– কিহহ, এই পিচ্চি মেয়েটিকে আমার ঘরের বউ বানিয়ে আনবো? না।” কথাটি বেশ ধমকে বলেন সর্ণালি। ধমক শুনেই ভড়কে উঠেন অর্সা নিজেকে সামলিয়ে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলেন,, মেয়েটির মা বাবার সাথে আমার অনেক পুরোনো সর্ম্পক ভাবী, মেয়েটি কেও ছোট থেকেই দেখে আসছি ৩৬ গুণ সম্পন্ন মেয়ে চুপচাপ, শান্তশিষ্ট, নম্র, ভদ্র মেয়ে তারপর বেশ সুন্দরী,
গাড়ি থেকে নামিয়ে কিছু মহিলা এসে সোজা রুমে নিয়ে গেল নিনি কে। মুখটা এখনো বড় ঘোমটা দিয়ে ঢাকা আশপাশ কিছুই দেখতে পারছে না সে। রুমের এক কোণায় বসিয়ে চলে গেল তারা। ভয় লাগতে শুরু করলো তার কেননা তার বাবা তাকে গাড়িতে উঠানো আগে বলেছিল,,
সিনান কল করতেই জানতে পারে এনোন অনেক সকালেই অফিসে চলে গিয়েছে। সর্ণালি কিছুটা স্বস্তিত্ব আনুভব করলেন বাকি মহিলারাও নিনির দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন। যেমন কি সে বের করে দিয়েছে তার বর কে। সিনান মোবাইল রেখে বলে,, নাস্তা করে নেন সবাই।” বলে সবাই কে বসতে ইঙ্গিত করে।
এনোনের মুখ শক্তপোক্ত হয়ে যায় পকেট থেকে হাত সরিয়ে নিনির কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,, সাহস তো তোমার অনেক বেশি দেখি, দাঁড়াও কি করি তোমার সাথে দেখ।” নিনি চমকে উঠে তাকে এগিয়ে আসতে দেখে বুঝতে পারলো সে অতিরিক্তই বলে ফেলেছে। নিনি পিছাতে পিছাতে ঘাবড়ে বলল,,
সর্ণালি রান্নাঘরে এসে নিনি কে বলে,, তোমার আজ রান্না করতে হবে না, তুমি গিয়ে পরিপাটি হয়ে থাকো।” বলেই চলে যায় সর্ণালি। নিনির এখন চিন্তার ভর ধরেছে না জানি কি হয় তার এই মহিলাটির সাথে। নিনি আর রান্নাঘরে দাঁড়ালো না সে রুমে চলে যায়।
একদন্ড সূর্যের কিরণে ঘুম ভেঙে আসে ঘুমন্ত পরীর। নিজেকে কম্বল মুড়ানো অবস্থায় দেখে ভ্রু কুটি করে নেয় সে। নিজের পায়ে ভারি কিছু অনুভব করতে পারে। মাথা উঁচিয়ে দেখতেই দেখে এনোন তার পা জোড়া জড়িয়ে ধরে সেখানেই মাথা রেখে নিচে পাশ হেলান দিয়ে বসে ঘুমোচ্ছে।
সর্ণালি কিছু একটা বলতে চেয়েও বলল না। হয়ত সবার মুড খারাপ হয়ে যাবে যাওয়ার আগে। এনোন গাড়িতে বসতেই দেখে সিনান ও নিনি পেছনের সিটে বসেছে এনোন বিরক্ত ভঙ্গিতে পেছনে ফিরে বলে,, তোমাদের ড্রাইবার না আমি, কেউ একজন আমার পাশে বসো।” বলে সামনে ফিরে সে।
বিন্দু পরিমাণ কিরণ আকাশ ভেদ করে পড়ে আবার পুণরায় ফেরত যাচ্ছে। বষর্ণের খেলা তখনও চলছে। হঠাৎ হঠাৎ মেঘ গর্জন করাতে বার বার কেঁপে উঠছে নিনি। এক রাশ অভিমান তার চোখে মুখে। ল্যাগেজ নিয়ে পার্কের এক কোণায় সিটে বসে আছে সে।
দুই দিন নিনির এমন উদ্ভট ব্যবহার এনোন কে চিন্তিত করে তুলছে। হঠাৎ তার কি হলো? এতোই পরিবর্তন তাও ওই রাতের পর থেকে? নাকি তার উপর কোন জ্বিন ভূত আছর করছে? ল্যাপটপ দেখে দেখে চিন্তা করছে এনোন। তার কাজে মনোযোগ নেই।
মুহূর্তের মধ্যে মেজাজ বিগড়ে যায় এনোনের সে বাঁকা হেঁসে চট করে সেই হাতটি ধরে বলল,, আমি কি সেটা তোমাকে ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিব আজ।” বলেই নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে নিনির মুখের কাছে। নিনি হচকচিয়ে ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়।
এনোন নিনির পাশে বসতে যাবে এমন সময় এক লোক পেছন থেকে তার কাঁধে হাত রেখে ডেকে বলল,, আপনি এনোন না?” এনোন ফিরে তাকালো বলল,, ইয়েস।” নিনিও বসা অবস্থায় ঘাড় ফিরিয়ে পিছনে তাকালো। লোকটি মুচকি হেসে বলল,, আমাকে চিনছেন?”
অর্সা যাওয়ার আগে নিনির দিকে রক্তু চোখে তাকালো নিনি চোখ সরিয়ে এনোনের দিকে তাকালো। এনোন আর তাকালো না নিনির দিকে মেঝেতে তাকিয়ে রইল। উজ্জল সাহেব নিনির দিকে গম্ভীর হয়ে বলেন,, কোন কিছু হলে আমাকে জানিও চুপ করে না থেকে।”
নিরবতা ছেয়ে গেল নিনি তাকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে আজ বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সে এনোন কে। হঠাৎ-ই এনোন কোমড়ের স্পর্শ গাঢ় করে তাকে নিজের মধ্যে মিশিয়ে নিল তারপর হাঁসফাঁস কন্ঠে বলল,, মাফ করে দিও আমাকে!” নিনি চমকে উঠলো। অস্থিরতা ঘিরে ধরলো এনোন কে।
বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকালো এনোন। কপাল কুঁচকালো সবাই। সর্ণালি বলেন,, কেন করেছিস এনোন?” এনোন মুখের ভঙ্গি বিরক্ত করে বলল,, ড্রাইভ করছিলাম তখন এক বাচ্চা মেয়ে আমার গাড়ির সামনে চলে আসছিল…গাড়ি ঘুরাতে গিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে এক্সিডেন্ট হয়েছে।” মুখ বাজেভাবে বানিয়ে ফেলল সুজন।
এনোন ভালোই পায়ে ব্যাথা পেয়েছে নিনি ধরে উঠালো তাকে উঠানোর সময় এনোন কানে আস্তে করে বলল,, রাতে দরজা ভালোভাবে বন্ধ করোনি কেন প্রিভেসি নষ্ট করে দিছে।” লজ্জায় লাল হয়ে গেল নিনি। সামনে তাকিয়ে দেখলো প্রণালি ও সৌরভ এসেছে। ভ্রু কুটি করল এনোন।
চোখের কোণার থেকে অশ্রুজল গড়িয়ে পড়তে লাগল কান্না ভেজা ভাঙা কন্ঠে বলল,, “আপনি যদি এখনি না আসেন তাহলে আমি এই অন্ধকারে সিঁড়ি থেকে নেমে নিজের ক্ষতি করে ফেলবো” আবারো সেই নিরবতা। নিনি অধৈর্য হয়ে রাগে শব্দ করে উঠলো।
পুরো ঘর জুড়ে নিনি কে খুঁজে না পেয়ে ছাদে উঠলো এনোন। নিনি দোলনা মধ্যে বসে ফুলের টপে নকশা করছে। রেগে গেল এনোন। কঠিন গলায় বলল,, “ছাদে আসছো কেন আমাকে না বলে?” তার আওয়াজে আঁতকে উঠে নকশার লাইন বেঁকে গেল। বিরক্ত হয়ে রেগে ফিরে তাকালো নিনি।
সোনালী রৌদ্দুর ছড়িয়ে আছে বিস্তৃত আকাশে। দূরন্ত গতিতে ছুটে চলছে পাল্লা মেঘের মেলা। আকাশ আজ স্বচ্ছ পরিস্কার। বাহির থেকে ভেসে আসা মিষ্টি ফুলের মিষ্টি সুবাসে মেতে উঠেছে পরিবেশ। নিনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চিরুনি করছিল ঠিক সেই মুহূর্তে কলিং বেলের আওয়াজ শ্রবণ করলো সে।
ভোর ছয়টায় ঘুম ভাঙল নিনির। চোখ ডলতে ডলতে পাশে ফিরে তাকালো সাথে সাথে কেঁপে উঠলো ভয়ে। এনোন নিজের মাথা তার পিঠে ঠেকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। ভ্রুদ্বয় কিঞ্চিৎ কুঁচকালো নিনি। উঠতে চেয়েও উঠতে পারছেনা। সেভাবে শুয়ে রইল নিনি। আস্তে আস্তে তার দিকে ফিরলো নিনি।