–বিহান ভাই অসভ্যতার একটা লিমিট আছে আপনি দেখছেন আমি গোসল করছি তবুও কথা নেই বার্তা নেই নক না করে চলে এলেন কেনো? তাছাড়া এটা আমার ওয়াশরুম, বলেই দ্রুত টাওয়াল পেচালাম শরীরে।ভেজা কাপড়ে খুব ই আনইজি লাগছে আমার।ওয়াশ রুমের ভেতরে চেঞ্জ করার জন্য এনে রাখা শাড়িটা দিয়ে আগে শরীর ঢেকে নিলাম।
সূর্যমামা মাত্রই ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়ে পৃথিবীর উল্টো পিঠে অবস্থান করে চাঁদ মামাকে পৃথিবীতে জায়গা করে দিয়েছে।সূর্যের ডুবে যাওয়া আর চাঁদের উদয় হওয়া এই দৃশ্য বড়ই সুন্দর দেখতে।শহরে সন্ধ্যা নেমেছে এইতো কিছুক্ষণ হবে।পাখিরা ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে উড়ে যে যার নীড়ে ফিরছে,গাছের পাতায়, সবুজ ঘাসে ক্রমশ জমছে শিশির বিন্দু।
–উনি একটা বড় নিঃশ্বাস টেনে বললেন,আমি বললে কি আর দিয়া আসবে?আমার উপর ক্ষেপে গিয়ে দেখলে না আম্মুর দেওয়া নতুন পাঞ্জাবী টার কি হাল করেছে।আমি গেলে আরো কয়েক’শ গুন রেগে যাবে।এই মুহুর্তে সে ক্ষেপিদের রাণী হয়ে বসে আছে।আমি গেলে এই বিয়ে বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ হবে নিশ্চিত।
“এটা কি ছিলো পিচ্চি?হোয়াট ইজ দিস পিচ্চি।এই বয়সে প্রেম করছিস।তোর বয়স কত দিয়া?এখনো হামাগুড়ির বয়স ই তো শেষ হয় নি তোর।আর এই বয়সে তুই কিনা প্রেম করছিস।ফুপ্পি কে বলতেই হচ্ছে ব্যাপার টা।হাউ স্ট্রেইঞ্জ।”
–দেখো বিহান তোমার সাথে দিয়ার বিয়ে আরো অনেক আগেই ঠিক ছিলো।আমাদের দুই পরিবারের ইচ্ছা তোমাদের বিয়ে দেওয়ার।তুমি যদি এখন এই বিয়ে না করো তাহলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।আর তুমি ফুফু যদি এটা শোনেন যে তুমি তার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি নও তাহলে তার কেমন লাগবে ভেবেছো।
‘উনি আবার ও বলেছিলেন কি দেখছিস এইভাবে তাকিয়ে।কি হয়েছে তোর।তোর চোখে মুখে এমন অদ্ভুত পরিবর্তন কেনো?’ ‘উনার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বলেছিলাম জানিনা তো বিহান ভাই।কেনো এমন হয় আমার।?তাই আপনার কাছে শুনতে এসেছি।কেনো আপনি সংস্পর্শে আসলেই আমার এমন হয়।’
‘এখানে কেউ দাঁড়িয়ে নেই আমি আছি দিয়া।আমার সাথে অন্যদের গুলিয়ে ফেলার মতো ভুল যেনো সেকেন্ড টাইম আর না দেখি ড্যামেড।আমার কাছে এক সেকেন্ড সময়ের ও অনেক মূল্য।সময় কে আমি অবহেলা করি না।সময়ের সঠিক মূল্যায়ন না করলে পস্তাতে হয়।এইজন্য আমি যেটা সময় উপযোগী মনে করি যে কোনো উপায়ে সেটা সময় থাকতেই করি আন্ডারস্ট্যান্ড।’
তিয়াস ভাই বললো,নতুন দম্পত্তিদের ঘাসফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে আমরা চলে এলাম।বলেই এক গুচ্ছ ঘাস ফুল এগিয়ে দিলাম।কিন্তু এটা কি ঠিক হলো বিহান ভাই আপনারা লুকিয়ে চুরিয়ে সময় কাটাচ্ছেন আমাদের বাদ রেখে।আমরা কি আপনাদের ডিস্টার্ব করতাম।
উনি আমার দিকে ঝুঁকে তো আছেন ক্রমশ উনি আরো খানিক টা এগিয়ে এলেন খুব সাবধনতার সাথে।আমার সাথে স্পর্শ না লাগলেও উনি আমার মুখের এতটা কাছাকাছি চলে এলেন আমার বুকের মাঝে হৃদপিন্ডতা দুরুম দুরুম করছে।ওয়ালে ঠেকানো হাত টা দিয়ে আমার বাম গালে আলতো স্পর্শ করতেই আমার চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।
‘কৌতুহল নিয়ে জানতে ইচ্ছা হলো সত্যি কি আমাকে বললেন।উনার মুখ থেকেই শুনতেই চাই আমি যে উনি বলুক দিয়া আই লাভ ইউ।তাই আবার ও বললাম আমাকে কেনো বললেন,আমাকে বলবেন ই বা কেনো?আপনার শ্বশুরের মেয়েকে বলুন।’ ‘শ্বশুরের মেয়েকেই তো বললাম।তোকে আবার কখন কি বললাম।’
“মেনে না নেওয়ার কি আছে?বিহান কি আমাদের ছেলেদের মতো বাবা মায়ের মুখের উপর কথা বলবে।কখনো দেখেছো রাস্তায় মেয়ে নিয়ে ঘুরতে।আমাদের ছেলে পেলে আয়ে পাশ করতে পারে নি একেক টা ঘরে এনে উঠেছে।”
বিয়ের আগে মেহু আপু, তোহা আপু, রিয়া আমাকে বাসর ঘর নিয়ে অনেক কিছু এডভান্স বলে দিয়েছে।আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম উনি বাসর ঘরে ঢুকে আমার সাথে ঘনিষ্ট হতে চাইছেন সেকথা বুঝবো কিভাবে। মেহু আপু বলেছে,শোন দিয়া রোমাঞ্চ এর আগে ছেলেরা প্রথমে ঘরে প্রবেশ করেই সিটকিনী লাগিয়ে গায়ের কাপড় খুলতে শুরু করে।তার পর ধীরে ধীরে তোর দিকে আগাবে।
“তোকে ভালবাসি, এক পৃথিবী সমান ভালবাসি। এই পৃথিবীতে বড় একটা নোটিস লাগাবো।যেখানে লিখে রাখবো এই পিচ্চি টা আমার মানে আমার।এই পিচ্চিকেই লাগবে আমার।এই আনম্যাচিউর, কম বোঝা পিচ্চিকেই চাই আমার।পিচ্চির শহরে অন্য কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই নিষিদ্ধ শহরে থাকবে শুধু আমার বসবাস।”
“আমি হাতের মুষ্টি খুলে উনার সামনে ধরলাম।হাতের মাঝে শিউলি ফুল গুলো সুবাস ছড়াচ্ছে।ফুল গুলো আস্তে করে ফেলে দিতেই উনি আমার হাতের নিচে নিজের হাত ধরে ফুল গুলো নিজের হাতে নিয়ে বললেন এবার বস।ভালভাবে জড়িয়ে ধরে বস।ছোট মানুষ কোথায় পড়ে গিয়ে দাঁত ভাঙবি।” “পড়ে গেলেও আপনাকে ধরবো না।”
কি অদ্ভুত আর অধ্যাতিক কথা উনার।উনি ইচ্ছা করেই বাইক এলোমেলো চালানো শুরু করলেন।উনার এই ইচ্ছাকৃত বাইক এলোমেলো চালানোর বিরুদ্ধে ও কিছু বলতে পারছি না।দ্রুত উনার কোমর জড়িয়ে ধরলাম আমি,উনাকে ধরা ছাড়া আর কোনো উপায় ও নেই।উনার পেটের কাছের হুডির কাপড় জোরে খামচে ধরলাম।বাধ্য হয়েই উনাকে আষ্টে পিষ্টে কোমর সহ জড়িয়ে ধরে বসতে হলো আমাকে।অবশেষে বাইক তার গন্তব্য পৌছালো।
–বিলিভ মি! আপু।আমি একদম ই সত্য বলছি।ওই যে বিহান দাঁড়িয়ে ওর কাছেই শুনে দেখো।এই বিহান নিচে নেমে আয়, আমার বিরুদ্ধে বললে বিহানের আজ খবর আছে। এতক্ষণ উপরে দাঁড়িয়ে তাদের এই প্রচুর হাসির ঝগড়া শুনছিলাম আমি আর বিহান ভাই।কিছুক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠে খেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়েছি। আর এরই মাঝে নিচে ওদের ঝগড়া শুরু।আমরা দুজনেই নিচে নেমে গেলাম।
কাউকে কিছুই না বলে আম্মুদের বাসায় চলে এলাম আমি।সারারাস্তা ভেবেছি সামান্য ফোনের কথা শোনার জন্য এতটা রিয়্যাক্ট কেনো করলেন উনি।আমি আর একদিন ও যাবো না ও বাড়িতে।উনি উনার প্রেমিকাকে এতটায় ভালবাসেন তার সম্পর্কে কথা শুনে ফেলেছি বলে এত বাজে ব্যাবহার করলেন।
আমি জানি দিয়া তোর বিয়েটা হয়তো এভাবে দেওয়া ঠিক হয়নি। কিন্তু দিয়া একটা কথা মাথায় রাখিস মা বিয়ের পর স্বামি ই কিন্তু সব।হুট হাট করে এইভাবে চলে আসলে মানুষ কত বাজে কথা বলে দেখেছো তো।বিহানের জীবনের সুখ শান্তি তোমার উপর নির্ভর করছে।
–ভাল কথায় না গেলে অন্য ভাবে নিতে হবে কথাটা বলেই উনি জোর করে আমাকে পাজা কোলে তুলে বিছানায় এনে ফেললেন। মানুষের হাত এত শক্ত হয় কিভাবে জানিনা?চেষ্টা করেও উনার হাতের বাঁধন থেকে মুক্তি পেলাম নাহ।আমি অগ্নিচোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।আমার অনিচ্ছায় উনি আমাকে বিছানায় এনে ফেললেন।
‘হুম ওর জন্মদিন আর তুই বারবার ডিস্টার্ব করছিলি কেনো?আমি অন লাইনে ওর জন্যই কিছু জিনিস অর্ডার করছিলাম।এই দিকে তোর ফোনে ঠিক ভাবে জিনিস পত্র চয়েজ করতে পারছিলাম না।’ ‘জন্মদিন তো আরো অনেকের ই আছে বিহান ভাই সেটা কি ভুলে গিয়েছেন।’