মেঘলা তার পরিচয় খুঁজে পাওয়ায় সবার খুশি যেন আর ধরে না। তার মধ্যে মেঘলা আর নাবিল একটু বেশিই খুশি। মেঘলাঃ আচ্ছা আকাশ ভাইয়া,আমি আজ ওই বাসায় চলে যাব তাই না? মেঘলা কথাটা বলতেই আকাশের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আকাশ রেগে গিয়ে বলল এখুনি যাবি?চল আমি গিয়ে দিয়ে আসি, দিয়ে আসব?
ড্রাগস নেওয়ার নেশা অনেকটাই কেটে গেছে।ফোনের আওয়াজে এবার মেঘলা উঠে বসল। কিন্তু ফোনটা হাতে নিতে নিতে কলটা কেটে গেল। ফোনটা হাতে নিয়ে মেঘলার নিজের মাথার চুল নিজে ছিড়তে ইচ্ছা করছে …ভাইয়া আমাকে এতগুলো কল দিয়েছে আর আমি ধরিনি?আজ আমাকে কবর দেওয়া হবে নিশ্চিত।
মেঘলা হটাৎ করেই লক্ষ্য করল কয়েকটা ছায়া ওকে ফলো করছে। মেঘলা পিছন ফিরে তাকাল আর দেখলো কয়েকটা বখাটে ছেলে তাকে ফলো করছে… ছেলেগুলি মেঘলাকে যাতা বলছে মেঘলাঃ আরে এই ছেলেগুলি তো আকাশের চেয়েও খারাপ।
মেঘলা গিয়ে একটা দেয়ালের সাথে স্বজোরে ধাক্কা খেয়ে পরে গেল আর অজ্ঞান হয়ে গেল যখন মেঘলার জ্ঞান ফিরল তখন সকাল হয়ে গেছে। মেঘলা চারপাশ টা দেখে ডুকরে কেঁদে উঠল…
আকাশ গম্ভির গলায় বলল আমাকে কি জোকার মনে হয় তোর?আমার কথার কোন দাম নেই? তোকে লায় দিচ্ছি বলে মাথায় উঠে বসতে চাইছিস? একটা কথা কান খুলে শুনে নে এত লুতুপুতু প্রেম করার সময় আমার নেই।
মেঘলাঃ এই পৃথিবীতে আমার কোন আপনজন নেই সবাই পর এমন কি নাবিল ভাইও। কপালে কত দুঃখ লিখা আছে কে জানে? এই নিরব তো আমাকেই নিরব স্তব্ধ করে দিবে মনে হয়।৷ আর আকাশ তুমিও সত্যিই একটা ভিলেন।
নিরব যাওয়ার সাথে সাথেই মেঘলা বিছানার উপড়ে দাঁড়িয়ে বলল এই যে জল্লাদ টাইপের লোকজন সবাই শোন এখানে এখন থেকে কোন রকম মারামারি হবে না সবাই সবাইকে ভালবাসবে।আমি খুবি লক্ষি মেয়ে তাই এসব মারামারি পছন্দ করি না।
নাবিলের মাঃ বাড়াবাড়ির একটা লিমিট আছে নাবিল কাল অনেক বাড়াবাড়ি করেছো আমরা কিছু বলি নি এখন আবার শুরু করেছো ভুলে যেও না ওই বাড়িটা শুধু তোমার নয় মেঘলারো যাক গে পাগলের সাথে কথা বলে লাভ নেই।
আকাশঃ জানি তবে যদি ভালবাসিস তাহলে কথা দে আর কখনো আমাকে ভুল বুঝবি না… মেঘলাঃ আচ্ছা কথা দিলাম….
আকাশঃ তুই কি বলিস কোনটা ভাল হবে এখানে পড়া নাকি বিদেশে? নাবিলঃ আমি ইচ্ছা মেঘলার পরিক্ষার পরে আমি মামা হব। নাবিলের এমন উত্তরে আকাশ মেঘলা ২ জনেই অবাক হল আকাশ হেসে দিল আর মেঘলা লজ্জা পেল।
সেদিনি নাবিল আকাশ আর মেঘলার মিল করিয়ে দিলেও মেঘলার মন থেকে এই সন্দেহ দূর করা সম্ভব হয় নি। মেঘলা আকাশ কে প্রায়েই এটা ওটা বলতেই থাকে।
আকাশ চিন্তা করতে শুরু করল ফোনে কি এমন ছিল…??যার জন্য মেঘলা ফোনটা ভাংগল আর আমি একটা থাপ্পড় দিয়েছি বলে সোসাইড করার সিধান্ত নেওয়ার মত মাথা খারাপ তো মেঘলা নয়।
নাবিলঃ আছে একটা পাগলি একদিন না হয় পরিচয় করিয়ে দিব। আবিরঃআকাশ ভাইয়ের ভালবাসা দেখে খুব হিংসা হচ্ছে তারউপর। সেই ভাগ্যবতীকে তো দেখতেই হবে। নাবিলঃ সত্যিই সে ভাগ্যবতী…!!!
নাবিল চিৎকার করে উঠল না এটা হতে পারে না কিছুতেই হতে পারে না আমি মানি না আকাশের কিছু হতে পারে না। আকাশ উঠ আকাশ…. তোর কিছু হতে পারে না।
আমার কিছু দুরত্বেই আকাশের নিথর দেহ টা পড়ে আছে আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না মাথা যেন ভারি হয়ে গেছে হাত পা জমে গেছে অনেক কস্টে নিজেকে কন্ট্রল করে অশ্রুমাখা চোখে আকাশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমি।
আকাশ কি করে এত বদলে গেল সেটা বুঝার ক্ষমতা মেঘলার হয় নি।সেই হিসাব মিলানোর চেস্টাও মেঘলা করছে না। মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
ইরার মুখে বিজয়ের হাসি মেঘলাকে প্রথম আঘাতটা ইরাই করল….!! মেঘলা আকাশের হাতে মার খেলেও এমন মারের সাথে পরিচিত না এক একটা আঘাতে মেঘলা মৃত্যু যন্ত্রনা অনুভব করছে।
হটাৎ করেই ইরা বলে উঠল এবার তোমায় কে বাঁচাবে মেঘলা? মেঘলা নামটা শোনার সাথে সাথে কেউ যেন ২২০ ভোল্টের শক খেল।
আর যেই মেয়েটিকে আকাশ ভাইকে মারার চেষ্টা করল তার জন্যেই বা আকাশ ভাইয়ের এত টান কেন থাকবে…??
সেদিন পালানোর সময় নাবিলকে ভাই কে গুলি করা হয়েছিল আর সেটা নিউজ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল প্রথমে নিউজে শুটের কথা বলা হলেও পরে সেটা আড়াল করা হয়েছিল কারন এটা বললে পুলিশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হবে। আবিরের কথাগুলি শুনে আকাশ বাকরুদ্ধ হয়ে গেল….
আবিরঃ এবার লক্ষি মেয়ের মত ঘুমাও আর কখনো যেন রাজনীতির কথা মুখে না শুনি বলে আবির চলে গেল। মেঘলাঃ ফাউল ছেলে দেখ এবার আমি কি করি রাতেই আমি এখান থেকে পালাব।
নাবিলঃ যা খুশি করুন বাঁধা দিচ্ছি না তো। শ্রেয়া জনিকে ফোন দিল আর নাবিলের সামনেই সব বলল। নাবিলঃ মুচকি হেসে সামিরাকে কোলে নিয়ে হাঁটতে লাগল।
মেঘলাঃ আ আমি খারাপ ড্রেস পড়ি নি তো।কেন করল এমন? আকাশঃ ভালই তো হয়েছে কাঁদছিস কেন? এটা তো মজা পাওয়ার মত বিষয় তুই মজা পাস নি? মেঘলা অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকাল…
মেঘলা দরজা খুলতেই ভেজা কাপড়েই মেঘলাকে টেনে বাইরে নিয়ে আসল আকাশ। আকাশঃপাগল হয়ে গেছিস নাকি?এত রাতে এতক্ষন ধরে কেউ ভিজে? কি ভেবেছিস পানি ঢালেই পরপরুষের ছোঁয়া মুছে যাবে নাকি?
নাবিলের চাল চলন দেখে সামিরা ইতিমধ্যে নাবিলের উপড় ক্রাশ খেয়েছে। আজ সারাদিন ধরে নাবিল তার সাথে ছিল।সামিরা যতবার উল্টা পাল্টা কিছু করতে চেয়েছে নাবিল সামিরাকে আটকে দিয়েছে।
আকাশ দৌড়ে গিয়ে মেঘলাকে ধরে বলল কি করছিস এসব? একটুও বাড়াবাড়ি করলে মেরে হাত পা ভেংগে ঘরে ফেলে রাখব বুঝেছিস খুব সাহস বেড়েছে তাই না?
নাবিল সামিরাকে মন প্রানে ভালবেসে ফেলেছে। নাবিলের ধারনা বিয়ের পর সে ফিরে এলে সব আবার আগের মত ঠিক হয়ে যাবে।
আকাশঃ কেন বাঁচাবি আমায় আমি তো একটা বেইমান….!!! আমি আর বাঁচতে চাই না কার জন্য বাঁচব? বুকের একপাশ তোর নামে অনেক আগেই লিখে দিয়েছিলাম কিন্তু আজ তুই তা শুন্য করে দিলি। মেঘলা নাহয় বোকা কিন্তু তুই আমায় কি করে ভুল বুঝলি নাবিল? তুই না আমার না বলা কথা বুঝতি।
নাবিল যখন আকাশ কে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ব্যাস্ত ঠিক তখন ইরা আর কিছু গুন্ডা এসে নাবিল আর আকাশ কে ঘিরে ধরল। ইরাঃ তোদের কারোরি আজ আর এখান থেকে ফিরা হবে না।
নাবিলো পাগলের মত আবল তাবল বলছে। নাবিলঃ আ আ আমি এই ভালবাসা চাই নি মেঘলা তোর বিনিময়ে ভালবাসা আমি কখনই চাইনি….তুই এটা কি করলি।
আবিরঃ হ্যা আমি জানি আমি কখনো মেঘলার মন থেকে আকাশ নামটা মুছতে পারব না আমি কখনো ওর মনে জায়গা পাব কিনা জানি না তবুও সব জেনেও আমি মেঘলাকে বিয়ে করতে চাই।
মেঘলা আকাশের প্রতি অনেক রেগে গেছে তাই সেও মানা করল না। নাবিল মেঘলার রুম দেখিয়ে দিল। মেঘলা নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে যাচ্ছিল খাবার খাওয়ার জন্য তখনি দেখল আকাশ নাবিল আবির সামিরা সবাই দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
মেঘলা আকাশকে জ মড়িয়ে ধরে আকাশের গাঁয়ে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবছে কেউ কি কখনো আমাকে আকাশের মত করে বুঝবে কেউ কি আমাকে এত কেয়ার করবে…?? আকাশ তোমার আচারন তো বলছে তুমি আমায় ভালবাসো তাহলে কেন অবনীকে বিয়ে করছো..???
মেঘলাকে কাঁদতে দেখে আকাশ আরো ভেংগে পড়ল সে ছাদ থেকে নেমে নিজের ঘরে চলে গেল আর ভাবতে লাগল কি করা যায়। কারন অবনীকে এখন না করাটাও একটা বিশ্রি ব্যাপার অবনী লোভি মেয়ে না যে টাকা দিয়ে সরিয়ে দেয়া যাবে আর নাবিলও একবার যা বলে তাই করে…
আকাশ চিৎকার করে বলছে মেঘলা যাস না প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাস না। দেখতে দেখতে মেঘলার গাড়ি অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।আকাশ রাস্তায় বসে কাঁদছে নাবিল পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।
এখানে কারো দোষ নেই সবটাই ভাগ্যের লিখন চল আকাশ মেয়েটাকে যখন বিয়ে করেছিস ওর কিছু চাওয়া পাওয়া আছে তোর কাছে প্লিজ চল আকাশ।আকাশ যেতে চায় নি কিন্তু নাবিল জোর করে আকাশকে অবনীর ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিল।