বাইজি কন্যা | পর্ব – ৮

14 Min Read
বাইজি কন্যা

সূর্যোদয় ঘটা মাত্রই জমিদার বাড়ির ভৃত্যগণরা (চাকর) নিজেদের দায়িত্ব পালনে তৎপর হয়ে ওঠেছে। রোমানা ফজরের নামাজ পড়ে হাঁটতে হাঁটতে বাগানের দিকে চলে এসেছে। নানা প্রজাতির ফুল ফুটেছে বাগানে। তরতাজা ফুলগুলো দেখে মনটা প্রশান্তি’তে ভরে গেলো রোমানার। এক নিমিষেই ভুলে গেলো তার সকল বিষণ্নতাগুলো’কে।সদ্য ফুটে ওঠা বিভিন্ন রঙের গোলাপফুল গুলো বারে বারে ছুঁয়ে দেখতে থাকলো। পুরো বাগান ঘুরে ঘুরে দেখছিলো সে। এক পর্যায়ে পাঁচফোড়ন গৃহের বাম পাশের শেষ কিনারায় শিউলি ফুলগাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ালো। শিউলি ফুলের গন্ধে ঘিরে আছে চারপাশ। মারাত্মক মোহনীয় এই ফুলের ঘ্রাণে যেনো অন্তর আত্মাও তাজা হয়ে ওঠে। গায়ে পরিহিত চাদরটা আরো গভীর ভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে চোখ বুজে লম্বা এক শ্বাস নিলো রোমানা। তারপর চোখ খুলতেই দেখতে পেলো কিনারার দেয়ালের নিচে দু’জোড়া হাত। টপাটপ একটি, দুটি করে শিউলি ফুল কুড়াচ্ছে। জমিদার বাড়ির পুরো দেয়ালই ভূমিতল থেকে কিছুটা উপরে। যার ফলে নিচ দিয়ে অনায়াসে হাত দিয়ে ফুল কুড়ানো যাচ্ছে। এটুকু দেখে মৃদু হেসে ফেললো রোমানা। তারপর চুপিচুপি ফুলচোর গুলো’কে ধরার জন্য মেইন গেটে দিয়ে বের হয়ে সোজা চলে গেলো বাম পাশে। শাহিনুর আর সখিনার পিছন গিয়ে বেশ গম্ভীর কন্ঠে বললো,
-‘ এই মেয়েরা তোমাদের স্পর্ধা তো কম নয়, জমিদার বাড়ির ফুলচুরি করতে আসো!’
চোখ বড়ো বড়ো করে ভয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে ওঠে দাঁড়ালো দু’জন। কিন্তু পিছন ঘুরতেই গাঢ় সোনালি রঙের সূতি শাড়ি, দু’কাধ জড়িয়ে রাখা পশমি চাদর পরিহিত রোমানা’কে দেখেই চোখজোড়া চকচক করে ওঠলো শাহিনুরের। সখিনার বাহুতে কনুই দিয়ে গুঁতা দিয়ে ফিসফিস করে বললো,
-‘ সখী ভয় পাস না এই আপা’কে আমি চিনি। ‘
রোমানার হাসিটা বেশ চওড়া হয়ে গেলো,অবাকান্বিত কন্ঠে বললো,
-‘ নুর! তুমি এখানে? আমি ভাবতেই পারিনি তোমার সাথে আবারও দেখা হবে। ‘
দু’কদম এগিয়ে এলো রোমানা। নুরের একটি হাত ধরে বললো,
-‘ তুমি মাটিতে পড়া ফুল নিচ্ছো কেন নুর? চলো আমি তোমাকে গাছ থেকেই ফুল ছিঁড়ে দেবো। ‘
আশ্চর্যান্বিত হয়ে তাকিয়ে রইলো সখিনা। জমিদার বাড়ির কোন মানুষ তাদের এতো সমাদর করে কথা বলছে! ভাবতেই গা ঠান্ডা হয়ে আসছে তার৷ এদিকে শাহিনুর তো খুশিতে আটখানা হয়ে নিজের শাড়ির আঁচলে টোপলা বাঁধা ফুলগুলোর দিকে তাকালো। বললো,
-‘ আমিতো আজ অনেক ফুল নিয়েছি বকুল ফুল, জবা ফুল,শিউলি ফুল আজ আর লাগবে না। ‘
রোমানা কিছুটা মন খারাপ করে বললো,
-‘ আর একটা ফুল নাও না নুর, তুমি তো গোলাপ ফুলই নাও নি। চলো আমার সাথে আমি অনেক ফুল দেবো তোমাকে চলো না… ‘
-‘ কেউ বকবে না তো? ‘
-‘ না নুর কেউ বকবে না তুমি চলো আমার সঙ্গে। ‘
নুর এবার তার ডাগর ডাগর দৃষ্টিজোড়া দিয়ে সখিনার দিকে তাকালো। বেশ চিন্তিত ভঙ্গিতে অধরে কিঞ্চিৎ কামড়ে ধরে বললো,
-‘ তুই আম্মাকে বলবিনা তো? ‘
সখিনা বামদিক,ডানদিক মাথা ঘুড়িয়ে না বোঝালো। শাহিনুর ওষ্ঠাধর প্রসারিত করে হাসলো। রোমানার দিকে তাকিয়ে বললো,
-‘ ভালো আপা তুমিও কিন্তু আম্মাকে কিছু বলবে না।’
-‘ আমি তোমার আম্মাকে চিনিই না। ‘
দু’হাত উঁচিয়ে কথাটা বলতেই শাহিনুরের ওষ্ঠকোণে দুষ্টু হাসির দেখা মিললো। বললো,
-‘ তাহলে চলো আপা যাই। ‘
শাহিনুর আর সখিনাকে পুরো বাগান ঘুরে ঘুরে দেখাতে শুরু করলো রোমানা৷ শাহিনুর মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখতে শুরু করলো। কখনো কখনো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে থাকলো একেকটা ফুলকে। যেনো সে ফুল ছুঁয়ে সার্থক আর ফুলগুলো তার ছোঁয়া পেয়ে সার্থক। সখিনা ভয় পাচ্ছে, প্রচুর ভয় পাচ্ছে। তাই বাগানের কোন সৌন্দর্যই সে উপভোগ করতে পারছে না৷ আর রোমানা অবাক চোখে শাহিনুর’কে দেখছে,আর ভাবছে,
-‘মেয়েটা এতো সুন্দর কেন? এতো ভালো কেন লাগে ওকে আমার? এমন স্নিগ্ধ মুখশ্রী এই তল্লাটে আর একটিও নেই বোধহয়। ‘

শাহিনুরের ঢেউ খেলানো কৃষ্ণবর্ণ চুলগুলোর দিকে ক্ষণকাল তাকিয়ে ভাবলো, তার চুল যদি ঢেউ খেলানো হতো তাকেও কি এমন সুন্দর লাগতো? পরোক্ষণেই ভাবলো এমন লাগবে কি করে? সে তো এই মেয়েটার মতোন অমায়িক ভাবে হাসতে পারেনা। তার তো অমন হরিণীর মতো চোখ নেই। ইশ চোখজোড়া যেনো কারো নিজ হাতে এঁকে দেওয়া…
-‘এতো সুন্দর কেন নুর? আমি মেয়ে হয়েও ওর রূপে বিমোহিত হয়ে যাচ্ছি। ইচ্ছে করছে দীর্ঘসময় চেয়ে থাকতে, মেয়েটার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে। ‘
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই নিজ হাতে একটি লাল গোলাপ ছিঁড়ে শাহিনুরের হাতে দিলো রোমানা। বললো,
-‘ এই গোলাপটার চেয়েও তুমি বেশী স্নিগ্ধ নুর। ‘
আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে রইলো নুর। ভেঙে ভেঙে বললো,
-‘ স্নিগ্ধ মানে কি আপা? ‘
হেসে ফেললো রোমানা শাহিনুরের কাঁধ চেপে ধরে বাগানের এক পাশের দোলনাতে গিয়ে দু’জন বসলো। সখিনা বসলো পাশের দোলনাতে। তারপর রোমানা বললো,
-‘ স্নিগ্ধ মানে পবিত্র তুমি খুব পবিত্র নুর। তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে, বড্ড লোভ হয় তোমাকে আমার। ‘
কিছুই বুঝলো না শাহিনুর কিছুক্ষণ রোমানার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
-‘ আপা গোলাপ’কে ফুলের রাণী বলা হয় তাইনা…আমি জানি। ‘
সম্মতি প্রকাশ করে রোমানা বললো,
-‘ তুমি ফুল খুব ভালোবাসো? ‘
-‘ আমার তো সবই ভালো লাগে। ‘
মাথা হেলিয়ে কথাটা বলতেই সখিনা বললো,
-‘ নুর আয় যাই গা। ‘
রোমানা বললো,
-‘ আরেকটু বসো না তোমরা, আমার তোমাদের সঙ্গে আলাপ করতে ভালোই লাগছে। এতো বড়ো বাড়িতে একটু আলাপ করার মানুষের খুব অভাব। ‘
শাহিনুর বললো,
-‘ কেন এই বাড়িতে কেউ গল্প করে না বুঝি? ‘
-‘ সে গল্প না হয় আরেকদিন দেখা হলে করবো। আজ তোমার কথা শুনি, তোমরা হঠাৎ এখানে এলে কেন ভয় করলো না? যদি দাঁড়োয়ান চাচা দেখতো খুব বকতো জানোনা? ‘
-‘ ফুল কুড়ানোর শখ ছিলো কিন্তু আম্মাতো বের হতে দেয় না৷ তাই চুরি করে বেরিয়ে চুরি করেই ফুল কুড়াচ্ছি৷ ‘
কিছুটা মন খারাপ করে আবার বললো,
-‘ আম্মা যখন আমাকে ছড়া পড়াতো তখন থেকেই আমার খুব ফুল কুড়ানোর ইচ্ছে হয়েছিলো। কতো আনন্দ হয় ফুল কুড়ালে, আম্মা আমাকে এমন আনন্দ পেতেই দেয় না। ‘
শাহিনুরের মন খারাপ দেখে রোমানা বললো,
-‘ আরে আরে মন খারাপ করছো কেন মা’য়েরা এমন শাসন করেই। আচ্ছা নুর কোন ছড়া পড়ে তোমার ফুল কুড়ানোর ইচ্ছে হলো শুনি আমিও তাহলে সেই ছড়া পড়ে তোমার মতোন সক্কাল সক্কাল ফুল কুড়াতে চলে আসবো। ‘
কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলো শাহিনুর। তারপর বললো,
– ‘ আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা,
ফুল তুলিতে যাই
ফুলের মালা গলায় দিয়ে
মামার বাড়ি যাই।
মামার বাড়ি পদ্মপুকুর
গলায় গলায় জল,
এপার হতে ওপার গিয়ে
নাচে ঢেউয়ের দল।
দিনে সেথায় ঘুমিয়ে থাকে
লাল শালুকের ফুল,
রাতের বেলা চাঁদের সনে
হেসে না পায় কূল।’
এটুকু ছড়া আবৃত্তি করেই খিলখিলিয়ে হাসলো শাহিনুর। হাসলো সখিনা আর রোমানাও। শাহিনুর বললো,
-‘ এক ঝাঁক ছেলে মেয়ে হলে বেশ মজা হতো তাইনা সখী, তাইনা আপা? ‘
রোমানা বললো,
-‘ সত্যি তোমার কথা শুনে ছোটবেলায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে। আচ্ছা নুর তুমি কি স্কুলে যাও? ‘
মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো শাহিনুর। রোমানা বললো,
-‘ তাহলে তুমি এসব তোমার আম্মার কাছেই পড়ো? ‘
-‘ হ্যাঁ। আম্মা বলেছে মা’ই প্রধান শিক্ষক। আমার আর কোন শিক্ষকের প্রয়োজন নেই। ‘
কথোপকথনের এ’পর্যায়ে অলিওর চৌধুরী’র দ্বিতীয় স্ত্রী প্রেরণা ফুলের ডালা হাতে ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। ভ্রুদ্বয় কুঁচকে বললো,
-‘ রোমানা তুই এখানে? ওরা কে? ‘
-‘ ও শাহিনুর আর ও সখিনা। নুর’কে খুব সুন্দর দেখতে তাইনা খালামুনি? ‘
এবারে প্রেরণা শাহিনুরের দিকে বিচক্ষণ দৃষ্টিতে তাকালো। পাতলা গড়নের শুভ্রবর্ণীয় দেহে হলুদ রঙের লাল পাড়ের সূতি শাড়ি পরিহিত শাহিনুর। অর্ধেক আঁচল কোমড়ে বাঁধা বাকি আঁচলে ফুল সংরক্ষিত করা। প্রেরণা বেশ ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-‘মাশাআল্লাহ বাড়ি কোথায় তোমার? ‘
-‘ এখানেই ঐ যে বাইজি গৃহে। ‘
বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো প্রেরণা। এক চিৎকার দিয়ে ডাকলো দ্বাররক্ষী চন্দন দাস’কে। চন্দন এসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো৷ রোমানা অবাক হয়ে প্রেরণার কাঁধ চেপে ধরলো। বললো,
-‘ খালামুনি চন্দন চাচার কোন দোষ নেই ওদের আমি নিয়ে এসেছি। ‘
-‘ তুই! তুই! আমাকে ছুঁবিনা, ছুঁবিনা আমাকে তুই। সর, সর,যা এখনি বাড়ি গিয়ে গোসল সারবি। নয়তো আজ আমি তোকে মারবো রোমানা! ‘
খালামুনির অকস্মাৎ আচরণগুলোতে বড্ড আহত হলো রোমানা। বললো,
-‘ এমন করছো কেন খালামুনি ওরা খুব ভালো। ‘
এবারে আরো চেঁচামেচি শুরু করলো প্রেরণা। গৃহের ভিতর থেকে ত্বরিতগতি’তে বেড়িয়ে এলো শবনম। তার সাথে দু’জন কাজের মহিলাও এলো। শাহিনুর আর সখিনা প্রচন্ড ভীতিগ্রস্ত হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। প্রেরণা এবার কেঁদেই ফেললো। শবনম’কে দেখামাত্রই বললো,
-‘ সর্বনাশ হয়ে গেছে বউ ঐ কলঙ্কিনীদের পা এ বাড়ি’তেও পড়ে গেছে। আমার সোনার সংসারে এই কলঙ্কের ছাঁয়া এখন আমি কীভাবে দূর করবো! ‘
দৃষ্টিজোড়া বড়ো করে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে শাহিনুর আর সখিনার দিকে তাকালে শবনম। রোমানা’কে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো,
-‘ কি হয়েছে? ‘
রোমানা কম্পিত কন্ঠে বললো,
-‘ বড়ো ভাবি ওদের কোন দোষ নেই আমিই ওদের নিয়ে এসেছি। ‘
-‘ কিন্তু ওরা কারা রোমানা? ‘
-‘ ও শাহিনুর আর ও সখিনা। ‘
শবনম সখিনার দিকে তাকিয়ে বললো,
-‘ তোমাদের বাড়ি কোথায়? ‘
সখিনা কাঁপা গলায় বললো,
-‘ আমার বাড়ি পশ্চিমপাড়া আর ও বাইজি গৃহে থাকে। বাইজি গৃহের কাজের মানুষ আমার আম্মা। ‘
সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠলো শবনমের। ভয়ংকর ক্রোধ দেখিয়ে বললো,
-‘ ওদের ভেতরে নিয়ে এসে একদম ঠিক করোনি রোমানা। কোন নোংরা মেয়ে মানুষের পা এ বাড়ি পড়ুক এটা আমরা কেউ চাইনা। চাইনা বলেই আমাদের গৃহে এদের স্থান দেইনি। ‘
দু’চোখ বেয়ে অঝড়ে অশ্রু গড়াতে শুরু করলো শাহিনুরের। এবার সে হারে হারে টের পাচ্ছে তার আম্মা কেন তাকে নিষেধ করতো। কেন তার আম্মা এ বাড়ির মানুষ জন থেকে আড়ালে থাকে, তাকে আড়ালে রাখে। কিন্তু জমিদার, জমিদারের ছেলেরা তো ঠিক তাদের গৃহে যায় তখন তো কিছু হয় না!
প্রেরণা অসম্ভব পরিমাণে রাগান্বিত হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। সকল’কে ভিতরে যাওয়ার আদেশ দিয়ে চন্দনকে বললো,
-‘ চন্দন এদের’কে এদের জায়গায় পৌঁছে দিয়ে আয়। আর বুঝিয়ে দিয়ে আয় পরবর্তী’তে যেনো এই ভুল না হয়। ‘
রোমানা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
-‘ খালামুনি ওদের কোন দোষ নেই ওদের কিছু বলো না। ‘
প্রেরণা বললো,
-‘ বড়ো বউ ওকে ভিতরে নিয়ে যাও আর জলদি গোসল সেরে নিতে বলো। নোংরা মেয়েটার সঙ্গে বসে ছিলো ছিঃ!’
চোখ, মুখ রক্তিম হয়ে গেলো শাহিনুরের নত হওয়া মাথাটা হঠাৎই উঁচিয়ে প্রেরণার দিকে কোমল দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। বললো,
-‘ আমি নোংরা না, দেখো আমার শরীরে একটুও ময়লা নেই। আমি কোন নোংরা কাজও করিনি। আমি খুব ভালো মেয়ে বিশ্বাস করো। ‘
-‘ এ্যাহ ভালো মেয়ে তুই কি করে ভালো হলিরে থাকিস তো বাইজি গৃহে ভালো হলি কি করে শুনছি এক বাইজির মেয়ে তুই না না কিসের বাইজি এক পতিতার মেয়ে তুই। ‘
পতিতা শব্দের অর্থ বুঝলোনা শাহিনুর কিন্তু বাকিটুকু ঠিক বুঝলো তাই এক কদম এগিয়ে এসে বললো,
-‘ বাইজি গৃহে যারা থাকে তারা ভালো নয়? ‘
-‘ না তোরা নোংরা, পাপিষ্ঠ তোদের মতো পাপিষ্ঠদের পা এই গৃহে পড়া মানে এই গৃহটিও অপবিত্র হয়ে যাওয়া। ‘
-‘ তাহলে এ বাড়ির জমিদার, জমিদারের ছেলেরা যে বাইজি গৃহে যায়? ওরা তো আমাদের নোংরা বলে না। তুমি মিথ্যা বলছো আমরা নোংরা না, আমার আম্মা নোংরা না, আমার মান্নাত বুবু নোংরা না। নোংরা হলে জমিদার সাহেব কোনদিন সেখানে যেতো না। ‘
বিস্মিত হয়ে শাহিনুরের দিকে তাকিয়ে রইলো সকলেই। আজ তাদের কোন দিন এলো যে এক বাইজি কন্যা জমিদার গিন্নি’কে প্রশ্ন করে! প্রেরণা কিছুটা দমে গেলো এবার। ক্ষীণ স্বরে চন্দন’কে বললো,
-‘ এই মেয়ে’কে আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যা চন্দন। ‘
চন্দন ধমকে ওঠলো শাহিনুর’কে। কেঁপে ওঠলো শাহিনুর। চন্দন বেশ শক্ত হাতে তার ছোট্ট নরম হাতটা চেপে ধরলো। ব্যথায় কুঁকড়ে গেলো শাহিনুর। দু’হাতে চন্দনের থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করলো। আঁচলে টোপলা বাঁধা খুলে গিয়ে সব ফুল ঝরঝর করে নিচে পড়ে গেলো। চন্দন শাহিনুর’কে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো বাইজি গৃহের পথে। শাহিনুর পিছু তাকিয়ে প্রেরণা’কে চিৎকার করে বলতে লাগলো,
-‘ ও জমিদার গিন্নি তুমি খুব মিথ্যা বলো, তুমি খুব মিথ্যাবাদী। বাইজি গৃহ নোংরা হলে তোমার স্বামী,তোমার ছেলেদের যেতে দাও কেন? তারা বাইজি গৃহে গেলে তো তাদের অপবিত্র বলো না, আমি একদিন ফুল কুড়াতে এসেছি বলে আমাকে নোংরা, অপবিত্র বললে? আমি কিন্তু খুব কষ্ট পেয়েছি। আমি নোংরা না বিশ্বাস করো!’

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।