এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা

“বিহান ভাই আমার শাড়ি টা পরা শেষ হলে ভেতরে আসুন প্লিজ পাত্র পক্ষ এক্ষুণি চলে আসবে।”
“পাত্র পক্ষ আসবে তাতে তোর সমস্যা টা কি বুঝলাম না দিয়া।পাত্র পক্ষ কি তোকে দেখতে আসছে নাকি বিভা আপুকে।তোর যে এক্সসাইটেডভাব যেনো তোকে দেখতেই আসছে।”
বিহান ভাই যে এমন কথাই বলবেন সেটা আমার জানাই ছিলো আগে থেকে।
উনার গা জ্বলা কথা শুনে মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো।রাগ কন্ট্রোল করে বললাম দেখুন মামি আমাকে শাড়ি পরতে বলেছে তাই আমি শাড়ি পরছি।
আমার কথায় বিহান ভাইয়ের মাঝে কোনো হেলদোল প্রকাশ পেলো না।আমার কথা যেনো উনার গায়ে লাগলোই না।গায়ের ব্লু কালারের শার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে বললেন দেখ দিয়া মাত্র জার্নি করে এসছি সেই ঢাকা থেকে। এক টানা ৮ ঘন্টা জার্নি মারাত্মক ক্লান্ত আমি।আই নিড রেস্ট।সারারাত ঘুম হয় নি।এখন আমাকে ঘুমোতে হবে।সো তোর এসব পেত্নি সাজা দেখার সময় নেই আমার।বলেই শার্ট টা খুলে পায়ের জুতো খুলে মাথার কাছে বড় স্ট্যান্ড ফ্যান চালিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন।
নিজেকে এখন আস্ত একটা বলদ মনে হচ্ছে।ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে দাঁড়িয়ে আছি রুমের মাঝে গায়ে কোনো মতে শাড়ি পেঁচানো এখন শড়িটা ঠিক না করে বাইরে ও যাওয়া যাচ্ছে না।কারণ বাইরে অনেক মানুষ এই একটা মাত্র রুম ফাঁকা ছিলো আর এখানে এসেই বিপদ।
আসহায় দৃষ্টি নিয়ে বিহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,, বিহান ভাই প্লিজ পাঁচ মিনিটের জন্য বাইরে যান না আমি শাড়িটা পরেই চলে যাবো।না হলে এভাবে কিভাবে বাইরে যাবো।
চোখ বন্ধ করে আছেন বিহান ভাই ক্লান্তিতে কপালে হাত দিয়ে আছেন।চোখ বন্ধ করেই বললেন তোকে কি আমি শাড়ি পরতে আটকাচ্ছি বুঝলাম না।আর এটা তোর বাপের রুম না। এটা আমার বাপের তৈরি করা বাড়ির আমার জন্য বরাদ্দ করা রুম।তাছাড়া তোর সাহস হলো কিভাবে আমার রুমে এসে আমাকে রুম থেকে বেরোতে বলার।আমি এখন মারাত্মক ক্লান্ত। যদি আর একবার ডেকেছিস সব খুলে এক পায়ে কান ধরিয়ে রুমের মাঝে দাঁড় করিয়ে রাখবো।
উনার কথা শুনেই বুক কেঁপে উঠলো এই মানুষের দ্বারা সব ই সম্ভব।যা বললেন তা করে বসলে মান ইজ্জত এর ফালুদা হয়ে যাবে।রাগের বসে কি করেন বলা যায় না।
অসহায় কন্ঠে আবার ও বললাম আমি আপনার সামনে শাড়ি পরবো না।
বিহান ভাই এবার ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন তোর কি আমাকে চরিত্রহীন মনে হয়।ইউ মিন তুই শাড়ি পরবি আর আমি হা করে তাকিয়ে দেখবো।এসবে আমার এক বিন্দু ইন্টারেস্ট নেই ইউ নো ভেরি ওয়েল দিয়া।আমাকে চরিত্রহীন প্রমান করার জন্য আমার রুমে এসছিস তাইনা।
কাজুবাজু মুখ নিয়ে বললাম,দেখুন আমি ওভাবে বলি নি আমার লজ্জা লাগছে আপনার সামনে শাড়ি পরতে।
ছোট বেলায় যে খালি গায়ে আমার ঘাড়ে চড়তি, ঠাস ঠাস করে গলা জড়িয়ে ধরে চুমু দিতি তখন লজ্জা লাগতো না।আমার কাছে সব প্রমাণ আছে বুঝলি।পেন ড্রাইভে সব রেখে দিয়েছি।এখন এসছেন আমার লজ্জাবতী।কানের কাছে কাউয়ার বাচ্চার মতো কা কা করিস না। যা ওয়াশ রুমে যা। খবর দার ওয়াশ রুম নোংরা করবি না।তাহলে খবর আছে।
উনি আমাকে কাউয়ার বাচ্চা বললেন আমি কাকা করছি।যেহেতু এটা উনার রুম তাই এখন উনাকে কিছুই বলা যাবে না।ওয়াশ রুমে গিয়ে শাড়িটা পরে নিলাম।শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে বাইরে বেরোলাম।বেরিয়েই পরাণ চমকে গেলো আমার সামনে ছয় ফিট হাইটের সুন্দর ফর্সা বিহান ভাই দাঁড়িয়ে রয়েছেন।গায়ে সাদা সেন্ডো গেঞ্জি, পরনে অফ হোয়াইট জিন্স।জিন্সের দুই পকেটে দুই হাত গুজে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।উনার চোখ দুটো নির্বিকার গম্ভীর চাহনিতে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।কি করেছি কি আমি।ওয়াশ রুমে গিয়ে তো এক্টা সাউন্ড ও করি নি।ভয় ভয় মন নিয়ে বললাম কি হয়েছে বিহান ভাই।বিহান ভাই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন,ব্লাউজের বোতাম পাঁচ টা একটা খুলে রেখে ফর্সা পেট বের করে রেখেছিস কেনো?পেটের তিল টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।এটা কি শাড়ি নাকি মশারী যা পরেছিস শরীরের গড়ন সব ই বোঝা যাচ্ছে।
বিহান ভাই এর কথা শুনে চোখ কপালে উঠলো আমার।বলেন কি উনি।আমার ব্লাউজের কয়টা বোতাম সেটাও দেখা যাচ্ছে।লজ্জায় মনে হচ্ছে এক্ষুনি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে যাবো।বিহান ভাই শাড়ির আরেক ভাজ বুকের উপর দিয়ে একটা সেপ্টিন লাগিয়ে দিলেন।আর বললেন উল্টা দিকে ঘুরে বোতাম লাগিয়ে নে।আর ওয়াশ রুমের দরজা খুলেই যদি রাখবি ওয়াশ রুমে যাওয়ার কি প্রয়োজন ছিলো।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম তার মানে আপনি?
হ্যাঁ তার মানে আমি এদিকে ঘুরে সুয়েছিলাম তখন ওয়াশ রুমের খোলা দরজার দিকে নজর গেলো।কি আর করা।
আমি লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। এমন বিশ্রি লজ্জায় পড়বো ভাবতেও পারিনি।বোতাম টা লাগিয়ে বাইরে যেতে গেলাম।সাথে সাথে বিহান ভাই আমাকে বলেন শোন তোর এই শাড়ির চক্করে আমার ঘুমের ডিস্টার্ব হয়েছে।আমি যত সময় ঘুমোবো ওই সোফাতে বসে থাকবি।বাইরে পাত্র পক্ষের সাথে একটা ছেলে এসছে এই পাতলা শাড়ি পরে তোর ওখানে যাওয়া চলবে না মানে না।আর গেলে বুঝতেই পারছিস, চুপচাপ বসে থাক।এটা তোর জন্য শাস্তি।সোফায় বসে কোনো সাউন্ড করবি না আমার ঘুমের যেনো ডিস্টার্ব না হয়।
এদিকে বিহান ভাই কে ডিস্টার্ব করতে বাড়ির কেউ আসবে না।তাই আমাকেও আর খুজে কেউ পাবে না।ওই দিকে পাত্র পক্ষ এসে চলেও গিয়েছে বিয়ে ও ঠিক হয়ে গিয়েছে। আমি সোফাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল করিনি।বাড়ির সবাই যখন জানলো আমি বিহান ভাই এর রুমে সোফাতে ঘুমিয়ে গেছিলাম তখন সবাই আমাকে পিচ্চ উপাধি দিয়ে দিলো।আসল কারণ টা অজানাই থেকে গেলো সবার।
মামি বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমাকে যেতে দিবে না।মামির জোরাজুরিতে থেকে গেলাম।এদিকে ব্রাশ ও আনা হয় নি।মামি আমাকে বললো বিহান এক সাথে দুইটা ব্রাশ এনেছে তুই একটা নিয়ে নে।বিহান ভাই ব্রাশে কি এক্টা চিহ্ন দিয়ে বলেন এটা তোর নে।
পরের দিন ঘুম থেকে উঠেই শুরু হলো আরেক অশান্তি।
আমার ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করেছিস কেনো দাঁতে দাঁত চেপে বললেন বিহান ভাই।চোখে মুখে উনার ভয়ানক রাগ আর বিরক্তি।উনার জিনিস কেউ স্পর্শ করলে তিল থেকে তাল বানিয়ে একাকার করে ফেলেন।কথা টা শুনেই ভয়ে আমার পিলে চমকে উঠলো উনি কি আমাকে বকা ঝকা দেওয়ার কোনো নতুন সিস্টেম খুজে বের করলেন নাকি।
আমি কাজুবাজু মুখ নিয়ে বললাম আপনার ব্রাশ হতে যাবে কেনো বিহান ভাই এটা আমার ব্রাশ।
বিহান ভাই আমার দিকে বিরক্তির সাথে তাকিয়ে রইলেন,বিরক্তির জন্য তার কপালে কয়েক টা ভাজ পড়ে গিয়েছে।গম্ভীর মুডে বললেন রাবিশ ভালো ভাবে দেখ এটা আমার ব্রাশ।
আমি খেয়াল করে দেখি আসলেই তো বিহান ভাই এর ব্রাশ।কিন্তু এই মুহুর্তে রক্ষা পাওয়া যাবে কিভাবে।বিহান ভাই এখন আমাকে কেটে কুচি কুচি করে কেটে বস্তায় ভরে নদীতে ভাষিয়ে দিবেন।দোতলা থেকে নিচে তাকিয়ে দেখি কত টা দূরত্ত্ব। এখান থেকে পড়লে বাঁচবো নাকি মরবো সেটাই তো বুঝতে পারছি না।কিছু একটা ভেবে বললাম ।সেইম কালারের ব্রাশ কিনেছিলেন কি জন্য শুনি।ইয়াক আমার বমি পাচ্ছে এখন আমি আপনার ব্রাশ দিয়ে ইহ জিন্দেগীতে আমি আর খাবার খেতে পারবো না ঘেন্নায়।আমার ভাবতেই গা গোলাচ্ছে আমি কারো ব্রাশ দিয়ে ব্রাশ করেছি।
আমার মুখে এমন কথা শুনে সাজ সকালে উনার মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো।কিছুক্ষণ দম নিয়ে বললেন এক্সকিউজ মি!আমার গালে কি গন্ধ আছে নাকি।ইহ জীবনে ব্রাশ না করলেও সমস্যা নেই।নিজেকে লাকি ভাব যে আমার ব্রাশ ইউজ করার চান্স পেয়েছিস।আমি কি তোর মতো মহা পিশাচ মহিলা।তুই তো আস্ত পিশাচিনী।জীবনে দাঁত ঠিক ভাবে ব্রাশ করিস না।আজ ফ্রি তে ব্রাশ পেয়ে ব্রাশ করেছিস তাইনা।আর ব্রাশে চিহ্ন দিয়ে রেখেছিলাম তবুও ভুল হলো কিভাবে শুনি।
উনার এই বিশ্রি কথা গুলো শুনে নিজের রাগ কন্ট্রোল এর শক্তি হারিয়ে ফেললাম।রাগে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছি।নাক মুখ ফুলিয়ে বললাম আপনার কি মনে হয় আমি ব্রাশ করি না।আর আমি পিশাচ, ফ্রি ব্রাশ পেয়েছি।আপনার মতো ইন্টারন্যাশনাল কৃপন এই বাংলাদেশে নেই।ইসসস এতটুক চিহ্ন বোঝা যায় নাকি।কিপ্টামির জন্য একটু বড় সড় চিহ্ন দিতে পারেন নি তাইনা।
ওহ আচ্ছা তোর যে চোখের সমস্যা আছে সেটা আগে বলবি তো।এখন দেখছি তোর জন্য কার্ডিওলজি ছেড়ে আই নিয়ে পড়তে হবে।আমাকে আই বিশেষজ্ঞ হতে হবে শুধুমাত্র তোর চোখের সমস্যার সমাধানের জন্য।
কিসের হার্ট নিয়ে পড়াশুনা করেন আপনি যেখানে মানুষের হার্ট ই বুঝেন না।আর আমার জন্য আপনার হার্ট নিয়ে গভেষণা করা লাগবে না।হার্টের ডাক্তার হয়ে কারো হার্ট ঠিক করতে পারছেন না আবার চোখের ডাক্তার হওয়ার শখ।আপনি চোখের ডাক্তার হলে ঘরে ঘরে একজন করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পাওয়া যাবে।কারণ আপনার এই রাগান্বিত দৃষ্টি যখন একজন প্রেসেন্ট দেখবে সাথে সাথে তার চোখ নষ্ট হবে।
এমন সময় মামি আর বিভোর ভাই হাজির।আমাদের ঝগড়া আটকানোর জন্য।
————————————————-
আমার নাম দিহান দিয়া এইবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি।বিহান নামক হিংস্র প্রাণিটি আমার মামাতো ভাই।মামাতো বোনের বিয়েতে মামা বাড়িতে এসেছি।আমার দুই মামা। বড় মামার ছেলে বিভোর আর মেয়ে বিভা।ছোট মামার ছেলে বিহান ভাই।ছোট মামার আমার বয়সী একটা মেয়ে ছিলো যখন পাঁচ বছর বয়স পানিতে পড়ে মারা যায়।মামির জরায়ু ক্যান্সারের জন্য আর সন্তান হয় নি।বড় মামার নাম হাসিবুল ইসলাম,ছোট মামার নাম আরিফুল ইসলাম।ছোট মামির আমার বয়সী মেয়ে পানিতে পড়ে মারা যাওয়ার জন্য আমাকে সেই ছোট বেলা থেকে মেয়ে দাবী করে।আম্মু দুই মামার একমাত্র বোন।বাবার সাথে রিলেশন করে বিয়ে হয়।মামাদের পাশের বাড়িতেই আম্মুর বিয়ে হয়।মামারা অনেক বড়লোক আর আমার আব্বুর ফ্যামিলি মধ্যবিত্ত।নড়াইলের ছোট্ট শহরে আমার বেড়ে ওঠা।আম্মুর দুই সন্তানের মাঝে কনিষ্টতম সন্তান আমি।আমার বড় আমার ভাইয়া আবির।
ছোট বেলা থেকেই বিহান ভাই এর শাষনে বড় হয়েছি।শুধু আমি না কাজিন গুষ্টির প্রত্যকেই বিহান ভাই কে ভয় পাই।বিহান ভাই ভীষণ পড়াকু ছেলে আর এদিকে আমরা আড্ডা দিতে ভালবাসি।মনুষ্য জগতের বাইরের কোনো ধাতু দিয়ে তৈরি উনি।এবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষে উনি।বই এর মাঝে জীবন মরন উনার।
————————————————
এত সময় উনার সাথে ব্রাশ নিয়ে আমার ঝগড়ার সমাধান করতে এগিয়ে এলেন মামি আর বিভোর ভাই।আমি মামি কে দেখেই বললাম মামি আমি এইজন্য বলেছিলাম বিয়ের দিন আসবো খেয়ে চলে যাবো। আগে থেকে আসবো না।ব্রাশ টা তুমি আমাকে দিলে আর সেটা নিয়ে আমাকে কি পরিমাণ বাজে কথা শোনালো তোমার ছেলে।
মামির আমার প্রতি স্নেহ বরাবর ই বেশী তাই মামি বিহান ভাই কে বললেন বিহান আমি দিয়াকে বলেছিলাম যে তুই এক সাথে দুইটা ব্রাশ এনেছিস দিয়া যেনো একটা নেই।কারন ও ব্রাশ আনতে ভুলে গিয়েছে।
আম্মু ও এমন গভেট সেটা আগে থেকেই জানতাম। আমি গতকাল ই ব্রাশে চিহ্ন দিয়ে দিয়েছি ওই ষ্টুপিড টা তাও ভুল করেছে।ব্রাশের মতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আনতে যে ভুলে যায় বোঝো তাহলে তার মন কেমন।দিয়াকে বিয়ে দিলে তো জামাই সাথে নিতে ভুলে যাবে আম্মু।
বিভোর ভাই বলেন,, দেখ বিহান সামান্য ব্রাশ নিয়ে আমাদের দিয়া কে আর কিছুই বলবি না।ব্রাশ তোকে আমি কিনে এনে দিচ্ছি।চল তো বোন।

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

Useful links

2024 © Golpo Hub. All rights reserved.