সালমা চৌধুরী
সালমা চৌধুরী

প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে | অবিশ্বাসের ছায়া

সমাপ্ত

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে | সিজন ১ | পর্ব - ২২

৫৭ ভিউ
০ মন্তব্য
১ মিনিট

মেঘের রুম থেকে বেড়িয়ে আবির নিচে এসে ডাইনিং টেবিলে বসেছে। মীম, মেঘ, তানভির কেউ নেই। কেমন যেন সুস্থির পরিবেশ। মীম বা মেঘ না থাকলে আদিও যেনো চুপচাপ থাকে৷ অসুস্থতার কারণে ২-৩ দিন আবির রুমেই খেয়েছে তাই তেমন কোনোকিছু উপলব্ধি করে নি। কিন্তু খাবার টেবিলে মেঘ নেই এতেই যেনো বুকটা কেঁপে উঠলো আবিরের। তানভির রুম থেকে রেডি হয়ে নামতে গেলে আকলিমা খান ডেকে বললেন,

“তানভির, মীমকে একটু ডাক নিয়ে আয় তো। ” গতসপ্তাহেই মীম উপরের রুমে শিফট হয়েছে তবে এখনও মন তার নিচেই পরে থাকে। ক্ষণে ক্ষণে ভাইকে আর মাকে দেখতে ছুটে আবার উপরে আসলে মেঘের রুমে যায়, আবার নিজের নতুন রুম গুছায়। তানভির মীমের দরজায় এসে ডাকলো,


“মীম, খাবি না?” মীম জবাব দিলো, “আসছি, ভাই। ” তানভির এসে খেতে বসে কিছুক্ষণ পর মীমও এসেছে। মোজাম্মেল খান আবিরের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি কি আজও বাইকে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছো?” আবির কিছু বলার আগেই ইকবাল খান বলে উঠলেন,

“না না। আবির আমার সাথে যাবে। ” আলী আহমদ খান গম্ভীর কন্ঠে বললেন, “সেই ভালো তুই ই নিয়ে যাস। ওর তো আবার আমাদের সাথে আমাদের গাড়িতে চলাফেরা করতে সমস্যা । ” আবির চটজলদি খাওয়া শেষ করলো। যাওয়ার আগে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো, “আপনারা টাইমমতো চলে আসবেন প্লিজ। ” তানভিরের দিকে চেয়ে বললো,

“তুই কি এখন যেতে পারবি?” তানভির জবাব দিলো, “একটু পরে যায়? ” আবির শান্ত স্বরে বললো, “ঠিক আছে।তাড়াতাড়ি চলে আসিস। আর বাইকের চাবি রুমে আছে। নিয়ে আসিস। ” তানভির হাসিমুখে মাথা নাড়লো।

আলী আহমদ খান,মোজাম্মেল খান, ইকবাল খান থেকে শুরু করে রাকিব, রাসেলেরও আব্বু, চাচ্চু যারা ছিলেন তারা সকলেই এসেছেন। অফিসের কলিগদের সহ সকলকে দুপুরে খাওয়ানো হয়েছে। আবিরের একজন পরিচিত ছোটভাই, নাম মিরাজ। তাকে আবিরের পিএস হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে যখন ঢাকার বুকে সন্ধ্যা তখন তানভিরের সঙ্গে বাড়ি ফিরেছে আবির। সাথে কয়েক প্যাকেট বিরিয়ানি। বাসায় ঢুকে তানভির বিরিয়ানি গুলো সবাইকে দিতে ব্যস্ত হলো। আবির একটা প্যাকেট নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে মেঘের রুমে চলে গেলো।

মেঘ পাশ ফিরে ফে*সবুকে ভিডিও দেখছিলো। আবির গলা খাঁকারি দেয়াতে পিছনে ঘুরেছে। আবির বিরিয়ানির প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে ছোট করে বললো, “তোর জন্য এনেছি। খেয়ে নিস। ” মেঘ কপাল কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করলো,

“কি এতে?” আবির উত্তর দিলো, “বিরিয়ানি ” মেঘ শুধু বলেছে, “আমারতো….!” আবির সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো,

“আমি জানি তোর বিরিয়ানির থেকেও কাচ্চি অনেক বেশি পছন্দ কিন্তু সবদিক বিবেচনা করে অফিসে বিরিয়ানি ই দেয়া হয়েছে। আজ এটা খেয়ে নে আমি অন্য দিন তোর জন্য কাচ্চি নিয়ে আসবো। ” মেঘ আর কিছু বললো না। আবির ও বিরিয়ানি রেখে নিজের রুমে চলে গেছে।

২-৩ দিন কেটে গেলো। আবিরের ব্যস্ততা এখন দ্বিগুণ বেড়েছে । দুই অফিসের CEO এর দায়িত্ব পালন করা চারটে খানে কথা নয় তারপরও কোনো কাজেই ফাঁকি দেয় না ছেলেটা। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার ঝোঁ*ক মা*থাচাড়া দিয়ে বসেছে। শত ব্যস্ততার মাঝেও প্রতিদিন ফজরের নামাজ পরে বাসায় ফিরে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে ঘুমন্ত অবস্থাতেই দেখে যায়৷ হালিমা খান ইদানীং মেঘের সাথে থাকায় আবিরের সুবিধায় হয়েছে। হালিমা খান ফজরের নামাজ পড়তে নিজের রুমে চলে যান তারপর রান্নার ব্যবস্থা করেন এই ফাঁকে আবির মেঘকে দেখে ছাদে চলে যায়। দু-তিনদিন যাবৎ বাসায় ফেরার সময় মেঘের জন্য এটা সেটা খাবার কিনে নিয়ে আসে। একদিন মেঘের জন্য চিপস কিনতে গিয়ে মহা মুসিবতে পরে গেলো আবির।

আবির দোকানদারকে বলেছে, “চিপস দেন” দোকানদার জিজ্ঞেস করছে, “কোনটা দিবো?” কম করে হলেও ২০-৩০ জাতের চিপস। আবির হা হয়ে তাকিয়ে আছে। মেঘের পছন্দের ২ টা চিপসের নাম আবির জানতো কিন্তু অন্য কোন কোম্পানির চিপস পছন্দ করে তা আবিরের অজানা ছিল। তাই দোকান থেকে সব ব্যান্ডের চিপস ২ টা করে, মোটামুটি এক বস্তা চিপস নিয়ে মেঘের রুমে হাজির হলো। ভাগ্যিস সময়টা তখন বিকেল ছিল। ড্রয়িং রুমে কেউ ছিল না।

এত চিপস দেখে মেঘ অগার মতো চেয়ে থেকে শুধালো, “আপনি কি চিপসের ব্যবসা শুরু করেছেন?” আবির স্বভাব-সুলভ গম্ভীর কন্ঠেই উত্তর দিলেন, “তোর পছন্দের চিপস কোনগুলো বের কর। ” এত এত চিপসের ভীড় থেকে ৫ টা পছন্দের চিপস বের করে বললো,

“এগুলোই আমার পছন্দ । ” আবির ভারী কন্ঠে বললো, “বাকিগুলো টেস্ট করতে পারিস, ভালো লাগলে পছন্দের লিস্ট বাড়াবি আর ভালো না লাগলে মীম আর আদিকে দিয়ে দিস। ” বৃহস্পতিবার সকালে আবির অফিসে যাওয়ার পথে মীমকে ডেকে ছাদের চাবি দিয়ে বললো,

“মেঘের শরীর ভালো থাকলে ওরে নিয়ে একটু ছাদে যাস৷ ” মীম চাবি নিয়ে উত্তর দিল, “ঠিক আছে ভাইয়া” আবির অফিস থেকে ফেরার পথে মেঘের কোচিং আর টিউশন থেকে এই সপ্তাহের সকল নোট আর পরীক্ষার প্রশ্ন গুলো এনে মেঘের রুমে টেবিলের উপর রেখে নিজের রুমে চলে গেছে।

মীম আর মেঘ ছাদে ঘুরে ঘুরে ফুলগাছ গুলো দেখছিলো৷ নয়নতারা কুড়িয়ে দু বোন দুটা কানে গুজে কয়েকটা ছবিও তুলেছে। আর এটা সেটা হাজারও গল্প করছে। ১ সপ্তাহে মেঘের শরীর কিছুটা সুস্থ হয়েছে। তবে মায়ের ঘন্টায় ঘন্টায় আনা খাবার খেতে হচ্ছে, আবিরও এটা সেটা নিয়ে আসে, মোজাম্মেল খান অথবা আলী আহমদ খান রুটি,কলা, ফল নিয়ে আসে, তানভির রাতে ফেরার সময় যা চোখের সামনে পরে তাই নিয়ে আসে। খেতে খেতে আর শুয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। বেশখানিকটা সময় ছাদে ঘুরাঘুরি করে নিচে এসে যে যার রুমে চলে গেছে।

মেঘ রুমে ঢুকতেই চোখ পরলো টেবিলের উপর রাখা প্রশ্ন আর শীটের দিকে। এগুলো নিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলো। বুঝতে বাকি নেই যে এগুলো আবির ভাই ই এনেছেন। মেঘ সন্ধ্যার পরে পড়তে বসেছে । অসুস্থতার ফলে এক সপ্তাহ যাবৎ বই নিয়ে বসতেই পারছিল না মেয়েটা। কিছুক্ষণ পড়াশোনা করে আবির ভাইয়ের আনা প্রশ্নগুলো দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে নিজের অবস্থান চেক করছিলো ।

প্রতি শুক্রবারের ন্যায় এই শুক্রবারটাও ভালোভাবেই কাটলো সকলের। আবির আসরের নামাজ পড়ে করিডোর দিয়ে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলো হঠাৎ ই সামনে পড়লো মেঘ। একটা স্কাই ব্লু কালারের জামার সাথে সাদা ওড়না গলায় পেঁচিয়েছে, হাতে একটা পার্টস নিয়ে খোলা চুলে বের হচ্ছে রুম থেকে। স্ট্রেইট লম্বা চুলগুলোর আগা হাটু ছুঁয় ছুঁয়।

আবির ক্ষুদ্র চোখে তাকিয়ে রইল অষ্টাদশীর পানে। মেঘ রুম থেকে বেরিয়েই মুখোমুখি হলো আবির ভাইয়ের। সাইড কেটে চলে যেতে চাইলে আবির প্রশ্ন করে উঠলো, ” এভাবে চুল ছেড়ে কোথায় যাচ্ছিস?” মেঘ মাথা নিচু করে ছোট করে উত্তর দিলো, “পার্লারে ” আবির কপাল কুঁচকে শুধালো,

“কেন? ” মেঘ মাথা নিচু করেই পুনরায় উত্তর দিল, “চুল কাটাতে” আবির এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “তোকে চুল কা*টার অনুমতি কে দিয়েছে? ” মেঘ একদমে বলে ফেললো, “আম্মু বলেছে আমি নাকি চুলের যত্ন নিতে পারিনা, তাই কাটাতে যাচ্ছি। ” আবির গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করল,

“মামনি বলেছে? ” মেঘ উত্তর দিল, “জ্বি” আবির ভিতরে ভিতরে রা*গে ফুঁ*সছে , কন্ঠ দ্বিগুন ভারি করে জানালো, “চুল কাটাবি ভালো কথা কিন্তু চুল কোমরের উপরে যেন না উঠে ” মেঘ অন্য দিকে মুখ করে অভিমানী স্বরে বলল,

” আমার চুল আমি কাটাবো, কারো অভিমতের প্রয়োজন নেই। ” আবির দাঁতে দাঁত চেপে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে, কড়া স্বরে বলল, “চুল কোমরের এক ইঞ্চি উপরে উঠলে তোর খবর আছে। ” কথাটা বলা শেষ করা মাত্রই আবির দ্রুত পায়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেল। অষ্টাদশী স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলল,

“আমার চুল আমি যা ইচ্ছা তাই করব, আপনার কথা আমি কেন শুনবো? আপনি আপনার প্রিয়তমার উপর অধিকার খাটান গিয়ে, আমার ওপর অধিকার কাটাতে হবে না। ” কথাগুলো একদমে বলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে মায়ের রুমে চলে গেলো। হালিমা খান মেয়েকে নিয়ে বাসার কাছেই একটা পরিচিত পার্লারে গিয়েছেন। হালিমা খান বলেছিলেন কাঁধের নিচ পর্যন্ত কেটে ফেলতে। কিন্তু মেঘের মন টানছে না, চুলের প্রতি যেনো তার বড্ড বেশি মায়া। মায়ের কথায় চুল কাটতে রাজি হয়েছে সেই অনেক। হালিমা খানের জোরাজোরিতে মেঘ পিঠ পর্যন্ত চুল কা*টাতে রাজি হয়েছে।

পার্লারের মহিলা যখনই চুল কা*টার জন্য কাঁ*চি হাতে নিলো, তৎক্ষনাৎ মেঘের মনে পড়ে গেল আবির ভাইয়ের বলা কথাটা। মেঘ মনে মনে ভাবলো, “না না ! আবির ভাইয়ের উপর কোনো বিশ্বাস নাই। চুল ছোট করলে যদি ঐদিনের চেয়েও বেশি জোরে মা*রে। তাহলে তো আমি ম*রেই যাব। থাক বাবা, এই ফা*লতু ব্যা*টার মা*র খেয়ে অকা*লে জীবন ত্যা*গ করার কোনো প্রয়োজন নেই। আর কিছুদিন জীবনটা উপভোগ করে নেই৷ ”

সঙ্গে সঙ্গে মেঘ চিৎকার দিয়ে উঠলো। মেয়ের আচমকা চিৎকারে হালিমা খান কিছুটা ভরকে গেলেন, চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কি হয়েছে তোর? এভাবে চিৎকার করছিস কেন?” মেঘ নিরুদ্বেগ কন্ঠে বললো, “কোমড় পর্যন্ত কাটাবো চুল। ” হালিমা খান কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললেন, “কোমড় পর্যন্ত কাটালে আর কি হবে, সেই তো বড়ই থাকবে। ” মেঘ মন খারাপ করে উত্তর দিলো,

“তারপর ও কোমড় পর্যন্তই কাটাবো। আর ছোট করবো না প্লিজ আম্মু। ” হালিমা খানও আর জোর করলেন না। মেয়ের কথামতো কোমড় পর্যন্তই কাটানো হলো। কাজ শেষ করে সন্ধ্যার আগে আগে বাসায় ফিরেছেন মা মেয়ে। আবির ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে কফি খাচ্ছিলো,

কাউকে ঢুকতে দেখে চোখ তুলে এক পলক তাকালো, মেঘকে দেখে দৃষ্টি স্থির হলো, মেঘের চুল দেখার জন্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। মেঘ সিঁড়ি দিয়ে উঠার পথে আবির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কে*টে দ্রুত পায়ে উঠে নিজের রুমে চলে যাচ্ছে। মেঘের কোমড় পর্যন্ত চুল দেখে আবির মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো। আবির কফি শেষ করে বাসা থেকে বেরিয়ে পরেছে। প্রতি শুক্রবারের মতো মাগরিবের নামাজ পড়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে গেছে। বাসায় ফিরতে ফিরতে ১১ টা বেজে গেছে।

শনিবারে ডাইনিং টেবিলে নাস্তা করছিলো সকলে তখনই মেঘ নেমে আসছে, চঞ্চল পায়ের নুপুরের ঝনঝন শব্দে আবির চাইলো সিঁড়িতে , চুল ছোট করাতে যেনো অন্যরকম সুন্দর লাগছে তার অষ্টাদশীকে৷ কোমড়ে পরা চুলগুলো হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে এদিক সেদিক নড়ছে। আবির সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি নামিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। মেঘ কাছাকাছি আসতেই,

আলী আহমদ খান প্রশ্ন করলেন, “এখন শরীর কেমন?” মেঘ একগাল হেসে উত্তর দিলো, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো, বড় আব্বু। ” তানভির কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, “চুল কাটাইছিস নাকি?”

এবার যেনো সকলের দৃষ্টি মেঘের চুলের দিকে গেলো৷ কেউ কিছু বললো না। মেঘ ছোট করে উত্তর দিলো, “হ্যাঁ” তানভির হুট করে বলে উঠলো, “ভালোই করেছিস, লম্বা চুলে তোকে শে*ওড়াগাছের পে*ত্নীর মতো লাগতো। ” কথাটা বলে তৎক্ষনাৎ তানভির জিহ্বায় কা*মড় দিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। বাড়ির সকলে যে এখানে আছে সেটা তানভিরের মনেই ছিল না।

মেঘ গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে ভাইয়ার দিকে সূক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে রইলো। তারপর ভেংচি কেটে চুপচাপ আবির ভাইয়ের বিপরীতে বসে নাস্তা খাওয়া শুরু করলো। মোজাম্মেল খান রা*গী স্বরে বললেন, “নিজের বোনকে পে*ত্নীর সাথে তুলনা করছো। বাহ!” ততক্ষণে আলী আহমদ খান খাবার শেষ করে উঠে গেছেন। ইকবাল খান হাসি মুখে বললেন, “তানভির মজা করে বলেছে। বাদ দাও তো ভাইয়া।” মোজাম্মেল খান কঠিন স্বরে বললেন,

“আমার মেয়েকে নিয়ে কেউ যেনো এরকম মজা আর না করে । আমার মেয়ের তুলনা শুধু পরীর সঙ্গেই সম্ভব। ” কথাটা বলেই মোজাম্মেল খান রা*গে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে যাচ্ছেন। এদিকে বাবার কথায় খুশিতে মেঘ স্ব শব্দে হেসে উঠলো। বাবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তানভির বিড়বিড় করে বললো, “পে*ত্নী তো তবুও গাছে থাকে, পরী হয়ে কোন দেশবিদেশে ঘুরবে তখন তো খোঁজেও পাবে না।” ইকবাল খান কিছুটা হেঁসে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,

“ভাইয়ার সামনে এসব উল্টাপাল্টা মজা করিস না। এসব মজা ভাইয়া নিতে পারে না । ” তানভিরও আর কথা বাড়ালো না। ইকবাল খান খাবার খেয়ে উঠে পরেছেন। আবির যেন নিরব দর্শক৷ এক হাতে ফোনে কি চেক করছেন অন্য হাতে খাবার খাচ্ছেন। মেঘও মনোযোগ দিয়ে খাবার খেতে ব্যস্ত। মীম হঠাৎ ই বলে উঠলো,

“আপু জানো কি হয়ছে?” মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে মীমের দিকে তাকিয়ে বললো, “কি হয়েছে?” আবিরও ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মীমের দিকে চাইলো। মীম আবিরকে দেখেই ঢুক গিলে ছোট করে বললো, “পরে বলবো নে৷ ” মেঘ বলে উঠলো, “কি হয়েছে বল। ”

আবির মেঘের দিকে তাকিয়ে থমথমে কন্ঠে বললো, “চুপচাপ খেতে পারিস না? খেতে বসে এত কথা কিসের? ” মেঘ আর মীম দুজনই মাথা নিচু করে চুপচাপ খাচ্ছে। আবিরও খাবার শেষ করে বেসিনে চলে গেছে। ততক্ষণে মালিহা খান ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে শুধালেন, “তোদের কি আর কিছু লাগবে?” মেঘ উদগ্রীব হয়ে প্রশ্ন করলো,

“আচ্ছা বড় আম্মু, তোমার ছেলের জন্মের পর কি মুখে মধু দাও নি?” মালিহা খান হেসে উঠলেন। আবির বেড়িয়ে যেতে যেতে রাশভারি কন্ঠে বললো, “মধুতে ভেজাল ছিল, তাই খাই নি। ” মেঘ আশ্চর্য নয়নে সহসা ঘাড় ঘুরালো কিন্তু ততক্ষণে আবির মেইনগেইট পেরিয়ে বেড়িয়ে গেছে। মেঘ পুনরায় মালিহা খানের দিকে চাইলো। মালিহা খান হাসি থামিয়ে বললেন,

“আবিরকে সত্যি মধু দেয়া হয় নি। আবিরের জন্মের সময় আমার অবস্থা অনেক খারাপ ছিল তখন বাড়িতে দুজন ডাক্তার ছিল, কখন কি সমস্যা হয় সেজন্য । আর ডাক্তার রা কি মধু খেতে দিবে নাকি? বার বার নি*ষেধ করা হয়েছে কোনো প্রকার মধু,পানি খাওয়ানো যাবে না। আর তোর বড় আব্বুকে এখন কি দেখছিস, আবিরের জন্মের সময় ছেলেকে রেখে এক চুল ও কোথাও নড়ে নি। ডাক্তার যা যা বলেছে, যেভাবে বলেছে সেভাবেই সব করেছে৷ ” মেঘ মালিহা খানের দিকে তাকিয়ে নিরেট কন্ঠে বলে,

“এজন্যই তোমার ছেলে এমন কাটখোট্টা। ” মালিহা খান স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন, “আবির ছোটবেলা এরকম ছিল না৷ বিদেশে যাওয়ার আগে থেকেই কেমন জানি হয়ে গেছে। দেশে ফিরে তো আরও গম্ভীর হয়ে গেছে। সেসব কথা বাদ দে, তোরা তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে পড়তে বস গিয়ে। ”

সারাদিন শেষে রাতের বেলা মেঘ পড়ছিলো। পড়তে পড়তে হঠাৎ ই জান্নাত আপুর কথা মনে পরেছে। রবিবারে তো জান্নাত আপু আসার কথা। কিন্তু মেঘের তো জান্নাত আপুকে দেখার বা ওনার কাছে পড়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই৷ মেঘ পড়ছে আর অপেক্ষা করছে কখন তানভির বাসায় ফিরবে আর তানভিরকে বলবে, জান্নাত আপুর কাছে পড়বে না। রাত ১১ টার পর তানভির ফিরেছে। মেঘ পড়া শেষ করে ভাইয়ার রুমের সামনে গিয়ে ডাকলো,

“ভাইয়া..!” তানভির ভেতর থেকে বললো, “হ্যাঁ, ভেতরে আয়। ” মেঘ রুমে ঢুকে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তানভির বোনের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো, “কিছু বলবি?” মেঘ কোমল কন্ঠে বললো, “একটা কথা বলতাম।” তানভির স্বাভাবিকভাবে বললো, “হ্যাঁ বল।” মেঘ নির্দ্বিধায় বলে ফেললো,

“জান্নাত আপুর কাছে আমি আর পড়বো না। তুমি ওনাকে না করে দিও। ” তানভির চিন্তিত কন্ঠে শুধালো, “কেনো? কোনো সমস্যা? ” মেঘ মাথা নিচু করে বললো, “সমস্যা না। এমনি, পড়বো না। ” তানভির গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,

“বনু, এটার সমাধান আমি দিতে পারবো না। তুই ভাইয়ার সাথে কথা বলিস। ” মেঘ বিরস কণ্ঠে বললো, “তুমিই তো জান্নাত আপুকে এনেছিলে তাহলে তুমিই নি*ষেধ করে দিও। আমি ওনার সাথে কথা বলতে পারবো না।” তানভির এবার ঠান্ডা কন্ঠে বলে উঠলো,

“আমার কাছে জান্নাত আপুর নাম্বার নেই। ভাইয়ার কাছে আছে। তাছাড়া ভাইয়ার কথায় জান্নাত আপু তোকে পড়াতে আসছেন। তুই না পড়তে চাইলে ভাইয়াকে বলিস, ভাইয়া যা সি*দ্ধান্ত নিবে তাই হবে। এই বিষয়ে কথ বলার অধিকার আমার নেই৷ তোর অন্য কথা থাকলে বল। ”

মেঘের মনের ভেতরের সুপ্ত ক্রো*ধ যেন মাথায় উঠে গেছে, চোখ মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। আর কোনো কথা না বলে রা*গে ফুঁ*সতে ফুঁ*সতে নিজের রুমে চলে গেলো। এত বছর তো তানভিরই মেঘের সকল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তবে আজ কেনো আবির ভাইকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে! এটা মেঘ কোনোভাবেই মানতে পারছে না। কিন্তু অষ্টাদশী তো জানে না, গত ৭ বছর যাবৎ আবিরের সিদ্ধান্তেই তানভির সবকিছু করেছে।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই মেঘ রুমে পায়চারি করছে। আবির ভাইকে কিভাবে বলবে, কি বলবে তাই ভেবে পাচ্ছে না। আজ না আবার থা*প্পড় দিয়ে বসেন। তৎক্ষনাৎ নিজেকে নিজে সাহস দিয়ে বলে, “তুই কি এত দূর্বল নাকি! ”

দীর্ঘ সময়ের পায়চারিতে মেঘের নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে যা মুক্তার ন্যায় চিকচিক করছে। বুকে সাহস নিয়ে অষ্টাদশী নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে করিডোর দিয়ে আবিরের রুমের দিকে পা বাড়ালো, আবির শার্টের স্লিভ ফোল্ড করতে করতে নিজের রুম থেকে বের হচ্ছিলো, হঠাৎ মেঘকে দেখে সেখানেই দাঁড়িয়ে পরলো, মেঘ এক মুহুর্তের জন্য সবকিছু ভুলে আবির ভাইয়ের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো, ছাই রঙের একটা শার্ট ইন করে পড়া, চোখে সানগ্লাস৷ ক্রাশ খাওয়ানো সেই লুকে দাঁড়িয়ে আছে আবির ভাই । সে তো জানে না, এই সুদর্শন লুকে ছোট্ট অষ্টাদশীর মনের মনিকোঠায় ব্য*থা অনুভব হয়।

মেঘের অভিমুখে চাইলো আবির, নাকের ডগায় জমে থাকা ঘাম যেনো আবিরের দৃষ্টিকে টানছে, মেঘের শান্ত, অস্থির নয়নজোড়ার দিকে তাকিয়ে আবির মনে মনে বলে, “এই চোখে শুধু আমার সর্ব*নাশ দেখি। ” মেঘের অভিব্যক্তি বদলাতে সময় লাগলো না, মাথা নিচু করে বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে বললো, “আপনার সাথে আমার কথা আছে। ” আবির স্বভাব-সুলভ ভারী কন্ঠে বললো,

“হুমম বল ” মেঘ নিরেট কন্ঠে বললো, “আমি জান্নাত আপুর কাছে পড়বো না। ” মনের ভেতরের সুপ্ত ক্রোধটা এক নিমিষেই প্রকাশ করে ফেললো। মেঘের কথায় আবির স্বাভাবিক কন্ঠে প্রশ্ন করলো, “কেনো?” মেঘ তপ্ত স্বরে জানালো, “ইচ্ছে নেই তাই পড়বো না। ” আবির ভ্রু গুটিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললো,

“তোর ইচ্ছেতে তো সবকিছু হবে না। তোকে জান্নাতের কাছেই পড়তে হবে। ” মেঘ আবারও ভেতরে ভেতরে রা*গে ফুঁসছে, গাল দুটা র*ক্তবর্ণ ধারণ করেছে। অধিক রাগে মেঘের গলার স্বর ভেঙে আসে, এবার কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো, “বললাম তো আমি ওনার কাছে পড়বো না। ” আবির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শক্ত কন্ঠে বললো,

“সব বিষয় নিয়ে ফাজলামো করবি না মেঘ। তোর ভালোর জন্যই জান্নাত কে আনা হয়েছে। আমি তোর খারাপ চাই না। ” মেঘ সহসা বলে ফেললো, “আমার ভালো-মন্দ আপনাকে ভাবতে হবে না। “। অন্তরের ক্রো*ধ যেনো এবার মেঘের চোখ বেয়ে গরিয়ে পরছে। মেঘের বলা কথাটা আবিরের হৃদয়ে লেগেছে। আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে বললো, “আজ থেকে জান্নাত পড়াতে আসবে, ঠিকমতো পড়াশোনা করবি কোনো প্রকার নাটক করলে এর ফল ভালো হবে না। ”

কথাটা বলেই আবির মেঘকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো। মেঘ মাথা উঁচু করে গলার স্বর শৃঙ্গে চড়িয়ে জানালো, “আমি ওনার কাছে পড়বো না, দরকার হলে আমি বড় আব্বুকে বললো। ” আবিরের মে*জাজ চ*রম লেবেলে খারাপ হলো। পায়ের র*ক্ত যেন মাথায় উঠে গেছে। সেখানেই দাঁড়িয়ে রা*গান্বিত স্বরে হুঙ্কার দিয়ে উঠলো,

“কি বলবি আব্বুকে? জান্নাত পড়াতে পারে না এটা বলবি? জান্নাতের আচার-আচরণ খারাপ এটা বলবি? আর তুই যে তোর টিচার কে নিয়ে উল্টাপাল্টা ভাবিস আর বাজে কথা বলিস এগুলো আব্বু শুনলে, সেটা কি ভালো হবে? এইযে তোকে এত ভালোবাসে, এত আদর করে, থাকবে তো এই ভালোবাসা? ” মেঘ সহসা মাথা নিচু করে, নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলো, চোখ দিয়ে অঝরে পানি পরছে। আবির চোখ-মুখ গোটাল, নিজের রাগকে সংযত করার চেষ্টা করলো, রাশভারি কন্ঠে বললো,

“এই বাড়িতে থাকতে গেলে আমার মর্জিতেই তোকে চলতে হবে। ” কোনোরকমে কথা শেষ করে আবির নিজের মতো নিচে চলে গেল, কিছু না খেয়েই অফিসের জন্য বেড়িয়ে পরেছে। পিছন থেকে মালিহা খান, ইকবাল খান ডেকেছে কিন্তু আবিরের যেন সেদিকে কোনো হুঁশ নেই। মেঘ করিডোরে দাঁড়িয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। অতিরিক্ত রা*গে মেঘের খুব কান্না পায়।

খান বাড়ির নিয়ম ই যেনো এটা। আলী আহমদ খান আর মোজাম্মেল খানের আদেশ আবির আর তানভিরকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হয়। আবিরের আদেশ,শাসন মেঘকে পালন করতে হয়। তানভির শুধু মেঘকে না, মীম আর আদিকেও শাসন করে। তবে আবিরের মীম আর আদির ব্যাপারে কোনো মাথা ব্য*থা নেই। আবিরের ধ্যানে জ্ঞানে শুধুই মেঘ।

মেঘ সকাল থেকে কিছুই খায় নি। কয়েকবার বন্যাকে কল ও করেছে কিন্তু বন্যা রিসিভ করে নি।দুপুর হয়ে গেছে মেঘ রুমে জোরে গান চালিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে । হঠাৎ ফোনে কল বেজে উঠেছে । মেঘ মুখ তুলে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো বন্যা কল করেছে। মেঘ ফোন রিসিভ করতেই, বন্যা বলে উঠলো,

“কিরে এত কল দিছিস কেনো? ” মেঘের কান্নার শব্দ শুনে বন্যা চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে বেবি? কাঁদছিস কেনো?” মেঘ কান্নার মাত্রা কমিয়েছে তবে এখনও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেই চলেছে… ক্রো*ধিত কন্ঠে মেঘ বললো, “আমি এই বাড়িতে আর থাকবো না। চলে যাবো বাড়ি ছেড়ে। ” বন্যা কোমল কন্ঠে শুধালো, “কেনো? কে কি বলছে তোকে?” মেঘ কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে বললো,

“কেউ কিছু বলে নি, রেজাল্ট দিলে যদি পাশ করতে পারি তাহলে তুই যেই যেই ভার্সিটিতে আবেদন করবি সবগুলো ভার্সিটিতে আমার আবেদন টাও করবি। টাকা আমি দিব, তুই শুধু আবেদন করে দিবি। তারপর পরীক্ষার সময় একসাথে গিয়ে দুজনে পরীক্ষা দিব। বাংলাদেশের যে জায়গাতেই চান্স পাবো সেখানেই ভর্তি হবো, তারপরও এই বাড়িতে আমি থাকবো না। ”

বন্যাঃ “সেসব পড়ে দেখা যাবে, আগে তুই বল হয়ছে কি?” মেঘ রা*গান্বিত কন্ঠে বলা শুরু করলো,

“কি হয়ছে জানি না। আমি এই বাড়িতে থাকবো না এটায় মূল কথা। একবার শুধু কোথাও চান্স পায়, দরকার হলে টিউশন পড়িয়ে আমি পড়াশোনা করবো, তারপর চাকরি করে, আম্মু আব্বুকে আমার কাছে নিয়ে যাবো। আব্বু না গেলে শুধু আম্মুকেই নিয়ে যাব। তবুও আমি এই বাড়িতে থাকবো না৷ যে যার মতো শুধু নিজেদের মর্জি আমার উপর চাপিয়ে দেয়। এতবছর সহ্য করেছি, এখন জীবনে আরেক হি*টলারের আবি*র্ভাব হয়েছে। আমার জীবনটা ত*ছনছ করে দিচ্ছে। ওনি যা বলবেন, তাই মানতে হবে, যেভাবে বলবেন সেভাবেই চলতে হবে। কেনো? আমি ওনার কথা মেনে চলবো না। তুই আবেদন না করে দিলে বলিস আমি নিজে নিজেই করবো। বাই। ”

একদমে কথাগুলো বলে ফোন কেটে বিছানার পাশে ফোন ফেলে আবারও বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে। বন্যা আহাম্মকের মতো বসে রইলো৷ কি এমন হয়েছে যে মেঘ সব ছেড়ে ছুঁড়ে চলে যেতে চাইতেছে কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না।

আবির মেঘের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে মেঘের বলা প্রত্যেকটা কথা শুনেছে। আবির দাঁত পি*ষে, ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মেঘের দিকে। আবিরের এক হাতে কাচ্চির প্যাকেট অন্য হাতে চোখ থেকে খুলা সানগ্লাসটা মুষ্টিবদ্ধ করে চেপে ধরে আছে। সানগ্লাস ভেঙ্গে শুধু হাত কাটার অপেক্ষা।

সকালে মেঘকে ঝেড়ে অফিসে যাওয়ার পর থেকেই আবিরের মন ছটফট করছিলো। কোনোভাবেই কাজে মন দিতে পারছিলো না। বাধ্য হয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে জ্যাম পেরিয়ে অষ্টাদশীর পছন্দের রেস্টুরেন্ট থেকে কাচ্চি নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিয়েছিল। মেঘ স্পেশাল কিছু রেস্টুরেন্ট ব্যতিত অন্য কোথাও থেকে কাচ্চি খায় না। গত সপ্তাহে আবিরের কাজের ব্যস্ততার ফলে সেই রেস্টুরেন্ট থেকে কাচ্চি নিয়ে খাওয়ানোর সময় সুযোগ হয়ে উঠে নি। তাই আজ সব কাজ ফেলে বেড়িয়েছিল। কিন্তু যাকে সে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে সেই অষ্টাদশী তাকে ছেড়ে চিরতরে দূরে চলে যাওয়ার প্ল্যান করছে এটা শুনে যেনো আবিরের মাথায় আকাশ ভেঙে পরেছে, হৃদয় কেঁপে উঠেছে।


নিজের অজান্তেই মনে মনে বললো, “এত ঘৃ*ণা করিস আমায়?”