লাজুকপাতা
সমাপ্তগ্রামের শান্ত জীবন ছেড়ে ঢাকার এক অচেনা পরিবারে পা রাখে জরী। নতুন সংসারে স্বামীর শীতল আচরণের পাশাপাশি তাকে লড়তে হয় শাশুড়ির মানসিক অত্যাচার আর ননদদের জটিলতার সাথে। নিজের পড়াশোনা আর আত্মসম্মান বাঁচানোর এই কঠিন যাত্রায়, তার একমাত্র সঙ্গী স্বামীর রহস্যময় আচরণ। জরী কি পারবে এই প্রতিকূলতার মাঝে নিজের পরিচয় খুঁজে নিতে, নাকি একান্নবর্তী পরিবারের চাপে হারিয়ে যাবে লাজুকপাতা হয়েই?
সিজন ১
(২৪ পর্ব)গ্রামের শান্ত জীবন ছেড়ে ঢাকার এক অচেনা পরিবারে পা রাখে জরী। নতুন সংসারে স্বামীর শীতল আচরণের পাশাপাশি তাকে লড়তে হয় শাশুড়ির মানসিক অত্যাচার আর ননদদের জটিলতার সাথে। নিজের পড়াশোনা আর আত্মসম্মান বাঁচানোর এই কঠিন যাত্রায়, তার একমাত্র সঙ্গী স্বামীর রহস্যময় আচরণ। জরী কি পারবে এই প্রতিকূলতার মাঝে নিজের পরিচয় খুঁজে নিতে, নাকি একান্নবর্তী পরিবারের চাপে হারিয়ে যাবে লাজুকপাতা হয়েই?
বিয়ের আসরে পাত্রপক্ষের দেরিতে আসা নিয়ে যখন সবার কপালে চিন্তার ভাঁজ, তখন জরী মেহেদীর রঙ দেখায় মগ্ন। কিন্তু বাসর ঘরে স্বামীর প্রথম কথাই তার সব স্বপ্নকে এক মুহূর্তে শীতল করে দেয়। এই মানুষটির সাথে কি আদৌ সংসার করা সম্ভব?
পলাশবাড়ী ছেড়ে ঢাকার পথে পা বাড়ালো জরী। গাড়িতে স্বামীর সামান্য একটু যত্ন তার মনে আশা জাগালেও শ্বশুরবাড়ির প্রথম দিনের ঘটনাই বুঝিয়ে দেয়, এই পথটা মোটেও সহজ হবে না। কী এমন অঘটন ঘটেছে যা পুরো পরিবারকে নাড়িয়ে দিয়েছে?
নতুন বাড়ির প্রতিটি কোণায় যেন লুকিয়ে আছে একেকটা অসমাপ্ত গল্প। শাশুড়ির তীক্ষ্ণ নজর আর ননদদের অবহেলার মাঝে জরী খুঁজে ফেরে একটুখানি স্বস্তি। স্বামী নাবিদের খোলসের আড়ালে থাকা মানুষটাকে সে চিনতে পারে না। হঠাৎ নাবিদের এক প্রশ্নেই কি জরীর জীবনের মোড় ঘুরে যাবে?
প্রথমবার রান্নাঘরে পা দিয়েই জরী সবার মন জয় করে নেয়, কিন্তু শাশুড়ির কপাল কুঁচকে যায়। প্রশংসার আড়ালে বাড়তে থাকা এই অসন্তোষ কি নতুন কোনো ঝড়ের ইঙ্গিত? এর মাঝেই মুক্তার মুখে নাবিদের এক গোপন ইচ্ছার কথা শুনে জরী অবাক হয়ে যায়।
সংসারের দায়িত্বের সাথে সাথে জরীর জীবনে আসে এক নতুন অধ্যায়। যে স্বামীর সাথে কম্বলটাও ভাগ করা যেত না, এক শীতের সকালে তার উষ্ণ স্পর্শে জরীর সব অভিমান গলে যায়। এই কাছে আসা কি শুধুই শারীরিক, নাকি মনের দূরত্বও ঘুচবে?
অনেক বাধা পেরিয়ে কলেজের গেটে পা রাখে জরী। কিন্তু তার এই সাফল্যে শাশুড়ির মুখটা কেন অন্ধকার হয়ে গেল? পাশের বাড়ির ভাবীর কথায় জরী জানতে পারে এই সংসারের এক তিক্ত অতীত, যা তার বর্তমানকে প্রতিনিয়ত প্রভাবিত করছে।
নতুন কলেজ, নতুন পরিবেশ, আর স্বামীর শক্ত করে ধরে থাকা হাত—জরীর জীবনটা নতুন রঙে সাজছে। কিন্তু হাতে নতুন স্মার্টফোন আসতেই ননদদের চোখে ফুটে ওঠে ঈর্ষা। নাবিদ কি পারবে সংসারের এই জটিলতার মাঝে জরীর স্বাধীনতার পথটা মসৃণ রাখতে?
মধ্যরাতে জামিল ভাইয়ের চিৎকারে ভেঙে যায় বাড়ির নিস্তব্ধতা। এই হট্টগোলের মাঝে টাপুর-টুপুরের নিষ্পাপ চোখের ভয় জরীর মনকে নাড়িয়ে দেয়। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রথম পদক্ষেপ নিতেই শাশুড়ির কাছ থেকে আসে নতুন বাধা। জরী কি পারবে সব সামলে নিতে?
নিজের প্রথম উপার্জনের আনন্দটা পুরোপুরি উপভোগ করার আগেই জরীকে হতে হয় শাশুড়ি আর ননদের লোভের শিকার। মন খারাপের মাঝেই সে জানতে পারে ননদ মনির এক গোপন সম্পর্কের কথা, যা পরিবারে নতুন এক ঝড়ের সূচনা করে।
মনির পালিয়ে যাওয়াটা পরিবারে যে কলঙ্কের দাগ রেখে যায়, তা মোছার আগেই পুলিশ তাকে ফিরিয়ে আনে। কিন্তু তার নির্লজ্জ আচরণ আর অদ্ভুত দাবিগুলো সবাইকে হতবাক করে দেয়। এর মধ্যেই এক অচেনা মহিলার ফোন পুরো ঘটনাকে এক নতুন দিকে মোড় দেয়।
ঘরে আটকে রাখলেও মনির জেদ কমে না একটুও। পরিবারের এই চরম অশান্তির মধ্যেই পাশা মিয়ার প্রথম স্ত্রী লাভলী এসে হাজির হয় এক অদ্ভুত আবদার নিয়ে। তার নাটকীয় কান্নাকাটি আর विचित्र দাবি কি পরিবারের সংকট আরও বাড়িয়ে তুলবে?
সব চেষ্টার পর পরিবার যখন মনির জেদের কাছে হার মানে, তখন একরাশ ক্লান্তি নিয়ে জরী আশ্রয় খোঁজে পরী আপার কাছে। সংসারের কোলাহল থেকে দূরে এই কয়েকটা দিন কি পারবে তার মনের ক্ষত সারাতে? নিজের উপার্জনে কেনা উপহার বোনের হাতে তুলে দেওয়ার মুহূর্তটা হয়ে ওঠে অমূল্য।
বোনের বাড়ি থেকে ফিরে এসেই শাশুড়ির তীর্যক কথার মুখোমুখি হয় জরী। প্রথমবারের মতো সরাসরি অপমানে তার মন ভেঙে যায়। এই ঘটনাই কি তাকে আরও শক্ত করে তুলবে? গোপনে নিজের আয়ের নতুন পথ তৈরি করে সে, যা তাকে আর্থিক স্বাধীনতার পাশাপাশি প্রতিবাদের ভাষাও যোগায়।
অনেকদিন পর পলাশবাড়ীতে ফিরে আসে জরী, যেন নিজের শিকড়ের কাছে ফেরা। পরিবারের সবার আদরে অভিমানগুলো মুছে যায়। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে নাবিদও এসে হাজির হয়। স্বামীর চোখের আকুতি কি বুঝিয়ে দেয় জরীর অনুপস্থিতি তাকে কতটা একা করে দিয়েছিল?
নাবিদের অপ্রত্যাশিত আগমনে পলাশবাড়ীতে জরীর আনন্দের দিনগুলো আরও রঙিন হয়ে ওঠে। বিদায়বেলায় মায়ের হাতে নিজের উপার্জনের টাকা তুলে দিয়ে সে যেন বহুদিনের এক পুরোনো ঋণ শোধ করে। এই আবেগঘন মুহূর্তটি তাদের মা-মেয়ের সম্পর্ককে এক নতুন মাত্রা দেয়।
নিজের টাকায় সংসারে স্বচ্ছলতা আনার চেষ্টা করেও জরীকে শাশুড়ির কটূক্তি শুনতে হয়। এর মধ্যেই মনির আগমন বাড়িতে নতুন অশান্তির জন্ম দেয়। চুরির দায়ে বিতাড়িত হয়ে যাওয়ার আগে সম্পত্তির ভাগ চেয়ে সে যে হুমকি দিয়ে যায়, তা কি নতুন কোনো সংঘাতের সূচনা?
মনির সম্পত্তির দাবি আইনি চালে ভেস্তে গেলেও পরিবারে শান্তি ফেরে না। মুক্তার বিয়ের আয়োজনকে কেন্দ্র করে শাশুড়ি এমন এক দাবি করে বসেন যা জরীর আত্মসম্মানে চূড়ান্ত আঘাত হানে। সব সহ্যের সীমা পেরিয়ে যখন সে বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন নাবিদ এক অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ নেয়।
কক্সবাজার থেকে ফিরে জরী দেখে পরিস্থিতি আরও জটিল। তার পরিবারের আগমনে শাশুড়ির দম্ভ চূর্ণ হলেও সংসারে এক শীতল পরিবেশ তৈরি হয়। একদিকে কলেজে এক ছেলের অনাকাঙ্ক্ষিত মনোযোগ, অন্যদিকে মুক্তার সংসারে স্বামীর নির্যাতনের খবর—জরীর জীবনে স্বস্তি কোথায়?
ভাবীর ডিভোর্সের খবরে যখন বাড়ির পরিবেশ বিষণ্ণ, তখন কলেজে নিজের সম্মান রক্ষায় জরী এক সাহসী পদক্ষেপ নেয়। সবার সামনে নিজের বিবাহিত পরিচয় ঘোষণা করে সে। এদিকে, নাবিদের অনুপস্থিতিতে জরী প্রথমবার তীব্রভাবে উপলব্ধি করে, এই মানুষটা তার জীবনে কতটা জুড়ে আছে।
শীতের ছুটিতে পলাশবাড়ীর পিঠা-পুলির উৎসবে যোগ দেয় জরী। কিন্তু এই আনন্দের মাঝেও শাশুড়ির বাধা আর নিরু আপার ঈর্ষাকাতর কথাবার্তা তার মনে শীতলতার পরশ বুলিয়ে দেয়। কাছের মানুষেরাও কি সময়ের সাথে সাথে অচেনা হয়ে যায়?
জামিল ভাইয়ের হঠাৎ বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে আসায় বাড়ির চেনা সমীকরণগুলো পাল্টে যায়। শাশুড়ির নতুন বউকে নিয়ে আদিখ্যেতা দেখে জরী বুঝতে পারে, তাকে কোণঠাসা করার নতুন খেলা শুরু হয়েছে। এই নতুন অতিথি কি জরীর জীবনে স্বস্তি আনবে, নাকি সংকট বাড়াবে?
নতুন ভাবীর সাথে অপ্রত্যাশিত এক বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে জরীর। এর মধ্যেই টুম্পা ভাবীর কাছ থেকে আসা এক চিঠি তার হাতে আসে। সেই চিঠিতে লেখা ছিল এমন এক নির্মম সত্য যা এই সংসারের ভদ্রতার মুখোশ খুলে দেয় আর জরীর সব ধারণাকে ভেঙে চুরমার করে দেয়।
মুক্তার আগমনে সংসারে নতুন করে অশান্তি শুরু হয়। এর মধ্যেই নাবিদের বইয়ের ভাঁজে পাওয়া একটা পুরোনো ছবি জরীকে স্তব্ধ করে দেয়। ছবির পেছনের লেখাটা প্রমাণ করে, নাবিদ তার অতীত সম্পর্কে মিথ্যে বলেছে। এই বিশ্বাসঘাতকতা কি তাদের সম্পর্কের দেয়ালে ফাটল ধরিয়ে দেবে?
অভিমানের মেঘ সরিয়ে নাবিদের কাছে ফেরে জরী, তবে তাদের সম্পর্কের সমীকরণটা এবার নতুন। সব জটিলতা পেছনে ফেলে টাপুর-টুপুরকে সাথে নিয়ে তারা শুরু করে এক নতুন সংসার, নিজেদের সাজানো এক নতুন আকাশে। 'লাজুকপাতা'র রহস্যটা আড়ালেই থেকে যায়, কিছু অসমাপ্তিই शायद সম্পর্ককে সুন্দর রাখে।