এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ৬

12 Min Read

বেদনার পরিপূরক আর আপনসঙ্গি বোধহয় অন্ধকার।একমাত্র অন্ধকারেই বেদনা কে প্রকাশ করা যায়।মনের মাঝে বেদনা,দুঃখ,কষ্ট দানা বাঁধলে তখন অন্ধকার কেই আপন করে নিতে ইচ্ছা করে আমার।আলো আমি সহ্য করতে পারি না।নিজেকে অন্ধকারে মুড়িয়ে নিকশ কালো অন্ধকারে নীল বেদনা ঢেকে ফেলতে ইচ্ছা করে।মনের মাঝে ভয়াবহ যন্ত্রণা হচ্ছে।কিন্তু কেনো হচ্ছে এই যন্ত্রণা। যতবার নিজের মন কে প্রশ্ন করেছি ততবার ই একটায় কথা মনে হয়েছে বিহান ভাই।আমার মন আমাকে একটাই উত্তর দিয়েছে বিহান ভাই কে আমি ভালবাসি।এক তরফা ভালবাসা গুলো বড্ড যন্ত্রণা দেয় মানুষ কে।এই কষ্ট ধীরে ধীরে মনের কোণে জমতে জমতে পাহাড় সমান অভিমান জমা হয়।বার বার সেই ছোট বেলা থেকে আমার একবার না হাজার বার মনে হয়েছে বিহান ভাই হয়তো আমায় ভালবাসেন।যখন ই সেই হয়তো টা সত্য কিনা যাচাই করতে গিয়েছে ঠিক ততবার ই কষ্ট পেয়ে ফিরে এসেছি।বিহান ভাই এর কাছে কখনো যদি উনার কথার মানে খুজতে চেয়েছি ততবার ই আমাকে ইগনোর করে আমার হাতে লেখাপড়ার ইয়া লম্বা এক লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছেন।কি চান উনি কেনো আমন করেন আমার সাথে।আমি ছাড়া পৃথিবীর কাউকে উনি বিরক্ত করেন না।এই পৃথিবীতে আমাকেই কি একমাত্র শত্রু মনে করেন। আমি ছাড়া কারো সাথে রাগারাগি ও করেন না।আবার আমি ছাড়া কাউকে পাত্তা ও দেন না।আমাকে রাগিয়ে দেওয়া কথা বলবেন ই আবার সেই রাগ ভাঙিয়েও ছাড়বেন।কখনো উনাকে বুঝতে পারিনা আমি।নিজেকে প্রকাশ ও করেন না।যদি কখনো ডাকি পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকে হোক ছুটে আসবেন ই কিন্তু এসেই বকা দিবেন।উনার ভয়ানক রাগের জন্য কখনো জোর করে প্রশ্ন করতে পারি না কি চান কি আপনি।এমন প্রশ্ন করলেই ঠাসস করে কয়েক টা থাপ্পড় দিবেন তার ঠিক নেই।আমিও ভয়ানক ভাবে বিরক্ত হই উনার প্রতি কিন্তু দিন শেষে ঘুমের মাঝে আবার উনাকেই স্বপ্ন দেখি।সব সময় মনে হতো ধীরে ধীরে বিহান ভাই আমার জীবনে আসবেন।আজ বিহান ভাই রিলেশন এ গিয়েছেন এটা আমি মেনে নিতে পারছি না।কেনো বিহান ভাই আপনি আমায় ভালবাসলেন না।ক্যানো অন্য প্রেমিক দের মতো সারাদিন ধমক না দিয়ে একটা কাঠগোলাপ দিয়ে বলেন না ভালবাসি দিয়া।বিহান ভাই যে আমার সাথে সত্যি মজা করেন তার প্রমান আজ পেয়েছি।উনার জীবনে অন্য কেউ আছে সেটা হয়তো তোহা আপুই হবে।এয়ার ফোন কানে গুজে আমার ফেভারিট গান টা প্লে করলাম।গান টার ফিমেল ভারসন টা আমাফ হৃদয় ছুয়ে যায়।এই গান টা শুনলে মনে হয় বিহান ভাই কে আমার পক্ষ থেকে ডেডুকেট করা।
Dheere Dheere Se Meri Zindagi Mein Aana
slowly slowly u come into my life
Dheere Dheere Se Mere Dil Ko Churaana
slowly slowly u steal away my heart
Tum Se Pyaar Humein Kitna Hai Jaane Jaana
how much love i have for u my dear
Tumse Milkar Tumko Hai Bataana
meeting you i need to tell you
Dheere Dheere Se Meri Zindagi Mein Aana
Dheere Dheere Se Mere Dil Ko Churaana
Tum Se Pyaar Humein Kitna Hai Jaane Jaana
Tumse Milkar Tumko Hai Bataana
Jabse Tujhko Dekha Dil Ko Koi Aaraam Nahin
from the time i have seen you my heart is not at rest
Mere Hothon Pe Ek Tere Siva Koi Naam Nahin
on my lips there is no other name than yours
Apna Bhi Haal Tumhare Jaisa Hai Saajan
my condition is the same as your darling
Bas Yaad Tujhe Karti Hoon Aur Koi Kaam Nahin
i just remember you and have no other work
Ban Gaya Hoon Main Tera Deewana
i have become your crazy lover
Dheere Dheere Se Dil Ko Churaana
Dheere Dheere Se Meri Zindagi Mein Aana
Dheere Dheere Se Mere Dil Ko Churaana
Tune Bhi Aksar Mujhko Jagaya Raaton Mein
you have always woken me in the night
Aur Neend Churayi Meethi Meethi Baaton Mein
and my sleep was stolen by the sweet sweet words
Tune Bhi Beshak Mujhe Kitna Tadpaya
u also have troubled me alot
Phir Bhi Teri Har Ek Ada Par Pyaar Aaya
even then with each of your style i fell in love
Aaja Aaja Ab Kaisa Sharmaana
come come now dont feel shy
Dheere Dheere Se Dil Ko Churaana
Dheere Dheere Se Meri Zindagi Mein Aana
Dheere Dheere Se Mere Dil Ko Churaana
Tum Se Pyaar Humein Kitna Hai Jaane Jaana
Tumse Milkar Tumko Hai Bataana .
গান টা শেষ হলেই আরেক বার প্লে হচ্ছে।মামাদের বাড়ির এক্সট্রা রুমে গিয়ে সুয়ে রইলাম।রাতে মামি বার বার খাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও খেতে পারলাম না আমি।মামাদের বাড়ির তথাকথিত এক আত্মীয় এসে আমার পাশে সুয়ে আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছিলেন।কারো কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো মুডে ছিলাম না আমি।বিরক্ত হয়ে উঠে বেলকনিতে রাখা ডিভাইন এর উপর গিয়ে ঘুচিমুচি করে সুয়ে পড়লাম।অজান্তে কখন ঘুম চোখে ধরা দিয়েছে আমি জানিনা।
হঠাত ঘুমের মাঝে স্বপ্ন তে বিহান ভাই এর দেখা পেলাম।বিহান ভাই আমাকে ডিভাইন থেকে কোলে তুলে নিলেন।আমিও ঘুমের মাঝে উনার গলা জড়িয়ে ধরলাম।আধো আধো কন্ঠে বললাম আপনি আজ আবার এসেছেন আমার স্বপ্নে।আপনি রোজ ক্যানো আসেন বিহান ভাই আমার স্বপ্নে।স্বপ্নে এস এত ভাল ব্যাবহার করেন আর বাস্তবে এত খারাপ ব্যাবহার ক্যানো করেন।সারাক্ষণ কেনো এত বকাবকি করেন বিহান ভাই।সব সময় ক্যানো বকেন আমায়।
উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলছিলেন দিয়া তুই কেনো বুঝিস না তুই অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বললে আমার খুব খারাপ লাগে।সেদিন বিভা আপুকে দেখতে আসলে আমি ইচ্ছা করেই রুমে আটকে রেখেছিলাম তোকে। কারণ ওখানে ছেলেরা ছিলো।আর তোকে মারাত্মক সুন্দর লাগছিলো।ওরা তোকে দেখে ক্রাশ খেয়ে ফেলতো।আমি সেটা সরাসরি প্রকাশ করতে পারি না বলেই আমার রাগের কারন হয়ে যাস।তুই কি জানিস ক্যানো কারণে কারণে এই বদ রাগি বাজে ছেলেটা ঢাকা থেকে সপ্তাহে সপ্তাহে ছুটে আসে শুধু তোকে দেখার জন্য।তোকে না রাগালে আমার ভাল লাগে না দিয়া।তোকে বিরক্ত করার অজুহাতে বার বার কথা বলি।সারাক্ষণ যদি কানের কাছে গিয়ে ভালবাসি ভালবাসি বলি তুই তখন আরো বেশী বিরক্ত হয়ে যাবি।এই আমার কদর যদি কমে যায় তোর কাছে।অবহেলা আমি মেনে নিতে পারি না দিয়া।তোর অবহেলা আমি সহ্য করতে পারবো না দিয়া।যেদিন ডাক্তার হবো আমার শ্বশুরের থেকে তোকে চেয়ে নিয়ে সারাদিন ভালবাসি ভালবাসি বলবো।
আমি আবার ও আধো আধো গলায় বললাম আপনার খুব ইগো তাইনা বিহান ভাই।ভালবাসার কথা প্রকাশ করলে বুঝি আপনার প্রেজটিজ যাবে।
ইগো না দিয়া।তুই বুঝবি না আমার অপ্রকাশিত ভালবাসা।আমার ইগো আছে দিয়ে সেটা অন্যর ক্ষেত্রে।আমি বার বার তোর কাছে ছুটে আসি ইগো থাকলে আসতাম না।ভালবাসা বেশী প্রকাশ করলে যদি সস্তা হয়ে যায় তোর কাছে।খুব ভয় করে।
স্বপ্নে বিড় বিড় করতে করতে দেখি যেখানে বিহান ভাই এর গলা জড়িয়ে ছিলাম সেখানে কোলবালিশ।ঘুম ভাঙতেই শিউরে উঠলাম আমি।আজ আবার বিহান ভাই কে স্বপ্ন দেখেছি।এত মিষ্টি করে কথা উনি বলতে পারেন ভাবা যায়।এসব ভাবতে ভাবতেই রিয়া এসে আমাকে বলে কি ব্যাপার মহারাণি আজ মহারাজ এর ঘরে ব্যাপার কি।রিয়ার কথা শুনে ভড়কে গেলাম আমি আমি মহারাজ এর ঘরে মানে।চোখে মেলে তাকিয়ে দেখি ওয়ালে সাদা এপ্রোন পরা গালে এক শুভ্র হাসির পিকচার ওয়ালে টাঙানো।ওএমজি আমি বিহান ভাই এর রুমে।
রিয়া আমাকে বললো দ্রুত নিচে আয়।হলুদের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে।সবাই উঠে পড়েছে।
আমি অবাক হয়ে গেলাম আমি এখানে কেনো?আমি তো বাইরে ডিভাইন এর উপর সুয়ে ছিলাম এখানে কিভাবে এলাম।কে নিয়ে এসছে আমায়।আমার ওড়না বা কোথায়?
ছুটে গেলাম বেলকনিতে, বেলকনিতে গিয়ে দেখি ডিভাইন এর উপর বিহান ভাই সুয়ে আছেন।আমার ওড়না উনার পিঠের নিচে পড়ে আছে।তার মানে উনি আমাকে এখান থেকে নিয়ে উনার বিছানায় সুইয়ে দিয়েছিলেন।রাতে আমি যা স্বপ্ন দেখেছিলাম সেটা কি তাহলে সত্য।মাথা দুই একটা ঝাকি দিয়ে নিলাম।যে এটা হয়তো মিথ্যা।আজ বিহান ভাই এর খবর আছে।উনি আমার সাথে রিতীমত নাটক করে যাবেন। এই নাটকের কইফত দিতে হবে।আমার চাচাতো বোনের সাথে রিলেশন করে আবার আমাকে কেনো?কোলে তোলা হয়েছিলো সেটা উনাকে বলতেই হবে।
রাগি রাগি চোখ নিয়ে বিহান ভাই কে ডাকাডাকি শুরু করলাম।উঠলেন না দেখে আমার ওড়না ধরে টানাটানি শুরু করলাম।অতঃপর উনার ঘুম ভাঙলো।
ঘুম ভাঙতেই উনার বিশ্রি সেই চিরচেনা রূপে ফিরে এলেন।রাগি রাগি চোখে তাকিয়ে রইলেন কপালে বিরক্তির চিহ্ন ফুটে আছে।উনার রাগ দেখেই রিতীমত ভয় পেয়ে গেলাম।কিন্তু উনি রাগি চোখে তাকিয়েই আছেন কোনো কথা বলছেন না।ওড়না টা ছেড়ে দিয়ে আবার চোখ বুজে গেলেন।
আমি ওড়না টা গায়ে জড়িয়ে বললাম কি ব্যাপার আমি এখান থেকে আপনার রুমে গেলাম কিভাবে।
বিহান ভাই আবার চোখ মেলে তাকালেন রাগে যে দাঁতে দাঁত চেপে আছেন সেটা বোঝা যাচ্ছে।এতক্ষণে মুখ খুললেন।
দিয়া রাতে এমনি মুড সুয়িং ছিলো ভালো ঘুম হয় নি।ঘুমের ঘাটতি থাকলে মাথায় পেইন হয় আমার।এখন যদি ডিস্টার্ব করিস সিরিয়াসলি বলছি চড় একটাও অন্য কোথাও যাবে না।সব গুলো তোর দুই গালে পড়লে।আমার চড় লাস্ট কবে খেয়েছিস মনে আছে তো।
উনার কথা শুনেই মুখ চুপসে গেলো আমার।উনার চর থাপ্পড় খুব ই ভয়ানক জিনিস।এখন আর বিরক্ত না করে পরে আসবো ভেবেই চলে আসলাম।
তোহা আপু,মেহু আপু,শুভ ভাইয়া,তিয়াস ভাইয়া,আলিপ ভাইয়া সবাই চলে এসেছে।তোহা আপুকে দেখেই মন টা খারাপ হয়ে গেলো আমার।
সকাল আট টা বাজে আমাদের কাজিন গুষ্টির বিশাল সভা বসেছে কে কেমন সাজবে,কে কি করবে। আমাদের বিশাল আড্ডার মাঝে হাজির হলের বিহান ভাই।তোহা আপু বিহান ভাই কে দেখেই বললো কেমন আছেন বিহান ভাই।বিহান ভাই স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বললেন ভালো।আমার সি আই ডি র চোখ সম্পূর্ণ তাদের দুজনের চোখের দিকে।
আমরা সবাই চেয়ার নিয়ে বসে আছি বিহান ভাই ও একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসলেন।বিহান ভাই শুভ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন কিরে মফিজ কি অবস্থা। শুভ ভাইয়া মেহুর আপুর মাথায় একটা চাটি মেরে বললো কিরে তুই আমাকে ট্যাগ দিয়ে এসব পোস্ট দিয়েছিস কেনো?বিহান আমাকে এখন মফিজ ডাকছে।তিয়াস ভাইয়া হাতে ক্লাপ দিয়ে স্ব-জোরে হেসে দিয়ে বললেন আজ কিন্তু সত্যি শুভ দাঁত ব্রাশ করে নি।বিহান ভাই তিয়াস ভাইয়ার দিকে ভ্রুক্ষেপ করে তাকিয়ে বললেন এনি ওয়ে তুই আমার সিনিয়র কে মেসেজ করিস ক্যানো তিয়াস।সে তো তোর নিক নেইম ছ্যাঁচড়া দিয়ে সেভ রেখেছে। তিয়াস ভাইয়া বিহান ভাই এর দিকে হাত জোড় করে বললো বিহান ভাই আপনার পায়ে ধরি বাকি টা এই হাটের মাঝে প্রকাশ করিয়েন না।বিহান ভাই মুখ বাকা করে একটা হাসি দিলেন।
বিভোর ভাই আর রিয়া আমার দিকে বললো দিয়ার মুড অফ মনে হচ্ছে।
বিহান ভাই ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন কাল রাতে দিয়া ঘুমের ঘরে আমার রুমে গিয়ে আমাকে ডেকে তুলে বলেছে সে আমার রুমে ঘুমোতে চাই।এবং বলেছে বিহান ভাই আপনার বিছানায় একদিন ঘুমোতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম।কি আর করা প্রথম বারের মতো কাউকে বেড শেয়ার করলাম।বাট দিয়ার যে মেমরি লস হয়েছে জানা ছিলো না।এখন থেকে দিয়া যেটা করবে ভিডিও করে রেখে দিবো।তার দাবি আমি তাকে কোলে তুলে হয়তো আমার বিছানায় সুইয়ে দিয়েছি।রিয়া বিলিভ হয় এত মোটা একটা মহিলা আমি কোলে তুলতে পারি।
মনে চাইছে উনাকে খেয়ে ফেলি।এত গুলা মানুষের সামনে এগুলা না বললেই কি হচ্ছিলো না।আজ সত্যি উনার খবর আছে।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।