লাভার নাকি ভিলেন | সিজন – ২ | পর্ব – ৬

লাভার নাকি ভিলেন - সিজন ২

মেঘলা অবাক হয়ে বলল আমি আবার কি করলাম?বকা দিচ্ছেন কেন?

আকাশঃ আমাকে আবার আপনি করে বলছিস? নাবিলকে যদি একদিনের মধ্যে তুই বলতে পারিস আমাকে তুমি বলতে এত সমস্যা কেন তোর?

মেঘলাঃ আচ্ছা এবার থেকে তুমি বলব।

আকাশঃ আচ্ছা ছেড়ে দিলাম এবার যা রেডি হয়ে নে…

মেঘলাঃ কেন কোথায় যাব?

আকাশঃ ঘুরতে

মেঘলাঃ সত্যি…???

আকাশঃ হুম সত্যি

মেঘলা খুব খুশি হল
মেঘলাঃআচ্ছা আমি এখুনি যাচ্ছি বলে চলে গেল।

নাবিল হটাৎ ঘুরতে যাচ্ছিস তাও এত সকালে…

আকাশঃ প্রেম করার নির্দিষ্ট কোন সময় আছে নাকি?

নাবিলঃ এসব ডপ মেঘলাকে দিস আমাকে না আচ্ছা ছাড় আমি এবার যাই কাজ আছে একটু…

আকাশঃ থাক না একসাথেই বের হই
আকাশ ড্রেস চেঞ্জ করে নিয়েছে এর মধ্যে।

এরিমধ্যে মেঘলাও নিচে এসেছে সে একটু সেজেছে কারন আকাশের সাথে বাইরে যাচ্ছে।মেঘলাকে অপুর্ব লাগছে দেখতে।

সবাই একসাথে বের হল…

নাবিলঃ আচ্ছা আকাশ যা তাহলে।

আকাশঃ তোর সাথে কিছু কথা ছিল

নাবিলঃ বিকালে আসব কেমন…

আকাশঃনা ওই দিকে চল এখনি বলতে হবে।

নাবিল আর আকাশ একটু দূরে গিয়ে ২ জন মিলে কি নিয়ে যেনো আলোচনা করছে।

মেঘলা ব্যাপারটা তেমন গায়ে মাখল না কিন্তু ওরা অনেক্ষন ধরে কথা বলছে নাবিল কে আকাশ কিছু বলছে আর নাবিল বারবার নিষেধ করছে দেখে মেঘলা গিয়ে বলল কি হল কি এত কথা বলছো?

আকাশঃ নাবিল আর মানা করিস না প্লিজ।

নাবিল মেঘলাকে টেনে আদর করে বলল আকাশ আজ না গেলে হয় না মেঘলাটা অনেক আশা নিয়ে সেজেগুজে এসেছে আজ তুই ওকে একটু সময় দে।

আকাশঃ আজ আমি ওকে সেরা গিফট টা দিব। যাই তাহলে বলে আকাশ মেঘলাকে নিয়ে রওনা হল মেঘলার খুব আনন্দ হচ্ছে কারন আজ ভেলেন্টাইন ডে। আকাশ সকাল বেলায় তাকে নিয়ে বের হয়েছে তাই।

কিছুক্ষনপর আকাশ একটা বিল্ডিংয়ের সামনে গিয়ে মেঘলাকে নামতে বলল।

মেঘলাঃ এটা কার বাসা…?? আমরা এখানে এসেছি কেন?

আকাশঃ ভিতরে চল বুঝতে পারবি।

আকাশ ভিতরে গিয়ে একটা ছেলেকে ডেকে বলল নিরব আছে?

ছেলেটিঃ হুম ভাই আছে ডেকে দিব?

আকাশঃ হ্যা..বলো আমি এসেছি।

ছেলিটি ভিতরে যাওয়ার সাথে সাথেই আকাশের সমবয়সি একটা ছেলে বেরিয়ে এসে আকাশ কে জড়িয়ে ধরল।

আকাশঃ নিরব…. দোস্ত কতদিন পর দেখা হল।

নিরবঃ হুম দোস্ত কেমন আছিস..?? তোর তো খোঁজই পাওয়া যায় না।

আকাশঃ ভালই আছি.. আসলে এখন আমরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পরেছি তাই তেমন দেখা হয় নি। আচ্ছা পরিচয় করিয়ে দেই মেঘলা আমার gf।

নিরব অবাক হল কিন্তু তবুও বলল আসলাম আলাইকুম ভাবি আমি নিরব আকাশের ফ্রেন্ড।কিন্তু আকাশ তুই ভাবি কে নিয়ে এখানে? বাসায় আসতে পারতি। এখানে কেন?

আকাশঃ একটু দরকার আছে তাই এখানে এসেছি।ওর আরো একটা পরিচয় আছে ও নাবিলের হারিয়ে যাওয়া বোন। তাই ওকে মেঘলা বলে ডাক এটা তোর ভাবি নয় কখনো হবে কিনা সেটাও বলতে পারছি না।

নিরবঃ তুই পারিসও আকাশ, হোক নাবিলের বোন তবুও তো তোর গার্লফ্রেন্ড। ভাবি মন খারাপ করবেন না আকাশ একটু এমনেই।

আকাশঃ ভিতরে যাওয়া যাক….

নিরবঃ কি বলছিস তুই ওকে নিয়ে ভিতরে যাবি?

আকাশঃ হ্যা যাওয়ার জন্যই তো এসেছি।

মেঘলার মাথায় কিছুই ডুকছে না আকাশ কি করতে চাইছে বুঝতে পারছে না তবে এতক্ষনে সে বুঝে গেছে কোন স্বাভাবিক জায়গায় তাকে নিয়ে আসা হয় নি আর নাতো প্রেম করার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে… তারউপর ভাবি হবে কিনা সন্দেহ আছে বলায় মেঘলার মন খারাপ হয়ে গেল।

মেঘলাঃ কাল ভেবেছিলাম মারবে কাল আদর করল আর আজ ভাবলাম আদর করবে এখন দেখি অপমান করছে কি মানুষ এটা?

আকাশঃ ভাবাভাবি শেষ হলে ভিতরে চল।

নিরবঃ আমি জানি না তুই ঠিক কি চাইছিস তবুও যেতে চাচ্ছিস যখন যা তবে কাজটা মনে হয় না ঠিক হচ্ছে না।

আকাশঃ চল তো…

আকাশ মেঘলাকে নিয়ে ভিতরে গেল।ভিতরে যেতেই মেঘলা আঁতকে উঠল। কারন এখানে অনেকেই আছে তবে কারোর অবস্থা স্বাভাবিক নয় কাউকে হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছে কাওকে মারা হচ্ছে সবাই বাইরে যাওয়ার আকুতি করছে।কিন্তু তাদের কথা শোনার মত কেউ নেই কিছু জল্লাদ টাইপের লোক আছে কথা বল্লেই মার শুরু করেছে।

মেঘলা ভয়ে আকাশের হাত চেপে ধরে বলল
এটা কি পাগলাগারদ ওরা সবাই কি পাগল?

আকাশঃ না পাগল নয়…

মেঘলাঃ তাহলে ওদের এই অবস্থা কেন ওদের মারছে কেন?এই জল্লাদ গুলি কারা?

আকাশঃ নিরবকে জিজ্ঞাস কর কেন মারছে কারন জল্লাদ গুলি নিরবের কর্মচারী নিরব অর্ডার দিয়েছে এদের মারার জন্য।

মেঘলাঃ আপনি তো খুব বাজে লোক সবাইকে আটকে রেখেছেন কেন?

নিরবঃ ভাবি এদের আমি ধরে আনি নি তাদের বাবা মা অথবা আপনজন রা এসে দিয়ে গিয়েছে আসলে এটা রিহাব যারা ড্রাগস নেয় তাদের নেশা কাটানোর জন্য এখানে চিকিৎসা করা হয় আর মারাটাও এই চিকিৎসার একটা অংশ।মার ছাড়া কেউ নেশা ছাড়ে না তাই

নিরবের কথা শেষ হওয়ার আগেই মেঘলা দৌড়ে বাইরের ঘরে চলে গেল।

আকাশ আর নিরব ও মেঘলার পিছু পিছু আসল।

আকাশ আসার সাথে সাথেই মেঘলা আকাশ কে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দিল।দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব ভয় পেয়েছে।

নিরবঃ ভাবি কি হল আপনি কাঁদছেন কেন? এটা একটা ভাল কাজ আপনি মন খারাপ করবেন না প্লিজ।আকাশ তোকে আগেই বলেছিলাম কাজ টা ঠিক হচ্ছে না এই জন্যই রিহাবের ভিতরে কাওকে এলাউ করা হয় না তুই বললি জন্য যেতে দিলাম দেখ ভাবি কেমন ভয় পেয়েছে।

আকাশঃ ভয় পেয়েছিস কেন মেঘলা? তুই কি ড্রাগস নিস?

আমাকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে এখানে রাখতে এসেছে? এখানে থাকলে আমি তো মরেই যাব।কথা গুলি ভাবতেই মেঘলার কান্নার আওয়াজ বেরে গেল চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল আমি আর কখনো এই ওষধ টা খাব না প্রমিজ আমাকে প্লিজ এখানে রেখে যাবে না।আমি এখানে থাকব না প্লিজ আকাশ।

নিরব অবাক হয়ে বলল আকাশ মেঘলা এসব কি বলছে?

আকাশঃ বল্লাম না ও ভাবি হবে কিনা জানি না এই জন্য বলেছিলাম আসলে ও এডিক্টেড যদি নেশা ছাড়ে তাহলে বিয়ে করব না হলে করব না।

নিরবঃ ভাবি সত্যিই আপনি ড্রাগস নেন…..

মেঘলাঃ আমি এসব ইচ্ছা করে নি বিশ্বাস করুন।
আমি আর খাব না এই দেখুন আপনাকে টাচ করে কথা দিচ্ছি আর কখনো খাব না আপনি আকাশ কে বুঝিয়ে বলুন না।

আকাশঃ বুঝিয়ে লাভ নেই আমি সিধান্ত নিয়ে নিয়েছি তুই এখানে থাকবি।

মেঘলাঃ না থাকব না।

আকাশঃ সেচ্চায় কেউ থাকে না তুই কি করে থাকবি।

মেঘলাঃ একটা সুযোগ দাও প্লিজ আর একবার খেলে দিয়ে দিও।প্লিজ আকাশ।

আকাশঃ না কোন সুযোগ নেই নিরব কি কি ফরমালিটিস আছে করে ফেল।আমি ওকে আজকেই রেখে যাব।

নিরবঃ মেয়েটা যখন এভাবে বলছে একটা সুযোগ দে আকাশ।

আকাশঃ তুই না রাখলে অন্য জায়গায় দিতে হবে আর কিছু না…

মেঘলাঃ আমাকে রেখে যাওয়ার আপনি কে বাবা মা না চাইলে বয়ফ্রেন্ড কি করে কাওকে রিহাবে দিতে পারে?

আকাশঃ চুপ একদম চুপ একটাও কথা বলবি না।

নিরবঃ আমার আর কি বলার আছে তবে মেঘলা যুক্তি সংগত কথা বলেছে ওর বাবা মাকে একবার নিয়ে আসিস বয়ফ্রেন্ডের কথায় তো কাউকে এডমিট করা যায় না।

আকাশঃ তোর এখানে আমার ফরমালিটি মেন্টিন করতে হবে?

নিরবঃ আরে রাগ করছিস কেন? থাক কারো আসতে হবে না।ও এখানেই থাকবে।আমার প্রতিষ্ঠান আর তোর প্রতিষ্ঠান আলাদা নাকি।

আকাশঃ চিন্তা করিস না তোর দুর্নাম হবে এমন কাজ আমি করব না।ওর বাসার সবার সাথেই আমার কথা হয়েছে।

আকাশ কাগজ পত্রে সই করে মেঘলাকে রেখে চলে যাচ্ছে।

মেঘলা কান্না করছে আর ভাবছে একটা সুযোগ দিলে কি হত?ভেবেছিলাম ভেলেন্টাইনে ঘুরতে নিয়ে এসেছে এভাবে ধোঁকা দিবে ভাবতেও পাড়িনি।

আকাশ চলে যাওয়ার পর নিরব বলল ভাবি চলুন ভিতরে চলুন।

মেঘলাঃ আমি যাব না । ভাইয়া বিশ্বাস করুন আমি এডিক্টেড নই। আচ্ছা আমাকে একটা ফোন করতে দিবেন?আমি নাবিল ভাইয়াকে ফোন করে সব বলব ও নিশ্চুই আমায় নিতে আসবে।

নিরবঃ দেখো মেঘলা তুমি এখন আমার একজন ক্লাইন্ট আর এখানে ফোন করার কোন নিয়ম নেই আমি চাইলেই নিয়ম ভাংতে পারি না…কিন্তু
নাবিল আমার ভাল বন্ধু তাই ফোন করছি তবে আমি কথা বলব তুমি নও।

নিরব নাবিল কে ফোন দিল।

নিরবঃ নাবিল তুই জানিস তোর বোন কে রিহাবে দেওয়া হয়েছে।?

নাবিলঃ মেঘলা কোথায়

নিরবঃ আমার সামনেই আছে।

নাবিলঃ হ্যা ওর সুস্থ হওয়া প্রয়োজন যদিও আমি এমন টা চাই নি কিন্তু আকাশ চাইল তাই বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছি ওকে একটু দেখে রাখিস।

নিরবঃ ঠিক আছে দোস্ত রাখছি তাহলে।

নিরবঃআর নিশ্চুই কিছু শোনার নেই?

মেঘলার কান্না বেড়ে গেল।

নিরবঃ ভিতরে চলো মেঘলা আমাকে জোর করতে বাধ্য করো না প্লিজ।

মেঘলা বাধ্য হয়ে নিরবের সাথে ভিতরে গেল।
মেঘলা ভয় পাচ্ছে ভিতরে যেতে চাইছে না তাই নিরব মেঘলার হাত ধরে নিয়ে একটা বেডে বসিয়ে দিয়ে বলল এটা তোমার বেড আজ থেকে এখানেই থাকবে।

নিরব মেঘলাকে রেখে চলে আসতে চাইল কিন্তু মেঘলা নিরবের হাত আখরে ধরে বলল প্লিজ আপনি যাবেন না আমার সাথে থাকুন না আমার খুব ভয় করছে।

তখনি পাশের বেডে থাকা মেয়েটি বলে উঠল মানুষ আর পাওনি? এখানে যদি আবেগ অনুভুতিহীন কোন রোবর্ট থেকে থাকে তবে সেটা এই নিরব কিছুক্ষনের মধ্যেই উনার ভয়ংকর রুপ টা দেখতে পাবে।

নিরবঃ উনি ঠিক বলছেন আমি নাবিলের বা আকাশের বন্ধু এটা ভুলে যাও এখন আমি শুধুই তোমার যম। আগামীকাল থেকে তোমার টর্চার শুরু হবে তখন বুঝবে আমি কি? বলে নিরব চলে গেল।

মেঘলাঃ এই পৃথিবীতে আমার কোন আপনজন নেই সবাই পর এমন কি নাবিল ভাইও। কপালে কত দুঃখ লিখা আছে কে জানে? এই নিরব তো আমাকেই নিরব স্তব্ধ করে দিবে মনে হয়।৷ আর আকাশ তুমিও সত্যিই একটা ভিলেন। একটুও ভালবাসো না আমায় যদি বাসতে তাহকে আমাকে এভাবে রেখে যেতে পারতে না। তুমি যানো এখানে কিভাবে মারা হয় তাও আমায় রেখে চলে গেলে তাও আজকের দিনে আমি তোমাকে কখনো ক্ষমা করব না….

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।