এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - সিজন ২
বিহান আমার হাত শক্তভাবে চেপে ধরে চুমু দিয়ে বললো, 'আমি পরকাল এখনো দেখিনি,কতটা ভয়ানক হতে পারে সেটার অনুমান করতে পারি কিন্তু সেখানে কি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য সেটা জানিনা।আমি একটা জনম পেয়েছি আর আমি জানি এই জনম শেষ হলে একবার মৃত্যু হয়ে গেলে দ্বীতীয় কোনো জনম আর পাবো না।আমাদের জীবন ওয়ান টাইম অফারের মতো।একবার গেলে আর ফিরে আসবে না।যে কথা নাটকের পাতায় মানায় সেকথা জীবনের পাতায় মানায় না, যে এই জনমে না পেলে পরজনমে পাবো।মৃত্যুর পরে কেউ কি ফিরে এসে বলেছে সে পরজনম পেয়েছে।আমি পরকালে বিশ্বাসী কিন্তু পরজনমে বিশ্বাসী নই।তাই কাউকে ভালবাসলে এই জনমেই ভীষণ ভালবাসতে হবে।এই জনমেই কাছে রাখতে হবে,পরম মায়ায় আগলে।এই জনমের প্রতিটা সেকেন্ড এর মূল্যায়ন করতে হবে।যে সেকেন্ড টা সরে যাচ্ছে সেটা আমাদের জীবনের আয়ু থেকে কমে যাচ্ছে।জীবনের এই মূল্যবান সময় অহেতুক কারণে নষ্ট না করে নিজের একান্ত কাছের মানুষগুলোর জন্য ব্যয় করাটায় উত্তম। জীবন হোক মা -বাবা,স্ত্রী সন্তানের জন্য।এই জনমেই একটা মানুষকে ভীষণ ভালবেসে ভালবাসার পবিত্রতা রক্ষা করা উচিত।দিন শেষে ভীষণ মানসিক শান্তি মিলবে।মানুষ আমাকে নিয়ে কি ভাববে সেটা ফ্যাক্ট নয়,আমি যদি একাধিক মানুষের সাথে নিজের জীবন জড়িয়ে মানুষ কে ঠকায় এতে মানুষের নিন্দার থেকে আমার বিবেক আমাকে বেশী ধীক্কার জানাবে।আমার বিবেক আমার মানসিক শান্তি কেড়ে নিবে।গভীর রাতের নিস্তব্ধতা আমাকে বারবার মনে করাবে আমি কতটা নিকৃষ্ট কাজ করেছি,হাজার সুখ -শান্তি থাকা সত্ত্বেও মানসিক অশান্তি সব শান্তি কেড়ে নিবে।তাই ভালবাসা হোক পবিত্রতার,প্রেম হোক পবিত্রতার।বারবার বিভিন্ন মানুষের ভালবাসাটা কোনো গর্বের কথা নয়,একজনকে শতভাবে ভালবাসা টায় হলো ভালবাসা।তুমি কি জানো শ্যামাপাখি একটা মানুষের প্রেমে জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়াটায় স্বার্থক প্রেমের লক্ষণ।আমার এই জীবনে আমি স্বার্থক।' বিহানের মুখের কথা গুলো যেনো পবিত্র ভালবাসার বার্তা।এমন মানুষ ছাড়া কিভাবে থাকবো আমি।বিহান কে বললাম, 'আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবেন প্লিজ।' বিহান আমার দিকে ঝুঁকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিলো। আমি বিহানের বুকে মুখ গুজে বললাম, 'আমি অনেক জালিয়েছি তোমায় বিহান।আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আমি তোমাকে ভীষণ ভালবাসি বিহান।আমি জীবন হোক আর মৃত্যু তোমায় ছাড়া থাকতে পারবো না।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার।আই লাভ ইউ বিহান।' 'বিহান আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,আমি সাকসেস হবো দিয়া।তোমার কিছুই হবে না।আজ আমি সাকসেস না হলে এটাই আমার শেষ সার্জারী হবে।' বিহান কখন স্যালাইন এর মাঝে অজ্ঞান এর ইনজেকশন মিশিয়ে দিলো জানিনা।আর কিছুই মনে নেই আমার।ধীরে ধীরে বিহানের মুখটা ঘোলাটে হতে লাগলো।আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে গেলাম আমি। --হঠাত মনে হলো আমি পাহাড় থেকে পড়ে যাচ্ছি।বিহানের থেকে আমার হাত ছুটে গিয়েছে।উঁচু পাহাড় থেকে পড়ে যেতেই চিৎকার দিয়ে উঠলাম বিহান বাঁচাও আমায়।ঠিক তখন ই ছুটে যাওয়া হাত খুজে পেলো আশ্রয়স্হল।আমি বিহান আমার হাত শক্তভাবে চেপে ধরে বললো দিয়া। চোখ খুলে দেখলাম আইসিইউ এর মাঝে আমি।তখন বুঝলাম আমার জ্ঞান ফিরে এসছে।জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম আমার হাত ধরে বসে কাঁদছে বিহান।দু'চোখ রক্ত জবার ন্যায় ফুলে আছে।আমার আঙুল যখন রেসপন্স করছিলো বিহান আমার কপালে চুমু দিয়ে বললো, দিয়া ঠিক আছো তুমি।বিহান বাচ্চাদের মতো আরো জোরে হুহু করে কেঁদে দিলো।আমার হাত জড়সড় ভাবে ধরে চুমু দিচ্ছিলো।বিহান কেমন পাগলামো করছে।আমি চোখ খুলেই বললাম, "আমার কি সার্জারী হয়ে গিয়েছে?" "থ্যাংক্স আল্লাহ তুমি আমার দিয়াকে সুস্থ করে দিয়েছো।" যখন দেখলাম হাত পা নাড়াতে পারছি না তখন বুঝলাম আমার সাজারী শেষ হয়েছে।বিহান কে বললাম, "আমার বেবি কোথায় বিহান।" বিহান আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো, "তুমি ঠিক আছো দিয়া। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো জানো।আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম।তুমি কোনো রেসপন্স করছিলে না।এত দেরি করলে কেনো রেসপন্স করতে।আমার মাথা কাজ করছিলো না।কতবার আল্লাহ কে ডেকেছি জানো।" "আমাদের সন্তান ও ঠিক আছে বিহান।" বিহান হেসে বললো," ও ঠিক আছে পিচ্চি।" বিহান মামিকে ডাকলো. "আম্মু।ভেতরে এসো।" মামির কোলে সাদা টাওয়ালে প্যাচানো র* ক্তের দলার মতো উড়ামুড়া করছে মাথাভর্তি চুল আমাদের সন্তানের।মেয়ে হয়েছে আমাদের।দেখেই হেসে দিলাম আমি।আমার কষ্টের প্রাপ্তি আমার সামনে ছিলো।মামি আমার পাশে সুইয়ে দিলো।আমি নড়তে পারছিলাম না।কাটা জায়গার ক্ষত কাঁচা ছিলো।মামি আর আম্মু দুজনে আমার মেয়েকে খাওয়ার জন্য হেল্প করছিলো।সব কষ্ট ওর মুখ দেখতেই বিলীন হয়ে গেলো।সুস্থ হওয়ার পর্যন্ত হসপিটালে ই থাকলাম।বিহান সারাক্ষণ মেয়ে আর আমি নিয়েই পড়ে থাকে।একবার আম্মু ঢাকায় আসে,আম্মু গেলে মামি আসে।মেয়ের বয়স দুই মাস নিয়ে ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা দিলাম।বিহান মেয়ে কোলে নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করে আর আমি পরীক্ষা দেওয়ার ফাঁকে এসে মেয়েকে খাইয়ে যায়।পাশ ও করলাম।রিয়া আর আমার ইনটার্ণশীপ ও শেষ হলো।দুজনেই বড় ডাক্তার হলাম।একই হসপিটালে এখন রিয়া আমি বিহান জব করি।বিহান মেয়ের নাম সকাল রাখলো। --পড়ন্ত বিকাল গোধুলী লগ্ন।রিয়া আর বিভোর ভাই এর কোলে সকাল।ওরা সকাল কে উচুতে তুলছে আর নামাচ্ছে।আর সকাল খিলখিলিয়ে হাসছে।আমি আর বিহান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছি আর ওদের দুষ্টুমি দেখছি।রিয়া দু'মাসের প্রেগন্যান্ট। রিয়া আর বিভোর ভাই এর কোল জুড়ে সন্তান আসবে ভেবেই ভাল লাগছে।রিয়া প্রমাণ করে দিলো ভালবাসার কাছে যোগ্যতা কোনো ব্যাপার নয়।দুজন মানুষের মনের মিল থাকলে টাকা পয়সা,যোগ্যতা, চেহারা কিছুই ম্যাটার করে না।বিহান নিজের কফি রেখে আমার কফি খাওয়া শুরু করলো।ভ্রু নাচিয়ে বললাম,কাহিনী কী?সে উত্তর দিলো এক সাথে খেলে ভালবাসা বাড়ে। --এরই মাঝে কলিং বেল চাপছে কেউ।খুশি খালাকে বললাম দরজা খুলে দিতে।খুশি খালা কে নড়াইল থেকে নিয়ে এসছি।খালা দরজা খুলতেই আয়রা ছুটে এলো।দিয়াপু পুচকে কোথায়? --আয়রা কে দেখে আমি ভীষণ অবাক হলাম।বিহান বললো,আয়রা তুমি?কার সাথে এলে। --আব্বুর সাথে। --কাকু এসছে? ----হ্যাঁ আমি আর বিহান দুজন দুজনের দিকে তাকালাম। আয়রা ছুটে গিয়ে সকাল কে কোলে নিলো। কাকু ভেতরে প্রবেশ করলো।বিহানের কাছে হাত জোর করে মাফ চাইলো।বিভোর ভাই কে বললো,বাবা বিভোর আমাকে মাফ করে দাও।আমি ভুল করেছিলাম।আসলে যোগ্যতা দিয়ে কিছুই হয়না।ভালো মানুষ ই আসল। মানুষের মন ই আসল।আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম।রিয়ার হাত ধরে ও কাঁদলো কাকু। রিয়া আর বিভোর ভাই ভীষণ লজ্জিত হলো। রিয়া কাঁদতে কাঁদতে বললো,সরি বাবা, আমাকে ক্ষমা করে দাও তুমি।কাকুর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলো রিয়া আর বিভোর ভাই।কাকু ওদের বুকে টেনে নিলো।ঠিক এই দিনটার অপেক্ষা করছিলাম কতদিন।

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

2025 © Golpo Hub. All rights reserved.