অফিডিয়ান

রাফসানের এত গুলো মিসডকল দেখে আয়েশা ভড়কালেন, ছেলেটার কোনো বিপদ আপদ হলো কিনা ভেবে দ্রুত কল ব্যাক দিলেন আয়েশা। প্রথম বার রিং হয়ে কেটে গেলো, আবার কল দিলেন। দুঃশ্চিন্তায় ওনার বুকের ভেতর দুরু দুরু করে কাপতে লাগলো!

দুবার রিং হওয়ার পর রাফসান কল ধরলো। উত্তেজিত গলায় বলল,
— মা, কখন থেকে কল দিচ্ছি, ধরছোনা কেন? ওদিকে কি হয়েছে বলো দ্রুত! জুবায়েরের সাথে কি রুমির বিয়েটা হয়ে গেছে ?

আয়েশা কি বলবেন ভেবে পেলেন না, নিরুত্তর রইলেন।
মা কে কোনো কথা বলতে না দেখে রাফসান আবার ও জিজ্ঞেস করলো,
— কি হলো মা কথা বলো না কেন? কি হয়েছে দ্রুত বলো?

আয়েশা ইতস্তত করলেন কিছুক্ষণ, তারপর বললেন,
— একটু আগে রুমি কে নিয়ে চলে গেছে সাফওয়ান, বিয়ে করে৷

রাফসান আশাহত হয়ে বসে পড়লো নিজের বিছানায়। এটাই হওয়ার ছিলো! সাফওয়ান যেখানে চাইছে সেখানে কার সাধ্য রুমি কে অন্য কারো সাথে বিয়ে দেবে! হতাশাগ্রস্ত গলায় ও বলল,
— মা, তুমি জানো তোমরা কার হাতে তোমাদের মেয়ে কে তুলে দিয়েছো? সাফওয়ান একটা কিলার মেশিন মা! ও, ও আন্ডারগ্রাউন্ডের একজন নামকরা প্রফেশনাল হিটম্যান। মানুষ মেরে টাকা কামায় ও! আর সেটাও ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে! শুধুমাত্র গত বছরে ওর বডি কাউন্ট একশ সাতাত্তর, শুধু মাত্র গত বছরে। তাহলে ও এত গুলো বছরে কত মানুষ কে মেরেছে তুমি ভাবতে পারছো?
সিঙ্গাপুরে ওর প্রাচুর্য পূর্ণ লাইফ স্টাইল ছিলো। ও যে এত ক্লাসি লাইফ লিড করে, মার্সিডিজ কিনেছে; দেশে তো গাড়ি একটা, আর ওখানে হয়তো আর ও আছে! এত টাকা ও পায় কোথায়? এইভাবেই। যার খবর ওর পুরো ফ্যামিলির কেউ জানে না!
আর ও যাদের কে টাকার বিনিময়ে মার্ডার করে, তারা ছোটখাটো কেউ নয়, বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত ব্যাক্তি তারা! আর ও যাদের হয়ে কাজ করে তারাও খুব ই বিপদজনক লোক।
ও যাদের কে খুন করেছে এত যাবৎকাল তাদের লোকেরা হন্যে হয়ে খুজছে ওকে। যেখানে পাবে সেখানেই ওকে কতল করে রেখে দেবে!

আয়েশার যেন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো কি হবে এইবার ওর মেয়েটার? ওই ছেলেটা জোরজবরদস্তি করে ওর মেয়ে টাকে বিয়ে করলো এই জীবন দেওয়ার জন্য! কি হবে এখন?
সাফওয়ান কে যদি ওরা মেরে ফেলে তাহলে তো মেয়েটা বিধবা হবে! তখন কি হবে! আর রুমি সাফওয়ানের স্ত্রী জানলে যদি ওরা রুমি কে ও মেরে দেয়! কি হবে তখন?

শামসুল আসলেন এমন সময় রুমে। আয়েশা কে এইভাবে কানে ফোন নিয়ে হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিনি দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলেন। এসে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে?

আয়েশা কান থেকে ফোন টা সরিয়ে শামসুলের কাছে দিলেন আর শুধু মাত্র বললেন,
— রাফসান।

শামসুল তাড়াতাড়ি ফোন টা কানে ধরে হ্যালো বললেন।
ওপাশ থেকে রাফসান বলল,
— বাবা, তুমি কেন আটকাও নি সাফওয়ান কে। কেন তুমি রুমি কে ওর হাতে তুলে দিলে বাবা? ও নিজে তো মরতে বসেছে, এইবার আমাদের রুমি কে ও সাথে নিয়ে মরবে বাবা!

রাফসান এবার আয়েশা কে বলা কথা গুলো শামসুল কে ও বলল, সব শুনে শামসুল থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলেন। এক চরিত্রহীনের হাত থেকে মেয়েকে বাচিয়ে এক খুনির হাতে তুলে দিলেন তিনি! যে কিনা টাকার জন্য মানুষ খুন করে!

শামসুল কিছুক্ষণ সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে জিজ্ঞেস করলেন,
— ও এত বছর এত খুন করেছে, তবে পুলিশে ধরেনি কেন ওকে?

রাফসান হাটুতে কনুই ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে হাতে মাথা ঠেকালো। দুঃশ্চিন্তা গ্রাস করে ফেলছে ওকে। বলল,
— এই টাই মেইন পয়েন্ট বাবা৷ সবাই জানে কে খুন করেছে, কিন্তু প্রমাণ নেই কোনো। কারন কোথাও কোনো রকমের কোনো ক্লু রেখে যায় না ও৷ আর খুন গুলো ও কোনো অস্ত্র দিয়ে করে না। কোনো ভিকটিমের শরীরে আজ পর্যন্ত অস্ত্রের কোনো আঘাত পাওয়া যায়নি। ওর ভিকিটিম দের সবার মাথা নয়তো চোখ উপড়ানো থাকে, কারো কারো হাত পা গুলো বিচ্ছিন্ন থাকে। আর এই বিচ্ছিন্ন করতে কোনো অস্ত্র সাফওয়ান ব্যবহার করেনা কখনো৷ কোনো ক্রাইম স্পটের সিসিটিভি ফুটেজেও ওকে কখনো দেখা যায়নি৷

শামসুল এবার সন্দিহান হয়ে বললেন,
— ওকে দেখা যায়নি তাহলে পুলিশ কিভাবে ওকে মার্ডারার দাবি করছে? নাকি ওকে কেউ ফাসাচ্ছে?

রাফসান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
— বাবা, ব্যাপার টা খুব কমপ্লেক্স৷ এতকাল কেউ জানতো না যে আসলেই কে খুন গুলো করে। যাদের খুন করা হয়েছে আজ পর্যন্ত, তাদের লোকেরাও জানতো না এতদিন।
সাফওয়ান সিঙ্গাপুর থেকে চলে আসার আগে এই প্রফেশন ত্যাগ করে। কিন্তু ও যাদের হয়ে কাজ করতো তারা ওকে হাত ছাড়া করতে চায়নি, কারণ এমন দক্ষ হিটম্যান খুব কমই পাওয়া যায়। তাই ওপর মহলের লোক জন রা ওকে অনুরোধ করে এই প্রফেশন ত্যাগ না করতে। কিন্তু তাদের কথা না শুনে সাফওয়ান এই প্রফেশন থে অব্যহতি দেয়, আর তাতেই বাধে বিপত্তি।
খুন গুলো যারা করিয়েছে তারাই ভিকটিমের লোক জনকে জানিয়ে দেয় সাফওয়ানের কথা, সাথে পুলিশ দের কেও। কিন্তু সাফওয়ান দেশে ফেরার আগে ওদের কে চ্যালেঞ্জ করে এসেছিলো, যে ওর বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে ও সেচ্ছায় ওদের কাছে ধরা দিবে। ওরা কোনো প্রমাণ পায়নি সাফওয়ানের বিরুদ্ধে, কিন্তু সাফওয়ান কে ওরা ছাড়বেনা। যে কোনো মূল্যেই সাফওয়ানকে ওরা খুজে বের করে হত্যা করবে। আর নয়তো……

— আর নয়তো কি?
অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন শামসুল।

রাফসান ফোস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
— আর নয়তো ওকে সায়েন্টিস্ট দের হাতে তুলে দেওয়া হবে। কারণ ওর এই রেয়ার কন্ডিশনের কথা উপর মহলের কয়েক জন জানতো। তারাই এই ব্যাপার টা ফাস করে দিয়েছে আমেরিকার একটি হাইব্রিড রিসার্চ অর্গানাইজেশনে। যতদুর ধারণা করা হচ্ছে তারাও লোক লাগিয়েছে সাফওয়ান কে খোজার জন্য। আর ওকে পেলে সোজা ওদের ল্যাবে নিয়ে যাবে, আর তারপর কি করবে ওর সাথে, জানিনা।

শামসুল বসে পড়লেন নিজের বিছানায়। এখন কি হবে? সাফওয়ানের পেছনে এত এত লোক লেগে আছে ওকে মেরে ফেলার জন্য!
তাহলে রুমির কি হবে এখন? ওরা যদি সাফওয়ানের সাথে সাথে রুমির ও কোনো ক্ষতি করে দেয়! মেয়ের কিছু হলে কি করবেন তিনি?

৩৭. রাত এখন প্রায় তিনটা। সাফওয়ান ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরাচ্ছে। চোখ ওর রাস্তার দিকে হলেও মনোযোগ সম্পুর্ন পাশের সিটে বসা ক্রন্দনরত রমণীর দিকে।

রুমাইশা গাড়িতে ওঠার পর থেকে নিঃশব্দে কেদে চলেছে। চোখ থেকে ওর পানি থামতেই চাইছেনা৷ কান্নার দমকে মাঝে মাঝে কেপে উঠছে। শাফিন পেছনে বসে বার বার রুমাইশা কে স্বান্তনা দিয়ে যাচ্ছে কান্না না করার জন্য। কিন্তু রুমাইশা চাইলেও কান্না আটকাতে পারছে না। বুকের ভেতর টা বার বার মুচড়ে উঠে কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

সাফওয়ান নিরব হয়ে আছে। রুমাইশার মনের অবস্থা টা একটু হলেও বুঝতে পারছে ও। সেই রাত থেকে ওর ওপর দিয়ে যা বয়ে গেছে তাতে ওর কান্না না করা টাই বরং অস্বাভাবিক হতো।

একবার আড়চোখে দেখলো ও রুমাইশা কে। ক্লান্তিতে চোখ দুইটা ছোট হয়ে এসেছে। মাথা থেকে ওড়না পড়ে গেছে, খোলা চুল গুলোর কয়েক গাছি বাতাসে উড়ছে। থেকে থেকে ফোপাচ্ছে ও।
বাম গালের ফোলা টা এখন একটু কমেছে, তবে লাল হয়ে আছে। রাতে খাওয়াও হয়নি ওর। এত রাতে দোকান পাট ও সব বন্ধ। বাড়ি গিয়ে ছাড়া আর পেটে কিছু পড়বে না৷

রুমাইশার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে আবার রাস্তায় মনোনিবেশ করলো সাফওয়ান। বাড়ি পৌঁছাতে আর বেশি রাস্তা বাকি নেই। রুমাইশা ক্ষনিকের ভেতরেই গাড়ির উইন্ডো গ্লাসে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
সাফওয়ান গাড়ির গতি ধীর করে রুমাইশার সিট টা পেছনে হেলিয়ে দিলো ভালোভাবে ঘুমানোর জন্য। তারপর আবার গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলো ও। ঘুম দরকার রিমুর, যতদ্রুত বাড়ি যাওয়া যায় তত দ্রুতই রিল্যাক্স হতে পারবে ও৷

রুমাইশা ঘুমানোর পর চারদিক টা আর ও নিঃস্তব্ধ হয়ে গেলো ঘাড়ির ইঞ্জিনের শ শ শব্দ ছাড়া আর কিছুই কানে এলো না।
শাফিনের চোখে ঘুম নেই। এতসব ঘটনা মুহুর্তের ভেতরে হয়ে গেলো। ভাইয়ের যে রূপ আগে কখনো দেখেনি তাই দেখে ফেলেছে ও। ভাইকে ও হঠাৎ করেই যেন কেমন ভয় ভয় পাচ্ছে।

সাফওয়ান আড়চোখে গাড়ির ভিউ মিররে শাফিনের চেহারা টা দেখতে পেলো। ভীত অথচ উৎসুক চেহারা নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাফওয়ান বলল,
— কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে কর।

শাফিন থতমত খেলো প্রথমে৷ ভাইয়া ওর চেহারা দেখে বুঝে গেছে ভেবেই লজ্জা পেলো ও। কিন্তু ভাইকে সেটা বুঝতে না দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— আয়েশা মামি তো রুমি আপুর ফোন সেই সন্ধ্যা রাতেই নিয়ে নিয়েছিলো শুনলাম, তাহলে তুমি অতোরাতে কিভাবে বুঝলে যে আপুর বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে মামি?

সাফওয়ান হাসলো নিঃশব্দে, তারপর বলল,
— রিমুর বডিতে একটা ট্র‍্যাকার লাগিয়ে দিয়েছিলাম আমি সেদিন এসে৷ ও কোথায় যাবে, কার সাথে ওর কি কথা হবে সব জানতে পারবো আমি। ওর সেফটির জন্যই লাগিয়েছিলাম, আর সেটা কাজেও লেগে গেলো।
আমি ধারনা করেছিলাম যে মামা বা মামি এই ধরনের কিছু করতে পারে। আর সে কারণেই ট্র‍্যাকার টা দ্রুত লাগিয়েছি, নইলে আর ও পরে লাগানোর ইচ্ছা ছিলো আমার৷
সেদিন ট্র‍্যাকার টা লাগিয়েছিলাম বলেই আজ রিমু কে আমি আমার বউ রূপে পাশে পাচ্ছি, নইলে আজ হয়তো আমার রিমু অন্য কারো হয়ে যেতো!

শাফিন মুগ্ধ চোখে দেখলো ভাই কে৷ ওর ভাইটা সেই ছোট বেলা থেকেই রুমি আপুর জন্য পারলে জান প্রাণ এক করে দেয়! কিভাবে যে রুমি আপু সাফওয়ানের এত আদরের হলো মাথায় আসে না শাফিনের৷ নিজের অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো ওর৷

খানিক পর বাড়িতে পৌছালো ওরা। শাফিন নেমে গেইট খুলে দিলো, সাফওয়ান গাড়ি ঢোকালো বাড়ির ভেতর৷ শাফিন আবার গেইট টা লাগিয়ে দিয়ে বাড়ির মেইন ডোরের দিকে এগোলো।

সাফওয়ান গাড়ি টা নিয়ে গ্যারাজে ঢোকালো। রুমাইশা তখনও ঘুমে। ক্লান্তিতে অবসন্ন দেহটা রাস্তার এত ঝাকাঝাকি আর ছোট খাট শব্দেও ঘুম ছাড়া হলো না। গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে সাফওয়ান গাড়ির জানালায় মাথা ঠেকিয়ে ঘুমানো রুমাইশার নিকট এগিয়ে গেলো কিছুটা।

ঘুমন্ত রুমাইশাকে দেখতে বাচ্চা দের মতো লাগছে পুরাই, ঘুমের ঘোরে নিচের ঠোট টা ফুলে আছে। ভ্রু দুইটা ওপরে উঠানো, যেন জাগালেই কেদে দেবে। সাফওয়ান বিমুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো রুমাইশার মুখের দিকে।

কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে ওর চোয়াল চাপড়াতে লাগলো সাফওয়ান, মৃদু স্বরে কয়েক বার ডাকলো রিমু বলে।

সাফওয়ানের ডাক শুনে হড়বড়িয়ে উঠে গেলো রুমাইশা। সদ্য ঘুম ভাঙা চোখে হঠাৎ করে বুঝলোনা কোথায় আছে ও। পাশে তাকিয়ে সাফওয়ানকে দেখেই চমকে উঠলো ও, মুখ টা হা হয়ে গেলো কিঞ্চিৎ।
এত রাতে এমন চিপা চাপা জায়গায় সাফওয়ান ওর সাথে কি করছে এত কাছাকাছি এসে ভাবতে লাগলো ও। পরক্ষণেই ওর মনে পড়লো ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে! আর জায়গা টা আসলে চিপা না, এইডা ওর শ্রদ্ধেয় স্বামীর কালো ঘোড়া। সাথে সাথে মুখের হা টা বন্ধ হয়ে গেলো ওর।

রুমাইশার এমন বিভ্রান্ত চেহারা দেখে সাফওয়ান হাসলো, বলল,
— শ্বশুর বাড়ি পৌছে গেছিস, নিজে নামবি না আমি কোলে করে নামাবো?

রুমাইশা আধো ঘুমেই বলল,
— আমি নামছি।
তারপর গাড়ির ভেতরের দরজার হাতল ধরে টানাটানি করলো কিছুক্ষণ, কিন্তু খুলতে পারলো না।
এই গাড়ির দরজা টা কি ইচ্ছা করে ওর সাথে এমন করে? ভেবে পেলো না ও।
আর কয়েক বার চেষ্টা করার পর ও যখন খুললো না তখন রুমাইশা অসহায় চোখে পাশে বসা সাফওয়ানের দিকে ফিরে তাকালো।

সাফওয়ান এতক্ষণ এক ভুরু উচু করে চোখা চোখে ওর কাজ কর্ম দেখছিলো। রুমাইশাকে এইভাবে তাকাতে দেখে বলল,
— অনেক কষ্ট করেছেন, এবার থামেন আপনি। আমি খুলছি।

তারপর নিজের সিট থেকে নেমে ওপাশের দরজাটা খুলে দিলো সাফওয়ান। তারপর হাত টা এগিয়ে দিলো রুমির দিকে।

চকিতে একবার তাকালো রুমাইশা সাফওয়ানের দিকে। তারপর হাতে হাত রেখে গাড়ি থেকে নামলো।

শাফিন মেইন ডোরের কাছে এসে কলিং বেল দিলো।
রুনিয়ার সবে মাত্র চোখ লেগে এসেছিলো। ছেলে দুটো হঠাৎ বাইরে যাওয়ায় চিন্তায় ছিলেন তিনি, শাফিনের কাছে দুবার কল দিয়েছিলেন, কিন্তু ধরেনি ও৷ যার কারণে আর ও বেশি চিন্তিত ছিলেন ।
কলিং বেলের শব্দ পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এসে মেইন ডোর খুলে দিলেন তিনি।

শাফিন দরজাতেই দাড়িয়েছিলো। শাফিন কে একা দেখে রুনিয়া ভড়কালেন, বললেন,
— তুই একা কেন? সাফওয়ান কই?

শাফিন মুচকি হেসে বলল,
— গাড়ি রাখতে গেছে গ্যারাজে। আমাদের সাথে আর ও একজন আছে। বাড়ির নতুন সদস্যা কে বরণ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হও৷

রুনিয়া শাফিনের কথা বুঝতে না পেরে বললেন,
— নতুন সদস্যা মানে? কে এসেছে তোদের সাথে?

সেই মুহুর্তেই সাফওয়ান এসে হাজির হলো শাফিনের পেছনে। রুমাইশা পেছনে থাকায় অন্ধকারে দেখতে পেলেন না রুনিয়া ওকে। সাফওয়ান কে দেখে রুনিয়া জিজ্ঞেস করলেন,
— কোথায় গেছিলি তোরা? আর কে আছে তোদের সাথে? কাউকে দেখছিনা তো!

তখনি সাফওয়ানের পেছন থেকে আলুথালু বেশে রুমাইশা বের হয়ে আসলো রুনিয়ার সামনে। এত রাতে রুমাইশা কে সাফওয়ানে দের সাথে দেখে রুনিয়া চমকালেন প্রচন্ড। তার ওপর রুমাইশার চোখ মুখের এমন বেহাল দশা দেখে রুনিয়া ভয় পেলেন। দ্রুত এগিয়ে এসে ওর মুখে হাত বুলিয়ে উদ্বেগের সাথে বললেন,
— রুমি মা! কি রে, কি হয়েছে তোর? এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে? আর এত রাতে তুই এদের সাথে, কিভাবে কি? কোথায় পেলো ওরা তোকে? বাড়িতে জানে সবাই?

সাফওয়ান পাশ থেকে বলে উঠলো,
— জানে মা সবাই। রিমু কে আমি বিয়ে করে নিয়ে এসেছি, মামা মামির উপস্থিতিতেই৷ এখন তুমি ওকে ওর রুমে দিয়ে আসো, যেখানে ও থাকতো আগে।
ওর ঘুম দরকার অনেক। পারলে কিছু খাইয়ে দিও৷ দুপুরের পর আর কিছু খায়নি ও৷ আর বাকি কথা কাল হবে। সব খুলে বলবো তোমাকে। এখন আমাদের সবার বিশ্রামের দরকার।

তারপর শাফিনে কে রুমে যেতে বলে নিজেও চলে গেলো সিড়ির দিকে। রুনিয়া অবাক হলেন প্রচন্ড। কি এমন হলো যে এত রাতে গিয়ে সাফওয়ান বিয়ে করে আনলো রুমি কে? সব ঠিক ঠাক আছে তো ওদিকে!

কিন্তু বেশি কিছু ভাবলেন না তিনি। রুমি কে ক্লান্ত দেখাচ্ছে অনেক। ওর বাহু ধরে ভেতরে নিয়ে আসলেন রুনিয়া।
রুমি এখন তার পরিবারেরই একজন স্থায়ী সদস্য ভাবতেই রুমির প্রতি স্নেহ যেন আর ও কয়েক গুন বেড়ে গেলো তার।

রুমিকে রুমে গিয়ে ফ্রেস হতে বলে তিনি রান্না ঘরে চলে গেলেন। ফ্রিজে রাতে রান্না করা ভাত আছে, আর মাছের ঝোল। সেগুলো বের করে গরম করে থালায় ভাত বেড়ে নিয়ে আসলেন রুমির ঘরে।

ঘুমের চোটে বসে বসে টাল খাচ্ছে রুমাইশা। রুনিয়া তাড়াতাড়ি করে মুখে তুলে খাইয়ে দিলেন ওকে কয়েক লোকমা। অল্প কয়েক টা খেয়েই রুমাইশা হার মানলো। এক গ্লাস পানি খেয়ে ঘুম ঘুম চোখে রুনিয়া কে বলল,
— আর একটু ও খাবোনা ফুপ্পি। ঘুমে চোখ দুইটা বন্ধ হয়ে আসছে আমার। কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিনা।

চোখ বড় বড় করে চারদিকে ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলল রুমাইশা৷
রুনিয়া হাসলেন। মেয়ে টা ঘুমের ঘোরেও দুষ্টুমি করছে। থালা নিয়ে বাইরে যেতে নিলে রুমাইশা পেছন থেকে বলে উঠলো,
— তুমি আমার আজ সাথে ঘুমাবা একটু ফুপ্পি? তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতাম! খুব ইচ্ছা করছে।

রুনিয়া রুমাইশার দিকে পেছন ফিরে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে বললেন,
— আমার ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে পারছিস না বলে এখন আমাকে চাইছিস?

রুমাইশা রুনিয়ার কথায় তাজ্জব বনে গেলো, লজ্জা পেয়ে চোখ মুখ লাল করে বলল,
— ছি ছি ফুপ্পি, কিসব বলো তুমি! যাও, লাগবে না, আমি একাই ঘুমাবো, হু!

বলে কোল বালিশ টা নিয়ে উলটো দিকে ফিরে বালিশে মাথা রাখলো রুমাইশা। রুনিয়া তা দেখে হেসে বললেন,
— ঘুমাতে থাক, আমি আসছি এগুলো রেখে।

রুমাইশার মুখে হাসি ফুটে উঠলো, কিন্তু এদিকে ফিরলো না ও। উল্টোদিকে ফিরেই ঘাপটি মেরে শুয়ে রইলো।

( রিমুর মতো আমার ও বেকায়দা ঘুম পাচ্ছে, তাই বেশি বড় করিনাই, রিচেক ও করিনাই, ভুল ভ্রান্তি হলে কমেন্টে জানাইয়েন, ঠিক করে দিবোনে 😴)

SHARE:

Logo Light

হারিয়ে যান গল্পের দুনিয়ায়

Useful links

2024 © Golpo Hub. All rights reserved.