এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - সিজন ২
--আমাদের মুসলিমদের সব থেকে বড় আনন্দের উৎসব ঈদ।প্রতিটি মুসলমানের ঘরে ঈদ বয়ে আনে খুশি আর আনন্দ।ধনী গরীব সবার ঘরে আনন্দে উৎসব মেতে ওঠে।।এই দিন টা এমন একটা দিন মানুষ সমস্ত সুখ দুঃখ ভুলে হাসি আনন্দে মেতে ওঠে।সব রাগ অভিমান ভুলে একে অপর কে বুকে জড়িয়ে আপণ করে নিতে পারে।ঈদের চাঁদ দেখা থেকে শুরু করেই শুরু হয় ঈদ আনন্দ।টিভিতে গান চলে রমজানের ও রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।এই গান টার সাথে জড়িয়ে আছে রমজানের খুশি আর ঈদ আনন্দ।ছোট বড় সবাই গুন গুন করে গাইতে থাকে।ছোট বেলা চাঁদ দেখার বায়না করতাম।পা ছুড়াছুড়ি করে কাঁদতাম খুব চাঁদ দেখবো বলে।বিহান আমাকে কোলে করে উঁচু করে ধরে চাঁদ দেখাতো।আর আমাকে দিয়ে সারাদিনে অনেকবার সালাম করিয়ে ঈদ সেলামি দিতো।আসলে বিহান টা না কত বোকা বানিয়েছে আমাকে।কিছুই বুঝলাম না জীবনে কত বড় বুদ্ধু আমি।ঈদের সকালে বাবা-কাকা -ভাইয়াদের গোসল শেষে পাঞ্জাবী পরে সেমাই খেয়ে ঈদের নামাজ পড়তে যেতে দেখলে ভীষণ আনন্দ লাগে।সময়ের সাথে সাথে বয়স বেড়েছে আমাদের তবে আনন্দ কিছু কমে নি।আজ ও তার ব্যাতিক্রম কিছুই হয় নি। --আজ খুব ভোরে উঠেছি সবাই।সকাল সাড়ে সাতটায় ঈদের জামায়াত।ঘুম থেকে উঠে হাতে মেহেদির রং দেখে হেসে দিলাম বুঝতে পারলাম এটা আমার পাগল বর টার ই কাজ।সেমাই খেয়ে বিহান, মামা ঈদের নামাজে যাবে।আমি আর মামি মিলে দুই প্রকার সেমাই রান্না করলাম,নুডুলস সাথে সেমাই নুডুলস এর বিভিন্ন আইটেম বানালাম।ঘড়িতে সাতটা বাজে বিহান শাওয়ারে ঢুকে আমাকে ডাকছে।ওইদিকে মামা ও মামিকে ডাকছে।আমি এইবার নিজে পছন্দ করে বিহানের জন্য মেরুণ কালারের পাঞ্জাবী, পাজামা কিনেছি।বিহান শাওয়ার শেষে পাজামা, আর পাঞ্জাবী পরে দাঁড়িয়েছে আমার সামনে।বিহান কে দেখে ভীষণ মুগ্ধ আমি।একটা ছেলে ও তার সৌন্দর্য দিয়ে একটা মেয়েকে মুগ্ধ করতে বিহান ই তার প্রমান।আমার ঠোঁটে হাসি,আমার চোখে মুখে হাসি আমার মুখের পানে তাকিয়েই বিহান বুঝতে পারলো বিহান কে দেখে আমি কতটা মুগ্ধ।আমি এতটায় মুগ্ধ দুই ঠোঁটের মাঝে খানিক টা ফাঁকা হয়ে আছে হা করে তাকিয়ে আছি বিহানের দিকে। --বিহান আমায় ভ্রু নাচিয়ে বললো, "কি বউ ক্রাশ খেয়েছো নাকি তোমার বরকে দেখে।" "আমি ডান গালে হাত দিয়ে মাথা একটু কাত করে মাথা নাড়িয়ে বোঝালাম হুম।" "বিহান আমায় বললো,তাহলে আমাকে এইবার ঈদ বোনাস দাও বউ।" "একটা হাই তুলে বললাম,আপনাকে ঈদ বোনাস দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই।আপনি হলেন বড়লোক মানুষ। একটা পেশেন্ট দেখলেই কত টাকা ফি আপনার বাবা।ভাবলেই মনে হয় জীবনে আর ডাক্তার দেখাবো না।" "বিহান হেসে দিয়ে বললো,তোমার যা দেওয়ার ক্ষমতা আছে তা আর কারোর নেই বুঝেছো পাগলি।বিহান গাল এগিয়ে দিয়ে বললো নিড এ কিসসসসসসস দাও প্লিজ।কেউ চলে আসার আগে দাও।" "ওড়নার এক সাইড ঘুরাতে ঘুরাতে বললাম,নাগাল পাচ্ছি না আপনার মুখ।এত লম্বু ক্যানো হয়েছেন আপনি হুম।" "বিহান আবার ও হাসলো,হেসে বললো কাম ফার্স্ট সুইটহার্ট। আমার পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াও।ঈদের সকাল টা একটু স্পেশাল করে দাও।পুরা রমজান জুড়ে রোজা হালকা হওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছো।" "তাই বুঝি কাল রাতে এক মাসের বকেয়া আদায় করলেন।" এরই মাঝে মামি এলো।মামিকে দেখে বিহান দ্রুত চিরুনি মাথায় দেওয়ার ভান করলো।মামির হাতে সেমাই এর প্রিজ।মামিকে দেখে বিহান বললো, "ঈদ মোবারক আম্মু।" বলেই মামিকে সালাম করলো।মামি এক হাজার টাকা বিহানের হাতে ধরিয়ে দিলো।বিহান ও হাত পেতে নিলো আর বললো তুমি টাকা না দিলে আমার ঈদ আনন্দ মাটি হয়ে যায় আম্মু।এর ই মাঝে মামা ও পাঞ্জাবী পরে এলো। বিহান মামাকে বললো, "ঈদ মোবারক বাবা।" বলেই কোলাকুলি করলো।মামা ও একটা এক হাজার টাকার নোট দিলো বিহানের হাতে।আমি মামাকে বললাম তোমাদের ছেলে ইনকাম করে তাও অনেক টাকা ইনকাম করে।এখনো টাকা দেওয়া লাগে কেনো মামা।মামা হেসে বললেন,ও আমাদের ছেলে না সারাজীবন ছোট ই থাকবে।মামি বিহানের গালে সেমাই খাইয়ে দিচ্ছে।বিহান বাচ্চাদের মতো খাচ্ছে আর সেমাই এর টেস্ট উপভোগ করছে।মামি বিহানের গালে সেমাই দিতে দিতে বললো,দিয়া রান্না করেছে। ভালো হয়েছে না খেতে।বিহান আঙুল দিয়ে লাইক দেখিয়ে বললো,ইয়াম্মি সেই টেস্টি হয়েছে।আমাদের দিয়া তো বেশ ভালো রাঁধুনি হয়েছে।দিয়া তাহলে বড় হয়ে গিয়েছে আম্মু।মামি হাসছে। মামি আমাকেও এক হাজার টাকা দিলো ঈদ সেলামি।মামা ও ঈদ সেলামি দিলো। মামা মামি বেরিয়ে গেলে বিহান কে বললাম, ' ঈদ বোনাস দিন আমাকে।' বিহান ভ্রু কুচকে বললো, 'সেলামি দিবো সালাম করো আগে।' আমি বিহান কে সালাম করে বললাম, 'এইবার দেন সেলামি।' 'ওকে দিচ্ছি আগে আমাকে কিস দাও,আমার সেলামি আগে দাও।' পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে উঁচু হওয়ার চেষ্টা করতেই বিহান আমার কোমরে চেপে ধরে ওর পায়ের উপর আমাকে তুলে দাড় করিয়ে বললো এইবার দাও।ওভাবে আঙুল ভর দিলে কচি আঙুল ভেঙে যাবে।বিহানের গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে বললাম ঈদ মোবারক। বিহান ও আমার গালে চুমু দিয়ে দুষ্টুমির সাথে হাসছে।বিহান কে বললাম আমার সেলামি দিয়ে নামাজে যান।বিহান কপালের চামড়া ভাজ করে বললো,সেলামি তাহলে দিতেই হবে।আগে সেমাই খাইয়ে দাও।আম্মুর হাতে খেয়েছি এইবার তোমার হাতে খাবো।এই দুই নারী আমার জীবনের ভীষণ ইমপর্টেন্ট।বিহানের গালে সেমাই খাইয়ে দিলাম।বিহান ওয়ালেট খুলে দুই টাকার একটা নোট বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো এই নাও ঈদ সেলামি।দুই টাকা সিরিয়াসলি আমি ঠোঁট কামড়াচ্ছি আর বিহানের দিকে তাকিয়ে ভাবছি এটা কি উনার পক্ষেই সম্ভব।এত বড় মেয়েকে কেউ দুই টাকা দিতে পারে কিভাবে। 'বিহান ভ্রু উঁচিয়ে বললো,কি বেশী দিয়ে ফেলেছি নাকি।' 'অনিচ্ছাকৃত একটা হাসি দিয়ে বললাম,নাহ গো।নামাজে এবার দেরি হবে আপনার।' বিহান নামাজে গেলে আমি গোসল করে এসে বিহানের কেনা শাড়ি টা পরলাম।শাড়ী টা পরার সময় দেখি একটা চিরকুট লেখা।একটা হলুদ কাগজে লেখা, "প্রিয় বউ,তোমাকে না রাগালে মনে হয় যেনো মারাত্মক কোনো সুন্দর জিনিস মিস করে গিয়েছি।ড্রেসিন টেবিলের ড্রয়ার খুলে দেখো টাকা আছে এক বান্ডিল।তোমার মা বাবা ভাইয়া সবাইকে ঈদ বোনাস দিবে তুমি।বিয়ের পর দিতে হয় বুঝলে।পিচ্চি দের ও ঈদ সেলামি দিও।যাকে যা মন চাই দিও আর বাকিটা তুমি রেখো।" -- ড্রয়ার খুলে দেখি সত্যি টাকা রেখেছে।আমাকে দুই টাকা দিয়ে রাগানো হচ্ছিলো।সে কি জানে আমি দুই টাকা পেয়েই অনেক বেশী খুশি।কারণ তার ভালবাসা জড়িয়ে ছিলো টাকায়।ঈদের দুইদিন পরে মেহু আপু আর ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেলো।বিয়েতে অনেক ইনজয় করলাম কাজিনরা সবাই মিলে।আমরা আবার ঢাকায় ফিরে গেলাম।কেটে গেলো আরো কয়েক টা মাস। ইদানিং বুকে ভীষণ ব্যাথা করে।কি সমস্যা বুঝতে পারছি না। বুকের ব্যাথা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে।কি সমস্যা বুঝতে পারছি না।নিঃশ্বাস নিতেও ভীষণ কষ্ট হয়।চোখ মুখ কেমন যেনো শুকিয়ে যাচ্ছে।সব সময় মাথা ঘুরায়।বই নিয়ে পড়তে পারি না ঠিক ভাবে।বিহান আমার চোখ মুখের এমন পরিবর্তন দেখে বলেছে আজ ই আমার টেস্ট করাবে।ডিউটি তে যাওয়ার আগে বলে গিয়েছে আমি যেনো আজ ক্লাস করে ওকে ফোন করি।সব ধরনের টেস্ট করাবে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা?গতকাল রাতেই বিহান আমাকে জড়িয়ে ধরে ভীষণ পাগলামো করছিলো।আমার সামান্য কিছু বিহান এত দুঃচিন্তা করে কেনো?অসুস্থ আমি হই ব্যাথা যেনো বিহান পায়।বিহান কে এত দুঃচিন্তা করতে দেখে বললাম,আচ্ছা আমি যদি মরে যায় কি করবেন।আমার মুখে এমন কথা শুনে বিহানের শরীরে যেনো বিদ্যুৎ এর তরঙ্গের তুফান বয়ে গেলো।ভূমিকম্পণ শুরু হলো ওর ভেতরে।বিহান আচমকা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আমি হার্টের ডাক্তার তাই বলে কি আমি হার্টলেস দিয়া।চিন চিন ব্যাথা শুরু হয়েছে এমন কথা শুনে।রিকুয়েষ্ট করছি দিয়া আমার সামনে এমন কথা কখনো বলো না।তুমি শুধু আমার ভালবাসা তা নও তুমি আমার পুরা পৃথিবী। এমন কিছু বলোনা যা আমি ভাবতেও পারিনা।বিকজ তোমাকে ছাড়া আমি ভীষন অসহায়।বিহান ভীষণ মন খারাপ করে সারারাত ঘুমোতে পারলো না। সকালে বিহান ডিউটি তে গিয়েছে। বিভোর ভাই ব্যংকে গিয়েছে।রিয়া আর আমি কলেজের দিকে রওনা হলাম।রিয়াকে বললাম বই আনতে ভুলে গিয়েছি তুই যা আমি বই নিয়ে আসছি।রিয়া কলেজে চলে গেলো।আমি বাসায় এসে আবার বই নিয়ে ব্যাক করলাম।হঠাত যেনো কেমন সব কিছু ঝাঁপসা লাগছে।চোখের মাঝে সব অন্ধকার মনে হচ্ছে।মাথা ঘুরাচ্ছে ভীষণ ভাবে।রাস্তা ক্রস এর সময় গাড়ির সামনে পড়ে এক্সিডেন্ট হলো।মাথা ফেটে মাঝ রাস্তায় পড়ে গেলাম।রিয়া ক্লাসের মাঝে আমাকে বার বার ফোন দিয়েই যাচ্ছে আমার ফোন সাইলেন্ট করা আমাকে পাচ্ছে না।ওই দিকে ঢাকা মেডিকেলে গুরুতর আহত অবস্হায় ইমারজেন্সি ওয়ার্ড এ একজন পেশেন্ট।যাকে কেউ চিনেই না।অবস্হা ভয়াবহ খারাপ।অন্যদিকে বিহান হন্য হয়ে খুজে চলেছে আমায়।

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

2025 © Golpo Hub. All rights reserved.