“আমি আপনাকে ভালোবাসি ফারান। বিশ্বাস করুন আপনার গায়ের রং নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি আপনাকে এই রূপেই ভালোবাসি।” আ’কু’ল কণ্ঠে বলে উঠলো হুর। -“পাগ’লামি বন্ধ করো হুর। আমি তোমাকে ভালোবাসি না। কেনো আমার পিছনে পড়ে থেকে সময় ন’ষ্ট করছো।” গ’ম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো ফারান। -“কেনো ভালোবাসেন না আমায়?
ডাইনিং টেবিলে বসে আছে হুর। মিসেস হেনা হুরকে খাবার সার্ভ করছেন। হুরের একটুও খাওয়ার ইচ্ছে নেই। কিন্তু এখন না খেলে মিসেস হেনা উ’ল্টা’পা’ল্টা চিন্তা শুরু করবেন। এমনিতেই তাকে অনেক ক’ষ্টে বুঝিয়েছে হুর যে সে ঠিক আছে এখন।হুর জো’ড় করে খাওয়া শুরু করলো। যতো না খাচ্ছে তারচেয়ে বেশি নাড়ছে।
ঘুমের মাঝে মুখের উপর অনবরত গরম নিঃশ্বাস আ’ছড়ে পড়ায় ভীষণ অ’সস্তি হচ্ছে হুরের। তার মনে হচ্ছে কেউ একধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু চেয়েও চোখ খুলতে পারছেনা হুর। ঘুমটা যে গভীর তার।
বাড়ির সামনে চলে এসেছে হুর। সে জানে বাড়িতে ঢো’কা মাত্র মিসেস হেনা তার উপর এ’টাক করবে। কিন্ত কিছু করার নেই। হুর চিন্তা করলো যদি সুযোগ পাওয়া যায় তবে এক দৌড়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিবে। চো’রের মতো পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকলো হুর।
দুই দিন যাবৎ ভার্সিটি যায় না হুর। এই দুই দিনে অ’জস্র বার ফারানের কথা মনে পড়েছে হুরের। কিন্তু প্রতিবারই নিজেকে সামলে নিয়েছে। হুর ঠিক করেছে আজকে দু ঘন্টা আগে যাবে ভার্সিটি তে। ফারানের সামনে না যাক দূর থেকে তো দেখতেই পারে প্রিয় মানুষটাকে।
ফারানের সাথে হুরের পরিচয় প্রায় ছয় মাসের। এই ছয় মাসে হুরের পাগ’লামির শেষ ছিলো না। সেইদিন এর ঘটনার পর হুর খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে ফারানের পুরো নাম ফারান আহমেদ। সে পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। তাদের ভার্সিটির নতুন দালান তৈরির কাজে সে প্রায় প্রায় ভার্সিটি তে আসে।
এক মাস পার হয়ে গিয়েছে। হুর নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়েছে। আগে যেমন সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখতো, এখনো ঠিক সেই ভাবেই সবাইকে মাতিয়ে রাখে। হৃদ আর লিয়ার সাথে দু’ষ্টুমি, মায়ের ব’কা, বাবার আদর সব নিয়ে স্বাভাবিক আছে সে। তবুও একা যখন থাকে তখন মনে পড়ে প্রিয় মানুষটার কথা।
হুর বাদে সবাই খেতে বসেছে।মিস্টার ফরিদ তা লক্ষ্য করে বললেন, -“হুর মামুনী কোথায়! ও খাবে না?” -“না আঙ্কেল আমি ঐ সময় খেয়েছি। আর খাবো না। পেট ভরা আমার। ” হুর পিছন থেকে এসে বললো। ফাইয়াজ হুরের কথা শুনে বিড়বিড় করে বললো, -“একবারেই যেই রা’ক্ষসীর মতো খেয়েছে আর খাবে কি করে!”
পুরো বাড়ি ঘুরে দেখছিলো হুর, লিয়া আর হৃদ। বড়োরা বসার রুমে কথা বলছে। মিস্টার ফরিদ তাদের কে বললো বাড়ি ঘুরে দেখতে। বড়ো দের কথার মাঝে তারা বসে বসে বোর হচ্ছিলো বুঝতে পেরে ফরিদ সাহেব তাদের বাড়ি ঘুরে দেখতে বলেছে। বাড়ির বাইরের অংশ যতটা না বড় ভেতরের অংশ তার দ্বিগুন বড় বলে
রুম থেকে এক দৌড়ে সিঁড়ির কাছে এসে থামলো হুর। -“বাব্বাহ কি বাঁচা বাঁচলাম! মনে হচ্ছিলো এতক্ষন বা’ঘের খাঁচায় ছিলাম। ধুরু ভাল্লাগেনা ছাই! আমার চাল আমার উপরে উল্টো পড়লো! ” -“কিরে আপাই তুই এখানে দাঁড়িয়ে একা একা কি বিড়বিড় করছিস! আর এই দিকে আমরা তোকে খুঁজতে খুঁজতে হয়’রান হয়ে গেলাম। ”
সকাল সকাল ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে হুর। আজকে অনেক ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে প্লাস আগের দিন সে আর লিয়া দুইজনই ক্লাস মিস দিয়েছে। সেই পড়া অন্যদের খাতা থেকে তুলে নিতে হবে। তাই সময়ের অনেক আগেই যাবে বলে ঠিক করেছে সে। হুর রেডি হয়ে সোজা ডাইনিং টেবিলে চলে আসলো।
হঠাৎ করে টান দেয়ায় ছি’টকে এসে কারোর বুঁকের সাথে বাড়ি খেলো হুর। চোঁখ বন্ধ করে তার বুঁকেই মাথা রাখলো সে। জোরে জোরে শ্বাস টানতে লাগলো।হুশ আসতেই বুঝতে পারলো সে কারো বক্ষপিঞ্জরে আবদ্ধ। মানুষ টা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। যেনো বুঁকের মধ্যে পুরে নিতে চায়।
মাঝরাত! নিস্তব্ধ পরিবেশ। হঠাৎ ঠোঁটে তীব্র ব্য’থা অনুভব হওয়ায় ঘুম ভেঙে গেলো হুরের। ঘুম হালকা হতেই স্পষ্ট বুঝতে পারলো কেউ তার ঠোঁট নিজের ঠোঁট দ্বারা আঁকড়ে ধরে আছে। আঁকড়ে ধরে আছে বললে ভুল হবে লোক টা অনবরত তার ঠোঁট কামড়ে চলেছে। তীব্র ব্য’থায় গুঙিয়ে উঠলো হুর।
ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরেছে হুর। আজকের দিন টা জ’ঘন্য বা’জে ছিলো তার জন্য। লিয়ার সাথেও তেমন কথা বলে নি। না কিছু খেয়েছে। খাওয়া বা কথা বলা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছিলো তার জন্য। এমনিতেই ঠোঁটের ক্ষ’ত তার উপর উল্টোপাল্টা ঘষা ঘষি করায় ঠোঁটের অবস্থা ভ’য়ানক আকার ধারণ করেছে।
হুর যেদিকে যেদিকে যাচ্ছে রুশো তার পেছন পেছন লেজের মতো ঘুরছে। রুশোর থামার কোনো লক্ষণ না দেখে হুর হাঁটা থামিয়ে দিলো। হুর থামতেই রুশো ও থেমে গেলো। হুর অবাক না হয়ে পারলো না। রুশোর দিকে ফিরে কোমরে হাত দিয়ে বললো, -“এই এই সমস্যা কি তোমার হুম!
আজ নিজের বাড়িতে চলে যাবে ফাইয়াজ। ফাইয়াজ এর বাবা মিস্টার ফরিদ আজ সকালেই হুরদের বাড়িতে হাজির হয়েছেন। তিন দিন আগেই নিজের সকল কাজ সম্পন্ন করে দেশে চলে এসেছেন তিনি। ছেলেকে ছাড়া মন টিকছিলো না ফরিদ সাহেবের। ফরিদ সাহেব হুট করে আসায় কিছুই গোছগাছ হয়ে ওঠে নি ফাইয়াজ এর।
অন্ধকার ক্লাসরুমে হুর কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আছে কেউ একজন। হুরের বুক জোরে জোরে ধুকপুক করছে। বদ্ধ রুম টায় এতটাই অন্ধকার ছেয়ে আছে যে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না হুর। অচেনা লোকটার অস্তিত্ব খুব কাছেই টের পাচ্ছে সে। লোকটার নিঃশ্বাস ঘাড়ে গলায় আ’ছড়ে পড়তেই কেঁপে উঠলো হুর।
স্তব্ধ নয়নে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে হুর। চোঁখের পলক টাও যেনো পড়ছে না। জীবন টা যেনো হুট করেই এলোমেলো হয়ে গেলো! এই তো কিছুক্ষন আগেও তার পরিচয় ছিলো সে মিস্টার হাসানের মেয়ে। আর এখন তার নামের সাথে জুড়ে গেছে নতুন একটা নাম। কিছুক্ষন আগেই হুর আর ফাইয়াজ এর বিয়ে সম্পন্ন হলো।
শাড়ি পরে বেডের এক কোণে গুটিশুটি মে’রে বসে আছে হুর। হুরের আম্মু মিসেস হেনা জোর করে হুর কে একটা লাল শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছেন। যেহেতু আজকেই বিয়ে হলো আর ফাইয়াজ ও এই বাড়িতে থাকবে আজ তাই তিনি মেয়েকে শাড়ি পড়িয়ে হালকা সাজিয়ে দিয়েছেন। নতুন বউ বলে কথা!
সকালে ঘুম ভা’ঙ’তেই হুরের নিজেকে অনেক ভা’রী মনে হলো। কিন্তু ঘুমের ঘোর সঠিক ভাবে না কা’টায় প্রথমে বুঝতে পারলো না সে। ঘুমের ঘোরে মনে হলো কোনো ভা’রী কিছু তার গায়ের উপর পড়ে আছে। ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাসের অস্তিত্ব টের পেতেই ঘোর উড়ে গেলো হুরের।