লাভার নাকি ভিলেন | সিজন – ২ | পর্ব – ১০

লাভার নাকি ভিলেন - সিজন ২

কেটে গেছে অনেকগুলি মাস….
আকাশ নিজের অবস্থান ভালভাবেই বুঝে নিয়েছে।শহরের প্রতিটা অলিগলিও এখন আকাশ কে চিনে।
নাবিলো ভাল পজিশন পেয়েছে তার অবস্থান ও ভালো। আকাশ আর নাবিল সেইম দলে ২ জনেই পারদর্শী তবে তাদের মধ্যে কোন প্রতিযোগিতা নেই বরং আকাশ আর নাবিল সবসময় কবুতরের জোড়ার মত একসাথে থাকে। তারা কি প্লেন করে আর কখন কি করে সেটা তারা ২ জন ছাড়া কারো সাথে শেয়ার করে না। যে কারনে তারা সবার চেয়ে আলাদা। একের পর এক সাকসেস তাদের হাতে ধরা দিচ্ছে তার প্রধান কারন হল অটুট বন্ধুত্ব।

সাধারনত ভাল পদের দায়ত্বে থাকা সব পলিটিশিয়ান দের বডিগার্ড থাকে তবে আকাশ আর নাবিলের কোন গার্ড নেই।কারন আকাশের গার্ড নাবিল আর নাবিলের গার্ড আকাশ। আকাশের বিপদে নাবিল যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে তেমনি নাবিল কে কেউ কিছু বললে আকাশের গায়ে ফুসকা পড়ে। দিন দিন তাদের বন্ধুত্ব আরো মজবুত হচ্ছে।

নাবিল আর আকাশের সম্পর্কের উন্নতি হলেও এই রাজনীতির চক্করে আকাশ আর মেঘলার সম্পর্কের অবণতি হচ্ছে দিন দিন। কারন এখন আকাশ মেঘলাকে তেমন সময় দিতে পারেনা।আর মেঘলার পরিক্ষাও সামনেই। তাই কলেজ কোচিং নিয়ে ব্যস্ত থাকে।সারাদিন এত পরিশ্রম করে মেঘলা রাত জাগতে পারে না প্রায় দিনেই আকাশ বাসায় ফিরার আগেই ঘুমিয়ে যায়। অবশ্য আকাশেই বলেছে যেন রাত না জাগে। মেঘলার মনে আকাশের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ জমেছে কিন্তু ও কথা দিয়েছিল আর ভুল বুঝবে না তাই কিছু বলে না।

তবে আকাশ প্রতিদিন বাসায় ফিরে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিয়ম করে মেঘলাকে একটা চুমু খায় সে মেঘলা সজাগ থাকুক বা ঘুমে এই ব্যাপারটা আকাশ কখনো মিস করে না।আর মেঘলাও সকালে কোচিং এ যাওয়ার আগে ঘুমন্ত আকাশের মাথায় হাত বুলাতে ভুলে না ভালবাসার মধ্যে এইটুকুই অবশিষ্ট আছে।

মেঘলার মন প্রায়েই খারাপ হয় যখন কোন রোমান্টিক সিনেমা দেখে বা তার ফ্রেন্ডরা তাদের বয়ফ্রেন্ডের কথা বলে মেঘলার মন খারাপ হয় তারও ইচ্ছে করে আকাশের সাথে সময় কাটাতে।কিন্তু মেঘলা সেই সুযোগ পায় না আকাশ তো সবসময়েই কাজ নিয়ে ব্যাস্ত।মেঘলা কলেজ থেকে ফিরেই প্রতিদিন দুপুরে আকাশকে টেক্সট করে কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই ওপরপাশ থেকে রিপ্ল আসে না। মাঝে মাঝে আসে।

আজ শুক্রবার মেঘলার ধারনা আকাশের আজ কোন কাজ নেই। কারন ১০ টা বাজে আকাশ এখুনো ঘুম থেকে উঠে নি মেঘলা তাড়াতাড়ি করে নিজের সব পড়া শেষ করে নিয়েছে আর মনে মনে প্লেন করেছে আকাশ কে নিয়ে আজ ঘুরতে যাবে।
কিন্তু মেঘলার সে আশায় জল ঢেলে আকাশ রেডি হতে হতে নিচে নামল আর তার মা কে নাস্তা দিতে বলল।

আকাশঃ মা এত বেলা হল ডাকলে না কেন? তাড়াতাড়ি খাবার দাও। কাজ আছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

আকাশ খেতে বসেছে হটাৎ লক্ষ্য করল ২ টি চোখ অভিমানি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

আকাশঃ কি ব্যাপার আপনি এখানে কেন?কোচিং নেই?

মেঘলা গাল ফুলিয়েছে……তাই চুপ করে আছে

আকাশ প্লেট টা নিয়ে গিয়ে মেঘলার পাশে সোফায় বসল।এক টুকরো রুটি মেঘলার মুখের সামনে তুলে ধরে বলল কি হয়েছে ম্যাডাম রাগ কেন করেছে?

মেঘলাঃ খাব না আমি….

আকাশঃ একটু খাও এত রাগ করতে নেই…

মেঘলাঃ আজ শুক্রবার বাইরে যাওয়ার কি দরকার?

আকাশঃ আমাদের শুক্রবার বলতে কিছু নেই যেতে হবে।

মেঘলাঃ হ্যা যেতে তো হবেই কত কত মেয়ে চারপাশে ঘুরে তাদের না দেখে কি থাকা যাবে নাকি? আমি তো ওদের মত সুন্দরি নই।

আকাশ বেশ অবাক হল কিন্তু গুরুত্ব দিল না।

মেঘলাঃ আমি অন্ধ নই আকাশ আমি প্রতিদিনি নিউজে দেখি কমপক্ষে ৪,৫ টা মেয়ে সবসময় সাথে থাকে আর ম্যাগাজিনের ব্যাপারে কি আর বলব।

আকাশঃ হ্যা থাকে তো…??? সব প্রফেশনেই মেয়ে থাকে এখানেও আছে এতে এত অবাক হওয়ার কি আছে?

মেঘলাঃ আমি তো অবাক হয়নি বললাম কাজ করতে বেশ ভাল লাগে তাই না?তাই তো আমার এসমেস এর রিপ্লে দেওয়া যায় না।অন্যমেয়ের হাতে হাত রেখে কাজ করলে রিপ্ল দিবে কি করে…??

আকাশ একটু ধমক দিয়েই বলল মেঘলা এমন ফাযলামি আমি পছন্দ করিনা মেয়েদের নিয়ে আমাকে আর কখনো কিছু বলবি না এসব ছোট মন মানুষিকতার মানুষ আমার অসহ্য লাগে।কারো সাথে কথা বলা মানেই প্রেম করা না।প্রফেশনালি যতটা কথা বলা প্র‍য়োজন আমি শুধু ততটাই বলি এর বেশি না।তোকে এগুলো মেনে নিতে হবে এত ছোট মনের,এত অসামাজিক হলে তো চলবে না তাই না?

কথাগুলি বলে আকাশ বিষয়টা এড়িয়ে যেতে চাইল কিন্তু মেঘলা টেবিলের নিচ থেকে কতগুলি ম্যাগাজিন টেনে বের করে আকাশের সামনে রেখে বলল,
দ্যা ইয়ং স্টার আইকন আকাশ চৌধুরী।হাজার মেয়ের ক্রাশ,দেখতে যেমন স্টাইলিশ তেমনি বিচক্ষন, প্রিয় রং কালো, প্রিয় খাবার মায়ের হাতের পায়েস। আমি ছোট থেকে সাথে থেকেও তো এত কিছু জানতে পারিনি এই ম্যাগাজিন গুলি থেকে যত কিছু জেনেছি।তা স্যার আমাকে একটা অটোগ্রাফ দিয়েন নিজের কাছে রাখব।

আকাশ খাবারের প্লেট টা একরকম ফেলে দেওয়ার মত করেই টেবিলে রেখে বলল মোড টাই খারাপ করে দিল বলে খাবার না খেয়েই উঠে গেল।

মেঘলাঃ হ্যা হ্যা একমাত্র মেঘলাই মোড খারাপ করে দেয় আর সবাই ভালবেসে মন ভরিয়ে দেয়।যান যান তাদের কাছেই যান।

আকাশ কথাটা শুনে পিছন ফিরে মেঘলাকে একবার দেখল তারপর চলে গেল।

আকাশ চলে যাওয়ায় মেঘলার আরও রাগ হল সে মুলত রাগ করেছে আকাশ কেন বাইরে যাচ্ছে তাকে নিয়ে কেন ঘুরতে যাচ্ছে না সেই জন্য কিন্তু সেটা না বলে উলটা পাল্টা কথা বলে আকাশ কে রাগিয়ে দিল আর নিজেও রাগে নিজের বাসায় চলে গেল।

আজ প্রেসক্লাবে আকাশের মিটিং আছে সে ওখানেই গিয়েছে নাবিল আসে নি তাই বিফিং শুরু করে নি আকাশ।
আকাশ বসে বসে অপেক্ষা করছিল তখনি কিছু মেয়ে সাংবাদিক আসল। আসার সাথে সাথেই আকাশ ক্ষেপে গেল।

আকাশঃ আজব তো এগুলা কি ধরনের নিয়ম? রাজনৈতিক একটা নিউজ কভার করতে মেয়ে সাংবাদিক আসবে কেন? আকাশের কথায় সবাই অবাক হল।

আকাশঃ এই যে আপনাদের বলছি আপনারা আমাকে নিয়ে এসব কি ধরনের ফাউল নিউজ লিখেন ম্যাগাজিনে… আমি কি খাই কি পড়ি কে আমাকে দেখে ক্রাশ খায় এগুলা কি ধরনের নিউজ?আকাশ বেশ চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা বলছিল আর সবাই এতে অনেক অবাক হয়ে দেখছে তখনি নাবিল আসল আর আকাশ কে এভাবে দেখে তাড়াতাড়ি এসে আকাশকে থামানোর চেষ্টা করে বলল।

নাবিলঃকি করছিস এসব?আকাশ তুই ভুলে যাচ্ছিস এটা প্রেসক্লাব এখানে যা বলবি তাই নিউজ হবে তুই একজন জনপ্রতিনিধি তুই চাইলেই কারো সাথে এভাবে কথা বলতে পারিস না।ইমেজ নষ্ট করছিস কেন?

আকাশঃ তো আমার কি করা উচিত তুই বল?তুই কি ম্যাগাজিন গুলি পড়েছিস? তুই পড়বি কি করে ওগুলো তো মেয়েদের জন্যই লিখা হয়।আজ গিয়ে দেখিস ম্যাগাজিনের কভারে বড় করে তোর আর আমার ছবি দেওয়া আছে কেন রে আমরা কি সিনেমার হিরো নাকি আমাদের নিয়ে এত মাতামাতি কেন হবে বল? তোকে দেখে কেউ ক্রাশ খেলে তোর ভাল লাগতে পারে আমার লাগে না। আমি উত্তর চাই আমাকে নিয়ে এমন লিখা হল কেন?

একটা মেয়ে বলল স্যার আপনারা ২ জনেই অনেক কম বয়েসে এত বড় জায়গায় এসেছেন তাই আপনাদের নিয়ে সাধারন মানুষের মনে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে বিশেষ করে তরুন দের মাঝে তাই ম্যাগাজিনে এভাবে সাজানো হয়েছে।আপনি এতে রাগ করবেন আমরা বুঝতে পারি নি সরি স্যার।

আকাশঃনিজেদের ম্যাগাজিন জনপ্রিয় করতে আমার কলিজা ধরে টানবেন সেটা তো আমি মানতে পারি না তাই না।নেক্সট টাইম কভার যদি করতে হয় শুধু নাবিল কে নিয়ে করবেন আমাকে নিয়ে না সারাদিন মেয়ে সাংবাদিক পিছনে লেগেই আছে এগুলা কি ধরনের অসভ্যতা?আমি এসব পছন্দ করি না বলে আকাশ বেরিয়ে গেল।

মেয়েটিঃ স্যার এত রাগ কেন করল কাউকে নিয়ে কভার করলে সে খুশি হয়। কভার করার ফলে স্যারের কত পাবলিসিটি হয়েছে তাতে তিনি খুশি না হয়ে উল্টে রাগ করল?

নাবিলঃ সরি গাইজ আমার মনে হয় আকাশের মন খারাপ তাই এমন করেছে।কিছু মনে করবেন না প্লিজ আর আপনাদের উচিত ছিল ম্যাগাজিন পাবলিষ্ট করার আগে আমাদের পারমিশন নেওয়া।যাই হোক আজ এখন যা এই নিয়ে কোন নিউজ যেন না হয়।

নাবিল আকাশকে আনতে বাইরে গেল।

আকাশ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে দেখে নাবিল গিয়ে বলল দোস্ত ওয়ালেট আনতে ভুলে গেছি আমি বাইক আনি নি একটু চল না।

আকাশ নিজের ওয়ালেট এগিয়ে দিয়ে বলল নে…

নাবিলঃ আমার টাই লাগবে চল না।

আকাশঃ আমার মন ভাল করার বৃথা চেষ্টা করছিস ভাবছিস ড্রাইভ করলে মন ভাল হবে এই তো?

নাবিলঃ বেশি বুঝিস চল তো…

আকাশঃ মিটিং?

নাবিলঃ এই যাব আর আসব..

আকাশঃ আচ্ছা চল।

বাসার সামনে এসে আকাশ বলল আমি এখানে আছি তুই যা।

নাবিলঃ আরে ভিতরে যাবি না কেন? চল তো বলে টেনে নিয়ে গেল আকাশ কে।

আকাশের মাথায় শুধু মেঘলার কথাগুলিই ঘুরছে তাই কিছুই ভাল লাগছে না।

আকাশ ভিতরে গেল নাবিলের সাথেই নাবিলের রুমে যাচ্ছিল হটাৎ চোখে পড়ল মেঘলা পাশের রুমে শুয়ে হেডফোনে গান শুনছে আর তার মা মেঘলার মাথায় হাত বুলাচ্ছে।

আকাশ থেমে গেল সে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু মেঘলা আকাশ কে দেখে নি।

নাবিল এসে বলল আকাশ চল…

আকাশঃ মানে বলছিলাম আজ মিটিং টা না করলে হয় না?

নাবিলঃ মিটিং অনেক আগেই ক্যান্সেল করে দিয়েছি ওয়ালেট আমার কাছেই ছিল সকালে দেখলাম মেঘলা মুখ ভার করে বাসায় আসল আর ওখানে গিয়ে দেখলাম তুই চেঁচাচ্ছিস বুঝলাম গন্ডোগোল হয়েছে তাই তোকে মিথ্যা বলে নিয়ে আসলাম চল আমার রুমে চল।শুনি কি হয়েছে…

আকাশঃ আরে শোন….

নাবিলঃ উহু তোর কাছে নয় মেঘলার কাছে শুনব দাঁড়া ওকে ডাকি।

নাবিলঃ মা মেঘলাকে বলতো রুমে আসতে।

মেঘলা ঘরে এসেই নাবিল কে জড়িয়ে ধরল সে আকাশ কে দেখে নি।

নাবিলঃ কি হয়েছে?তখন যে বললি মন খারাপ কেন রে?

মেঘলাঃ তুই ও তো রাজনীতি করিস তুই যদি বাসায় আসতে পারিস আকাশ কেন পারে না?

নাবিলঃ কেন আকাশ বাসায় যায় না?

মেঘলাঃ যায় কিন্তু আজ ওকে বলেছিলাম আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে নিয়ে গেল না উল্টে বলল আমি নাকি ছোট মনের মানুষ।

আকাশঃ ওই তুই কখন আমায় বললি ঘুরতে যাওয়ার কথা।

মেঘলা আকাশ কে দেখে চমকে উঠল।

আকাশঃ ডাহা মিথ্যা বলছে ও.. ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে নি।

মেঘলাঃ বলেছিলাম মনে মনে।

নাবিলঃ থাক থাক আর ঝগড়া না এই দেখ আকাশ তো এসেছে চাইলে ঘুরতেও যেতে পারিস এবার তো খুশি হ….
আয় বস গল্প করি।

মেঘলাঃ…..

আকাশ কি বলবে বুঝতে পারছে না তবে মেঘলার সাথে থাকতে ভালই লাগছে তার।

নাবিলঃ আচ্ছা মেঘলা পরিক্ষার পর তুই কি করতে চাস?

মেঘলাঃ আমার ইচ্ছা পরিক্ষার পরে আকাশ আর তোর মত রাজনীতি করবে।

আকাশঃ কেন রাজনীতি কেন?

মেঘলাঃ হাজারটা ছেলে নিয়ে ঘুরব…

নাবিলঃ এ না না এসব ঝগড়া ঝাটি করা যাবে না সত্যিটা বল।

মেঘলাঃ আমি জানি না কি চাই…

নাবিলঃ আকাশ তুই কি চাস?

আকাশঃ আমি চাই পরিক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার পর Higher Education এর জন্য মেঘলা বিদেশে যাক।

নাবিলঃ বাহ ভাল চিন্তা।

আকাশঃ তুই কি বলিস কোনটা ভাল হবে এখানে পড়া নাকি বিদেশে?

নাবিলঃ আমি ইচ্ছা মেঘলার পরিক্ষার পরে আমি মামা হব।

নাবিলের এমন উত্তরে আকাশ মেঘলা ২ জনেই অবাক হল আকাশ হেসে দিল আর মেঘলা লজ্জা পেল।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।