অফিডিয়ান | পর্ব – ৬৪

29 Min Read

পরমুহূর্তেই রুমাইশাকে ভয়ের চুড়ান্ত সীমায় নিয়ে গিয়ে গুহা গুলোর ভেতরের সবচেয়ে বড় গুহা টা থেকে নিজের মাথা বের করলো বিশাল এক পাইথন, যার আকার দেখে রুমাইশার চোখ উলটে যাওয়ার জোগাড়। দানবের মতো গুহার ভেতর থেকে একটু একটু করে বের হয়ে আসছে সেটা৷ চোখ দুইটা তার হিংস্রতায় পরিপূর্ণ। জিহবা দ্বারা নিজের আশপাশ টা পরখ করে সে দেখে নিচ্ছে কোনো বিপদের আশঙ্কা আছে কিনা৷

রুমাইশা যেন হাটতে ভুলে গেলো। এমন বিশাল পাইথন পৃথিবীর কেউ আগে দেখেছে কিনা তার সন্দেহ৷ মুখের আকৃতি দেখে মনে হচ্ছে একটা আস্ত একটা শায়ার ঘোড়া গিলে ফেলা তার জন্য কোনো কঠিন কাজ হবে না, অনায়াসেই ঘোড়া টাকে গিলে ফেলতে পারবে সে।
আর তখনই রুমাইশা বুঝলো সাফওয়ান কেন তাকে গুহার সামনে থেকে পালিয়ে যেতে বলেছিলো, কিন্তু সাফওয়ানের কথা না শুনে সে চরম বোকামি করেছে।

লিন্ডা ধীর গতিতে একে বেকে বাইরে বের হয়ে আসছে। সে কতখানি লম্বা সেটা রুমাইশা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। কিন্তু যেটুকু গুহার ভেতর থেকে বের হয়েছে সেটুকু দেখেই রুমাইশার দম বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড়৷ ধীর গতিতে ও এক পা এক পা করে পিছিয়ে যেতে লাগলো লিন্ডা কে বুঝতে না দিয়েই৷

লিন্ডা আর ও কিছুটা বের হয়ে এসে নিজের মাথা টা উচু করে ধরলো। আর তার সে মাথার উচ্চতা ছাড়িয়ে গেলো রুমাইশা কে। রুমাইশার দ্বিগুনের থেকেও বেশি উচ্চতায় উঠলো লিন্ডার মাথাটা।
আর সেই মুহুর্তেই লিন্ডার নজর গেলো তার থেকে কিছুটা সামনে পড়ে থাকা পোশাক টার দিকে। পরিচিত পরিচিত একটা গন্ধ নাকে এলো ওর৷ শরীর নেড়ে একে বেকে গুহা থেকে আর ও একটু বের হয়ে এলো সে৷ আর তারপর পোশাক টার কাছে এসে নাক দিয়ে কিছুক্ষণ পরখ করলো পোশাক টা। আর এরপর পোশাক টা কার সেটা বুঝতে পেরেই লিন্ডা পোশাক টার সাথে নিজের মাথা ঠেকিয়ে পরম আদরে গুতাগুতি করতে থাকলো। কিন্তু এই পোশাকের মালিক কই??

লিন্ডা এবার সন্দেহের চোখে তাকালো তার থেকে বেশ কিছুটা দুরত্বে দাঁড়ানো রুমাইশার দিকে। পোশাকের মালিকের মতোই গড়নের অন্য আর একটা জীব দেখে সে কিছুটা কনফিউজড হলো প্রথমে। আর সেই জীব টা থেকেও কিছুটা পোশাকের মালিকের গায়ের গন্ধ আসছে। মাটিতে পড়ে থাকা পোশাক টা সে আর ও একবার নাক দিয়ে পরীক্ষা করলো, কেমন যেন একটা বিপদ বিপদ গন্ধ নাকে এলো ওর৷ আর মুহুর্তেই একে একে দুই মিলিয়ে পোশাকের মালিকের বিপদের কারণ হিসেবে সে রুমাইশা কে দ্বায়ী করে ফেললো।

রুমাইশার দিকে গড়গড় করতে করতে এগিয়ে এলো লিন্ডা৷ ক্রোধে তার ফোসফোসানি বেড়ে গেলো আগের থেকেও অনেক বেশি৷ রুমাইশা ভেবে পেলো না কি করবে! লিন্ডা নামের এই পাইথন টা যে তাকে আক্রমণ করার উদ্দ্যেশ্যেই এগিয়ে আসছে সেটা বুঝতে বেগ পেতে হলো না তার৷

দিশেহারা হয়ে উঠলো রুমাইশা। লিন্ডা ওর দিকে ফুসতে ফুসতে এগিয়ে আসছে, এই মুহুর্তে না পালালে নির্ঘাত লিন্ডার পেটে যাবে ও৷ ভয়ে রুমাইশার নিঃশ্বাস পড়তে শুরু করলো ঘন ঘন, বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা হচ্ছে ওর৷ পেটের ব্যাথা টা যেন এই ভয়ের কাছে মিইয়ে গেলো। কোন দিকে ও দৌড়াবে বুঝতে পারলো না। ও যেদিকে যাবে লিন্ডাও নির্ঘাত সেদিকে যাবে। তাহলে ও এখন কোথায় যাবে?

এসব ভাবনা চিন্তা করতে করতেই লিন্ডা ফুসে উঠলো। মুখ দিয়ে অদ্ভুত এক গর্জন করে ও পুরোপুরি বেরিয়ে আসলো গুহার ভেতর থেকে। আর লিন্ডার দৈর্ঘ দেখে রুমাইশার হৃদপিণ্ড থেমে গেলো যেন। লম্বায় প্রায় চল্লিশ ফুটের কাছাকাছি হবে পাইথন টা। রুমাইশা ঘোর বিপদ টের পেলো। আর সেই মুহুর্তেই লিন্ডা মুখ থেকে গর গর শব্দ করে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে আসলো রুমাইশার দিকে। আর তা দেখে রুমাইশা ভয়ে চিৎকার করে বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে পালালো সেখান থেকে। আর ওকে ছুটে পালিয়ে যেতে দেখে লিন্ডাও ওর পিছু নিলো।

ফোস ফোস করতে করতে সে একে বেকে ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে রুমাইশার পেছনে। আর রুমাইশা লিন্ডার হাত থেকে বাচতে ছুটে চলেছে যেদিক থেকে এসেছিলো সেদিকে৷

৮৪. বুলেটের আঘাতে সাফওয়ানের বাম হাতের বাহুতে জখম হয়েছে। নিজের ডান হাত ব্যাবহার করে ওর টু সাইডেড সৌর্ড টা দিয়ে ও সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে গার্ড গুলোকে ধরাশায়ী করতে। এর মাঝে আর ও কিছু গার্ড এসে পৌছেছে।
হারবার্টের কাছে ইতোমধ্যে খবর চলে গেছে যে এখানে শুধুমাত্র সাফওয়ান আছে, ওর সাথের মেয়েটি নেই৷ শোনা মাত্রই হারবার্টের মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেছে৷ সাফওয়ান যেন কোনো ভাবে বেচে ফিরতে না পারে সেটাই আদেশ দিয়েছে ও।
সাফওয়ানের কারণে তার অনেক টাকা ওড়াতে হয়েছে। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। শুধু শুধু তার গার্ড গুলো মরেছে। এখন তার জীবনে প্রথমবার মনে ধরা এক নারী ও তার হাতছাড়া হয়ে গেছে৷ সাফওয়ান কে পৃথিবী থেকে বিদায় করাই এখন তার প্রধান কাজ।

সাফওয়ানের পায়ে আর ও একটা বুলেট এসে লেগেছে। এমনিতেই তার এক পায়ে চোট লেগেছিলো, অন্য পায়ে লেগেছে বুলেট। ঠিক ভাবে দাড়াতে পারছে না ও৷ পা থেকে সমান তালে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এইভাবে রক্ত পড়তে থাকলে ওর শরীরে আর বিন্দুমাত্র শক্তি অবশিষ্ট থাকবে না৷ ডান হাতই এখন ওর শেষ ভরসা। সেটা দিয়েই শত্রুদের কে এখনো থামিয়ে রেখেছে ও৷ বা হাত টা নাড়াতেই পারছে না, অবশ হয়ে আছে সেটা৷

অধিকাংশ গার্ড দেরই ও ভবলীলা সাঙ্গ করে দিয়েছে। কিন্তু এখন শেষ মুহুর্তে এসে এই পাঁচ সাত জনের মতো বন্দুকধারী গার্ড তার ওপর খুব ভারী পড়ে যাচ্ছে৷ সাফওয়ান খুব দ্রুত গতিতে মুভ করায় ওরা তেমন সুবিধা করতে পারছিলো না এতক্ষন। কিন্তু সাফওয়ানের হাত, পা, সবকিছুতেই এখন জখম। এখন আর ও আগের মতো দ্রুত গতিতে মুভমেন্ট করতে পারছে না, আর সেটাই ওর জন্য কাল হয়ে দাড়াচ্ছে৷

সাফওয়ান এখন দাঁড়িয়ে আছে। বুলেট লাগার কারণে ডান পায়ের ওপর ভর দিতে পারছে না, তাই ও বাকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিছুটা৷ আঘাতের ফলে মুখের ভেতরে কোথাও কেটে গেছে ওর। সেখান থেকে অনবরত ব্লাড আসছে৷ শব্দ করে এক দলা রক্তমিশ্রিত থুথু ফেললো ও মাটিতে। তারপর চোখ তুলে তাকালো ওর থেকে দশ পনেরো হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ড গুলোর দিকে৷
তাদের অবস্থাও শোচনীয়, কিন্তু এখনো হাল ছাড়েনি তারা৷ বন্দুকের গুলিও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। চোখ মুখের অবস্থা দেখার মতো নেই একটার ও৷ আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে আছে সবগুলো৷

সাফওয়ান দম ফেলছে জোরে জোরে। টু সাইডেড সৌর্ড টা ডান হাতে ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে ও এগোলো সামনের দিকে৷ পা থেকে রক্ত পড়া এখনো বন্ধ হয়নি ওর। বুলেট টা পায়ের ভেতরে সেভাবেই গেথে আছে। নড়াচড়া করলেই সেখান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত আসছে৷

সাফওয়ান কে এগিয়ে আসতে দেখে ওদের ভেতরের একজন বন্দুক তাক করলো সাফওয়ানের দিকে৷ ট্রিগারে চাপ দিয়ে শ্যুট করতেই সাফওয়ান ঝড়ের গতিতে নিজের টু সাইডেড সৌর্ড টা নিজের সামনে অদ্ভুত কৌশলে ঘুরালো। আর বন্দুক থেকে বের হওয়া বুলেট টা সৌর্ডে বাড়ি খেয়ে ছিটকে চলে গেলো অন্য দিকে।

সাথে সাথে আবার ও ট্রিগারে চাপ দিলো সে গার্ড টা। কিন্তু তার বন্দুকে আর বুলেট অবশিষ্ট নেই। ফাকা শব্দ করে সেটা নিজের ব্যর্থতা জানান দিলো৷
সবার বন্দুকেই খুব অল্পই বুলেট বেচে আছে চিন্তা করেই বাকি গার্ড গুলো সাথে সাথেই একযোগে বন্দুক তাক করে ধরলো সাফওয়ানের বুক আর মাথা বরাবর। সাফওয়ান কয়টা বুলেট ঠেকাবে? একটা না একটা গিয়ে তো লাগবেই ওর গায়ে।
সাফওয়ান ও ওদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে চোয়াল শক্ত করে নিজের টু সাইডেড সৌর্ড টা নিজের ডান হাতে দক্ষতার সাথে মেলে ধরলো।

কিন্তু তাদের এই শেষ যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটলো কারো আকাশ ফাটা চিৎকারের ক্ষীণ শব্দ। জঙ্গলের ভেতর থেকে কেউ চিৎকার করতে করতে এদিকেই আসছে। এমন হঠাৎ চিৎকারে সাফওয়ান দ্বিধান্বিত হয়ে নিজের পেছনে থাকা ক্রমে ঘন হয়ে যাওয়া জঙ্গলের দিকে তাকালো। গার্ড গুলোও এমন চিৎকারে কনফিউজড হয়ে নিজেদের বন্দুক সাফওয়ানের ওপর থেকে সরিয়ে সাফওয়ানের পেছনে তাক করলো বিপদের আশঙ্কায়।

সাফওয়ান কান খাড়া করে রইলো চিৎকারের শব্দ টা আরও ভালো ভাবে শুনে বুঝে ওঠার জন্য। চিৎকারের শব্দ টা আর ও গাঢ় হতেই সাফওয়ানের বুক কেঁপে উঠলো। অজানা এক ভয়ে বুকের ভেতরে রক্ত ছলকে উঠলো ওর। চোখ মুখের রঙ মুহুর্তেই ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ও জঙ্গলের দিকে ফিরে, মুখ দিয়ে শুধু ওর একটা শব্দই বের হলো,
— রিমু!

রুমাইশা তারস্বরে চিৎকার করতে করতে নিজের সর্বোচ্চ গতিতে ছুটে আসছে সাফওয়ানের সাথে সে যেখান থেকে বিদায় নিয়েছিলো সেদিকে। ওর পেছনে রাগে ফোস ফোস করতে ঝড়ের গতিতে ছুটে আসছে দানবাকৃতির লিন্ডা৷ রুমাইশা কে নাগালে পেলে এখনি ওকে গিলে খাবে ও। তার গুহার সামনে ছুড়ে ফেলা পোশাকের মালিকের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেবে না ও কাউকে।

সাফওয়ানের সামনে থাকা গার্ড গুলো শক্ত হাতে বন্দুক ধরে আছে সামনের দিকে। ওরাও ঠাহর করতে পারছেনা যে হচ্ছে টা কি! ওরা বর্তমানে জঙ্গলের যথেষ্ট গভীরে আছে। এখানে কেই বা চিৎকার করবে! সেটাও আবার মেয়ে কণ্ঠে৷
তখনি ওদের মাথায় কিছু একটা খেললো। চিৎকার কারী সাফওয়ানের সাথে থাকা মেয়েটি নয়তো! হ্যা সেই-ই হবে৷ নইলে এত গভীর জঙ্গলের ভেতর কেউ আসবে না। কিন্তু সে চিৎকার কেন করছে সেটাই ভাবনার বিষয়। বড় সড় কোনো বিপদের আঁচ পেয়ে বন্দুক গুলো ওরা আর ও শক্ত করে ধরে রইলো নিজেদের সামনের দিকে।

সাফওয়ান সময় নষ্ট না করে ছুটে যেতে লাগলো চিৎকার যেদিক থেকে আসছে সেদিকে। ডান পা টা খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে। ছুটতে পারছে না ও, তবুও প্রাণপণ চেষ্টা করছে। মেয়েটা যে ওর কথা শোনেনি সেটা ও ভালোভাবেই টের পেয়েছে। নিশ্চয় লিন্ডা ওর পিছু নিয়েছে, নইলে রিমু আবার ফিরে আসতো না এদিকে।

সাফফওয়ান হঠাৎ করে এভাবে ছুটে যাওয়াতে গার্ড গুলোও হতচকিত হয়ে সাফওয়ানের পিছু নিলো। সাফওয়ানের সাথের মেয়েটি যে আবার ফিরে এসেছে সেটা ভেবেই আনন্দিত হলো ওরা। সাফওয়ান কে মেরে মেয়েটিকে নিয়ে হারবার্টের হাতে তুলে দিয়ে হারবার্ট কে খুশি করতে পারলে ওদের র‍্যাঙ্ক অন্যদের থেকে আর ও ওপরে উঠে যাবে। এই সুযোগ কোনো ভাবেই হাত ছাড়া করা যাবে না৷

সাফওয়ান ছুটছে সামনের দিকে। সময় মতো লিন্ডা কে না থামালে ওর রিমুর মৃত্যু নিশ্চিত। লিন্ডার দৌড়ের গতি সম্পর্কে সাফওয়ান বেশ ভালো ভাবেই অবগত। আর এতদিনে লিন্ডা হয়তো আর ও বড় হয়ে গেছে। তার শক্তি সামর্থ্য ও আগের থেকে বেড়ে গেছে কয়েক গুন। রুমাইশার জায়গায় সাধারণ কেউ হলে এতক্ষণে হয়তো লিন্ডার পেটে হজম হয়ে যেতো৷

রুমাইশা ছুটছে আর চিৎকার করছে। এখিন আর পেছন দিকে তাকিয়ে লিন্ডার অবস্থান দেখছে না ও। কারণ কয়েক বার পেছনে তাকাতে গিয়ে সামনে থাকা গাছের সাথে ও বাড়ি খেয়েছে। যার জারণে ওর দৌড়ের গতি কমে গেছে। অল্পের জন্য লিন্ডার খপ্পর থেকে ও বেচে ফিরেছে কয়েক বার। কিন্তু এবার কোনো ভাবে ও বাধাপ্রাপ্ত হলেই লিন্ডা ওকে ধরে ফেলবে।
সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে অসহায়ের মতো ছুটে চলেছে ও। পেটের ভেতর টা ওর ছিড়ে যাচ্ছে যন্ত্রণায়, কিন্তু এখন থামলেই এই পৃথিবীতে আর ওর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।

কিন্তু তখনই ঘটলো বিপত্তি। না চাইতেই সামনের এক টা গাছের সাথে গিয়ে জোরেসোরে ধাক্কা খেলো রুমাইশা। ছিটকে গিয়ে ও পড়লো এক পাশে। লিন্ডা যেন এ সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো। ঝড়ের গতিতে ও এগিয়ে এলো মাটিতে পড়ে থাকা রুমাইশার দিকে। তারপর নিজের শক্ত দেহের কুন্ডুলির ভেতরে রুমাইশা কে চেপে মেরে ফেলার প্রস্তুতি নিতে থাকলো ও।
এই মাটিতে পড়ে থাকা মেয়েটির শরীর থেকে এখনো তার অতি পরিচিত মানুষ টার গন্ধ আসছে। এই মেয়েটিই যে তার সেই অতিপরিচিত মানুষ টার কোনো ক্ষতি করেছে সে বিষয়ে সে পুরোপুরি নিশ্চিত। তাই এই মেয়েটির কোনো ক্ষমা নেই।

কিন্তু লিন্ডা রুমাইশা কে ধরে নিজের কুন্ডুলির ভেতর নেওয়ার আগেই দূর থেকে সাফওয়ানের চিৎকার শোনা গেলো। সাফওয়ান নিজের সর্বশক্তি দিয়ে, খুড়িয়ে খুড়িয়ে ছুটে আসছে এদিকে। সাফওয়ান ছুটতে ছুটতেই চিৎকার দিয়ে বলতে থাকলো,
— লিন্ডা! থামো! ওকে কিছু করো না!

নিজের অতিপরিচিত মানুষ টাকে এমন সুস্থ সবল দেখে লিন্ডার রাগ পড়ে গেলো সাথে সাথেই। আর এতদিন পর এই মানুষ টার দেখা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলো লিন্ডা। মাটিতে পড়ে থাকা রুমাইশা কে উপেক্ষা করে সে তার বিশাল শরীর নিয়ে এগিয়ে গেলো সাফওয়ানের দিকে।
কিন্তু সাফওয়ানের পেছন পেছন ছুটে আসা গার্ড গুলো লিন্ডা কে দেখে সাথে সাথেই দাঁড়িয়ে গেলো। নিজেদের চোখ কে যেন তারা বিশ্বাস করতে পারছে না! এত বড় পাইথন যে এখনো পৃথিবীতে বেচে থাকতে পারে সেটা তাদের ধারণাতেই ছিলো না। মুখ গুলো হা হয়ে গেলো ওদের। আর সেই সাথে ওদের গলা শুকিয়ে গেলো ভয়ে।

ওদের ভেতরের লিডার গোছের একজন বাকি দের উদ্দ্যেশ্যে চাপা সুরে বলল,
— কেউ ভুলেও নড়াচড়া করবে না। ভয়ে কেউ দৌড় দিবে না, নইলে সবাই মারা পড়বো। এখান থেকে বেচে ফিরতে হলে আমি যেটা বলছি সেটা শুনো। কেউ চোখের পলক ও ফেলবে না, নিঃশ্বাসে যেন জোরে শব্দ না হয়, কোনো ভাবেই যেন পাইথন টা বুঝতে না পারে আমাদের উপস্থিতি। নইলে আজ এর পেটেই যেতে হবে সব গুলোকে।

কিন্তু লিডার গোছের লোকটার সাবধানী বাণী যেন কারো কানে পৌছালো না। আতঙ্কিত হয়ে উঠলো ওরা সবাই। এখনো পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় পাইথনের দৈর্ঘ্য হলো প্রায় ছাব্বিশ ফুট। আর সেখানে এটা চল্লিশ ফুট তো হবেই।
পাইথন টার শরীরের যে প্রস্থ, তা ওরা দুজন মিলে জড়িয়ে ধরলেও বেড় পাবে না৷ পাইথন টা যদি একবার মুখ হা করে, তবে অনায়াসেই একজন মানুষ কে টুকুস করে গিলে ফেলবে ও মুরগী ছানার মতো।

গার্ড গুলোর ভেতরের একজনের বন্দুক রিলোড করাই ছিলো। ট্রিগারের ওপর আঙুল রেখে সে এতক্ষন সাফওয়ানের পেছনে দৌড়াচ্ছিলো। কিন্তু এখন এত বড় পাইথন দেখে ভয়ে তার মাথায় আর কাজ করলো না। কেউ বুঝে ওঠার আগেই গার্ড টা আতঙ্কিত হয়ে বন্দুক টা পাইথনের দিকে তাক করে সাথে সাথেই গুলি ছুড়লো সেদিকে।
লিন্ডা এতক্ষন সাফওয়ান কে পেয়ে অতি আনন্দে সাফওয়ানের মুখের সাথের নিজের মুখ ঘষছিলো। গার্ডের ছোড়া বুলেট টা লিন্ডার একেবারে গা ঘেঁষে চলে গেলো। আর বন্দুকের শব্দে সাথে সাথেই শব্দের উৎসের দিকে ফিরে তাকালো লিন্ডা৷

সাফওয়ান ও তাকালো গার্ড গুলোর দিকে। আর তারপর লিন্ডার দিকে তাকিয়ে এক বিশেষ ইশারা করতেই লিন্ডা সাফওয়ান কে ছেড়ে ফোস ফোস শব্দ করতে করতে ধীর গতিতে এগোলো গার্ড গুলোর দিকে৷
এদিকে বুলেট ছোড়ার সাথে সাথেই গার্ড গুলোর ভেতরের দুজন দৌড় দিলো নিজেদের পেছন দিকে। আর বাকিরা লিন্ডা কে তাদের দিকে এগিয়ে যেতে দেখেই নিজেদের বন্দুক ফেলে প্রাণপণে ছুটে পালাতে লাগলো। আর লিন্ডা তীব্র তেজ নিয়ে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে গেলো ওদের পেছন পেছন৷ আর তখনি সাফওয়ান পেছন থেকে চিৎকার করে বলে উঠলো,
— লিন্ডা, কাউকে ছাড়বি না!

আর সাফওয়ানের এ আদেশ পরিপূর্ণ করতে লিন্ডা নিজের সর্বোচ্চ গতিতে ছুটে গেলো সেদিকে। সবচেয়ে পেছনে থাকা গার্ড টার ওপর দিয়ে নিজের ভারী শরীর উঠিয়ে দিলো ও৷ এত ভারী চাপের কারণে সে লোক টা সেখানেই দম আটকে মারা গেলো৷
আরও সামনে গিয়ে অন্য একটা গার্ডের বাহু ধরলো লিন্ডা ওর মুখ দিয়ে। আর ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজর দুইদিকে দুইবার আছাড় দিলো লিন্ডা। সে লোক টা আছাড় খেয়েই নাক মুখ দিয়ে রক্ত উঠিয়ে ছটফট করতে করতে মারা গেলো। আর এরপর পালিয়ে যাওয়া বাকি গার্ড গুলোর পেছনে ছুটলো লিন্ডা।

লিন্ডা সাফওয়ানের চোখের আড়াল হতেই সাফওয়ান এবার ছুটে এলো রুমাইশার কাছে। মাটিতে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে রুমাইশা। দম ফেলছে ও ঘন ঘন। এক টানা ছোটার ফলে ওর বুকের ভেতর টা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে৷ পেটের ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে যন্ত্রণায়৷ গাছের সাথে বাড়ি খাওয়ার ফলে ডান হাত আর বুকের ডান দিক টা তে চরম যন্ত্রণা করছে ওর। ডান পাশের চোয়াল টার অনেক খানি ছিলে গিয়ে লাল হয়ে ফুলে আছে।
সাফওয়ান খুড়িয়ে খুড়িয়ে এগিয়ে এলো ওর কাছে। তারপর মাটিতে বসে পড়ে নিজের ডান হাত টা দিয়ে রুমাইশাকে আকড়ে ধরে টেনে নিলো নিজের কাছে। টেনে ওকে নিজের বুকের ওপরে উঠালো।

এতক্ষনে রুমাইশা নিজের একমাত্র ভরসার স্থল টা আবার ফিরে পেয়ে দু হাতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো সাফওয়ান কে। তারপর নিজের দেহের সম্পুর্ন ভর টা সাফওয়ানের ওপর ছেড়ে দিয়ে সাফওয়ানের বুকে মাথা রেখে পরম শান্তিতে চোখ বুজে নিলো। সাফওয়ান নিজের ডান হাত দিয়েই ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে নিজের পেছনে থাকা একটা মোটা কান্ডের গাছের সাথে নিজের পিঠ ঠেকিয়ে দিলো। তারপর রুমাইশার চুলের ওপর দিয়ে ওর মাথায় শব্দ করে চুমু খেলো একটা৷ আর কোনো চিন্তা নেই ওর৷ গার্ড গুলোকে লিন্ডা একাই ভোগে পাঠিয়ে দেবে। এখন ও সম্পুর্ণ নিশ্চিন্ত! আর কোনো কিছুই ওর সামনে বাধা হয়ে দাড়াতে পারবে না।

৮৫. রাত নেমে এসেছে ধরণীতে। অন্ধকারে নিমজ্জিত আমাজনের গভীরে সাফওয়ানের বিভীষিকা নাম দেওয়া নদীটার তীরে একটা ছোট খাটো আগুন জ্বলেছে। সে আগুনের দু পাশে দুইটা গাছের ছোট ছোট কান্ড পুতে দিয়ে তার ওপর অন্য একটা সরু ডাল রেখে তাতে নদী থেকে ধরে আনা মাছ আর শিকার করা খরগোশের মাংস পোড়াতে দিয়েছে সাফওয়ান। আর সে আগুনের পাশে বসে বসেই নিজের পা থেকে বুলেট বের করছে ও।
ওর পাশে বসে সে বুলেট বের করা দেখতে দেখতে মুখে নানারকমের যন্ত্রণার এক্সপ্রেশন দিচ্ছে রুমাইশা৷ লিন্ডা বসে আছে ওদের থেকে কিছুটা দূরে। তীর্যক চোখে ও রুমাইশার দিকে নজর রাখছে। এখনো রুমাইশা কে সে পুরোপুরি ভরসা করে উঠতে পারছে না।

চোখ মুখ কুচকে আছে সাফওয়ান। হাতের বুলেট টা বের করা হয়ে গেছে। সেটা পাশেই পড়ে আছে। আঘাত প্রাপ্ত জায়গাটা ভালোভাবে ধুয়ে মুছে সেখানে কিছু বিশেষ ওষধি পাতা বেটে লাগিয়ে, পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বেধে দিয়েছে রুমাইশা। এই লতাপাতা গুলো এখানে আসার সময় সাফওয়ান খুজে খুজে নিয়ে এসেছে।

বহু কষ্টে পায়ের বুলেট টা বের করে হাপ ছাড়লো সাফওয়ান। রুমাইশা সাথে সাথেই কাছে থাকা পানি দিয়ে সে জায়গা টা ভালো ভাবে পরিষ্কার করে বেটে রাখা লতা পাতা থেকে খানিক টা সাফওয়ানের পায়ের ক্ষতস্থানে লাগিয়ে বেধে দিলো৷

ড্রেসিং শেষ হতেই সাফওয়ান কাত হয়ে শুয়ে পড়লো রুমাইশার কোলের ওপর৷ তারপর পরম আবেশে নিজের চোখ দুইটা বুজে নিলো। রুমাইশা আলতো হাতে সাফওয়ানের ঝাকড়া চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো। রুমাইশা একবার তাকালো লিন্ডার দিকে। লিন্ডা কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে সে রুমাইশার উপস্থিতি তে মোটেই খুশি না।

রুমাইশা মুচকি হেসে লিন্ডার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে সাফওয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
— আপনার লিন্ডা কিন্তু রেগে যাচ্ছে! তার কোলে গিয়ে একটু ঘুমান।

সাফওয়ান চোখ বন্ধ রেখেই নিঃশব্দে হেসে উঠলো, তারপর বলল,
— রাগবেই তো। তুই তার ব্যাক্তিগত সম্পত্তিতে হাত বাড়িয়েছিস! তোকে যে ও খেয়ে ফেলেনি এখনো তার জন্য তোর ওকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত ৷

রুমাইশা সাফওয়ানের এক গোছা চুল নিজের মুঠির ভেতর নিয়ে টান দিয়ে বলল,
— ইশ, দরদে ফেটে যাচ্ছে একদম!

সাফওয়ান হেসে বলে উঠলো,
— তা যাবে না? ও আমার প্রথম বউ, তুই দুই নম্বর। ওকে খাতির যত্ন করবি, নইলে তোকে নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেবো।

রুমাইশা লিন্ডার দিকে আর ও একবার তাকালো। লিন্ডা ফুসছে যেন এদের একসাথে দেখে। রুমাইশা সাফওয়ান কে জিজ্ঞেস করলো,
— ওকে কোথায় পেয়েছিলেন আপনি?

সাফওয়ান চোখ খুললো এবার। তারপর মোহনীয় দৃষ্টিতে রুমাইশার দিকে তাকিয়ে বলল,
— বলতে পারি, তবে একটা শর্তে!

রুমাইশা উৎসুক চাহনিতে সাফওয়ানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কি শর্ত!

সাফওয়ান রুমাইশার কোলের ভেতরে শুয়েই ডান হাতটা উঠিয়ে রুমাইশার থুতনি ধরে একটা নাড়া দিয়ে বলল,
— আমাকে তুমি করে বলতে হবে এখন থেকে, আপনি বলা যাবে না আর৷
বলেই নাক কুচকে দুষ্টু হাসি দিলো সাফওয়ান৷

সাফওয়ানের এমন শর্তে থতমত খেলো রুমাইশা। ভ্রু কুচকে ও মুখ ভার করে বলল,
— এমন করেন কেন? আপনি জানেন যে আমি পারবো না! জেনে শুনে এমন করেন!

সাফওয়ান আবার চোখ বুজে নিয়ে নির্বিকার কণ্ঠে বলল,
— পারা লাগবে৷ নউলে হবে না।

রুমাইশা কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে থাকলো সামনে। কি করবে ও ভেবে পাচ্ছে না।
রুমাইশা কে এমন চুপ থাকতে দেখে সাফওয়ান চোখ বন্ধ রেখেই জিজ্ঞেস করলো,
— কি হলো! জিজ্ঞেস কর, দ্রুত।

রুমাইশা ভ্রু তুলে নিচের ঠোঁট ফুলিয়ে তাকিয়ে রইলো সাফওয়ানের দিকে। তারপর বলল,
— শুনবোনা আমি।

সাফওয়ান এবার রুমাইশার দিকে ফিরে উঠে বসলো। তারপর অধৈর্য হয়ে বলল,
— তুই শুনিস আর না শুনিস তোকে এখন তুমি বলাই লাগবে৷ তাড়াতাড়ি, সময় নেই। বল, যে লিন্ডা কে তুমি কোথায় পেয়েছিলে? বল, দ্রুত!

রুমাইশা তারপর কিছু বলছে না দেখে সাফওয়ান ওর চোয়াল দুটো দু হাতে নিয়ে বলল,
— তাড়াতাড়ি, তাড়াতাড়ি! আমি দেরি করতে পারিছিনা আর, আমার তুমি শোনা লাগবে এখনি!

রুমাইশা কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বলে উঠলো,
— ওদিকে তাকান। আপনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে আমি বলতে পারবো না।

সাফওয়ান কিছুক্ষণ ঠোঁট চেপে হেসে অন্য দিকে তাকালো। তারপর বলল,
— হ্যা, তাকিয়েছি, এবার বল, দ্রুত!

রুমাইশা আবার খানিক ইতস্তত করে, মনে জোর নিয়ে চোখ কুচকে বন্ধ করে শেষমেশ বলে দিলো,
— লিন্ডা কে তুমি কোথায় পেয়েছিলে?

সাফওয়ান রুমাইশার মুখ থেকে তুমি শুনেই ঝট করে রুমাইশার দিকে ফিরে ওকে ঝড়ের গতিতে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আনন্দে আটখানা হয়ে বলল,
— আর একবার শুনি! ভাল্লাগছে অনেক! আর একবার, প্লিজ!

রুমাইশা সাফওয়ানের এমন হঠাৎ জড়িয়ে ধরায় অপ্রস্তুত হয়ে ধমকের সুরে বলে উঠলো,
— উফ, কি করছো! ছাড়ো তো!

রুমাইশার এমন ধমকে সাফওয়ানের কিছুই হলো না, বরং রুমাইশার মুখ থেকে দ্বিতীয় বার তুমি শুনে শব্দ করে মিষ্টি হাসলো ও, তারপর রুমাইশা কে আর ও জোরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ওর চোয়ালে কষে একটা চুমু খেয়ে বলল,
— এখন খুবই খুবই ভালো লাগছে! দারুন অনুভূতি! আর কখনো যেন তোমার মুখ থেকে আমি আপনি শব্দ টা না শুনি।

সাফওয়ানের মুখ থেকে তুমি শুনে আজ আবারও লজ্জা পেলো রুমাইশা। তারপর লজ্জা পেয়ে সাফওয়ানের বুকেই ও মুখ লুকালো। সাফওয়ান তা দেখে ভুবন ভুলানো হাসি দিলো। আর তার সে হাসির শব্দে সচকিত হয়ে উঠলো রাতের জঙ্গল টা।
রুমাইশা সাফওয়ানের বুকের ভেতর মুখ রেখেই আবার জিজ্ঞেস করলো,
— বলো, লিন্ডা কে তুমি কোথায় পেয়েছিলে?

সাফওয়ান লিন্ডার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
— সেবার যখন আমি শহুরে কোলাহল থেকে মুক্তি পেয়ে ভালোভাবে জীবন কে উপভোগ করার জন্য আমাজনে এসেছিলাম তখন ওই ছোট ঝর্ণার পাশেই লিন্ডা পড়ে ছিলো মুমূর্ষু অবস্থায়। তখন ও ছিলো একেবারেই ছোট বাচ্চা। একটা বনবিড়াল ওকে মুখে করে নিয়ে যাচ্ছিলো কোথাও। আমাকে দেখেই সেটা লিন্ডা কে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়৷ তখন ওকে আমার সাথে নিয়ে এসে আমি যতটুকু পারি, যেভাবে পারি ওর ক্ষত গুলো সারিয়ে তোলার চেষ্টা করি। আর তখন থেকেই ও আমার সাথে থাকে।
ঝর্ণার ধারের গুহার ভেতর টাতে আমরা প্রথমে থাকতে শুরু করি। তারপর আসি এই নদীর ধারে। যখন যেখানেই যেতাম ও সঙ্গে থাকতো আমার। কতদিন কত হিংস্র পশুর হাত থেকে ও আমাকে বাচিয়েছে তার হিসাব নেই। আমি যদি কখনো ওকে একা রেখে কোথাও বেরিয়ে যেতাম তবে ও আমার শরীরের গন্ধ অনুসরণ করেই সেখানে পৌছে যেত। দুইটা বছর ধরে ওকে আমি পেলে পুষে বড় করেছি। তারপর একসময় যখন আমার মনে হলো আমার আবারও ফিরে যাওয়া দরকার লোকালয়ে, তখন একদিন ওকে না জানিয়ে, ওকে এখানে রেখেই আমি বেরিয়ে পড়লাম, শরীরে নদীর ভেতর থেকে কাদা তুলে লাগিয়ে, যেন ও আমার শরীরের গন্ধ পেয়ে আমার পিছু নিতে না পারে। তখন থেকে ও এখানেই আছে।
আমি আর ওর খোজ খবর নিতে পারিনি এরপর। আমি জানতাম ও না যে ও বেচে আছে নাকি মারা গেছে। ও বেচে থাকতে পারে, সেই আন্দাজ করেই তোকে গুহার কাছে পাঠিয়ে ছিলাম। কারণ ওই জায়গাটা ওর খুব পছন্দের ছিলো, প্রায়ই ওইখানে গিয়ে ঘুমাতো ও ঠান্ডার ভেতরে। আর আমার ধারণাই সঠিক হলো।

তারপর লিন্ডার দিকে আর ও একবার তাকিয়ে সাফওয়ান বলে উঠলো,
— সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ, ও আজ সঠিক সময়ে না আসলে হয়তো আমি বেচে ফিরতে পারতাম না তোমার কাছে। এই সুন্দর মুহুর্ত টা আর উপভোগ করা হতো না আমার। এই আগুনে ঝলসানো মাংস, নদীর পানির কলকল শব্দ, সে পানির ওপর পড়া চাঁদের আলোর প্রতিফলন, আমার শখের নারীর মিষ্টি মুখ, কোনো কিছুই আর দেখা হতো না আমার।

রুমাইশার মুখের দিকে প্রেমপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে শেষের কথা গুলো বলল সাফওয়ান। রুমাইশা এতক্ষণ এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিলো সাফওয়ানের দিকে। সাফওয়ানের কথা গুলো ও মন দিয়ে শুনছিলো। সাফওয়ান হঠাৎ করে এইভাবে তাকানোয় ও সম্বিত ফিরে পেলো, তারপর লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। মুখে ওর ফুটে উঠলো অদ্ভুত সুন্দর মিষ্টি হাসি, আগুনের আবছা আলোয় সে হাসি সাফওয়ানের বুকের ভেতরে ঝড় তুলে ফেললো যেন।

সাফওয়ান এগিয়ে এলো রুমাইশার কাছে, একেবারে কাছে। তারপর রুমাইশার কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদু গলায় বলে উঠলো,
— আজ অনেক এনার্জি লস হয়েছে আমার! রিফিল লাগবে।

রুমাইশা সাফওয়ানের দিকে তাকালো না। লজ্জায় ওর চোয়াল দুইটা জ্বালা করছে। হাসিটা মুখ থেকে সরতেই চাইছে না। সাফওয়ানের কথা শুনে ও বলল,
— মাছ আর মাংস প্রায় হয়ে এসেছে। খেয়ে নাও দ্রুত, এনার্জি ফিরে আসবে৷

সাফওয়ান রুমাইশার ফর্সা গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে নেশাক্ত গলায় বলল,
— আমার এনার্জি মাংস খেলে ফিরবে না। জীবন্ত কিছু খেতে হবে, এই যেমন তুমি!

রুমাইশা সাফওয়ানের বাহুতে একটা চাটি মেরে নাক মুখ কুচকে বলল,
— ছিঃই, মুখে কিছুই আটকায় না! তোমার লিন্ডা কিভাবে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে দেখো। তোমাকে আমার সাথে দেখে ওর রাগ হচ্ছে, ওর কাছে যাও।

সাফওয়ান পেছন ফিরে লিন্ডার দিকে তাকালো, সত্যি সত্যিই লিন্ডা ওদের দিকে তাকিয়ে আছে তীক্ষ্ণ চোখে, সে মোটেও খুশি না। দৃষ্টি তার রুমাইশার দিকে। সাফওয়ান লিন্ডার দিকে তাকিয়ে ফিচেল হাসি দিলো। তারপর ও উচ্চস্বরে ডেকে উঠলো,
— লিন্ডা!

সাফওয়ানের ডাকে লিন্ডা ফিরে তাকালো ওর দিকে। ও তাকাতেই সাফওয়ান ওকে ইশারা করলো অন্য দিকে তাকাতে। লিন্ডা আর ও একবার রুমাইশার দিকে ফিরে কিছুক্ষণ তীর্যক চোখে তাকিয়ে থেকে বুঝিয়ে দিলো, যে সে সাফওয়ানের কথা মতো মাথা ঘুরাচ্ছে ঠিকই কিন্তু রুমাইশার ওপর সে নজর রাখতে ভুলবে ন। আর তারপরই নিজের মাথা টা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো লিন্ডা।

লিন্ডার এমন কান্ডকারখানা দেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো রুমাইশা৷ আর সে হাসিতে কুপোকাত হয়ে সাফওয়ান রুমাইশা কে নিজের বুকের একদম ভেতর টেনে নিয়ে পিষে ফেলল নিজের বুকের সাথে, আর তারপরই রুমাইশার ঠোঁটে বসিয়ে দিলো এক প্রগাঢ় চুম্বন। তারপির বলল,
— লিন্ডা ওদিক ফিরে আছে, আর কেউ দেখছে ন!

রুমাইশা খিলখিল করে হেসে উঠলো আবার ও। সে রাতে এক জোড়া কপোত কপোতীর তীব্র সুখানুভূতির তৃপ্ত ধ্বনি তে মুখোরিত হয়ে উঠলো জঙ্গলের ভেতরের পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠা বিভীষিকা নদীর কিনারা।

( এখানেই শেষ টেনে দিই? নাকি আর ও এক পর্ব দিবো? 🥹)

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।