এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - সিজন ২
--কিছুক্ষণ পরেই এডমিশন রেডি হয়ে চুপচাপ বসে আছি রুমে।হাত পা কাঁপছে চিন্তায়, চোখ বুঝলেই মনে হচ্ছে রেজাল্ট দিলে সেখানে আমার নাম থাকবে তো।অল রেডি শুরু হয়েছে মাথায় পেইন।নিজের ব্যাপারে সব সময় নেগেটিভ চিন্তাটায় আমার বেশী আসে।যদি আমি চান্স না পাই তো কি হবে।আম্মুর স্বপ্ন তার মেয়েকে ডাক্তার হিসাবে দেখা।সকাল থেকে আম্মু বাবা,মামা,মামিরা অনেকবার ফোন দিয়েছে সবাই চিন্তা করতে নিষেধ করেছে ঠান্ডা মাথায় লিখতে বলেছে।সমস্যা আমি তো পরিক্ষার হলে যাওয়ার আগেই ঘাবড়ে বসে আছি।রিয়া চিন্তা করলেও বেশ স্বাভাবিক আছে আমার মতো অত বেশী ভাবে না কোন কিছু নিয়ে।যা হবার তা হবেই এটা ভেবেই চুপচাপ বসে থাকে।ডায়নিং এ রিয়া ভাইয়া আর বিভোর ভাই খাচ্ছে। বিহান আমার জন্য প্লেটে ভাত মাখিয়ে নিয়ে এসছে।বিছানায় আমার বরাবর বসে আমার দিকে সুক্ষ নয়নে তাকালেন।আমি একটা সিট এর এ পাতা ও পাতা উলটে দেখেই যাচ্ছি। বিহান আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "দিয়া হা করো খাবার খেয়ে নাও। এখন এগুলো রাখো।মাথা ঘাবড়ে যাবে এখন আর কিছুই দেখা লাগবে না।" "আমার মুখ চিন্তায় চুপসে আছে।বিহানের দিকে মলিন মুখে তাকিয়ে বললাম, আমি খাবো না এখন।" "না খেলে পরীক্ষা দিবে কিভাবে?" "কোনভাবেই খাবার আমার পেটে যাবে না।" "হা করো বলছি আগে।তোমার থেকে খারাপ প্রিপারেশন আমার ছিলো।কিন্তু এত বেশী চিন্তা করিনি আমি।আমার থেকেও বেশী মার্ক পাবে তুমি।" "কোথায় আপনি আর কোথায় আমি কি বলছেন আপনি।কার সাথে কার তুলনা করছেন আপনি।" "তোমার সাথে আমার।কেউ কারো থেকে কম নয় বুঝেছো?তুমি আমার থেকে বেটার কিছু ডিজার্ভ করো।আর রেজাল্ট দিলেই বুঝবে। লেখাপড়া কখনো ভালো ব্রেইনে হয় না, হয় নিজের চেষ্টায়।তুমি এমনিতেও ভালো স্টুডেন্ট তার উপর প্রচুর হার্ড ওয়ার্ক করেছো।শ্বশুর বাড়ি থেকে লেখাপড়া করেছো,সংসার সামলেছো,স্বামির সেবাযত্ন করেছো,শ্বশুর শ্বাশুড়ির সেবাযত্ন করেছো এত কিছু করেও লেখাপড়ায় মনোযোগ দিয়েছো।বিলিভ মি দিয়া তোমার জায়গা আমি হলে এতসব পারতাম ই না।ভেঙে চুরে গুড়িয়ে যেতাম।" "আমার শ্বশুর বাড়ি আবার হলো কবে।মামা বাড়ি তাদের আদরের ভাগনি থেকেছে।আমি তো কোনদিন বুঝলাম না যে আমি শ্বশুর বাড়ি ছিলাম।তাও এত ভালো ভালো সার্টিফিকেট কিভাবে দিলেন।" "তবুও দিয়া আমি হলে পারতাম না।আমি শক্ত ঠিক আছে বাট তোমার মতো এত কিছু সামলে কিছুই করতে পারতাম না।তোমার মতো এত স্ট্রং না আমি।সিরিয়াসলি বলছি।" "আমিও কিছুই পারতাম না যদি আমার বিপরিত পাশে আপনি না থাকতেন।স্বামি হিসাবে এমন একজন মানুষ কে পেয়েছি যে আমার জীবনে এসেছে ঢাল হয়ে।আর আমার নামে কতগুলা মিথ্যা সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেন।আপনি যে সত্যি সত্যি অনেক কিছু করেছেন আমার জন্য সেটা কি মুখে বলে শেষ করা যাবে।দিয়া থেকে মিসেস বিহান বানিয়েছেন, আমাকে একটা পারফেক্ট মানুষ তৈরি করেছেন,আমার জীবনের যাবতীয় প্রয়োজনীয় কাজ গুলো আমার আগেই রেডি রেখেছেন, আমার কি প্রয়োজন সেটা আমার থেকে আপনি বেশী ভেবেছেন।এই আগোছালো আমিটাকে গোছানো জীবন দিয়েছেন,এইযে সাজানো সংসার দিয়েছেন আর বলবো।" "না আর বলতে হবে না।আর আনবো ভাত।" "আর আনবেন মানে? আমি তো খাবো না ভাত।" "প্লেটের খাবার তো শেষ দিয়া।" "আপনি কি যাদু টাদু জানেন হ্যাঁ।গল্পে মনোযোগ দিয়ে খাবার খাইয়ে দিলেন।" "হাহাহাহা যাদু টাদু কিচ্ছু না।আমার বউ আমাকে অনেক ভালবাসে তাই আমি সামনে থাকলে সব দুঃচিন্তা ভুলে যায়।" --আসলেই মানুষ টা থাকলে সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত থাকি আমি।পৃথিবীর সব দুঃচিন্ত ভুলে থাকতে পারি।এটাই বুঝি ভালবাসা। , , বেশ কিছুক্ষণ পরে বিহান আবার রুমে এলো।নিজের পোশাক আয়রণ করে গায়ে পরে নিয়ে রেডি হচ্ছে।সবার থেকেই দোয়া নিয়েছি বিহানের থেকে নেই নি।মানুষ টাকে সালাম করতে ইচ্ছা করছে খুব।ভীষণ ইচ্ছ করছে।আমার জন্য জীবনে এত কিছু করেছেন উনি, তাই উনার দোয়া সব থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে।আমি জানি বিহান আমাকে ওর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে দিবে না।এই কাজ টা আমি ভীষণ ভালবেসে আর মনের গহীন থেকে বিহানের প্রতি শ্রদ্ধার জন্য করতে চাই।বাট ও শুধু এটা সেটা করছে স্হীর হয়ে তো দাঁড়াচ্ছেই না। বিহানের দিকে তাকিয়ে বললাম, "বলছি একটু স্হির হয়ে দাঁড়ান না।শুধু নড়ে বেড়াচ্ছেন কেনো?" "রেডি হচ্ছিতো দিয়া।" "আপনি দাঁড়ান না একটু সোজা হয়ে।" "কেনো?" "সালাম করবো আপনাকে।" বিহান দুই চোখ মেলে মায়াভরা চাহনি তে আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি নিয়ে বললো, "পায়ে হাত দিতে হবে না তোমার।" "দিলে কি হবে। আমার খুব ইচ্ছা করছে আপনাকে সালাম করতে।বাঁধা দিবেন না প্লিজ।আপনি আমার স্বামি আপনার পায়ে হাত দিলে আপনি বা আমি কারোর ই পাপ হবেনা।" উনার দুই ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিত ফাঁকা।মাথা নাড়িয়ে বললেন, "এই পিচ্চির জিদের সাথে পারা যায় না।" "আমি নিচু হয়ে উনাকে সালাম করলাম।" উনি আমার দুই বাহু ধরে দাঁড় করিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললেন, "ভালবাসা শ্যামাপাখি।এক আকাশ ভালবাসার অধিকারীনী পিচ্চি। " পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে দিয়ে দিলেন আমার হাতে। আমি সন্দিহান দৃষ্টি নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "আমি কি করবো এটা দিয়ে।" "সালাম করলে তার সম্মানী দিলাম।" "সম্মানী দিবেন ভালো কথা তাই বলে ব্যাগ ধরে দিয়ে দিবেন।" "হ্যাঁ রোজ তোমার থেকে টাকা চেয়ে নিবো। আর তুমি আমায় টাকা দিবে।" "না না আমার এসব বড় সড় দায়িত্ব নিতে পারবো না।ছোট মানুষ হারিয়ে ফেলবো আমি। আমি আমার স্বামির চেয়ে বেশী বুঝতে চাই না কখনো,বেশী জানতেও চাই না।এই বোকা সোকা জীবনে ভুল করে আপনার বকুনি খেয়ে সুন্দর জীবন যপণ করতে চাই।টাকা লাগে চেয়ে নিবো আমি।নিন তো আমার এসব ভারী জিনিস।" উনি অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, "সত্যি তুমি অসাধারন দিয়া।কেনো অসাধারণ নিজেও জানোনা।এখনের যুগে এমন মেয়েও আছে।" "ওসব আমি জানিনা,আমাকে একশ টাকা দিলেই হবে এখন।" "এখনো সেই ছোট আছো একশ টাকা লাগবে।" "হুম বড় হতে চাই না আপনার কাছে।" "চলো এবার বের হই তাহলে।" "শুনুন না আমার খুব ভয় করছে।আমি কি চান্স পাবো?" "সিওর পাবে।আমি দেখেছি কত হার্ডওয়ার্ক করেছো তুমি।ডোন্ট ওরি। " ফাইনালি পরীক্ষা শেষ হলো আমাদের।আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো এক্সাম দিয়েছি রিয়া আর আমি।মন বলছে নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে।তবুও দুঃচিন্তা নামক জিনিস টা যাচ্ছে না।পরীক্ষা শেষ হবার দুইদিন পর বিহান আমায় একটা শাড়ি এনে দিয়ে বললো,দিয়া শাড়িটা পড়ে নাও আমরা একটা জায়গা ঘুরতে যাবো। "আমি বললাম, ভাইয়া, বিভোর ভাই,রিয়া আলাদা ঘুরতে গেলো কেনো?" "আমি বলেছিলাম তোমাকে নিয়ে আমি বের হবো।ওরা ঘুরতে চাইলে যেতে পারে।" "একসাথে গেলে কি হতো।" "অন্য একটা জায়গা যেতে হবে ওদের নেওয়া যাবে না।" "কোথায় সেটা।" "গেলেই দেখবে,জীবনে তো ইবলিস দেখো নি।তোমাকে নিজ চোখে দেখাবো চলো।আর আমার কিছু কলিগ দের সাথে পরিচয় করাবো।" "বাট আমি তো হাই হিল আনিনি স্লিপার নিয়ে এসছি।" "হাই হিল লাগবে কেনো?" "বারে আপনার কলিগরা কি বলবে।আপনার বউ কত শর্ট।" উনি নিমিষেই মুড চেঞ্জ করে ফেললেন।হঠাত রেগে গেলেন।ভয়ানক চোখে তাকালেন আমার দিকে।হাতের ফোন বিছানায় ছুড়ে মারলেন।রাগে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছেন।হঠাত এত রাগ দেখে বললাম, "কি হলো।" উনি রেগে আমার দুইবাহু শক্তভাবে চেপে ধরে ওয়ালের সাথে চেপে ধরলেন।চোখ দিয়ে রাগের অগ্নি ঝরছে উনার।রাগে কাঁপছেন উনি। ভয়ে ভয়ে বললাম, "রেগে গেলেন কেনো?আমি কি কিছু করেছি।" চোয়াল শক্তকরে বললেন, "তুই জানিস না আমি তোকে কত ভালবাসি দিয়া।কেউ তোকে নিয়ে বাজে কথা বললে তাকে খু*ন করতে ইচ্ছা হয় আমার।সেখানে তুই কিনা নিজেই নিজেকে শর্ট বলছিস।কি সমস্যা তোর।যেখানে আমার সমস্যা নেই সেখানে তোর কেনো উঁচু হিল পরে লম্বা হতে হবে।মাইন্ড ইট দিয়া তুই যেমন তেমন ভাবেই ভালবেসেছি আমি।নিজেকে চেঞ্জ করার চেষ্টা করবি না,ভুলেও না।না তোকে ধবধবে ফর্সা হতে হবে না তোকে কষ্ট করে উঁচু স্যান্ডেল পরে লম্বা হতে হবে।ইউ নো হোয়াট দিয়া সৃষ্টিকর্তা তোকে আপণমনে আমার জন্য পারফেক্ট ভাবেই সৃষ্টি করেছেন।তাই নিজেকে চেঞ্জ করার চেষ্টা করো না।আমার হার্টবিট মাপার জন্য তুমি যথেষ্ট।" "স,,সরি।ব্যাথা পাচ্ছি তো।" উনি হাত টা ছেড়ে দিয়ে বিছানায় বসলেন।চিন্তা রেখা চোখে মুখে স্পষ্ট ক্লিয়ার।কপালে হাত চালালেন চিন্তায়।চুলের মধ্য একবার হাত চালিয়ে বললেন,, "সরি দিয়া।রুড বিহ্যাভ করে ফেলেছি।তোমাকে নিয়ে খারাপ কথা সহ্য হয় না আমার।কেউ তোমাকে নিয়ে বাজে কথা বললে তোমার হাজবেন্ড সেটা সহ্য করবে এমন মেরুদণ্ড হীন আমি নই দিয়া।"

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

2025 © Golpo Hub. All rights reserved.