এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ৫৭

12 Min Read

একটা ছেলে একটা মেয়েকে এতটা ভালবাসে কিভাবে দিয়া? আমি ফিল্মে যা দেখেছি বাস্তবে সেটা বিহানের মাঝে দেখেছি।তাকিয়ে দেখো আমার দিকে দিয়া আমি চাইলে এই শহরে অর্ধেক কিনে ফেলতে পারি আমার বাবার এতটাই সম্পত্তি আছে।টাকার অভাব নেই আমার দিয়া।লুক এট মি তোমার থেকে সুন্দরে আমার কমতি নেই কোনোকিছু আমার গায়ের রং তোমার থেকে অনেক বেশী উজ্জ্বল। আমার হাইট দেখো তোমার আমার কাছে এই টুকু মাত্র।আমি বড় একজন ডাক্তার।ঢাকার মেয়ে স্মার্টনেস এ কমতি নেই ম্যাচুরিটিতে ভরপুর বিহানের বয়সের সাথে ও আমাকে যায় পুরাটা আর তুমি।তুমি এইটুকু একটা মেয়ে,বিহানের কোমর ও ছুতে পারবে না হাইট এর দিক থেকে নড়াইল থেকে আসা একটা আনস্মার্ট মেয়ে তবুও বিহান তোমাকে কেনো ভালবাসে দিয়া।বিহান আমার না হলে তোমার ও হবে না মাইন্ড ইট।জীবনে চেয়েছি পাই নি এমন কিছুই আমার জীবনে নেই তাই বিহান কেও আমার করে নিবো।
প্রেয়সী আপুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আমি উনার মুখ আর চোখ দিয়ে রাগের অগ্নিবর্ষণ ঝরছে।ভালবাসা মানুষকে এতটা ডেস্পারেট করতে পারে।উনার ভেতরের তীব্র যন্ত্রণা স্পষ্ট ক্লিয়ার বোঝা যাচ্ছে।সেই সাথে প্রবল হিংস্রতা।ভালবাসার যন্ত্রণা আমি বুঝি তাই একদিক ভেবে কষ্ট পাচ্ছি যে প্রেয়সী আপু ভালবাসার জন্য কষ্ট পাচ্ছে।কিন্তু এটা কেমন ভালবাসা যা মানুষকে অপমান করে ছোট করে হিংসা করে।নিজেকে নিয়ে অনেক অহংকার উনার।এর আগেও অনেক অপমান করেছে আমাকে।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে রিয়া বললো আচ্ছা আপনি না আমাদের ম্যাম।একটা স্টুডেন্ট কে ডেকে প্রেম ভালবাসা নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করছেন।দিয়া থাকুক আর না থাকুক বিহান ভাই এর ভালবাসা দিয়ার জন্য ই ছিলো আর থাকবে।একজন ম্যাম হিসাবে আপনাকে এতটুকুও রেসপেক্ট করতে পারলাম নাহ সরি।
বিহান এখন আর তোমাদের ভাই হয় না।সো এই ঘন ঘন ভাই ডাকা অভ্যাস টা চেঞ্জ করো রিয়া।বিহান এর পজিশন টা দেখো এখন।
রিয়া বললো বিহান ভাই এর পজিশন আমাদের কাছে ওয়ানলি ভাই।ভাই মানে ভাই।আর দিয়ার কাছে বিহান ভাই এর পজিশন ওয়ানলি লাভার আন্ডারস্ট্যান্ড ম্যাম।
বেশী বেড়ো না তোমরা।তোমাদের ফিউচার কিন্তু আমার হাতে পড়ে আছে।আমি তোমাদের শত্রু হয়ে বিপক্ষে দাঁড়ালে কোনদিন এখান থেকে পাস করে বেরোতে পারবে।
রিয়া কে চুপ করিয়ে বললাম,এক্সকিউজ মি! আমরা নিজেদের যোগ্যতায় এখানে চান্স পেয়েছি। আপনি নিজেই নিজেকে শত্রু ভাবছেন।খাতায় সঠিক লিখলে ফেইল করাবে এমন ক্ষমতা কারো নেই।সো এসব ভয় দিয়া পাই না ম্যাম।আর যে বললেন এখানে চান্স পেয়েছি বিহানের ক্রেডিট। বিহান আমার ফ্যামিলি পারসন সে আমার প্রতি কেয়ারিং হবে নাতো কি অন্যর প্রতি হবে।আপনার কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে আপ নার ফ্যামিলি তে কেউ কারো কেয়ার ই করে না।এইজন্য আপনি এটাকে স্বাভাবিক নিতে পারছেন না।এনি ওয়ে আপনি বার বার বিহান ভাই কে নিয়ে মাথা ঘামান কেনো?বিহান ভাই ভালো ডাক্তার,উনি দেখতে সুন্দর সব কিছু ঠিক আছে এগুলা নিয়ে আপনার ক্রেডিট নেওয়ার কি আছে।কি হয় বিহান ভাই আপনার। উনি আমার লাইফলাইন উনাকে নিয়ে গর্ব করলে আমি করবো। বেহুদা অন্যর জীবন নিয়ে ভেবে অশান্তি বাড়িয়ে লাভ কি?আদেও কিছু পেয়েছেন কি?আর পাবেন ও না।আর হ্যাঁ আপনিও তো বিহান ভাই এর থেকে কম না। আপনিও কারো দায়িত্ব নিয়ে চান্স পাইয়ে দেখান কিভাবে পারেন।আপনার ক্রেডিট ও দেখতে চাই আমরা।পরিশেষে বলতে চাই আপনার ব্যাক্তিগত জীবন টিচার স্টুডেন্ট এর মাঝে আনবেন না রিকুয়েষ্ট ইউ।
________________________________
এক কাপ কফি হাতে নিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি ভীষণ বিষন্ন লাগছে চারদিক।প্রেয়সী আপুর কথাগুলো কানে বাজছে। কফি থেকে ধোয়া উড়তে উড়তে কখন ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে বুঝতেই পারি নি।সামনের বেলকনিতে একটা পুরুষ কাপড় মেলছে কাপড় গুলো মনে হয় উনার স্ত্রীর ই।আচ্ছা উনার ওয়াইফ কোথায় উনি কেনো রোজ কাপড় মেলে দেন।কিছুক্ষণ পর দেখি উনার ওয়াইফ বেলকনিতে এসছে।মহিলাটির চোখের নিচে কালি জমেছে কিছু হয়েছি কি উনার।উনি আসতেই উনার হাজবেন্ড উনার কপালে হাত দিয়ে জ্বর মেপে দেখছেন।ওয়াইফ এর গালে হাত দিয়ে কপালে চুমু দিলেন।দৃশ্য টা রোজ ই দেখি আমি।
রুমে এসে বই নিয়ে নাড়াচাড়া করছি।আম্মু কাপড় ভাজ করতে করতে বললো বিহানের জন্য একটা ডাক্তার মেয়ে দেখেছে তোর ছোট মামা।তোর ছোট মামার বন্ধুর মেয়ে।এখন তো বিয়ে দিতেই হবে কিন্তু বিহানের সেদিকে তেমন তাড়া নেই।কথা হচ্ছে বিহানের সামনে কথা টা তুলতে হবে যে তোর বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা হয়েছে।আম্মুর চোখে মুখে এত আনন্দ দেখে মনে মনে বললাম আমি কি তোমার শত্রু আম্মু।নিজের মেয়ের ঘরে সতীন আসবে সেই খুশিতে মাতোয়ারা এই প্রথম কোনো মা।আম্মুর কথা শুনতে আমার একটুও ভাল লাগছে না কলম শেষ বলেই নিচে নেমে এলাম।
বাসার এই সাইড টাতে অনেক বড় মাঠ আছে এখানে বিকালে সবাই বাচ্চা নিয়ে এসে বসে।কেউ হাটাহাটি করে, বাচ্চারা খেলাধুলা করে।নিচে নেমেই দেখি নির্বান স্যার দাঁড়িয়ে আছেন।আমি চাইছিলাম যেনো চোখে চোখ না পড়ে কিন্তু প্রথম বার তাকাতেই উনি ভীষণ সুন্দর একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন,হাই পিচ্চি দিয়া।
“স্বভাবসুলভ একটা হাসি দিয়ে বললাম স্যার আপনি এখানে।”
“আমার বাসা তো এখানেই ওইযে আকাশী কালারের বিল্ডিং ওর তিন তলায় আমি থাকি।”
“ওহ আচ্ছা স্যার। ”
“হোয়াট এ সারপ্রাইজ দিয়া এখানে এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি আমি।”
“জ্বী স্যার আমিও ভাবতে পারিনি।”
“আমাকে আনইজি লাগছে ক্যানো দিয়া তোমার।এসো চা খাবে।”
“না স্যার আমি দুধ চা ছাড়া খাই না।”
“মামা একটা দুধ চা দেন।দুধ বেশী করে দেন।”
“স্যার এগুলোর কি প্রয়োজন ছিলো।”
“রিল্যাক্স দিয়া।দূর্ভাগ্যক্রমে আমি তোমার টিচার হয়েছি।আমাকে তোমার বিহান ভাই এর মতো ভাই ডাকতে পারো প্রব্লেম নেই।আমি অনেক আগে থেকেই তোমাকে চিনি।”
“চা এ চুমুক দিয়ে বললাম স্যার কিভাবে চিনেন।”
“বিহান যেদিন মেডিকেল এ টপার হলো সেদিন বিহানের খুব মন খারাপ ছিলো।ওর ফুফাতো বোন দিয়া মেডিকেল এ চান্স পায় নি।তখন থেকেই আমাকে বলতো আগামিবছর দিয়া নামে একজন এডমিশন হবেই অগ্রিম বলে রাখলাম।আমি বলেছিলাম সিওর কিভাবে এতটা তুই।বিহান বলেছিলো দিয়া ভীষণ জেদী,মেধাবী,ট্যালেন্ট। বলেছিলো চঞ্চল পাখির মতো প্রবেশ করবে দিয়া, দেখতে একদম ই পিচ্চি একটা মেয়ে।কথায় কথায় রেগে যাও, কেঁদে দাও পুরাই নাকি রাগ পরী।তোমাকে না দেখেই মনের ভেতরে অনেক কল্পনার ছবি একেছি।তখন থেকেই তোমাকে দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো।সত্যি তুমি চান্স পেলে বুঝেছিলাম আসলেই জেদী তুমি।”
“উনি আমাকে নিয়ে এত কিছু বলেছেন।না মানে উনার এত সময় আছে।”
“এটা ঠিক বলেছো ওর মুখে কোনো মেয়ের কথা শোনা যায় না তবে তোমার কথা শুনেছি।এইজন্য ই ইন্টারেস্ট বেশী ছিলো।”
“কই আমার সামনে তো উনি বলেন না আমাকে তো সময় চোখের রাগ দেখান।”
“হয়তো ভয় পাও বলেই ওর ভয় দেখাতে ভাল লাগে। ”
“এ কেমন ভাল লাগা স্যার।”
“বিহানের ব্যাপার টা জানিনা তবে তুমি সত্যি ভাল লাগার মতো।আরেক কাপ খাবে চা।”
“না না স্যার আর খাবো না।”
“একটা নোটস দিয়েছি সবাই কে।তোমাকে পায় নি তাই বিহানের কাছে দিয়েছি পরাটা কমপ্লিট করে যেও কাল ক্লাসে।”
“স্যার বিহান ভাই কেই কেনো দিলেন।দুনিয়াতে কি আর মানুষ পেলেন না।আমাকে জানালে আপনার বাসায় গিয়ে নিয়ে আসতাম। ”
“তুমি এত কষ্ট করবে কেনো যেখানে তোমার ভাই আছে?বিহান এখন বাসায় আছে যাও নিয়ে যাও।”
যেখানে যায় সেখানেই বিপদ। এই স্যার আমাকে এত বড় বিপদে না ফেললেও পারতেন।উফফফ কেনো যে বারবার এই সমস্যায় পড়তে হয়।দু ‘মিনিটের রাস্তা এখান থেকে বিহান ভাই এর বাসা।রাস্তার পাশের দোকান থেকে একটা ডং ডং চিপস কিনলাম। চিপস টা হাতে নিয়েই বিহান ভাই এর বাসায় গেলাম।কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে দিলেন উনি।উনাকে দেখেই ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি।মনে হচ্ছে শাওয়ার নিয়ে মাত্রই এসেছেন গায়ে পানিতে টইটুম্বর।নাভির নিচে সাদা টাওয়াল এর গিট্ট।উনার নাভি এত সুন্দর ক্যান এক নজরে তাকিয়ে সেটাই ভাবছি।
“কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর আমার হাত থেকে চিপস এর প্যাকেট ছো মেরে নিয়ে বললেন এত কিপটা কেনো তুই দিয়া।তোর বর তো আর ফকির না।”
“কিপ্টার কি করলাম আমি? ”
“এই আত্মীয়ের বাসায় এসছিস জাস্ট দশ টাকার চিপ্স নিয়ে।”
“আমি আপনার জন্য আনিনি।আমার জন্য এনেছি দিন আগে আমার চিপস।”
“আনিস নি কেনো সেটাই বলছি।তোর বর যে ফকির সেটা তো আর না।প্রতি মাসে তোর বিকাশ একাউন্টে ত্রিশ হাজার করে টাকা দেয়।তাছাড়া তোর বর এত নামকরা একজন ডাক্তার পেশেন্ট এর ফি তো আর কম না তাইনা।তাছাড়া একজন প্রফেসর ও সে সাথে ফ্রিল্যান্সিং ও করে।টাকা খরচ করে আবার তো বায়না ধরতে পারিস যে আমার টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে কিন্তু অন লাইনে সুন্দর একটা শাড়ি দেখেছি পেমেন্ট টা করে দাও প্লিজ।এটাকে কি কিপটামি বলবো নাকি বোকামি বলবো কোনটা বুঝলাম না।এইটুকু বয়স তোর কোথায় সাজুগুজু তে পূর্ণ মনোযোগ থাকবে যা দেখবি তাই কেনার বায়না ধরবি অথচ কিছু দিতে চাইলেও না না করিস। ঠিক ই নিজের মায়ের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করিস টাকার জন্য।”
উনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি আমি আর উনি চিপ্স এর প্যাকেট খুলে খেতে খেতে দরজা লাগিয়ে দিলেন।এটা নাকি আত্মীয়ের বাসা কি আধ্যাতিক কথা।উনি হাতে টাকা দিলে আমি নেয় না বলে বিকাশে দেন আমি তাও খরচ করি না।এটা নিয়ে অনেক বার বলেছেন শোন দিয়া আমার এত বড়লোক হওয়ার ইচ্ছা নেই সারা মাস তুই খরচ করবি।খরচ করে যা থাকে থাকবে না থাকলে না থাকবে।
চিপ্স এর প্যাকেট শেষ করে আমার হাতে প্যাকেট টা দিয়ে বললেন এটা ময়লা রাখা বাকেট এ ফেলে দে।কিচেনে আছে দেখ বাকেট।প্যাকেট ফেলে দিতেই বললেন দিয়া বেগুন কাট ছোট মাছ দিয়ে রান্না করবো।ফ্রিজ থেকে বেগুন নিয়ে বেগুন কেটে পানিতে ভিজানো হলেই বললেন সকালে প্লেট রেখে গিয়েছিলাম ওগুলো ধুয়ে দে।বুঝলাম না কাজের অডার করেই যাচ্ছেন কেনো?প্লেট গুলো ধুয়ে রুমে এসে বসলাম।উনি রুমের মাঝে ঘুরছেন আর কি করছেন জানিনা।এবার বললেন,ওয়াশরুমে আমার প্যান্ট আর শার্ট আছে ধুয়ে বেলকনিতে মেলে দে।
এবার অধৈর্য হয়ে বললাম আমি কি আপনার বুয়া।
উনি শান্ত কন্ঠে উত্তর দিলেন না আমার বউ।দ্রুত কাজ কর।বউ বউ এর মতো থাকবি।
ওয়াশ রুমে গিয়ে দেখি প্যান্ট আর শার্ট ভেজানো।এত্ত ভারি জিন্স আমি ধুতে পারবো না এটা আমার থেকে ভারী চিল্লিয়ে বললাম।এত্ত ভারী কাপড় মানুষ পরে।
-যা পারিস তাই কর।প্যাক্টিস কর এসব ই করতে হবে তোকে।
প্যান্টের সাথে আন্ডারওয়ার দেখে মেজাজ খুব ই খারাপ হয়ে গেলো।আবার বললাম আপনার এসব ছোট কাপড় ধুতে পারবো না।
-কোন সব।
মুখের উপর আন্ডারওয়ার ফেলে দিয়ে বললাম এসব।
-উনি ক্যাচ ধরে বললেন,দিয়া গতকাল ই কিনেছি বেচারার সাথে এত অত্যাচার কেনো করছিস শুনি।
কোনো উত্তর না দিয়ে বেলকনিতে পানিসুদ্ধ প্যান্ট আর শার্ট নেড়ে দিলাম।উফফ এত ভারী কেনো এই জিন্স।
রুমে আসতেই দেখি অনেক গুলা ছোট মাছ।বললেন তিন কেজি ছোট মাছ কিনেছি বুয়া আসেনি কেটে দে।
আমার মন চাচ্ছে এখনি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয় উনার কথা শুনে।আমি এত্ত গুলা গুড়া মাছ কেমনে কাটবো।আমি তো ভাল মাছ ই কাটতে জানিনা।মানুষ মানুষ কে এতটা অত্যাচার কিভাবে করতে পারে।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।