এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ১৮

12 Min Read

ওয়াল ঘেষে দাঁড়িয়ে আছি আমি আমার হাত শক্ত ভাবে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন বিহান। উনার মুখশ্রির অদলে বেশ পরিবর্তন সেই রাগি ভাবটা আর নেই।আমি উনার থেকে নিজেকে ছড়ানোর চেষ্টা করছি।নিঃসন্দেহে বিহান ভাই একজন শক্ত পক্ত শক্তিশালী মানুষ উনার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা যে বৃথা চেষ্টা তাতে কোনো সন্দেহ নেই।রাগে ফুঁশ ফুঁশ করছি আমি।আমার দিকে খানিক টা ঝুঁকে রয়েছেন উনি।
“আমি রাগি রাগি ভাবে বলেই যাচ্ছি ছাড়ুন বলছি ছাড়ুন আগে আমাকে।অসভ্য কোথাকার একটা মেয়েকে এভাবে চেপে ধরে রেখেছেন কেনো?”
“ছাড়ার জন্য তো ধরি নি।আর জীবনেও ছাড়বো ও নো বুঝলি পিচ্চি।”
“কেনো ধরবেন আমাকে আপনি?আমি কি আপনার বউ না প্রেমিকা।”
“আচ্ছা আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাইনা?আজ যা খুশী বলতে পারিস আমি রাগ করবো না।”
“রাগ করলে আমার কি যায় আসে।আপনি আম্মুকে আলিপ ভাইয়া কে নিয়ে মিথ্যা বলেছেন কেনো? যে আলিপ ভাইয়া আমাকে লাইক করে।”
“যা বলার ঠিক ই বলেছি।আমার জাস্ট আলিপ কে সহ্য হয় না।ভাবতেই শরীর আগুন হয়ে যাচ্ছিলো যে তুই ওর দেওয়া কিছু ইউজ করছিস।আমি যদি আলিপ কে আর কখনো তোর ত্রী সীমানায় দেখি তাহলে এর চেয়ে খারাপ কিছু করবো বলে দিলাম।কি সাহস আমার জিনিসে নজর দেয়।”
“সব কিছু কি আপনার ইচ্ছামতো হবে নাকি।যখন ইচ্ছা বকবেন আবার যখন ইচ্ছা মিষ্টি কথা বলবেন।”
“হ্যাঁ সব আমার ইচ্ছাতেই হবে।”
“দেখুন বিহান ভাই আমি আপনার বউ ও না গফ ও না তাই দয়াকরে আমাকে টর্চার করা অফ করুণ।আপনাকে সাতশ টাকা ফেরত দিলাম তার পরিবর্তে এক হাজার টাকা দিয়েছেন কেনো?”
!আবার ফেরত দিলে আবার ও ডাবল দিবো।
কারন তুই আমাকে ভাই ভাবলেও আমি কখনো তোকে বোনের নজরে দেখি না।এটা বুঝিস না তুই।”
এমন সময় আয়রা টা এসে আমাদের এভাবে দেখে নিয়ে মুখে হাত দিয়ে মুখ চেপে হেসে বললো,কি মজা বিহান ভাইয়া আর দিয়াপু প্রেম করছে।
কথা টা শুনেই বিহান ভাই কয়েক হাত ছিটকে গিয়ে পড়লো।আমি চোখ বড় বড় করে আয়রার দিকে তাকিয়ে বললাম কিরে আয়রা খুব পেকেছিস তাইনা প্রেম মানে কি হ্যাঁ।এই বয়সে তুই প্রেম কি সেটাও বুঝিস।আয়রা টা হেসে দিয়ে বললো হ্যাঁ আব্বু আম্মুকে দেখেছিলাম৷ এভাবে জড়িয়ে ধরে প্রেম করে।আমি চোখ আরো বড় বড় করে বললাম তা উনি৷ কি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন নাকি মিথ্যা বললে থাপ্পড় দিবো ধরে।আয়রা টা বললো ওরকম ই মনে হলো।বিহান ভাই খানিক টা দূরে ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে রইলেন।ইস রে বিহান ভাই এর মান ইজ্জত সব এবার ই শেষ।এই আয়রা টা জনে জনে সবাই কে বলে বেড়াবে।
বিহান ভাই কে বললাম,ভদ্রলোকের মতো আমার উপন্যাস টা দিন।আমি এখন যাবো।
বিহান ভাই কপাল কুচকে তাকিয়ে বলেন,কিসের উপন্যাস।আর এসব উপন্যাস পড়ে পড়ে তো দেবদাসি হয়ে যাচ্ছিস। এই উপন্যাসে দেখলাম দিয়া নামের মেয়েটি মারা গিয়েছে।তা এসব ট্রাজেডি উপন্যাস পড়েই তো তোর এই অবস্থা। তোর থেকে আয়রার বুদ্ধি আছে ভালো। আয়রা ও ভালো বোঝে কোনটা প্রেম আর কোনটা অন্য কিছু।
খানিক টা রাগ দেখিয়ে চলে এলাম বাড়িতে।
প্রায় এক মাস কেটে গিয়েছে। বিহান ভাই ও ঢাকায় ফিরে গিয়েছেন।আবার সব স্বাভাবিক ভাবেই চলছে।মান অভিমান কিছুটা কমেছে।
_______________________________
খুলনা যেতে হবে বাসার সবার দাওয়াত।বিভা আপুর শ্বশুর বাড়ির থেকে দাওয়াত এসছে। সেখানে বিভা আপু আর তার বর আরিফ কে নিয়ে একটা অনুষ্টান এর আয়োজন করা হয়েছে।সবাই যাবে কিন্তু আমি বলে দিয়েছি যে আমি যাবো না মানে আমি যাবোই না।কারণ বিহান ভাই আজ ঢাকা থেকে আসছেন উনিও যাবেন।আর সারাক্ষণ দুনিয়ার বাজে কথা বলবেন আমাকে।মামা বাড়ির যে কোনো অনুষ্টানেই আমার কাজিন রা নিমন্ত্রিত থাকে।মামা প্রাইভেট কার ঠিক করতে চেয়েছে কিন্তু বিভোর ভাই বলে দিয়েছেন বাসে চড়ে মজা করতে করতে যাবেন।মামাবাড়িতে ঘরোয়া মিটিং বসেছে সেখানে কিভাবে যাওয়া হবে সেই নিয়ে আলোচনা চলছে।আমার যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো না কিন্তু আম্মুর দাঁত ঝাকিতে যেতে বাধ্য হলাম।বাড়ির মুরব্বিরা সবাই বিভোর ভাই দের ফ্ল্যাটে প্লান করছে যাওয়ার সময় কি নিয়ে যাবে না যাবে সে বিষয় নিয়ে।আমরা কাজিনেরা সবাই ছাদে পাটি বিছিয়ে নিয়ে আড্ডা দিচ্ছি।ইচ্ছা করেই বিভোর ভাই দের ছাদে আড্ডা দিচ্ছি।কারণ জানি এখানে বিহান ভাই এর আসার চান্স নেই।বিভোর ভাই আড্ডা দেওয়ার সময় আমাদের কাজিনদের সবাই কে ফোন দিয়ে ডেকে আনেন।
ছাদে প্রেম নিয়ে ভীষণ গবেষণা চলছে।এমন সময় দ্যা গ্রেট বিহান ভাই গম্ভীর মুডে হাজির হলেন। গায়ে কফি কালারের টি-শার্ট পরণে ব্লাক জিন্স।জিন্সের পকেটে হাত গুজে ছাদের রেলিং ঘেষে এসে দাঁড়ালেন।এখানে যারা আছে সবাই বিহান ভাই ভক্ত শুধু আমি বাদে।মেহু আপু বিহান ভাই কে ডাকলো,”বিহান ভাই এখানে আসুন না আমাদের পাশে বসবেন”।তোহা আপু ও ডাকলো, “বিহান ভাই আসুন না প্লিজ আমার পাশে বসবেন।”বিহান ভাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে এসে আমার পাশে এসেই বসলেন।এমন সময় বিভোর ভাই তার প্রস্তাব টা রাখলেন যে আমরা বাসে করেই যাবো অনেক মজা হবে তাতে।ছেলেরা সবাই রাজি অন্য কারো কোনো আপত্তি না থাকলেও আমি ভীষণ আপত্তি জানালাম।জোরে বলে উঠলাম, আমার আপত্তি আছে আমি বাসে যেতে পারবো না।সবার সব উৎসাহে পানি ঢেলে গেলো।সবাই এক সাথে বলে উঠলো কেনো?আমি বললাম বাসে উঠলে আমার বমি পায় খুব।আমি কিছুতেই বাসে যেতে পারবো না।
কারো কোনো আপত্তি না থাকলেও বিহান ভাই তার গা জ্বলানো কথা শুরু করলো।
“মেয়ে মানুষ মানেই সমস্যা।শুধু সমস্যা বললে ভুল হবে মহা সমস্যা।মেয়ে মানুষের জন্যই পৃথিবীতে এত সমস্যা।তার উপর যদি এমন ভয়ানক মহিলা হয় তাহলে তো আর সমস্যার শেষ নেই।এই মহিলা মানে আরো বেশী সমস্যা।”
“কথাটা পড়তেই রাগের চরম পর্যায়ে পৌছে গেলাম।কি ব্যাপার সবাই কে মেয়ে বলছেন আর আমাকে মহিলা বলছেন কেনো?”
“শুধু মহিলা নয় ভয়ানক মহিলা তুই।কারো কোনো সমস্যা নেই সব সমস্যা তোর।দুনিয়ার সব সমস্যা নিয়েই জন্ম হয়েছে তোর।”
“আমি যাবোই না।”
“তুই না তোর ঘাড়ে যাবে।আর বাসে চড়েই যেতে হবে তোর।”
আলিপ ভাইয়া বলে উঠলেন,”বিহান ভাই দিয়া কে বকছেন আপনার গফ যদি বাসে চড়তে না পারে তখন কি করবেন।”
“বিহান ভাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন,,আমার গফ নিয়ে গবেষনা আর কত চালাবি তোরা”
আলিপ ভাইয়া বললেন,”আমার গফ বাসে চড়তে না পারলে তার হাত ধরে হেঁটে তেপান্তর পাড়ি দিবো।”
বিহান ভাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলএন,”সিওর আলিপ।”
“ইয়েস ভাইয়া।”
“ওকে কাল দিয়ার সাথে হেঁটে খুলনা যাবে।”
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,”জ্বী না আমি মোটেও হাঁটতে পারি না।”
বিহান ভাই বলে উঠলেন,”বাসে চড়তে পারবি না হাঁটতে পারবি না তাহলে কি প্যারাসুট এ যাবি।”
“আপনার সাথে আমি কথা বলছি না ওকে।”
বিহান ভাই আবার শুরু করলেন,”তাহলে আলিপ কাল তোমার ভালবাসার পরীক্ষা হবে।তেপান্তর নয় জাস্ট খুলনা হেঁটে যাবা।”
তিয়াস ভাই বললঅ,”ও হেঁটে যেতে যেতে আমরা বাড়ি ফিরে আসবো।”
বিহান ভাই বললেন,”আগে গিয়েই বুঝুক।মুখে বলে মেয়েদের ইমপ্রেস করাটা খুব ইজি ব্যাপার কাজে করে দেখানো মোটেও ইজি নয়।”
তিয়াস ভাইয়া বললো,”বিহান ভাই মানুষ কাউকে ভালবাসলে তার জন্য সব করতে পারে অসম্ভব কিছু নয়।”
“সিরিয়াসলি!তোদের মতো গফের জন্য হাত কাটতে পারবো না,গফের কথায় উঠতে বসতে পারবো না,রেগুলার গফ নিয়ে স্যাডনেস স্টাটাস দিতে পারবো না।”
আমি বললাম, “তাহলে ভালবাসবেন কিভাবে?”
“সোজা বিয়ে করে।বিয়ে করে তাকে আমার মতো করে সাজিয়ে নিবো।মেয়ে মানুষের বুদ্ধি কম।বোঝে কম চিল্লায় বেশী ওদের মতো হবো কেনো?পুরুষ জাতির একটা সম্মান আছে না।তাদের কে আমাদের মতো করে তৈরি করবো।”
“আমি বললাম,শুনুন মোটেও বাজে কথা বলবেন না।মেয়ে মানুষ বোঝে কম চিল্লায় বেশী।বুদ্ধি কম।”
“ক্যানো দিয়া তাতে কোনো সন্দেহ আছে?”
“অবশ্যই বিহান ভাই আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”
“আমার শ্বশুরের মেয়েকে দেখে বোঝ, তার জামাই যে তার মেয়ের পিছে ছুটছে সে বুঝতেই চাইছে না।তাহলে কি মেয়ে মানুষের কোনো বুদ্ধি আছে বল।থাকলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারতো।তাই আমি আমার কথা উইথড্র করলাম না।”
মেহু আপু বললো,”আরে বিহান ভাই আপনার ও গফ আছে?এটা কি শুনালেন?কে সেই মহোয়সী নারী।আমি সিওর নিশ্চয় ভীষণ ম্যাচুরিটি সম্পূর্ণ কোনো মেয়ে।”
রিয়া বললো,”নিশ্চয়ই ডাক্তারি পড়ে তাইনা বিহান ভাই।”
তোহা আপু বললো, “নিশ্চয় ঢাকা শহরের সেরা সুন্দরী কোনো মেয়ে।কারণ বিহান ভাই প্রপোজ করলে ফিরিয়ে দিবে এমন কোনো মেয়েই নেই।”
রিয়া বললো, “বিহান প্রেম করলে তো আর যার তার সাথে প্রেম করবে না সব দিকে পরিপূর্ণ শিক্ষিত কম কথা বলে এমন মেয়ে।”
সাডেন বিভোর ভাই জোরে পড়া শুরু করলো, “বিহান জানো অনেক মিস করছি তোমায়।ফ্রি হয়ে কল দাও।”
ইয়াহু পেয়ে গিয়েছি বিহানের গফের মেসেজ।প্রেয়সী দিয়ে সেভ রাখা।বিহান তলে তলে এত দূর।ভালবেসে আবার প্রেয়সী দিয়ে সেভ রাখা।
বিহান ভাই এবার বললেন,সবার বকবক শেষ হলে এবার বলি গাইস।তার আগে বিভোর আমার ফোন দে।পারসোনাল জিনিস দেখা ঠিক না মোটেও।
আমার গফ তোদের কারো বর্ণনার সাথে মেলে নি।তবে সে সত্যি খুব সুন্দর। প্রেমে পড়ার মতোই।ম্যাচুরিটির “ম” ও নেই তার মাঝে।এই রেগে যচ্ছে এই রাগ কমছে।এই বেত লাফাচ্ছে, এই কার্টুন দেখছে। ভীষণ অবুঝ আর রাগের ডিব্বা একটা।তার সাথে রোজ কথা হয় না।দু’এক মাস পর পর দেখা হয়।সে জানেই না তাকে আমি ভালবাসি।জানলেও বলবে মজা করছি।না হলে রিজেক্ট করবে।কারণ তাকে বিরক্তি করি এটা সে মেনে নিতেই পারে না।এখন যদি সে জানে এগুলা তার নামেই বলছি না জানি কত কি ভাববে।
বিভোর ভাই বললেন,ইস কত নারীর যে কপাল পুড়লো সো স্যাড।
_________________________________
পরের দিন সকাল দশ টায় আমরা রওনা হলাম খুলনার উদ্দেশ্য। বাসে যে যার মতো সিট নিয়ে বসে পড়লাম।রিয়া আর বিভোর ভাই পাশাপাশি সিটেই বসেছে।আমি আর মেহু আপু এক সিটেই বসেছে।বিহান ভাই আর শুভ ভাইয়া এক সিটেই বসেছে।মুরব্বিরা আমাদের আগের সিট গুলাতে বসেছে।শুভ ভাইয়া বিহান ভাই কে রিকুয়েষ্ট করলো সে মেহু আপুর সিটে বসবে।বিহন ভাই বাধ্য হয়ে উঠে এলেন মেহু আপুকে বললো মেহু সামনের সিটে যাও।মেহু আপু খুশি মনে উঠে চলে গেলো।আমার পাশে রাক্ষস মানব এসে বসলেন।পাশের সিটের এক গাদা মেয়ে বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে আছেন। বোঝায় যাচ্ছে তারা বিহান ভাই এর প্রতি ক্রাশড।মেয়ে গুলার হাসি দেখে গা জ্বলছে আমার।
রিয়া হুড় হুড় করে বিভোএ ভাই এর গা ভরে বমি করে ভাষিয়ে দিলো।বিভোর ভাই এর যা অবস্থা দেখার মতো না।এইদিকে মেয়ে গুলো এসে বিহান ভাই এর নাম্বার চাইছে।বিহান ভাই কিছু বলার আগেই আমি উনার নাম্বার টা বলে দিলাম।বিহান ভাই রেগে একবার তাকালেন আমার দিকে।এমন সময় আমার ও বমি পাচ্ছিলো।বিহান ভাই দ্রুত একটা পলিথিন ধরলেন আমার সামনে।বমি শেষে বললেন,সামান্য রাস্তা জার্নি পারিস না।বমি করে ক্লান্ত হয়ে বিহান ভাই এর কাঁধে মাথা রাখলাম।বিহান ভাই আমার মুখের দিকে একবার তাকালেন মাত্র।কাকে যেনো ফোন দিলেন,
রমিম আমার বাইক টা নিয়ে আয় তো দ্রুত।চাবি আছে বাসায় এলিনা আন্টি আছে উনার কাছে চাইলেই দিবে।পিচ্চি বাসে চড়তে পারছে না।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।