লাজুকপাতা
Story
24 Parts
187 reads

Chapters

পর্ব – ১
Mar 21, 2025 • 10 reads

উঠোনের দক্ষিন কোনে বড় হাড়িতে রান্না চাপানো হয়েছে। এলাকার বিখ্যাত বাবুর্চি মজনু মিয়া রান্নার তদারকি করছেন। ডেকোরেটরের লোকজন বাড়ি সাজাতে ব্যস্ত। ছোট বাচ্চাগুলো রঙিন কাগজের ফুল গুলো আঠা দিয়ে লাগানো হচ্ছে। বৈঠকখানা পেরিয়ে মূল দরজার উপরে কাগজ কেটে লেখা হয়েছে, ‘জরীর বিয়ে।’ আমার নাম জেরিন জাহান জরী। বয়স বিশ।

পর্ব – ২
Mar 21, 2025 • 8 reads

রাতে আমার ঘুম হলো না। সারাদিনে আমার অতোটা ভয় লাগে নি যেটা এখন লাগছে। কেমন যেন এক অন্যরকম অনুভূতি। ঠিক বোঝানো যায় না। সকাল শুরু হলো টুংটাং আওয়াজে। এই বাড়িতে আজও ভোর থাকতে থাকতে চুলায় রান্না চাপানো হয়েছে। আমাকে বিয়ে করা রাজপুত্তুর এখনো ঘুমিয়ে আছে। আমি বিছানা ছাড়লাম।

পর্ব – ৩
Mar 21, 2025 • 6 reads

নাবিদ দের বাড়িটা পুরোনো আমলের। তিনতলা বাড়ি। একতলা আর তিন তলাটা ভাড়া দেয়া। দোতলায় নাবিদ রা থাকে। আমার শ্বশুর আরামপ্রিয় লোক। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বাড়ি আর একখানা দোকান ছাড়া নিজে কিছুই করে উঠতে পারেন নি। সেই আরামপ্রিয় স্বভাব পেয়েছেন আমার ভাসুর জামিল বাড়িতে আসার দুদিনের মধ্যেই টের পেলাম আমার শাশুড়ী রাগী মানুষ।

পর্ব – ৪
Mar 21, 2025 • 8 reads

মাস পেরোনোর আগেই আমার রান্নাঘরে ঢোকার সৌভাগ্য হলো। আমাকে অবশ্য পরী আপা বুদ্ধি দিলো। রাগে গজগজ করতে করতে বলল, “জরী শোন, শ্বশুরবাড়ি মামাবাড়ি না। খেয়েদেয়ে পড়ে পড়ে ঘুমানো ভালো কথা না। শাশুড়ী এখন কিছু বলছেন না মানে সবসময় ই চুপ করে থাকবে এমন না। তুই আগ বাড়িয়ে কাজ কর।”

পর্ব – ৫
Mar 21, 2025 • 8 reads

রান্নাঘরের দায়িত্বের সঙ্গে সঙ্গে বাজারের লিস্ট বানানোর দায়িত্বটাও আমি পেয়ে গেলাম। বাজার করেন শ্বশুর বাবা। উনি আমার সাথে কথা কম বলেন তবে আমার প্রতি তার স্নেহ, আন্তরিকতা টুকু আমি টের পাই। উনি আমাকে জরী কিংবা বউমা বলে ডাকেন না। মিষ্টি করে মা ডাকেন। এই বাড়িতে সকালের নাস্তায় এখন আর প্রতিদিন ভাত হয় না। […]

পর্ব – ৬
Mar 21, 2025 • 8 reads

আমি ভর্তি হবার সুযোগ পেলাম তিতুমীর কলেজে। সাবজেক্ট প্রানীবিদ্যা। ইউনিভার্সিটির ভর্তি যুদ্ধে ছিটকে গেলাম প্রথম দফাতেই। শেষ ভরসা ছিলো জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটি। নাবিদ সেখানে পড়াতে চাইলো না। বলল, “বাসা থেকে এতো দূরে গিয়ে ক্লাস করতে পারবে না তুমি জরী। আর ওখানে একা থাকার তো প্রশ্নই আসে না। তুমি বরং কাছের কলেজেই পড়৷”

পর্ব – ৭
Mar 21, 2025 • 7 reads

পলাশবাড়ীতে আমার স্কুল কলেজ কেটেছে মেয়েদের সঙ্গে। গার্লস স্কুল, গার্লস কলেজ। শিকদার বাড়ির মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে পড়াশোনা করবে! ছি: ছি: মেয়েদের বিয়ের বাজারে যদি দর কমে যায়! ক্লাস এইট থেকেই আমার বোরখা পরা লাগতো। সেদিক দিয়ে নাবিদ আমাকে বেশ ছাড় দিয়েছে। কলেজের জন্য জিনিসপত্র কিনতে যেদিন নিউমার্কেট গেলাম সেদিন নাবিদ আমাকে বলল,“

পর্ব – ৮
Mar 21, 2025 • 7 reads

মাঝরাতে ঘুম ভাঙে চেঁচামেচির শব্দে। জামিল ভাইয়ের গলা। আমি ধড়ফড় করে উঠে বসি। নাবিদও চোখ কচলে উঠে বসে। বাইরের ঘরে জিনিসপত্র ফেলে দেবার শব্দ। নাবিদ আমাকে বলে, “তুমি ঘরে থাকো জরী। বাইরে আইসো না। ” আমি তবুও যাই। জামিল ভাইয়ের চোখ দুটো লাল। বিশ্রী রকমের কড়া সিগারেটের গন্ধ।

পর্ব – ৯
Mar 21, 2025 • 9 reads

নাজমা ভাবী এক মাস পর আমাকে একটা খাম দিলেন। দেয়ার সময় খানিকটা অপ্রস্তুত হলেন। বললেন, “কম হলে জানাবে জরী। আরেকটু বেশী দেয়া উচিত ছিলো আসলে… আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম, “ধ্যাৎ! কী বলছেন ভাবী! ” “অনেক ধন্যবাদ জরী। তুমি আমার অনেক উপকার করেছ।

পর্ব – ১০
Mar 21, 2025 • 7 reads

মনি যাবার পর খেয়াল করলাম যে আমার গোছানো আলমারিটা একটু এলোমেলো। বুঝলাম যে এই আলমারিতেও হাত দিয়েছে। কিন্তু ভাগ্য ভালো যে কিছু নিতে পারে নি। আলমারিতে আমার পরার নরমাল কাপড়গুলো ছাড়া আর কিছুই নেই। ভালো শাড়ি, জামা, গয়না সবকিছু ট্রলিতে লক করা। সেটা খোলার চেষ্টাও নিশ্চয়ই চালিয়েছে বেচারি।

পর্ব – ১১
Mar 21, 2025 • 6 reads

বাড়িতে কেউই পাশা মিয়ার সঙ্গে মনির সম্পর্ক মানতে রাজি নয়। বাবা নরম গলায় মেয়েকে যথেষ্ট বুঝালেন। কিন্তু তার বে*য়াদব মেয়ে কিছুতেই কিছু বুঝতে রাজি না। উল্টো বাবা, মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছেন। মামাশ্বশুর আবারও আসলেন। এবার সঙ্গে মামীও। উল্লেখ্য, মামী আম্মাকে তেমন একটা পছন্দ করেন না।

পর্ব – ১২
Mar 21, 2025 • 9 reads

মনির জেদ কে হার মানতে হলো থানা পুলিশের কাছেও। সে কিছুতেই থাকবে না। উল্টো মায়ের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলো। মারের চিহ্ন গুলোও দেখালো। শেষ অবধি পুলিশও হার মানলো। মনির বয়স জন্ম নিবন্ধন পত্রে উনিশ বছর। সেই হিসেবে এখন আর ও নাবালিকা নয়। বাবা, মা চাইলেই ঘরে আটকে রেখে মারতে পারে না।

পর্ব – ১৩
Mar 21, 2025 • 10 reads

পরী আপাদের ওখান থেকে আসার পর দেখলাম আম্মার আচরণ খানিকটা ঠান্ডা ধরনের। তিনি আমার সঙ্গে কথা বলছেন কম। ভাবলাম হয়তো মনির জন্য তার মন খারাপ। একটা দিন এমনই গেল। আমিও তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। নাবিদ অবশ্য আমার বেশী থাকা নিয়ে রাগ করলো না। স্বাভাবিক ই রইলো। কিন্তু আম্মার রাগের কারণ ধরতে পারলাম।

পর্ব – ১৪
Mar 21, 2025 • 8 reads

আম, কাঁঠালের দিন শেষ হবার আগেই বাবা আসেন। সঙ্গে অরু আর আমার চাচাতো ভাই হাসান। বাবা ঝুড়ি ভর্তি করে আম, লিচু নিয়ে আসেন। আম্মা ভীষণ খুশি হন। অনেক দিন পর আমাকে দেখে অরু কেঁদে ফেলে। বলে, “এমন নিষ্ঠুর কেন তুমি মেজপা, সেই যে বিয়ের পর একবার গেলে আর তো গেলে না। ”

পর্ব – ১৫
Mar 21, 2025 • 12 reads

পরী আপাও দুই তিন দিনের ছুটি নিয়ে পলাশবাড়ী চলে এলো। মা খুব খুশি হলেন। আপার কারণে আমার আরও কয়েকদিন থাকা হলো। নাবিদ অবশ্য রেগে যায় তাতে। ও দুদিনের ছুটি নিয়ে আমাদের নিতে আসতে চায়। আমি আজ না কাল, কাল না পরশু করে আরও পাঁচ দিন বেশী থাকি।

পর্ব – ১৬
Mar 21, 2025 • 8 reads

আমার দিনগুলো কাটে ছন্দহীন। ছেলেমেয়েদের সেকেন্ড টার্ম পরীক্ষা শেষ হলো রোজার আগেই। বিকেলে খানিকটা সময় পাওয়া গেল। ওরা কিছুদিন ছুটি নিলো। কলেজে যাওয়া হয়। সুবর্না একগাদা খাতা দিয়ে দেয়। লিখতে লিখতে হাপিয়ে যাই। মাঝেমধ্যে মনে হয় নিজেকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলছি। আমারও একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। নিজের সুবিধার জন্যই বাড়িতে কাজের লোক পাল্টালাম।

পর্ব – ১৭
Mar 21, 2025 • 9 reads

ঈদের পর একসঙ্গে অনেক গুলো ঘটনা ঘটলো। মনির সম্পত্তির ভাগ চাওয়া নিয়ে একদিন ঝামেলা হলো। পাশা মিয়া তার ফ্যামিলি সহ এসেছিল। সঙ্গে মনিও, এবারও ব্যাগ ভর্তি জিনিসপত্র। সঙ্গে কয়েক রকম মাছও। মনি সম্পত্তির ভাগ চায়। সে সবকিছু বুঝে পেলে আর এদিকে আসবে না। তবে এবার ওরা ঝামেলা করতে পারলো না। এসেছিল ঝামেলা করতে।

পর্ব – ১৮
Mar 21, 2025 • 8 reads

কক্সবাজারে চার দিন ভালোই কাটলো। বাড়ি থেকে একাধারে সবার ফোন, ম্যাসেজ এসেছে। আমরা কেউই সেগুলোর জবাব দেই নি। শুধু পরী আপাকে ফোন করে সমস্ত কাহিনী বললাম। চারদিন পর ঢাকায় ফিরে দেখি সবকিছু থেমে আছে। শাশুড়ী মা একা একা কাজ সামলাতে গিয়ে কোমড় ব্যথা নিয়ে বিছানায় চিতপটাং।

পর্ব – ১৯
Mar 21, 2025 • 7 reads

টুম্পা ভাবী আর জামিল ভাইয়ের ডিভোর্স হয়ে যায় শেষ পর্যন্ত । ভাবী মেয়েদের নিতে চায় না। সে জানায় মেয়েরা আপাতত বাবার কাছে থাকুক। সে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে তারপর মেয়েদের দায়িত্ব নিবে। জামিল ভাই ভাবীর উকিল কে জানান মেয়েদের দায়িত্ব নেয়া তো দূরে থাক,

পর্ব – ২০
Mar 21, 2025 • 6 reads

বাচ্চাগুলোর পরীক্ষা শেষ, নতুন বছর শুরু হতে চলল। মা ফোন করে বাড়ি যেতে বলছেন বারবার। শীত মানে পলাশবাড়ীতে হৈচৈ আনন্দ। পিঠে বানানোর প্রতিযোগিতা লেগে যায়। এদিকে পরী আপাও আমাকে লোভ দেখায়। জরী তুই গেলে আমিও যাব। আমি নাবিদ কে বলতে সাহস পাই না। টানা উনত্রিশ টা দিন আমাকে ছেড়ে দূরে থেকে বেচারা

পর্ব – ২১
Mar 21, 2025 • 7 reads

জামিল ভাইয়ের মনে যে ঠিক কী চলে তা আমি বুঝে উঠতে পারি না। যে মেয়েটাকে বিয়ে করেছে তারও এটা দ্বিতীয় বিয়ে। দেখতে চুপচাপ লাগলো। অবশ্য এক দেখায় মানুষ কে আর কতটুকুই চেনা যায়। উনি বাড়িতে এসে চুপচাপ রইলেন, খুব বেশী নাটকে গেলেন না। ওনার নাম লিপি।

পর্ব – ২২
Mar 21, 2025 • 7 reads

লিপি ভাবীর সঙ্গে আমার একটা সহজ সম্পর্ক হয়ে গেল। ওনার কথাবার্তা এখন আর আমার তেমন খারাপ লাগে না। হাতে হাতে কাজগুলো এগিয়ে দেয় যেটা আমার ভালো লাগে। যেদিন আমার ক্লাশ থাকে, সেদিন আমার জন্য আলাদা বাটিতে খাবার বেড়ে রাখে। ওনার একটা বিষয় আমার ভালো লেগেছে। আম্মা আমার যত রকমের বদনাম তার সঙ্গে করেছে,

পর্ব – ২৩
Mar 21, 2025 • 6 reads

টুম্পা ভাবী যাবার আগে টাপুর টুপুর কে নিয়ে বাবা দেখা করতে যান। জামিল ভাইয়ের রাগারাগি, হুমকি কোনো কিছুই বাবা কর্নপাত করেন না। তিনি নাতনিদের নিয়ে চলে যান। আম্মা নিজের চোখ কে যেন বিশ্বাস করতে পারেন না। যে মানুষ টা সারাজীবন তার হ্যাঁ তে হ্যাঁ, না তে না বলেছে সে আজ কথা শুনলো না।

অসময়ে আমাকে বাড়ি যেতে দেখে মা চিন্তায় পড়ে গেল। কিছু হয় নি তো আবার! আমি হেসে নিশ্চিন্ত করলাম যে সব ঠিক আছে। আসলে অনেক কিছু ঠিক নেই। আমার মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। যে ঝড়ের খবর আমি কাউকে বলতে পারছি না। আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম সংসার করতে গিয়ে আমিও একটু, আধটু নাটক শিখে গেছি।