রহস্য

জান্নাতুল নাঈমা

ডিসেম্বরের সূচনা৷ হিমশীতল পরিবেশ। ধরণিতলে সূর্যরশ্মি পড়েনি আজ৷ মনকেমন করা একটা সকাল। অলস দুপুর আর ম্রিয়মাণ বিকেল। রাতটা পিপাসিত। পিপাসিতা রমণীটি বসে আছে আয়নার সামনে। নিজের রূপ, ঐশ্বর্য দৃষ্টিপাত করে ভেঙচি কাটছে বারংবার। কারণ খুবই হৃদয়স্পর্শী। সুন্দরী তরুণিমার তরুণকুমার ধরাছোঁয়ার বাইরে। চঞ্চলা মন, উষ্ণ, নরম দেহ হাপিত্যেশ করে।

জান্নাতুল নাঈমা

মুখোমুখি সৌধ, নামী৷ বদ্ধ রুমে তারা দু’জন ব্যতীত আর কেউ নেই। নামীর মুখশ্রীতে নোনাপানি শুকিয়ে চামড়া টানটান হয়ে আছে৷ সুক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে সৌধ বুঝে ফেলল মেয়েটা কেঁদেছে। নামীর মতো মেয়েরা গোপনেই কাঁদে। লোক সম্মুখে কেঁদে, নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করার মতো মেয়ে নামীরা হয় না।

জান্নাতুল নাঈমা

” বাহির বলে দূরে থাকুক, ভিতর বলে আসুক না। ভিতর বলে দূরে থাকুক , বাহিরে বলে আসুক না। ঢেউ জানা এক নদীর কাছে, গভীর কিছু শেখার আছে। সেই নদীতে নৌকো ভাসাই, ভাসাই করে ভাসাই না। না ডুবাই না ভাসাই, না ভাসাই না ডুবাই জল ডাকে, আগুনও টানে আমি পড়ি মধ্যিখানে।

জান্নাতুল নাঈমা

উত্তরে হাওয়া নিয়ে আসছে শীতকাল৷ প্রকৃতি জুড়ে হিমহিম ঠান্ডা গায়ে শিহরণ জাগিয়ে তোলে। সেই শিহরণ আজ দ্বিগুণ হলো, প্রণয় পুরুষটির প্রগাঢ় আর উষ্ণ আলিঙ্গনে। যে আলিঙ্গনে অন্তঃকরণ শত সহস্রবার প্রার্থনা করে, সময়টা থেমে যাক। এই নিরাপদ বুকটায় কেটে যাক যুগের পর যুগ। শেষতক এই বুকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বিদায় নিক পৃথিবী ছেড়ে।

জান্নাতুল নাঈমা

কেউ নতুন প্রণয়ানুভূতিতে সিক্ত৷ কেউ বিরহে নিবৃত্ত। সব ভুল চুকিয়ে কেউ ব্যস্ত সঠিক পথে চলতে। আবার কেউ পেশাগত ও সাংসারিক জটিলতার সমাধান খুঁজতে ব্যস্ত৷ এমনই ভাবে কেটে গেল কয়েকটি মাস। আইয়াজ, ফারাহর জীবনে বহুমুখী সমস্যা এসেছে। আবার একটু সময় লাগলেও সক্ষম হয়েছে সমস্যা গুলোর সমাধান দিতে।

জান্নাতুল নাঈমা

একটি একটি করে দিন গড়াচ্ছে। পূর্বের চেয়েও অধিক অস্থির হয়ে ওঠছে সুহাস। প্রতিনিয়ত তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে নামীর সাথে কাটানো এক একটা মুহুর্ত। রাত গভীর হলে যখনি দু’চোখের পাতা এক হয় দুঃস্বপ্নেরা ছিন্নভিন্ন করে দেয় হৃদয়। নির্ঘুম বা দুঃস্বপ্ন দু’টোর একটিকে নিয়েই প্রতিটি রাত পার করছে সে। যেন এক রাতজাগা পাখি৷

জান্নাতুল নাঈমা

আরো একটি নির্ঘুম রাত৷ এ কী বীভৎসতা? এ কোন দহনে পুড়াচ্ছে নামীদামি? সুহাস কী সইতে পারে তার সুহাসিনীর পাষণ্ডতা? পারে না তো… তাই তো তীব্র যন্ত্রণা বুকে পুষে দু’রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিল। গোটা একটা রাত কেটে গেল প্রিয়জন হারানোর শোকে।

জান্নাতুল নাঈমা

পরিস্থিতি গুমোট। রক্তচক্ষুতে তাকিয়ে সৌধ৷ ওর দৃঢ় চোয়াল আরো বেশি দৃঢ় হলো। পেশিবহুল দু’টো হাত চনমনে। যা তীব্র কষ্টে মুঠোবন্দি করল৷ ফুলে ফেঁপে ওঠল হাতের প্রতিটি নিল রগ৷ ঝুমায়নার দেহশ্রী কেঁপে ওঠল এ দৃশ্য দেখে। তীব্র ভয়ে সংকীর্ণ হয়ে গেল মুখশ্রী। অনুভব করল কণ্ঠনালী নীরস হয়ে আসছে। সৌধ সম্পর্কে কম ধারণা নেই ঝুমায়নার।

জান্নাতুল নাঈমা

বৃষ্টি থেমেছে। জানালার থাই গ্লাসে বৃষ্টিফোঁটাদের চিহ্ন রয়ে গেছে। সেদিকে নির্নিমেষে তাকিয়ে অজস্র চিন্তায় নিমজ্জিত সিমরান। এ পৃথিবীতে আগত সবকিছুই বিদায়বেলা চিহ্ন রেখে যায়। পৃথিবীতে বৃষ্টি নেমেছিল। সে বৃষ্টি থেমেও গেছে। রেখে গেছে জানালার থাই গ্লাসে চিহ্ন। ঠিক তেমনি নামী এসেছিল সুহাসের জীবনে। চলেও গেছে। চিহ্ন হিসেবে রেখে গেছে এক গুচ্ছ ভালোবাসাময় স্মৃতি।

জান্নাতুল নাঈমা

ভোর রাত থেকে ঝুম বৃষ্টি। আজ সারাটা দিন বৃষ্টির জলে ভেজা৷ এই বৃষ্টিস্নাত পরিবেশেই সম্পন্ন হলো সৌধ, সিনুর বউভাতের আনুষ্ঠান৷ অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শেষে সিমরানকে তার ঘরে নিয়ে আসা হয়েছে। ভারি পোশাক ছেড়ে হালকা পোশাকে তৈরি হতে বলেছে সবাই৷ সৌধ আত্মীয়, স্বজন বন্ধু, বান্ধবীদের সঙ্গে গল্পে ব্যস্ত।

জান্নাতুল নাঈমা

‘ বর এসেছে, বর এসেছে। ‘ চারিদিকে এহেন বাক্যে উচ্চরোল ভেসে এলো। ধক করে ওঠল তীব্র কষ্টে জর্জরিত কনের বুকখানি। তাকে ঘিরে রয়েছে সকলে। প্রাচী, ফারাহ আর কাজিনরা গেছে বরের গেট ধরতে৷ এমপি পুত্র, তার ওপর পেশায় একজন ডক্টর। কনে পক্ষের দাবি দেড় লাখ টাকা। তর্কবিতর্ক শেষে ছাড় দিতে পারে৷

জান্নাতুল নাঈমা

অন্ধকার আছে বলেই আলোর মর্ম বোঝা যায়৷ প্রকৃতির নিয়মেই রাত্রির আগমন ঘটে। তাই বলে কি মানবকূল বিচলিত হয়? নাহ, তারা অপেক্ষা করে প্রভাতের। তারা জানে সন্ধ্যায় যে সূর্য অস্ত যায়। সময়ের চাকা ঘুরে সে সূর্য উদিতও হবে। মানুষের জীবনে সুসময়, দুঃসময়, প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি ঠিক সূর্যাস্ত আর সর্যদয়ের মতোন। আজ দুঃখ পেয়েছ?