অফিডিয়ান | পর্ব – ১৭

15 Min Read

23. সন্ধ্যা নাগাদ বাড়ি ফিরে গাড়ি থেকে জিনিসপত্র নামিয়ে রুমাইশাকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন আয়েশা আর শামসুল। রুমাইশা আয়েশার কাধে ভর দিয়ে হেটে চলল নিজের রুমের দিকে৷ ধীরে ধীরে রুমে পৌছালো রুমাইশা৷
বিছানায় রুমাইশা কে শুইয়ে দিয়ে গায়ে কাথা টেনে দিয়ে রুমাইশাকে বিশ্রাম নিতে বলে চলে গেলেন আয়েশা খানম।

অনেক গুলো দিন পর নিজের রুমে এসে রুমাইশার কেমন জানি ফাকা ফাকা ঠেকলো। কিন্তু জ্বরের ঘোরে এসব নিয়ে ভাবার সময় পেলো না ও। বিছানায় যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো ও।

রাতে একবার খাবার খাওয়ার জন্য রুমাইশাকে ডেকে তুললেন আয়েশা। রুমাইশা কে মুখে তুলে খাবার খাইয়ে দিয়ে এক গ্লাস দুধ খাওয়ালেন। তারপর ওষুধ খাইয়ে দিলেন ।
খাওয়া দাওয়া শেষ করেই আবার শুয়ে পড়লো রুমাইশা৷
ক্লান্তি আর অবসন্নতায় জেগে থাকার ফুরসত পেলো না। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার ঘুমিয়ে পড়লো৷ আয়েশা খানম ঘুমালেন আজ ওর সাথে৷ পাশে শুয়ে মেয়ের মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলালেন৷

খুব মেয়ের শখ ছিলো ওনার৷ কিন্তু বিয়ের পর প্রথমেই হলো রাফসান৷ ছেলে হওয়াতে যে অখুশি হয়েছিলেন আয়েশা সেটা ও নয়। আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তায়ালা যেটা ভালো মনে করেছেন সেটাই দিয়েছেন ভেবে নিজেকে আস্বস্ত করেছিলেন আয়েশা।
রাফসান হওয়ার দুবছরের মাথায় আবার সন্তানসম্ভবা হলেন আয়েশা। আয়েশার শাশুড়ী ব্যাপার টা মোটেও ভালোভাবে নিলেন না৷ কারণ রাফসান এখনো ছোট, এইসময়ে আবার বাচ্চা নিয়ে ফেললো আয়েশা। এক রাফসান কে দেখে রাখতেই আয়েশার শাশুড়ীর প্রাণ যায় যায় অবস্থা!

আয়েশার মা ছিলেন না, তাই সব চাপ এসে পড়তো শাশুড়ির ওপর। তিনি বৃদ্ধা মানুষ, তিনি আর কতটুকুই বা করবেন৷ তিনি বলে দিলেন বাচ্চা হওয়ার পর তার ওপর যেন কোনো চাপ না পড়ে। রাফসান কে দেখছেন সেটা ঠিক আছে, উনি দেখবেন ও৷ কিন্তু এই অনাগত বাচ্চা টার কোনো কিছু করতে পারবেন না তিনি, সব আয়েশা কেই করা লাগবে৷

মায়ের কথায় তখন কোনো প্রতিক্রিয়া জানান নি শামসুল। ব্যাপার টাকে সম্পুর্ন বউ শাশুড়ীর ঝামেলা মনে করে এড়িয়ে গেছেন।

প্রেগ্ন্যাসির সময় টায় আয়েশাকে ভালোই যত্ন করেছিলেন তার শাশুড়ি। আয়েশার খাওয়া দাওয়া ওষুধ পত্র এসব কিছুর খেয়লা বেশির ভাগ উনিই রাখতেন৷ তারপর সময় মতো আয়েশার কোল আলো করে এলো রুমাইশা।

আয়েশা শামসুল দুজনেই মেয়ে হয়েছে দেখে প্রচণ্ড খুশি হলেন৷ কিন্তু শামসুলের মা খুব একটা খুশি হলেন না। তাই যেটুকু না করলেই নয়, সেটুকুই করলেন তিনি।

শামসুলের মা আয়েশা কে কোনো কিছু করে দিতে পারবেন না বলে আয়েশা আর রুমাইশা কে দেখা শোনার জন্য শামসুল একজন হেল্পিং হ্যাণ্ড রাখলেন৷ কিন্তু এতে বিপত্তি বাধলো আর ও বেশি৷

আয়েশার শাশুড়ী এসে শামসুলের সাথে ঝামেলা করলেন, যে রাফসান হওয়ার সময় ও যদি একজন হেল্পিং হ্যান্ড রাখতো শামসুল তাহলে তো তার ওপর এত চাপ পড়তো না৷ এত সব কাজ তার একা একা করা লাগতো না! বুড়ো বয়সে এসে তাকে বাড়ির সমস্ত কাজ করতে হয়েছে।

শামসুল তখন তার মা কে কোনো রকমে বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্ত করেন। পরবর্তী তে তিনি আর ঝামেলা না করলেও রুমাইশা কে রাফসানের মতো করে দেখতেন না, যেটা ছোটবেলায় রুমাইশা না বুঝলেও পরবর্তীতে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করে৷

কিন্তু দাদীর ভালোবাসা সেইভাবে না পেলেও মা, বাবার ভালো বাসা পেয়েছে রুমাইশা অনেক অনেক বেশি! আয়েশা তো কখনো তার আদরের রুমাইশার গায়ে একটা ফুলের টোকাও দেননি। কখনো বকা দেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি রুমাইশা কে৷

রাফসান একটু দুষ্টু হলেও রুমাইশা অনেক শান্ত ছিলো, কথা বলতো প্রচুর, কিন্তু দুষ্টুমি করতো না একটুও, আয়েশা যা বলতেন তাই-ই শুনতো।

রুমাইশার এই ঠান্ডা স্বভাব আর আনুগত্যের জন্য সাফওয়ান প্রচুর ভালোবাসতো রুমাইশা কে। কারণ সাফওয়ানের কথা একদম অক্ষরে অক্ষরে পালন করতো রুমাইশা। রাফসানের থেকে সাফওয়ানের প্রতি ই যেন বেশি টান ছিলো রুমাইশার৷ আর এই তুলতুলে বাচ্চা টাকে সাফওয়ান পারলে তো জান দিয়ে দিতো।
যখনি কেউ কারো বাড়ি বেড়াতে যেতো তখনি তিন জন মিলে এক সাথেই ঘুরতো৷ রুমাইশা হাটতে চাইতো না। তাই সাফওয়ানেরই বেশির ভাগ সময় কোলে নিতে হতো রুমাইশাকে।

এতগুলো মানুষের ভালোবাসাতেই টইটুম্বুর হয়ে থাকতো রুমাইশার মন। অন্য কারো অবহেলা ওর গায়ে লাগতোই না!

বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিজের মেয়ের ছোটবেলার ঘটনা গুলো মনে করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন আয়েশা। তারপর রুমাইশার কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু খেয়ে নিজেও ঘুমিয়ে গেলেন৷

“””

পরদিন সকালে আয়েশা ফোন দিলেন রুনিয়ার কাছে। কাল অতোগুলো কথা বলার কারণে ফেরার সময় সমস্ত রাস্তা অনুশোচনা হয়েছে আয়েশার৷ নিজের বোনের মতো ননদ আর সন্তানতুল্য সাফওয়ানকে এইভাবে অতগুলো কথা বলা ওনার মোটেও ঠিক হয়নি!

ডাইনিং টেবিলের ওপর ফোন রেখে কিচেনে রান্না করছিলেন রুনিয়া। ফোনে রিং হতেই গ্যাসের আঁচ টা কমিয়ে দিয়ে বাইরে এসে ফোন তুললেন, আয়েশা ভাবি নাম টা উঠে আছে ফোনের স্ক্রিনে। ফোন টা হাতে নিয়ে আবার কিচেনে গেলেন। কিচেনে যেতে যেতে ফোন রিসিভ করে কানে ধরলেন।

ওপাশ থেকে সাথেই সাথেই আয়েশা সালাম দিয়ে রুনিয়া কে উত্তর করার সময় না দিয়েই অনুশোচনার সুরে বলে উঠলেন, আপা আমাকে ক্ষমা করে দিবেন, কালকে ওইভাবে বলা আমার একদমই ঠিক হয়নি৷ আমি বলতে চাইনি ওভাবে, কষ্টে বলে ফেলেছি! আপনি কিছু মনে নিয়েন না আপা! আমার ভুল হয়ে গেছে! আপনি আমার নিজের বোনের মতো, আপন বোন ভেবে ক্ষমা করে দিবেন আপা আমাকে!

রুনিয়া নিঃশব্দে হাসলেন, তারপর বললেন, কি যে বলো না তুমি আয়েশা! ওসব মনে রাখলে চলে বলো! তুমি কষ্ট পেয়েছো তাই ওরকম বলেছো, আমি তো জানি তুমি কেমন! আমি মোটেও কিছু মনে করিনি, তোমার জায়গায় আমি থাকলে আমিও এমনটাই করতাম। এইভাবে আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে লজ্জা দিয়ো না! তুমি না বললে, আমি তোমার নিজের বোনের মতো! নিজের বোনের কাছে কেউ ক্ষমা চায়? এসব নিয়ে আর চিন্তা করো না। এখন বলো আমার রুমি কেমন আছে?

মনে মনে সাফওয়ানের ওপর ভিষণ খুশি হলেন রুনিয়া। কাল যদি সাফওয়ান তাকে না থামাতো তাহলে হয়তো উনি রাগের মাথায় আর ও কিছু কথা শুনিয়ে দিতেন আয়েশাকে।

রুনিয়ার কথাতে আয়েশা খুশি হলেন অনেক, তার কণ্ঠস্বর শুনেই বোঝা গেলো তার খুশির পরিমান, উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, এখন অনেক টাই ভালো আপা, রাতে জ্বর অনেক খানি ছেড়ে দিয়েছে। গায়ে এখনো তাপ আছে, তবে কমে যাবে আল্লাহর রহমতে।
রুনিয়ার সাথে আর ও কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রেখে দিলেন আয়েশা।

রুমাইশা ঘুম থেকে উঠে অল্প কিছু খেয়ে পড়তে বসেছে। কালকে এক্সাম ওর৷ প্রিপারেশন মোটামুটি ভালোই নিয়েছিলো, আর অল্প কিছু বাকি আছে, আজকের ভেতরেই হয়ে যাবে।
গায়ে জ্বর আছে এখনো, মুখে রুচি নেই, সব কিছু কেমন জানি তিতা তিতা লাগছে! শরীর দুর্বল হয়ে গেছে অনেক খানি।
আয়েশা খানম তো মিনিটে মিনিটে এটা সেটা এনে খাওয়াচ্ছেন রুমাইশকে, কিন্তু রুমাইশা খেতে পারছে না৷
দুর্বলতা এখনি কাটাতে না পারলে এর রেশ থেকে যাবে অনেকদিন।

কাল পরশু রাফসান আসবে বাসায়, রাজশাহী থেকে। ভাইয়া আসবে শোনার পর থেকে খুব খুশি রুমাইশা। বাড়িতে একা একা ওর ভালো লাগে না।

যে কয়টা দিন রুনিয়ার বাসায় ছিলো সে কয়টা দিন খুব ভালো কেটেছে ওর, যদিও শেষের দিনটা ছাড়া৷ শাফিন, ফুপ্পি, ফুপ্পা এদের সবার সাথে হেসে খেলে দিন চলে গেছে ওর৷ কিন্তু বাড়িতে কথা বলার জন্য কাউকে পাওয়া যায় না৷ মায়ের সাথে আর কতক্ষণ ই বা গল্প করা যায়! আর শামসুল অধিকাংস সময় বাইরেই কাটান। তাই তার কথা বাদ৷

সারাদিনে রুমাইশা পড়াশোনা আর বিশ্রামেই কাটিয়ে দিলো। দুপুরে খেয়ে খানিক্ষন ঘুমিয়ে আবার পড়তে বসলো। সন্ধ্যার আগেই বাকি পড়া শেষ করে ফেলল। পড়া শেষ করে কিছুক্ষন বাইরে উঠানে হেটে বেড়ালো।

একতলা বাড়ির উঠানের চার পাশ দিয়ে নারিকেল আর সুপারি গাছ লাগানো, রুমাইশার দাদু এগুলো লাগিয়ে রেখে গিয়েছিলেন। সাথে কিছু আম গাছ ও আছে৷
গাছ গুলোর গা ঘেষে ইটের উঁচু প্রাচীর দেওয়া৷

উঠানের একপাশে সবজি বাগান করেছেন আয়েশা খানম। সেখানে বেগুন, শীম, লাউ সহ বিভিন্ন রকমের শাক সবজির গাছ লাগানো। সেখানে গিয়ে কিছুক্ষন সবজি গুলো হাত দিয়ে ধরে ধরে দেখলো রুমাইশা।
ঘুরে ঘুরে সমস্ত গাছ দেখে কিচেনে আয়েশা খানমের কাছে গেলো। আয়েশা খানম সন্ধার পর খাওয়ার জন্য কিছু খাবার তৈরি করছিলেন৷
রুমাইশা কিছুটা খেয়ে টেস্ট করে দেখলো। তিতা তিতা ভাবটা অনেক খানি কমে গেছে এখন, আর খাবার টাও বেশ মজা লাগছে। লোভ সামলাতে না পেরে সেখানে দাড়িয়েই খাওয়া শুরু করে দিলো। সন্ধ্যার পর হওয়া পর্যন্ত আর দেরি করলো না।

খাবার তৈরি শেষ হলে রুমাইশা আয়েশা আর শামসুল এর জন্য কিছু খাবার রেখে বাকিটা নিজের রুমে নিয়ে গেলো।

মাগরিবের নামাজ শেষে জায়নামাজ টা ভাজ করে আলনায় রেখে বিছানায় উঠে বসলো রুমাইশা। তারপর বাম হাতে ফোন নিয়ে কোলের ওপর প্লেট রেখে ফোন চাপতে চাপতে খেতে লাগলো।

খেতে খেতেই শাফিনের কথা মনে পড়লো ওর। ওই বাড়িতে থাকলে এতক্ষনে নাস্তা নিয়ে ওদের কতবার ঝগড়া হতো তার কোনো হিসেব নেই। মনে মনে হাসলা রুমাইশা।
শাফিন কে খুব মনে পড়ছে এই মুহুর্তে ওর৷ শাফিনের সাথে করা সমস্ত খুনসুটি গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

কিন্তু হুট করেই ওর মস্তিষ্ক শাফিনের দিক থকে ঘুরে সাফওয়ানের দিকে চলে গেলা
গতরাতের কথা তো ওর মনেই নেই! এত সব ঝামেলা আর অসুস্থতার কারণে গতকালের কথা তো ওর মাথা থেকে সম্পুর্ন বের হয়ে গেছিলো।

গত রাতের সমস্ত কিছু এক নিমিষেই মনে পড়ে গেলো ওর!
সাফওয়ান ওর গলা টিপে ধরেছিলো মনে পড়তেই নিজের গলাটা হাত দিয়ে স্পর্শ করলো ও। শাফিন কে কোনোকিছু বলতে একেবারে মানা করেছিলো সাফওয়ান।
কিন্তু তারপর? এত টর্চার করার পর আবার সাফওয়ান কোলে নিয়েছিলো ওকে! মেরে ধরে আবার ভালোবাসা দেখাতে এসেছিলো, গরু মেরে জুতা দান!

পরক্ষণেই ওর মনে পড়লো, ও সাফওয়ানের কাধে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরেছিলো সাফওয়ান কে! জড়িয়ে ধরেছিলো! ইশ, কি লজ্জার ব্যাপার! আচ্ছা সমস্যা না ভাই হয় তো।

তাহলে গাড়ির ভেতর যে ওর কত কাছে এসেছিলো! তার পর ও কে আবার নিজের কোলে বসিয়েছিলো! মাস্ক খুলেছিলো সাফওয়ান, কিন্তু ও তো দেখেনি; তাকায়নি মোটেও।

কিন্তু তারপর যে ওকে চুমু খেতে বলেছিলো !? চুমু!! লাইক সিরিয়াসলি! জিহবা দিয়ে রুমাইশার চোয়াল চেটে দিয়েছিলো সাফওয়ান; কে চাটে ভাই এমনে!! ইয়াক!
যে চোয়ালে সাফওয়ান জিহবা ঠেকিয়েছিলো সেই চোয়াল টা নিজের অজান্তেই হাত দিয়ে ভালো ভাবে খানিক ঘষলো রুমাইশা।

মাথাটা খারাপ হয়ে গেলো রুমাইশার। সাফওয়ান ভাইয়া এইরকম সত্যি সত্যিই করেছিলো, নাকি ও স্বপ্ন দেখেছিলো? কিন্তু ওকে তো নিয়ে গেছিলো কোথায় যেন! ওই খারাপ আবহাওয়ার ভেতরে কোথাকার কোন নদী খাল বিলের কাছে নিয়ে গেছিলো। নিয়ে গেছিলো এটা তো সত্যি!

সাফওয়ান ওর চেহারা দেখার জন্য জোর করছিলো ওকে। কিন্তু তারপর? তারপর তো আর কিছু মনে নেই।
ওই সব কিছুই সত্যি ছিলো! ওরেস-সর্বনাশ!

সমস্ত ঘটনা মনে পড়তেই আবার ও একবার অবাকতার চরম পর্যায়ে গিয়ে নিজের হা হওয়া মুখের ওপর নিজের ডান হাত টা চাপা দিলো রুমাইশা।

আয়েশা রুমাইশার রুমের সামনে দিয়ে কিচেনে যাচ্ছিলেন। রুমাইশার রুমের ভেতর চোখ পড়ায় উনি দেখলেন রুমাইশা নাস্তার প্লেট নিজের কোলের ওপর রেখে মুখে হাত দিয়ে হা হয়ে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে।

ভ্রুকুটি করে রুমাইশার রুমে ঢুকলেন তিনি। দরজার কাছে দাড়ালেন৷ উনি দরজার কাছে এসেছেন তবুও রুমাইশার কোনো ভাবান্তর হলো না দেখে দরজায় হাত দিয়ে নক করার মতো শব্দ করলেন৷
ভাবনার ভেতর আকস্মিক শব্দ হওয়ায় লাফিয়ে উঠলো রুমাইশা। কোল থেকে নাস্তার প্লেট টা শব্দ করে পড়ে গেলো নিচে।

নাস্তার প্লেটের দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের মায়ের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল, নক করে আসতে পারো না!
আয়েশা বেকুব বনে গেলেন!
— নক ই তো করলাম! তুই যে ভাবনা চিন্তা করতে করতে মহাকাশে চলে গেছিস তা কি আর আমি জানি?

রুমাইশা কি বলবে ভেবে না পেয়ে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে খাবার গুলো প্লেটে তুলতে তুলতে রাগী গলায় বলল, তোমার জন্য আমার এত মজার নাস্তা গুলো পড়ে গেলো!

আয়েশা খানম মনে মনে খানিক হেসে বললেন, ঠিক হয়েছে। পৃথিবীর মানুষ পৃথিবীতে থাকবি, মহাকশে যাবি কেন? তারপর দরজা টা টেনে দিয়ে চলে গেলেন ওখান থেকে৷

রুমাইশা খাবার প্লেটে তুলে আবার বিছানায় বসলো।
—সব হয়েছে ওই অজগর টার জ্বালায়! বাড়িতেও শান্তিতে নেই আমি, এখন মাথার ভেতর এসেও টর্চার করছে। বউ ভালো হবে না তোর দেখিস, খবিশ বেডা! বউ হবেই বা কই থেকে! কে বিয়ে করবে তোরে? ওইরকম চেহারা আর খচ্চরের মতো আচরণ দেখলে কেউ বিয়ে করবে না! সারাজীবন সিঙ্গেল থাকতে হবে তোরে!”
মনে মনে সাফওয়ান কে খানিক বকা ঝকা করে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো ও।

রাতের বেলা পড়া শেষ করে ১১ টার পর পর বিছানায় এলো রুমাইশা। আয়েশা আজ ও ওর কাছে ঘুমাতে চেয়েছিলো, কিন্তু রুমাইশা মানা করে দিয়েছে। ও তো আর অতো অসুস্থ নেই। রাত জেগে পড়লে আয়েশার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে ভেবে আয়েশা কে আর মোটেই ঘুমাতে নিলো না রুমাইশা।
আয়েশা কে বলে দিলো কোনো সমস্যা যদি হয় তাহলে আয়শার ফোনে মিস কল দিবে। আয়েশা তাই আর জোরাজুরি না করে ঘুমাতে চলে গিয়েছেন৷ এতক্ষণে ঘুমিয়েও পড়েছেন হয়তো৷ দরজা লক করলো না রুমাইশা,
দরজা ভেজিয়ে দিয়ে অল্প একটু খোলা রাখলো।

সুইচ টিপে আলো নিভিয়ে দিলো কিন্তু নীল রঙের ডিম লাইট টা জ্বালিয়ে রাখলো। ঘর পুরোপুরি অন্ধকার হলে আবার ওর ভয় লাগে৷ আবছা আলো না থাকলে ঘুমাতে পারে না ও। সব কিছু ঠিক ঠাক করে তারপর বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন চাপতে থাকলো রুমাইশা।

কিছুক্ষণ পর দরজার কাছে সামান্য শব্দ হলো। রুমাইশা ফোন চালানো রেখে একবার ভ্রুকুটি করে তাকালো দরজার দিকে৷ দরজার ওপাশে পুরোপুরি অন্ধকার। নাহ দরজা তো যেমন ছিলো তেমনি আছে। মনের ভুল ভেবে আবার ফোনের দিকে মনোযোগ দিলো রুমাইশা।

কিছুক্ষন পর দরজা টা ধীরে ধীরে খুলে যেতে লাগলো। শব্দ পেয়ে রুমাইশা লাফিয়ে উঠে বসলো বিছানায়! দরজাটা নিজে থেকে খুলে যাচ্ছে! চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো রুমাইশার
কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ‘ও মা গো! লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জলিমীন! আল্লাহ বাচাও আমারে!”
দরজাটা খুলতে খুলতে পুরোপুরি খুলে গেলো…….

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।