প্রকাশিত: বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে | স্বপ্নের মাঝে বাস্তব
সমাপ্তআমৃত্যু ভালোবাসি তোকে | সিজন ১ | পর্ব - ১৭
আবির গভীর রাতে মেঘের দরজায় ডাকছে। দরজা খুলায় ছিল তারপরও ওনি ঢুকছেন না। কন্ঠ উঁচু করে বললেন, “আসবো?” মেঘ একগাল হেসে তৎক্ষনাৎ উত্তর দিলো, “আমার রুমে আসতে আপনার অনুমতির প্রয়োজন নেই। ” আবির মেঘের মাথার কাছে বিছানায় বসে কোমল কন্ঠে বললো,
“তুই এত কিউট কেন, মেঘ?” আবির ভাইয়ের আজগুবি কথা শুনে বিস্ময়কর চোখে তাকালো, বারান্দায় জ্বালানো লাল রঙের লাইটের আলোতে আবিরের মুখমন্ডল টকটকে লাল বর্ণের হয়ে আছে। আবির কেমন করে চেয়ে আছে মেঘের দিকে, আবির ঠোঁট কামড়ে বললো,
”তোর এই ডাগর ডাগর চোখের চাউনি আমায় বারবার আ*হত করে। অভিমানী সেই কন্ঠস্বর আমাকে বারংবার তোর প্রেমে পরতে বাধ্য করে। তোর অকৃত্রিম হাসি আমার সারাদিনের ক্লান্তি নির্বাণ করে। ” মেঘ হা করে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। মুখ ফ*সঁকে বলে উঠলো, “আপনি আমায় ভালোবাসেন,আবির ভাই?” আবির সঙ্গে সঙ্গে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। কিছু না বলেই চলে যাচ্ছে। মেঘ পিছন থেকে ডাকছে,
“আবির ভাই” আবির ফিরেও তাকাচ্ছে না। পুনরায়” আবির ভাই ” চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো বিছানায়। আশপাশে তাকিয়ে দেখে কোথাও আবির ভাই নেই। বারান্দার লাইটের আলোতে স্পষ্ট দেখা গেলো রুমের দরজা বন্ধ। মেঘ বিস্ময় সমেত তাকিয়ে রইলো দরজার পানে। ফ্যানের বাতাসে চুলগুলো উড়ে চোখে মুখে ঝাপটে পরছে। কয়েক মুহুর্ত লাগলো মেঘের বুঝতে, যে এটা স্বপ্ন ছিল।
মেঘ দীর্ঘশ্বাস ফেললো, দূর-দূরান্ত থেকে আজানের শব্দ ভেসে আসছে। মেঘ মোবাইল টা হাতে নিয়ে টাইম দেখলো। ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে। মেঘ ফোন থেকে আবির ভাইয়ের নামে সেইভ করা ফাইল টা বের করে আবির ভাইয়ের ছবিগুলো দেখতে লাগলো৷ কিন্তু মেঘের মস্তিষ্ক জোড়ে মাত্র দেখা স্বপ্নটায় ঘুরছে৷ মেঘ বিড়বিড় করে বললো,
“স্বপ্নেও ভালোবাসি বললেন না, হি*টলার তো হি*টলার ই!” নামাজ পরে পড়তে বসেছে মেঘ। ভোরবেলা থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে৷ ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া৷ পড়ার থেকেও মাথায় দুষ্টুমি ঘুরছে বেশি৷ তারপর ও জোর করে ১-২ ঘন্টা পড়ে খাবার টেবিলে আসলো প্রতিদিনের মতো।
আবির একেবারে পরিপাটি হয়ে নামছে সিঁড়ি দিয়ে তা দেখতে মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। মনে পরে গেলো ভোররাতের স্বপ্নের কথা। ফিটফাট আবির ভাইকে দেখে নিলো আপাদমস্তক। একটা কালো শার্ট হাত তার কনুই পর্যন্ত উঠানো, হাতে একটা ব্লেজার,প্যান্ট টাও একই রঙের, চোখে কালো সানগ্লাস, ঘড়ি পড়তে পড়তে নিচে নামছেন। দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসলেন ডাইনিং এর দিকে। মেঘ তখনও অভিভূতের ন্যায় চেয়ে আছে আবির ভাইয়ের পানে।
আর গুনগুন করে গান গাইছে, “”কালো সানগ্লাসটাই কেনো এত সুখ। হে যুবক, দৃষ্টিতে যেন সে রাসপুতিন, খু*ন হয়ে যাই আমি প্রতিদিন, নামধাম জানি, সাথে তার সবকিছু, তবুও নিলাম আমি, তার পিছু।।””
আবির কাছাকাছি এসে সানগ্লাস খুলে, কপাল গুটালো কিন্তু মেঘের হুঁশ নেই। আবির গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, “কি হয়ছে তোর ?” মেঘ একটু নড়েচড়ে উঠলো। গান থামিয়ে কন্ঠ খাদে নামিয়ে জবাব দিলো, “ব্লেজার পরলে আপনাকে কেমন লাগবে সেটায় ভাবছি। ” আবির পুনরায় সানগ্লাস চোখে দিলো, কনুই পর্যন্ত তুলা হাত নামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্লেজার পরে নিলো। মেঘ উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
“মাশাআল্লাহ, কারো নজর না লেগে যায়!” অকস্মাৎ মেঘ চেয়ার থেকে উঠে আবির ভাইয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আবির ভ্রু কুঁচকে চাইলো, মেঘ সহসা আবিরের ডানহাতের কনিষ্ঠা আঙুলে হালকা করে কামড় দেয়। আবির নির্বাক চোখে তাকিয়ে অষ্টাদশীর কান্ড দেখছে।
১ সেকেন্ডের মধ্যে মেঘ দূরে সরে গিয়ে চেয়ারে বসে পরে। নিজের কর্মকান্ডের প্রতি এখন নিজের ই রাগ হচ্ছে। আবির ভাই কিভাবে রিয়েক্ট করবে আল্লাহ জানেন, মনে মনে ভীত হচ্ছে অষ্টাদশী। আবির স্বাভাবিকভাবে হেঁটে মেঘের বিপরীতে বসতে বসতে গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করলো, “সুন্দর লাগলেই বুঝি ছেলেদের আঙুলে কামড় দেস তুই?”
মেঘ চমকে উঠে তাকায় আবির ভাইয়ের দিকে, সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়ে ডানে বামে, অভিমানী স্বরে বলে উঠে, “মীম ছাড়া কারো আঙুলে কামড় দেয় না ” আবির কিছু বলার আগেই হালিমা খান খাবার নিয়ে হাজির হলেন। একগাল হেসে বললেন, “কি ব্যাপার দুই ভাই বোন আজ গল্প করছে নাকি?” আবিরকে দেখে পুনরায় বললেন, “মাশাআল্লাহ, তোকে খুব ভালো লাগছে!”
ততক্ষণে আস্তেআস্তে সবাই খাবার টেবিলে আসতে শুরু করেছে। ইকবাল খান এসে আবিরকে দেখেই বলে উঠলেন, “মাশাআল্লাহ আবির, তোকে তো অনেক সুন্দর লাগছে। এতদিকে তোকে CEO মনে হচ্ছে । তোর লুকেই আজকের মিটিং জমে যাবে!” আলী আহমদ খান ও ছোট করে বললেন, “মাশাআল্লাহ ”
মোজাম্মেল খান চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, “ভাইজান, আবিরকে বলা দরকার না কথাটা?” আলী আহমদ খান ১ সেকেন্ড থেমে বলে উঠলেন, “ও হ্যাঁ, আমার তো মনেই ছিল না।” আবির নিরেট কন্ঠে প্রশ্ন করলো, “কি হয়েছে?”
আলী আহমদ খান সহসা বললেন, “তোকে একটু রাজশাহী যেতে হবে!৪-৫ দিনের জন্য ” আবির ২ আঙুল দিয়ে কপালে আলতো করে ছুয়েছে সাথে একপলক মেঘকেও দেখে নিয়েছে। মেঘ মনোযোগ দিয়ে খাবার খাচ্ছিলো তবে এই কথা শুনে মুখে খাবার নিয়েই চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে আছে আবিরের পানে। আর মনে মনে বলছে,
“প্লিজ আবির ভাই, আপনি যাবেন না, প্লিজ” আবির বাবার দিকে এক নজর তাকালো, তারপর মাথা নিচু করে বললো, “আমি এখন কোথাও যেতে পারবো না। ” মোজাম্মেল খান অকস্মাৎ বললেন, “কেনো?” আবির মনে মনে বললো,
“আমি দূরে গেলে কারো খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, রাতে ঘুম হা*রাম হয়ে যায়। ” সহসা গলা খাঁকারি দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে আবির বলে উঠলো, “আমার অফিসে কাজ আছে। ১ সপ্তাহ পর অফিস শুরু হবে, এই অবস্থায় সবকিছু ফেলে আমি কোথাও যেতে পারবো না। ”
মোজাম্মেল খান এবার আলী আহমদ খানের দিকে চেয়ে বললেন, “তাহলে কি আমি যাব ভাইজান? ” আলী আহমদ খান কিছু বলার আগেই পুনরায় আবির বলে উঠলো, “কাউকেই যেতে হবে না। আমার পরিচিত লোক আছে আমি এখান থেকেই কাজ করাতে পারবো। তারপরও যদি সমস্যা হয় তখন তোমাদের আমি জানাবো। তবে আগামী ২*৩ মাস আমি কোথাও যাব না এটা বলে রাখলাম। চট্টগ্রামের কাজ মোটামুটি শেষ করে আসছি। সিলেটের কাজও কাকামনি শেষ করে আসছেন। রাজশাহীরটা আমি দেখছি তোমাদের যেতে হবে না।”
মেঘ নিঃশব্দে হাসছে। সবাই চুপচাপ খাবার খাচ্ছে। আবির খাবার শেষ করে উঠে যাবে তখন ইকবাল খান ডেকে উঠলে, “আবির বাহিরে বৃষ্টি, বাইক নিয়ে বের হইস না। আমি খাবার শেষ করে তোকে নিয়ে যাবো। একটু বস। ” আবিরও বাধ্য ছেলের মতো ছোফায় বসে রইলো। তারপর ইকবাল খানের সঙ্গে গাড়িতে করে অফিসের উদ্দেশ্যে চলে গেলেন।
সারাদিনই বৃষ্টি হয়েছে আজ, মেঘের কোচিং, টিউশন কিছুই নেই, রুমে বসে সারা বেলা পড়াশোনা করেছে। বিকেলে বৃষ্টি কমে এক চিলতে রোদ বেরিয়েছে আকাশে। মেঘের আর পড়তে ইচ্ছে করছে না। তাই বই রেখে মোবাইল হাতে নিয়ে পুরো বাড়ি চক্কর দিলো কিন্তু সবাই ঘুমাচ্ছে তাই আড্ডা দেয়ার মতো কাউকে পেলো না। হঠাৎ মনে হলো,অনেকদিন ছাদে যাওয়া হয় না। সেই যে রাতের বেলা আবির ভাইয়ের গান শুনে ছাদে গিয়েছিলো তাও আবার ছাদের দরজা পর্যন্ত। তারপর থেকে আর ছাদের দিকে পা বাড়ায় নি মেঘ।
মেঘ স্কুল, কলেজে পড়ার সময় প্রতিদিন বিকেল বেলা ছাদে যেতো। ফুল গাছ লাগানো আর তাদের যত্ন নেয়া ছিল তার নে*শা। তবে HSC র আগে টেস্ট পরীক্ষা থেকে মেঘ ছাদে যাওয়া ভুলেই গেছে। টিউশন,কোচিং শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যার পর হয়ে যেতো। আর সন্ধ্যার পর ছাদে যাওয়ার মতো এত সাহস অষ্টাদশীর নেই। সেই থেকে গাছের যত্ন ছেড়ে দিয়েছে৷ গাছেরাও অযত্ন, অবহেলায় ম*রে গেছে। তখন থেকে মেঘ আর ছাদে যায় না। মেঘ গুঁটি গুটি পায়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠলো ছাদে।
ছাদের গেইট খুলতেই চোখ ছানাবড়া হলো অষ্টাদশীর। ছাদের যতটা অংশ চোখে পরছে পুরোটায় গাছে ভর্তি। মেঘ পা বাড়ালো ছাদের দিকে সম্পূর্ণ ছাদ পরিষ্কার করে তাতে তিন সারি গাছের টব রাখা। এক কর্ণারে শুধু ফলের গাছ বাকিসবটায় ফুলগাছে ভরপুর। নয়নতারা, বেশ কয়েক রঙের গোলাপের গাছ, পর্তুলিকার গাছ তবে বিকেল বেলাতে ফুল নেই, কাঠগোলাপের গাছ, জিনিয়া, অপরাজিতা,রঙ্গন থেকে শুরু করে কতকত ফুলের গাছ যার অধিকাংশ গাছের বা ফুলের নামই জানে না মেঘ। মেঘ নিজেকে নিজে প্রশ্ন করছে,
“এতগাছ কে আনলো? তানভির ভাইয়া তো জীবনেও ছাদে আসে না। তাহলে কি আবির ভাই?” সহসা মেঘের চোখে মুখে উজ্জ্বলতা ফুটে উঠলো। ছাদ ভর্তি এতো গাছগাছালি দেখে মেঘের ভীষণ ভালো লাগছে। সবটা ছাদ ঘুরে দেখলো সারাদিন বৃষ্টি থাকায় পানি দেয়ার প্রয়োজন হলো না। ২০ – ৩০ টা ছবিও তুলেছে ফুলের আর গাছের। ততক্ষণে সূর্য ডুবতে শুরু করেছে।
গোধূলি আলোতে ফুলের মুগ্ধতা দেখে মেঘ লো*ভ সামলাতে না পেরে একটা গোলাপ ফুল ছিঁ*ড়ে নিয়েছে । এতদিন পর নিজের বাড়ির ছাদে এত এত ফুল গাছ আর ফুলের সমাহার দেখে আবেশিত হয়ে পরেছে মেঘ। এদিকে আবির করিডোর দিয়ে নিজের রুমের দিকে আসছিলো৷ আবির মেঘকে দেখে ঠায় দাঁড়িয়ে পরলো সেখানে। এদিকে মেঘ আপন মনে ফুলের গন্ধ শুঁকছে আর হাঁটছে । আশেপাশে বা সামনে কেউ আছে কি না তাতে তার কোনো মনোযোগ নেই।
হঠাৎ আবিরের প্রশস্ত বুকের সঙ্গে ধা*ক্কা খেলো মেঘ৷ নিজেকে সামলানোর আগেই আবির মেঘের বাহু চেপে ধরে, সহসা স্বাভাবিক হয়ে মুখ তুলে চায় মেঘ। আবির ভাইয়ের তপ্ত দৃষ্টি দেখেই মাথা নুইয়ে ফেলে পুনরায়। আবির বাহু চেপে ধরে, দ্বিগুণ ভারি কন্ঠে ধ*মকে উঠে, “ফুল ছিঁড়েছিস কোনো? ” মেঘ ঢুক গিলে, মৃদু কন্ঠে বললো,
“SoRRy” আবির পুরু কন্ঠে শুধালেন, “Sorry টা আমায় না বলে গাছকে বলিস” মেঘ নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে আছে। আবির ভাইয়ের ধমকে ভিজে আসে নেত্রদ্বয়। আবির মেঘের বাহু ছেড়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে মেঘ চলে যেতে নেয়৷ আবির পুনরায় নিরেট কন্ঠে ডেকে উঠলো,
“শুন” মেঘ ঐখানেই দাঁড়িয়ে পরেছে। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে উত্তর দিলো, “জ্বি” আবির এবার কিছুটা স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলো, “সময় পেলে গাছগুলোর একটু যত্ন নিস, এগুলো তোরই!” মেঘ এবার বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকায় আবিরের দিকে৷ নিষ্পলক তার দৃষ্টি , চোখ টলমল করছে পূর্বের জমা পানিতে, অধর সরে আছে কিছুটা দূরে৷
কয়েক মুহুর্ত পর উত্তেজিত কন্ঠে শুধালো, “আমার?” আবির পূর্বের অভিব্যক্তি বজায় রেখে জবাব দিলেন, “হ্যাঁ! তোর নাকি ফুলের গাছ অনেক পছন্দ । তাই এনে দিলাম, এখন যত্ন নেয়ার দায়িত্ব তোর। আর হ্যাঁ গাছের যত্ন নিতে গিয়ে দুনিয়া ভুলে যাস নে যেন ”
মেঘ বশিভূ*ত চোখে চেয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে৷ আবিরও এবার সরাসরি চোখ রাখে মেঘের চোখে মুখে৷ দু’ফোটা অশ্রুর দাগ হয়ে গেছে , সম্পূর্ণ গাল টকটকে লাল হয়ে আছে, গালের মাঝে একটা গাঢ় কালো রঙের তিল জ্বলজ্বল করছে। আবিরের দূর্বোধ্য দৃষ্টি দেখে, নিজের দৃষ্টি সংযত করলো মেঘ। কোমল কন্ঠে বললো,
“Thank you Abir Vai” আবির কিছু বলার আগেই পুনরায় মেঘ প্রশ্ন করলো, “আজ এত তাড়াতাড়ি চলে আসলেন যে?” আবির উত্তর দিলো, “একটু পর আবার বের হবো। ” অষ্টাদশী পল্লব ঝাপটে আবির ভাইয়ের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করে,
“কফি খাবেন আবির ভাই?” আবির খরখরে কন্ঠে শুধালো, “গতরাতে কি বলেছি তোকে, মনে নেই?” মেঘ মাথা নিচু করে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল, “অন্য কাউকে বলি করে দিতে?” আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে জবাব দিলো, “লাগবে না। তুই রুমে যা। ”
মেঘ ও আর কথা বাড়ালো না। চুপচাপ রুমে চলে গেলো। রুমে শুয়ে শুয়ে বিকেলে তুলা ছবিগুলো দেখছিলো মেঘ সেখান থেকে কয়েকটা ছবি আপলোড দিলো ফেসবুকে “স্পেশাল গিফট” সাথে কয়েকটা লাভ ইমুজি দিলো ক্যাপশনে।
সন্ধ্যার পর মেঘ পড়তে বসেছে। কিছুক্ষণ পরই ফোনে কল বেজে উঠলো। বন্যা কল দিচ্ছে, তৎক্ষনাৎ রিসিভ করলো মেঘ, বন্যাঃ আসসালামু আলাইকুম মেঘঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছিস? বন্যাঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুই কেমন আছিস? মেঘঃ আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো। বন্যা উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো,
” এই তোকে এত গাছ কে দিলো রে?” মেঘ স্ব শব্দে হেসে বললো, “আবির ভাই” “কি? আবির ভাইয়া?” আঁতকে উঠে বন্যা। মেঘ পুনরায় বলে উঠে,
“হ্যাঁ,কবে আনছেন জানি না। কিছুদিন যাবৎ মীমের রুমে কাজ চলছে,ছাদেও কাজ চলছিলো তাই আমি তেমন বের হয় নি রুম থেকে আর ছাদেও যায় না অনেকদিন যাবৎ । আজ হঠাৎ ছাদে গিয়ে দেখি ছাদ ভর্তি গাছ, ছাদের পরিবেশ পুরোই চেইঞ্জ ।৷ আসার সময় আবির ভাই বলছেন এগুলো নাকি আমার।” বন্যা উদ্বেলিত ভঙ্গিতে বললো,
“বাহ! তোর শখ তো তাহলে পূরণ হয়েই গেলো৷ তুই তো খুব করে চাইতি তোর ছাদভরা গাছ হোক, যেদিকেই তাকাবি শুধু গাছ আর গাছ থাকবে। দেখলি তো আল্লাহ তোর ইচ্ছে পূরণ করেছেন?”” মেঘ খুশিমনে বললো,
“তুই সময় করে আসিস বাসায়,ছাদে যাব নে। আর হ্যাঁ সকাল বেলা আসিস ” “ঠিক আছে” বন্যা উত্তর দিলো। তারপর দুই বান্ধবী বেশকিছুক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে কথা বলে রেখে দিলো।
রবিবার থেকে ব্যস্ততায় কাটছে সকলের সময়। বর্ষাকাল থাকায় হুটহাট বৃষ্টি নেমে যায়। আবির বৃষ্টি না থাকলে বাইকে অফিসে যায় আবার বৃষ্টি থাকলে গাড়িতে যায়। মেঘ ও কোচিং টিউশন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো৷ আবির ভাইয়ের সাথে তার টুকটাক দেখা হয়। হয়তো খাবার টেবিলে নাহয় সিঁড়িতে অথবা করিডোরে। আজ বৃহস্পতিবার। আবির সন্ধ্যার পর সোফায় বসে আছে হাতে ফোন আর সামনে কফির কাপ নিয়ে৷ মেঘ ও তখন বই নিয়ে রুম থেকে বের হয়েছে, কিছুক্ষণ পরেই জান্নাত আপু আসবে। মেঘ করিডোর থেকে সিঁড়ির কাছে আসতে আসতে নিচের দিকে একবার তাকায়।।
চোখ পরে সোফায় বসা আবির ভাইয়ের দিকে। এক হাতে কফির কাপ নিয়ে কফি খাচ্ছের অন্য হাতে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছেন। মোবাইলের হোমপেইজে সাদাকালো রঙের একটা ছবি। মেঘ গভীর দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু ক্লিয়ার বুঝা যাচ্ছে না৷ মেঘ দ্রুত পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নেয় যাতে কাছে গিয়ে ছবিটা দেখতে পারে কিন্তু মেঘের নুপুরের শব্দে আবির ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে মোবাইল পকেটে রেখে দেয়৷ মেঘ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আবির ভাইয়ের দিকে চেয়ে চেয়ে নিচে নামছে আর মনে মনে বলছে,
“কে এই মেয়ে যার ছবি আবির ভাইয়ের ফোনের ওয়ালপেপারে রেখেছেন। আমাকে দেখতেই হবে এই মেয়ে কে!” আবির কফি শেষ করে দীর্ঘ পায়ে বেরিয়ে যায় বাসা থেকে৷ মেঘ কিছুক্ষণ সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে পুনরায় পড়ার রুমের দিকে চলে যায়।। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই জান্নাত আপু পড়াতে আসেন। আজ একটু বেশি সময় নিয়ে পড়িয়েছেন আপু। মোটামুটি ৮.৩০ এর কাছাকাছি বেজে গেছে ।ড্রয়িংরুমে কেউ নেই জান্নাত পড়ানো শেষে বের হতে যাবে। মেঘও তখন পিছন পিছন পড়ার রুম থেকে বের হয় দরজা লাগানোর জন্য।
জান্নাত দরজার কাছাকাছি যেতেই আবির বাহির থেকে দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে। মুখোমুখি দেখা হয় আবির আর জান্নাতের। জান্নাত সহসা হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলে, “আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া, কেমন আছেন?” আবিরও হাসি মুখে উত্তর দেয়,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি কেমন আছো?” মেঘ পড়ার রুমের কিছুটা সামনে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছে । আর বিড়বিড় করে বলছে, “আবির ভাই জান্নাত আপুকে চিনে? কিন্তু কিভাবে? তাহলে কি আবির ভাইয়ের ফোনে তারই ছবি ছিলো?”