দরজা খুলে শাওন রুমে ঢুকতেই আমার ভয় লাগতে শুরু হলো। লাগাটাই স্বাভাবিক। কারন কয়েকদিন আগেই আমি আমার বান্ধবীর ফুলসজ্জার গল্প শুনেছিলাম। ওর বিয়ে মাত্র ১০ দিন আগে হয়েছে। ওর বছস ১৫ বছর। আমার চেয়ে ও ১ বছরের ছোটো। ওর নাম তমা।
(গত রাতের ঘটনা) – ” ছাড়ুন আমাকে। লাগছে আমার।” শাওন ওর আঙুল দিয়ে আমার ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে দিল। আমি ওনাকে ধাক্কা দেবার চেষ্টা করে বললাম, “শাওন দা প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।” *শাওন দা* কথাটা শুনা মাত্র শাওনের খেয়াল হলো যে এটা সুইটি না।
শাওন দরজা ঠেলে রুমে ঢুকল। আমি তাকালাম। শাওনকে দেখে আমি সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। উনি এখানে কেন! আমার কি ওনার সাথে এক রুমে থাকতে হবে এই ৭ দিন? শাওন এসে টেবিল ল্যাম্প এর পাস থেকে ওর ফোন টা নিয়ে আবার বেরিয়ে গেলে।
দেখুন আমি কিন্তু চিৎকার করব, ছাড়ুন আমার হাত। “করো চিৎকার।” শাওন শান্তভাবে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল। আমি হাত ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করে বললাম, লাগছে আমার ছাড়ুন আমাকে। “কী মনে করো তুমি আমাকে?” শাওন বলল। তারপর এক ঝটকায় আমার হাত ছেড়ে দিল।
শাওন আমার কাছে ঝুকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলল, “সুবিধার না হলে কি হতে পারে সেটা আজ আমি তোমাকে দেখাব।” উনি কাছে আসতেই আমার শরীর কাপতে লাগল। আমি পিছাতে যাব এমন সময় উনি হাত ধরে আমাকে বিছানা থেকে টেনে নামালেন। কি করছেন আপনি?
পিছাতে পিছাতে দেয়ালে পিট ঠেকে গেল আমার। উনি আমার অনেক কাছাকাছি চলে এসেছেন। আমি পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলাম সাথে সাথে উনি বা হাত দেয়ালে রেখে আমাকে আটকে দিলেন। উনি গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
“….আপনি অনেক ভারী।” আমি চোখ ছোট ছোট করে অভিযোগের সুরে বললাম। শাওন আমার কাছ থেকে সরে উঠে দাড়িয়ে কপাল কুচকে আমার দিকে তাকালো। আমিও উঠে বসলাম। শাওন কিছু বলতে যাবে এমন সময় ওর ফোন বেজে উঠল। – হ্যা সুমনা। আমি আড় চোখে তাকালাম।
শাওন নিজের রুম থেকে কারো সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে এলো। আজ সে সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট এর সাথে কালো টাই আর কালো জুতা পরেছে। সাথে হাতে নেভি ব্লু কোট টা ভাজ করে রাখা।
আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম আর মনে মনে বললাম, “ও..ওনার পালা মানে? উনি কি সত্যিই আমাকে কামড় দিবেন? এখন কি করব আমি। মিলা জলদি কিছু ভাব।” তারপর ভয়ে ভয়ে বললাম, “দেখুন আমি… ” উনি আমার কথায় কোনো উওর দিলেন না।
“এত জলদি কিসের! শো ত মাত্র শুরু!” বলেই শাওন হেটে এগিয়ে আসতে লাগল। আমার সামনের ছেলেটাও রেগে শাওনের দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু পরে তার আর খবর পাওয়া গেল না। কারন এক ঘুষিতে ভয়ে সে কাচুমাচু হয়ে ফ্লোরে পরে আছে।
পুরো রুমে এই রাত ২ টার সময় আলো জ্বলছে। আমি শাওনের বিছানায় বিরক্তির সাথে বসে আছি। শুধুমাত্র বলেছিলাম, “আমি আপনার সাথে ঘুমাব!” উনি মনে করেছে আমরা একসাথে ঘুমাব। তাই বলে দিলেন, “impossible.” হুহ আমি যেন বসে আছি ওনার সাথে ঘুমানোর জন্য।
শাওন আমার পাশে এসে দাড়িয়ে আমার কপালে হাত দিল। সাথে সাথে আমি ছিটকে দূরে সরে গেলাম আর গায়ে চাদর টেনে নিয়ে বললাম,”টাচ করবেন না একদম আমাকে।” শাওনকে দেখে মনে হলো না যে ও আমার কথায় পাত্তা দিল।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে রেগে জোরেই বলে উঠলাম,”কাল রাতে আপনি আমার সাথে কি করেছেন?” উনি থমকে দাঁড়িয়ে ঘুরে আমার দিকে তাকালেন। আমি আরো বললাম, “আপনি সত্যিই অনেক খারাপ৷ আপনি অসভ্য আর অমানুষ।” একটু থেমে বললাম,”কি হলো এখন চুপ করে আছেন কেন?”
শাওন আরো কাছে আসতেই আমি চোখ বন্ধ করে শাওনের বাহু খামছে ধরে এক শ্বাসে বলে ফেললাম,”কারন আমি মনে করেছিলাম আপনি আমার শাড়ি খুলেছেন।” “What?” বলেই শাওন আমার ঘাড়ের নিচ থেকে হাত টা সরিয়ে নিল। আর আমি সাথে সাথে সোফার হেন্ডেলে বারি খেলাম।
আমি ড্রয়ারটা আস্তে করে বন্ধ করে উঠে দাঁড়াতেই শাওন আমার এক হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে বিছানায় নিয়ে এলো। আর আমার দুই হাত বিছানার সাথে চেপে ধরল। আমি চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে বললাম আ… আপনি… ঘু…ঘু…ঘুমান নি!” “এত রাতে আমার রুমে কি করছ?”
আমি ভয়ে একটা ঢোক গিয়ে বললাম,”আপনাকে আপনার মায়ের দিব্যি একদম ফেলবেন না।” শাওন ভ্রুকুচকে বলল,”what!” আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম, আমাকে নামান।
সুইটি অনেক রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমাকে কাচা চিবিয়ে খেয়ে নিবে। মেয়েটাকে সুন্দর মনে করেছিলাম। কিন্তু এখন মোটেও তা মনে হচ্ছে না। সুইটি দাতে দাত চিপে বলল, How dare you?!
শাওন আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে টান দিতেই আমি মাঝখানে বসে থাকা স্নোবেলের সাথে পায়ে বেধে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেললাম। কারন স্নোবেলের গায়ে যেন পা না লাগে সেই ভাবে পা ফেলতে গিয়েই শাওনের বুকে এসে পরলাম।
আমি মনে মনে বললাম, ওনাকে কি প্রশ্ন করব আমরা একা কেন! শাওন উঠে দাড়ালো আর বলল, নামো। বলেই শাওন গাড়ি থেকে নেমে গেল। আমি ভ্রুকুচকে আশেপাশের সীট গুলার দিকে আর একবার তাকিয়ে দেখলাম। সত্যিই কেউ নেই। তারপর বাস থেকে নামলাম। অহো! সবাই নেমে দাঁড়িয়ে আছে।
আজ অনেক দেরি করে শাওনের ঘুম ভাঙলো। হালকা চোখ খুলে সামনের বারান্দার দিকে তাকালো। সকালের ঝলমলে রোদ এসে রুমের মধ্যে ঢুকেছে আর হালকা বাতাসে দরজার কাছের লাল পর্দাটা উড়ছে।