এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - সিজন ২
--বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধণ না থাকলে হয়তো আজ ও ভালবাসা কি সেটা অজানাই থেকে যেতো আমার।স্বামি এমন এক ভালবাসার নাম যাকে ঘিরে থাকে এক পৃথিবী সুখ। জীবনের সব পাওয়া না পাওয়া গুলো তার বুকে মাথা রেখে বলা যায়।মা বাবাকে যেটা শেয়ার করা না যায় তার কাছে যায়।স্বামির যদি মনের মতো হয় এই সুন্দর পৃথিবীতে হাজার বছর বেঁচে থাকার প্রার্থনা করতে মন চাই।ঘুম থেকে উঠেই মনে পড়লো তার কথা।ফোন হাতে নিয়ে দেখি চার বার কল দিয়েছিলো।তার একটা ফোন কল আমার মুখে হাসি ফুটাতে যথেষ্ট।সূর্য হেলে গিয়েছে পশ্চিমাকাশে বিছানা ছেড়ে চট করে উঠলাম।বিহান আসার সময় হয়ে গিয়েছে।আজ বিহান দুপুরে খেতে আসে নি।একবারে সন্ধ্যায় আসবে।ওড়না বিছানা থেকে নিয়ে বাইরে গেলাম।গোধুলি লগ্নে হেলে যাওয়া সূর্যের মিষ্টি কিরণে বেলকণিতে রাখা ক্যাকটাস আর কাঠগোলাপ গাছে পানি দিচ্ছি আর ভাবছি নিজ জীবনের ফেলে আসা দিন গুলোর কথা।বিহান আমাকে বলেছে এই গাছে পানি দেওয়ার মতো আমাদের দুজনের সম্পর্কের যত্ন নিতে হবে।দুজন কেই যত্ন নিতে হবে একজন কে নিলে হবে না।।সম্পর্ক নাকি মরে যায় সঠিক যত্নের অভাবে, দুজন দুজন কে বোঝার অভাবে।এই গাছে পানি দেওয়ার সময় বিহানের মুখ টা ভেষে ওঠে বারেবার।এরই মাঝে বিহানের কল ফোনের স্কিনে ভেষে ওঠা নাম্বার দেখে হেসে দিয়ে ফোন রিসিভ করলাম। ওপাস থেকে বিহান বললো, 'দুপুরে খেয়েছিলে দিয়া।ওটিতে ছিলাম তাই দুপুরে ফোন দিতে পারিনি আমি।' আমি হেসে বললাম, 'কখন আসবেন বাসায়।' 'কেনো আমাকে কি মিস করছো?' 'হুম ভীষণ মিস করছি।আজ একটু দ্রুত আসুন না।প্লিজ প্লিজ প্লিজ।বেশ আহলাদি সুরে বললাম।' 'বেশ আসবো তবে তুমি দুপুরে খাওনি কেনো সোনা।' 'খেয়েছি তো। কে বলে আমি খায় নি।' 'তোমার একমাত্র হাজবেন্ড এর সিক্সসেন্স বলছে সে আজ খায় নি দুপুরে।' এক হাত দিয়ে গাছে পানি দিচ্ছি অন্য হাত দিয়ে কানে ফোন ধরেই কথা বলছি। 'তাই তো কিভাবে মনে হলো জানতে পারি কি মিষ্টার।' 'জ্বী মিসেস।সকালে রুটি খেয়েছো।আমি বেরিয়ে এসছি কফি খেয়ে। বিভোর রিয়া আজ বাইরে ঘুরতে গিয়েছে।তাই তুমি একা একা রান্না করো নি।রিয়া বাসায় থাকলে একটা কথা ছিলো।যেহেতু কেউ বাসায় নেই তাই তুমি খাও নি। বিশেষ কারণ আমি ছাড়া খাবার খাও নি তুমি।আমাকে ছাড়া খাওয়ার অভ্যাস নেই তোমার।' 'এত কিছু বুঝেন কিভাবে?' 'বুঝতে হয় পুচকি।' 'ওকে তাহলে আসুন আমি রান্না করি।' 'নো! রান্না করা লাগবে না।তোমার ফেভারিট মোরগ পোলাও নিয়ে আসছি আমি।' বিহানের ফোন কেটে বেলকনি থেকে কাপড় গুলো তুলে এনে আয়রণ করে রেখে দিলাম।অপেক্ষা করছি বিহানের।মনে হচ্ছে কত কাল দেখা হয় নি আমাদের।বিহান আসার আগেই আলমারি থেকে একটা খয়েরী কালারের সিল্ক শাড়ি বের করে পরলাম।মাঝে মাঝে হুট করে সাজতে ইচ্ছা করে।তার মুখে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে কথাটা শোনার জন্য।পৃথিবীর সবার প্রশংসায় কিছুই যায় আসে না যেনো আমার।কলিং বেল বাজতেই ছুটে গেলাম গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি একহাতের কবজিতে বিহানের এপ্রোণ অপর হাতে একটা ব্যাগ।বিহান কে দেখেই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।বিহান বোধহয় বেশ অবাক হলো আমাকে এমন পাগলামো করতে দেখে।বিহান হাতের জিনিস রেখে আমাকে নিজের দুইহাতে পরম আদরে জড়িয়ে ধরলো।মিশে গেলাম ওর বুকের সাথে।মাথায় চুমু দিয়ে বললো,পাগলিটা। কিছুক্ষণ বিহান কে জড়িয়ে ধরে ওর বুকের সাথে মিশে রইলাম।বিহান আমাকে পাজা কোলে তুলে ঘরের ভেতরে নিয়ে এলো।গালে চুমু দিয়ে বললো,অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে শ্যামাপাখি। আমার হাতে ধরিয়ে দিলো এক গুচ্ছ লাল গোলাপ।প্লেট এনে প্যাকেট থেকে মোরগ পোলাও বের করে আমার গালে তুলে খাইয়ে দিলো। সময় এগিয়ে গেলো আরো ৬ মাস। রিয়া আর আমার ফার্স্ট ইয়ার শেষ হয়েছে ইতিমধ্যই।সব কিছুই নদীর স্রোতের মতো নির্দিষ্ট গতিতে বয়ে চলেছে।সকালে বিহান আমাকে আর রিয়াকে নিয়ে এসছে কলেজে।আমাদের ক্লাসে ছেড়ে বিহান ডিউটি তে গিয়েছে।শুনেছি আজ হসপিটালে দুজন ডাক্তার এর মাঝে ঝামেলা হয়েছে।কি নিয়ে সেটা জানিনা ডাক্তার এর ভুল ওষুধ এ সুস্থ রুগি নাকি মারা যাবার মতো হয়ে গিয়েছে।কি নিয়ে এই ঝামেলা জানিনা। বিহান বোধ হয় এইজন্য ই দেরি করছে।রিয়া আর আমি দুজনে ডিএমসি তে বসে আছি।বিহান ডিউটি শেষ করে আমাদের নিয়ে বাসায় ফিরবে তার জন্যই অপেক্ষা করছি।দীর্ঘদিন রিয়া বাড়িতে যায় নি আর যোগাযোগ ও করেনি।কাকু বাদে বাড়ির সবার সাথেই ফোনে কথা বলে।বিভোর ভাই ও রাগ করে কথা বলে না বাড়িতে।তবে বিভোর ভাই এর কষ্ট হচ্ছে একটু চলতে বোঝায় যাচ্ছে।ঢাকা শহরে ওয়াইফ নিয়ে থাকা মুখের কথা নয়।তার উপর রিয়া মেডিকেল পড়ছে।কাকু আবার বলে দিয়েছে রিয়ার ডাক্তারি পড়া হবে না, এই জিদের জন্য বিভোর ভাই আরো চিন্তিত।বিহান বিভোর ভাই কে বলেই দিয়েছে ডোন্ট ওরি বিভোর তুই আগের মতোই চলবি রিয়ার দায়িত্ব আমার।বিভোর ভাই এর একটু সম্মানে লাগছিলো পরে বিহান ভাই এমন ভাবে বললো বিভোর ভাই ক্ষমা চাইতে বাধ্য হলো।বিহান বলে দিয়েছে বিভোর আমি তো তোকে আপন ভাই ছাড়া ভাবিনি কোনদিন।কিন্তু তোর মনে এত দোষ ছিলো আগে বুঝিনি ভাই।ভাই এর টাকা ভাই নিবে এখানে আপত্তি কিসের।আজ থেকে ভাই এর পরিচয় দিতে পারবি না।আরো অনেক কথা বলে বিভোর ভাই কে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছে।আজ বাসায় বিভোর ভাই এর বাবা আর আম্মু আসছেন।বিভোর ভাই এর বিয়ের পরে আজ প্রথম আসছেন।তারা অনেক দিন আগে থেকেই রিয়ার সাথে ফোনে কথা বলে কিন্তু বিভোর ভাই কথা বলেন না।কবে মিটবে এই রাগ অভিমান।রিয়ার অনুভূতি খুব নারভাজ।রিয়া মুখ পেচার মতো করে বসে আছে।রিয়ার চোখ সোজা মাটিতে।কি ভাবছে সেটা জানিনা তবে গভীর কিছুই ভাবছে এটা সিওর।রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম, "কি ভাবছিস রে রিয়া।" "রিয়া মন খারাপ করে বললো বিভোরের মা বাবা আসছেন আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।আমি উনাদের সামনে মুখ দেখাবো কিভাবে।" "আমার মামা মামি গ্রেট বুঝলি রিয়া।তারা তো কবে থেকেই আসতে চাইছে শুধু বিভোর ভাই এর জন্য আসতে পারেনা।বিভোর ভাই মামার সাথে রাগ করে কথা বলে না।" "বিভোর টার সাথে পারা যায় না দিয়া।আমি অনেক বার বলেছি বাবার সাথে কথা বলো।বিভোর বলে বাবার জন্য পালাতে বাধ্য হয়েছি।বাবা আমাকে একটুও সাপোর্ট করেনি।" "বিভোর ভাই তো এমন ই। অভিমানি মানুষ। মামা বিভোর ভাই এর বন্ধুর মতো দেখিস আসলে কেমন বাচ্চাদের মতো করে।" "আরে আমি তো জানি।কিন্তু কত কি পালটে গেছে আমাদের বিয়েকে ঘিরে।কখনো কি ভেবেছিলাম বাবার বাড়ি ছাড়তে হবে।কিন্তু বাবা তার জন্মের ঋণ শোধ করতে বলেছিলো আমার ভালবাসার বিনিময়ে।আচ্ছা দিয়া তুই বল মা বাবার জন্মের ঋণ কোনো সন্তান কি শোধ করতে পারে।বাবা আমাকে মারতে মারতে বলেছিলো তাদের ঋণ শোধ করতে।তাও আমার ভালবাসার বলিদানের উপর।তাদের জন্মের ঋণ চাপিয়ে দিয়েছিলো আমার ভালবাসার উপর।জানিস দিয়া ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো সেদিন আমার।আমার বাবা বিভোর কে অনেক অপমান জনক কথা ও বলেছে।" "এখন ওসব ভেবে মন খারাপ করিস নাতো দিয়া।তোর বিহান কে ফোন কর।উনি কোথায় দেখ।নাহলে আমরা চলে যায়।" বিহানের এত লেট হচ্ছে কেনো আজ।সময়ের হেরফের করে না কখনো।কিছু কি হয়েছে নাকি।হঠাত বুক কেঁপে উঠলো আমার, কারণ আমার সামনে দিয়ে প্রেয়সী আপু হেঁটে গেলো।কি নিয়ে এত ঝামেলা হয়েছে জানিনা প্রেয়সী আপুকেও দেখা যাচ্ছে।এক ডাক্তার নাকি অন্য এক ডাক্তার এর গায়ে ও হাত তুলেছে।যাক বিহান আসলে শুনে নিবো কি হয়েছে।এরই মাঝে বিহান ও বেরোলো। কপালের ঘাম মুছতে মুছতে।বিহান কে ভীষণ ক্লান্ত লাগছে দেখতে।চোখ মুখ ভীষণ মলিন, দেখে মনে হচ্ছে মন খারাপ খুব আর বিরক্ত খুব।বিহান এসেই দ্রুত বললো, 'ক্লাস করেছো তোমরা চোখ ফোনের দিকে।বিহানের চোখে মুখে ক্লান্তিতে ভরা।অন্য মনস্ক, ভাবে আছে।ফোন স্ক্রল করছে আর মুখ দিয়ে উচ্চারণ করছে ওহ!শীট।' আমি একটু শান্ত গলায় বললাম, "হ্যাঁ বাট আপনার কি হয়েছে।" "নাথিং গাড়িতে ওঠো কুইক।' 'আগে বলুন কি হয়েছে।' উনি বিরক্ত হয়ে ফোন পকেটে রেখে বললেন, 'সব সময় জিদ করো কেনো?আমি বলেছি গাড়িতে উঠতে তাই ওঠো।সব সময় এত প্রশ্ন ভালো লাগে না।অনেক জোরে আর ধমকের সুরে বললো।' 'আপনি রেগে গেলেন কেনো?' 'তুমি কি সব সময় আমার রাগ টায় দেখো।আমি ভীষণ বিজি।কাকুরা এসে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ইমারজেন্সি রুগি আছে আমার। রাতে তার সার্জারী।' 'আপনার সাথে আমি যাবো না।' উনার কপাল জুড়ে ঘামের ফোটা।বিরক্ত আরো বেশী হয়ে বললেন, 'হোয়াট?তোমাকে কিছু না বলতে বলতে অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছো তুমি।দিন দিন সাহস অনেক বেড়েছে।যাবে না তো কি করবে এখানে থাকবে।' আমিও রেগে গিয়ে বললাম, 'আশ্চর্য এভাবে চিল্লাচ্ছেন কেনো?' 'ভালো কথা কি কানে যাচ্ছে তোমার।গাড়িতে যাও ফার্স্ট।' 'আমি যাবো না।' 'যেতে হবে না।থাকো এখানে।ভেবো না আবার সাধবো।রিয়া চলো।' রিয়া আমার হাত ধরে টানলো তারপর গিয়ে গাড়িতে উঠলো।রিয়া ভেবেছে আমি গিয়ে গাড়িতে উঠবো।

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

2025 © Golpo Hub. All rights reserved.