নারী

জান্নাতুল নাঈমা

ঘড়ির কাটা সকাল সাতটা পনেরো ছুঁয়েছে৷ এরই মধ্যে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া এসে পৌঁছাল সৌধরা। সৌধ ড্রাইভ করার ফাঁকে ফ্রন্ট মিররে দেখে নিল, বান্ধবী প্রাচী ঘুমাচ্ছে। পাশে বসে বই পড়ছে চৌকশ স্টুডেন্ট আইয়াজ। সৌধর মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেল। আইয়াজের উদ্দেশ্যে বিড়বিড়িয়ে বলল, ‘ এই শালা মনে হয় টয়লেটে বসে বসেও পড়ে!‘

জান্নাতুল নাঈমা

বন্ধুদ্বয়ের সাথে কথোপকথনের সমাপ্তি ঘটেছে অনেকক্ষণ। নামীদের বাড়ির দোতলার বারান্দায় চনমনে চিত্তে বসে আছে সুহাস। ফোনের স্ক্রিনে মায়ের নাম্বার জ্বলজ্বল করছে। সে অশান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে। দু’বার কল করল মাকে। দু’বারই ফোন বন্ধ শোনাল। এরপর কিয়ৎকাল ভেবে কল করল ছোটো বোন সিমরানকে। তার ফোনও বন্ধ বলছে।

জান্নাতুল নাঈমা

প্রচণ্ড সুশীল প্রকৃতির মেয়ে নামী। আর পাঁচটা মেয়ে রূপ, সৌন্দর্যের দিক দিয়ে তাকে পেছনে ফেলতে পারলেও গুণের দিকে পারবে না। এই মেয়েটি দারুণ মেধাবিনী। শুধু পুঁথিগত বিদ্যাতেই সে সীমাবদ্ধ নেই। বিজ্ঞানের ছাত্রী হলেও সাহিত্যের প্রতি রয়েছে নিবিড় ঝোঁক। পড়াশোনার ফাঁকে ঠিক সমরেশ, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, শরৎচন্দ্র ইত্যাদি বহু লেখকের বই পড়ে নেয়।

ইলমা বেহরোজ

আমির জবাব না দিয়ে হাতে থাকা সুন্দর কাচের হারিকেনটি পাশে রাখল। তারপরই পদ্মজা কিছু বুঝে উঠার আগে পদ্মজাকে কোলে তুলে নিল। পদ্মজা আমতাআমতা করে শুধু বলতে পারল,’এ…এ…ই কি…কি?’

ইলমা বেহরোজ

আজিদের বাড়ির সামনে পুকুর আছে। সেখানে নতুন ঘাট বাঁধানো হয়েছে। ঘাটে গোসল করছে আজিদের বউ আসমানি। মাসেক ছয় আগেই বিয়ে হলো। আসমানির সাথে পূর্ণার অনেকবার কথা হয়েছে। পূর্ণা আসমানিকে দেখেনি। আসমানি পূর্ণাকে দেখে ডাকল,’কি গো পূর্ণা! ফেইরাও চাইলা না। ভাবিরে চোক্ষে পড়ে নাই?’

ইলমা বেহরোজ

রাতের আঁধার কেটে ভোরের আলোর মাধ্যমে শুরু হয়েছে আরেকটি নতুন দিন। পূর্ণা ও মগা মেঠোপথ ধরে হাওলাদার বাড়ি যাচ্ছে। মাথার উপর আকাশ আলো করা তেজবিহীন সূর্য। পূর্ণার পায়ের গতি চঞ্চল। সে অস্থির হয়ে আছে।

ইলমা বেহরোজ

পদ্মজা মিলিয়ে ফেলে উত্তর। এমনটাই হয়েছে। ঘরের গোপন খবরই দিতে চেয়েছিলেন ফরিনা। কিন্তু ঘরের মানুষ দেখে আর দিতে পারলেন না। আচ্ছা, তিনি এমন হাউমাউ করে কেন কাঁদলেন? পদ্মজার কপালের চামড়া কুঁচকে যায়।

ইলমা বেহরোজ

মৃদুল তার গোলাপি ঠোঁট দাঁত দিয়ে চেপে ধরে হেসে মাথা চুলকাল। কী অপূর্ব দেখাচ্ছে গ্রামের চঞ্চল শ্যামবর্ণের মেয়েটিকে। হাওয়ার তালে মেঠো পথ ধরে ছুটে যাচ্ছে বাড়ির দিকে। চুল আর ওড়না দুটোই হাওয়ার ছন্দে সুর তুলে যেন উড়ছে।

ইলমা বেহরোজ

অন্ধকার নেমে এসেছে। সন্ধ্যা তার ঝাঁপি থেকে অন্ধকার নিয়ে এসে ঝপ করে রাত নামিয়ে দিল। বিদ্যুৎও চলে গেল। পদ্মজা হারিকেন জ্বালিয়ে প্রেমার ঘরে এলো।

ইলমা বেহরোজ

থেকে থেকে দূরে হুতুম প্যাঁচা ডাকছে। যা ভুতুড়ে শোনাচ্ছে। গা কাঁপুনি ঠান্ডা। সময়টা যেন থমকে দাঁড়িয়ে চড়ছে দণ্ড শূলে। পদ্মজা ছুটে আসে পূর্ণার কাছে। পূর্ণা উবু হয়ে শুয়ে পড়েছে।

ইলমা বেহরোজ

লিখন পদ্মজার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। তার অশ্রুসজল চাহনি। তবে বুকে প্রশান্তি। জীবনের খরতাপ দহনে মায়াময় পদ্মজার কণ্ঠ,একটু দেওয়া সময় তার বুকে প্রশান্তির ঢেউ তুলেছে।

ইলমা বেহরোজ

আমি পদ্মজা – ৫২ __________ ফরিনা তাড়াহুড়ো করে খোশমেজাজে রান্না করছেন। সাহায্য করার মতো পাশে কেউ নেই। একাই দৌড়ে দৌড়ে সব করছেন। হাওলাদার বাড়িতে অতিথি এসে একদিন না থেকে যেতে পারে না। এতে নাকি গৃহস্থ বাড়ির অমঙ্গল হয়। তাই মজিদ লিখনকে থেকে যেতে জোর করেছেন। পদ্মজা নিজের ঘরে স্বামী সেবায় ব্যস্ত। আমিরের ঘাড়ের চামড়া ফুলে […]