৭৩. আকাশে আজ প্রখর সূর্য। সূর্যের তাপে মাটি তেতে উঠছে। ঈশান কোণে সুরমা রঙা মেঘ সাজতে শুরু করেছে থরে থরে। আর তার সাথেই তাল মিলিয়ে মাটিতে থরে থরে লাশ সাজাচ্ছে সাফওয়ান। ওর দক্ষ হাতে ওর টু সাইডেড সৌর্ড টা বিদ্যুৎ বেগে প্রতিপক্ষের মাংসে গেথে গিয়ে মাংস থেকে মাংস, হাড় থেকে হাড় আলাদা করে দিচ্ছে। রক্তের ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছে সমস্ত জায়গাটা জুড়ে। বেশ কয়েকটা স্টেন গানের শট লেগেছে ওর শরীরে, কিন্তু সেগুলো কয়েক সেকেন্ডের জন্য ওকে সামান্য দমাতে পারলেও ওর শরীরের একটা পশম ও হেলাতে পারছে না৷
ভার্সিটির স্টুডেন্ট রা সব যত্রতত্র ছোটাছুটি করে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছে। পুলিশ ফোর্স এসে দাঁড়িয়ে আছে ভার্সিটির মুখে, কিন্তু তাদের কে হারবার্টের গার্ড গুলো আটকে রেখেছে ভেতরে যেতে দিচ্ছে না, যার কারণে দুই পক্ষের ভেতরে ঝামেলা শুরু হয়ে বেশ বড় আকার ধারণ করতে চলেছে৷ পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা ঠাহর করা যাচ্ছে না৷
রুমাইশা সাফওয়ানের কথা মতো ফার্স্ট ফ্লোরে গিয়ে সেখানের গার্ড গুলো কিছু বুঝে উঠার আগেই, নিজের অতি দ্রুত গতির আক্রমণে, জোনাসের দেওয়া কারুকার্য খচিত খঞ্জর টার সাহায্যে তাদেরকে ধরাশায়ী করে ফেলেছে।
ফার্স্ট ফ্লোর টা ক্লিয়ার করে সোজা সেকেন্ড ফ্লোরে উঠে গেলো ও। কিন্তু সেকেন্ড ফ্লোর টা ক্লাসরুম হওয়ার সুবাদে সমস্ত জায়গা টাকে ফাকা দেখলো ও। সেকেন্ড ফ্লোরের গার্ড গুলো হয়তো সব থার্ড আর ফোর্থ ফ্লোরে। ও যাদের কে ফার্স্ট ফ্লোরে ফেলে এসেছে, তাদের ভরসায় হয়তো সেকেন্ড ফ্লোরের গুলা সব ওপরে উঠে গেছে।
তাই রুমাইশা আর দেরি না করে নিজেও থার্ড ফ্লোরের দিকে এগোলো। আর তখনি ওর কানে এলো অনেকের চিৎকার চেচামেচি, স্টেনগান আর ধারালো অস্ত্র দ্বারা আঘাত করার শব্দ। পায়ের শব্দ গুলো শুনে মনে হলো অনেক বেশিই লোকজন উপরে, দেরি না করে রুমাইশা ঝড়ের গতিতে সিড়ি বেয়ে থার্ড ফ্লোরে উঠে গেলো।
রুমাইশা চলে যাওয়ার পরই ফার্স্ট ফ্লোরে সাফওয়ান কে ধরাশায়ী করার উদ্দ্যেশ্যে থার্ড ফ্লোরে যাওয়ার জন্য আর ও জনা পঞ্চাশেক গার্ড উপস্থিত হলো। ওদের হাতে স্টেনগানের পরিবর্তে এ কে ফোর্টি সেভেন ধরা৷ তাদের ওপর নির্দেশ এসেছে, সাফওয়ান কে স্টেনগান ওয়ালারা ধরাশায়ী না করতে পারলে তারা যেন সাফওয়ানের পায়ের দিকে লক্ষ্য করে বুলেট ছোড়ে, এতে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না৷
কিন্তু ফার্স্ট ফ্লোরে পৌঁছে এতগুলো গার্ড কে এইভাবে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে দল টার লিডার ম্যাথিউ ভ্রু কুচকে তাকালো। তার জানা মতে সাফওয়ান ফোর্থ ফ্লোর থেকে থার্ড ফ্লোরে এসেছে৷ সাফওয়ান যদি থার্ড ফ্লোরেই থাকে তবে এদেরকে কে মারলো!
ম্যাথিউ তড়িঘড়ি করে ব্লুটুথ ডিভাইসের মাধ্যমে তার অন্য সহকর্মী দের থেকে খবর নিলো যে সাফওয়ান আসলেই থার্ড ফ্লোরে আছে কিনা, কিন্তু যখন ওরা সিউর হলো যে সাফওয়ান থার্ড ফ্লোরেই আছে তখন ওরা চিন্তায় পড়ে গেলো। ওরা এটাই ভেবে পেলো না, যে সাফওয়ান বর্তমানে থার্ড ফ্লোরে থাকা সত্বেও ফার্স্ট ফ্লোরের গার্ড দেরকে কে এইভাবে মেরে রেখে গেলো! ম্যাথিউ সন্দেহ করলো যে ভেতরে ভেতরে আর ও কেউ আছে, যে কিনা সাফওয়ান কে সাহায্য করছে, কিন্তু সে কে হতে পারে সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই নেই। হয়তো সে ওদেরই ভেতরকার কেউ।
ব্যাপার টা মাথায় আসতেই সাথে সাথে ওরা ছুটলো সেকেন্ড ফ্লোরের দিকে। কিন্তু সেকেন্ড ফ্লোর টা পুরো ফাকা। পুরো দশ ব্লক খুজেও কাউকে পেলো না ওরা৷ ওদের সঙ্গি সাথি গুলো যেন সব উধাও হয়ে গেছে৷ অগত্যা ওরাও থার্ড ফ্লোরের দিকে পা বাড়ালো।
.
থার্ড ফ্লোরে পৌছেই রুমাইশার সামনে পড়লো স্টেনগানধারী এক দল গার্ড। সমানে ওরা শ্যুট করে চলেছে সাফওয়ান কে লক্ষ্য করে৷ সাফওয়ান ওর সামনে থাকা গার্ড গুলোর যাকে যেভাবে পারছে খন্ড খন্ড করে চলেছে। কিন্তু একসাথে এত গুলো স্টেনগানের ভারী বর্ষণে ওর কাজ গুলো ব্যাহত হচ্ছে। ইলেকট্রিক শকের কারণে বার বার সাফওয়ান কেপে কেপে উঠছে। চোখ মুখ কুচকে উঠছে ওর৷ প্রতিটা শট দাঁতে দাঁত চেপে হজম করে নিচ্ছে ও।
আর নিজের প্রাণপ্রিয় স্বামী কে লক্ষ্য করে গার্ড দের এমন একনাগাড়ে শট করা আর তাকে কোনঠাসা করার চেষ্টা করতে দেখতেই রুমাইশার চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো। ওর থেকে ডাবল সাইজের জাদরেল গার্ড গুলোর দিকে পেছন থেকে ছুটে গেলো ও, আর তারপরই চোখের পলকে পেছনের গার্ড গুলোর কয়েকজনের গলার নলিতে হাতে থাকা খঞ্জর টা চালিয়ে দিলো রুমাইশা সাই সাই করে, চিৎকার করার সুযোগও পেলো না তারা৷
মৃত্যু মুহুর্তে চোখে কালো রঙা গগলস পরিহিত বব কাট দেওয়া চুলের ছোটখাটো মেয়েটার মুখের অদ্ভুত হাসি দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তাদের৷
পেছন থেকে হঠাৎ আওয়াজ কমে যাওয়ায় সামনের কয়েকটা গার্ড পেছন ফিরে তাকালো, আর তাকিয়েই ওরা দেখতে পেলো পাশের দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে বব হেয়ার কাট দেওয়া একটি মেয়ে, চোখ দুইটা ঢাকা, মুখে অদ্ভুত হাসি।
আর এরপরই ওদের নজর গেলো মেয়েটার পাশে পড়ে থাকা তাদেরই মেট দের মৃতদেহের ওপর। আর ব্যাপার টা বুঝে ওঠার সাথে সাথেই ওরা কয়েকজন দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো রুমাইশার দিকে৷
কিন্তু ওরা রুমাইশার কাছে পৌছানোর আগেই রুমাইশা ওদের কাছে পৌছে গেলো। আর অতখানি দুরত্বে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে চোখের পলকে নিজেদের সামনে দেখে ভড়কে গেলো গার্ড গুলো।
কিন্তু নিজেদের কে দ্রুত সামলে নিয়ে ওরা রুমাইশা কে আঘাত করতে যাওয়ার আগেই রুমাইশা বিদ্যুৎ গতিতে ওদের চার জনের একজন কে নিজের হাইকিং শু পরিহিত পা দিয়ে তার মুখ বরাবর গায়ের সর্বোচ্চ জোর দিয়ে একটা লাথি দিলো। সে লোক টা ছিটকে গিয়ে পড়লো পেছনে, সাফওয়ানের দিকে গান তাক করে থাকা অন্য একজনের গায়ের ওপর। আর এরপর রুমাইশা আগের থেকেও দ্রুত গতিতে বাকি তিনজনের হৃদপিণ্ড বরাবর একে একে ওর কারুকার্য খচিত খঞ্জর টা বসিয়ে দিলো বুকের গভীরে। আর কিছুক্ষণের ভেতরেই মুখ দিয়ে রক্ত উঠে মারা গেলো সে গার্ড গুলো।
হঠাৎ পেছনে প্রতিপক্ষের কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সাফওয়ান কে শ্যুট করতে থাকা গার্ড গুলো হকচকিয়ে গেলো। আর এই সুযোগে সাফওয়ান ওর সামনের কনফিউজড হয়ে যাওয়া গার্ড গুলোকে ওর টু সাইডেড সৌর্ড টার আঘাতে ধড় আর মাথা আলাদা করে দিলো। কিন্তু সাফওয়ানের সৌর্ডের আঘাত থেকে ভাগ্যের জোরে বেচে গেলো একজন।
সে লোক টা সাফওয়ানের থেকে বাচতে ছূট লাগালো রুমাইশা যেদিকে আছে সেদিকে। আর রুমাইশা নিজের হাতের খঞ্জর টা সে লোক টার দিকে ছুড়ে মারার জন্য প্রস্তুত করার আগেই লোক টা নিজের কোমরে থেকে একটা রিভলবার বের করলো, আর সেটা লোড করেই, ট্রিগারের ওপর আঙুল রেখে লোকটা রুমাইশার কপাল বরাবর রিভলভার টা তাক করে ধরলো। এরপর রুমাইশা কে উচ্চস্বরে বলল,
— ডোন্ট মুভ এ সিঙ্গেল লিম্ব অফ ইয়্যোর বডি।
রুমাইশা খঞ্জর টা যেভাবে হাতে ধরে রেখেছিলো সেভাবে রেখেই নিজের জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। হাতে রিভলবার ধরা লোকটা পেছন ফিরে সাফওয়ান কে এক পলক দেখে নিয়ে সাফওয়ানের উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
— ইফ ইয়্যু ট্রাই ট্যু মুভ অ্যা লিটল বিট, দ্যান আ’ম গোইং টু শ্যুট দিজ লেইডি! পুট ইয়্যোর হ্যান্ডস অন দ্যা এয়ার!
সাফওয়ান সাথে সাথেই নিজের হাত দুইটা মাথার ওপরে তুলে নিজের জায়গায় স্থির হয়ে গেলো। তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো ও রিভলবার ধরা লোকটাকে। লোকটা একবার সাফওয়ানের দিকে আর একবার রুমাইশার দিকে নজর রাখতে রাখতে ধীরে ধীরে এগোতে থাকলো রুমাইশার দিকে৷
সাফওয়ান নিজের দম আটকে ধরলো। আজ রুমাইশার জায়গায় অন্য কেউ হলে ও অবশ্যই রিস্ক নিতো৷ কিন্তু ওর রিমুর লাইফ নিয়ে রিস্ক নেওয়ার মতো সাহস ওর নেই। তবুও ও ধীর পায়ে লোকটার দিকে এগোতে থাকলো।
ভয়ে লোকটার নিঃশ্বাস পড়ছে ঘন ঘন, ঘাম ছুটছে, কিন্তু সাহস হারাচ্ছে না সে৷
রুমাইশা নিজের হাতের খঞ্জর টা শক্ত করে চেপে ধরে লোকটাকে হঠাৎ আক্রমণ করার ফন্দি আটতে লাগলো। কিন্তু সামনের দিকে চোখ যেতেই সাফওয়ানের করুণ চেহারা চোখে পড়লো ওর, সে ইশারায় ওকে বারণ করছে এমন কিছু না করতে। লোকটা ট্রিগারে আঙুল রেখে আছে, একটা চাপ লাগলেই শেষ সবকিছু।
রুমাইশা সাফওয়ানের ইশারা বুঝে চোখ দুইটা বন্ধ করে বুক ভরে দম নিলো। আর তারপর দম ছেড়ে দিয়ে আবার চোখ মেলে তাকালো লোকটার দিকে৷ লোক টা ঢোক গিলছে বারে বারে, রুমাইশার অনেকটাই কাছে এসে পৌছেছে সে। কিছুক্ষণ পর আর একটু কাছে পৌছাতেই রুমাইশার হাতে ধরে রাখা খঞ্জর টা খপ করে কেড়ে নিয়ে দূরে ছুড়ে মারলো সে। আর এরপরই রুমাইশার হাতটা ধরে এক ঝটকায় নিজের কাছে টেনে নিয়ে এলো।
নিজের গদার মতো হাত টা দিয়ে রুমাইশার গলা ধরলো লোকটা, আর এরপর রিভলভার টা রুমাইশার কানের ওপরের মাথার খুলির ওপর চেপে ধরলো। নিজেকে মৃত্যুর দ্বারে আবিষ্কার করে চোখ বুজে নিলো রুমাইশা।
আর রুমাইশা কে নিজের রিভলভারের মাথায় নিয়েই লোক টা সাফওয়ানের দিকে তাকিয়ে কাপা কাপা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
— পুট ইয়্যোর সৌর্ড অন দ্যা গ্রাউন্ড, ন্যাউ!
সাফওয়ান লোক টার চোখের দিকে চোখ রেখেই ধীর গতিতে নিজের সৌর্ড টা মেঝেতে রাখলো। আর তারপর মেঝে থেকে আবার উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো ও লোকটার দিকে।
এক মুহুর্তে ওর মনে পড়ে গেলো, ওর ল্যাবে ওরই আঘাতে মুমূর্ষু হয়ে পড়ে থাকা রুমাইশার সেই ফ্যাকাসে মুখ টার কথা, মৃত্যু মুখ থেকে ফিরে আসা রুমাইশার সেদিন কার প্রতিটা ঘটনা সাফওয়ানের চোখের ওপর ভেসে উঠলো। এই মুহুর্তে রুমাইশা কে হারিয়ে ফেলার এক বিপুল ভয় ভর করলো ওর ওপর। লোকটাকে উদ্দ্যেশ্য করে ও কঠিন গলায় বলে উঠলো,
— ডোউন্ট ইয়্যু ডেয়ার ট্যু থিংক অ্যাবাউট দ্যাট! ইয়্যু ন্যো ভেরি ওয়েল দ্যাট আই ডোউন্ট ন্যিড মাই সৌর্ড টু কিল ইয়্যূ।
আর এরপর রুমাইশাকে দেখিয়ে ধীর পায়ে সামনে এগোতে এগোতে ও বলল,
— ইফ ইয়্যু লেইট হার গ্যো দ্যান আই উইল কজ নো হার্ম ট্যু ইয়্যূ। বাট, ইফ ইয়্যু মেইক এন্যি স্ক্রাচ অন হার স্কিন দ্যান আ’ম গোইং ট্যু গিভ ইয়্যু দ্যা ওর্স্ট ডেইথ অব দিজ ইউনিভার্স৷
জাদরেল মুখের লোক টা ভয়ে ঢোক গিলতে লাগলো বার বার৷ রিভলভারের ট্রিগারের কাছে রাখা আঙুল টা কাপতে লাগলো অনবরত। সাফওয়ান বুঝলো লোকটা ভয় পাচ্ছে। ভয়ের চোটে কখন কি করে ফেলবে বলা যাচ্ছে না। সাফওয়ান লোক টাকে সহজ করার জন্য নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নিলো। তারপর ভরসা যুক্ত কন্ঠে ও বলে উঠলো,
— গিভ ম্যি দ্যা রিভলভার, দ্যান স্টেপ ব্যাক, এন্ড লেইট হার গো! আই ওন্ট ডু এনিথিং ট্যু ইয়্যূ, ট্রাস্ট মি।
কিন্তু লোকটা সাফওয়ান কে বিশ্বাস করলো বলে মনে হলো না। ঢোক গিলে সে আরও জোরে রুমাইশার মাথার সাথে রিভলভার টা চেপে ধরল। সাফওয়ান লোকটার চোখে চোখ রেখে সামনে এগোতে থাকলো।
কিন্তু সাফওয়ান কে নিজের প্রায় কাছাকাছি চলে আসতে দেখেই লোকটা রুমাইশা কে নিজের সাথে চেপে ধরেই পিছিয়ে যেতে লাগলো, আর আতঙ্কগ্রস্ত গলায় বলল,
— ডোউন্ট ট্রাই ট্যু কাম নিয়ার মি, অর আই উইল শ্যুট হার৷
লোকটার হাত কাপছে অনবরত। রুমাইশার দৃষ্টি সাফওয়ানের চোখের দিকে। অপলকে তাকিয়ে আছে ও সাফওয়ানের দিকে, সে চোখে সাফওয়ানের প্রতি ওর নিখাদ ভালোবাসার ছাপ৷
সাফওয়ান একবার রুমাইশা কে দেখছে তো আর একবার লোকটাকে। উপায় না পেয়ে সাফওয়ান শেষ পর্যন্ত ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো, আর এগোলো না৷ আর ঠিক সেই মুহুর্তেই পরপর দুইটা বুলেটের তীব্র শব্দে কেপে উঠলো থার্ড ফ্লোরের চার নম্বর ব্লকের বারান্দা টা৷ আর সাথে সাথেই নিরব হয়ে গেলো চারপাশ৷
বাইরে এতক্ষন পুলিশকে ঠেকিয়ে রাখা গার্ড গুলো চমকে উঠলো। সাফওয়ানের ওপর বুলেটের ব্যাবহার সম্পুর্ণ রূপে নিষেধ করার পর ও কেউ বুলেট ছুড়েছে শুনে ওরা সচকিত হয়ে উঠলো। বুলেটের শব্দ শুনে পুলিশ আরও জোরালো ভাবে ঝাপিয়ে পড়লো ওদের এপর।
আর থার্ড ফ্লোরে এতক্ষন রুমাইশা কে কব্জা করে রাখা লোকটার নিথর দেহ আছড়ে পড়লো মাটিতে৷ মাথার পেছন দিক দিয়ে একটা বুলেট প্রবেশ করে মাথার সামনে দিয়ে বের হয়ে গিয়ে, সাফওয়ানের পেছনে থাকা দেয়ালে গিয়ে বিধেছে সেটা।
লোকটার হাত থেকে ছাড়া পেয়ে রুমাইশা আতঙ্কিত হয়ে দম ছাড়লো জোরে, আর তারপর হাতপা ছড়িয়ে বসে পড়লো মেঝেতে৷ আর অল্প একটু হলেই ওর প্রাণপাখি উড়াল দিতে চলেছিলো।
সাফওয়ান সাথে সাথে ছুটে এলো ওর কাছে৷ এসেই মেঝেতে বসে পড়া রুমাইশা কে জাপটে ধরলো নিজের বুকের সাথে৷ আর ধরেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো ও। অল্প সময়ের জন্য ওর প্রাণ টা আর ওর ধড়ে ছিলো না। বুকের ভেতর ওর এখনো ধুকপুক করছে।
আর ঠিক তখনই রুমাইশার পেছনে থাকা চার নম্বর ব্লকে ঢোকার দরজার কাছ থেকে, ধোয়া ওঠা রিভলভার হাতে এগিয়ে এলো ম্যাথিউ সহ ওর সাথের গানধারী ছেলেগুলো। ম্যাথিউ কে নিজের কাছে আসতে দেখে সাফওয়ান রুমাইশা কে ধরে নিয়ে উঠে দাড়ালো মেঝে থেকে৷
ম্যাথিউ সাফওয়ানের একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে সাফওয়ানের দিকে নিজের ডান হাত টা বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডশেক করার উদ্দ্যেশ্যে।
সাফওয়ান কিছুক্ষণ ম্যাথিউ এর দিকে তাকিয়ে থাকলো কঠিন চোখে। আর এরপর ম্যাথিউ এর চোখে চোখ রেখেই ওর সাথে হাত মেলালো সাফওয়ান৷ আর সাথে সাথেই দুজনের মুখেই রহস্যময় হাসি ফুটে উঠলো।
সাফওয়ান ম্যাথিউ এর সাথে হ্যান্ডশেক করা অবস্থাতেই টান দিয়ে তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো, এরপর গলায় গলা মেলালো দুজন। তারপর আবার দুজন দুজনের থেকে সরে গিয়ে একে অপরকে দেখতে থাকলো, আর তখন ম্যাথিউ দরাজ হেসে সাফওয়ানের পিঠ চাপড়ে বলল,
— অ্যা ফ্রেন্ড ইন নিড, ইজ অ্যা ফ্রেন্ড ইনডিড!
( আমার শরীর টা এখনো ভালো হয়নি, বড় পর্ব দিতে পারছি না। বানান ভুল থাকতে পারে অনেক, ডোন্ট মাইন্ড 🙁)