আমি পদ্মজা | পর্ব – ৫৭

13 Min Read

ঘন কুয়াশা বেয়ে শীতের বিকেল নেমেছে ধীরে ধীরে। পদ্মজা আলোকে বুকের সাথে মিশিয়ে দু’তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখের দৃষ্টি বাড়ির গেইটের দিকে। বাড়ির সব পুরুষেরা সকালে বেরিয়েছে রানির খোঁজে। এখনও ফেরেনি। যে নিজের ইচ্ছায় হারিয়ে যায় তাকে কী আর খুঁজে পাওয়া যায়? তবুও পদ্মজা চাইছে,রানিকে যেন অক্ষত অবস্থায় ফিরে পাওয়া যায়। আলো সারাদিন মায়ের জন্য কেঁদেছে। মায়ের আদরের জন্য ছটফট করেছে। আলোর অস্থিরতা দেখে পদ্মজার দুই ঠোঁট কেঁপেছে। জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করেছে মায়ের মতো আদর করার। কিন্তু সে তো আলোর মা না, আলোর মায়ের গন্ধ তার গায়ে নেই। রানি মা হয়ে কী করে পারল আলোকে ছেড়ে যেতে? পৃথিবীর সব মা একরকম হয় না। সব মা সন্তানের জন্য ত্যাগ করতে জানে না। দুঃখ আপন করে নিতে জানে না। পদ্মজা আলোর কপালে চুমু দিল। মেয়েটা চুপ করে আছে। চারিদিক কুয়াশায় ধোঁয়া ধোঁয়া । দিন ডুবিডুবি ৷ স্তব্ধ হয়ে আছে সময়। এক তলা থেকে আমিনার বিলাপ শোনা যাচ্ছে। তিনি এতো কাঁদতে পারেন! পদ্মজা ঘুরে দাঁড়াল ঘরে যেতে। তখনই সামনে পড়লেন ফরিনা। পদ্মজা হাসার চেষ্টা করে বলল,’আম্মা,আপনি!’
‘আলো ঘুমাইছে?’
‘না,জেগে আছে।’ পদ্মজা আলোর কপালে আবার চুমু দিল।
ফরিনা বললেন,’রানিরে কি পাওন যাইব?’
‘জানি না আম্মা।’ পদ্মজার নির্বিকার স্বর।
‘আলমগীর রুম্পারে লইয়া কই গেছে জানো তুমি? ওরা ভালো আছে তো?’
‘আপনাকে সেদিনই বলেছি আম্মা,জানি না আমি।’

ফরিনা আর প্রশ্ন করলেন না। তিনি নারিকেল গাছের দিকে চোখের দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন। পদ্মজা সেকেন্ড কয়েক সময় নিয়ে ফরিনাকে দেখে। ফরিনা আগের মতো ছটফটে নেই। নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। আগে মনে হতো তিনি মনে মনে কোনো কঠিন কষ্ট পুঁতে রেখেছেন কিন্তু এমন কোনো শক্তি আছে যার জন্য তিনি হাসতে পারেন,বেঁচে আছেন। আর এখন দেখে মনে হচ্ছে,সেই শক্তিটা নষ্ট হয়ে গেছে! জীবনের আশার আলো ডুবে গেছে। কথাগুলো ভেবে পদ্মজা চমকে উঠে! সে তো আনমনে নিজের অজান্তে এসব ভেবেছে! কিন্তু সত্যিই কি এমন কিছু হয়েছে? পদ্মজা আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করল,’ আম্মা,আপনি আমাকে কিছু বলতে চান?’
ফরিনা তাকান। পদ্মজা তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে রইল ফরিনার দিকে। ফরিনা ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন। হঠাৎ যেন পাহাড়ের শক্ত মাটির দেয়াল ভেঙে ঝর্ণধারার বাঁধ ভেঙে গেল। পদ্মজা খুব অবাক হয়। ফরিনা আঁচলে মুখ চেপে ধরেন। পদ্মজার উৎকণ্ঠা, ‘আম্মা, আম্মা আপনি কাঁদছেন কেন? কী হয়েছে? বলুন না আমাকে। কী বলতে চান আমাকে?’
আচমকা ফরিনার কান্নার শব্দে আলো ভয় পেয়ে যায়। সে জোরে জোরে কাঁদতে থাকে। পদ্মজা আলোকে শান্ত করার চেষ্টা করে। বারান্দায় পায়চারি করে আদুরে কণ্ঠে বলে,’মা,কাঁদে না,কাঁদে না। কিছু হয়নি তো। মামি আছি তো।’
আলো জান ছেড়ে কাঁদছে। কান্না থামাচ্ছে না। বেশ অনেক্ষণ পর আলো কান্না থামায়। সাথে সাথে পদ্মজা ফরিনার দিকে এগিয়ে আসল। প্রশ্ন করল,’বলুন আম্মা। কী বলতে চান আমাকে?’
‘কিচ্চু না।’ বলেই তড়িঘড়ি করে দোতলা থেকে নেমে যান তিনি। পদ্মজা আশাহত হয়ে অনেকবার ডাকে,তিনি শুনেননি। পদ্মজা বিরক্তি নিয়ে বাইরে তাকায়। দেখতে পায় মজিদ হাওলাদারকে। তিনি আলগ ঘর পেরিয়ে অন্দরমহলের দিকে আসছেন। খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছেন। পায়ে ব্যথা পেয়েছে নাকি! পদ্মজা নিচ তলায় যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। তখনই মাথায় আসে,’কোনোভাবে কী আব্বাকে দেখে আম্মা ভয় পেল? আর উত্তর না দিয়ে চলে গেল?’
পদ্মজা মিলিয়ে ফেলে উত্তর। এমনটাই হয়েছে। ঘরের গোপন খবরই দিতে চেয়েছিলেন ফরিনা। কিন্তু ঘরের মানুষ দেখে আর দিতে পারলেন না। আচ্ছা, তিনি এমন হাউমাউ করে কেন কাঁদলেন? পদ্মজার কপালের চামড়া কুঁচকে যায়।

পদ্মজা মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ায়। আলোর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে ভাবে পিছনের সব অদ্ভুত ঘটনা। রুম্পা পাগলের অভিনয় করত,তাকে ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছিল অথচ বাড়ির কেউ এতে ভ্রুক্ষেপ করতো না। রুম্পা দিনের পর দিন না খেয়ে ছিল। পদ্মজা যতটুকু বুঝেছে ফরিনা খুব ভালোবাসেন রুম্পাকে, তাহলে তিনি কেন খাবার নিয়ে যেতেন না? রুম্পার ঘরে লতিফা চোখ রাখে। রুম্পা লতিফাকে দেখে ভয় পেয়েছিল। যেদিনই সে জানতে পারে রুম্পা পাগল না, সেদিন রাতেই বাবলু নামের কালো লোকটি রুম্পাকে মারতে চেয়েছিল। এতসব কার নির্দেশে হচ্ছে? কে এই বাড়ির আদেশদাতা? আর আলমগীরই কী করে জানল রুম্পা খুন হতে চলেছে? তারপর একটা খুন হলো অথচ ভোর হওয়ার আগেই সেই লাশ উধাও হয়ে গেল। কেউ খুনির খোঁজ করল না! তারপর রুম্পা বা আলমগীরের কথা রানি আর ফরিনা ছাড়া কেউ জিজ্ঞাসাও করল না! এই বাড়ির মানুষ যেন জীবিত থেকেও মৃত। কী চলছে আড়ালে! তারপর আলমগীর তাকে একটা চাবি দিল। চাবিটা কীসের? রুম্পা বলেছিল,উত্তরে জঙ্গলে,ধ রক্ত। এই কথার মানেই বা কী?

পদ্মজা দ্রুত দুই চোখ বন্ধ করে ফেলল। তার মাথা ব্যথা করছে। কপালের রগ দপদপ করছে। রানির নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারটা পুরোপুরি মাথা থেকে বেরিয়ে যায়। সে গাঢ় রহস্যের টানে উন্মাদ হয়ে উঠে। বাড়িতে খলিল,রিদওয়ান নেই। এই সুযোগে জঙ্গলে তাকে যেতেই হবে। পরিবেশে অস্পষ্টতা ক্রমে ক্রমে ছড়িয়ে পড়ল ৷ বিকেল সন্ধ্যাকে ম্লান আলোয় জড়িয়ে ধরল ৷ সন্ধ্যার আযান পড়ছে। পদ্মজা নিচ তলায় এসে আলোকে লতিফার কাছে দিয়ে নিজ ঘরে যায়। নামায আদায় করে নেয়। তারপর আলোকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল। মজিদ পায়ে ব্যথা পেয়েছেন। তিনি ঘরে শুয়ে আছেন। ফরিনাও ঘরে। বাড়ির বাকি পুরুষরা তখনও ফিরেনি। আমিনা সদর দরজায় বসে আছেন। চুল এলোমেলো। কপালে এক হাত রেখে বাইরে তাকিয়ে রানির অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন। মানুষটার অনেক দোষক্রুটি আছে ঠিক। তবে মেয়ের জন্য পাগল! বাড়ির আরেক কাজের মেয়ে রিনু আলোর সাথে শুয়ে আছে। আলো একা ঘরে কীভাবে থাকবে,তাই পদ্মজাই রিনুকে আলোর সাথে থাকতে বলেছে। লতিফা রান্নাঘরে রান্না করছে। সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। মানবতাবোধ থেকেও অন্তত রানির নিখোঁজ হবার শোকে কাতর হওয়া উচিত। কিন্তু পদ্মজা কাতর হতে পারছে না। তাকে চুম্বকের মতো কিছু টানছে উল্টোদিক থেকে। পদ্মজা শক্ত করে খোঁপা বাঁধে। শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে, গায়ে জড়িয়ে নেয় শাল। হাতে নেয় টর্চ আর ছুরি। তারপর অন্দরমহলের দ্বিতীয় দরজা দিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এক নিঃশ্বাসে ছুটে আসে জঙ্গলের সামনে। হাঁপাতে থাকে। চোখের সামনে ঘন জঙ্গল। পিছনে কয়েক হাত দূরে অন্দরমহল। হাড় হিম করা ঠান্ডা। পদ্মজার ঠোঁট কাঁপতে থাকে।

এই জায়গায় সে অনেকবার এসেছে,কিন্তু পা রাখতে পারেনি জঙ্গলে। কেউ না কেউ বা কোনো না কোনো ঘটনা তাকে বাগড়া দিয়েছেই। আজ কিছুতেই সে পিছিয়ে যাবে না। তার স্নায়ু উত্তেজিত হয়ে আছে। জঙ্গলের ঘাসে পা রাখতেই একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়। গায়ের লোমকূপ দাঁড়িয়ে পড়ে। আরো কয়েক পা এগোতেই গা হিম করা অদ্ভুত সরসর শব্দ ভেসে আসে। পদ্মজার একটু একটু ভয় করছে। গাঢ় অন্ধকারে,এমন গভীর জঙ্গলে সে একা! শীতের বাতাসে গাছের পাতাগুলো শব্দ তুলছে আর পদ্মজা উৎকর্ণ হয়ে উঠছে। ভয়-ভীতি নিয়েই সে এগোতে থাকে। চারিদিকে ঘাস। সরু একটা পথে ঘাস নেই। মানে এই পথ দিয়ে মানুষ হাঁটাচলা করে। পদ্মজা সেই পথ ধরেই এগোতে থাকে। সে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারপাশ দেখছে। বড় বড় গাছ দেখে মনে হচ্ছে কোনো অশরীরী দাঁড়িয়ে আছে। পদ্মজা মনে মনে আয়াতুল কুরসি পড়ে বুকে ফুঁ দেয়।
একটা সময় পথ শেষ হয়ে যায়। পদ্মজা টর্চের আলোতে পথ খোঁজে। যেদিকেই তাকায় সেদিকেই বুনো লতাপাতা। যারা এখানে আসে তারা কী এখানেই থেমে যায়? পদ্মজা ভেবে পায় না। মাথার উপর ডানা ঝাপটানোর শব্দ শোনা যায়। পদ্মজার বুক ধক করে উঠল। সে টর্চ ধরল মাথার উপর। দুটো পাখি উড়ে যায়। এরপর চোখে ভেসে উঠে চন্দ্র তারকাহীন ম্লান আকাশ।পদ্মজা লম্বা করে নিঃশ্বাস নিল। সে কি না কি ভেবেছিল! পদ্মজা সূক্ষ্ম-তীক্ষ্ণ চোখে চারপাশ দেখল। রুম্পা কী বলেছিল মনে পড়তেই সে উত্তরে তাকাল। বেশিদূর চোখ গেল না। ঝোপঝাড়ে ঢাকা চারপাশ। পদ্মজা মুখে অস্ফুট বিরক্তিকর শব্দ করল।
নিজে নিজে বিড়বিড় করে,’ধুর! কোনদিকে যাব এবার।’

ছটফট করতে থাকে পদ্মজা। তার হাত থেকে ছুরি পড়ে যায়। ছুরি তোলার জন্য নত হয় সে। ছুরির সাথে সাথে তার হাতে ঘাস উঠে আসে। পদ্মজা অবাক হয়। কেন যেন মনে হলো,এই বুনো ঘাসের শেকড় মাটির নিচে ছিল না। পদ্মজা উত্তর দিকের আরো কতগুলো ঘাস এক হাতে তোলার চেষ্টা করল। সাথে সাথে হাতে উঠে আসে। সত্যি শেকড় নেই মাটির নিচে! কেউ বা কারা পথের চিহ্ন আড়াল করতে নতুন তাজা ঘাস দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে পথ। পথ লুকোতে কি প্রায়ই এমন করা হয়? তাহলে তো বেশ পরিশ্রম করে! পদ্মজার উত্তেজনা বেড়ে যায়। সে উত্তর দিকের পথ ধরে এগোতে থাকে। হাঁটে প্রায় দশ মিনিট। এই মুহূর্তে সে চলে এসেছে জঙ্গলের মাঝে।

সামনে ঘন ঝোপঝাড়। পরিত্যক্ত ভাব চারিদিকে। ভূতুড়ে পরিবেশ। থেকে থেকে পেঁচা ডাকছে কাছে কোথাও। পদ্মজা বিপদ মাথায় নিয়ে ঝোপঝাড় দুই হাতে সরিয়ে অজানা গন্তব্যে হাঁটতে থাকে। কাঁটা লাগে মুখে। চামড়া ছিঁড়ে যায়। পদ্মজা ব্যথায় ‘মা’ বলে আর্তনাদ করে উঠল। কিন্তু ব্যথা নিয়ে পড়ে থাকেনি। সে এগোতে থাকে। ঝোপঝাড় ছেড়ে বড় বড় গাছপালার মাঝে আসতেই পদ্মজার মনে হয় তার পিছনে কেউ আছে! সে চট করে ঘুরে দাঁড়াল। কেউ নেই! সে মনের ভুল ভেবে সামনে হাঁটে। কিন্তু আবার মনে হয়,পিছনে কেউ আছে। পদ্মজা থমকে দাঁড়ায়। ঘুরে তাকায়। তার মনটা আনচান, আনচান করছে। কু গাইছে। কেমন ভয়ও করছে। এই গভীর জঙ্গলে সে একা। কিছুক্ষণ আগে সন্ধ্যা হলো। কিন্তু এখানে মনে হচ্ছে গভীর রাত। কোনো অঘটন ঘটে গেলে কেউ জানবে না। পদ্মজার রগে রগে শিরশিরে অনুভব হয়। ভয়টা বেড়ে গেছে। ভেঙে পড়ছে সে! রাত যেন শক্তি, সাহসিকতা চুষে নিতে পারে। পদ্মজা আল্লাহকে স্বরণ করে। হেমলতাকে স্বরণ করে। চোখ বুজে হেমলতার অগ্নিমুখ ভাবে। তিনি যেভাবে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাতেন সেভাবে পদ্মজা তাকায়। কান খাড়া করে চারপাশে যত জীব,প্রাণী আছে সবকিছুর উপস্থিতি টের পাওয়ার চেষ্টা করে। কাছে কোথাও অদ্ভুত এক জীব ডাকছে। নিশাচর পাখিদের তীক্ষ্ণ ডাকও শোনা যাচ্ছে। ঝিঁঝিঁপোকারা এক স্বরে ডাকছে। সাঁ,সাঁ বাতাস বইছে। এ সবকিছুকে ছাড়িয়ে একটা মানুষের গাঢ় নিঃশ্বাস তীক্ষ্ণভাবে কানে ঠেকে। খুব কাছে,পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে! নিঃশ্বাস নিচ্ছে। পদ্মজার হাত দুটো শক্ত হয়ে যায়। অদ্ভুত এক শক্তিতে কেঁপে উঠে সে। চোখের পলকে দুই পা পিছিয়ে লোকটিকে না দেখেই ছুরি দিয়ে আঘাত করে। লোকটি ‘আহ’ করে উঠে। পদ্মজা চোখ খুলে ভালো করে দেখে,মুখটি অন্ধকারের জন্য অস্পষ্ট। তবে কণ্ঠটি পরিচিত মনে হলো। পদ্মজার ছুরির আঘাত লোকটির হাতে লেগেছে। পদ্মজা রাগী কিন্তু কাঁপা স্বরে প্রশ্ন করে, ‘কে আপনি?’

লোকটি ক্ষুধার্ত বাঘের মতো ছুটে এসে পদ্মজার গলা চেপে ধরে। পদ্মজা আকস্মিক ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। লোকটি এতো জোরে গলা চেপে ধরেছে যে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। মাথার উপর আরো ক’টি পাখি ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যায়। একটা বলিষ্ঠ হাত গাঢ় অন্ধকারে অপরূপ সুন্দরী এক মেয়ের গলা টিপে ধরে রেখেছে। সুন্দরী মেয়েটি ছটফট করছে! লোকটির মুখ অন্ধকারে ঢাকা। ভয়ংকর দৃশ্য! পদ্মজা তার হাতের ছুরিটা শক্ত করে ধরে লোকটির পেটে ক্যাঁচ করে টান মারে। লোকটি আর্তনাদ করে সরে যায়। হাঁটুগেড়ে মাটিতে বসে পড়ে। পদ্মজা আবারও আঘাত করার জন্য এগোয়। লোকটি ফুলে ফেঁপে উঠে দাঁড়ায়। যেন নতুন উদ্যমে শক্তি পেয়েছে। লোকটি ঝাঁপিয়ে পড়ে পদ্মজার উপর। নখের আঁচড় বসায় হাতে। কেড়ে নেয় ছুরি। পদ্মজা ছুরি ছাড়া এমন হিংস্র পুরুষের শক্তির সামনে খুবই নগণ্য। যেভাবেই হউক এর হাত থেকে বাঁচতে হবে। পদ্মজা টর্চ দিয়ে লোকটির মাথায় বারি মারে। লোকটি টাল সামলাতে না পেরে পিছিয়ে যায়। পদ্মজা উলটোদিকে দৌড়াতে থাকে। পিছনে ধাওয়া করে আগন্তুক। দুইবার ছুরির আঘাত,একবার মাথায় টর্চের বারি খাওয়ার পরও আগন্তুক লুটিয়ে পড়েনি মাটিতে। নিশ্চিন্তে সে এই রহস্যের পাক্কা খেলোয়ার। পদ্মজার শাল পরে যায় গা থেকে। তার খোঁপা খুলে রাতের মাতাল হাওয়ায় চুল উড়তে থাকে। ঝোপঝাড়ে মাঝে উদ্ভ্রান্তের মতো সে দৌড়াচ্ছে। কানে আসছে বাতাসের শব্দ! সাঁ,সাঁ,সাঁ! দুই হাতে শাড়ি ধরে রেখেছে গোড়ালির উপর। যেন শাড়িতে পা বেঁধে পড়ে না যায়। জুতা ছিঁড়ে পড়ে থাকে জঙ্গলে। কাঁটা কাঁটায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় পদ্মজার পা। রক্ত বের হয় গলগল করে। তবুও সে থামল না। সে এত সহজে মরতে চায় না। এই গল্পের শেষ অবধি যেতে হলে তাকে বাঁচতেই হবে।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।