সালমা চৌধুরী
সালমা চৌধুরী

প্রকাশিত: বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে | এক রাতের আর্তনাদ

সমাপ্ত

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে | সিজন ১ | পর্ব - ১৫

৬১ ভিউ
০ মন্তব্য
১ মিনিট

আবির ২ টা চেয়ার এনে পরিষ্কার জায়গাতে রেখে নিজেই টিস্যু দিয়ে মুছে বললো,

“বোস এখানে” আবির ৩ প্লেট ফুচকা অর্ডার দিয়ে এসেছে। মেঘের মন খুশিতে ভরে গেছে। আবির ভাইয়ের সাথে এতটা সময় সে আজই প্রথম কাটাচ্ছে। এই অনুভূতিহীন মানুষটা এককথায় ফুচকা খাওয়াতে রাজি হয়ে গেছে এটা ভেবেই মেঘ অজান্তে হেসে ফেললো,

আবির পাশের চেয়ারে বসতে বসতে চোয়াল শক্ত করে বললো, “বেকুবের মতো হাসছিস কেন?” আবিরের কথায় মেঘ কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেলো। ভণিতা ছাড়াই জবাব দিলো, “এমনি”


ততক্ষণে ফুচকা চলে এসেছে। তিন প্লেট ফুচকা দেখে মেঘ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

“এত ফুচকা কি আমাদের? ” আবির উদ্বেলিত ভঙ্গিতে বলে, “শুধু তোর, এগুলো খাওয়ার পর মন চাইলে আরও নিতে পারিস৷ ” মেঘ আশ্চর্য নয়নে তাকিয়ে আছে, সহসা দুই অধরের মাঝে ফাঁকা হয়ে গেছে। মেঘের দিকে চেয়ে আবির কপাল গোঁটায়। বিরক্তি নিয়ে বললো, “মুখ টা বন্ধ করে খা। ”

মেঘ প্রথম প্লেট হাতে নিয়ে চুপচাপ খাওয়া শুরু করলো। আবির বসে বসে ফোন চাপছে। মেঘ আগপাছ না ভেবে একপ্লেট ফুচকা কয়েক মুহুর্তে নির্বাণ করে ফেললো। দ্বিতীয় প্লেট হাতে নিয়ে আবির ভাইয়ের দিকে তাকালো তারপর সচেতন কন্ঠে প্রশ্ন করলো, “আবির ভাই, আপনি খাবেন না ফুচকা?” আবির গুরুভার কন্ঠে বললো, “আমি এসব খাই না” মেঘ কোমল কন্ঠে বললো, “আজ একটু খেয়ে ফেলুন , অনেক সুস্বাদু! ”

আবির ফোনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মেঘের দিকে ক্ষুদ্র চোখে তাকালো,দাঁত খিচে বললো, “তুই খাচ্ছিস খা, আমি খাবো না” মেঘের প্রেমানুভূতি এতটায় তীব্র যে আবিরের তপ্ত স্বরের কথাগুলো কানেই যাচ্ছে না । হাস্যোজ্জ্বল মুখে আবির ভাইয়ের দিকে চেয়ে আহ্লাদী কন্ঠে বললো, “একটা খান না প্লিজ”

আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাইলো, অকস্মাৎ অভিব্যক্তি বদলে গেলো আবিরের, খরখরে কন্ঠে বললো, “দে” মেঘ তৎক্ষনাৎ প্লেট বাড়ালো আবির ভাইয়ের দিকে, আবির ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে বললো, “একটা ফুচকার জন্য আমি হাত নষ্ট করতে পারবো না, তুই খাইয়ে দে” মেঘ চোখ বড় করে তাকালো, জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালো, মেঘের ডাগর ডাগর চোখে তাকানো দেখে আবির নিজের দৃষ্টি সংযত করে ফোনের দিকে তাকালো৷

মেঘ ধীর হস্তে ফুচকায় টক দিয়ে, আলতো হাতে আবির ভাইয়ের মুখের সামনে ধরতেই আবির হা করলো, মেঘও দু আঙুলে কোনোরকমে ফুচকা মুখে দিয়ে হাত সরালো দূরে৷ যেনো আবির ভাইয়ের ছোঁয়ায় কারেন্টের শক খেয়েছে। ফুচকা মুখে পরতেই আবির ভ্রু কুঁচকে চোখ বন্ধ করলো, কোনোরকমে গিললো,দাঁত কিরকির করছে। দাঁতে দাঁত চেপে গম্ভীর কন্ঠে বললো,

” উফ, কিভাবে খাস এত টক?” মেঘ দাঁত বের করে হাসে, ঠাট্টার স্বরে বলে, “এভাবেই” আবির দাঁতে দাঁত চেপে ধরে আছে। ক্ষুদ্র চোখে তাকিয়ে আছে অষ্টাদশীর পানে।৷ কিছু বলতে চেয়েও বলছে না। হঠাৎ চোখ পরে দূরে, রাকিব দূর থেকে ফোন ধরে দাঁড়িয়ে আছে, আর দাঁত কেলিয়ে হাসছে। আবির কপাল কুঁচকে তাকালো, মেঘের চেয়ারের পিছনে হাত নিয়ে দু আঙুলে ইশারা দিলো,সঙ্গে সঙ্গে ফোন পকেটে রেখে জায়গা ত্যাগ করলো রাকিব।

মেঘ আপন মনে ফুচকা খাচ্ছে। ২য় প্লেটের শেষ ফুচকায় অতিসামান্য টক দিয়ে আবির ভাইয়ের দিকে বাড়ালো, আবির সঙ্গে সঙ্গে হুংকার দিয়ে উঠলো, “আর খাবো না!” মেঘ পল্লব ঝাপটে অধর নেড়ে বললো, ” একটা খাইতে নেই, এটায় শেষ প্লিজ!”

আবির আগে থেকেই ভ্রু গুটিয়ে, চোখ বন্ধ করে হা করলো। তবে এটাতে টক কম দেয়ায় তেমন প্রভাব পরে নি। কোনোরকমে খেয়ে নিলো ফুচকাটা৷ একটু পানি খেয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে শুধালো, “একটা খেলে কি হয়?” মেঘের ঠোঁটে ফুটে উঠে রক্তজবার ন্যায় হাসি, তৎক্ষনাৎ হাসি থামিয়ে বললো, “একটা খেলে পানিতে পরে যেতেন”

আবির বোকার মতো চেয়ে আছে মেঘের দিকে, কয়েক মুহুর্ত পর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিরক্তি নিয়ে বলল, “কি? কোত্থেকে শুনিস এসব আজগুবি কথাবার্তা? ” মেঘ বিজ্ঞের ন্যায় মাথা দুলিয়ে বললো, “আমার সোর্স আছে ”

মেঘ মাথা নুইয়ে মুচকি হাসে।। আবির মেঘের কথা শুনে কপাল গোটায়, কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে অকস্মাৎ বলে উঠে, “আমি পানিতে পরলে তো তুই ই সবচেয়ে খুশি হতিস” মেঘের উদ্বেলিত মনোভাব কমে আসে। সিক্ত চোখে তাকায় আবিরের দিকে। আবিরের নিরেট চোয়াল দেখেই মেঘ তটস্থ হয়ে সহসা চিবুক নামিয়ে মনে মনে বলে, “আমি আপনাকে পানি পরতে দিব না, আপনার কিছু হলে আমি কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো। কে আমার স্বপ্নের রাজকুমার হবে?”

আবির চুপচাপ চেয়ার থেকে উঠে চলে যায়। মেঘ কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর মুখ তুলে তাকায়, তাকিয়ে দেখে আবির ভাই নেই। পিছনে ঘুরে দেখলো আবির ভাই টাকা দিচ্ছেন৷ ১ মিনিটের মধ্যেই আবির এসে চেয়ারের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে বললো, “তোর খাওয়া শেষ হইছে?” মেঘ মাথা নেড়ে “হ্যাঁ বললো” আবির ২ টা টিস্যু এগিয়ে দিলো মেঘের দিকে। আবির খরখরে কন্ঠে বলল, “চল তাহলে” মেঘ উঠে আবির ভাইয়ের পিছন পিছন হাঁটে। বাইকের কাছে গিয়ে আবির মেঘের দিকে একটা শপিং ব্যাগ এগিয়ে দেয়।

মেঘ হাতে নিতে নিতে বলে, “কি এখানে?” “মীম আর আদির জন্য নিয়েছি” জবাব দিলো আবির৷ “মনের ভেতরের মুগ্ধতা মেঘের ঠোঁটের কোণে ভেসে উঠলো, আবির ভাইকে সে কখনো বলতেই পারতো না মীম আর আদির জন্য নেয়ার জন্য। মেঘ কে যে খাওয়াতে এনেছে এটায় অবাক কান্ড আবার তাদের জন্য ও নিচ্ছে। মেঘ বিড়বিড় করে বললো, ” বাহ! আবির ভাই।”

আবির চোখ পা*কিয়ে তাকালো, হালকা স্বরে ধ*মকে উঠলো, ” এই মেয়ে, উঠবি? ” মেঘ সঙ্গে সঙ্গে আবির দিকে তাকায়, স্বাভাবিক হয়ে উঠে বসে বাইকের ব্যাক সিটে। বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আবির চলে যায়। মেঘ খুশিতে গদগদ হয়ে মীম আর আদির কাছে যায়।

আবির মসজিদে মাগরিবের নামাজ পরে বাইক স্টার্ট দেয়। একেবারে এসে থামে বন্ধুদের আড্ডার মহলে।রাকিব আর রাসেল আড্ডা দিচ্ছিলো। মোবারক আর লিমন এখনও আসে নি, রাস্তায় আছে মনে হয়। আবির বাইক থেকে নামতে নিলে রাকিব দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে জরিয়ে ধরতে যায় আবিরকে। আবির বাইক থেকে নেমেই ২-৩ ঘু*ষি বসিয়ে দেয় পেটে। ঘু*ষিগুলো এত জোরে না লাগলেও রাকিব কিছুটা নত হয়ে যায়। রাসেল বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আঁতকে উঠে বলে,

“কি হয়ছে তোদের?” রাকিব কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলে, “উফ, এমনে কেউ মারে?” আবির রাগান্বিত কন্ঠে বললো, “তোর যেমন মুখ বেশি চলে , আমার তেমনি হাত বেশি চলে” রাসেল পুনরায় শক্ত কন্ঠে বললো, “আরে হইছে টা কি, বলবি আমায়?” রাকিব হাসতে হাসতে জবার দিলো,

“আর বলিস না, আবিরকে বিকালে ফুচকার দোকানে দেখে আমি পুরাই টা*শকি খাইছি, যেই আবির এত বছরে ফুচকার দোকানের আশেপাশে যায় নি সে কেনো ফুচকার দোকানে আসছে আমার জানতে হবে না? আমি দৌড়ে গেছি আবিরের কাছে। আবিরের পাশে মেঘকে দেখে আমিতো আরও অবাক। খুশিমনে ওদের আপ্যায়ন করার জন্য বললে ফেলছিলাম, আমার পক্ষ থেকে ফুচকা খাওয়াবো সেই ঝা*ল এখন মিটাচ্ছে। ” আবির গম্ভীর কন্ঠে বললো,

” ও আমার কাছে জীবনে প্রথম ফুচকা খাওয়ার আবদার করছে, তুই কেনো খাওয়াবি! ” রাসেল সহসা বলে উঠলো, “ঠিকই তো। আবিরের ও কে তো আবিরই খাওয়াবে। ” রাকিব পুনরায় ঠাট্টার স্বরে বললো, “এজন্যই তো আমি বলছিলাম, সারাজীবন তো আবির ই খাওয়াবে এবার নাহয় আমি খাওয়ায়।” রাসেল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, “তুই কি এই কথা ওদের সামনে বলে ফেলছিলি?” রাকিব আবার বললো,

“একটু বলছি। না মানে আমার কি দোষ, উত্তেজনায় মেঘ কে প্রথমে ভাবি বলে ফেলতে চাইছিলাম। ” রাসেল অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো রাকিবের দিকে, অকস্মাৎ বলে উঠলো, ” ঠিকই আছে। আরও খা মা*ইর । ” রাকিব আবিরের দিকে তাকিয়ে নাক টেনে কিছুটা আবেগি কন্ঠে বললো, “মাফ করে দে ভাই। মুখ ফঁসকে আর কিছু বলবো না।” আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বললো,

“মুখ ফঁসকে বলছিলি ভালো কথা, তুই আমাদের রোমান্টিক মুহুর্তে বেগরা দিছিস কেন? আমি কি তোর প্রেমে কখনো বেগরা দিছি?” রাকিব ভেংচি কেটে বললো, “আমারটা তো মেঘের মতো এত লক্ষী না, আজ পর্যন্ত একটা ফুচকাও নিজের প্লেট থেকে দেয় নি আমাকে বরং আমার প্লেট থেকে আরও নিয়ে নেয়। ”

আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়, কিছু বলার আগে রাকিব পুনরায় বলা শুরু করলো, “মেঘ তোর জন্য সারাদিন না খেয়ে বসে থাকতে পারে আর আমারটা এক গামলা খেয়ে তারপর আমার সাথে ঝ*গড়া লাগে। যদি ঘুরতেও নিয়ে যাই, বাসা থেকে বের হয়ে সে আগে ফুচকা,চটপটি, হালিম খেয়ে নেয় একা একা। তারপর আমার সাথে দেখা করতে আসে। আমি যেখানে নিজে শান্তিতে প্রেম করতে পারি না সেখানে তোকে কেমনে করতে দেয়?”

আবির কপাল গোটিয়ে ক্ষুদ্র চোখে তাকিয়ে আছে। রাসেল সহসা বলে, “রাকিব, কি করছিস তুই?” রাকিব আবারও হাসি শুরু করলো, এবার হাসির মাত্রা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। হাসতে হাসতে বললো, “রাসেলরে তোকে তো একটা জিনিস দেখানোই হয় নি। আয় বোস, একটা OMG জিনিস দেখায় তোকে।” আবিরের দিকে তাকিয়ে পুনরায় দাঁত কেলিয়ে বললো, “আয় নিজের কুকী*র্তি দেখে যা! ”

তিন বন্ধু চেয়ার টেনে বসছে এরমধ্যে মোবারক আর লিমন ও এসেছে। ৫ জনেই চেয়ার কাছাকাছি এনে বসেছে। আবির ভেবেছিল ছবি দেখাবে তাই এতটা মনোযোগ দেয় নি। কিন্তু রাকিব একটা ভিডিও অন করলো। পিছন থেকে ভিডিও করেছে। মেঘের হিজাবের কারণে মুখটা তেমন ভাসে নি। কিন্তু আবিরের মুখের একপাশে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। মেঘ আবিরকে মুখে তুলে ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছে। এতটুকু দেখেই মোবারক আর রাসেল চিৎকার দিয়ে উঠে,

“আবির… তুই ফুচকা খাইছিস?” লিমন অতর্কিত কন্ঠে বললো, “আবির, তুই এক মেয়ের পাশে বসে ফুচকা খাচ্ছিস তাও মেয়ে খাইয়ে দিচ্ছে ! ” রাসেল এবার হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললো, “এটা এক মেয়ে না রে, আবিরের জীবনের একমাত্র মেয়ে। ” মোবারক আবিরের দিকে চেয়ে সহসা বলে উঠে, “মেঘ নাকি নাম শুনেছিলাম। ওনিই কি সে?” আবির শুধু উপর নিচ মাথা নাড়ায়। লিমন অভিযোগের কন্ঠে বললো,

“এটা আমি মানতে পারলাম না৷সেদিনও তো তোকে কত জোর করলাম ফুচকা খেতে। চেপে ধরেও তোকে খাওয়ানো গেলো না আর আজ..!” রাকিব দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো, “মেঘ কিছু বললে আবির আবার না করতে পারে না।” তিন বন্ধু অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো আবিরের দিকে। রাসেল সহসা বলে উঠলো,

“তুই তো টক খাস না জীবনেও, ফুচকা কেমনে খেলি?” আবির মুচকি হেসে জবাব দিলো, “শুধু টক কেনো, ও আমায় বিষ দিলে আমি সেটাও চুপচাপ খেয়ে নিবো।” চারবন্ধু এবার বিস্ময়কর দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকালো । কয়েক মুহুর্ত সবাই চাওয়াচাওয়ি করলো। মোবারক হাসিমুখে বললো,

“বিয়ে কবে খাচ্ছি বন্ধু?” আবির ঠাট্টার স্বরে বললো, “আর বিয়ে….” লিমন কিছুটা চিন্তিত হয়ে বললো, “কেনো? কিছু হয়ছে?”

আবির কিছু বলার আগেই রাকিব হাসতে হাসতে বলে উঠলো, “সেদিন যদি মেঘ রাজি হইতো তাহলে আবির আজ বিবাহিত থাকতো। ” তন্মধ্যেই রাসেল বলে বসলো, “তুই মেঘকে কবে প্রপোজ করলি আর কবেই বা রিজেক্ট করলো শুনলাম না তো!” আবির চোখ-মুখ গোটাল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাইলো রাসেলের দিকে৷ রাকিব পুনরায় বললো,

“আরে দূর প্রপোজ না। আবির মেঘকে বলছিলো, তুই পড়াশোনা না করলে বাদ দে। করতে হবে না তোর পড়াশোনা। কিন্তু মেঘ বেচারি বুঝলোই না, বলে বসলো পড়াশোনা করবো ” লিমন কিছুটা ভেবে বললো, “পড়াশোনা না করলে কি করতি?” আবির দাঁত খিচে বললো,

“পড়াশোনা করবে না বললে ১ ঘন্টার মধ্যে কাজী এনে বিয়ে করে ফেলতাম। ” রাসেল স্ব শব্দে হেসে উঠলো। আর বললো, “মেঘ যদি রাজি না হতো?” আবির রাগান্বিত কন্ঠে জবাব দিলো, “জোর করে বিয়ে করলে রাজি কি আবার। ” লিমন,মোবারক আর রাসেল এত বেশি জানে না। রাকিব আবিরের সবকিছু জানে। রাকিবের সাথে রাসেল চলাফেরা করায় রাসেল টুকটাক জানে।

লিমন দাঁত বের করে ঠান্ডা কন্ঠে শুধালো, ” বিয়েটা তো মেঘকে বলেও করতে পারিস। তাহলে তো আমরাও বিয়েটা খেতে পারি আর তোর বউও বিয়ের পরে পড়াশোনা করতে পারে। ” আবির দীর্ঘশ্বাস ফেললো, কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো, “এই কাজ আমি কখনোই করবো না। ” মোবারক প্রশ্ন করলো, “কেনো?” আবির গম্ভীর কন্ঠে বলা শুরু করলো,

“কারণ মেঘকে বা বাসায় ঝামেলা করে আমি এখন বিয়েটা করলে, জীবনের কোনো এক সময়ে, মেঘের মনে হতে পারে আমি ওর যোগ্য না। পড়াশোনা, বাহিরে চলাফেরা, বন্ধুমহলের সাথে সে আমাকে মানাতে পারলো না। মেঘের কখনো যদি মনে হয় আমি ওর জীবনে জোর করে এসেছি বা মেঘ আমার থেকে মুক্তি চাই তখন আমি কি করবো ? তার থেকে ভালো, ও পড়াশোনা করুক, নিজে প্রতিষ্ঠিত হোক। যখন ওর মনে হবে আমাকে ছাড়া ওর চলবে না তখনই আমি ওকে বিয়ে করবো। ”

গভীর মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিল সকলে। মোবারক মাথা চুলকে বললো, “একটু আগে যে বললি জোর করে বিয়ে করবি?” আবির এবার কপাল কুঁচকে, বিরক্তি নিয়ে বলা শুরু করলো, “মেঘ যদি বলতো সে পড়াশোনা করবে না তাহলে আমি জোর করে বিয়ে করতাম। কারণ তখন তার পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছে থাকতো না, জীবনে চলার পথে নতুন বন্ধু হতো না। আমাকে ঘিরেই ওর পৃথিবী হতো। একটা না একটা সময় গিয়ে আমার প্রেমে পড়তে বাধ্য হতো। ”

লিমন এতক্ষণ নিরব থাকলেও এবার চিন্তিত স্বরে বললো, “”সবই বুঝলাম কিন্তু ভাবির জীবনে যদি অন্য কেউ চলে আসে তখন কি তুই ভাবিকে ছেড়ে দিবি?”” রাকির ফিক করে হেসে উঠলো, তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো, “”যা বলেছিস তুই, আবির দিবে মেঘকে ছেড়ে, হাসাইলি। এই আবির দেশেই আসছে এক ছেলেকে পি*টাইতে । ছেলের অপরাধ কি! ছেলে মেঘের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিলো। কথা বলার চেষ্টাতেই ছেলে এখনও হাসপাতালে ভর্তি, যদি প্রেম করার চিন্তা করে তখন আবির কি করবে,তোরাই ভাব। “” রাসেল, লিমন আর মোবারক সম স্বরে চিৎকার দিয়ে উঠলো,

“”আবির…..!”” আবির নিরেট কন্ঠে বললো, “আস্তে” আবির পকেট থেকে ফোন বের করে টাইম দেখে বললো, “নামাজের সময় হয়েছে। চল নামাজে যাই। ” সবাই নামাজ পরে বের হলো। রাকিব দাঁত কেলিয়ে বললো, “শুন আজ আবির আমাদের ট্রিট দিবে। কি খাবি বল তোরা” আবির বিরক্তি নিয়ে বললো,

“আমি কেনো ট্রিট দিবো? আমি কি বিয়ে করছি নাকি?” রাকিব মুখ বাঁকিয়ে বললো, “বিকেলে যে বললি আনলিমিটেড ফুচকা খাওয়ানোর ক্ষ*মতা তোর আছে তাহলে এখন আমাদের খাওয়া। ” আবির গম্ভীর কন্ঠে বললো, “এই অফার শুধু আমার কাদম্বিনীর জন্য। ” লিমন অকস্মাৎ বলে উঠলো,

“আমাদের আনলিমিটেড খাওয়াতে হবে না লিমিটেডই খাওয়া। তোর কাদম্বিনীর তরফ থেকে। ” আবির কিছুটা ভেবে বললো, “ঠিক আছে, চল!” তিনটা বাইকে ৫ বন্ধু চললো। আবির একা, বাকি দুই বাইকে দুজন করে। নামিদামি রেস্তোরাঁয় এসে বসলো সকলে। আবির উৎফুল্ল কন্ঠে শুধালো, “বুফে খাবি নাকি কাচ্চি?”

৪ বন্ধু চোখাচোখি করলো,রাসেল মুচকি হেসে বললো, “দেখলি লিমন, মেঘের কথা বলতেই বুফে অফার করছে। কি ভালোবাসা। ” মোবারক বলে বসলো, “তাহলে দুদিন পর পর ভাবির কথা বলে খাবার খাওয়া যাবে ” আবির কড়া কন্ঠে জবাব দিলো,

“এটায় আমার বিয়ের আগে আমাদের পক্ষ থেকে তোদের প্রথম এবং শেষ ট্রিট। এতদিন মেঘের কথা এত ডিটেইলস জানতি না তাই ট্রিটের কথা উঠে নি আজ যেহেতু জানছিস তাই ট্রিট দিচ্ছি আর কিছুই না। ” সবাই কাচ্চি আর বোরহানি নিলো। আবির ফোন বের করে টাইম দেখে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করলো। বাকি চার বন্ধু এখনও খাচ্ছে।

আবির হাত ধৌয়ে টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বললো, “তোরা কি আর কিছু খাবি?” “কেনো চলে যাবি নাকি?” রাকিব বললো। আবির মুচকি হেসে বললো, “তোদের ভাবি আমার জন্য অপেক্ষা করছে।” সবাই একসাথে বলে উঠলো,

“অ্যাহ” লিমন অভিমানী স্বরে বললো, “বাহ বন্ধু বাহ! এক বাড়িতে প্রেম করে যা মজা নিচ্ছিস, এদিকে আমার সব কাজিনের বয়স ৫ বছরের এর কম। জীবনটা বেদনার। ” আবির একগাল হেসে বললো, “আর কিছু না খেলে বিল দিয়ে দিচ্ছি ” সবাই বললো, “আর কিছু খাবো না, দোয়া করি তোরা সুখী হ।” আবির বিল পরিশোধ করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।

এদিকে মেঘ সন্ধ্যার পর বাসায় এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে পড়তে বসেছিলো। ঘন্টাদুয়েক পড়ে খেয়ে নিয়েছে। আবির শুক্রবারে বাহিরেই বন্ধুদের সাথে হাবিজাবি খায় । রাতে বাসায় ফিরে আর ভাত খাই না। এজন্য মেঘও শুক্রবারে আবির ভাইয়ের কথা ভাবে না,সবার সাথে খাবার খেয়ে নেয়।

ঘন্টাদুয়েক পড়াশোনা করে আবির ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছে মেঘ। আজ আবির ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা উতলে পরছে মেঘের। ভাবছে আবির ভাই ফিরলে এককাপ কফি করে দিবে আবির ভাইকে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে, হঠাৎ আবির ভাইকে বাইক নিয়ে গেইট দিয়ে ঢুকতে দেখে এক দৌড়ে নিচে চলে যায়। ড্রয়িং রুমে কেউ নেই৷ খাওয়াদাওয়া শেষ অনেকক্ষণ আগেই সবকিছু গুছিয়ে সবাই সবার রুমে চলে গেছেন। মেঘ পা টিপে রান্নাঘরে যায়৷

আবির চাবি দিয়ে লক খুলে বাসার ভিতরে ঢুকে৷ বড় বড় কদম ফেলে হাঁটে সিঁড়ির দিকে। মেঘ ছোট একটা পাতিল টান দেয় পানি বসানোর জন্য। এই পাতিলের নিচে যে আরেকটা পাতিল ছিল সেটা তার চোখে পরে নি৷ পাতিল ফ্লোরে পরতেই জোরে শব্দ হয় , শব্দ শুনে আবির পাশ ফিরলো, তাকালো রান্নাঘরের দিকে। মেঘ চোখ বন্ধ করে, একহাতে পাতিল সহ, আরেকটা খালি হাতের আঙুল দিয়ে দু কান চেপে ধরে আছে। মেঘকে রান্নাঘরে দেখে আবিরের পায়ের র*ক্ত মাথায় উঠে গেছে। দ্রুত পায়ে হেঁটে গেলো রান্নাঘরের দিকে। আবির দাঁতে দাঁত চেপে, গম্ভীর কন্ঠে শুধালো,

“এখানে কি করছিস?” আবির ভাইয়ের কন্ঠ শুনে কেঁ*পে উঠে মেঘ। ভ*ড়কে যায় কিছুটা। মনে মনে ভাবছে, “যদি বলি আবির ভাইয়ের জন্য কফি করতে আসছি তাহলে আমি শেষ।” নরম স্বরে আস্তে করে মেঘ বললো, ” কফি খেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো।”

আবির সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পরখ করলো অষ্টাদশীর আপাদমস্তক । গম্ভীর কন্ঠে বললো, “তুই ডাইনিং এ বোস। আমি আনছি” মেঘ তটস্থ নজরে চাইলো। দৃষ্টি তার নিরেট। কয়েক মুহুর্ত পর পাতিল রেখে ডাইনিং টেবিলের চেয়ার টেনে বসলো। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রান্নাঘরে।

আবির বেসিন থেকে হাত ধৌয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই দুকাপ কফি নিয়ে ডাইনিং এ আসলো। এককাপ মেঘের দিকে এগিয়ে দিলো বসলো মেঘের বিপরীতে । মেঘ আস্তে আস্তে ফুঁ দিয়ে এক চুমুক খেলো। সঙ্গে সঙ্গে বিস্ময়কর চোখে তাকালো আবির ভাইয়ের দিকে। তারপর আরেক চুমুক দেয় কফিতে। আবির কফিতে এক চুমুক দিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,

“চিনি ঠিক আছে?” মেঘ সহসা উপর নিচ মাথা নাড়লো। আবির ভ্রু নাচিয়ে শুধালো, “তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?” মেঘ বিস্ময় কন্ঠে বললো, “আপনি এত ভালো কফি বানাতে পারেন? কিভাবে শিখেছেন?” আবির নিরুদ্বেগ কন্ঠে উত্তর দিলো,

“বাহিরে থাকলে এরকম অনেক কিছুই শিখতে হয়। পরিস্থিতিই শিখিয়ে দেয়।। ” মেঘ কি বুঝলো কে জানে, একগাল হেসে বললো, “Thank you Abir Vai” অকস্মাৎ আবিরের অভিব্যক্তি বদলে গেলো, ভ্রু কুঁচকে ধম*কের স্বরে বলে উঠল,

“বাড়িতে এতগুলো মানুষ আছে,সাথে একজন হেল্পিং হ্যান্ড থাকার পরও তুই রান্নাঘরে ঢুকলি কোন সাহসে?” আবির ভাইয়ের ধ*মকে চমকে উঠলো মেঘ। অক্ষিপল্লব কাঁপছে তিরতির, ঘামতে শুরু করেছে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে। আবির দ্বিতীয় বার গম্ভীর কন্ঠে বললো,


“দরকার হলে তোর জন্য আরও দুজন হেল্পিং হ্যান্ড রাখবো। তারপরও তোকে যেনো আগামী ৩ মাস রান্নাঘরে পা দিতে না দেখি। ”

কথা শেষ হওয়া মাত্রই হাতে কফির কাপ নিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। মেঘ মানব মুর্তির ন্যায় চেয়ারে বসে রইলো ।