এক সমুদ্র প্রেম

পুষ্পর একটি চি*ন্তাযুক্ত সকাল আজ। মিনা বেগম প্রত্যেক দিন নামাজ পড়তে উঠে দুই মেয়ের দরজা ধা*ক্কান,নামাজের জন্যে ডাকেন। পিউ ম*রার মত ঘুমায়। টের পায়না প্রায়সই। ডাক কানে গেলে উঠে যায় অবশ্য। কিন্তু এদিক থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে পুষ্প। ধা*ক্কাতে ধা*ক্কাতে হাত খুলে গেলেও সে ওঠেনা। মোড়ামুড়ি করে। নানা রকম ভ*য়ড*র দিয়ে তুলতে হয়। অথচ আজ ভোর পাঁচটায় উঠে বসে আছে সে। ফজরের নামাজ আদায় শেষ। মনপ্রান দিয়ে আল্লাহ আল্লাহ করছে প্রান বাঁচানোর জন্যে। এরপর ঘরময় পায়চারি করল কিছুক্ষন। শেষ রাতে শীতের প্রকোপ বাড়ে। কনকনে ঠান্ডায় পুষ্পর দাঁত কপাটি বা*রি খাচ্ছে বারবার। দুশ্চিন্তায় হাবুডু*বু খেয়ে সে আর বেশিক্ষন বসে থাকতে পারল না। বিপদে একটু সাহারা পেতে চলল পিউয়ের ঘরের দিক। ওর ঘুম হা*রাম যখন,ওটাকেও আর ঘুমোতে দেবেনা।
পুষ্প তৈরি ছিল,পিউয়ের দরজায় জোড়াল করাঘাতের জন্যে। এই শীতে নিশ্চয়ই ও নামাজে ওঠেনি। তার মতোই ফাঁকিবাজ কী না! অথচ দরজায় হাত দিয়ে দেখল আগে থেকেই খুলে রাখা।
পুষ্প অবাক হলো। কৌতুহলি হয়ে ভেতরে উঁকি দিতেই বিস্ময় আরেকদফা বাড়ে। পিউ বিছানায় আধশোয়া হয়ে ফোন টিপছে। পুষ্প দেয়াল ঘড়ির দিক তাকাল। সাড়ে ছটা বাজে কেবল। বিস্মায়াবিষ্ট হয়ে বলল,
” তুই এত সকালে উঠেছিস?”
আচমকা কথা বলায় পিউ চমকে উঠল। আত*ঙ্কিত হয়ে তাকাল। পুষ্পকে দেখে বুকে থুথু ছিটিয়ে, ভ্রুঁ গুটিয়ে বলল,
” এভাবে হঠাৎ করে কথা বলে কেউ? ”
পুষ্প ভেতরে ঢুকে চাপানো দোর ফের চা*পিয়ে দিল। এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
” নামাজ পড়েছিস?”
পিউ ছোট করে বলল, ‘ হু।’
পুষ্প ভ্রুঁ উঁচায় ” বাবাহ! এত ভদ্র কবে হলি?”
” আমি তোর থেকে বেশি উঠি। নিজে পড়িস না,তাই জানিস না। তা তুই আজ কী করে উঠলি?”
পুষ্প ঠোঁট উলটে বলল,” আমার টেনশনে ঘুম ভে*ঙে গেছে। স্বপ্নেও দেখছি ধূসর ভাই আমায় মা*রছেন। আম্মু খুন্তি নিয়ে পেছনে ছুটছেন। আর আব্বু বঁ*কে ঝকে বিয়ে ঠিক করেছেন। ”
পিউ বিজ্ঞের মত ঘাড় দুলিয়ে বলল ” ১০০% নিশয়তা আছে স্বপ্ন সত্যি হওয়ার।”
পুষ্প চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পরল বিছানায়৷ দুদিকে দুহাত মেলে দিয়ে হাহা*কার করে বলল,
” আমি ম*রে যাব রে পিউ। ভাইয়া যদি ভার্সিটিতে বসেই থা*প্পড় টা*প্পড় মে*রে বসেন,আমার প্রেস্টিজ ওখানেই ই*ন্তেকাল করবে।”
পিউ কিছু বলল না। ভাবতে বসল সমস্যার সমাধান। পুষ্প হঠাৎই উঠে বসল। আবদার করল,
” আমার সঙ্গে যাবি পিউ? তুই গেলে একটু ভরসা পেতাম।”
পিউয়ের কথাটুকুন পছন্দ হয়। ধূসরের সঙ্গে একটু বাড়তি সময় কাটাবে, সাথে পুষ্পর ও সুবিধে হবে। অর্থাৎ এক ঢিলে দুই পাখি মা*রার অনবদ্য উপায় পেয়ে পিউয়ের মুখ ঝলকে ওঠে। নিমিষেই জবাব দিল,
” যাব।”
পরমুহূর্তে চি*ন্তিত হয়ে বলল ” কিন্তু ধূসর ভাই কি নেবেন সাথে?”
পুষ্প ক্ষনকাল চুপ থেকে বলল,
” তুই ভালো করে বললে নিতে পারে।
পিউয়ের ভাবনা গেলনা। সে ভালো করে বললে কী,পা ধরে ঝুলে পরলেও কাজ হয়? ওই লোক এত ভালো না কি!
পুষ্প বলল,
” কিন্তু তোর কলেজ?”
পিউ আবার ভাবতে বসল। ভেবে ভেবে বুদ্ধি বের করে বলল
” তুইতো দুপুরের দিকে যাবি। আমি হাফ টাইমে চলে আসব ছুটি চেয়ে। ”
পুষ্প দ্বিধান্বিত হয়ে বলল ” যদি ছুটি না দেয়!”
পিউ ততটাই নিশ্চিন্ত উত্তর দিল ” আরে দেবে দেবে।”
পুষ্প মাথা দুলিয়ে বলল, “আচ্ছা, এখন যাই তাহলে। একটু ঘুমিয়ে নেই।”
” যা।”
পুষ্প উঠে দরজা অবধি গিয়ে দাঁড়িয়ে পরল। কী মনে করে ঘুরে তাকিয়ে বলল
” একটা কথা বলতো! ”
পিউ ফোন থেকে চোখ তুলে বলল,
” কী কথা?”
পুষ্প বুকের সাথে দুহাত বেঁ*ধে দাঁড়াল। চোখ সরু করে বলল,
” এমনিতে তো ডাকলেও উঠিস না,আজ কী ভেবে চৈতন্য হলো?”
পিউ মিটিমিটি হেসে বলল,
” আমায় নিয়ে তদন্ত না করে নিজেকে নিয়ে আল্লাহ আল্লাহ কর যা। কপালে দুঃ*খ আছে যে! ”
পুষ্প মুখ বেঁকি*য়ে বলল,
” হাতি কাঁদায় পরলে ব্যাঙেও লা*থি মারে তাইনা?”
” ব্যাঙের বুদ্ধি নিতেই তো আসলি।”
পুষ্প আর উত্তর খুঁজে পেল না। ‘ হুহ’ বলে বেরিয়ে গেল। পিউ হু হা করে হেসে ফেলল এতে। এরপর লম্বা করে শ্বাস টানল।
গ্যালারি ঘেটে ‘ ডেইরিমিল্ক ‘ লেখা ফোল্ডার বের করল। ধূসরের অগনিত ছবি যেখানে। তার মধ্যে কিছু ছবি পিউয়ের ভীষণ প্রিয়। ঘুমোতে যাওয়ার আগে এই ছবি দেখা রুটিন তার। এখনও একটা ছবি বের করে চোখের সামনে ধরল পিউ। স্ক্রিনে হাত বুলিয়ে বলল,
” আপনার জন্যে আর কত কী করতে হবে ধূসর ভাই? এইযে কাল সারা রাত ঘুমোয়নি, বসে বসে অপেক্ষা করেছি সকাল হওয়ার, কেন জানেন? কারন প্রত্যেক সকালে আপনার ঘুমঘুম মুখটা দেখা আমার অভ্যেস। আপনাকে চোখের সামনে রেখে খাবার চিবোনো আমার স্বভাব। পাশাপাশি বসে আপনার শরীর থেকে আসা পারফিউমের গন্ধে ধ্যান হারানো আমার অমত্ত অভিলাষ। এই নিয়ম পাল্টাই কী করে বলুন!
সিকদার বাড়ির পুরুষরা সাড়ে সাতটার মধ্যে নাস্তার পাঠ চুকিয়ে বেরিয়ে যান। গৃহিনীরা সকাল সকাল তাই লেগে পড়েন কাজে। আমজাদ,আফতাব,আনিস ব্যাতীত এ সময় নাস্তার টেবিলে কেউ থাকেনা। হিসেব মত এই দিন থেকে যোগ হবে ধূসর। অফিসে আজ তার প্রথম দিন । অফিস বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে হওয়ায় প্রয়োজনের আগেই সময় মেপে বেরিয়ে পরতে হয়। ভোরবেলা ঢাকার রাস্তা মোটামুটি খোলামেলা গেলেও,নটার পর জ্যামের তো*পে নড়াচড়াও মুশকি*ল।
আমজাদ সিকদার, আফতাব সিকদার দুই ভাই খুশিতে আটখানা হয়ে খাচ্ছেন। আনিস কোনও রকম নাকেমুখে খাবার পুরে বেরিয়ে গেল। দেশের অবস্থা খুবই করু*ন। খু*ন,খারা*পিতে ভরে গেছে। চা*প পরছে তাদের টিমের ওপর। ঘুম হারা*ম করে দিচ্ছে। হৃষ্টপুষ্ট ছিল,আর এই চাকরি নেয়ার পর থেকে একেবারে কুপোকা*ত। নাওয়া,খাওয়া বাদ দিয়ে ছুটতে হয়। আজও তেমনি হলো। তিনি বেরিয়ে গেলেন। সুমনা বেগম ব্যাগে টিফিন বাক্স ভরে দিতে দিতে পেছনে ছুটলেন তার। আনিস গাড়িতে বসলেন, আর সুমনা বেগম জানলা থেকে এক প্রকার ছু*ড়ে মা*রার মত করে বাটি হাতে দিলেন। আনিস অসহায় ভঙিতে চেয়ে বললেন
” প্রত্যেক দিন এত ক*ষ্ট করো কেন? কতবার বললাম,বাইরে খাব,শোনোনা।”
” বাইরের খাবার তোমার সহ্য হয়না,সে আমি ভালোই জানি। আমার একটু ক*ষ্টতে যদি তুমি সুস্থ থাকো তাতে ক্ষ*তি কী?।”
আনিসের প্রান জুড়িয়ে যায়। বুক ভরে শ্বাস ফেলে বলে ” আসি।”
সুমনা বেগম বিদায় পর্ব শেষ করে ঘরে গেলেন। তখনি উপর থেকে ধূসর নামল। সুট্যেড ব্যুটেড, স্বাস্থ্যবান ছেলেটিকে দেখে সুমনা বেগমের চোখ শীতল হয়ে আসে।
তিনি বিস্তর হেসে বলেও ফেললেন” মাশআল্লাহ! আমার একটা মেয়ে থাকলে তোকে জামাই বানাতাম রে ধূসর।”
ধূসর ক্ষীন হাসল,মুহুর্তে সে হাসি মিলিয়েও গেল।
সে নিচে নেমেছে কেবল,ওমনি ওপর থেকে হুটোপুটি করে ছুটে এলো পিউ। ধুপ ধুপ করে সিড়ি ভে*ঙে নামল। প্রত্যেকে হকচ*কাল তার কান্ডে৷ এমনকি ধূসর নিজেও স্বল্প সময়ের জন্যে ভড়কাল। পিউ চেয়ার ধরে হা*পাতে হা*পাতে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
” শুভ সকাল।”
প্রত্যেকে অবাক চোখে কিছুক্ষন দেখল ওকে। আমজাদ সিকদার বললেন,
” কী ব্যাপার আম্মা,তুমি এত ভোরে উঠলে যে!”
পিউ ঘন শ্বাস টেনেই জবাব দিল,
,”পড়তে উঠেছিলাম আব্বু। এখন খিদে পেল তো,তাই এলাম।”
ডাহা মিথ্যে কথাটা শুনেই মিনা বেগম খুশি হয়ে গেলেন। গদগদ হয়ে বললেন,
” ওমা তাই? এইতো আমার লক্ষী মেয়ে। নে নে খেতে বোস।”
পিউ মুচকি হেসে আড়চোখে একবার পাশে দাঁড়ানো ধূসরকে দেখল । মুহুর্তে হার্ট মিস করল যেন। আরেকদিক ফিরে, বুকে হাত দিয়ে বলল ফিসফিস করে বলল,
” উফ, মার ডালা!’
আফতাব সিকদার ছেলের দিকে তাকালেন,
” কী ব্যাপার, খাবেনা? বোসো।”
পিউ তক্কে তক্কে ছিল। ধূসর যে চেয়ারে বসবে টুপ করে তার পাশেরটায় বসে পরবে বলে। কিন্তু ধূসর বলল,
” আমি খাবনা।”
আমজাদ সিকদার বললেন ” কেন? খাবেনা কেন?”
” এত সকালে খেতে পারব না। অভ্যেস নেই। আমি বের হচ্ছি আপনারা আস্তেধীরে আসুন।”
রুবায়দা বেগম বললেন,
” ও বাবা,একটু কিছু মুখে দে,প্রথম দিন একেবারে খালি মুখে যাবি?”
ধূসর সংক্ষেপে বলল ” সমস্যা নেই।”
এ ছেলে আর কথা শুনবেনা। এতদিনে সকলের নখদর্পনে তা। হাল ছাড়লেন তারা,সাধলেন না আর।
পিউয়ের চেহারার পরতে পরতে হতা*শা ছেয়ে গেল। নটার আগে তার ঘুম ভাঙেনা। অথচ ধূসর বের হবে আগেই। যদি উঠতে না পারে? সেই ভেবে যার জন্যে রাত জেগে,না ঘুমিয়ে অপেক্ষা করল সকালে একসঙ্গে খাবে বলে৷ সে-ই খাবেনা? পিউয়ের তমসায় ঘেরা মুখমন্ডল ধূসর দেখলনা। সে পা বাড়িয়েছে সদর দরজার দিকে। আমজাদ সিকদার পেছনে থেকে বললেন
” গাড়ির চাবিটা নিয়ে যাও।”
ধূসর ফিরে তাকিয়ে বলল,
” আমি বাইকে যাব।
আপনারা গাড়িতে আসুন।”
আমজাদ ঠোঁট ফু*লিয়ে বিরক্তির শ্বাস নিলেন। আফতাব সিকদার আশাহ*ত হয়ে বসে রইলেন। এই ছেলে আর শোধরাবে না।
পিউকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিনা বেগম বললেন,
” তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বোস।”
পিউ মুখ কালো করে বলল,
” খাব না।”
জবা বেগম শুধালেন, ” এমা কেন? এই না বললি খিদে পেয়েছে?”
” পেয়েছিল। হারিয়ে গেছে। ”
তারপর হনহনিয়ে ঘরের দিকে চলে গেল পিউ। মিনা বেগম মেয়ের প্রতি রাগে হা হু*তাশ করে বললেন,
” আপনার মেয়ের এসব কাজকর্ম আমার ভালো লাগছেনা। ওর জ্বা*লায় একদিন সন্ন্যাসী হয়ে সংসার ছাড়ব দেখবেন।”
আমজাদ সিকদার চুপ থাকলেও আফতাব সিকদার মুখ খুললেন। প্রখর বি*রোধিতা করে বললেন,
“কেন ভাবী? এখন এই কথা কেন বলছেন? একটু আগে আপনাদের আদরের নবাব সাহেব যে চলে গেলেন,কারো কথায় গ্রাহ্য অবধি করলেন না, তার বেলা তো বলেননি। পিউ কিছু করল না তাতেই এই অবস্থা কেন? ”
মিনা বেগম মিইয়ে গেলেন। যুতসই উত্তর না পেয়ে মিনমিন করে বললেন,
” ধূসর তো ছোট ভাই।”
আফতাব সিকদার ভ্রুঁ কপালে তুলে বললেন,
” সে কী! ছয় ফুটের ষাড় টাকে আপনার ছোট মনে হলো? আর দু ইঞ্চির পিউকে ধেড়ি বুড়ি ভেবে বসলেন?”
” ধূসর সারাদিন বাইরে থাকে,কত ঝু*ট ঝা*মেলা সামলায়,এখন তো আবার অফিস ও দেখবে। ওর মাথা ঠিক থাকবে না এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এই মহারানী কী করেন? হেলেদুলে ঘুরে বেড়ান। এবার শুধু রেজাল্ট খারা*প করুক,দেখবে কী যে করব ওকে আমি।”
আফতাব সিকদার দুপাশে মাথা নাড়লেন। তার পূত্রের অপ*রাধ এ বাড়ির কেউ দেখেনা। আমজাদ সিকদার বললেন,
” আফতাব,চলো বের হই। ধূসরের আগে পৌঁছাতে হবে। ”
” কেন ভাইজান?”
আমজাদ উঠতে উঠতে জবাব দিলেন ” চলো বলছি।”
_____
ধূসরের প্রতি ক্রো*ধে বিড়বিড় করতে করতে তৈরি হচ্ছে পিউ। ইউনিফর্মের ক্রস বেল্ট লাগাল বিদ্বিষ্ট হয়ে। মনঃক*ষ্টে সে নিজেও খাবেনা বলে পণ করেছে। তাতে ক্ষুধায় ম*রে যাক,তবুও না। পিউ তৈরি হয়ে ঘর ছাড়ল। পথে দেখা হলো পুষ্পর সাথে। সে দেখতেই অনুরোধ করল,
” তাড়াতাড়ি ফিরিস সোনা,প্লিজ!”
পিউ নি*রাস শ্বাস ফেলল। এখন কাজে লাগবে বলে সোনা, রুপা কত কী ডাকছে। আর এমনি সময় ওর একটা লিপস্টিক ধরলেও চু*লোচুলি বাঁ*ধে। পিউ নেমে এলো। সাদিফ খেতে খেতে ওকে যেতে দেখে বলল,
” কী রে পিউ,খাবিনা? ”
পিউ ছোট করে বলল ” না।”
পেছন থেকে মিনা বেগম হাজারটা ডাক ছু*ড়লেন। মেয়েটা দাঁড়ায়নি। ক্ষে*পে থাকায় টিফিন অবধি নেয়নি।
পিউ একদম মেইন গেটের বাইরে এসে দাঁড়াল। সাদিফ ও তখনি বের হয়েছে। এত তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কী করে হলো কে জানে! সাদিফ পার্কিং লটের দিকে গেল। বাইকে চে*পে বসতেই পিউ এসে দাঁড়াল সামনে। নিভু কন্ঠে আবদার করল
” আমায় একটু লিফট দেবেন?”
সাদিফ হেসে বলল ” বোস।”
পিউ উঠে বসে। সাদিফ বাইক ছাড়ে। পিউ চেয়ে রয় ধূসরের বারান্দার পানে। জানলা দরজা সব বন্ধ,ধূসরও নেই কক্ষে। সেতো বেরিয়েছে। তবু পিউ চেয়ে থাকে। মিছিমিছি খুঁজে বেড়ায় সে কলেজে যাওয়া কালীন ওই খানটায় দাঁড়িয়ে থাকা তার ধূসর ভাইকে।
______
ধূসর আগে বের হলেও তার পৌঁছাতে সময় লাগল। পথে বাইকের তেল শেষ হওয়ায় পেট্রোল পাম্পে দাঁড়িয়েছিল। সেই ফাঁকেই আমজাদ সিকদার ভাই সহ পৌঁছে গেলেন অফিসে। ধূসর পৌঁছাল তার দশ থেকে পনের মিনিট পর। কতগুলো বছর এখানে পা অবদি রাখেনি । এসেছিল খুব ছোট বেলায়। অথচ গেট বরাবর আসতেই দারোয়ান তৎপর খুলে দিলেন । ধূসর ঢুকল। জিজ্ঞেস করল,
” মেইন অফিস কোনদিকে?”
লোকটি হাত লম্বা করে দেখালেন ” এদিকে স্যার।”
ধূসর সে পথে এগোয়। গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে লিফটে ওঠে। হিসেব মত ষষ্ঠ তলায় এলো। লিফটের দরজা খুলতেই মারবেল মেঝেয় যেই পা ছোঁয়াল,নরম কিছু বিধল জুতোর তলায়। ধূসর ভ্রুঁ কুঁচকে চোখ নামাল। ফ্লোর জুড়ে ফুলের পাপড়ি দেখে বিস্মিত হলো। পরপর সামনে ফেরা মাত্রই আরো পুষ্পদল উড়ে এসে গায়ে পরল। কেউ ছিটিয়ে দিচ্ছে এমন। ধূসর সামান্য হতভম্ব হয়। পরপর ওপাশ থেকে আসে উচ্ছ্বসিত হাত তালির শব্দ। ধূসর খেয়াল করতেই দেখল সামনে অফিসের সমস্ত লোকজন দাঁড়িয়ে । মাঝে দাঁড়িয়ে তার বড় চাচা, তার বাবা। সে তাকাতেই আমজাদ সিকদার বললেন,
” ওয়েলকাম মাই সন। দাঁড়িয়ে কেন, এসো ভেতরে।”
ধূসরের বুঝতে সময় লাগেনা। অফিসে তার প্রথম দিন উপলক্ষে অভিবাদনের বিরাট ব্যবস্থা করেছেন আমজাদ। এমনকি আফতাব নিজেও জানতেন না এসব। যখন জেনেছেন অবাক হয়েছেন তিনিও। ধূসর বূট পরিহিত পা ফেলে সামনে এগোয়। পথে অফিসের সকলে তাকে ফুলের বুকে প্রদান করে শুভেচ্ছা জানায়। ধূসর মৃসূ হেসে গ্রহন করে৷ গিয়ে দাঁড়ায় বাবা এবং চাচার মাঝখানে। আমজাদ ধূসরের কাঁধ পে*চিয়ে নিলেন। সবার উদ্দেশ্যে ঘোষণা করলেন,
” সিকদার ধূসর মাহতাব! আমাদের পরিবারের বড় ছেলে। আপনাদের আফতাব স্যারের একমাত্র সন্তান। আজ থেকে এই কোম্পানির এম-ডি হিসেবে তাকে নিযুক্ত করছি আমি।
ধূসর বিহ্বল হয়ে তাকাল। একিরকম বিস্ময় আফতাবের চেহারাতেও। ফের ঘন তালির বর্ষন হলো। আমজাদ সিকদার ধূসরকে বললেন,
” এসো।”
তকতকে কেবিনের সামনে এসে থামেন তারা। দরজায় লাল ফিতে টানটান করে বাঁ*ধা। আমজাদ ট্রে থেকে কেঁ*চি তুলে ধূসরের হাতে দিলেন। বললেন, ” কা*টো।”
ধূসর দ্বিরুক্তি না করে ফিতা কা*টে। পা মিলিয়ে ভেতরে ঢোকে। বিশাল কেবিনের বড়সড় ফোমের চেয়ার খানা দেখিয়ে আমজাদ বললেন ” বোসো।”
ধূসর বসলনা। সে দূর্বোধ্য চাউনীতে চেয়ে থাকে। আমজাদ সিকদার খানিক অপ্রতিভ হলেন। বাকীদের দিক চেয়ে বললেন ” আপনারা এখন কাজে ফিরে যান।”
এক আদেশে প্রস্থান নিল সবাই। আমজাদ সিকদার ধূসরের পানে নেত্রপাত করে বললেন,
” কী হলো? বসো!”
” এতকিছু কেন করলেন ? কী দরকার ছিল?”
ধূসরের শীতল কন্ঠে, সোজাসুজি প্রশ্ন। আমজাদ সিকদার মুচকি হেসে বললেন,
” বা রে! তুমি এই প্রথম অফিসে এলে,সসন্মানে তোমাকে প্রবেশ করাব না? আমার ছেলে ফেলনা না কী?”
আফতাব সিকদারের চোখ চিকচিক করে উঠল। আলগোছে বাম হাত দিয়ে মুছে নিলেন তা। আমজাদ সিকদার ফের চেয়ার ইশারা করলেন ” বোসো।”
ধূসর এবারেও বসেনি। উলটে আমজাদ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। ভদ্রলোক চমকে গেলেন। শেষ যখন ধূসরকে বিদেশ পাঠানো হয়,তখনও ছেলেটা তাকে এড়িয়ে গেছে। কারন ওকে বাড়ি ছাড়া করার মূলহোতা তিনিই ছিলেন । আজ এতগুলো বছর পর ধূসর কাছে আসায়,আমজাদ সিকদারের বক্ষে স্নেহের ঢেউ বয়। ধূসর শান্ত,তবে ভেজা কন্ঠে বলল,
” স্যরি বড় আব্বু। আম রিয়্যেলি ভেরি স্যরি!”
আমজাদ সিকদার আবেগে ভেসে গেলেন। বহুদিন পর ধূসরের মুখে পুরোনো ডাক শুনে তার কোটরে জল জমে। বুক ভা*ঙে। কিন্তু না,তার মতো দৃঢ় মানুষের কাঁ*দা চলেনা। তাই লুকিয়ে নিলেন আনন্দাশ্রু। ধূসরের পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,
” ইটস ওকে মাই সন!
ধূসর সরে আসে। এ পাশে দাঁড়ানো বাবার দিকে তাকায়। আফতাব তৎক্ষনাৎ ভেজা দৃষ্টি নত করে ফেললেন। ধূসর বাক্যব্যায় না করে বাবাকেও জড়িয়ে ধরল। আফতাব সিকদার,শ*ক্ত থাকতে পারলেন না। পারলেন না ভাবাবেগ আটকাতে। ছেলেকে পেঁচি*য়ে কন্ঠ ভে*ঙে কেঁ*দে ফেললেন।
মুহুর্তমধ্যে একটি নয়নাভিরাম পরিবেশের সৃষ্টি হলো। অনেকদিনের ধূলো জমে থাকা অভিমান চু*র্নবিচূ*র্ন হলো, একে অন্যের প্রতি টান,ভালোবাসায়।
___
ক্লাশ শুরু হয়নি। পিউ আগে আগে এসে বসে আছে। সামনে বিশাল মাঠ। স্কুল, কলেজ একসাথে হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রী প্রচুর। মাঠের মধ্যেই হৈহল্লা বেঁ*ধেছে। এক কোনায় জাল টাঙিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলছে ছেলেরা। পিউয়ের বান্ধুবি তানহা ডেকে গেল কয়েকবার। পিউ গাট হয়ে বসে রইল। প্রতিবার আপত্তি জানাল ওদের সাথে যোগ হতে। আজকেও একি কথা,তার মন ভালো নেই। কারনটাও একই’ ধূসর।’
তানহা সবশুনে বিরক্ত হয়ে বলল ” ম*র যা।”
পিউয়ের একটুও গায়ে লাগেনি কথাটা। লাগবে কেন? সে কবেই ধূসরের প্রেমে ম*রে ভূত হয়ে আছে। শুধু উলটো হয়ে, গাছে লট*কে পরা বাকী। এদিকে ক্ষুধা লেগেছে। জে*দ দেখিয়ে খেয়ে আসেনি,টিফিন ও আনেনি। ক্লাশে গিয়ে, ব্যাক থেকে টাকা এনে, তারপর ক্যান্টিনে যেতে হবে। সে অনেক পরিশ্রমের ব্যাপার বলে পিউ পা ঝুলিয়ে ওভাবেই বসে রইল। হঠাৎ পেছন থেকে একটা ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে ভেসে এলো,
” ভাবি!”
পিউ শুনলেও ঘুরে দেখল না। কাকে না কাকে ডেকেছে! অথচ ডাকটা ফের এলো ” ভাবি শুনছেন?”
পিউ এবারেও ফেরেনা। পেছনের মানুষটি সময় নিয়ে ডাকল ” পিউ ভাবি শুনছেন?”
চট করে ঘাড় ঘোরাল পিউ। মোটামুটি রো*গা শোকা ছেলেটাকে দেখে কপাল গোছাল। সে তাকাতেই ছেলেটি দাঁত বার করে হাসল। পিউয়ের যেটুকু সন্দেহ ছিল তাকে ডাকা নিয়ে, সব উধাও হলো হাসি দেখে। । ফটাফট উঠে দাঁড়াল। ডানে বামে দেখে নিজের দিকে আঙুল তা*ক করে শুধাল ” আমাকে বলছেন?”
ছেলেটি বলল ” জি ভাবি, আসসালামু আলাইকুম।”
জিরাফদেহী এক ছেলে, তার মত দু আঙুলের কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে সালাম দিচ্ছে! আবার বলছে ভাবি? পিউ হতবাক হয়ে বলল,
” আমি আপনার কোন ভাইয়ের বউ?”
ছেলেটি মুচকি হেসে কয়েক পা এগিয়ে এসে বলল
” হবেন কোনও এক ভাইয়ের। আমি যে জন্যে এলাম সেটা বলি,এই পার্সেলটা আপনার জন্যে। ”
কাগজে মোড়ানো ফুডপান্ডার একটা পার্সেল ছেলেটি বাড়িয়ে ধরল। পিউ সেদিকে একবার দেখে,
চোখ পিটপিট করে বলল ” আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে,আমি কোনও কিছু অর্ডার করিনি।”
” জানিতো আপনি করেননি। ভাই করেছে,আর আমাকে বললেন পৌঁছে দিতে।”
পিউ আকাশ থেকে পরার মত করে তাকাল।
” কোন ভাই? কীসের ভাই? কার ভাই? কেমন ভাই? কী জন্যে ভাই? দেখুন ভাই, আমি আপনার ভাইকে চিনিনা। আপনার সত্যিই ভুল হচ্ছে। অন্য কারো সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন আমায়। আপনি এটা নিয়ে যান।”
পিউ ঘুরে হাঁটতে গেলেই ছেলেটা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,
” না না ভাবি আমি ঠিক চিনেছি আপনাকে। কী যে বলেন,ভাইয়ের ফোনে এতবার আপনার ছবি দেখলাম আর চিনব না? এটা আপনার জন্যেই। নিন ভাবি আমার খুব তাড়া আছে।”
পিউ ক*রুন চোখে তাকাল। কী ছাতার মাথা বলে যাচ্ছে এ!
কিছ বলার আগেই ছেলেটি হাতের পার্সেল ধরিয়ে দিল তার হাতে। পিউ কিচ্ছু জানতেও পারল না। এর আগেই ছেলেটি যেমন করে এলো,তেমন করেই চলে গেল। পিউ তব্দা খেয়ে চেয়ে থাকল কিছুক্ষন। দূর থেকে এতক্ষন বিষয় টা লক্ষ্য করেছে তানহা। ছেলেটা যেতেই সে ছুটে এলো। ধড়ফড় করে শুধাল,
” এটা কী রে? কী আছে?”
পিউ বিরক্তি নিয়ে বলল ” জুতো। ”
তানহা বোকা বোকা কন্ঠে বলল
” কিন্তু গায়ে তো ফুডপ্যান্ডা লেখা। ওরা আবার কবে থেকে জুতো সাপ্লাই দিচ্ছে ? ওরাতো খাবার ডেলিভারি দেয় তাইনা?”
” জানিসই যখন জিজ্ঞেস করিস কেন? আছে কোনও খাবার টাবার হয়ত।”
তানিহা মুখ ছোট করল। পরমুহূর্তেই উদ্বেগ নিয়ে বলল,
” চল খুলে দেখি।”
পিউয়েরও মনে হলো খুলে দেখা উচিত। কলেজের কমন রুম ঘেঁষে একটি সিড়ি ছাদ ছুঁয়েছে। দুজন মিলে সেখানে এসে বসল। তানহা টেনেটুনে প্যাকেট খুলল। ভেতরে পাঁচটা স্যান্ডউইচ, দু পিস চিকেন ফ্রাই দেখে আনন্দে লাফিয়ে উঠল। পিউয়ের উত্তরের আশায় না থেকে লু*ফে নিলো এক পিস। পিউ কিছু বলল না। ভাবুক হয়ে বসে রইল। তার নিউরনে কৌতুহল ছুটছে,ছুটছে প্রশ্ন। কে পাঠাল এসব?
______
পিউ টিফিন টাইমে বাড়ি এলো। আস্তেধীরে হাটতে দেখে মিনা বেগম ভয় পেলেন। কাছে গিয়ে উদ্বীগ্ন হয়ে বললেন ” তোর কি শরীর খা*রাপ লাগছে পিউ?”
পিউ ক্লান্ত কন্ঠে জবাব দিল ” না মা।”
” আজ তোর প্রিয় খাবার রেঁধেছি। ইলিশ পাতুরি। যা হাত মুখ ধুঁয়ে যায়।
” পরে খাব । এখন না..”
মিনা বেগন বিভ্রমে ডু*বে গেলেন মেয়ের হাবভাব দেখে। এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন ওর যাওয়ার দিকে। তার চঞ্চল মেয়ের মুখমণ্ডল, এত মলিন কেন?
পিউ হাত মুখ ধুঁয়ে নিচে নামল। একটু টিভি দেখলে ভালো লাগবে। কাল ধূসর বাড়িতে থাকায় একটা সিরিয়াল ও দেখতে পারেনি।
পিউ টেলিভিশন কেবল অন করার জন্য বসেছে ওমনি হাজির ধূসর। ওকে ঢুকতে দেখেই পিউ দ*মে গেল। রিমোর্টের বাটন টে*পা আঙুলটা ফিরে এলো জায়গায়। ধূসর সুম্মুখস্থ হেঁটেই যাচ্ছিল, হঠাৎই থমকে দাঁড়াল পিউকে খেয়াল করে। ভ্রঁ বাঁকিয়ে বলল,
” তুই এসময় বাড়িতে যে!”
পিউ তাকিয়েছিল। আচমকা ধূসর তাকানোয় অপ্রস্তুত হলো। জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নম্র স্বরে বলল
” শরীরটা ভালো____
কথা পুরো না শুনেই ধূসর এগিয়ে এলো। পিউ বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল তৎক্ষনাৎ। ধূসরকে আসতে দেখেই তার কথা থেমেছে। ধূসর একদম কাছে এসে দাঁড়াল। শুরু হলো পিউয়ের বুকের দ্রিমদ্রিম শব্দ। ধূসর ঠান্ডা হাত পিউয়ের কপালে ঠেঁকাল,পরপর গলায়, গালে। চিন্তিত কন্ঠে বলল,
” কী হয়েছে?”
এই যে ধুসর ছুঁয়ে দিল, এতেই পিউয়ের সব গোলমেলে হয়। খারা*প মন মুখ লুকায়। সে অভিভূতের মতন চেয়ে চেয়ে ঠোঁট নাড়ে,
” বুক চিনচিন করছে ধূসর ভাই।”
” কী?”
পিউ নড়েচড়ে উঠল। ধূসর চোখা চোখে তাকিয়ে। সে থতমত খেয়ে বলল
” না মানে একটু মাথাব্যা*থা করছিল।”
” রোদের মধ্যে হেঁটেছিস?”
পিউ দুদিকে মাথা নাড়ল।
ধূসর মোলায়েম কন্ঠে বলল ” বেশি ব্যা*থা করছে?”
পিউ এবারেও দুপাশে মাথা নাড়ে। ধূসরের কোমল স্বর তার হৃদয় নাড়ি*য়ে দিয়েছে৷
” তাহলে এক কাপ কফি খেয়ে নে। ঠিক হয়ে যাবে। আমি বড় মাকে বলছি।”
পিউ উদগ্রীব হয়ে বলল
” চা -কফিতে হবেনা ধূসর ভাই। আমার অন্য কিছু দরকার।”
ধূসর তাকাল,
ভ্রুঁ উচাল, ” কী?”
পিউ রয়ে সয়ে বলল ” একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসতে পারলে ভালো লাগতো আরকি!”
পিউ হাসার চেষ্টা করল। ধূসর দৃষ্টি সরু করে বলল,
” বাইরে বলতে?”
” বাইরে মানে,এই যে আপনি আপুকে নিয়ে ওর ভার্সিটি যাচ্ছেন না? আমাকেও যদি সাথে নিতেন। আমিতো কখনও যাইনি। ”
ধূসর একটু চুপ থেকে বলল ” ঠিক আছে।”
পিউ ভেবেছিল ধূসরকে রাজি করাতে কাঠখড় পো*ড়াতে হবে। অথচ হলোনা। পিউ খুশি হয়ে যায়। ধূসরের যাওয়ার দিক চেয়ে দুপাশে দুলে দুলে আহ্লাদে আটখানা হয়ে বলে,
” সো সুইট অফ ইউ।”
_____
ধূসর সি এনজি ডেকেছে দেখে পিউয়ের মাথায় বাঁ*জ পরল। এতে উঠলেই তার গা গুলোয়,বমি পায়। পাশাপাশি ভীষণ রকম মেজাজ গর*ম লাগল। লোকটার তো বাইক আছে। তাতে নিলে সমস্যা কী? তার থেকেও বড় কথা বাড়িতে গাড়ি আছে, তাতেও তো যেতে পারতো তিনজন। অসহ্য না? এত বেশি বোঝে কেন ধূসর ভাই? এই লোককে ভালো না বাসলে,কবেই ইট মে*রে মাথা ফাঁটি*য়ে দিত।

পিউ মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে দেখে ধূসর ধম*কে উঠল,
” তুই কি আসবি? না কি রেখে যাব তোকে?”
পিউ বিড়বিড় করতে করতে অনীহা সমেত এগোলো। পুষ্প আগেই উঠে বসেছে। পিউ বসল তার পাশে । হুট করে কোত্থেকে বাড়ির আঙিনায় এসে দাঁড়াল একটা সাদা রঙের গাড়ি। ধূসর বসতেই যাচ্ছিল চালকের পাশে। পরিচিত গাড়িটা দেখতেই থেমে গেল। একরকম অপ্রত্যাশিত ভাবে হাজির হয়েছে ইকবাল। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতেই ধূসর অবাক কন্ঠে শুধাল
” তুই?”
ইকবাল দুদিকে দুহাত মেলে দিয়ে এগোতে এগোতে বলল
” আরে আমার বন্ধু, আমার জানে জিগার,আমার কলিজা, আয় আয় একটু কোলাকুলি করি।”
ইকবাল সত্যিই এসে জাপ্টে ধরে। পরপর সরে যায়। ধূসর সন্দিহান কন্ঠে বলল
” তুই এ সময় এখানে কেন?”
ইকবাল দুঃ*খী কন্ঠে বলল
” এভাবে বলছিস কেন? কাল থেকে তোকে দেখিনি বলে থাকতে না পেরে চলে এসছি। আর তুই? ছি! ধূসর ছি! এতটা অপ*মান আমায় না করলেও পারতি।”
ইকবাল শুকনো খরখরে চোখদুটো আঙুল দিয়ে মুছলো। ভাণ করল কাঁ*দছে। ধূসর বলল
” নাটক বন্ধ কর,
কেন এসেছিস তাই বল। ”
ইকবাল কাঁধ উঁচু করে বলল
” কেন আবার? এমনি। তোকে দেখতে, আর তোর ফুলটু___”
বলতে বলতে থেমে গেল ইকবাল। নজরে পরল সি -এন- জির ভেতর বসে থাকা পিউ আর পুষ্পকে। মুহুর্তে গদগদ হয়ে বলল,
” আরে পিউপিউ! কী খবর বোন ? দিনকাল কেমন যাচ্ছে?”
পিউ মৃদূ হেসে বলল,
” এইত ভাইয়া, চলছে।
ইকবাল মাথা দোলায় ” গুড,ভেরি গুড। তা তোমরা কোথাও যাচ্ছো বুঝি?”
” হ্যাঁ, যাচ্ছিতো। আপুর ভার্সিটিতে যাচ্ছি।”
ইকবাল ঘাড় একটু নিচু করল। ভেতরে বসা পুষ্পকে শুধাল ” কোন ভার্সিটিতে পড়ছো তুমি পুষ্প?”
পুষ্প চোখ না তুলে,না দেখেই জবাব দেয়,
” স্টামফোর্ডে!”
ইকবাল সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ধূসরের পানে তাকাতেই সে গম্ভীর স্বরে বলে,
” শেষ হয়েছে তোর জিজ্ঞাসাবাদ? অনুগ্রহ করলে আসতে পারি এখন? ”
” আরে নিশ্চয়ই, যাবিতো। আসলে হয়েছে কী ধূসর, আমি না ওই ইউনিভার্সিটিতে কখনও যাইনি। আর আজ তো ফ্রিই আছি। ভাবছি তোদের সাথে যাব কী না! ”
ভেতর থেকে পিউ উৎফুল্ল হয়ে বলল ” হ্যাঁ হ্যাঁ ভাইয়া আপনিও চলুন,খুব মজা হবে তাহলে।”
ইকবাল ঠোঁট চওড়া করে বলল ” দেখলি? পিউ ও বুঝে গেল যে আমি থাকার ব্যাপারই আলাদা। তোরা আমার গাড়িতে ওঠ। আজ সবাই একসাথে ঘুরে আসব।”
ধূসর গুরুতর ভঙিতে বলল ” ঘুরতে যাচ্ছিনা,কাজে যাচ্ছি। ”
” আরে হ্যাঁ জানিতো সেটা। সমস্যা নেই, কাজ শেষ করেই ঘুরব না হয়। ”
ধূসর চোখ সরু করতেই ইকবাল বাচ্চাদের মত মুখ করে বলল,
” এরকম করছিস কেন ভাই? আমাকে সাথে নিলে কী হয়?”
ধূসর ফোস করে শ্বাস ফেলল। সি -এন- জি চালককে একশ টাকা দিয়ে বলল,
” যাবনা মামা। আপনি যান।”
পুষ্প- পিউকে বলল ইকবালের গাড়িতে উঠতে। দুজন বেরিয়ে আসে। পিউ লাফঝা*প দিয়ে উঠে যায় পেছনের সিটে। ইকবাল ড্রাইভার আনেনি আজ। সেখানে বসে ধূসর। পুষ্প পিলপিল পায়ে উঠতে গিয়ে চোখা চোখে একবার ইকবালের দিক তাকায়। ইকবাল তাকাতেই মুখ ভেঙচি দিয়ে বসে যায়। ইকবাল মাথা চুল্কে হাসে। এরপর ঘুরে এসে বসে ধূসরের পাশে। ধূসর গাড়ির ইঞ্জিন চালু করে। ধোয়া,ধূলো উড়িয়ে চারজন রওনা হয় নতুন কোনও কান্ড ঘটাতে।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।