পাথরের বুকে ফুল | পর্ব – ১৬

10 Min Read

বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে ওয়াসেনাত। ভাবছেন বিছানায় কিভাবে পা ঝুলানো যায়?আসলে বিছানার একপাশে এসে নিচের দিকে ঝুলিয়ে রেখেছে।তার দৃষ্টি সামনের দিকে।তবে তার চেহারা দেখে তার ভাবমূর্তি কিছু বুঝা যাচ্ছে না। আর তার সামনের দিকে তার দৃষ্টি বরাবর বসে আছে অরিএান। চেয়ারে বসে হাতগুলো মুষ্টি বদ্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে সে।ওয়াসেনাতের মাথায় এটা আসছে না।এই লোক তার রুমে কিভাবে ডুকলো।দেওয়াল বেয়ে??কি সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার ভাবা যায়??না মোটেও ভাবা যায় না।তার এখন একটা ভায়াবহ কাজ করতে ইচ্ছে করছে।আর তা হলো তার কাঁথাটা দিয়ে অরিএানকে ডেটে চোর চোর বলে চেঁচাতে।আর তার বিশেষ ফুফুর হাতে বিশেষ ধৌলাই দেওয়াতে। কিন্তু সে এমন টা করছেনা।সে শুধু তাকিয়ে আছে।

অরিএান ভাবতেও পারে নি সে এমন ভাবে ধরা খাবে প্লাস চোরের মত বসে থাকবে।আজ ওয়াসেনাতের সাথে দিনের বেলায় তেমন কথা হয় নাই।তার উপড় যা একটু হয়েছে তা অরিএানের ভয় দিগুণ করে দিয়েছে।রাতে ওয়াসেনাতকে দেখতে বড্ড ইচ্ছে করছিলো।তাই চলে এসেছে।এই ২ মাসে সে মাজে মাজেই এমন কাজ করেছে। সে নিচে থেকে দাঁড়িয়েই ওয়াসেনাতকে দেখার চেষ্টা করতো মাজে মাজে দেখেও পেলতো আবার মাজে মাজে ওয়াসেনাতের ব্যালকুনির দরজাটা বন্ধ পেতো।কিন্তু আজ বন্ধ ছিলো না।আর ওয়াসেনাতেরকে সে ব্যালকুনিতেও দেখেনি।তাই তো পাইপ বেয়ে বহু কষ্টে উপড়ে এসেছে।আর এসেই ওয়াসেনাতকে ঘুমতে দেখে সে তাকে কাছ থেকে দেখার লোভ সামলাতে না পেরে কাছে যেতেই এই অবস্থা। অরিএানের এখন খুব করে ফিল হচ্ছে চোরেদেরকে ধরেলেও নিশ্চুই এমন কষ্ট হয় এই ব্যাপারটা। অরিএান মনে মনেই বলে উঠে আজ থেকে কেউ তার বাসায় চুরি করতে এলে বা কোনো চোরকে দেখলে সে তাকে মানুষের হাত থেকে বাঁচাবে। কিন্তু এখন তাকে কে বাঁচাবে। অরিএান দুনিয়ার কাছে সিংহ হলেও ওয়াসেনাতের কাছে আসলেই কি যে হয় আল্লাহ যানে।বেচারার ম্যাউ করারও সাহস থাকেনা।

মানুষের সিস্কসেন্সস বলে একটা মহান ব্যাপার আছে।ঘুমালেই এটা বেশি কাজ করে। ওয়াসেনাতেরও তাই হয়েছে।সে যখন ঘুমিয়ে ছিলো তখন তার মনে হয়েছে কেউ উপুত হয়ে ঝুকে তাকে দেখছিলো তাই সাথে সাথে চোখ জোড়া খুলে সামনে তাকিয়ে অরিএানকে দেখেই এক চিৎকার দেয়।অরিএানও হালকা দেরি করলেও তাড়াতাড়ি মুখ চেপে বলে……………..
__হেই বেবি আমি এভাবে চিৎকার করো না।লোকে তো খারাপ ভাববে।বলবে এত রাতে একটা বয় এন্ড গার্ল একসাথে এই রুমে ভাবা যায় তাদের কি সাঙ্ঘাতিক চিন্ত ভাবনা হতে পারে।তাই রিমাইন সাইলেন্ট।

ওয়াসেনাতো শক্ট। সে কোনো মতে নিজেকে ছাড়িয়ে ঠাসসস করে পা গুলো গোল করে বিছানায় বসে পরে।আবার কি মনে করে তাড়াতাড়ি উঠে নিজের রুমের দরজাটা বন্ধ করে আবার বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে পরে।তারপর অরিএানের দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে তার পড়ার টেবিলের সামনের চেয়ারে বসতে বলে।আর তখন থেকেই তাকিয়ে আছে।
__আপনি আমার রুমে কি করছেন??(রাগি চোখে তাকিয়ে)
__আসলে তুমি তখন এংরি হয়ে চলে এলে তো তাই তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হল। দেন আই কাম দেয়ার।
__আপনার কি মনে হয় না আপনি পাগল??তাও অসম্ভব রকমের পাগল।যাকে বলে আন লিমিটেট মেন্টাল।আপনি কি এটা যানেন।

অরিএান কিছু বলে নি।শুরু হাবার মত তাকিয়ে থেকে এটাই বুঝতে চেয়েছে একপ্রকার জাতিয় ক্রাশকে কেউ পাগলও ভাবতে পারে!!কি ভায়াবহ ব্যাপর।
__আপনার সাহস দেখে আমি হতবাক। কিভাবে আপনি একটা মেয়ের রুমে বিনা নোটিশে চলে এলেন।আল্লাহ রোক্ষা করো।কিভাবে পারলেন বলেন??একটা ফাউলল ফালতু লোক।ভাগ্যিস নামাজ পরেই হিজাব সহ ঘুমিয়ে পরে ছিলাম। তা না হলে এখন কি হত। আপনিতো আমার সব দেখে ফেলতেন।ফালতু তামির ও লিমিট থাকে।শুধু একটু দেখার জন্যে আপনি আমার রুমে চলে এলেন।ভাবা যায়।আবার তো আমার মুখের উপড় ঝুকে ছিলেন। কি দেখছিলেন??হুম।বলেন??আমি বুড়া না কি যোয়ান। হুম
__আমি তো যানি তুমি যুবতি।এটা দেখার জন্যে ঝুকতে কেনো হবে। হোয়াই?বাই দা ওয়ে তুমি কি যানো তুমি খুবই টকেটিব গার্ল??

ওয়াসেনাত হা করে তাকিয়ে আছে।তার এখন রাগার কথা তাও প্রচুর ভাবে তবে সে এমন কিছুই করছে না।আসলে সে অবাক হচ্ছে এটা ভেবে অরিএান এভাবে কথা বলছে কেনো।কারন বিগত দুইমাস অরিএান এমন ফানি টাইপের কথা কখনো বলে নি।কিন্তু আজ বলেই যাচ্ছে। যেখানে অরিএান একটা কি দুটোর বেশি কথা বলতো না সেখানে তার মুখে এমন কথা শুনে ওয়াসেনাতের অবাক হওয়ারি কথা।হঠাৎ দরজা নাড়ার শব্দে ওয়াসেনাত চমকে যায়।সে ফিসফিস করে অরিএানকে বলে উঠে……….
__চুপ আস্তে কথা বলেন।

ওয়াসেনাত ভয় পেয়েছে।যদি দরজায় তার ফুফু থাকে তবে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে এই মহিলা তিলকে তাল বানায় আবার তালকে তিল বানায়।অন্যের কথা হলে তা তালে পরিনত করে আর নিজের বেলায় তালকে তিল বানায়।ওয়াসেনাত ভুতু গলায় বলো…….
__কে????
__তুই এখনো ঘুমাস নি।কি হয়েছে চিৎকার শুনলাম। আমি তো পানি আনতে আসছিলাম তোর রুমে কিসের আওয়াজ হয়ছে রে??দরজা খোল ??
__না না আসলে আমি তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়েছিলম।এখন চলে গেছে। আমি পড়তেছি।তুমি যাও ঘুমাও
__ কি তে
__না না তেমন কিছু না।তুমি যাও। এখন ডিস্টার্ব করবে না।আমি পড়ছি(অরিএানের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে।দাতেঁ দাতঁ চেপে বলে)
__আচ্ছা।তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যা।

ওয়াসেনাত হাপ ছেড়ে বাচলো ভাগিস মা ছিলো ফুফু হলে তো শেষে। ওয়াসেনাত এবার অরিএানের দিকে তাকায়। অরিএান মুখ টিপে হাসছে।ওয়াসেনাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ইসসস কি সুন্দর হাসি ছেলেটার কিন্তু তেমন হাসে না।ওয়াসেনাত এবার দাড়িয়ে অরিএানের কিছুটা কাছে গিয়ে বলে………….
__আমাকে দেখা শেষ হলে যান।তানা হলে বিপদ আছে কপালে।
__হয় নাই তো
__what
__তোমাকে কত বার বলেছি এমন ঠোঁট গোল করে হোয়াট বলবে না।ব্যাপারটা মারাত্মক ভাবে ঘায়েল করে আমাকে।মন চায় মন চয়(কথাগুলো বলছে আর ওয়াসেনাতের কাছে যাচ্ছে ওয়াসেনাত খানিকটা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। একটা সময় আলমারির সাথে লেগে যায় আর অরিএান তার এক হাত ওয়াসেনাতের মাথার কাছে রাখে আর এক হাত ওয়াসেনাতের কোমরের পাশে রেখে বলে………..
__বেশি কিছু না শুরু মন চায় টোল পরা জায়গায় কামড় বসিয়ে দি।(বলে ওয়াসেনাতের গালে টুসস করে একটা চুমু বসিয়ে দেয় 🙈🙈)

ওয়াসেনাত তো টাসকি খেয়ে দাড়িয়ে আছে।তার মাথায় কিছু ডুকছেই না।আজ এই লোকের হলো কি।ওয়াসেনাতের রসগোল্লার মত চোখ দেখে অরিএান পিক করে হেসে বিছানায় দুহাত পিছনে ঠেসস দিয়ে বসে পরে আর হাসতে হাসতে বলে…………..
__বুজলে বেবি??আমি কি বলতে চেয়েছি।আশা করি বুঝেছ।আর একটা আমেইজিং কথা তোমাকে কিন্তু প্লাজু আর লং টিশার্টে সেই লাগে।

ওয়াসেনাত এবার নিজের দিকে তাকিয়ে কেদে দিবে টাইপের অবস্থা। সে একটা কালো প্লাজু আর সাদা টিশার্ট পরেছে।কিন্তু হিজাবের জন্যে তেমন বুঝা যায় না।হেজাবটা নামাজের জন্যে ব্যবহার করা হয় তাই অনেক লং।ওয়াসেনাত এবার অরিএানের দিকে তাকায়। অরিএানের দিকে এতক্ষণ তেমন মনোযোগ দেয়নি।অরিএানও সাদা টিশার্ট আর বাদামি থ্রিকোয়াটার পেন্ট পরেছে।ওয়াসেনাতের খুব লজ্জা লাগছে।সে কাচুমাচু করে এদিক ওদিক তাকাছে।অরিএান তার অবস্থা বঝে বলে উঠে……….
__আরে সমস্যা নেই আজ হোক কাল হোক তোমাকে তো এভাবে দেখবোই বেবি সো নো প্রবলেম (এক চোখ মেরে)

ওয়াসেনাতের সেন্সলেস হওয়ার মত অবস্থা তবে অরিএান সেটা আর হতে দেয়নি।চট করে উঠে ওয়াসেনাতের কোমর জড়িয়ে টুপপ করে ওয়াসেনাতের কপালে চুমি খেয়ে বারান্দার দিকে পা বারাতে বারাতে বলে……….
__ভেবেছিলাম তোমার সাথে আজ থাকবো কিন্তু তো আর হলো না কারন তার আগেই তুমি সেন্সলেস হয়ে যাবে।আর ইউ নো দেট সেন্সলেস মানুষ আর ডেডবডি সমান টাইপেরই হয় শুধু একটাই পার্থক্য কেউ মৃত আর কেউ জীবিত। এমন ভুতুরে পরিবেশ সৃষ্টি হলে তো আমি থাকতে পারবো না।তার চেয়ে আমি চলে যাওয়াই বেটার কি বলো ফেইড়িপরী????

ওয়াসেনাত জবাব দেওয়ার মত অবস্থায় নাই তাই সে চুপ করে নিরিহ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে।

ওয়াসেনাতের আর রাতে তেমন ঘুম হলো না।সুধু অরিএানের কথাই তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এই লোকটার জন্যে তার মনে কেমন যেনো এটা ফিলিংস আছে।সেটা কি ভালোলাগা নাকি ভালোবাসা এটাই ভাবছে।আর সে এপিঠ ওপিঠ করেই রাত পার করে সকালের দিকে ঘুমায়। আর উঠে ১২ বাজে। আজ আর তার ভার্সিটি যাওয়া হলো না।নাস্তা করে রুমের দিকে যাওয়ার জন্যে পা বারাতেই কলিঙ্গ বেল বেজে উঠে দরজা খুলতেই একটা লোক পার্সেল জাতিয় কিছু এগিয়ে দিলো।ওয়াসেনাত নিজের নাম পার্সেলে দেখে অবাক হল।পার্সেলটা নিয়ে নিজের রুমে চলে এলো।

ওয়াসেনাত অবাক চোখে তার খাটের উপরে রাখা জিনিস গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।পার্সেলে খুব সুন্দর একটা এশ ক্লারের একটা গোল জামা আর একটা হিজাব রয়েছে।পাশে একটা চিরকুটও রয়েছে তাতে কালো কালিতে লেখা
অপেক্ষয় থাকবো ফেইড়িপরী ওই দিগন্তজুড়া সবুজ মাঠে।যেখানের সোনালি কিরনে আমি মুগ্ধ হয়ে আবিষ্কার করেছি এক আলোকিত লাল আভা মিশ্রিত মুখের অধিকারি এক সোনালি ফেইড়িপরী। যে কৃষ্ণচূড়ার মতো আমার জীবনকে নিজের রং এ রাঙিয়েছে।অপেক্ষা জিনিসটা কিন্তু খুবি কষ্টের।জানো তো।আই নো ইউ নো ইট।

চিঠি পরে ওয়াসেনাতের মনে এক অজানা অনুভূতি বিরাজ করছে।কই আগে তো অনেকেই তাকে এমন ভালোবাসা মিক্সত চিঠি দিয়েছে কিন্তু তখন তো এমন লাগেনি।তবে এখন কেনো লাগছে। এই অনুভূতির সে কি নাম দিবে ভেবে পাচ্ছেনা।এটাই কি ভালোবাসার প্রথম অনুভূতি?????

চলবে…

🍂ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।………………

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।