টাল সামলাতে না পেরে সোফার ওপর থেকে সজোরে নিচে পড়ে গেলো সাফওয়ান। ওর ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো রুমাইশা। পাইলটিং রুম থেকে জোনাস দৌড়ে এসে উত্তেজিত গলায় বলল,
— কারা জানি ফাইটিং জেট থেকে আমাদের জেটের ওপর বুলেট ছুড়েছে। ডান পাশের উইংস টার ইঞ্জিনে আগুন ধরে গেছে। আমাদের কে এখনি এ জেট ছাড়তে হবে৷ নইলে সবাই মারা পড়বো এখনি।
জোনাস আবার দৌড়ালো রবার্টের কাছে। সাফওয়ান হুড়মুড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। নিজের পিঠের প্যারাসুট ব্যাগ টা ঠিক ঠাক ভাবে বেধে নিয়ে রুমাইশা কে নিজের সাথে যথা নিয়মে বেধে নিলো। কাজ গুলো খুব দ্রুততার সাথে করলো, কারণ যেকোনো সময় ইঞ্জিন ব্লাস্ট হতে পারে৷
জোনাস আর রবার্ট একসাথেই বেরিয়ে এলো পাইলটিং রুম থেকে। তারপর রবার্ট এসে প্লেইনের দরজা খুলে দিলো। এরপর সাফওয়ানের উদ্দ্যেশ্যে বলল,
— সাফওয়ান, তোর আর তোর ওয়াইফের সেইফটি বেশি প্রয়োজন, তোরা আগে জাম্প কর৷ আমাজন আর বেশি দূরে নাই। হয়তো দুশ কিলো মতো হবে। আমি আর জোনাস আমাদের মতো ডিভাইডেড হয়ে যাবো৷ আমরা জনপদের ভেতরেই থাকবো। তোরা ফরেস্টের দিকে এগিয়ে যাস৷ আর কবে আমাদের দেখা হবে জানিনা, হয়তো আর কখনোই দেখা হবে না৷ তোর বাচ্চা দের আমাদের কথা বলিস, আমাদের গল্প গুলো শোনাস। ওদের জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা। বেস্ট অফ লাক।
সাফওয়ান রেডিই ছিলো। রবার্টের কথা মতোই জাম্প দিতে এগিয়ে এলো ও। জাম্প দেওয়ার আগে জোনাস আর রবার্টের দিকে একবার কৃতজ্ঞতা সূচক দৃষ্টিতে তাকালো ও৷ আর তারপর বলল,
— তোদের এই উপকারের কথা সারাজীবন মনে রাখবো আমি, আর আমার বাচ্চারাও৷ কপালে থাকলে আবার ও দেখা হবে আমাদের। স্টেই সেইফ।
কথা গুলো বলেই জাম্প করলো ও জেট থেকে। ওর পেছন পেছন চলন্ত প্লেইন থেকে পালাক্রমে জাম্প করলো জোনাস আর রবার্ট। আর রবার্ট জাম্প করার কিছু মুহুর্ত পরেই চলন্ত প্লেইন টা মাঝ আকাশেই বিশাল শব্দ করে ব্লাস্ট করলো। রাতের আকাশে এই হঠাৎ আগুনে আলোকিত হয়ে উঠলো চারপাশ।
জেট টার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ছিটকে চলে গেলো চারদিকে। রবার্ট সবার পেছনে থাকায় একটা বড় টুকরো এসে ধাক্কা মারলো ওর পেছনে। রবার্ট সে ধাক্কায় নিজের জায়গা থেকে খানিক টা সামনের দিকে সরে গেলো। পিঠের নিচের দিকে প্যারাসুট ব্যাগের ঠিক নিচে কেটে গেলো ওর বিঘত খানিক, সেখান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়তে লাগলো। দাঁত মুখ খিচে সে তীব্র যন্ত্রনা সহ্য করে নিলো রবার্ট।
রুমাইশা চিৎকার করছে সমানে। উচ্চতাকে ও বরাবরই খুব ভয় পায়, আর এখন এত উচু থেকে ওকে জাম্প করতে হয়েছে। আত্মা পানি হয়ে যাচ্ছে ওর৷ ওর পেছনে, ওকে নিজের সাথে আটকে রাখা সাফওয়ান ওর এমন চিল্লানি দেখে সাহস দেওয়ার জন্য বলে উঠলো,
— রিমু, ডোন্ট প্যানিক। চোখ বুজে রাখ, আমি আছি তো! ভয়ের কিছুই নেই। হাত পা গুলো স্থীর করে ভাসিয়ে রাখ, ছোড়াছুড়ি করিস না, নইলে দুজনেরই বিপদ হবে। আমি আছি এখানে, তোর সাথে আছি আমি, কিছুই হবে না!
কিন্তু এ কথায় রুমাইশার কিছুই হলো না। ও এইবার চোখ দুইটা বন্ধ করেই চিৎকার জুড়ে দিলো আগের থেকেও বেশি জোরে৷ জোরে জোরে নিঃশ্বাস পড়তে লাগলো ওর৷ নিচ থেকে বাতাসের চাপ ওর পেট আর বুকে এসে বাড়ি খাচ্ছে। এরকম সময় প্যারাসুট ব্যাগ খুলে দিলো সাফওয়ান। আর সাথে সাথেই ক্যানোপি টা বেরিয়ে এসে আকাশে মেলে গেলো। বাতাসের চাপে সেটা ভেসে রইলো আকাশে। আর তখনই আবার চোখ খুলল রুমাইশা। ওর চিৎকার ক্রমে স্তিমিত হয়ে এলো৷
এখন ভোর প্রায় পাঁচ টার কাছাকাছি। পূর্ব দিগন্ত থেকে সূর্যের আলো উকি দিচ্ছে। সেটা পৃথিবী পৃষ্ঠে থাকা মানুষ গুলো দেখার আগেই ওরা দেখছে। রুমাইশা তাকিয়ে রইলো সেদিকে। ভোরের এমন অমায়িক সৌন্দর্য এই প্রথম উপলব্ধি করলো ও। সাফওয়ানের গাইডেন্সে নিজের হাত পা গুলো বাতাসের বীপরীতে যথানিয়মে ধরে রইলো। ছোট ছোট চুল গুলো ওড়াওড়ি করতে লাগলো ওর। ওদের থেকে কিছুটা দূরে আর ও একটা প্যারাসুট দেখলো রুমাইশা। চেহারা টা তেমন বোঝা যাচ্ছে না৷ হয়তো জোনাস হবে৷ আর জোনাসের থেকে আর ও খানিক টা দূরে, আর সামান্য উচুতে আর ও ওকটা প্যারাসুট। রুমাইশা চারদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকলো।
কিন্তু চারদিকে তাকালেও নিচের দিকে তাকাচ্ছে না ও। নিচে তাকালেই মাথা টা চক্কর দিয়ে উঠছে ওর। সাফওয়ান ওকে অভয় দিচ্ছে, নিজেকে স্বাভাবিক রাখার জন্য তাগিদ দিচ্ছে সাফওয়ান।
এই উচ্চতা থেকে সামনে তাকালেই দূরে দেখা যাচ্ছে আমাজনের ভূমিকা রেখা। বিশাল বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে আছে সেটা৷ সাফওয়ান চেষ্টা করলো প্যারাস্যুট টা যথাসম্ভব সেদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
রুমাইশার চোখ এখন নিচের দিকে, তাকাবেনা তাকাবেনা করেও না তাকিয়ে থাকতে পারলো না৷ নিচে তাকিয়ে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। ওরা ঠিক কতখানি ওপরে আছে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে সেটা ঠাহর করতে পারলোনা রুমাইশা, তবে বুঝলো, অনেক অনেক ওপরে আছে ওরা এখনো। গুগল ম্যাপে কোনো দেশের চেহারা যেমন দেখা যেতো তেমনই দেখা যাচ্ছে। রুমাইশার দম নিতে কষ্ট হচ্ছে। ভূ পৃষ্ঠ থেকে অনেক ওপরে হওয়ায় অক্সিজেন লেভেল খুবই কম এখানে। জোরে জোরে দম ফেলছে ও৷
কিন্তু হঠাৎই কান খাড়া করে ফেললো ও। বাতাসের শব্দের পাশাপাশি আর ও একটা শব্দ কানে আসছে ওর। কোনো ইঞ্জিনের শব্দ। নিজের সাথে থাকা সাফওয়ান কে ও বলল,
— সাফওয়ান, কিছু একটা আসছে আমাদের দিকে, আমি তার শব্দ পাচ্ছি। সেটা ক্রমেই গাঢ় হচ্ছে।
সাফওয়ান ওর চারদিকে নজর বুলালো। ওদের দুজনের কারো চোখেই গগলস নেই। কার টা কোথায় গেছে তাড়াহুড়োয় আর সেসব খেয়াল করার সময় হয়নি। দুজনের চোখের উজ্জলতাই আকাশের আবছা অন্ধকারের ভেতর সন্ধ্যাতারার মতো জ্বলজ্বল করছে৷
সাফওয়ান বুঝলো, হয়তো শত্রু পক্ষই ওদের পিছু নিয়েছে আবার৷ যারা রবার্টের জেটে হামলা চালিয়েছে এরা হয়তো তারাই। আর এ কাজ হারবার্টের ছাড়া আর অন্য কারো নয়৷ সাফওয়ান নানা কসরত করে প্রাণপণ চেষ্টা করলো যযথাসম্ভব দ্রুত সামনে এগোনোর জন্য।
দুশ কিলো থেকে কতখানি ওরা এগিয়ে যেতে পারেছে জানে না৷ তবে জঙ্গল টা এখনো অনেক অনেক খানি দূর। এতখানি পথ শত্রুর আক্রমণ থেকে বেচে কিভাবে এগোবে সেটাই ভাবতে লাগলো ও। আর তখন হঠাৎই রুমাইশা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
— সাফওয়ান, ওরা আমাদের দিকেই আসছে!
৮০. নিজের অ্যাপার্টমেন্টের বিশেষ কামরায় ঘরময় আর্টপেপার আর বিভিন্ন রকমের রঙ ছড়িয়ে ছিটিয়ে তার ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে পেইন্টিং ফ্রেমে হট প্রেসড্ পেপারে পেইন্টিং করছে হারবার্ট। তার গায়ের টি শার্ট টাতে রঙ লেগে আছে বিভিন্ন রকমের৷
এই একটা কাজে হারবার্ট খুবই পারদর্শী। ও কারো এক
জনের স্কেচ তৈরি করছে৷ আজ ওর কেন জানি খুব আফসোস হচ্ছে একটা জীবনসঙ্গিনীর জন্য৷ ওর ও তো একটা ফ্যামিলি হতে পারতো! কিন্তু হয়নি, মনের মতো মেয়ে পাওয়া দুষ্কর, কাউকেই ওর মনে ধরে না। কেউই ওর টাইপের নয়। বয়স এখন পয়তাল্লিশের কোঠায়, এ বয়স্টাকি খুব বেশি? ভাবলো হারবার্ট৷
এমন সময় ফোন টা বেজে উঠলো ওর৷ স্কেচ তৈরির সময়ে কেউ ফোন দিক এইটা ওর মোটেও পছন্দ না, কিন্তু আজকের দিন টা ভিন্ন। ফোন টা পেয়েই সেদিকে এগিয়ে গেলো হারবার্ট। টেবিলের ওপর থেকে শব্দ করে বাজতে থাকা ফোন টা তুলে রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠলো,
— বস, আমরা পেয়ে গেছি ওদের কে। এখন আপনার আদেশের অপেক্ষায় আছি। ওদের দুজনকেই বাচাবো?
হারবার্ট ঘুরে আবার নিজের আর্ট ফ্রেমের কাছে আসতে আসতে বলল,
— সাফওয়ান কে সরিয়ে দাও, প্রয়োজন নেই ওর ভেনমের আমার। ওর সাথের মেয়েটিকে নিয়ে আসো আমার কাছে। তবে খেয়াল রেখো, মেয়েটির শরীরে যেন কোনো আচড় না লাগে! নইলে কিন্তু তুমি তোমার প্রাণ টাও হারাবে।
লোকটা আদেশ পেয়েই বলে উঠলো,
— ওকে বস। আপনি যা বলবেন, যেভাবে বলবেন সেভাবে হবে।
এরপর ই কল টা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। হারবার্ট স্কেচ টা সম্পুর্ন না করেই বেরিয়ে এলো সে কামরা থেকে। রুমাইশার ছোট্ট মুখটা ফুটে আছে সে স্কেচ পেপারে।
হারবার্ট সেখান থেকে বেরিয়ে নিজের কামরায় এসে ওর দেয়াল জুড়ানো কম্পিউটার স্ক্রিন টাতে একটা ভিডিও প্লে করলো। তারপর কামরায় থাকায় ডিভানে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে স্ক্রিনের দিকে। সেখানে দেখা যাচ্ছে বব কাটিং দেওয়া কালো পোশাকে আবৃত অসম্ভব রকম সুন্দর আর জ্বলজ্বলে চোখের একটা মেয়ে লড়াই করে যাচ্ছে হারবার্টেরই গার্ড দের সঙ্গে। কালো পোশাক টার ভেতর দিয়ে ফুটে উঠেছে তার পাতলা শরীরের অসাধারণ ঢেউ খেলানো সৌন্দর্য। হারবার্ট মুগ্ধ হয়ে দেখছে মেয়েটার ফাইটিং স্কিলস। এই ভিডিও টা সকাল থেকে কম করে হলেও পঞ্চাশ বার দেখেছে সে৷
এতটুকু শরীর নিয়ে ওই বাঘা বাঘা লোক গুলোকে মেয়েটি কিভাবে কুপোকাৎ করলো সেটাই অত্যাশ্চর্যের সাথে ভেবে চলেছে হারবার্ট। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই থাকা অবস্থাতেই সে নিজের মনে মনে বলে উঠলো,
— তোমার জন্য আমার চাইতে উপযুক্ত কাউকে পাবে না তুমি লিটল বেইবি!
হারিবার্ট উঠলো এবার ডিভান থেকে তারপর নিজের রুমের ভেতর থাকা মিররের সামনে গিয়ে দাড়ালো। এত যাবৎ কাল খুব কম দিনই জিম স্কিপ করেছে সে। নিজের শরীর আর স্বাস্থের প্রতি সে খুবই যত্নবান বরাবরই। শরীরে তার এক ফোটা ও মেদ জমতে পারেনি৷ মুখের জ্ব লাইন গুলো এখনো শার্প। কে বলবে তার বয়স পয়তাল্লিশ? শুধু চুল দাড়ি গুলোতে সামান্য পাক ধরেছে। সে অবশ্যই ওই মেয়েটির উপযুক্ত।
শুধু সে বয়সে একটু বেশিই বড়ো। কতই বা! বিশ? এ আর এমন কি! এখন তো কত মেয়েরাই তাদের থেকে বয়সে কতো বড় বড় পুরুষদের বিয়ে করছে। ওটা কোনো ম্যাটারই না৷ বাচ্চা মেয়েটাকে হ্যাপি রাখলেই হইছে। কিন্তু সে কি হ্যাপি থাকবে হারবার্টের সাথে? হ্যাপি তো তাকে থাকতেই হবে। হারবার্ট তো এখনো ভার্জিন, মনের দিক থেকে! সে হাজার মেয়েকে দেহ দিলেও মন তো দেয়নি! তাহলে সমস্যা কোথায়? কোনো সমস্যা নেই। হ্যাপি তো মেয়েটাকে থাকতেই হবে!
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এসব ভেবেই মুচকি হাসলো হারবার্ট৷ তারপর আবার চলে গেলো নিজের স্কেচ পেপারটা সম্পুর্ন করতে।
৮১. ভোর বেলা রাস্তায় গুটিকয়েক লোকজন হাটাচলা করছে। ঠান্ডা হয়ে আছে চারপাশ, মৃদুমন্দ বাতাস বইছে চারদিকে। আর তার ভেতর দিয়েই ঝড়ের বেগে ছুটে চলেছে সাফওয়ান আর রুমাইশা।
ওদের প্যারাস্যুট টাতে বুলেট লেগে ছিদ্র হয়ে গেছে। বুলেট লাগা অবস্থাতেই সেটা আমাজনের দিকেই তীব্র গতিতে ছুটে গেছে অনেক খানি। আর তারপরেই সাফওয়ান আর রুমাইশা কে নিয়ে মুখ থুবড়ে সেটা মাটিতে পড়েছে।
সাফওয়ানের পায়ে চোট লেগেছে। তেমন ছুটতে পারছে না ও৷ রুমাইশা ওর সামনে সামনে ছুটছে৷ আমাজন এখনো আশি কিলো। এত দুরত্ব ছুটে পার করা সম্ভব নয়। তার ওপর সাফওয়ানের পায়ে জখম।
ফাইটার জেট থেকে হারবার্টের গার্ড রা সাফওয়ান দের প্যারাস্যুট লক্ষ্য করেই বুলেট ছুড়েছে। আর তারপর সাফওয়ান রা মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়লেই জেটে থেকে গার্ড রাও প্যারাস্যুটে করে, অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে নেমেছে ওদের কে কব্জা করতে।
বর্তমানে সাফওয়ান দের পেছন পেছন হারবার্টের গার্ড রা ছুটে আসছে, কিন্তু সাফওয়ানদের দৌড়ানোর গতির সাথে পেরে উঠছে না ওরা৷ সাফওয়ান আর রুমাইশা বর্তমানে ওদের চোখের নাগালের বাইরে। তারপর ও রাস্তা গুলো দিয়ে ওরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে ওদের খোজে লেগে পড়েছে।
সাফওয়ান প্রচন্ড চিন্তায় আছে। রুমাইশা অন্তঃসত্ত্বা। আর ওর এই অবস্থায় প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে ও। সাফওয়ানের পায়ে চোট, ও নিজেও ঠিক মতো দৌড়াতে পারছে না৷ এখন চাইলেও রুমাইশা কে কোলে নিয়ে ও দৌড়াতে পারবে না।
রুমাইশা ছুটতে ছুটতে আর ও কিছুদুর গিয়ে দাড়িয়ে গেলো হঠাৎ করেই। ও আর পেরে দিচ্ছে না৷ পেটের ভেতর অসম্ভব রকম ব্যাথা করছে৷ মোচড় দিয়ে দিয়ে উঠছে তলপেটের কাছ টাতে। চোখ মুখ ওর ব্যাথায় কুচকে যাচ্ছে।
ওকে থামতে দেখে সাফওয়ান ও থামলো। রুমাইশার কাছে এসে ওর মুখ টা দুহাতে আগলে নিয়ে জোরে দম ফেলতে লাগলো। রুমাইশার ব্যাথায় কুচকে যাওয়া মুখ টার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে ও জড়ানো গলায় বলে উঠলো,
— আমি একজন ব্যর্থ স্বামী! আমার স্ত্রীর এমন দুর্দিনে আমি তার জন্য কিছুই করতে পারছিনা! এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে আমার জানা নেই৷
রুমাইশা প্রতিউত্তরে কিছুই বলল না৷ প্রচন্ড ব্যাথায় ওর মুখের বুলি গুলো যেন হারিয়ে যেতে লাগলো। সাফওয়ানের বুকের সাথে নিজের মাথা টা ঠেকিয়ে ও দাঁড়িয়ে রইলো মাঝরাস্তায়৷
ঠিক তখনই একজন স্থানীয় এগিয়ে এলো ওদের দিকে। লোকটা এসে সাফওয়ান আর রুমাইশার থেকে কিছুটা দুরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
— আপনারা ঠিক আছেন? আপনাদের কোনো সাহায্য লাগবে? উনি কি অসুস্থ?
রুমাইশা কে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো সে লোকটা। সাফওয়ান তার দিকে চোখ তুলে তাকাতেই লোকটা ভড়কালো। কিন্তু সাথে সাথেই পরিস্থিতি সামলে নিলো সাফওয়ান। ও লোকটাকে বলল,
— ভয় পাবেন না। এটা একটা কাপল কস্টিউম। গতকাল রাতে আমরা একটা পার্টিতে ছিলাম, ভোর বেলা সেখান থেকেই সরাসরি চলে এসেছি, তাই আর মেক আপ রিমুভ করিনি।
লোকটা আস্বস্ত হলো সাফওয়ানের কথায়। লোকটাকে এমন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেখে সাফওয়ান আবার বলল,
—আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে গেছেন হঠাৎ করে, কিন্তু আমাদের কাছে গাড়ি নেই। আমাদের কে কোনোভাবে যদি সাহায্য করেন তবে খুব উপকার হয়!
লোকটা রুমাইশার দিকে আর একবার দেখলো। রুমাইশা কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে খুব যন্ত্রণায় আছে। লোকটার মায়া হলো অনেক। বলল,
—আপনারা এখানেই দাড়ান আমি এখনি আমার গাড়ি নিয়ে আসছি৷
লোকটা সেখান থেকে চলে যেতেই সাফওয়ান রুমাইশা কে নিয়ে পাশেরই একটা বাড়ির প্রাচীরের কোণায় লুকিয়ে পড়লো। হারবার্টের গার্ড রা যদি এর ভেতরে ওদের কাছে পৌছে যায় তবে সেটা খুবই খারাপ হবে৷ সাফওয়ানের এখন নিজের জন্য কোনো চিন্তা নেই। ওর মস্তিষ্কের পুরোটা জুড়েই এখন রুমাইশা আর ওর অনাগত সন্তানের চিন্তা। ওদের কে বাচিয়ে রাখতে নিজের সবটুকু দিয়ে দিবে সাফওয়ান।
খানিক্ষন পর সে লোকটা তার বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয় এলো একটা রংচটা সাদা রঙা গাড়ি নিয়ে। লোকটা রাস্তার ওপর এসেই আশেপাশে তাকিয়ে খুজতে লাগলো সাফওয়ান আর রুমাইশা কে।
সাফওয়ান তখন রুমাইশা কে নিয়ে বেরিয়ে এলো সে বাসাটার কোণা থেকে। আর তারপর রুমাইশা কে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ির পেছনের সিটের দরজা টা খুলে বসে পড়লো সিটে।
ওরা ঠিক ঠাক ভাবে বসার পর লোকটা জিজ্ঞেস করলো,
— আপনারা কোথায় যাবেন? হসপিটালে নাকি বাসাতে?
সাফওয়ান রুমাইশার মাথা টা নিজের কাধের ওপর ভালো ভাবে রাখতে রাখতে বলল,
— আমরা বাসাতেই যাবো।
লোকটা গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো,
— বাসা টা কোথায়?
সাফওয়ান তীক্ষ্ণ চোখে গাড়ির ভিউ মিররের ভেতর দিয়ে লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
— আমাজন।