প্রকাশিত: বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
তেইশান্তে প্রেমালোক | অচেনা মায়ার নতুন রূপ
“এইযে মিস্টার! এভাবে কি দেখেন?”
মেয়েটার এমন কথায় রায়ান তাড়াতরি ওর দিক দিয়ে চোখ সরিয়ে নড়েচড়ে দাড়ায়। নিচে পরে থাকা বইটা উঠিয়ে পাসে রাখলো। কিন্তু তখনি হঠাৎ রায়ানের বেশ খারাপ লাগা শুরু হলো। মনে পড়লো, সে কয়েক মিনিট যাবৎ শ্বাস নেয় নি, পলকও ফালায় নি। রায়ান গিয়ে পাসে থাকা চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লো। ও ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। এতক্ষনে মেয়েটা আবারো নিজের পরায় মনোযোগ দিয়েছে। রায়ান নিজের এমন অবস্থা দেখে নিজেই হতভম্ব। রায়ান তারাতারি সেখান থেকে উঠে চলে আসলো। ও সোজা বাসার দিকে গেলো। এখন আর অন্য কিছুই ভালো লাগছে না। তাই সোজা বাসায় আসলো। রায়ানকে এমন সময় বাসায় দেখে বাসার সবাই বেশ অবাক। নুরজাহান বেগম বেশ কয়েকবার কারন জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু রায়ান কিছুই বলেনি। ও সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। রুমে এসে সাওয়ার নিতে চলে গেলো। রায়ান কিচ্ছুই ভাবতে পারছে না। এ কেমন অনুভুতি? কে এই মেয়ে? যার দিকে তাকানোতেই ওর এই অবস্থা? কই ও তো প্রথমবার কোন মেয়ের দিকে তাকায় নি। এর আগেও তো অনেক মেয়ের দিকে চোখ পরেছে। কিন্তু তখন তো এমন লাগে নি। তাহলে আজ কেন? কি আছে এই মেয়ের মাঝে? কে এই অপরিচিতা?
রায়ান সাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে। কিন্তু কিছু একটা ভেবে নিজের রুম থেকে বের হয়ে নুরজাহান বেগমের রুমের দিকে যাচ্ছে। রুমের সামনে এসে রায়ান দরজায় টোকা দিয়ে বলল,
“আম্মু আসবো?”
“হুম। আয় বাবা”
রায়ান এসেই সঙ্গে সঙ্গে মায়ের উরুতে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। ছোটবেলা রায়ানের মন খারাপ থাকলে বা কিছু নিয়ে চিন্তিত থাকলে এভাবে এসে মায়ের উরুতে শুয়ে পড়তো। আজ অনেক বছর পর রায়ান একই কাজ করছে। যা দেখে এবার নুরজাহান বেগম আগের মতন করে বলেন,
“কি হয়েছে বাবা? কে কি বলেছে”
মায়ের কথায় রায়ান হেসে দিয়ে বলে,
“নাহ মা। কেও কিচ্ছু বলে নি। এমনিতেই ভালো লাগছিলো না তাই আসলাম”
“মায়ের কাছে লুকাতে নেই বাবা”
“কিচ্ছু লুকাচ্ছি না আম্মু”
নুরজাহান বেগম আর কিছু বললেন না। ছেলে যখন বলতে চাচ্ছে না, তখন তাকে জোর করে লাভ নেই। তাই তিনি ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকেন। প্রায় অনেক্ষন এভাবে থাকার পর রায়ান উঠে নিজের রুমে চলে যায় আর ঘুমিয়ে পরে। কিছু ভালো না লাগলে ঘুমানোই উত্তম উপায় বলে রায়ানের ধারনা।
এখন সকাল সাড়ে ৫ টা। রায়ানের ঘুম ভেঙ্গেছে কিচ্ছুক্ষণ হয়েছে। চোখ ডলে ডলে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখল, মাত্র সূর্যদ্বয় হচ্ছে। রায়ান সেই সুন্দর সূর্যদ্বয়ের দিকে একটা ব্যাকা হাসি দিলো। আর বলল,
“আমার অপরিচিতার মিষ্টি হাসিটা তোমার চেয়েও সুন্দর, অনেক সুন্দর”
রায়ান তার অপরিচিতার হাসির সাথে আর কিছুর তুলনা করতে পারবে না। কি জাদু করেছে এই অপরিচিতা! স্বপ্নেও সেই হাসি, চোখ বন্ধ করলেও সেই হাসি আবার চোখ খুললেও সেই হাসি। রায়ান তো এখন পাগলই হয়ে যাবে। রায়ান এখন নিজে থেকেই মিটিমিটি হাসে। রায়ান কোনোদিনই প্রথম দেখায় ভালবাসার বিষয়টা বিশ্বাস করত না, আর এখনও করে না। তবে এখন ওর মনে হয়, প্রথম দেখায় ভালোবাসা না হলেও ভালোলাগা হওয়া সম্ভব।
রায়ান উঠে সোজা গেলো সেলুনে। সেখানে গিয়ে আগে চুল আর দাড়ি গুলো ছোট করে নিলো। কাল অপরিচিতা তাকে ওইভাবেই দেখেছে! কি লজ্জার বিষয় এটা! রায়ান চুল কেটে সোজা বাসায় আসে। কিন্তু বাসায় প্রবেশ করার সাথেই সাথেই ওর রিয়ার সাথে দেখা হয়। রিয়া ওকে দেখেই ওর দিকে দৌড়ে আসে আর বলে,
“কিরে ভাইয়া! তুই তো পুরাই চেঞ্জ! কিরে তোর এই লুক এতদিন কই ছিল? বাপরে আমার ভাই এতো সুন্দর আমি আগে জানতাম না। অবশ্য তুই আমারি ভাই, সুন্দর তো তোর হওয়ারই কথা”
“ডং করা বাদ দিয়ে যা রেডি হ”
“কেন!”
“ঘুরতে যাবো”
“কিহহহহহহ!!!”
রায়ানের কথায় রিয়া চিল্লিয়ে উঠে। ও যেন আকাশ থেকে পরেছে। রায়ানের কথা ওর বিশ্বাস হচ্ছে না। রিয়া এবার “আম্মু” বলে চিল্লাতে চিল্লাতে দৌড়ে চলে গেলো ভেতরে। রায়ান ওর এমন আচারনে মিটিমিটি হাসছে। রায়ান জানে না কেন ও রিয়াকে নিয়ে যাচ্ছে। শুধু বলতে ইচ্ছা করলো তাই বলল। এখন যেহেতু বলেছে তাই নিয়ে তো যেতে হবে।
রায়ান রিয়াকে নিয়ে মেলায় এসেছে ঘুরতে। রিয়া একটু পর পর এটা ওটা দেখছে আর কিনতে চাচ্ছে। রায়ান কয়েকটা কিনে দিচ্ছে আবার কয়েকটা কিনে দিচ্ছে না। কিন্তু রিয়া একটু পর পর একেক দোকানে ঢুকে পরছে আর জিনিসপত্র দেখছে। রায়ান ভাবছে,
“এর জন্যই মেয়েদের নিয়ে এসব মেলায় আসতে নেই। বিশেষ করে আমার মতন অধৈর্য পুরুষের তো কোনোদিন না। আমি আমার বউরে এসব মেলায় নিয়েই আসবো না। কারন আমার এতো ধৈর্য নেই”
রায়ানের ভাবনার মাঝেই কেও একজন ওর কাঠে ধাক্কা দিয়ে ওকে ডাকে,
“কিরে রায়ান! তুই আবার কবে থেকে এইসব মেলায় আসা শুরু করলি?”
নিরবের কথায় রায়ান একবার ওর দিকে তাকায়। তারপর আবার দোকানের দিকে তাকিয়ে জোরে বলে,
“এইই রিয়াআ! তারাতারি আয়। অন্যদিকে যাবো”
রায়ানের ডাকে রিয়া তারাতারি দোকান থেকে বের হয়ে আসে। এসেই রায়ানের পাসে নিরবকে দেখে ভ্রু কুচকিয়ে ফেলে। রিয়া গিয়ে রায়ানের পাসে দাড়ায়। রিয়া রায়ানের কাথ পর্যন্ত হওয়ায় সে রায়ানের কলার ধরে রায়ানের কান নিচে আনে। তারপর রায়ানের কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
“এই বান্দরটা এখানে কি করে?”
“কানে কানেই যখন বলবেন তখন আরেকটু আসতে বলতেন। তাহলে তো আমি আর শুনতাম না”
নিরবের কথায় রিয়া ওর দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কাটে। রিয়ার এমন কাজে নিরব মিটিমিটি হাসে।
“ওহ! তুই প্রিন্সেসকে নিয়ে ঘুরতে আসছোস?”
“এইযে! আমি আপনাকে বলছি না? আমি একজন সাধারন মেয়ে। আমাকে প্রিন্সেস ডাকবেন না। আমার কাছে এসব অস্বাভাবিক লাগে”
“কিন্তু আমার তো খুব স্বাভাবিক লাগে। আর তুমি তো আমার প্রিন্সের মতন বন্ধুর বোন। তার মানে তো তুমি প্রিন্সেস হলে। তাই না?”
ওদের কথায় রায়ান এবার সামনের দিকে হেঁটে যেতে যেতে বলে,
“ভাই! ওরে জালাইস না তো। পরে দেখবি কান্নাকাটি শুরু করে দিছে”
“ভাইয়াআআআ!!”
রিয়া রায়ানের পিছন পিছন ছুটল। আর নিরব রিয়ার পিছন পিছন।