‘কেন?উনি কি আমার সাথে থাকবেন?’
হুমম।’
‘জ্বী না।আপনাদের সাথে থাকুক উনি।আমি ঘুমিয়ে যাই।’
তখুনি মায়ের পিছে এসে হাফসা দাঁড়ালো।
‘না,হাফসা তোমার সাথেই থাকুক।ইনায়াত বায়না ধরেছে মাইমুনার সাথে থাকতে।’
‘ওহহ।’
আম্মু আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথায় চলে গেলেন।এর ফাঁকে আরহাম হাফসাকে উদ্দেশ্যে ধমকের সুরে বললেন, ‘আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?রুমে যান।’
হাফসা তৎক্ষণাৎ চলে গেলো।যেতে যেতে ভাবলো, ‘একটা মানুষ এত গম্ভীর কীভাবে হয়!মাঝে মাঝে এত রোমান্টিক মাঝে মাঝে এত গম্ভীর!আপনাকে আমি বুঝে উঠতে পারি না ইয়া উমরি!
৬৬
হাফসা কাপড় বের করছিলো লাগেজ থেকে।আরহাম ওয়াশরুম থেকে আসলেন।মেহেদী রঙ্গের শার্টে উনাকে প্রথম দেখা।মারাত্মক সুন্দর লাগছে।আরহাম আচমকা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরায় শরীরের প্রতিটা লোমকূপ পর্যন্তও কেঁপে উঠলো হাফসার।নড়াচড়া অব্দি বন্ধ তাঁর।আরহাম ওর কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে ধীরস্বরে বললেন, ‘শুধু দূরে দূরে থাকেন কেন!’
আরহামের শান্ত অথচ ভরাট কন্ঠটা শুনে হাফসা আচমকাই কেঁপে উঠলো।ওর কাঁপুনি আরহাম স্পষ্ট টের পেলেন।হাসি পেলো উনার।হাফসাকে তৎক্ষনাৎ ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘আমি আর ধরছি না।বি কোল।এই রাতের বেলা আপনাকে নিয়ে হসপিটাল যেতে চাই না।’
হাফসা আরহামের বলা কথাটা না বুঝে বোকার ন্যায় তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।বুঝে উঠতেই দৃষ্টি নামিয়ে নিলো তৎক্ষনাৎ।অতপর হাফসা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগোলে তৎক্ষনাৎ আরহামে এসে বাঁধা দেন।
‘শাড়ি চেন্জ করবেন না।এভাবে থাকুন।’
হাফসা আরহামের এমন বাচ্চামো আবদারে ফিক করে হেসে দেয়।বললো, ‘আসার পর থেকে তো শাড়ি পড়েই আছি।এখন আমি ঘুমাবো।এ ভারি শাড়ি নিয়ে কীভাবে ঘুমাবো?’
ওর হাত থেকে থ্রী-পিস টা নিয়ে বলেন, ‘ভালো লাগছে দেখতে।’
আরহামের এমন নাছোড়বান্দা আবদারে শাড়ী পড়েই বিছানায় আসতে হলো।আরহামও ওর পিছু পিছু দরজা লক করে এসে শুয়ে পড়লেন।হাফসা আবার উঠলো,লাইট অফ করতে।আরহাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘উঠছেন কেন?’
‘লাইট অফ করতে।’
‘না থাকুক।’
‘কেনো?’
‘দেখব আপনাকে।’
‘আজকে আপনার কি হয়েছে!জ্বর এসছে?আনকম্ফোর্ট ফিল হচ্ছে?’
আরহাম ওকে টেনে নিজের বাহুতে শুইয়ে বললেন, ‘একদম সুস্থ আছি।কিন্তু আপনি শাড়ী পড়ে আমার মাথা ওলট-পালট করে দিয়েছেন,চোখ সরাতে পারছি না।’
35★
অন্ধকার রুমে একটা এনভেলাপ হাতে নিয়ে বসে আছে রুদ্র।ঠোঁটে তাঁর বাঁকা হাসি।মন ছুটছে শত ভাবনা পেরিয়ে তৃপ্তির আনন্দ আস্বাদন করতে।ওই মায়াতুর মেয়েটার ঠিক মনে,ওর মন আটকে গেছে।কোনো ভাবেই ছুটছেই না।
হাফসার নাম কয়েকবার উল্টেপাল্টে আওড়ে তাঁর কালচে খয়েরি ঠোঁটে সিগারেট ধরায়।ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে মনে মনে আওড়ায়, তুমাকে দূরে রাখতে ইচ্ছে করে না হাফসা।এত সৌন্দর্য নিয়ে কেনো জন্মালে!প্রতিটা মুহুর্ত তুমার সেদিনের ভয়ার্ত চোখ জোড়া চোখের সামনে ভেসে ওঠে।ভয়ংকর সুন্দর চোখ তোমার,রুপ তোমার।আমার অপেক্ষার প্রহর যে শেষ হয়েও হচ্ছে না।নো টেনশন।আর মাএ কিছুদিন।তুমাকে তো আমার একান্ত ভালোবাসা নিতেই হবে,তুমি না চাইলেও।আমার তৃষ্ণাতুর চোখজোড়া দিয়ে তুমার সৌন্দর্য উপভোগ করবো আমি।
________
কাঁচের গ্লাস ভেদ করে রোদের তীর্যক আলো এসে আঁচড়ে পড়ছে আরহামের ঘুমন্ত মুখশ্রীতে।পাশেই হাফসা ঘুম জড়ানো চোখে তাকিয়ে আছে।অনেকক্ষণ ধরেই এভাবে দেখছিলো।সত্যি প্রতিবারের মতো একটা প্রশ্ন থেকেই যায়,উনি কি সময়ের সাথে আরো ইয়াং হচ্ছেন?আটাশ বছরের পুরুষটার কি বয়স বাড়ে না!
ঘড়িতে আবারও চেয়ে আরহামকে ডাকতে লাগলো হাফসা।যদিও মানুষটার ঘুম ভাঙ্গাতে ওর মোটেও ইচ্ছে করছে না।তবে উনার গন্তব্যে পৌঁছাতে অলরেডি একঘন্টা লেট।
‘শুনছেন উঠুন না।এগারো টা বেজে গেছে।’
‘হু?’
আরহাম আধো আধো চোখ মেলে তাকালে হাফসা বললো,
‘দেখুন ঘড়িতে কয়টা বাজে লেট হয়ে গেছে।’
আরহাম কথামতো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অসন্তুষ্ট হলেন।উনি বরাবরই পানচুয়াল!
‘আরো আগে ডাকলেন না?’
‘অনেকক্ষণ থেকে ডাকছি।আপনি উঠলেন না তো।’
আরহাম কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালেন তারপর মুচকি হেসে হাফসার দূগালে হাত রেখে বললেন, ‘ঘুম থেকে উঠে আপনার চেহারা দেখার মতো শান্তি আর কোথাও নেই।’
হাফসা তৎক্ষনাৎ খুশিতে হেসে দিলো।আরহাম ওর হাসির দিকে তাকাতে তাকাতেই শার্ট গায়ে জড়িয়ে ওয়াশরুমে গেলেন।
৬৭
আজ বিকেলে বাসায় চলে যাওয়ার কথা।আরহাম আসার পর যাবে সবাই।ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন সকলে।ফুপি মানতেই নারাজ আজ চলে যাওয়ার কথা শুনে।আব্বু সকালে চলে গিয়েছেন।ফুপি কোনোভাবেই মত দিচ্ছেন না।উনার কথা,এই প্রথম সবাই একসাথে হলাম,একদিন থেকেই কেন চলে যেতে হবে!আরো ক’টা দিন থাকা যায় না!
অনেক বিতর্কের পর আম্মু বললেন, ‘আরহাম মানবে না।যদি সে হাফসা মাইমুনা কে থাকার পারমিশন দেয়,তবে দেখা যাবে।এছাড়া বাড়িতেও আরহামের আব্বু একা।মানুষটা ম্যাডদের হাতের রান্না খাওয়ার অভ্যেস নেই।’
ফুপি সব যুক্তিকে পেছনে ফেলে আরহামকে কল দিতে বললেন।
_______
আরহামের এসেছেন ‘তাজওয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি’তে। আতঁরের বিজনেস আছে উনাদের।বাইরের দেশগুলোতে সাপ্লাই দেওয়া হয়।এটা এতই ফেমাস যে নিউইয়র্কে ‘তাজওয়ার’ ইন্ডাস্ট্রিজের বেশ কয়েকটা শাখা আছে।আরহামই দেখাশোনা করেন এসব।
গতমাসে বেশ কিছু গোলমাল হয়েছে ফ্যাক্টরিতে।ভালো স্মেলসহ আরো নানা লাভের সুবাদে আ্যালকোহল মিশানো হয়েছে আঁতরে।আরহাম এ নিয়ে রাগারাগি করেছেন।তাই একটা মিটিং ডাকা হয়েছে ফ্যাক্টরিতে কর্মরত উচ্চপদস্থ লোকদের নিয়ে।কড়া আদেশ দিয়েছেন, যাতে কোনো আ্যালকোহল কখনোই পরবর্তীতে ব্যবহার করা না হয়।এই মাসে তৈরী স্টোরের শতাধিক হাজারের অধিক আঁতর ভ্যান করা হয়েছে।তাতে বিরাট অংকের ক্ষতি হলেও আরহাম কোনোমতেই এগুলো বাইরে সেল করতে রাজি হচ্ছেন না।এই সব ঝামেলার রোশানলে যেনো পরবর্তী তে পড়তে না হয় সেই উদ্দেশ্যে মিটিং ডাকা হয়েছে।আটাশ জন অফিসার নিয়ে মিটিং এ বসেছেন আরহাম।আগের বছরের রেংক মনোযোগের সহিত ফলো করছিলেন আরহাম।তৎক্ষনাৎ কোথা থেকে আর-রাহমান সুরাহ’র ধ্বনি আসতেই আরহাম চোখ তুলে ফোনে তাকাতে দেখলেন হাফসা’র নাম্বার থেকে কল আসছে।আরহাম প্রথমবার ফোন সাইলেন্ট করে নিলেন।ফাইলে আবার মনোযোগ দিতেই আবার বেজে উঠলো ফোনটা।আরহাম এবার কল কেটে দিলেন।পরবর্তী তে আর হাফসার নাম্বার থেকে কল আসলো না।
_____
হাফসা মলিনসুরে বলল, ‘ফোন তুলেন নি উনি।’
ইনায়াতের সাথে বেশ ভাব জমেছে মাইমুনার।সবার আলাপ-আলোচনার অগোচরে ইনায়াতের অবাধ্য মন কিছু একটা ভেবে বসলো।পরিকল্পনায় অগ্রসর হতে আর মনের কৌতূহল মেটাতে মাইমুনার ফোন টা হাতে নিলো ও।মনে মনে ভাবলো ‘দেখি ভাইয়া কাকে বেশি ভালোবাসেন!’
_____
রেংকের পজিশন ফলো করে যার যার প্রোফাইলে কিছু একটা চেক করতে বললেন আরহাম।এই ফাঁকে একটু অবসর পেতেই ফোনটা হাতে নিয়েছিলেন আরহাম।স্ক্রীন অপেন করার সাথে সাথেই কল আসলো আবার।কি ভেবে আরহাম ফোন তুললেন।
‘ভাবি ভাবি ফোন নাও।ভাইয়া ফোন তুলেছেন।’
ইনায়াতের কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে ‘তুমি কেনো ফোন দিতে গেলে’ ইনায়াতকে এই প্রশ্নটা করবার আগেই ওপাশ থেকে সালাম ভেসে আসে।হাফসার হাসিমাখা চেহারা মুহুর্তেই মলিনতায় ছেঁয়ে যায়।এদিকে চঞ্চল ইনায়াত তো উত্তর পেয়ে গেছে।
মাইমুনার সালামের উত্তর পেয়ে এইপাশটা এখনো নীরব থাকতেই আরহাম শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বলুন!’
মাইমুনার হঠাৎ কেন জানি অস্বস্তি হলো।বুক ধুকপুক করছে অবিরত।খানিক সময় নিয়ে ঢক গিলে কিছু একটা বলবেন ভাবতেই ওপাশ থেকে আবার ভেসে আসলো আরহামের শান্ত কন্ঠ।
‘কোনো দরকার?কিছু লাগবে?’
ফুপির ইশারায় মাইমুনা প্রস্তুত হয়ে বলতে লাগলো ‘ফু পি…..মাইমুনা শতভাগ নিশ্চিত আরহাম এ আবদার অগ্রাহ্য করবেন না।তাই সাহস করে কথা আসছে না।
‘ফুপি কি?’
‘ফুপি বলছিলেন আজই চলে না যেতে।কয়েক টা দিন থেকে যেতে।’
সাহস করে বলেই কয়েকটি স্বস্তির শ্বাস নিলেন মাইমুনা। বাকিরা উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে মাইমুনার দিকে।
কিন্তু ওপাশটা এখনো নীরব।মাইমুনা আশাহত হলেন। এখন শুধু উনার ‘না’ শোনার অপেক্ষা।
ওর নেগেটিভ চিন্তা ভাবনাকে একবাক্যেই সাইডে রেখে আরহাম কোমল স্বরে বললেন, ‘আপনি আপনারা কি থাকতে চান?’
মাইমুনার অধর জুড়ে ফুটে উঠলো প্রশান্তির এক হাসি।সে হাসি আরহামের ‘সরাসরি না করার আনন্দে নয়’ দীর্ঘদিন পর আবার আগের মতো মাইমুনার ইচ্ছে কে গুরুত্ব দেওয়ার খুশিতে।
মাইমুনা ক্ষণকাল নীরব থেকে চটপটে বলল,’আপনি পারমিশন দিলে…
ওপাশে আরহাম নিঃশব্দে হাসলেন।কিছুসময় ভেবে বললেন, ‘আম্মু উমায়ের আপনি, পারমিশন দিলে যদি খুশি থাকেন,তাহলে আজ আসতে হবে না।’
মাইমুনা খুশিতে হেসে ফেললো।এতদিন পর!আরহামের কোমল কন্ঠস্বর ওর হৃদয় নাড়িয়ে দিয়েছে।এত খুশি ও কোথায় রাখবে!
ঠোঁটে নিঃশব্দে হাসি রেখেই বলল, ‘জ্বী, আ…
আরহাম ওপাশ থেকে ব্যস্ত স্বরে বললেন, ‘পরে কথা বলি।রাখছি।’
কলটা কেটে দিলেন আরহাম।তাতে মাইমুনার একটুও দূঃখ নেই।ওর তো খুশির ফোয়ারা বয়ে চলছে ভিতরে ভিতরে।
বাকিরা উৎসুক দৃষ্টি জোড়া মাইমুনা তে আবদ্ধ রাখলেও হাফসা নীরস চোখে তাকিয়ে আছে।
মাইমুনা উৎফুল্ল কন্ঠে বলল, ‘উনি পারমিশন দিয়েছেন।’
মাইমুনার সাথে সবচেয়ে খুশি হলেন ফুপি, ইনায়াতও।অথচ মাইমুনা এটা বললেন না আরহাম হাফসা আর আম্মুর ইচ্ছেও জানতে চেয়েছিলেন।
হাফসার মনে একটু দূঃখ লাগলো।উনি আমার কলটা তুললেন না।যাক গে,বিজি হয়তো।
৬৮
গোসল করে যোহরের নামাজ পড়ে তিলাওয়াত করে ঘুমিয়েছে হাফসা।দিনে ঘুমোনোর অভ্যেস নেই ওর।রাতের ঘুম অপূর্ণ থাকায়ই চোখ বুজে আসছিলো।
মাইমুনা আর ইনায়াত গেছেন বাসা ঘুরে দেখতে।ইনায়াত-ই বায়না ধরছিলো মাইমুনাকে নিয়ে হাঁটবে। মাইমুনার ইচ্ছে ছিলো না।তবে আজ মন ভালো থাকায় ইনায়াতের কথায় না করতে পারলো না।
______
মিটিং শেষ হওয়ার পর নামাজ থেকে এসেই হাফসার নাম্বারে কল করলেন আরহাম।নিশ্চয়ই কোনো দরকারে কল দিয়েছিলেন তখন।দূবার রিং হয়ে ফোনটা কেটে গেলো।ওপাশ থেকে উনি ফোন তুললেন না।না চাইতেও মন খারাপ হলো আরহামের।অথচ ওপাশে উনার পুষ্প তো ঘুমে!
ফোন পকেটে রেখে রওয়ানা হলেন মাদ্রাসার দিকে।
________
‘এত তাড়াতাড়ি কেনো চলে যাবি রুদ্র।এলি-ই তো কয়েকদিন হলো।বাড়িতেও থাকলি না তেমন।’
‘আবার আসবো তো মা!ইমার্জেন্সী কাজ পড়েছে তাই যাচ্ছি।’
‘তাহলে বাড়িতে আয় শিগরির।যয়দিন দেশে আছিস,বাড়িতেই থাকবি।’
‘ওকে আসবো।’
‘কত রোজায় যাবি বললি?’
‘পঁচিশ।’
মা কিছুটা মলিনস্বরে বললেন, ‘আমি আরো তর জন্য পাএী….’
মায়ের কথা পুরোটা না শুনেই লাইনটা কেটে দিলো রুদ্র।
ফোন পকেটে রেখে উদ্ভট হাসলো রুদ্র।সিগারেট ধরিয়ে ফোন থেকে হাফসার ছবিটা বের করে লাগাতার চুমু খেয়ে বলল, ‘যদি আমার বউ হওয়ার কারো যোগ্যতা থাকে,তবে সেটা তোমার হাফসা।আই নীড ইউ।ব্যাডলি নীড ইউ লাভলীগার্ল।’
_________
আসরের নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছেন আরহাম।গাড়িতে বসেই হাফসাকে কল দিলেন।উনার সাথে কথা না বলা অব্দি শান্তি পাচ্ছেন না।
ওয়াশরুম থেকে বেরোতে বেরোতেই প্রথম কলটা কেটে গেলো।হাফসা একনজরে তাকিয়ে রইলো উনার নম্বরের দিকে।
পরপর আবার কল আসলেই টাওয়াল দিয়ে ভেজা হাত মুছে ফোন তুলল।
সালাম বিনিময়ের পর আরহাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘সরি।বিজি ছিলাম।তাই ফোন ধরি নি।’
‘আচ্ছা।’
‘কি জন্য ফোন দিয়েছিলেন?’
‘তেমন কিছু না।’
‘কেমন কিছু?’
‘কিছু না।’
‘কি করছিলেন তখন?’
‘ড্রয়িংরুমে ছিলাম।’
‘আর কে ছিলো?’
‘সবাই।’
‘মাইমুনা ও?’
‘হুমম।’
আরহাম নিজের প্রতি-ই নিজে বিরক্ত হলেন।উমায়ের এর কল এভোয়েড করে মাইমুনার কল তুলেছেন।খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক।কারন দূজন একসাথে ছিলেন।নিজেকে সামলে ধীরসুরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কি রাগ করেছেন উমায়ের?’
‘উহু।’
‘সত্যি তো?’
‘রাগ নেই।’
প্রিয়তমার বাঁকা উত্তরেই আরহাম মন বুঝে ফেললেন।রাগ করেছেন আপনি।এখন রাগ ভাঙ্গাতে হবে আপনার!
ফোন রেখে ড্রাইভারকে গাড়ি ঘুরিয়ে ফ্লাওয়ারস সপে যেতে বললেন।
বাড়ি ফিরে সোজা দোতলায় চলে গেলেন আরহাম। যেখানে হাফসা থাকে।রুমে এসে দেখলেন হাফসা নেই।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন হাফসা আসার।
ছাদ থেকে কাপর নিয়ে রুমে আসছে হাফসা।দূইবার উঠবে বলে একসাথেই সব কাপরে নিজেকে একদম দৈত্য সাজিয়ে রুমে আসছে হাফসা।সামনের দিক দেখতে পারছে না।কাপড়ের গাট্টি বিছানায় রেখেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে মাথা থেকে কাপর সরিয়ে আরহাম ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন।হাফসা জিভ কেটে বললো, ‘সরি।আমি দেখতে পাইনি।’
আরহাম ওর কথার উত্তর না দিয়ে ওঠে এসে সালাম দিলেন।সালাম পর্ব শেষে হাফসা নিচে যেতে চাইলে আরহাম ওকে আটকে দরজা লক করলেন।আবার পূর্বের জায়গায় ফিরে এসে ওর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আফওয়ান।’
‘কেন?’
আরহাম আলগোছে টেবিলে রাখা ছোট্ট গোলাপ আর বেলী ফুলের তোড়া হাফসার সামনে ধরে বললেন, ‘ফুল দিয়ে কিছু একটা নিশ্চয়ই বলে,বাট আমি জানি না।আমি নাহয় ফুল দিয়ে ‘আফওয়ান’ বললাম।রাগ করবেন না প্লিজ।ইট ওয়াজ এ্যা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং।আই এম ভেরী সরি।’
হাফসার খানিক অভিমান ছিলো।তবে তা আরহামকে বুঝতে দিতে চাইছিলো না।কিছু অভিমান লুকায়িত রাখা শ্রেয়।কিন্তু উনি যেনো কীভাবে বুঝে ফেলেন।না বললেও মন খারাপ থাকলে বুঝে ফেলেন, লুকিয়ে লুকিয়ে রাগ করলেও কীভাবে যেনো বুঝে ফেলেন।হাফসা বিস্তর হাসলো।খুশি হয়ে বলল, ‘থ্যাঙ্কস এ্যা লট।’
আরহাম সন্তুষ্ট হলেন।জিজ্ঞেস করলেন, ‘রাগ কমেছে হোমাপাখি?’
‘না কমে উপায় আছে।’
আরো কিছুক্ষণ হাসি-আলাপ করে আরহাম রুমে চলে গেলেন ফ্রেশ হতে।হাফসা উনার যাওয়ার পানে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে বলল, ‘শুকরান লাক ইয়া মা’বুদ।’
অতঃপর বেলী আর গোলাপের সুবাসে নাক ডুবিয়ে মাতোয়ারা হয়ে গেলো।
_______
তারাবীহ আদায় করে বাসায় ফেরা হলো না।আরহামের আব্বুর কোনো এক ছেলেবেলার বন্ধুর সাথে দেখা হওয়ায় জোর করে উনার বাসায় নিয়ে গেলেন।ঘড়ির কাটা একঘর একঘর করে বেড়ে চলেছে তবে দূজনের খোশালাপ শেষ হচ্ছে না।অনেকদিন পর দেখা বলে কথা!আরহাম সোফার একপাশে চুপচাপ বসে আছেন।ইমার্জেন্সী একটা ফোন আসায় বাইরে বেরোলেন।
ফোনে কথা বলা শেষ করে যখন ভেতরে যাবেন তখুনি আচানক কেউ পথ আটকে দাঁড়ালো।অন্ধকার পেরিয়ে সামনে তাকাতেই একজন মেয়ে উদয় হলো।আরহাম অবয়ব টা পুরোপুরি বুঝার আগেই সে বলে উঠলো, ‘ইউ নো হুয়াট?আপনাকে দেখার খুউব খুউব ইচ্ছে ছিলো আমার।বলতে পারেন,স্বপ্ন ছিলো,স্বপ্ন!’