অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ৩৭

13 Min Read

আরহাম ঠোঁট তুললেন বেশ কিছুক্ষণ পর। হাফসার গালে কপালে চুমু দিয়ে দেখলেন,হাফসা লজ্জা পাচ্ছে। আরহাম এই সুযোগে বললেন, ‘আবার দিই?’

‘উহু।’

উনি মিনমিনে স্বরে বললেন, ‘কাঁদলে দিব কিন্তু। পারমিশন নিবো না।’

তারপর হাফসাকে বসিয়ে ওর পেটের মাঝে আলতো করে স্পর্শ করলেন আরহাম।উনার চোখেমুখে খুশি চকচক করছে।ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসেছেন আরহাম। হাফসার পেটে আস্তে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘একটু কি অনুভব করা যায় তাকে?’

হাফসা মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো।আরহাম কিছুক্ষণ কান লাগিয়ে কিছু শুনতে চাইলেন। কিন্তু কোনোকিছু না শুনতে পেয়ে ঠোঁট উল্টে চেয়ে রইলেন হাফসার দিকে।হাফসা হেসে দিলো।

আরহাম ওকে তুলে বললেন, ‘নামাজ পড়ি একসাথে? এত বড় গিফটের জন্য কি শুকরিয়া আদায় করবো না?’

রাত…
হেমন্তের শিউরে উঠা বাতাসে আদওয়ার এলোচুল উড়ে।ব্যস্ত শহরে সব নিয়মমাফিক হয়,শুধু হয় না ওর ভালো থাকা।নিভে যাওয়া রোদ্দুরে স্কুল ব্যাগ কাঁধে কারো জন্য অফিসের সামনে অপেক্ষা করা হয় না অনেকদিন।টেবিলের ভেইজে বেলী ফুলের মালাও নিয়মমতো শুকায় না!ডেইলি রুটিনের দেয়ালের ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট চিঠি ভাঁজ করা থাকে না।ব্যাগের সাইড পকেটে প্রিয় বাদামি জমা হয় না অনেকদিন!এখন সে আর ব্রিজে যায় না!দেরি করে ফিরার জন্য মায়ের বকা খাওয়া লাগে না এখন!সময়মতোই বাসায় আসা হয়!বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলার অভ্যাসটাও ছেড়ে গেছে।’ইমান’ মানুষটা হয়তো ওর কিশোরী বয়সের আবেগ ছিলো!কিন্তু তাঁর সাথে মারাত্মক সুন্দর অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে!

এসব ভাবনার মধ্যেই মিসেস সেমু পারমিশন না নিয়েই হঠাৎ রুমে চলে আসলেন।মায়ের হাতে বালিশ দেখে আদওয়া লম্বা শ্বাস নিয়ে বলল,’কিছু করব না আমি।তুমার রুমে যাও।’

মিসেস সেমু মলিন মুখে এগিয়ে আদওয়ার হাত টা হাতে নিলেন।যেখানে নতুন ব্যান্ডেজ এখনো লাগিয়ে আছে।আছড়টুকু শিরা স্পর্শ করে নি।এটা হলো অপূর্ণতার দূ:খে নিজের বোকামি!

ভেজা চোখে মাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো সে।ধরে আসা গলায় ক্ষীণ আওয়াজে বলল, ‘লোকটা খুব স্বার্থপর মা।’

*****
নিশুতি রাত।দূজনে শুয়ে আছে।আরহামের চোখে ঘুমের কোনো অস্তিত্ব নেই।না চাইতেও ভয় লাগছে বারবার।কেন এমন হচ্ছে!

চোখবুঁজে একটা বার চিন্তা করলেন,হাফসার অনুপস্থিতিতে উনি কীভাবে থাকবেন?

মুহুর্তেই দমবন্ধকর অনুভূতি হলো উনার।এই মেয়েটা আমার হৃদয়ের অংশ।বাম পাঁজরের হাড়ের অস্তিত্ব। আপনাকে ছাড়া থাকবো,এটা চিন্তা করতেই আমার রুহ কেঁপে উঠে।

ঘড়ির কাঁটা এগারো টা থেকে একটা পেরোয়।কারো চোখে ঘুম নেই। আরহাম বুঝতে পারছেন,হাফসা এখনো জেগে আছেন।আরহাম খুব অনুতপ্ত। প্রিয়তমাকে হারানোর কথা বলেই মানসিক ভাবে দূর্বল করে দিয়েছেন। মানসিক যন্ত্রণা যে কত্ত ভয়াবহ!ওয়াল্লাহি।আর উমায়ের নিজের ভেতরে সব হজম করার ক্ষমতা নিয়ে বসে আছেন। এত অমানবিক যন্ত্রণা, কষ্ট, কথা দিয়েও যাকে টলানো যায় নি,এত অত্যাচারের পরেও যে টু শব্দ টা পর্যন্ত করেনি,সে নিশ্চয়ই ভেতরের অসীম যন্ত্রণা প্রকাশ করবে না।

কখন থেকেই ছটফট ছটফট করছে,একবার এপাশ তো আরেকবার ওপাশ।ওয়াশরুমেও গিয়েছেন কয়েকবার।ঘুমাচ্ছেন না কেন আপনি!

আরো সময় পেরোলো।মধ্যরাত।তাও দূজন নির্ঘুম।অথচ হাফসা জানেই না,তাঁকে এত ভালোবাসার মতো পাশে একজন আছে।

আরহাম হাফসার পাশে আসলেন।জিজ্ঞেস করলেন, ‘উমায়ের ঘুমাচ্ছেন না কেন?’

60★

আরহাম হাফসার পাশে আসলেন।জিজ্ঞেস করলেন, ‘উমায়ের! ঘুমাচ্ছেন না কেন?’

‘আ আ আপনি জাগলেন কেন?’

‘আপনাকে নির্ঘুম রেখে আমি ঘুমাতে পারি না।’

‘কিছু লাগবে? ‘

আরহাম প্রিয়তমাকে টেনশন থেকে ক্ষণিকের জন্য মুক্ত করতে বললেন, ‘ইয়েস!আই নীড লাভ।’

হাফসা লজ্জা পেলো। আরহাম ওর বুকের মাঝে মুখ গুজে রইলেন কিছুক্ষণ।

‘উমায়ের!’

‘হুমম।’

‘একটু ভালোবাসি?’

…..

*****
সময়টা তখন দূপুরের।তীর্যক রোদে এ-সময় টায় জায়গাটা পুরো ছিমছাম।মানুষ তো দূর।একটা রিকশা পাওয়ার ও জো নেই।

মাস্ক মুখে ঘামের ফোটা ঝরছে।মাথাব্যাথায় ক্রমশ দূর্বল হয়ে আসা শরীরটা নিয়ে রাস্তার পাশ ঘেঁষে কোচিং থেকে ফিরছে আদওয়া।

একান্ত ভাবনায় মশগুল মস্তিষ্ক হঠাৎ ঠনক নাড়লো যখন শুনলো আশপাশে কারো ভরাট গলার আওয়াজ।সামনে রাস্তার মোড়ে তাকিয়ে বুক ধড়ফড় করে উঠলো ওর।চার-পাঁচটা মাস্তান টাইপ ছেলে কেউবা বাইকে বসে,একেকজনের কাঁধে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সানগ্লাস বুকে নামিয়ে ওর দিকেই তীক্ষ্ণ চোখে তাকাচ্ছে তারা।

অসহায় চোখে আশপাশে চোখ বুলালো সে।কিন্তু জনমানবহীন এই জায়গায় একটা পঙ্খীকুলের আওয়াজ পাওয়াও দূষ্কর।
ভাবলো আবার উল্টোদিকে ফিরে যাবে, পরক্ষণেই মনে হলো,ওদের বাইক আছে।কিছু দূর উল্টো হাটলে গলির পথ!সেদিকেও বিপদ।ভয়ে কান্না চলে আসছে তার।পা যেন এক কদম এগোনোর শক্তি পাচ্ছে না।নিজের অসারতা লুকিয়ে দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে সামনে এগুতে থাকলো সে।

তাদের পাশ কেটে যাওয়ার সময় মনে হলো,পা যেন মাটির সাথে আটকে যাচ্ছে।তাদের হাসাহাসি,অকথ্য কথা হজম করতে সামনে এগুতে গেলেই একজন এগিয়ে এসে বলল, ‘তুমাকে বাসায় পৌঁছে দিব সুন্দরী?রোদে তো স্কিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তুমার।’

চুপচাপ এগিয়ে যেতে নিলে তিন চারজন এসে ঘেরাও করলো চারপাশে।পা থেমে গেল ওর।কাঁপা কাঁপা দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকাতে দেখলো,হিংস্র বাঘের চেয়েও ধারালো দৃষ্টি তাদের।কান্না জড়ানো কন্ঠে বলল, ‘প্লিজ আমাকে যেতে দিন।বাড়ি যাব আমি।’

‘আটকাচ্ছি না তো পাখি, যাও।’

মিথ্যে অভয় নিয়ে পুনরায় এগোতে গেলে পুনরায় পিছু আসে তারা।আদওয়া থেমে গেলো।অনুরোধের সুরে বলল,’প্লিজ আমাকে যেতে দিন।’

আচমকা একজন সামনে এসে বলে, ‘তুমার মাস্ক নামাও তো।দেখি আজকের খাবার কেমন?’

আর কিছু বলার সাহস হলো না আদওয়ার।ভেটু ভেঙে কেঁদে ফেললো সে।কান্নাভেজা ঝাপসা চোখে দেখছে লোকগুলো এগিয়ে আসছে।তবে কি তাকে তারা হ্যারেজ করবে?পবিত্র আত্নাকে কলুষিত করবে!এরা কি শান্তিতে বাঁচতেও দিবে না!

৯৭
তিনি একটু নড়েচড়ে বসে আচমকা একটা গান হাতে তুলে বললেন, ‘এখানে সাক্ষী দেওয়ার মতো কেউ নেই যে আমি মারলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করবে or সাক্ষী দিবে।উনি(আদওয়া) তো দিবেন না কারন তিনি ভিক্টিম।’

গান দেখে লোকগুলোর সাহস যেন চাপা পড়ে গেলো।তবুও একজন দৃঢ়স্বরে বলল, ‘গান দেখিয়ে লাভ নেই।আমাদের পাঁচ জনের কাছে পাঁচটা হাতিয়ার আছে।কিছুই করতে পারবে না।’

‘রিয়েলি?ওহহো আই এম ভেরী স্কেয়ারড!’

আরেকজন তোতলাতে তোতলাতে বলল, :ভা্ ভালোয় ভালোয় চলে যাও।নাহলে খ্ খারাপ হবে।’

‘আমাকে মেরে ফেলবে?’

‘হ্যাঁ।’

‘আচ্ছা দেখি।কাম।’

আদওয়া ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে।লোকটার সাহস তো কম নেই।ওরা সত্যি সত্যি কিছু করবে না তো…

একজন একটু ভয় নিয়েই এগিয়ে আসতে তিনি গানের ট্রিগারে আঙ্গুল রাখলেন।ভয়ে আবার দূ কদম পিছিয়ে নিজের জায়গায় চলে গেলো সে।একজন আরেকজনের দিকে মুখোমুখি তাকানো শেষে চুপচাপ বাইকে উঠে চলে গেলো তারা।

তিনি জানালার বাইরে মুখে বাড়িয়ে বাইকের নাম্বারগুলো দ্রুত নোটিশ করে নিলেন।

তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাস্ক নামিয়ে বেরিয়ে আসলেন তিনি।
গাড়ির দরজা খুলে উঠতে বললে আদওয়া তৎক্ষনাৎ বলে উঠে, ‘আপনার গান আছে?’

‘ডুপ্লিকেট।’

ড্রাইভ করতে করতে খানিক এগোনোর পর জিজ্ঞেস করলেন, ‘এড্রেস কি বাসার?’

আদওয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো।আমাকে কি চিনেন নি এড্রেস জিজ্ঞেস করছেন!চিনবেন কি করে?লোকটার দৃষ্টি তো আমার চেহারা পর্যন্ত উঠে না!

এড্রেস বললে চুপচাপ ড্রাইভ করতে থাকলেন তিনি।আদওয়া তো তাকে দেখছেই!কোথায় গেলো ওর মাথাব্যথা!কোথায় গেল ভয়!বরং মনে মনে গত হওয়া ঘটনার জন্য খুশিই লাগলো ওর!কীভাবে হিরোর মতো এসে ভিলেনের মতো ভয় দেখিয়ে রোমিওর মতো বাঁচিয়ে নিলেন!

কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে ভ্রু কুঁচকে গেলো উনার।এ বাসা পরিচিত লাগছে।এই প্রথমবার আদওয়ার চোখের দিকে তাকাতে ওকে চিনলেন তিনি।ততক্ষণে উড়নচণ্ডী মেয়েটা তাড়াতাড়ি বের হয়ে এসে বলল,’বাসায় চলুন।আপনি এতো বড় উপকার করলেন!মা কে…

‘সময় নেই।’

‘প্লিজ প্লিজ ওনলি ফাইভ মিনিটস।’

‘একা কোথাও বের হবেন না।কাউকে সাথে নিয়ে বের হবেন।’

‘যাবেন না বাসায়?’

‘আই হ্যাভ টু গো।’

বলে তাড়া দেখিয়ে চলে গেলেন তিনি।গাড়ি আড়াল হওয়ার আগ পর্যন্ত আদওয়া তাকিয়ে রইলো।অতপর খুশিতে হাসতে হাসতে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পড়ে গিয়েও কোনোমতে উঠে গেল।
বাসায় ডু্কতে মা হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজ এতো দেরি হলো যে?’

‘ইভ টিজারদের হাতে পড়েছিলাম মা।কেউ ছিলো না।আমি একা।ওরা চার পাঁচজন।’

মা ভয়ে মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে রইলেন।আদওয়া হেসে বলল,’আমি জানতাম এমনই রিয়েকশন হবে তোমার।’

‘এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়ে এত খুশি তুমি?কোনো বিপদ হয় নি তো?’

আদওয়া আয়েশ করে সোফায় বসতে বসতে বলল,’বিপদ হওয়ার সুযোগই তো নেই মা।উনি হিরোর মতো আমাকে বাঁচিয়ে নিয়েছেন!ইসস কি এক্সপ্রেশন ছিলো তখন!বাপরে বাপ এত সাহস!’

মেয়ের কথার মারপ্যাচ কিছু না বলে জিজ্ঞেস করলেন,’উনি টা কে?’

আদওয়া হাতটা তুলে দেখিয়ে বলল, ‘যার জন্য এটা।’

মা স্থির হয়ে গেলেন তৎক্ষনাৎ।জিজ্ঞেস করলেন, ‘আরহামকে পেলে কোথায়?’

‘রোডে।বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন।’

‘নিয়ে আসলে না?’

‘বলেছি তো।আসেননি।’

‘ওহহ।’

আদওয়া হঠাৎ চিন্তিত হয়ে বলল, ‘মা আমি কি খুব ভুল করলাম উনাকে না এনে?জোর করে নিয়ে আসা উচিত ছিলো?’

মিসেস সেমু আর উত্তর দিলেন না।এই মেয়ে আরেকটা ইস্যু পেয়েছে।সামনের দশ পনেরো দিন এটা নিয়েই চিন্তা করে কাটিয়ে দিবে!

আদওয়া কল্পনা করতে লাগলো সেই সিন।লোকগুলো যখন চারিদিক থেকে এগিয়ে আসছিল আচমকা জোরে ব্রেক কষে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়।গাড়ির মিররে সবচেয়ে সুন্দর একজোড়া চোখ দেখতেই সব ভয় গুড়িয়ে যায় তার।এ চোখজোড়া খুব পরিচিত ওর।ঘন পাপড়ির চোখ,কপালের মাঝ বরাবর তিল,জোড় ভ্রূর চোখ তো ওর নিত্যসময় দেখা!বাস্তবে না হোক,লক স্ক্রীনে!

তাদের উদ্দেশ্যে তিনি প্রথমেই শান্তসুরে বলেছিলেন, ‘লেট হার গো।’

সর্দারটাইপের একটা ছেলে এগিয়ে এসে বলল, ‘তুমি কে?আমাদের ওর্ডার দেওয়ার?’

‘বাসায় আসুন একদিন পরিচিত হবো।এখন উনাকে যেতে দিন।’

‘দিব না কী করবে?’

তিনি একটু নড়েচড়ে বসে আচমকা একটা গান হাতে তুলে বললেন, ”এখানে সাক্ষী দেওয়ার মতো কেউ নেই যে আমি মারলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করবে or সাক্ষী দিবে।উনি তো দিবেন না কারন তিনি ভিক্টিম।

******
গত হয়েছে বেশ কিছুদিন।হাফসার প্রতি কেয়ার দ্বিগুন বেড়ে গেছে সবার।সবার হাসিমুখের আড়ালে আরহামের ভয়জড়ানো একজোড়া চোখ দৃষ্টি অগোচর হয় না হাফসার।তবে রবের প্রতিই যখন ভরসা,ভয়কে তো জয় করতেই হয়।

জ্যামের মধ্যে বসে আছি বেশ কিছুক্ষণ হলো।মনে হয় না সহজে ছুটবে।ঘন্টাখানেক লাগবেই।হসপিটালে আসার তারিখ ছিলো আজ।আরহাম টুপি খুলে কপালে আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করছেন।এসিতে থেকেও দরদর করে ঘেমে চলছেন উনি।গায়ের কালো পাঞ্জাবি ভিজে বুকের সাথে চিপকে আছে।

হাফসা সিটে হেলান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।চোখ পড়লো একটা বাইকে।বাইকের পিছনে বসা একটা মেয়ে গ্লাস পেরিয়ে আরহামের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাচ্ছে।হাফসার রাগ হলো ভীষণ।মাথা তুলে আরহামকে আড়াল করলো ও।বিড়বিড় করে বলল, ‘ভাল্লাগে না,খালি মেয়েরা তাকায়!পুরুষ মানুষ দেখে নি কী জীবনে!’

আরহাম হঠাৎ হেসে ফেললেন শব্দ করেই।কিছুক্ষণ ধরেই ফ্রন্ট মিররে হাফসার চোখাচোখি সংঘর্ষ দেখছিলেন তিনি।শেষটা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন!

হাফসা রাগ নিয়ে বলে, ‘গ্লাস লাগিয়ে হাসুন।’

‘সরি।’

হাফসার মাথা ঝিমঝিম করছে।অতিরিক্ত গরমে মাথা ঘুরছে। কিছুক্ষণ পর আনমনে সিটে হেলান দিতেই ভুলবশত পড়ে যেতে নিলে,আরহাম তৎক্ষনাৎ হাত দিয়ে ধরে ফেললেন।

‘আহা!ঠিক আছেন?’

‘হুমম।’

উনি ছাড়লেন না।একহাতে ধরেই গাড়ির কালো গ্লাস তুলে ফেললেন।
বললেন, ‘নিকাব খুলে ফেলুন।’

‘উহু সমস্যা নেই।’

‘আমার সমস্যা।শুধু হিজাব থাকুক।গ্লাস আছে সমস্যা নেই।’

হাফসা ইতস্তত বোধ করলো বটে।তবে নিকাব খুলে শান্তির নি:শ্বাস ফেললো।

সাদা হিজাবে ভীষণ মায়া লাগছে হোমাপাখিকে।কিছুক্ষণ অপলকভাবে তাকিয়ে পিছন দিক থেকে বাহুতে হাত নিয়ে একটানে কাছে আনলেন। ঠিক বুকের সাথে মাথা লাগিয়ে ধীরসুরে বললেন,’ শুয়ে থাকুন।ঘুম পেলে ঘুমিয়ে যান।’

‘পাচ্ছে।’

‘আচ্ছাহ।ঘুমান’

হাফসা আরহামের বুকে আসতেই আরহামের বুক টিপটিপ করতে থাকে।ইদানীং হাফসা বুকে আসলে এমন ভয়টাই হয় প্রতিবার।শক্তপোক্ত ধৈর্যশীল মনকে মুহুর্তে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে এই ভয়টাই যথেষ্ট!

********
সময়টা বিকেলের~
ভাগ্নে-ভাগ্নির সাথে কানামাছি খেলছিলেন মাইমুনা।ওরা এসে ছুঁয়ে যাওয়ার সময় ধরতে হবে।মনটা খুব খারাপ ছিলো পুরোদিন।আরহামকে সকালে একবার কল দিয়ে
বিজি পেলেন,দূপুরে কল দিতে কেটে দিলেন।নিজে তো দেননি,উল্টো কল কাটছেন।সকালে একটা টেক্সট দিয়েই দায়িত্ব শেষ।নতুন মেহমানের জন্য আরহাম উমায়েরকে বেশী টাইম দেন আজকাল!

মন খারাপ দেখে কিরান,ইরাম আর ইনান এসে বাইরে নিয়ে আসলো।শিশুদের সাথে থাকলে মন ভালো হয়ে যায়।আড্ডাটা ভালোই জমে উঠছিল।বাচ্চারা খিলখিল করে হাসছে,আর ছুঁয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মাইমুনা কাউকেই ধরতে পারছেন না।আচমকা কারোর হাত ধরেই ফেললেন।শিশুরা খানিক চুপ হয়ে আবার হাসতে লাগলো।অথচ মাইমুনা বুঝলেন না হাতটা বড় কেন!তাও হাতভর্তি পশম লাগছে!

কথা আটকে থাকলো না তাদের।আরহামের চোখের ইশারা ভেঙ্গে একজন বলেই ফেললো, ‘মামা এসেছে,মামা এসেছে।’
দ্রুত চোখ থেকে পট্টি খুলে আরহামকে দেখে অধর প্রসারিত হয় উনার।পরক্ষণেই অভিমানে মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে চেয়ে রইলেন।আরহাম মিষ্ট হেসে ব্রেন্চের দু-পাশে হাত রেখে ঝুঁকে চুমু খেয়ে নিলেন মাইমুনার কপালে।পরক্ষণেই জিভ কাটলেন।ইতিমধ্যে নিজের কর ভুলের মাশুল যে অসাধ্য এটা বুঝতে নিজের প্রতি রাগ হলো উনার।স্লোগান অলরেডি উঠে গিয়েছে, ‘মামা আন্টিকে চুমু দিয়েছে,মামা আন্টিকে চুমু দিয়েছে।’

আরহাম অসহায়সুরে মাইমুনাকে বললেন, ‘যেকোনো ভাবে এদের থামান,নাহলে চলে যাব।’

‘এদের থামানোর আমার সাধ্যি নেই।ভুল জায়গায় কেন ভুল করে বসলেন?’

আরহাম বিনাবাক্যে চুপ করে রইলেন।শ্বশুরবাড়ি এসে ইজ্জত টা যে এত বাজেভাবে যাবে,কল্পনাও করেননি তিনি!

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।