পরিজান | পর্ব – ৬

14 Min Read

কালবৈশাখী ঝড়ের মতোই তান্ডব চালিয়েছে কাল রাতের ঝড়। গাছের ছোট ছোট ডালপালাগুলো উড়ে এসে পড়েছে অন্দরমহল ও বৈঠকঘরের উঠোনে। গাছগাছালির পাতাতেও ভরপুর হয়ে আছে। ঠিক তেমনি ভাবেও এ ঝড় নদী নালায় তান্ডব চালিয়েছে। বিন্দুদের নৌকা খানি সারারাত দুলেছে। ভাগ্য ভালো যে পুরোপুরি উল্টে যায়নি তাহলে ওদের থাকার জায়গা বলতে আশ্রয়কেন্দ্রই শেষ ঠিকানা হতো। কিন্তু নৌকায় দুটো ফুটো হয়ে গেছে। চুয়ে চুয়ে পানি ঢুকেছে সারারাত। বিন্দুর মা চন্দনা দেবী আর সখা নৌকার পানি ফেলেছে। রাতে দুচোখের পাতা আর এক করেনি তারা। কিন্তু ইন্দু বিন্দু দুই বোন মরার মতো ঘুমিয়েছে। শত ডেকেও চন্দনা ওদের তুলতে পারেনি। ওদের এক কথা মরলে মরুক তবুও ঘুম ছাড়বে না। দরকার পড়লে ঘুমের ঘোরেই নৌকার তলে চাপা পড়ে মরবে।
এজন্য সকাল হতেই চন্দনা দেবী বকাবকি শুরু করে দিয়েছে। চিল্লিয়ে বলতেছে,’তোগো মতো মাইয়া লাগতো না আমার। ছোড পোলাডারে নিয়া সারা রাইত জল হেচলাম আর ছেমরি দুইটা গতরে তেল লাগাইয়া ঘুমাইলো। হারামজাদি,হতচ্ছাড়ি, তোর বাপের তো খবর নাই। আইজ খাইবি কি?গলায় ঢালনের মতো কিছু নাই। আমি মরি আমার জ্বালায় কেউ এট্টু দেহেও না। এতো মানুষ মরে আমি মরি না ক্যান।’
কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে চন্দনা নৌকায় বসে বসে আধভাঙ্গা গামলা দিয়ে পানি ফেলছে। সাথে চোখের পানি ও ফেলছে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আর পারছে না চন্দনা।বিয়ের পর থেকেই কষ্ট করে আসছে। স্বামী মহেশ মাছ বিক্রি করে কোনরকমে সংসার চালায়। তবুও কিসের যেন কমতি থেকেই যায়। সব টাকাই যদি সংসারের পিছে খরচ হয়ে যায় তাহলে সঞ্চয় করবে কি?মেয়ে দুটোও তো বড় হয়েছে বিয়ে দিতে হবে তো! কিভাবে কি করবে তা ভেবে ভেবে চন্দনার দুঃখের শেষ নেই। কিন্তু মহেশ অতো ভাবে না। কিভাবে দুটা টাকা সঞ্চয় করবে মেয়ে বিয়ের জন্য তাও ভাবে না। তিন সন্তানকে মহেশ খুব ভালোবাসে বিশেষ করে বড় মেয়ে বিন্দুকে। কেননা বিন্দু নাকি দেখতে একদম মহেশের মতো। শ্যামলা গায়ের রং,চোখ,এমনকি স্বভাবটাও মহেশের মতোই। এজন্য মহেশ বাকি সন্তানদের থেকে বিন্দুকে একটু বেশি স্নেহ করে। এজন্য প্রায়ই মহেশের সাথে ঝগড়া হয় চন্দনার। মেয়ে মানুষ বাড়ন্ত বয়স, কখন কি ভুল করে বসে কে জানে? তাছাড়া মেয়ে তো আরেকটা ও আছে ওকেও তো বিয়ে দিতে হবে। চন্দনার কথা যেমন আগেও কেউ কানে নেয়নি তেমনি আজকেও কেউ কানে নিলো না। ইন্দু গিয়ে মাটির চুলা জ্বালাতে বসে পড়ল আর সখা নিজের ছেঁড়া গামছায় করে আনা ফলপাকুড় বের করতে বসলো। বিন্দু কলা গাছের ভেলাটা নিয়ে বের হয়ে গেল।

ঝড় থামলেও মেঘ কমেনি তার সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও পড়তেছে কিন্তু এই বৃষ্টি বিন্দুকে ভেজাতে ব্যর্থ। ভেলা নিয়ে শাপলা বিলে এসেছে সে। হাতের বাশটা ভেলার উপর রেখে উবু হয়ে বসে কতগুলো শাপলা তুলল। আরো কিছু শাপলা তুলতে হাত বাড়াতেই একটা নৌকা এসে ধাক্কা দিলো ভেলায়। কেঁপে উঠলো বিন্দু,পড়ে যেতে গিয়েও পড়ল না। উঠে দাঁড়িয়ে বলল,’মাগো মা এমনে ঠেলা মারে কেউ?আরেকটু হইলেই পইড়া যাইতাম গা।’
নৌকা থেকে বেরিয়ে এলো সম্পান। এক লাফে ভেলায় উঠে দাঁড়ালো বলল,’এইহানে কি করস?’

‘এ্যাহ!মনে হয় বুঝো না কিছু! শাপলা না নিলে খাইতাম কি?’

‘ক্যান তোর বাপে কই গেছে?’
বিন্দু আরো কিছু শাপলা তুলতে তুলতে জবাব দিলো,’গঞ্জের হাঁটে গেছে কাইল। ঝড়ের লাইগা আইবার পারে নাই।’

সম্পান কিছু বলল না। এদিক ওদিক তাকিয়ে লোকজন দেখে নিলো। নাহ কেউ নেই। সম্পান আরেকটু এগিয়ে এসে বলল,’জানস বিন্দু শহরের ডাক্তারবাবু আমার কাছে পরীর কথা জিগায়।’
বিন্দুর হাত থেমে যায়। উঠে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে বলে,’তুমি কিছু কইছো মাঝি?’

‘পাগল নাকি কিছু কমু! আমার মনে হয় হেয় আমার কথা বিশ্বাস করে নাই। পরীরে হেয় দেখতে চায়।’

‘কও কি?এই কথা তো পরীরে জানাইতে হইবো। পরী জানলে কি করব কে জানে?’

সম্পান বিন্দুকে আশ্বাস দিয়ে বলে,’কিচ্ছু হইবো না রে। আমাগো পরী সব সামাল দিতে পারব। আইজ রাইতে যাবি তোরে পদ্মায় ঘুরামুনে।’
বিন্দুর মুখে হাসি ফুটে উঠলো বলল, ‘পরীবানুরেও কই!!ও যাইবো নে।’

‘বাইর হইতে পারবো তো পরী। তাইলে নিয়া যামুনে। তুই তৈয়ার হইয়া থাহিস তাইলে।’

সম্পান আর কথা না বাড়িয়ে নৌকা নিয়ে চলে গেল। অনেক কাজ তার। আজকে ওষুধ আনতে শহরে যেতে হবে তার। সারাদিন কাজ করলেই রাতে ছুটি পাবে সে। শাপলাগুলো একসাথে জড়ো করে বেঁধে নিলো বিন্দু তারপর দাঁড়িয়ে বাশটা হাতে নিয়ে চলল নিজের গন্তব্যে। এর আগেও অনেকবার সে সম্পানের সাথে পদ্মায় ঘুরতে গিয়েছিল। তবে পরীর সাথে হাতে গোনা কয়েকবার গিয়েছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে। পরী জমিদার বাড়ির সবাইকে ধোঁকা দিয়ে তো সবসময় আসতে পারে না তাই বিন্দু আর সম্পানই ঘুরতে যেতো। সম্পান মাঝি হলো পদ্মার রাজা আর বিন্দু হলো পদ্মারানী। এই উপাধি পরীই ওদের দিয়েছিলো। সম্পান বিন্দুর ভালোবাসার একমাত্র সাক্ষী হলো পরী। তবে বিন্দুর সাথে পরীর বন্ধুত্ব যেন আচমকাই হয়ে গেছে। পরী তখন ছোট ছিল। গ্রামের কারো সাথেই সে বন্ধুত্ব করতে চাইতো না। অনেক ধনী পরিবারের সন্তান থাকতেও গরীব হিন্দু সম্প্রদায়ের এই মেয়েটিকেই সে নিজের বন্ধু হিসেবে বেছে নেয়। দু’জন দু’জনের প্রাণের সখী। মুদি দোকান ছিল মহেশের তবে সেটা ইন্দু আর বিন্দুই চালাতো বেশি। মহেশ ঘুরতো পরের নৌকায়। জাল ফেলতো নদীতে। ওই দোকানে এসেই বিন্দুর সাথে প্রথম পরিচিত হয় পরী। গজদন্তনীর হাসিতে সেদিন যে পরী কি মাধুর্য দেখেছিল তা একমাত্র পরীই জানে।

বিন্দুর পরনের সুতি শাড়িটা সবসময় নোংরা ধুলোবালি মাখা থাকাতেও পরী ওকে জড়িয়ে নিতো নিজ বক্ষে। বিন্দুর শত বাধাও সে মানতো না। পরীর নিরহংকারতা দেখে বরাবরই মুগ্ধ বিন্দু। না আছে রূপের অহংকার আর না আছে টাকা পয়সার অহংকার। এজন্য বিন্দুর প্রিয় পাত্রী পরী।
শাপলা গুলো মায়ের কাছে রেখে বিন্দু ভেলা ভিড়ালো জমিদার বাড়ির ঘাটে। ভয়ে ভয়ে পা ফেলল জমিদার বাড়ির চৌকাঠে। দেলোয়ার আর লতিফ বাঁধা দিলো না বিন্দুকে কারণ তারা জানে বিন্দু পরীর সাথেই দেখা করতে এসেছে।
তবে বিন্দুর ভয়ের একমাত্র কারণ হলো আবেরজান। বিন্দু বিধর্মী হওয়ায় তাকে ঘরে আসতে দিতে চাননা আবেরজান। বিন্দুকে দেখলেই দূর দূর করে তাড়িয়ে দেন। সেজন্যই বিন্দু লুকিয়ে আসে এই বাড়িতে। এখন বন্যা থাকায় আসতেই পারে না।
জেসমিনকে বলে পরীর ঘরের দিকে পা বাড়ায় বিন্দু। যাওয়ার আগে আবেরজানের ঘরে উঁকি দিতে ভোলে না সে।
আচমকা বিন্দুর আগমনে হকচকিয়ে গেল পরী তবে নিজের সখীর প্রতি তার অভিমান ও কম জমেনি! এতদিন কোথায় ছিলো?তাই সে অভিমান মিশ্রিত কন্ঠে বলে,’তুই এইহানে আইছোস ক্যান?কেডা তুই?’

হাসলো বিন্দু,সাথে সাথেই ওর গজ দাঁতটা যেন উদয় হলো। পরী একধ্যানে শ্যামকন্যার হাসি দেখলো। যেন মুক্তো ঝরছে ওই হাসি থেকে। বিন্দুর হাসি দেখে পরীর বলতে ইচ্ছে করছে এইভাবে হাসিস না আমার খুব হিংসে হয়। এই মেয়ে রূপ নয় হাসি দিয়ে পুরুষের মন ভোলাতে পারবে যেমন করে সম্পানের মন ভুলিয়েছে। পরী বলল,’থাক আর হাসতে হইবো না কি কইবি ক তাড়াতাড়ি।’

বিন্দুর মুখে রাতে বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনে আনন্দে নেচে উঠল পরীর মন। অনেক দিন বেরোনো হয় না। মুহূর্তেই বিন্দুর প্রতি সব অভিমান যেন বন্যার পানিতে ভেসে গেল। কাঠের আলমারি টি খুলে একখানা মখমলের শাড়ি বিন্দুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,’আইজ তুই এই কাপড়টা পরিস।’
শাড়িটাতে হাত বুলিয়ে বিন্দু পরীর দিকে তাকিয়ে বলে,’তুই তো কাপড় পরস না পরীবানু। তাইলে এতো সুন্দর কাপড় পাইলি কই?’

পরী চটজলদি আয়নার সামনে থেকে দুটো ফিতা এনে বিন্দুর হাতে গুজে দিয়ে বলে, ‘সোনা আপার ঘরে পাইছি। এই কাপড় তো কেউ পরব না তাই তোরেই দিলাম। নিয়া যা আইজ পরিস। তোরে খুব সুন্দর দেখাইবে।’

খুশি হলো বিন্দু। শাড়িটা নেতিয়ে পড়া আঁচলটা দিয়ে পেঁচিয়ে নিয়ে বের হলো সে। উঠোনে আসতেই দেখল মালা বারান্দায় বসে কাশছে। বিন্দু সেদিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, ‘জেডি তোমার শরীরডা আইজও খারাপ। যেদিনই আহি হেদিনই দেহি অসুখ তোমার। পরীর বাপরে কইয়া একটা ডাক্তার দেহাও। কবিরাজ রে তো কতই দেখাইলা।’

বিন্দুর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মালা জিজ্ঞেস করে,’আইজ পরী কি দিলো তোরে? তাড়াতাড়ি বাড়ি যা পরীর দাদী দেখলে চিল্লাইবো।’
বিন্দু আর দেরি করলো না দৌড়ে চলে গেল। ঘাটে গিয়ে ভেলায় চড়তেই দেখলো শহুরে ডাক্তারদের নৌকা ভিড়ছে। ওদের দেখেই বিন্দুর মনে পড়ে গেল সম্পানের কথা। ইশ!!পরীকে আসল কথা বলতেই ভুলে গেছে। রাতে বলে দেবে ভেবে বিন্দু ভেলা ভাসালো জলে।
নিজ ঘরে এসে বিশ্রাম নিচ্ছে নাঈম,শেখর আর আসিফ। আজকে পালকের মুখে সবই শুনেছে ওরা। এমনকি অবাকও হয়েছে। হয়তো অনেক গুলো বছর পেরিয়ে গেছে সোনালীর চলে যাওয়ার। এরমধ্যে একটিবার ও মেয়েকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবেনি!আশ্চার্যিত হয়ে শেখর বলে,’এই জমিদার মশাই অদ্ভুত রে!!মেয়েটাকে ফিরিয়ে আনা তো দূরের কথা একবার খোঁজও নেয়নি। ব্যাপারটা অদ্ভুত তাই না!!’

পালঙ্কের উপর দু’পা তুলে বসে আছে আসিফ আর নাঈম শুয়ে আছে। শেখরের কথা শুনে নাঈম উঠে বসে বলল,’মেয়ের থেকে নিজের আত্মসম্মানটাই বড় করে দেখেছেন জমিদার। এজন্যই মেয়ের কোন খোঁজ নেননি। তাছাড়া আমার মতে দোষটা তো একা জমিদারের নয় ওনার মেয়েরও আছে। সেও চাইলে এখানে আসতে পারতো। জমিদার হয়ে কিভাবে তিনি তার মেয়েকে একটা নিচু পরিবারের ছেলের সাথে বিয়ে দিবে?’

দুজনের কথার মধ্যে আসিফ বলে উঠলো, ‘ওটাই প্রধান সমস্যা। কিন্তু ভালোবাসা তো বলে কয়ে আসে না। এরা হুটহাট করে এসে মনের মধ্যে গেঁথে যায়।’
কথাটা বলে একটু থামলো আসিফ তারপর নাঈমকে জিজ্ঞেস করে,’আচ্ছা নাঈম তুই যে পরীকে দেখতে চাইছিস মানে তোর দেখার ইচ্ছা এটা কি শুধুই ইচ্ছা না অন্যকিছু? ভালোবাসা নাকি আকর্ষণ?’
চটজলদি উওর দিতে পারল না নাঈম। সত্যি কথাই তো বলেছে আসিফ। সে কি শুধু ইচ্ছে পূরণ করতেই পরীকে দেখতে চায় নাকি এরমধ্যে অন্যকিছু আছে? কিছুক্ষণ ভেবেই নাঈম বলল,’জানি না। কেন ওই মেয়েটাকে দেখার এতো ইচ্ছা করছে!যদি এটাকে আকর্ষণ বলে তাহলে তাই আর যদি ভালোবাসা বলে তাহলে,,,’

_____________

দীর্ঘদিন পর মেঘের মুলুকে চাঁদ ভেসেছে আজ। পূর্ণচন্দ্র নয়,অর্ধচন্দ্র। কিন্তু এই অর্ধেক চাঁদ টাই পুরো পৃথিবীকে আলোকিত করে তুলেছে। নৌকাগুলো হাল্কা দূর থেকেই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। চাঁদের আলো পড়ছে পানিতে, চিকচিক করে উঠছে পানি। ঢেউয়ের সাথে সাথে যেন চাঁদও নেচে উঠছে। নৌকার কোণায় বসে পানিতে পা ডুবিয়ে দিয়েছে পরী। মাথার ঘোমটা ফেলে বড় করে শ্বাস নিলো সে। মুহূর্তেই যেন লুফে নিলো প্রকৃতির সব ঘ্রাণ। এই ঘ্রাণটা খুব পরিচিত পরীর। এটা তো নূরনগরের ঘ্রাণ। মুক্তি পাওয়ার মজাই যেন আলাদা বেশ কয়েকবার বের হয়ে সে বুঝতে পেরেছে। নৌকার অপরপ্রান্তে সম্পান বসে আছে বৈঠা হাতে। আর ওর কোল ঘেঁষে বসেছে বিন্দু। পরনে পরীর দেওয়া মখমলের কাপড়টা। বেণি করে তাতে ফিতাও গুজেছে। সম্পান আজকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে তার পদ্মারানীকে। আর বিন্দু বারবার লাজুক হাসছে। ছইয়ের কারণে ওপাসে বসে থাকা পরীকে ওরা দেখতে পারছে না। ওরা নিজেদের মতো সময় কাটাচ্ছে আর পরীকে একা ছেড়ে দিয়েছে।
একাধারে পানিতে পা ভিজিয়ে যাচ্ছে পরী। ইচ্ছা করছে শব্দ করে হাসতে কিন্তু ওর মা যে ওকে বারণ করে দিয়েছে জোরে হাসতে। সেজন্য হাসতেও পারছে না সে। তবে প্রকৃতি যেন আজ পরীর জন্যই সেজেছে। তাদের প্রধান কাজই যেন পরীকে খুশি করা।
পরী পা ডোবাতে ডোবাতে হাক ছাড়লো,’ও সম্পান মাঝি,ও পদ্মার রাজা তোমার রানীরে ঘরে তুলবা কবে?’
ওপাশ থেকে সম্পানও জোর গলায় বলল, ‘বন্যা যাক,তারপর শহরে যামু কামে। যদি কাম পাই তাইলে এই শীতের মধ্যেই ঘরে তুলমু বিন্দুরে।’
সম্পানের কথায় লাজুক হাসে বিন্দু। মুক্তঝরা সেই হাসিতে বরাবরের মতো এবারো মুগ্ধ নয়নে দেখে সম্পান। পরী আরো কিছু বলতে নিলে দূর থেকে নৌকা আসতে দেখে তাড়াতাড়ি ছইয়ের ভেতরে ঢুকে পড়ে। বিন্দুও
পরীর দেখাদেখি ছইয়ের ভেতরে পরীর পাশে গিয়ে বসে। নৌকা কাছে আসতেই শায়েরের গলার আওয়াজ ভেসে আসে,’আরে সম্পান তুমি!যাক ভালোই হয়েছে। আমাকে জমিদার বাড়িতে নিয়ে চলো।’

শায়েরের কথায় একটু ভয় পেল সম্পান। পরী তো ছইয়ের ভেতরে। বিন্দুকে নিয়ে কোন সমস্যা হবে না কিন্তু পরীকে যদি শায়ের চিনে ফেলে?শায়ের আদৌ পরীকে কখনো দেখেছে কি না তা সম্পান জানে না তবুও ভেতরে ভেতরে একটু সন্দেহ ঘুরপাক খাচ্ছে সম্পানের। শায়ের লাফিয়ে সম্পানের নৌকায় চড়ে বসে।

বৈঠকঘর আর অন্দরমহলের মাঝে উঁচু দেওয়াল বাঁধানো। আসিফের ঘাড়ে পা রেখে দেওয়াল টপকে অন্দরমহলে ঢুকলো নাঈম। শেখরও নাঈমকে অনুসরণ করেই ঢুকলো। কিন্তু আসিফের সাহসে কুলায় না। পরীর হাতে ধরা খেয়ে সে উওম মধ্যম খেতে চায় না। যদি ওরা ধরা পড়ে যায় তাহলে সাহায্য করার জন্য ওর শাস্তি কম হলেও হতে পারে। এই ভেবেই উপরওয়ালাকে একমনে ডেকে যাচ্ছে আসিফ। পরীর বুদ্ধিমত্তা দেখেই আসিফ বুঝে গেছে যে হয়তো আজকে কিছু একটা হবেই। ওরা হয়তো ধরা খাবেই।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।