এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ৯

8 Min Read

গভীর রাতে ফ্লোরে সুয়ে আছি প্রায় সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে হঠাত মনে হলো কেউ আমার হাত স্পর্শ করলো।হঠাত ঘুমের মাঝে হাত স্পর্শ করাতে কেঁপে উঠলাম আমি।চিৎকার দিতে যাবো এমন টাইমে আমার মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরলেন বিহান ভাই।আমার মুখে হাত দেওয়া অবস্থায় আমার হাত ধরে মধ্যরাতে ডেকে তুলে নিয়ে এলেন।আমি বুঝলাম না উনি ঠিক কি করতে চাইছেন।চারদিকে মানুষ জন তাই সাউন্ড ও করলাম না কেননা সাউন্ড করলে সবাই জেগে যাবে ব্যাপার টার অন্য মিনিং খুজবে।কলঙ্ক লেগে যাবে বিহান ভাই এর চরিত্রে।আর আমি জানি বিহান ভাই এমন টাইপের ছেলে না।আর যায় করুক মেয়েদের দিকে কু দৃষ্টিতে তাকান না উনি।দো’তলা থেকে নিচে নামার পর বললাম কি ব্যাপার মধ্যরাতে আমাকে এখানে কিডন্যাপার দের মতো তুলে এনেছেন কেনো?
“বিহান ভাই কানে কানে বললেন,তোকে নদীতে ফেলে দিবো বলে।”
“আপনার দ্বারা সব ই সম্ভব। ”
“তাই।তা তোকে মেরে আমার লাভ কি শুনি।”
“সেটা আপনি জানেন।এখন তো রিলেশন ও করেন সো আমাকে মারতে আরো ইজি হবে আপনার। বউ থাকলে তো আর বোন লাগে না।”
“আহহহ!বোন কে? আর কার বোন। ”
“আপনার ফুফাতো বোন।”
“ষ্টুপিড একটা তোকে আমি কোনো কালেই বোন ভাবি নি।আমার ফুপ্পির কোনো মেয়ে থাকলে যে তাকে বোন ই ভাবতে হবে তার ও তো কারণ নেই বউ ও তো ভাবা যায়।”
“আপনি আমার সাথে মধ্যরাতে মজা করতে এসছেন তাইনা।”
“উহু তোর রাগের কারন জানতে এসছি।”
“এই সামান্য জিনিস জানার জন্য মধ্যরাতে আমাকে ডেকে তুলেছেন।”
“তোর সমস্যা কি জানিস কোনটা সিরিয়াস আর কোনটা ফালতু সেটাই বুঝিস না।তোর রাগ হয়েছে এটা আমার কাছে মারাত্মক সিরয়াস ব্যাপার।তোর আমার উপর রাগ হয়েছে যার কারণ আমি জানিনা এই কারন না জানলে আজন্ম আমাকে না ঘুমিয়েই থাকতে হবে।আমার ঘুম হরন করে আরামে ঘুমোবি সেটা তো হতে পারে না দিয়া”
“দেখুন কেউ এসে দেখে নিবে উলটা পালটা ভাববে।”
“হু কেয়ারস? সেটা নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত নয়।উল্টা ভাবলেও আমার ই লাভ।আমার তাহলে নতুন করে আর কাউকে ভাবাতে হবে না।”
“আপনার কথার কোনো মানে আমি কোনদিন বুঝি নি আর বুঝতেও চায় না।আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমোবো।”
“ঘুমোবি তার আগে একটা কাজ আছে।”
“কি কাজ।”
“আমার এখন এই জোছনা স্নাত রাত ব্রিজের উপর গিয়ে উপভোগ করতে মন চাইছে।বাট আমার ভয় করছে একা যেতে আমাকে এগিয়ে দিয়েই চলে আসবি।আর যদি না যাস এখানেই দাঁড়িয়ে থাকা লাগবে সারারাত।”
ব্রিজ মামাদের বাসা থেকে দুই মিনিট এর রাস্তা ও হবে না।এখানে সারারাত দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে উনাকে এগিয়ে দিয়ে চলে আসাটাই উত্তম কাজ হবে।বিহান ভাই কে ব্রিজের সামনে এগিয়ে দিয়ে আমি বাসার দিকে রওনা হলাম।
বিহান ভাই পেছন ডেকে বলে উঠলে, “জানিস সামনে যে বকুল গাছ টা আছে না আমার ফ্রেন্ড রেহানের বোন গলায় দড়ি দিয়ে মারা গেছিলো।তারপর থেকে রোজ রাতে পা ঝুলিয়ে বসে থাকে ভয়ানক সাউন্ড ও হয়।অনেক মানুষের গলা কেটে ফেলে রেখে গিয়েছে। সাবধানে যাস দিয়া।”
“গাছের দিকে তাকিয়ে দেখি সাদা একটা কিছু বসে আছে দেখে এক দৌড়ে গিয়ে বিহান ভাই কে জড়িয়ে ধরলাম।ছোট বেলা থেকে ভূত প্রেতে ভয় আমার প্রচন্ড।”
“বিহান ভাই বলেন,দিয়া ওখানে কি সেই আত্মাটা এখনো আছে।”
“হুম বিহান ভাই আছে।”
“ঠিক আছে আমাকে জড়িয়ে ধরে থাক আত্মা টা চলে গেলে তোকে জানাবো।”
“এমনিতে ভূতে প্রচন্ড ভয় আমার এই মুহুর্তে বিহান ভাই ছাড়া উপায় নেই বাঁচার।কিছুক্ষণ পরে বিহান ভাই আমাকে বলেন আত্মা চলে গেছে দিয়ে আজ আর আসবে না চোখ খোল।”
ভয়ে ভয়ে চোখ খুললাম আমি।
নদীর পানিতে স্পষ্ট ফুটে থাকা চাঁদটা ভীষণ সুন্দর লাগছে দেখতে।দুজনেই দাঁড়িয়ে আছি ব্রিজ এর রেলিং ধরে পানির দিকে।জ্যোৎস্না স্নাত রাত বুঝি এততাই সুন্দর হয়।চাঁদের চারপাশ জুড়ে গোলাকার আকৃতির আলোর আভা ছড়িয়ে আছে।মাঝে মাঝে সাদা সাদা তুলোর মতো মেঘ ভেসে আসছে।কি অপরূপ লাগছে সেই চাঁদ।
“বিহান ভাই বলেন তোর রাগ হয়েছিলো কি নিয়ে দিয়া।”
“আপনাকে ক্যানো বলবো।
আপনার বউ কে গিয়ে প্রশ্ন করুন তার কিছু নিয়ে রাগ হলো কিনা?”
“আমি ঠিক জায়গা ই প্রশ্ন করছি তুই উত্তর দে।”
“আমি আপনাকে কোনো উত্তর দিতে পারবো না আপনার শ্বশুরের খায় ও না পরি ও না।তাই আপনি আপনার বউ বা আপনার শ্বশুরের কোনো প্রব্লেম থাকবে।”
“শ্বশুরের মেয়েটা দিন দিন ভীষণ জেদি হয়ে যাচ্ছে।তার এই বদ মেজাজী জামাই এর থেকেও বেশী জেদী হয়ে যাচ্ছে।তার এই রাগি মেয়েকে তার জামাই সামলাবে কিভাবে শুনি।”
“তাহলে যান না তোহা আপু আপনার জীবনসঙ্গিনী তার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করুন।”
“তোহা আমার কি?এই ভুত তোর মাথায় কিভাবে ঢুকলো।”
“কিভাবে ঢুকবে যা সত্য তাই। অস্বীকার করছেন কেনো জিজু।”
“কিহ আমি তোর জিজু।দিয়া রে তোকে যা মন চায় মাঝে মাঝে বলতে পারি না পুচকি বলে।”
“আপনি যে তোহা আপুর পোস্ট এ লাভ রিয়্যাক্ট দেন তাতেই তো বোঝা যায় আপনাদের মাঝে কি চলে।”
“তোর রাগের কারেন কি এটাই।”
“হ্যাঁ”
“তার মানে তুই জেলাস তাইতো।কিরে দিয়া তুই আবার আমার প্রেমে পড়িস নিতো।”
“মোটেও না আপনি আমার পোস্ট এ হাহা রিয়্যাক্ট আর তোহা আপুর পোস্ট এ লাভ রিয়্যাক্ট দিয়েছেন তাই রাগে ব্লক দিয়েছি।”
“আচ্ছা মহারানীর তাহলে এই কাহিনী। ”
“ফোন টা বের করে মেসেঞ্জারে প্রবেশ করে দেখালেন তোহা আপু মেসেজ করছিলো প্লিজ বিহান ভাই আমার পোস্ট এ লাভ রিয়্যাক্ট দিন।আমি সাওয়ারে ছিলাম ফোন ছিলো রুম মেট এর হাতে ও মেসেজ দেখে রিয়্যাক্ট দিয়েছে।কারণ ও আমাকে বলেছিলো যে একটা মেয়ে খুব কাঁন্নাকাটি করছিলো তাই তার পোস্ট একটা লাভ রিয়্যাক্ট দিয়েছি।ব্যাস্ততার জন্য রিয়্যাক্ট তুলতে ভুলে গিয়েছি।”
“তার মানে আপনি সিঙ্গেল ইয়া হু বলেই লাফিয়ে উঠলাম।”
“বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন এত এক্সসাইটেড হওয়ার কিছুই নেই আমি সিঙ্গেল সেটা বলি নি।আমার হবু বউ এর জন্মের পর থেকেই আমি সিঙ্গেল জীবনের থেকে অবসান নিয়েছি।মানে তুই সিওর থাক আমি সিঙ্গেল না।”
“তার মানে বিহান ভাই।”
“তার মানে বুঝার বয়স যে তোর হয় নি সেটা দেখেই বোঝা যায়।এদিকে আয় তো।”বলেই আমার হাত টেনে ধরে ব্রিজের উপর বসালেন।ইউটিউবে মেহেদী ডিজাইন প্লে করে দিলেন।আমার হাত কেটে যাওয়াতে উনি নিজেই আমার হাতে মেহেদী পরিয়ে দিতে লাগলেন।চাঁদের আলোতে বিহান ভাইকে আরো বেশী সুন্দর লাগছে।ক্রাশের হাত মেহেদী পরছি ভাবতেই খুশিতে কেমন যেনো লাগছে।বিহান ভাই মেহেদী দিতে দিতে হাতের মাঝে লিখে দিলেন আই লাভ ইউ রাক্ষস ভাই।বিহান ভাই কিন্তু অনেক সুন্দর মেহেদী ডিজাইন তুলেছে তার মাঝে এটা কি লিখে দিলো।লেখাট দেখেই ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম।তার মানে বিহান ভাই আমার ফোনের সব সিক্রেট দেখে নিয়েছে।উনার পিকচারে যে এডিট করে আই লাভ ইউ রাক্ষস ভাই লিখে দিয়েছিলাম সেটা উনি দেখে ফেলছেন।বিহান ভাই আমার ফোন টা দেখিয়ে বলেন আজ এই ফোন ই আমার রাগ কমিয়ে দিয়েছে।কারণ টা বুঝে নিস।উনার কথায় ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি।
ব্রিজের নিচেই দানা পানি রেস্টুরেন্টে খাবারের অর্ডার দিলেন বিহান ভাই।হাতে মেহেদী লাগানো তে বিহান নিজেই আমাকে খাইয়ে দিলেন।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।