লাভার নাকি ভিলেন | পর্ব – ১২

10 Min Read

মেঘলাঃ মিথ্যাই যদি হবে আকাশ কেন প্রতিবাদ করল না…. কেন বলল না ও আমায় ভালবাসে।

আচ্ছা ভাইয়া আমি কি দেখতে খুব খারাপ যে আমাকে। প্রেমিকার পরিচয় দেওয়া যাবে না…..‌
নাবিলঃ আমি কি বলব বা আমার কি করা উচিত আমি জানি না মেঘলা কিন্তু এইটুকু বলতে পাড়ি আকাশের চাল চলন সহজে বোঝা যায় না তুমি মন খারাপ করো না। ওর মাথায় নিশ্চুই কিছু চকছে তুমি চল এখান থেকে যাই।
রাস্তায় যেতে যেতে নাবিল বলল মেঘলা চুড়ি কিনবে….???
মেঘলাঃ না রুমে যাব চলুন যাই।
নাবিলঃ আরে চলো না এসেছি যখন দোকানগুলি একটু ঘুরে যাই। আমার জিএফ এর জন্য গিফট নিতে হবে না? না হলে বেচারি মন খারাপ করবে।
মেঘলাঃ আপনার জিএফ এর জন্য নিবেন ঠিক আছে তবে চলুন যাই।
দোকানে গিয়ে মেঘলা জিনিস কুটিয়ে কুটিয়ে দেখছে ওকে দেখে মনে হচ্ছে মনটা কিছুটা ভাল হয়েছে।
মেঘলা অনেক দেখে, চুড়ি আর একটা ওড়না কিনল নাবিল এর জিএফ এর জন্য।
মেঘলাঃ আপুর পছন্দ হবে না?
নাবিলঃ হয়ত….
মেঘলাঃ হয়ত মানে কি আমার পছন্দ কি খারাপ নাকি?
নাবিলঃ ঠিক তা নয় পছন্দ ভাল তবে খুবি কৃপন তুমি, মাত্র এই ২ টা গিফট দেওয়া যাবে?
মেঘলাঃ কি…. আমি কিপটা…. দাঁড়ান আপনাকে এখনি ফকির বানিয়ে ছাড়ব।
এবার মেঘলা অনেক কিছু কিনল।
মেঘলাঃ দিন এবার বিল দিন….
নাবিলঃ তো দিব না কখন বল্লাম? আপনি দাঁড়ান আমি বিল দিয়ে আসছি।
নাবিল টাকা দিয়ে মেঘলার হাত থেকে ব্যাগ গুলি নিয়ে গল্প করতে করতে হাঁটছে মেঘলার মন অনেকটাই ভাল হয়ে গেছে।
হোটেল এর সামনে এসে নাবিল সবগুলি প্যাকেট মেঘলার হাতে দিয়ে বলল রুমে যাও।
মেঘলাঃ এগুলি ত আপনার জিএফ এর আমি নিব কেন?
নাবিল হা হা করে হেসে বলল আমার জিএফ সেটা আবার কোথা থেকে আসল? আমার কোন জিএফ টিএফ নেই ম্যাডাম। এগুলি আপনার জন্যই নিয়েছি।
কেউ একজন বলেছিল মেয়েদের খুশি করার ভাল উপায় নাকি গিফট করা। তাই করলাম আর তোমার কথা বললে ত তুমি কিনতে না তাই জিএফ এর কথা বল্লাম।
মেঘলা অবাক হয়ে নিজের অজান্তেই বলে ফেলল জানেন আপনি না খুব ভাল যে মেয়ে আপনাকে পাবে সে অনেক ভাগ্যবতি….মেয়েদের কত সম্মান করেন, সবার মন বোঝেন।
কথাটা শুনে নাবিল একটু আনমনা হয়ে গেল সে আর কিছু না বলেই চলে গেল।
মেঘলাঃ ইস কি বলে ফেললাম এটা? ভাইয়া আমায় কি ভাবল?দূর কি যে করি না আমি।
যাক উনি আকাশ এর মত না আমায় কথা তেমন কিছু মনে করবে না আশা করছি।
মেঘলা সব ব্যাগ নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল…
এদিকে নাবিল আকাশের ঘরে গেল…..
নাবিলঃ আসতে পাড়ি….
আকাশঃ আরে পারমিশন চাইছিস কেন আয় না….
নাবিলঃ না প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করছিস তাই পারমিশন নিয়ে নিলাম।
আকাশঃ আহ নাবিল তুই ও না….ইরা তুমি তোমার রুমে যাও আমার নাবিলের সাথে কিছু কথা আছে।
ইরাঃ আমি থাকলে কি সমস্যা…??
নাবিলঃ আকাশের কোন সমস্যা নেই তবে তোমাকে নিয়ে আমার অনেক সমস্যা। চোখের সামনে থেকে বিদায় হও প্লিজ।
ইরাঃ তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলার সাহস পাও কোথা থেকে?
নাবিলঃ এখুনো যে থাপ্পড় মারি নি সেটাই তো অনেক।তুমি মেয়ে না হলে আজকে মেঘলার সাথে এমন করার মজা বোঝাতাম।
ইরাঃ আকাশ তুমি কিছু বলছ না যে।
নাবিলঃ আকাশের সাথে তোমার কি বিয়ে হয়েছে? ফাউল মেয়ে আমি তোমার ক্লাসমিট আকাশ ও তাই তাহলে আমাদের কথার মাঝে ওকে টানছো কেন
ইরাঃ এই শোন আমি তোমাকে…??
আকাশঃ ইরা তুমাকে আমি রুমে যেতে বলেছি। আর একটা কথা নাবিলের সাথে গলা উঁচুকরে কথা বলার সাহস দ্বিতীয় বার দেখিও না চুপচাপ ঘরে যাও।
ইরা রাগে ফোঁসতে ফোঁসতে চলে গেল।
নাবিলঃ কি করছিস এসব আকাশ? মেঘলাকে এত কষ্ট কেন দিচ্ছিস? নিজেই ক্ষত তৈরি করছিস আবার তুই ই মলম লাগাচ্ছিস। যা যা তোর করার কথা তুই আমাকে দিয়ে করাচ্ছিস এসবের মানে কি?
আকাশঃ কি করাচ্ছি?
নাবিলঃ এই যে সবাই যখন মেঘলাকে কথা শুনাচ্ছিল সেখানে প্রতিবাদ করার কথা ছিল তোর তুই নিজে না গিয়ে আমাকে পাটালি কেন? আমাকে বল্লি ওর যত্ন নিতে পরে আবার নিজেই আমাদের রেখে চলে যেতে চাইলি এটার মানে কি?
আকাশঃ আমি চলে যাব বলেছিলাম কারন গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করলে সবাই তোর উপড় চড়াও হত তুই সবার সাথে তর্ক করতে পারতি না আমাকে যখন ধমক দিলি সবার শিক্ষা হয়ে গেল। কেউ আর কিছু বলল না।
নাবিলঃ আচ্ছা সেটা না হয় বাদ দিলাম এখন এটা বল তুই কি করে বোঝলি মেঘলা ঘরে গিয়ে কোন অঘটন ঘটাবে….??? আমি ত আর সারারাতে ওর ঘরে যেতাম না তুই যদি ফোন না দিতি। তুই জানিস এই ঠান্ডায় মেঘলা ১ ঘন্টা ভিজেছে। আমি তখন না গেলে আরও ভিজত।
আকাশঃ হুম জানি এটা ওর ছোট বেলার অভ্যাস রাগ হলে ভিজে ওর ধারনা ভিজলে রাগ কমে। তবে আমি সেটা ভুলে গেছিলাম যখন মনে হল তখন দেড়ি হয়ে গেছে তবুও তোকে ফোন দিলাম তুই না গেলে ও সারারাত ভিজত।
নাবিলঃ আচ্ছা এতই যখন ভালবাসিস এতই বোঝিস তাহলে ইরা যে ওকে মারল তুই কিছু বল্লি না কেন?
আকাশঃ এটার জবার ইরা পাবে…. তবে এখন না সময় মত। এটা তোর ভাবতে হবে না তুই এটা বল মেঘলা গিফট পেয়ে খুশি হয়েছে তো?
নাবিলঃ হুম তুই যা যা বলেছিলি তাই তাই করেছি আমার জিএফ এর কথা বলে গিফট কিনে দিয়েছি তুই তোর কার্ড খালি করে ফেলেছে সাথে আমার কাছ থেকে আরও লেগেছে।
আকাশঃ যাক ও খুশি হয়েছে তাতেই হয়েছে। আমি তোর টাকা দিয়ে দিব নি।
নাবিলঃ সব হয়ত ঠিকি আছে কিন্তু আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না আকাশ। আমার বারবার মনে হচ্ছে তুই ভুল করছিস তোর এই ভুলের জন্য না তুই ওকে হারিয়ে ফেলিস? আমার ভয় হচ্ছে। মেঘলা কখন কি করে না দেখেই তুই বলতে পারিস কি করলে ওর মন ভাল হয় সেটাও বোঝিস এত ভালবাসিস তাহলে বলিস না কেন আকাশ?
আকাশঃ অনেক কারন আছে তাই বলি না। তুই বোঝবি না সময় হোক বোঝাব।
নাবিলঃ আমি নাইবা বোঝলাম কিন্তু তুই কি বোঝতে পারছিস? এমন করলে মেঘলা তোর কাছ থেকে সরে যাবে আর আমার প্রতি দুর্বল হয়ে যাবে। আগুন আর ঘী পাশাপাশি রাখতে নেই আকাশ, আর তুই তো পাশাপাশি না একদম একসাথে মিলিয়ে দিচ্ছিস। আজ মেঘলার তোর কাঁধে ঘুমানোর কথা ছিল কিন্তু তুই নিজেই তুই আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিলি।
এরপর যদি ও আমার প্রেমে পরে? কি হবে তখন? ও তো জানে না যে এসব কিছু আমি নিজের ইচ্ছায় করিনি সব তুই করিয়েছিস।
আকাশঃ হা হা হা কি যে বলিস নাবিল…. আমার জন্য কি কম মেয়ে পাগল? আমি যদি ১০ বছর ধরে ওর জন্য অপেক্ষা করে থাকতে পাড়ি সব মেয়েদের উপেক্ষা করে তাহলে ও আমার জন্য একটা নাবিল কে এভয়েড করতে পাড়বে না ? ওর উপড় আমার সেই বিশ্বাস আছে। আমি জানি ও কখনো কারো হবে না। ওর মন প্রান জোড়ে শুধু আকাশই আছে।
নাবিলঃ ওর মনে কে আছে সেসব তর্কে আমি না যাই কিন্তু এইটুকু শোন এত কিউট একটা মেয়ের সাথে থাকলে আমি কিন্তু প্রেমে পড়ব তখন আমায় কিছু বলতে আসিস না।
আকাশঃ হা হা হা কেন এত হাসাচ্ছিস বলতো তোকে কি আমার চিনার বাকি এখুনো? নাবিল নিজের বুকে ছুড়ি চালাতে পাড়ে কিন্তু আকাশের বুকে নয়। তবুও ধরে নিলাম তুই প্রেমে পরলি তাতে বা কি? মেঘলা তোকে ভালবাসবে না। ১০০℅ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পাড়ি।
নাবিলঃ তুই যাই বল আমার এসব ভাল লাগছে না আকাশ ২ জন ২ জনকে এত ভালবেসেও এক হতে পাড়ছে না, আবার না হওয়ার মধ্যে কোন যুক্তি সংঘত কারন ও দেখতে পারছি না এটা আমার ঠিক হজম হচ্ছে না।
আকাশঃ দোস্ত আমি একটু চিপায় পড়ে গেছি রে, প্লিজ মাথা চাড়া দিয়ে দাড়ানোর সময়টুকু আমায় দে। আমি সবকিছু ক্লিয়ার করে দিব। কেউ না জানুক তুই তো জানিস মেঘলা আমার প্রান আমি আমার প্রান টা তোর হাতে তুলে দিয়েছি প্লিজ একটু সামলে রাখ আমাকে একটু সময় দে আমি সব ঠিক করে নিব।
নাবিলঃ চিন্তা করিস না আকাশের জন্য নাবিল জীবন ও দিতে পাড়ে আর এটা তো সামান্য একটা কাজ।
আকাশঃ থ্যাংক্স দোস্ত।
নাবিল আকাশের রুম থেকে যাওয়ার সময় দেখল মেঘলা শপিং এর জিনিসগুলি দেখছে তারমন বেশ ভাল তাই নিশ্চিন্ত হয়ে নাবিল নিজের রুমে গেল।
পরদিন সকালে, নাবিল একটু দেড়ি করে ঘুম থেকে উঠল আকাশ সকালে জগিং এ গিয়েছিল। ফিড়ে এসে নাবিল কে বলল হিরোইন কোথায়?
নাবিলঃ এখনো দেখা হয় নি…
আকাশঃ কি বলিস ম্যাডাম তোন এত ঘুমায় না যা ডেকে তুল।
নাবিলঃ জো হুকুম স্যার….
নাবিল মেঘলার ঘরে গিয়ে আকাশ কে ডাকতে লাগল।
আকাশঃ কি হয়েছে? চেচাচ্চিস কেন?
নাবিলঃ মেঘলা কোথায়? একা একা কোথাও যাওয়ার মেয়েতো মেঘলা না।
আকাশ আর নাবিল সারা হোটেল খোঁজে দেখল কিন্তু মেঘলা কোথাও নেই।
নাবিলঃ আকাশ মেঘলা কোন অঘটন ঘটাল না তো আমার খুব ভয় করছে।
আকাশঃ না না না আমার মেঘলার কিছু হতে পারে না…
Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।