সায়মা ইসলাম
সায়মা ইসলাম

প্রকাশিত: শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

তেইশান্তে প্রেমালোক | এক অচেনা নম্বর থেকে ফোন

চলমান

তেইশান্তে প্রেমালোক | সিজন ১ | পর্ব - ২

৫৪ ভিউ
০ মন্তব্য
১ মিনিট

অতিরিক্ত চিন্তায় রায়ানের মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। তামাটে চেহারায় অস্থিরতা স্পষ্ট। রায়ান ওর কেবিনের এক পাশের বড় সেলফটার সামনে দারিয়ে আছে। পুরো রুমটার অর্ধেক জুরে দারিয়ে আছে সেলফটা। সেলফটাতে বিভিন্ন মোটামোটা বই আর ফাইল রাখা। একপাশটায় ধুলো জমে গেছে। রায়ান ওইপাশটায় গেলো। পুরো পাশটা এক নজর দেখে নিলো। হঠাৎ চোখ আটকাল একটা ভীষণ মোটা বইয়ে। রায়ান সঙ্গে সঙ্গে মাকড়সার জাল পেরিয়ে বইটা হাতে নিলো। এই “মহাকালের ২৩” নামক বইটা থেকে রায়ান অনেক তথ্য পেয়েছে। মুলত এই ২৩ সংখ্যাটা যখন কোন মানুষের উপ্র ভর করে তখন মানুষটা তার আশেপাশে সব কিছুতেই ২৩ দেখতে পায়। আর তার মনে হয় ২৩ তাকে ঘিরে ফেলেছে। তাই সে নিজেকেই নিজে শেষ করে দেয়। রায়ান এসব লেখা পরে বইটা শব্দ করে বন্ধ করে ফেরল আর রাগি চোখে বইটার দিকে তাকিয়ে বলল,

“আমি যেটা সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি তা হলো কুসংস্কার। আর এই কেসটাই আস্ত একটা কুসংস্কারের ঝুলি”

রায়ানের বেশ রাগ হল এবস বিষয়ে। ও বইটা আবার সেলফ এ রেখে গিয়ে চেয়ারে বসলো। কিন্তু ওর আর শান্তি হল না। পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো। রায়ানের বেশ বিরক্ত লাগলো। তাই ও ফোন টা বাজতে দিয়ে হেলান দিলো চেয়ারে। কিন্তু এই ফোন হার মানার পাত্র নয়। একবার শেষ তো দুইবার আবার তিনবার বাজতেই থাকল। রায়ান এবার বাধ্য হয়ে ফোনটা হাতে নিলো। কিন্তু রায়ান ফোনটা হাতে নিলো ফোনটা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। ও এখন কোন ভাবেই কোন ফোন রিসিভ করবে না। কিন্তু বেচারা ফোনটা হাতে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফোন করা নাম্বারটা দেখে অবাক হল। আর ফোনটা রিসিভ করতেও বাধ্য হল। কেননা “২৩২৩২৩” নাম্বার থেকে কল আসছিল। রায়ান কলটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ফোনের ওপাশ থেকে ভয়ার্ত কণ্ঠ ভেসে আসলো,

“রায়ান তুমি এখানেই থেমে যাও। কেননা এখন তোমার সামনে দুইটাই রাস্তা, হয়তো মরো নয়তো হারো। তোমার করা পরের পদক্ষেপ তোমার জিবনের সিদ্ধান্ত নেবে। বেঁচে থাকতে চাইলে স্বাভাবিক জিবন শুরু কর। নয়তো অস্বাভাবিক মৃত্যু সহ্য করতে হবে”

রায়ান প্রতিউত্তরে কিছু বলবে তার আগেই টিং শব্দ এলো। অর্থাৎ কল কেটে দেওয়া হয়েছে। রায়ান ফোনটা কান থেকে মুখের সামনে এনলো। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ব্যাকা হাসি দিয়ে বলল,

“থাংক ইউ। আমি ভাবিনি তুমি নিজে থেকে আমার কাছে ধরা দিবে”

আজ টানা তিন দিন হয়েছে রায়ান অফিসে আছে। সে ফোন বন্ধ করে অফিসের এক রুমে পরে ছিল। পরে ছিল বললে ভুল হবে, রায়ান টানা তিন দিন কেসটা নিয়ে কাজ করেছে । এই তিন দিন রায়ান শুধু তথ্য খুঁজেছে। তবে রায়ান বেশ অবাক হয়েছে এটা জেনে যে, অনেক আগের বইয়ে এমনকি ইতিহাসেও ২৩ নিয়ে অনেক কিছুর কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু রায়ানের বিশ্বাস, ২৩ শুধুমাত্র একটা স্বাভাবিক সংখ্যা। নিশ্চয়ই এর পিছে অন্য কোন চক্রান্ত আছে।

রাতের অন্ধকার রাস্তায় কালো রঙের গাড়িটা তার আপন গতিতে ছুটছে। রায়ান আজ টানা তিন দিন পর নিজের বাড়ির দিকে যাচ্ছে। বাড়ির বাইরে এটা প্রথমবার না ওর জন্য, বরং এর আগেও এরকম অনেক দিন ও বাড়ির বাইরে থেকেছে। মুলত বড় কোন কেস আসলেই রায়ান অফিসে থাকে কয়েকদিন। রায়ান ওর গাড়িতে করে বাসার দিকে যাচ্ছিলো। কিন্তু সে ইচ্ছা করেই আজ আসল রাস্তাটা দিয়ে না এসে অন্য রাস্তায় এসেছে। মুলত ওর আজ একটু রাস্তায় হাঁটতে ইচ্ছা করছে। তাই রায়ান রাতের অন্ধকারে এক নির্জন রাস্তায় গাড়ি থামালো। গাড়ি এক সাইডে রেখে ও রাস্তায় নামলো। রাস্তাটা একদম ফাকা। ব্যাঙ ডাকার আওয়াজ স্পষ্ট। রাস্তার দুপাশেই মাঠ। দূর দূরান্তে কোন চায়ের দোকানও দেখা যাচ্ছে না। তবে রাস্তাটার একপাশ দিয়ে ল্যাম্পপোস্ট লাগানো আছে। রায়ান সেই ল্যাম্পপোস্টের নিচ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতেই নিজের পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করলো। পরপর আরেকটা দিয়াশলাইয়ের বক্স বের করে সিগারেটটা জ্বালিয়ে নিলো। রায়ান রাস্তার এক জায়গায় দাঁড়ালো। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। রায়ানের কাছে এখন আর এই যান্ত্রিক জিবন ভাললাগে না। ওর কাছে সব আছে। কিন্তু আবার কিছুই নেই। কেননা ওর সব থাকলেও আনন্দটা নেই। ওর সেটা নেই যেটা ওকে বাঁচার আশা দিবে। রায়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল, কিন্তু হঠাৎ ওর মনে হল কেও ওকে ডাকছে। রায়ান বুঝল কোন পরিচিত কেও ওকে অনেক দূর থেকে ডাকছে। কিন্তু রায়ান সেদিকে পাত্তা দিলো না। রায়ান পাত্তা না দেওয়ায় যেন এবার লোকটা আরও জোরে ডাকা শুরু করলো। কিন্তু রায়ান তাও তাকালো না। এবার লোকটা এসে রায়ানের কাঠে হাত রাখল আর বলল,

“কিরে রায়ান! তুই এখানে কি করস? আর তোর ফোন বন্ধ কেন? কই ছিলি তুই এই কয়দিন? কিরে উত্তর দে”

রায়ান ওর কোন কথার উত্তর না দিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করে। রায়ানকয়ে এভাবে সামনে যেতে দেখে আবার নীরবও ওর পিছে পিছে যায়। রায়ানের পাসে পাসে হাঁটতে হাঁটতে বলে,

“ভাই! তুই এমন কেন? তোর কি আমাদের কথা একটুও মনে পরে না? আমার কথা বাদ দিলাম, তোর পরিবার? তাদের কথা তোর মনে পরে না? তুই জানিস? তোর অনুপুস্থিতিতে তোর পরিবার তকে নিয়ে কত চিন্তা করে? আর আমি? আমি তো তোর ছোট্ট কালের ফ্রেন্ড। আমার সাথে তো যোগাযোগ করা যায়। নাকি তুই আমারে ফ্রেন্ডই মানিস না”

“না! মানতে পারি না”

“মানেহ! কেন?”

“কারন তুই আমার ফ্রেন্ডের চেয়ে বেশি আমার বউয়ের মতন আচারন করস। ভাই আমার বউও আমারে এত কথা শোনানোর সাহস পাইব না”

রায়ানের কথায় নিরব এবার দৌড়ে রায়ানের সামনে এসে দাড়ায় আর কোমরে হাত রেখে বলে,

“ভালো কথা মনে করাইছোস দোস্ত! তোকে আর ছেঁকা খাওয়াদের মতন দেখতে আমার ভালো লাগছে না। এর চেয়ে ভালো একটা বিয়ে করে ফেল। দেখবি লাইফটাই চেঞ্জ হয়ে যাবে”

নিরবের কথায় রায়ান রেগে কিছু বলবে এর আগেই নিরব নিজের কপালে থাপ্পড় দিয়ে আবারো বলে,

“হায়রে আমিই বা কি বলতাছি! তোর চেহারা দেখলে তো মেয়েরা জুতা খুইল্লা পালাবে। আর তোর সাথে বিয়ে তো দুরের কথা”

“কেন? আমার কি নাই?”

“যা ছিল সবি তো কালা কালা চুল দিয়া ঢাইকা গেছে। এভাবে চলতে থাকলে দেখবি কয়েকদিন পর কালা কালা চুলগুলা সাদা সাদা হয়ে গেছে”

নিরবের এইসব উল্টাপাল্টা কথায় রায়ান এবার বেশ বিরক্ত হয়। তাই ও নিরবকে পাশ কাটিয়ে সামনের দিকে যাওয়া শুরু করে। রায়ানকে যেতে দেখে নিরব এবার চিল্লিয়ে বলে,

“এইযে ভাই, সত্যি বলছি সময় পাইলে আয়নায় একটু নিজেরে দেখিয়েন”

কিন্তু রায়ান এবারেও কোন কথা বলে না। বরং সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। রায়ানকে দেখে নিরব এবার কিছু একটা ভেবে আবারো দৌড়ে আসলো আর বলল,

“দোস্ত! আমি ১১ বছর আগের রায়ানকে খুব মিস করি রে… কই সেই রায়ান? ওই দোস্ত… যা হইছে সব ভুলে যা প্লিজ! আবার আগের মতন হয়ে যা! তুই তো বলস যে, তুই ওরে ভুলে গেছস। তাহলে কেন এমন হয়ে গেছোস? আমি আগের সেই হাসিখুশি আর স্বাভাবিক রায়ানকে চাই…”