কেমন যেনো ঝোড়ো হওয়ার মতো আগমণ হলো বিহানের।এই অসময়ে বিহান কে এক্সপেক্ট ই করিনি আমি।মামি ও বেশ অবাক হয়ে গেলো বিহান কে দেখে।
মামি আমাকে বললো,
"দিয়া তুই কি জানতি বিহান আসবে।"
"মাথা নাড়িয়ে না সূচক সম্মোধন জানালাম।"
ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছে, সব তছনছ করে ফেলতে ইচ্ছা করছে।আমি ছাড়া আপনি কারো সাথে ভেবেই নিজের ভেতরে কয়েকশত বার মৃত্যু হয়েছে আমার।কষ্টের প্রহর যেনো কাটতেই চায়না।আমার ফোনের থেকেও কী অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিলো প্রেয়সীর ফোন। বিহান থেকে বিহান ভাই ই ভালো ছিলেন।বিহান ভাই থেকে বিহানে পরিণত হয়ে কেনো বদলে গেলেন আপনি।কিভাবে সহ্য করবো আমি আপনি আমাকে ভুলে অন্য কারো সাথে জীবন কাটাচ্ছেন।আপনার আমার যে অজস্র স্মৃতি।ঢুকরে ঢুকরে কাঁদছি আমি।এক মন বলছে বিহান এমন করতে পারেনা,অন্য মন বলছে হ্যাঁ করেছে।ফোন তো ওয়েটিং ই ছিলো।করবে তার দোষ কী?বিহান তোর থেকে প্রেয়সীকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছে দিয়া,বিহানের সাথে এই জীবনে আর কথা বলিস না, বিহান কে ছেড়ে চলে যা।এত কষ্ট দিয়েছে যে তার সাথে কেনো থাকবি?দুই মন ভালো আর খারাপ নিয়ে ঝগড়া চালাচ্ছে আমার ভেতরে।
মামি উঠানে এগিয়ে গিয়ে বললো,
"তোরা আজ ই আসবি আমাদের জানাবি না।"
"বিহান বললো,দিয়া কোথায় আম্মু?দিয়া ভালো আছে আম্মু,দিয়া কি ও বাড়িতে চলে গিয়েছে,দিয়া ঠিক আছে।"
উনার কন্ঠে যেনো কষ্ট ভীষণ চাপা কষ্ট।কিন্তু কিসের কষ্ট।সামনে এলেই কেমন যেনো সব নেগেটিভ ভাবনা দূর করে দেন।ছিঃমামি কি ভাববে। এই প্রথমবার বিহান এসে মামির আগে আমার কথা জিজ্ঞেস করলো।ওর কি সব লজ্জা হাওয়ায় উড়ে গিয়েছে।মামির তো মন খারাপ হবে।
'মামি বললো,দিয়ার শরীর মনে হচ্ছে দুপুর থেকে খারাপ।বললো মাথায় পেইন হচ্ছে।ওষুধ তো দিয়েছিলাম খেয়েছে মনে হয়।কিন্তু তুই হঠাত এলি যে।'
,ইমারজেন্সি প্রয়োজন ছিলো আম্মু।আমি অনেক ক্লান্ত,উপরে যাচ্ছি।দিয়া উপরে না থাকলে প্লিজ পাঠিয়ে দাও।'
বিহানের গায়ে কালো জিন্স, কালো শার্ট গায়ে সাদা এপ্রোণ।কালোর উপর সাদা এপ্রোনে ভীষণ সুন্দর লাগছে বিহান কে।চোখ মুখে ভীষণ মলিনতা।যেনো কয়েক জন্মের কষ্ট ওর মনে।আমি বারান্দায় এক কোণে অন্ধকারে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম।এই প্রথমবার অনুভব করলাম,ভালবাসার মানুষ অন্যর সাথে কথা বললে কতটা কষ্ট হয়।
"মামি বললো,বিভোর তোর ভাইয়ের সমস্যা কি?ভাবসাব তো ভালো মনে হচ্ছে না।হঠাত কি হলো।"
"বিভোর ভাই বললেন,কাকিমা আজ তো আসার কথা নয়।বিহান কে দেখলাম ডিউটি থেকে এসে কাউন্টারে ফোন করলো টিকিট পেতে সন্ধ্যা হবে তাই আমাকে বললো বাড়িতে যাবি?না গেলে থাক তুই কাল আসিস।আমি এখন যাচ্ছি।"
"আমার কাছে ব্যাপার টা বেশ সন্দেহের মনে হলো।কারণ গায়ের এপ্রোণ খোলার ও সময় নেই বিহানের।আমি বললাম,সন্ধ্যায় একসাথেই যাবো বাসের টিকিট কর দুইটা।"
"বাট বিহান বললো,ততক্ষণে অনেক লেট হয়ে যাবে।সন্ধ্যা মানে ৬ ঘন্টার তফাত।সন্ধ্যায় রওনা হলে রাত একটা বাজবে।ততক্ষণে অনেক লেট হয়ে যাবে আমাকে যেতে হবে মানে যেতেই হবে।আই নিড টু গো নড়াইল।"
"বুঝলাম না ওর কিসের এত প্রয়োজন ছিলো, আমাকে তো বলেই নি।সারারাস্তা একটা কথা ও বলে নি।যে দ্রুত গতিতে বাইক চালাচ্ছিলো কি হতে আজ কি হয়ে যেতো তার ঠিক নেই।আমি ওর এইভাবে বাইক চালাতে দেখে নিজে ড্রাইভ করেছি সারারাস্তা।আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম কাকিমা তোমার ছেলের বাইকের গতি দেখে।মনে হচ্ছিলো উড়ে এসে নড়াইল পৌছাতে পারলেই ভালো হয়।"
"দিয়ার সাথে তো ঝগড়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।হতেও পারে দুপুর থেকে দিয়াকেও অন্যরকম মনে হচ্ছে।"
"বিহান এসে গিয়েছে সব ঠিক হয়ে যাবে, ডোন্ট ওরি কাকিমা।"
আধাঘন্টা হয়ে গিয়েছে বিহান উপরে গিয়েছে আমি বারান্দার এক কোনে দাঁড়িয়ে ভেবেই যাচ্ছি এইভাবে বাইক চালিয়ে কেউ আসে,যদি কিছু হয়ে যেতো।ভুল নিজে করলেও রাগ দেখাবে, আমার হলেও রাগ দেখাবে।যা ইচ্ছা করুক, আই ডোন্ট কেয়ার।আমাকে এখন ভুল বুঝানোর চেষ্টা করবে।বিভিন্ন অজুহাত দেখাবে এই সেই কারনে কথা বলেছিলাম প্রেয়সীর সাথে।
"এর ই মাঝে মামি এসে বললো,দিয়া তুই এখানে কেনো?উপরে যাস নি।"
"না।"
"কেনো?."
"এমনি।"
"আমি রান্না করছি তুই যা এক্ষুণি যা,অতদূর থেকে এসেছে, কিছু লাগে কিনা দেখ যা গিয়ে।"
মামির জোরাজোরিতে নিজে রুমে যেতে বাধ্য হলাম।মনে মনে ভেবেই নিয়েছি ব্যাগ গুছিয়ে আম্মুদের বাসায় চলে যাবো।
দরজায় উঁকি মেরে দেখি,বিহানের হাতে আমার ফোন।এক নজরে ফোন দেখছে।কি দেখছে আমার ফোনে।উনি কি আমার ফোনে অটো রেকর্ড অন করে গেছিলেন।আমার আর প্রেয়সীর ফোনালাম শুনছেন আর ক্রমশ চোখ দুটো হিংস্র হয়ে উঠছে উনার।কথোপকথন যত এগোচ্ছে উনি ততটায় রেগে যাচ্ছেন।চোখ দুটো যেনো লাল রক্তজবার ন্যায় রুপ ধারণ করছে।উনি যে মারাত্মক রেগে গিয়েছেন সেটা উনার চোখ মুখে স্পষ্ট ক্লিয়ার।নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে খাটে খুব জোরে ঘুষি মারলেন,কোনায় লেগে হাত খানিক টা ছুলে রক্ত গড়িয়ে পড়লো।সেদিকে খেয়াল নেই উনার।
নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে,কোথায় একটা কল দিলেন।
"জিসান দিয়ার নাম্বার প্রেয়সীকে দিয়েছিস কেনো ড্যামেড?আই নো তুই ছাড়া কেউ দেয় নি।বিকজ একমাত্র তোর কাছেই দিয়ার নাম্বার আছে।কারণ তোর দোকান থেকেই দিয়ার নাম্বারে বিকাশ করেছিলাম আমি টাকা।ফ্লেক্সি ও তোর দোকান থেকে দেওয়া হয় প্রায় সময়।"
"বিহান আমি প্রেয়সী কে অনেকবার বুঝাচ্ছিলাম যে তুই বিবাহিত আমরা ফ্রেন্ডসার্কাল সবাই জানি।দিয়া আর তোর ভালবাসার কথা বলেছি অনেক বুঝিয়েছি সে বলে আমরা নাকি মিথ্যা বলছি।তোর ওয়াইফ এর সাথে কথা না হলে সে মানবে?"
"হু কেয়ার প্রেয়সী?তুই জানিস না দিয়ার জন্য কত বড় প্রব্লেম এর নাম প্রেয়সী।আমার পারসোনাল লাইফ কি কোনো প্রপার্টির দলিল নাকি কোনো চুক্তিনামা যে তার প্রমাণ দেখাতে হবে।আমি বিবাহিত প্রেয়সী বিলিভ করুক না করুক আই ডোন্ট কেয়ার।আমার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে অন্যর খুব বেশী ইন্টারেস্ট, কিওরিসিটি আমার জাস্ট বিরক্ত লাগে।"
"আসলে বিহান প্রেয়সী এমন ভাবে বলছিলো।"
"আমি বলেছিলাম কি দিয়ার নাম্বার দিতে।আমি যে এতবার নিষেধ করেছিলাম দিয়ার নাম্বার না দিতে আমার থেকে কি প্রেয়সীর কথা বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তোর কাছে।তুই কারো পারসোনাল নাম্বার এইভাবে অন্য কাউকে দিয়ে দিবি।আমার ওয়াইফ এর নাম্বার অন্যকাউকে দিয়ে দিবি আমাকে একবার বলবি না।"
"সরি ভাই,অনেক বড় ভুল হয়ে গিয়েছে।"
"হেল ইওর সরি ড্যামেড।দিয়া ছোট মানুষ, আমাকে এখন কি মারাত্মক ভুল টায় না বুঝেছে,এই জীবন কেটে যাবে ওর ভুল ভাঙাতে আমার।মাত্র ঊনিশ বছর বয়স দিয়ার,ওর মনে এত জটিলতা বা কোনো প্যাচ নেই।বকলে কাঁদে,মন খারাপ হলে কথা বলে না,মন ভাল হলে হেসে খেলে ঘুরে বেড়ায়।দিয়া কি প্রেয়সীর মতো মেয়ের কথার জাল বুঝবে।সেই ক্ষমতা দিয়ার নেই।সামনে দিয়ার এডমিশন, তোর আর প্রেয়সীর এই চক্করে যদি দিয়া ডিএমসি তে চান্স না পায় আমি কি ভয়ানক খারাপ হতে পারি ভাবতেও পারবিনা। "
"প্রেয়সী কি বলেছে ভাবিকে?"
"ভয়েজ সেন্ড করছি শুনে নিস।"
"তুই তো রেগে আছিস। তাহলে আমাদের ট্যুরের কি হবে?"
"এখন তোর ট্যুরের কথা মনে হচ্ছে।আমার সংসার নষ্ট করে ট্যুর দিতে মন চাইছে তোর।দিয়া আমার সব জিসান।দিয়া কষ্ট পেলে পৃথিবীর সব ধ্বংস করতে মনে চায় আমার।দিয়ার মতো মেয়ে আমার সামনে আসলে হাঁটু কাঁপতো যার সে আমাকে আজ উল্টা পাল্টা মেসেজ করেছে।একটুও দোষ দিয়ার নেই এখানে।দোষ আমার তোর মতো বন্ধু আছে। বন্ধুত্ব রাখার ই ইচ্ছা নেই সেখানে ট্যুর। "
উনি আবার ও কোথাও কল দিলেন।
"প্রেয়সী"
"বিহান তুই আমায় ফোন দিয়েছিস এখন।সিরিয়াসলি।"
"নেক্সট উইক তোর বাসায় আসবো,আপত্তি আছে কোনো।"
"তুই আসবি এতে আপত্তির কি আছে।এই প্রথমবার তুই আমার বাড়ি আসবি।কিন্তু খুব জানতে ইচ্ছা করছে কেনো বিহান।"
"আমাদের বিয়ের কথা বলতে।"
"তোর আর আমার।সিরিয়াসলি বিহান।"
--উনি বাকা হেসে ফোনটা কেটে বিছানায় ছুড়ে মারলেন।চিন্তায় মাথার চুলে হাত চালাতে লাগলেন।ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছেন উনি।আমার পায়ের নিচে মাটি ক্রমস সরে যাচ্ছে।প্রেয়সীর কথা বিশ্বাস হচ্ছিলো না কিন্তু বিহান এসব কি বললো।নেক্সট উইক আমার এডমিশন আর উনি নেক্সট উইকেই উনার আর প্রেয়সীর বিয়ের কথা বলতে যাচ্ছেন।উনি ফোনটা কাটতেই আমি রুমে প্রবেশ করে ব্যাগ গোছাতে শুরু করলাম।উনার বন্ধু নাম্বার দিয়েছে তাই বকছে।নিজে যে প্রেয়সীর সাথে কথা বলেছে সেটা।আর বিয়ের কথা ও বলতে যাবেন।এক মুহুর্তে ওর সাথে আর থাকবো না।
--আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে দেখছেন আমি কি করছি।উনি আমার হাত থেকে ব্যাগ টা বারান্দায় ছুড়ে ফেলে বললেন,কি সমস্যা দিয়া তোমার?এখন কি ব্যাগ গোছানোর সময়।