির কপালে আবার হাত দিতেই দেখে জ্বর এখনো আছে। সে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

চলবে…

[ কেমন হচ্ছে জানাবেন। ]

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।