“অ্যাই মেয়ে ফুল ছিঁড়লে কেন?” পিছন থেকে কর্কশকণ্ঠের কথা শুনে পরী হকচকিয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে, “ইয়ে আসলে!” “ইয়ে কী হ্যাঁ? চোর যেন কোথাকার! এজন্যই তো বলি প্রতিদিন গাছের ফুলগুলো কোথায় যায়। ফুলচোর যেন কোথাকার!” পরীর মেজাজ এবার চটে যায়। এই বাসায় এসেছে আজ তিনদিন হলো। প্রথম দু’দিন তো ঘরদোর গোছাতেই শেষ। আজ একটু […]
তুর্য ব্যথায় কুঁকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে, “দুইটা হাতি আমার ওপর পড়ে একদম আরাম করে শুয়ে আছে।“ এরপরই ঝাড়ি দিয়ে বলে, “উঠো তাড়াতাড়ি!” পরী আর দিশান ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায়। ওরা দুজনও বেশখানিকটা ব্যথা পেয়েছে। তবে তুর্যর ব্যথার তুলনায় সেগুলো কিছুই না। তুর্য হাত ধরে ব্যথায় আহ্ শব্দ করে ওঠে দাঁড়ায়। পরীর দিকে তাকিয়ে […]
ক্যারাম বোর্ডের পাশেই চায়ের দোকানে বসে ধোয়া উঠা গরম চায়ে চুমুক দিচ্ছে প্রান্ত। ডান হাতে চায়ের কাপ, বাম হাতে সিগারেট। একবার সিগারেটে ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে তো আরেকবার চায়ের কাপে। বাবা-মায়ের ছোট ছেলে সে। বড় ভাই রাজনীতিতে জড়িত থাকার সুবাদে প্রান্তরও খুব নাম ডাক আছে। তবে বেশিরভাগ মানুষই তাকে চেনে রাগী,গম্ভীর, বদমেজাজী,গুন্ডা বলে। কিন্তু প্রান্ত দেখতে ঠিক […]
পরী ভ্রু দুটি কুঁচকিয়ে বলে, “কী হয়েছে? এভাবে সামনে এসে দাঁড়ালেন কেন?” তুর্য পরীকে অবাক করে দিয়ে বলে, “এটা কোনো গান ছিল? আমার তো মনে হলো এতক্ষণ বসে বসে পাখিদের কিচিরমিচির শুনছিলাম।“ পরী তুর্যর দিকে এক আঙুল তুলে বলে, “হেয় ইউ..” “তুর্য। আমার নাম তুর্য।“ মিটিমিটি হেসে কথাটা বলল তুর্য। পরী দাঁত কিড়মিড় করে বলে, […]
দিশান আর তুর্যর হাসি দেখে রাগে পরীর শরীর রিরি করছে। এইদিকে কুকুরটার ভয়ে কিছু বলতেও পারছে না। আর কুকুরটাও! একদম ফাজিলের হাড্ডি। পরীর ওড়না মুখে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে ওদের ওপর রাগ অন্যদিকে কুকুরটার ভয় সব মিলিয়ে জমে গেছে পরী। মনে মনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। চোখ বন্ধ করে বার কয়েক দোয়া দরুদ পড়ে […]
প্রান্ত পরীর হাত ছেড়ে দিয়ে কানে ধরে বলে, “স্যরি।” পরী কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। প্রান্ত বলে, “হাত ধরার জন্য স্যরি।” পরীর মুখের কোনো ভাবান্তর হলো না। সেলিম ওরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। প্রান্ত কান থেকে হাত নামিয়ে বলে, “আসলে আপনি একটা মেয়ে হয়ে এভাবে মারামারি করতে এসেছেন বিশ্বাসই হচ্ছে না।” পরী রাগী গলায় বলে, […]
গাছের পাতা চুয়ে চুয়ে বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। মাটি পিচ্ছিল হয়ে আছে বৃষ্টির পানিতে। ভয়ে হাঁটার শক্তিটুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছে পরী। ডাকাত দলের লোকগুলোও কাছাকাছি চলে এসেছে। পরী হাঁপাতে হাঁপাতে ঝুঁকে হাঁটুতে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তুর্য তাড়া দিয়ে বলে, “দাঁড়ালে কেন? চলো তাড়াতাড়ি।“ “আমি আর দৌঁড়াতে পারছি না।“ “কী বলছ এসব? ওরা ধরে […]
সারারাতে তুর্য একটুও ঘুমায়নি। ভোরের আলো যখন ফুঁটতে শুরু করেছে তখনই তুর্য রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। সামনের ঘরের বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসে বৃষ্টি ভেজা প্রকৃতি দেখছিল। আস্তে আস্তে সমস্ত অন্ধকার কাটিয়ে আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করে।মোরগ ডাকা শুরু করেছে। বাড়ির গিন্নি দরজা খুলেই তুর্যকে দেখতে পায়। পাশে দাঁড়িয়ে বলে, “ঘুমাও নাই তুমি বাবা?” তুর্য ঘাড় […]
আধ ঘণ্টা হবে বাড়িতে ফিরেছে তুর্য আর পরী। বাড়িতে এসেই পরী বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে। জ্বরটা এখনো কমেনি। রেহেনা বেগম বালতি ভর্তি পানি নিয়ে এসে মেয়ের পাশে বসে মাথায় ঢেলে দিচ্ছেন। পরী চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে আছে। রেহেনা বেগম ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলেন, “তুই বৃষ্টিতে কেন ভিজেছিস আমায় বল। জানিস না বৃষ্টিতে ভিজলে তোর জ্বর […]
সকাল সকাল মেহেনুবার সাথে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছে পরী। আগে একটা প্রাইভেট আছে তারপর কলেজ। প্রাইভেট পড়ে বাস স্টপেজে এসে পরীর দেখা হয়ে যায় তুর্যর সাথে। হয়তো অফিসে যাওয়ার জন্যই বাসের অপেক্ষা করছে তুর্য। পরীর বারবার জানতে ইচ্ছে করছে কাল রাতে কেন তুর্য এমন ব্যবহার করল। কোনো কারণ ছাড়াই মিজবিহেভ করার তো কোনো মানেই হয় […]
নিকোষ আলো অন্ধকারই পারে দুঃখগ্রস্ত মানুষগুলোর চোখের পানি সবার থেকে আড়াল করতে। এজন্যই কষ্ট পাওয়া মানুষগুলো বোধ হয় অন্ধকারকে এতবেশিই ভালোবাসে। পরীর সময়গুলো চলছিল টেনেটুনে। কলেজে যাওয়ার পর ক্লাসে থাকলেও মনটা পড়ে থাকে অন্যত্র। অন্যত্রই বা বলছি কেন! সহজ কথায় বলা যায় তুর্যর কাছে। নিষিদ্ধ এবং অসম্ভব জিনিসের প্রতি মানুষের চাহিদা বরাবরই বেশি আদিমকাল থেকে। […]
রাতে তুর্য বাসায় এসে দেখে হূলস্থুল কাণ্ড। চারদিকে সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তুর্য তাহমিনা বেগমের উদ্দেশ্য বলে, “ঘরের এই হাল কেন?” তাহমিনা বেগম মিনিট দুয়েক চুপ থেকে উত্তর দেন, “উপরের নতুন ভাড়াটিয়ার মেয়ে পরী করেছে। কতটা অসভ্য আর বদমেজাজি ভাবতে পারিস তুই? ঘরের সবকিছু ভেঙেচুড়ে গেছে। আবার হুমকি-ধামকিও দিয়ে গেছে।” তুর্যর কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ পড়ে। […]
ক্যাফের সামনে এসে রিক্সা ভাড়া মেটাতে মেটাতে রিনিও পৌঁছে যায় তুর্যর সম্মুখে। এই সময়ে রিনিকে এখানে দেখে বেশ অবাকই হয় তুর্য। পরীরও রিনিকে চিনতে কষ্ট হয় না। ভাড়া মিটিয়ে রিনি তুর্যর কাছে গিয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন করে, “এই মেয়ে কে?” এক পলক পরীর দিকে তাকিয়ে আবার বলে, “এই তোমার অফিসে যাওয়া?” তুর্য […]
প্রিয়ম আর শাদাফ ফ্রেশ হয়ে খেতে বসেছে। সাথে বাবাও খেতে বসেছে। মা সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। এদিকে পরীর মনটা আনচান করছে দেখার জন্য ভাইয়া কী গিফ্ট নিয়ে এসেছে! ধৈর্য ধরে রাখতে না পেরে ড্রয়িংরুমে রাখা লাগেজটা খুলে একে একে সব বের করতে থাকে। গিফ্ট দেখে পরী অবাক! ছোট মেয়ে বাচ্চার কাপড়। সাথে অনেকগুলো চকোলেট, খেলনা, […]
বারিধারায় আচ্ছন্ন ভিজে যাওয়া গাছগুলোর পাতা থেকে টপটপ করে নিচে পড়া পানির ফোঁটা, হালকা বাতাসে গাছের পাতাগুলো হেলেদুলে যাওয়া সবকিছুই নিবিষ্ট চোখে দেখছে পরী। জানালার গ্রিলটাও বৃষ্টিতে ভিজে আছে। সেই ভেজা গ্রিলের ওপর হাতের কনুই রেখে তাতে থুতনি ভর দিয়ে বাইরের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছিল। সাথে ভাবছিল অল্প সময়ে ঘটে যাওয়া কাহিনীগুলোর কথা। আগের সময়টায় আর […]
বাড়িতে ফিরে সেই যে ওয়াশরুমে ঢুকেছে পরী এখনো ফেরার নাম নেই। ১ঘণ্টা হতে চলল এখনো গোসল করছে। মেহেনুবা আধ ঘণ্টা ধরে ঘরের মধ্যে পায়চারী করছে। রেহেনা বেগম একটু পরপর এসে দরজায় ধাক্কাচ্ছেন। এবারও তিনি রুমে এসে দেখেন মেহেনুবা একা রুমে বসে আছে। মেহুর উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করেন, “পরী এখনো বের হয়নি?” “না আন্টি।“ তিনি এবার দরজা […]
পরীর চোখে ঘুম নেই। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। ব্যালকোনির ফাঁকা দিয়ে চাঁদের আলো এসে মুখে পড়ছে। সেই আলোতে মুখের ভাব ও চোখের চাহনী একদম স্পষ্ট। কিছুটা দূরের রাস্তায় কুকুরের ঘেউঘেউ শব্দ শোনা যাচ্ছে। গাড়ির হর্নও শোনা যাচ্ছে। তবে সেটা দিনের তুলনায় কম। আশপাশ থেকে কানে আসছে ঝিঝি পোকার ডাক। ক্ষণে ক্ষণে কিছু শীতল হাওয়া এসে […]
তুর্য অবাক চোখে পরীর দিকে তাকিয়ে আছে। তাতে পরীর চেহারার বিশেষ কোনো ভাবান্তর হলো না। দূর থেকে একটা বাস আসতে দেখে তুর্যকে বলে, “সন্ধ্যায় রেডি থাকিয়েন। আর বাড়ির সামনে এসে কল দিয়েন।“ বাসটা সামনে এসে থামার পর পরী চলে যাওয়া ধরে। তুর্য তখন পরীর হাত চেপে ধরে বলে, “তুমি কি আমার সাথে মজা করছ?” পরী […]
সময় ঘনিয়েছে। শীতের আমেজ এসেই পড়েছে অবশেষে। যদিও হাড় কাঁপানো শীত এখনো আসেনি। সকালের মৃদুমিষ্টি সূর্যের প্রখর দিপ্ত রোদের মধ্যে ছাদে একটা চৌকিতে বসে আছে পরী। এই সময়টার রোদ শরীরে উষ্ণ স্পর্শ এনে দেয়। সময়গুলো যে অতি তাড়াতাড়ি কীভাবে চলে গেল কে জানে! রেহেনা বেগম ছাদে এসে দেখেন পরী বই হাতে অন্য মনস্ক হয়ে বসে […]
শীতে কাঁপতে কাঁপতে ছাদে আসে প্রিয়ম। ঠান্ডা হাতে পরীর গালে চিমটি দিয়ে বলে, “কীরে তুই ছাদে কেন?” পরী ব্যথায় চোখমুখ কুঁচকে ফেলে। গালে হাত বুলাতে বুলাতে বলে, “খবিশ! এভাবে চিমটি দিলা কেন?” “ওমা! গাল লাল হয়ে গেছে নাকি?” “হুশ! যাও সরো।“ প্রিয়ম লুকিয়ে রাখা অন্য হাতটা পরীর মুখের সামনে ধরে। প্রিয়মের হাতে দুটো কোণ আইসক্রিম। […]
তুর্য আর পুলিশ অফিসার দুজনের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে। পরী আল্লাহ্’র নাম নিয়ে জোরে দৌঁড় দেয়। এতে হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে দুজনই। কয়েক সেকেন্ড পার হতে দুজনই একসাথে দৌঁড় শুরু করে। এই যাত্রায় পুলিশ অফিসার বলে, “আপনি দৌঁড়াচ্ছেন কেন?” “আমি তো ওকে ধরতে যাচ্ছি। কিন্তু আপনি কেন দৌঁড়াচ্ছেন স্যার?” “আরে আমিও তো ওর পিছেই যাচ্ছি। দিনদুপুরে […]
পরী বরফের ন্যায় এখনো জমে দাঁড়িয়ে আছে। এটা কি সত্যিই বাস্তব ছিল? নাকি কল্পনা? আর না ভ্রম? মেহনুবা এসে পরীর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে, “স্ট্যাচু হয়ে আছিস কেন? তুর্য ভাইয়া চলে গেছে?” “তার মানে কি তুর্য সত্যিই এসেছিল?” “জ্যান্ত মানুষটা তোর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল তুই বুঝিসনি?” “তাহলে ও যা করল সব সত্যি!” মেহু অবাক হয়ে বলে, […]
পরী আর সেখানে সময় নষ্ট করে না। এক প্রকার জোর করেই পরী হাতটা ছাড়িয়ে নেয়। মেহনুবাকে কিছু না বলেই বাড়িতে চলে আসে। তুর্য অসহায়ভাবে পরীর যাওয়ার পথে চেয়ে থাকে। এক সময় ঘন কুয়াশার আড়ালে পরী মূর্ছা যায়। বাড়িতে এসেই নিজের রুমে চলে এসে বিছানায় বসে পড়ে। মনের মধ্যে এ কেমন দ্বন্দ্ব। কেন বারবার মন তুর্যর […]
রেহান মুচকি হেসে বলে, “আসসালামু আলাইকুম বেয়াইনসাব।” পরী বিড়বিড় করে বলে, “শালায় আবার গান শুরু করবে নাকি!” কিন্তু মুখে লম্বা হাসি ফুঁটিয়ে বলে, “ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভালো আছেন?” “আলহামদুলিল্লাহ্ বেয়াইনসাব। আপনি?” পরী মৃদু হেসে বলে, “জি, আলহামদুলিল্লাহ্।” রেহান চাচির দিকে তাকিয়ে পরীকে পিঞ্চ মেরে বলে, “বেয়াইনসাব মনে হয় খুব শান্তশিষ্ট চাচি।” চাচি হোহো করে হেসে বলেন, […]
তুর্য দাঁতমুখ খিঁচে বলে, “শালা বললে কেন?” “একশো বার বলব। এভাবে গাড়িতে তুললেন কেন?” “তো কীভাবে তুলব? কোলে করে?” “আপনার কোলে চড়তে আমার বয়েই গেছ।” তুর্য আর কথা না বলে কামড় দেওয়া হাত ডলতে থাকে। আর একটু পরপর রেগে তাকায় পরীর দিকে। পরী সেটা খেয়াল করে বলে, “ওভাবে তাকান কেন বারবার?” “ইচ্ছে করছে তোমায় গিলে […]
কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের জাঁকজমক আয়োজন করা হয়েছে। বড় বড় বক্সে বিয়ের গান-বাজনা বাজছে। গেট ধরার পর্ব শেষ হলে সবাই গিয়ে ভেতরে বসে। তুর্য সেই পরীদের বাড়ি থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত পরীর সাথে সাথেই আছে। পরীর সাথে দু’দণ্ড মন খুলে কথা বলবে সেই সুযোগটাও পাচ্ছে না। এইদিকে পরী লজ্জায় তুর্যর দিকে তাকাতে পারছে না। ভেতরে […]
শীতের সময় পেরিয়ে গেছে। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে পরী আর তিথি। সেই সাথে একটুখানি সময় বের করে কথা বলছে দুজন দুজনার ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে। প্রাইভেট থেকে একসাথে ফিরছিল পরী, তিথি আর মেহনুবা। পথে প্রান্তর সাথে দেখা হয়ে যায়। প্রান্ত হেসে সবার সাথে কথা বলা শেষ করে পরীর উদ্দেশ্যে বলে, “তোমার কি পাঁচ মিনিট সময় হবে?” পরী […]
বাবা চলে যাওয়ার পরপরই পরী মায়ের কাছে যায়। রেহেনা বেগম তখন রাতের রান্না করছিলেন। পরী হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “আব্বু এসব কী শুরু করেছে মা?” রেহেনা বেগম একবার পরীর দিকে তাকিয়ে আবার রান্নায় মনোযোগ দেন। তরকারী নাড়তে নাড়তে বলেন, “কী করেছে?” “আজকে নাকি আমায় দেখতে আসবে?” এবার তিনি ব্যস্ততা বাদ দিয়ে পরীর দিকে তাকান। ভ্রু […]
রেহেনা বেগমের চোখ ছলছল করছে। মেয়ের গায়ে এই পর্যন্ত কোনোদিন পরীর বাবা হাত তোলেনি। আজ এই প্রথম মারলেন। বাবা ফের রাগ দেখিয়ে বলেন, “তোর ফোন কোথায়?” রেহেনা বেগম বলেন, “ওর ফোন দিয়ে তুমি কী করবে?” “ওর ফোন আমার কাছে থাকবে। তুর্যর সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখতে পারবে না।” “বেশিই বাড়াবাড়ি করছ না তুমি? কাল বাদে […]
পরীক্ষা শেষেই বাসায় এসে শুয়ে পড়ে পরী। রেহেনা বেগমও পেছন পেছন আসেন। টেবিলের ওপর থেকে প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “তুর্যর সাথে দেখা হয়েছিল?” না চাইতেও পরীর ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুঁটে ওঠে। শোয়া থেকে বসে বলে, “আমি তো ভেবেছিলাম তুমি জিজ্ঞেস করবে পরীক্ষা কেমন দিলাম!” রেহেনা বেগম মৃদু হেসে বলেন, “এজন্যই তো আমি ঐ […]
বৃষ্টির ধারা মাত্রই শেষ হয়েছে। আকাশে এখনো মেঘ বিদ্যমান। কোথাও ঘন কুয়াশা আবার কোথাও বা শুভ্র মেঘ। ফজরের নামাজ পড়ে ছাতা মাথায় আধভেজা হয়ে মাত্রই মসজিদ থেকে ফিরেছে পরীর বাবা। ছাতাটা ড্রয়িংরুমে রেখে তিনি নিজের রুমে যান। রাতে রেহেনা বেগম পরীর রুমেই ছিলেন। এখন বোধ হয় রান্না বসিয়েছে। ঘরের ভেতর একা একা পায়চারি করছেন আর […]
রুম থেকে পরীর চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তাড়াহুড়ো করে রুমে আসেন রেহেনা বেগম। এসে তিনি রীতিমত অবাক। পরী বিছানার ওপর লাফিয়ে লাফিয়ে নাচছে। তিনি বারবার বারণ করা সত্ত্বেও শুনছে না। তিনি এটাই ভেবে পাচ্ছেন না হঠাৎ করে এমন কী হলো যে পরী অসুস্থ হয়েও নাচানাচি করছে? নাকি সবই জ্বরের ঘোরে করছে! বার কয়েক পরীর এত খুশি […]
প্রিয়ম আর রোজের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে পরী। প্রিয়ম ইচ্ছে করে ক্ষেপাচ্ছে পরীকে। আর প্রিয়মের পাশে বসে হাসছে রোজ। পরী অভিমানিসুরে রোজকে বলে, “ভাইয়া আমাকে ক্ষেপাচ্ছে আর তুমি হাসতেছ?” উত্তরে রোজ বলে, “কী আর করব বলো? ক্ষেপে গেলে যে তোমায় কী দারুণ লাগে!” “হয়েছে, হয়েছে! আর বলতে হবে না। এখন বলো তোমরা কবে আসবে।” […]
লেকে পাশাপাশি হাঁটছে দুজন। সন্ধ্যার আঁধার প্রায় নেমে এসেছে। সূ্র্য মামা টাটা বাই বাই জানাচ্ছে। চারপাশটাই এখন গোধুলী লগ্নে ঢেকে আছে। “ফুসকা খাবে?” তুর্যের আকস্মিক প্রশ্নে কিছুটা চমকে যায় পরী। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, “না।” “আরে বাহ্! হলো কী আজ? ফুসকা রিজেক্ট করছ?” “খেতে ইচ্ছে করছে না।” মৃদু হেসে বলল পরী। “কাউকে খুঁজছ নাকি তুমি?” […]
বাইরে পাখিদের কিচিরমিচিরের সাথে বাড়িতে সকলের শোরগোলও শোনা যাচ্ছে। পরী ঘুম থেকে ওঠে গোসল সেরে নিয়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচরাচ্ছিল তখন তিথি দরজায় নক করে। পরী দরজা খুলে দিতেই তিথি বলে, “আগেই উঠে পড়েছ?” “হুম।” “ভাইয়া ওঠেনি?” “না। ঘুমাচ্ছে এখনো।” “ডেকে তোলো। নাস্তা করার জন্য তোমাদের ডাকছে সবাই।” “আচ্ছা আসছি।” তিথি চলে যাওয়ার পর […]
সকালের স্নিগ্ধ বাতাসে গাছের পাতার সাথে উড়ে বেড়াচ্ছে পরীর আঁচলও। তুর্য একটু বাহিরে গেছে। বিয়ের পাঁচদিন হয়ে গেছে। মেহবান সবাই সবার বাড়ি চলে গেছে। নানী, মেঘলা আপু, তার বাবু, তিথি আর প্রান্ত আছে শুধু। আজ বিকেলে তিথি আর প্রান্তও চলে যাবে। তুর্যর ছুটি আছে আর দু’দিন। যদিও এর মধ্যেই হানিমুনে যাওয়ার কথা বলেছিল তুর্য। কিন্তু […]
ঝড় আসার ঠিক আগ মুহূর্তে চারপাশ যেমন নিরবতায় ছেয়ে থাকে ঠিক তেমনই পরিবেশ এখন। তাহমিনা বেগমের এতদিন চুপচাপ থাকার কারণটাও সম্পূর্ণ স্পষ্ট। তিনি বাইরের মানুষজনকে জানাতে চান না পরীর প্রতি তার অসন্তুষ্টি। কিন্তু পরীকে তিনি বুঝিয়েছেন। পরীর জায়গা তার মনের কোথাও নেই। রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখতে দেখতে ভাবছিল পরী। জীবন খুবই অদ্ভুত। কখন, কোথায় […]
উপস্থিত সকলেই এখন একদম মিইয়ে আছে। তুর্য ভেতরে এসে বলে, “এসব কী হচ্ছে?” অনেকটা সাহস জুগিয়ে তাহমিনা বেগম বলেন, “তোর বউ আমার মুখে মুখে তর্ক করে। এতগুলো মানুষের সামনে আমায় অপমান করছে। বিশ্বাস না হলে ভাবিদের জিজ্ঞেস করে দেখ।” তুর্য পরীর দিকে তাকায়। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে পরী। চোখগুলো টলমল করছে। যেকোনো সময়ে পানিটুকু […]
সময় গড়িয়েছে। পার হয়েছে বহু সেকেন্ড, মিনিট। কয়েক, কয়েক কোটি! বসন্ত গিয়েছে আবার বসন্ত এসেছে। চারিপাশে শুধু বসন্তের শুভেচ্ছা। ঘ্রাণ! নানান রঙের কাপড় ও মাথায় ফুলের ক্রাউন দিয়ে মেয়েরা হেঁটে চলেছে তার সঙ্গীর হাত ধরে। কখনো বা হাসতে হাসতে খুনসুটি করছে। কী নিখুঁত সুন্দর সেই হাসি। ভুবন ভোলানো যাবে নিঃসন্দেহে। খুব জানতে ইচ্ছে করে, সময় […]
রাতঃ১১টা বিয়ের এলবাম নিয়ে বসে আছে পরী। প্রতিটা এলবামের পাতা উল্টেপাল্টে দেখছে। সবার হাসিমাখা মুখটা দেখছে। এলবামের অধিকাংশ ছবিই তুর্য আর পরীর। বুক ফেঁটে কান্না আসছে পরীর। শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছে ঘণ্টাখানেক হবে। পরীকে বাসায় রেখে তুর্য যেন কোথায় গেছে। তুর্যর প্রতিটা কাজে পরীর মনে এখন সংশয়ের সৃষ্টি করে। তুর্য আসে আরো ঘণ্টাখানেক পরে। চোখমুখের বিধ্বস্ত […]