'ভাগ্যিস আমার বিয়েটা আমি আগে সেরে নিয়েছিলাম না হলে রাজাকারের বংশধররা আমার সাথেও এমন করতো।হাউ টালেন্টেড ইওর হাব্বি মিসেস বিহান।'
কথাটা বলেই বাম হাতে বাঁধা কালো ফিতার ঘড়িটা ডান হাত দিয়ে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বসলেন।উনার গায়ে এখনো সাদা এপ্রোণ।মনে হয় কিছুক্ষণ আগেই ডিউটি থেকে ফিরেছেন।নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছেন উনি।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে চুল হাত খোপা করতে করতে বললাম,
'আপনি তো বড় রাজাকার ডাক্তার বাবু।'
উনি ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,
'তাই না?কোনদিক থেকে শুনি।'
'রাজাকারি চাল দিয়ে বাড়িভর্তি মানুষের সামনে আমাকে থাপ্পড় খাইয়ে আম্মুর কানে বিষ ঢেলে একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন।একটা নাবালিকা মেয়ের সাথে কি ভয়ানক অত্যাচার টায় না করেছিলেন।'
বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।ধীর পায়ে আমার দিকে চার 'পা এগিয়ে এলেন।আমার থেকে এক ফুটের দুরত্ত্বে কপাল কুচকে দাঁড়ালেন।কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঠোঁটের কোনে একটু হাসি এনে আমার নাক টেনে দিয়ে বললেন,
'উপায় ছিলো না পিচ্চি।শ্বশুরের মেয়ে বুঝতো না তাকে কত ভালবাসতাম।তাকে পাওয়ার ইচ্ছা আমাকে প্রবল করে তুলতো।কিন্তু পুচকি তো ভীষণ অবুঝ।বিয়ে না করলে তাকে হারানোর চিন্তায় এক প্রকার পাগল হয়ে যেতাম আমি।'
উনি চেঞ্জ করেন নি দেখে বুঝলাম নিশ্চয়ই এখন চেঞ্জ করে শাওয়ার নিবেন।শার্ট চেঞ্জের প্রয়োজন বুঝতে পারলাম।এই ক্লান্ত শরীরে কেমন ভালবাসার বুলি আউড়াচ্ছেন।ঘামে ভেজা শরীর, ক্লান্ত মুখের বদন এ আমার জন্য ভালবাসামাখা হাসি।ভীষণ মিষ্টি লাগছে দেখতে।এই মুহুর্তে মন চাচ্ছে উনার বুকে মাথা দিয়ে বাকি জীবন পার করে দেই।উনার শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে অভিমানি সুরে গাল চেপে হেসে বললাম,
'এখন আর প্রবল করে না বুঝি।আমি পূরণো হয়ে গিয়েছি তাইনা ডাক্তার বিহান বাবু।'
উনি গায়ের এপ্রোন আর শার্ট খুলে ফেললেন।খালি গায়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। শুনেছি কারো বুকে পশম না থাকলে সে নির্দয় হয় কিন্তু এই মানুষ টার উপর এক রকম ভেতর সম্পূর্ণ অন্যরকম।এত মায়া মমতা ভালবাসা উনার বুকে আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি এতটা ভালবাসতে পারে কিভাবে উনি।উনার দিকে তাকাতে বেশ লজ্জা লাগছে আমার।উনি প্যান্ট চেঞ্জ করে টাওয়াল পরে আবার দাঁড়ালেন আমার সামনে।আমার গলা জড়িয়ে ধরে আমার দিকে ঝুঁকে নাকে নাক মিশিয়ে বললেন,
'উহু অভিমানি বউ। তোমাকে কাছে পাওয়ার প্রবল ইচ্ছা ধীরে ধীরে আমাকে আরো বেশী পাগল করে তুলছে।তুমি কি বোঝো না তুমি ছাড়া আমি কত অসহায়।'
আমিও উনার গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,
'সেতো আমি বললাম বলে। '
'আমাকে জ্বলানো কথা বলে সহ্য করতে পারবে তো মিসেস বিহান।আজ রাতে খবর আছে তোমার।আমি কাছে আসতে চাই নাকি দূরে যেতে চাই বুঝবে তুমি আজ।'
'কয়টার খবর? খবর টবর আমি দেখি না।'
'এই খবরে দেখার কিছুই নেই শুধুই অনুভব করার।'
'এই আপনি এখন কোনদিকে যাচ্ছেন কথা ঘুরিয়ে।'
'আপাতত গোসল এ যাচ্ছি বাকি কথা রাতে হবে।বাই দ্যা ওয়ে তাকে কিন্তু আজ খুব সুন্দর লাগছে।তুমি কি জানো সে এত সুন্দর কেনো?'
'আমি জানিনা আপনি গোসলে যান তো আগে।'
ক্ষুদায় জীবন টা যায় যায় অবস্থা। কাকিমনি তো ফোন করে বলে দিয়েছে তার এই বিয়েতে সম্পূর্ণ মত আছে।সে তার মেয়েকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট করবে।রিয়া পৌছেছে কিনা সে খোজ নিচ্ছে।মেয়ের বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিলো কাকিমনির।কাকুর জন্য কিছুই হলো না।শুনেছি কাকু গাড়িতে যাওয়ার সময় আর কিছুই বলেনি। হয়তো এইভাবেই মেনে নিবেন।হঠাত মুখে পানির ছোয়া লাগতেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম।বিহান থ্রি কোয়ার্টার আর সাদা গেঞ্জি পরে চুলের পানি ঝাড়ছে আমার মুখের উপর।বিহানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম,শ্যাম্পু করেছেন। ঘ্রাণ টা দারুণ তো।
উনি নিজেও নাক টেনে ঘ্রাণ বোঝার চেষ্টা করলেন।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
'আসলেই ঘ্রাণ টা মারাত্মক তাইনা?আসলে আমি ছেলেটায় তো মারাত্মক। আজ ই গিফট পেলাম।রেনেটা কোম্পানির ম্যানেজার ভাই জোর করেই দিলেন।'
আমি বিহানের কথার সায় দিলাম হেসে।কিভাবে যে নিজের প্রশংসা করতে পারে।
--এরই মাঝে বিহানের ফোনে ভিডিও কল এলো।বিহান ফোন টা রিসিভ করলো।খুব কম বয়সী একটা মেয়ে সেজে গুজে ক্যামেরার সামনে।মেয়েটা বারবার চুল ঠিক করছে আর কেমন যেনো হাসছে।বিহান বললো,দ্রুত আপনার চোখ দেখান দেখি কি সমস্যা।মেয়েটা চোখ দেখিয়ে কেটে দিলো।খুব ভাব নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলছিলো।আমার দেখেই।মেজাজ প্রচুর খারাপ হয়ে গেলো।হিংসায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছি।তার উপর মেয়েটা আবার সুন্দরী। বিহানের পিছনে কোমরে হাত বেঁধে রনচন্ডী মুডে দাঁড়ালাম।রাগে ফুঁশতে দেখে বিহান ভড়কে গেলো আমার দিকে তাকিয়ে।ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ভাবছে আমার হঠাত কি হলো।বিহান দুই ভ্রু উঁচিয়ে ভাবছে কাহিনী কী? তার বউ এর হঠাত রুপ বদলের কারণ কী?বিহান শান্ত কন্ঠে বললো,
"হঠাত রেগে গেলে যে।"
আমি রাগি মুডেই বললাম,
"মেয়েটা কে?"
বিহান কপাল টান টান করে বললো,
"কে আবার?পেশেন্ট। "
"আপনি কি চোখের ডাক্তার মেয়েটা তো চোখ দেখাচ্ছিলো কেনো?"
"মেয়েটার হার্ট সার্জারী করাতে হবে।আমি যে ওষুধ দিয়েছিলাম খেয়ে নাকি চোখে সমস্যা হয়েছে।এখন তো তার বাসায় গিয়ে দেখা সম্ভব নয় হসপিটালে যাওয়া ও সম্ভব নয়।তাই মেয়েটি বললো ভিডিও কলে দেখাবে।"
"কেউ অসুস্থ হলে এইভাবে লিপিস্টিক পরে। এত সাজুগুজু করার মুড থাকে।এই মেয়ে নিশ্চয়ই আপনাকে দেখানোর জন্য ভিডিও কল দিয়েছে।"
উনি এবার একটু হেসে বললেন,
"কি জেলাস ফিল হচ্ছে পিচ্চি।আমি তো ওই মেয়ের দিকে তাকিয়েই দেখিনি।"
"এই শুনুন দিনকাল ভালো না।আপনি ৫০ বছরের নিচে কোনো মহিলা রুগি দেখতে পারবেন না।না মানে না।লিখে দিবেন মা কাকিদের ছাড়া সেবা দেওয়া নিষিদ্ধ। একান্ত কোনো মেয়ে যদি আসতেই চান কালো বোরকা পরে হাত মোজা পা মোজা পরে আসতে হবে।এখন যা বুঝলাম এইভাবে কম বয়সী সুন্দরী মেয়েরা সাজুগুজু করে আপনার কাছে আসে।"
বিহান আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
"কত্ত ভালোবাসো তুমি আমায় দিয়া।তোমার এই রাগে সারপ্রাইজড আমি। "
এরই মাঝে কলিং বেলা বাজছে।বিহান কে বললাম,
"দেখুন না কলিং বেলা বাজছে কেউ এসছে মনে হয়।"
"হুম মনে হয় ফুল নিয়ে এসছে।"
দরজা খুলতেই দুজন লোক ফুল নিয়ে এলো।তারা বাসর ঘর সাজানোর অর্ডার নিয়ে থাকে।বিহানের দিকে আমি তাকাতেই বিহান বললো উনারা বিভোরের ঘর সাজাতে এসছে।বিহান কে বললাম,
" উনারা কিভাবে সাজাবেন আমি দেখিয়ে দেই উনাদের।উনাদের সাথে আমিও সাজাবো।"
বিহান মুহুর্তের মাঝে মুড চেঞ্জ করে বললো,
"নো। "
মুখ ভার করে বললাম,
"হুয়াই।
"বিকজ ওরা আমার বউ এর দিকে তাকিয়ে থাকবে।তাই ওখানে যেতে হবে না তোমার ক্লিয়ার।"
শুধু নাকি আমি জেলাস আর উনি জেলাস না।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
"চোখ মুখ এমন শুকিয়ে গিয়েছে খাওয়া হয়েছে কিছু নিশ্চয়ই না।"
"না"
" আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছি এসো।"
বিহানের হাতে খাবার খেয়ে বেশ রিলাক্সড লাগছে আমার।ঘর সাজানো হয়ে গেলে বিভোর ভাই এর রুমে গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম আমি।বিহান আমার দিকে ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখে নিয়ে বললো,
"কি ব্যাপার এভাবে গাল ফুলিয়ে বসে আছো কেনো?"
বিহানের দিকে গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে বললাম,
"ভাবছি আমি একটা বিয়ে করবো আপনাকে বাদ দিয়ে।"
বিহান যেনো আমার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো।অবাক হয়ে বললো,
"এই লাড়কি বলে কি?শ্বশুরের এই নিষ্পাপ জামাই কে স্যাকা দিতে চাও।শ্বশুরের জামাই তো তার মেয়েকে ছাড়া বাঁচবে না।শ্বশুরের মেয়ে কি জানাবে না তার বাবার একমাত্র জামাই এর অন্যায় টা কি?"
"আমার কপাল খুব খারাপ।"
"কেনো?মিস অভিনেত্রী।"
"আমি অভিনেত্রী"
"এই মুহুর্তে তাই মনে হচ্ছে।এবার বলা হোক এত অভিনয়ের কারণ কারণ কী?"
"আমার বিয়ে কি কোনো বিয়ে ছিলো।এমন সুন্দর বাসর ঘর এ বউ সেজে বসে থাকার সৌভ্যাগ্য কি আমার কপালে ছিলো।আমার বিশ্বআনরোমান্টিক খিটমিট জামাই আমার বাসর ঘরের দফারফা করে ছেড়েছিলো।"
"আমি যদি আনরোমান্টিক ই হবো বউ কে ভূতের ভয় দেখিয়ে সারারাত জড়িয়ে ধরে ঘুমোলো কে।"
"মুখ শিটকিয়ে বললাম, আহহহহহহ"
"আহহহহহহ না হ্যাঁ। "
"আমার বাসর ঘর কি বিশ্রি ভাবে সাজানো হয়েছিলো আর এটা কত সুন্দর।"
"সুন্দর তো হবেই বিকজ এটা তোমার গ্রেট হাজবেন্ড এর পছন্দে সাজানো।আর আমাদের টা তো আমার প্লান সাজানো ছিলো না।"
"নিজেকে নিজেই গ্রেট দাবি করছেন।"
"গ্রেট না হলে নিজের বউ এর কাছে আই এ্যম দ্যা ওয়ান পারসোন হতে পারতাম না।আমি আগে সব সময় এটাই ভেবেছি।
I don't need a perfect one, I just need someone who can make me feel that i am the only one🖤🖤
আর আমি সেটাই পেয়েছি।ব্যাক্তিগত জীবনে আমি অনেক হ্যাপি।"