“শালা বললে কেন?”
“একশো বার বলব। এভাবে গাড়িতে তুললেন কেন?”
“তো কীভাবে তুলব? কোলে করে?”
“আপনার কোলে চড়তে আমার বয়েই গেছ।”
তুর্য আর কথা না বলে কামড় দেওয়া হাত ডলতে থাকে। আর একটু পরপর রেগে তাকায় পরীর দিকে। পরী সেটা খেয়াল করে বলে,
“ওভাবে তাকান কেন বারবার?”
“ইচ্ছে করছে তোমায় গিলে খেয়ে ফেলতে।”
“সেই ইচ্ছেতে কচুর ডগা!”
তুর্য ধমক দিয়ে বলে,
“চুপ করো অসভ্য মেয়ে।”
পরী এবার তুর্যর মুখোমুখি বসে আঙুল তুলে বলে,
“এই আপনি আমায় অসভ্য বললেন কেন?”
তুর্য পকেট থেকে ফোন বের করে ফ্লাশ অন করে হাতের দিকে তাক করে বলে,
“এই দেখো কামড় দিয়ে কী করেছ! দাঁতের দাগ বসে গেছে।”
পরী চোখ পিটপিট করে বলে,
“ওহ আচ্ছা, আচ্ছা! আমি হাতে কামড় দিয়েছি বলে এখন অসভ্য হয়ে গেলাম না? আর নিজে যে ডাকাতের মতো আমায় গাড়িতে তুললেন তার বেলায়?”
“ভুল তো এখানেই। উচিত ছিল পুরো রাস্তা তোমায় হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে নেওয়া।”
পরী ব্যাঙ্গ করে বলে,
“ওরে বাবারে! উনি আমায় হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে নিতেন আর আমিও যেন নাচতে নাচতে উনার সাথে হেঁটে যেতাম।”
এরপর চোখমুখ শক্ত করে বলে,
“শুনেন মিস্টার, এখানে ফল্ট আমার নয়। আপনার। আপনি পাকনামি করে কেন সবাইকে পাঠিয়ে দিলেন?”
“ঐ পুলিশ ব্যাটার সাথে দাঁত কেলিয়ে যেন আর না হাসো তা বলার জন্য।”
“আমার দাঁত, আমি যখন খুশি যার সাথে খুশি সেই দাঁত কেলিয়ে হাসব। তাতে আপনার কী?”
তুর্য পরীর দু’গাল চেপে ধরে বলে,
“যদি এই দাঁতই না থাকে?”
পরী ঝাটকা মেরে হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,
“পারলে ছুঁয়ে দেখিয়েন।”
“চ্যালেঞ্জ করছ?”
পরী আড়চোখে একবার তাকিয়ে বলে,
“না।”
তুর্য মুখ টিপে টিপে হাসে।
.
বাড়িতে পৌঁছে শাড়ি গয়না খুলে ওয়াশরুমে চলে যায় পরী। সারাদিনের ঘোরাফেরায় অস্থির লাগছে এখন। গোসল করার পর শরীরের সাথে মনটাও ফ্রেশ হয়ে গেছে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে কাজিনরা একেকটা এদিক ওদিক হয়ে এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। কয়েকজন চেয়ারে, সোফায় গা এলিয়ে দিয়েছে। সবাইকেই ভীষণ টায়ার্ড দেখাচ্ছে। টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে পরী বলে,
“সবাই চেঞ্জ করে গোসল করে নাও। তাহলে ভালো লাগবে।”
সবার মধ্য থেকে মিলি বলল,
“হ্যাঁ, তাই করতে হবে।”
পরী আর কথা না বাড়িয়ে ড্রয়িংরুমে চলে যায়। সেখানেও মানুষজন গিজগিজ করছে। পরীর দুচোখ খুঁজে বেড়াচ্ছে রেহেনা বেগমকে। কিন্তু তার কোনো হুদিশই পাওয়া যাচ্ছে না। বড় চাচি পরীকে দেখে বলেন,
“তুই এই শীতের মধ্যে গোসল করলি?”
“অস্থির লাগছিল চাচি। তাই গোসল করে নিয়েছি।”
“ভালোই করেছিস। আমায় একটু গরম পানি করে দিবি মা? আমিও তাহলে গোসলটা করে নিতাম।”
“হ্যাঁ দিচ্ছি।”
রান্নাঘরে গিয়ে রেহেনা বেগমের দেখা মেলে। সকলের জন্য চা বানাচ্ছেন। পরী চুলায় গরম পানি বসিয়ে বলে,
“তুমি এখানে আর আমি তোমায় খুঁজছি।”
তিনি ব্যস্তস্বরে বলেন,
“কেন? কী হয়েছে?”
“কিছু হয়নি। এমনিই খুঁজছিলাম।”
তিনি পরীর দিকে একবার তাকিয়ে মুচকি হেসে বলেন,
“এই স্বভাবটা কি আর বাদ দিবি না?”
পরী দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে নোখ খুঁটতে খুঁটতে বলে,
“কোন স্বভাব?”
“এইযে বাড়িতে এসে আমায় না দেখলেই চোখে হারাস।”
পরী এবার রেহেনা বেগমকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“না। কখনো যাবে না।”
“আরে ছাড়! চা পড়ে যাবে।”
“স্যরি।” বলে, পরী আবার আগের জায়গায় দাঁড়ায়। রেহেনা বেগম বলেন,
“কেমন ইনজয় করলি ঐ বাড়িতে?”
“হুম ভালোই।”
চায়ের ট্রে পরীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে তিনি বলেন,
“ড্রয়িংরুমে যেই মুরুব্বিরা আছে এটা উনাদের দিয়ে আয়।”
“আচ্ছা।”
“শোন।”
“বলো।”
“তোর আর আসতে হবে না। তোর ছোট চাচিকে পাঠিয়ে দিস।”
“ঠিকাছে। পানি গরম হলে বড় চাচিকে ডাক দিও। গোসল করবে।”
“ঠিকাছে।”
পরী ছোট চাচিকে রান্নাঘরে যেতে বলে।ড্রয়িংরুমে যারা ছিল তাদের সবাইকে চা দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। এখনো সবাই এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে দেখে ফোন নিয়ে পরী ছাদে চলে যায়। বিধিবাম! ছাদও ফাঁকা নেই। প্রিয়মের ক’জন বন্ধু ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। অগত্যা পরী নেমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে ওরা পরীকে থাকতে বলে নিচে চলে যায়। গায়ের শাল টান টান করে পেঁচিয়ে গুটিশুটি হয়ে একটা চেয়ারে বসে। ভেজা চুলগুলো বেয়ে পানি পড়ছে। এতে শীতটা আরো বেশিই লাগছে। ফোনের প্লে লিস্টে গিয়ে গান অন করে। তখনই তুর্যর কথা মনে পড়ে। তুর্যর অদ্ভুত সব আচরণ আর কথা মনে পড়ে ভীষণ হাসি পায়। একা একাই হাসে পরী। এখানে কেউ থাকলে নির্ঘাত ভাবত পরী পাগল হয়ে গেছে। আর নয়তো ভূতে ধরেছে। ডাটা অন করে ফেসবুকে ঢুকে। মনে পড়ে যায় সেদিন তুর্য ফেসবুক নিয়ে কিছু বলেছিল। তাই কিছুক্ষণ নোটিফিকেশন চেক করে। কিছুই পায়নি। পুরনো রিকোয়েস্ট চেক করেও কোনো পরিচিত রিকোয়েস্ট পাওয়া গেল না। তখন মনে পড়ল ম্যাসেজ রিকোয়েস্ট চেক করা বাকি আছে। আর ম্যাসেজ রিকোয়েস্ট চেক করেই একটা আননোন আইডি থেকে ম্যাসেজ এসেছে দেখল। ম্যাসেজ রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে দেখল কোনো ম্যাসেজ নয়। একটা ভয়েস। পরী ফোনের গান বন্ধ করে ভয়েস ম্যাসেজ চালু করে।
“Tere Bin Jeena Hai Aise
Dil Dhadka Na Ho Jaise
Yeh Ishq Hai Kya Duniya Jo
Hum Samjhaaye Kaise
Aab Dilon Ki Rahon Mein
Hum Kuch Aisa Kar Jayein
Ek Duje Se Bichhde Toh
Saans Liye Bin Mar Jayein
O Khuda…
Bata De Kya Lakreenon
Mein Likha
Hamne Toh,
Hamne Toh Bas Ishq Hai Kiya
O Khuda,
Bata De Kya Lakreenon
Mein Likha
Hamne Toh,
Hamne Toh Bas Ishq Hai Kiya.”
মুগ্ধ হয়ে গানটা শুনছে পরী। একবার নয়, এই নিয়ে আট বার হয়ে গেছে এইটুকু যে শুনেছে। প্রথমেই বুঝে ফেলেছে ভয়েস শুনে এই মানুষটা আর কেউ নয়। তুর্য! তবে নিজের উপর রাগ লাগছে খুব। কেন এতদিন রিকোয়েস্ট ম্যাসেজ চেক করেনি ভেবে। তবে গানটা শুনে মনের ভেতর অন্যরকম আনন্দ হচ্ছে। এই অনুভূতিটা ঠিক বোঝানো যায় না। শুধু অনুভব করা যায়।
রাতে শোয়ার সময় বাঁধল বিপত্তি। শুয়ে শুয়ে তখনও পরী গানটা শুনেই যাচ্ছে। পরীর পাশে শুয়েছিল মিলি। মিলি ধমক দিয়ে বলে,
“হয়েছে কী তোর? কখন থেকে দেখছি এই একই গান শুনে যাচ্ছিস। প্রেমে-ট্রেমে পড়লি নাকি?”
পরী কাৎ হয়ে বালিশের উপর হাত ভর দেয়। সেই হাতে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বেসুরো গলায় বলে,
“শোনো গো মিলি আপা, প্রেমে পড়েছি আমি।”
মিলি হেসে পিঞ্চ মেরে বলে,
“কার প্রেমে পড়লি রে? নিশ্চয়ই তোর ঐ পুলিশ বেয়াইর প্রেমে?”
“ধুর! ঐ ব্যাটার গার্লফ্রেন্ড আছে। তাছাড়া আমি আরো আগেই অন্যজনের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে বসে আছি।”
“তাই নাকি? তাহলে তো কাকিকে বলতে হবে। প্রিয়ম ভাইয়ার পর যেন তোরও বিয়েটা হয়ে যায়।”
পরী লজ্জা পেয়ে বলে,
“তুমিও না!”
সবাই হেসে ফেলে। বড় আপা বলে,
“হয়েছে পরে শুনব একদিন তোর প্রেমের কাহিনী। এখন ঘুমিয়ে পড়। কাল সকাল সকাল উঠতে হবে আবার।”
কীসের ঘুম, কীসের কী? পরীর তো এখন প্রেমে পেয়েছে। ঘুম যে আসবে না। হেডফোন কানে গুঁজে তুর্যর গাওয়া গানটা শুনছে। যতক্ষণ না ঘুম আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত শুনতেই থাকবে। বিকট শব্দে পরী ধড়ফড়িয়ে লাফিয়ে বসে পড়ে আর কান থেকে ছিটকে সরিয়ে ফেলে হেডফোন। মিলি বলে,
“কী হলো আবার তোর?”
“ধুর! এতরাতে কে ফোন দিল। ফোনের রিংটোনে কানের পোকা নড়ে গেছে।”
ফোনটা বিছানার ওপর উল্টো করে রাখা ছিল। ফোন হাতে নিয়ে দেখে তুর্যর কল। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ আওয়াজ হচ্ছে। খুশিগুলো পেটে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। কী আশ্চর্য! এর আগেও তো তুর্যর সাথে অসংখ্যবার ফোনে কথা হয়েছে তখন তো এমন লাগেনি। তাহলে এখন এমন হচ্ছে কেন? নতুন করে প্রেমে পড়ার জন্য নাকি! পরী ফোন রিসিভ করে বারান্দায় চলে যায়। গায়ে শীতের কোনো জামা-কাপড় নেই। ঠান্ডা বাতাস পরীর শরীরকে জেঁকে ধরলেও সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই পরীর। পরীর ধ্যানজ্ঞান শুধু এখন ফোনের ওপাশে থাকা তুর্যর ওপর। তুর্য বলে,
“কী করছ শাট আপ রাণী?”
অনেকদিন বাদে তুর্যর মুখে শাট আপ রাণী নাম শুনে পরী নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসে। গলা দিয়ে কোনো কথাও বের হচ্ছে না। তুর্য নিজেই বলে,
“ঘুমিয়ে পড়লে নাকি? লাইনে আছো?”
পরী ছোট্ট করে বলে,
“হু।”
“কী হু? কথা বলছ না কেন?”
“শুনছি।”
“কী শুনছ?”
“আপনি যা বলছেন।”
“আমি তো কিছুই বলিনি।”
“তাহলে আমিও কিছু শুনিনি।”
দুজনই তখন একসঙ্গে হেসে উঠে। পরী বলে,
“কী করছেন?”
“কী আর করব? শুয়ে আছি। তুমি কী করছ?”
“আমি তো ব্যালকোনিতে।”
“এই ঠান্ডার মধ্যে ব্যালকোনিতে? শীত করছে না?”
“উঁহু।”
“শীত তো অবশ্যই করছে। যাও রুমে যাও।”
“রুমে কথা বলা যাবে না। কাজিনরা আছে।”
তুর্য কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,
“ওয়েট, ওয়েট! কাজিনরা রুমে বলে তুমি এই শীতের মধ্যেও ব্যালকোনিতে এসে কথা বলছ। তোমার কাছে তো আমার কোনো প্রায়োরিটি নেই। তাহলে শুধুমাত্র আমার জন্য এত কষ্ট করছ? তুমি তো চাইলে কল ইগনোরও করতে পারতে। ব্যাপার কী বলো তো হু?”
“ব্যাপার কী আবার? কিছুই না।”
“হু বুঝি বুঝি! প্রেমে পড়েছ তাই না?”
“ধুর!” বলেই, পরী কল কেটে দেয়। তুর্য একা একাই হাসে। আবার কল করে কিন্তু পরী কল কেটে দেয়। ফোন রিসিভ করছে না দেখে তুর্য টেক্সট করে,
“লজ্জাবতী ঘুমিয়ে পড়।”
পরী আর সময় বিলম্ব না করে তুর্যর গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ে।
———————-
সকাল দশটা নাগাদ প্রান্ত, শাহানা বেগম, আমজাদ আহমেদ, শান্ত তুর্যদের বাসায় এসেছে। তিথি আর তুর্য তখন রেডি হচ্ছিল প্রিয়মের বিয়েতে যাওয়ার জন্য।
তুর্যর বাবা-মা দুজনই ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হোন। বেশি ভনিতা না করে শাহানা বেগম সরাসরিই প্রান্তর সাথে তিথির বিয়ের কথা বলেন। প্রান্তকে তুর্যর পরিবার অনেক আগে থেকেই চেনে তাই তারাও আর কোনো আপত্তি করে না। প্রান্ত উঠে গিয়ে তিথির রুমের সামনে যায়।দরজায় নক করে বলে,
“আসব?”
তিথি তখন চুরি পরছিল। প্রান্তকে দেখে মৃদু হেসে বলে,
“আসো।”
প্রান্ত ভেতরে গিয়ে বলে,
“তুমি যে বিয়ে করবে আমায় বলোনি তো।”
তিথি অবাক হয়ে বলে,
“মানে?”
“মানে এটাই যে তোমায় দেখতে ছেলেপক্ষরা এসেছে। তুমি রাজি বলেই তো এসেছে তাই না? আপন না ভাবো আমায় অন্তত একটাবার জানাতে তো পারতে।”
“কীসব আবোল-তাবোল বলছ?”
“আবোল-তাবোল নয়। সত্যিই বলছি। বিশ্বাস না হলে ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখো।”
তিথি উত্তেজিত হয়ে বলে,
“বাড়ির সবাই এত বড় সাহস পায় কোথায়? আমায় না জানিয়েই আমার বিয়ে ঠিক করা!”
তিথি রেগেমেগে ড্রয়িংরুমে যায় কয়েকখানা কথা শুনিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রান্তর পরিবারকে দেখে বিস্ময়ের শেষ নেই তিথির। তিথিকে দেখে তুর্য এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলে,
“নে, আল্লাহ্ তোর মনের চাওয়া পূরণ করে দিয়েছে।”
তিথি অশ্রুশিক্ত চোখে তুর্যর দিকে তাকিয়ে বলে,
“ভাইয়া! এসব সত্যি?”
তুর্যকে তিথির গালে হাত বু্লিয়ে বলে,
“হ্যাঁ পাগলি।”
তিথিকে দেখে শাহানা বেগম কাছে ডাকেন। তুর্য ইশারায় যেতে বলে। তিথি গিয়ে শাহানা বেগমের পাশে বসে। শাহানা বেগম মুগ্ধ নয়নে তিথিকে দেখে কপালে চুমু এঁকে দেন। নিজের রুমে যাওয়ার অনুমতি পেয়ে সেখান থেকে চলে আসে তিথি। প্রান্ত তখনও তিথির রুমে। জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। তিথির উপস্থিতি টের পেয়ে পেছনে তাকিয়ে বলে,
“বিশ্বাস হলো তো?”
তিথি দৌঁড়ে গিয়ে প্রান্তর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে বলে,
“ভালোবাসি প্রান্ত। এভাবে সারপ্রাইজ করে দেবে ভাবতেও পারিনি।”
প্রান্তও তিথিকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“এত ভালোবাসা অবহেলা করতে পারিনি আমি। ভালোবেসে ফেলেছি। তাই তো ঘরের বউ করে নিতে চলে এসেছি।”
তিথি কান্নার জন্য কথাই বলতে পারছে না। এ যে সুখের কান্না। প্রান্ত চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
“কান্না করে তো কাজলের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছ। আর কেঁদো না প্লিজ। এখন আমাদের বিয়ে বাড়িতে যেতে হবে তো।”
তিথি ক্রন্দনরত অবস্থাতেই হেসে বলে,
“হুম।”
.
তিথি, প্রান্ত, তুর্য আগে পরীদের বাসায় যায়। সেখান থেকেই কমিউনিটি সেন্টারে যাবে একসাথে। বাড়ির সামনেই অনেকের সাথে দেখা হয়ে যায়। কয়েক গাড়ি বেরিয়ে পড়েছে কমিউনিটি সেন্টারের দিকে। সাগর আর মেহনুবার সাথেও দেখা হয়ে যায়। কিন্তু তুর্যর চোখ তো খুঁজছে পরীকে। মেহু তুর্যকে চোখ মেরে বলে,
“কী ভাই? কারে খুঁজেন?”
তুর্য জিভ কেটে বলে,
“পাশেই বয়ফ্রেন্ড তোমার। আর তুমি আমায় চোখ মারছ?”
“ধ্যাত! তাতে কী? ভবিষ্যতে তো দুলাভাই হবেন। আমি হব আপনার শালিকা। আর শালি হলো আধিঘরওয়ালি।”
তুর্য দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
“তোমার বান্ধবী তো বোঝে না গো।”
“বুঝবে। আজ বুঝুক আর কাল। না বুঝে কোথায় যাবে?”
“দেখা যাক। পরী কোথায়?”
“ভেতরে আছে।”
“সবাই চলে এসেছে। ও এখনো আসছে না কেন?”
“এত চোখে হারান কেন আমার বান্ধবীকে? দাঁড়ান, ডেকে নিয়ে আসি।”
তুর্য ইনিয়েবিনিয়ে বলে,
“আমিও আসি?”
মেহু মুচকি মুচকি হেসে বলে,
“আসেন।”
তুর্য মেহনুবার সাথে পরীর রুমে যায়। কয়েকজন বাদে সবাই সেজেগুজে বেরিয়ে গেয়েছে। যারা এখনো বাসায় তারা সবাই ড্রয়িংরুমে। পরীর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে মেহনুবা ফিসফিস করে বলে,
“পরী একাই আছে ভেতরে। আপনি যান। আমি এখানে পাহাড়া দিচ্ছি।”
তুর্য হেসে বলে,
“তোমার মতো শালিকা যেন ঘরে ঘরে হয়।”
তুর্য ভেতরে গিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। পরী ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কানের দুল পরছে। পেছন থেকে পরীকে দেখেই তুর্যর বুক ধুকপুক করছে। লাল টকটকে জর্জেট শাড়ি পরেছে। আয়নায় শুধু চোখজোড়া দেখা যাচ্ছে। দীঘল কালো চুলগুলো পিঠজুড়ে ছড়িয়ে আছে। আয়নায় হুট করে তুর্যকে দেখে পরী চমকে পেছনে তাকায়। তুর্যর বুকে যেন তখন কেউ তীর ছুঁড়ে মারল। ভালোবাসার তীর! অপলক দৃষ্টিতে মুগ্ধ হয়ে পরীকে দেখছে। প্যান্টের পকেটে দু’হাত ঢুকিয়ে এক পা, দু পা করে পরীর দিকে এগিয়ে আসে। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আসক্ত গলায় বলে,
“আকাশের লাল পরী কি জমিনে নেমে এসেছে?”
পরী নিজেও মুগ্ধ হয়ে তুর্যকে দেখে। তবুও তুতলিয়ে তুতলিয়ে বলে,
“রুমে এসেছেন কেন?”
তুর্য অন্যদিকে তাকিয়ে হেসে পরীর দিকে তাকায়। মুচকি মুচকি হেসে বলে,
“কেন এসেছি জানি না। তবে এখন শুধু তোমাকেই দেখতে ইচ্ছে করছে।”
“আগে দেখেননি নাকি?”
“দেখেছি। হয়তো খেয়াল করিনি। এখন তো যতবার দেখি ততবারই ঘায়েল হয়ে যাই।”
বাইরে থেকে মেহু বলে,
“পরী তাড়াতাড়ি আয়। সবাই নিচে যাচ্ছে।”
পরী তুর্যকে বলে,
“চলেন।”
“উঁহু। আরেকটু থাকি। শুভদৃষ্টি করি দুজনে।”
“আপনি থাকেন। আমি যাই।”
“না। ভয় পাচ্ছ?”
“ভয় পাব কেন?”
“এই চোখে চোখ রাখলে যদি আবারও প্রেমে পড়ে যাও তাই!”
পরী বিরক্তস্বরে বলে,
“হুহ্।”
তারপর এগিয়ে যায় দরজার কাছে। দরজার সামনে গিয়ে থেমে যায়। ততক্ষণে তুর্যও পরীর যাওয়া দেখছিল। পরী তুর্যর দিকে তাকিয়ে বলে,
“কালও বলেছিলেন প্রেমে পড়ার কথা। আজও বললেন প্রেমে পড়ার কথা। আপনার ধারণা আমি আবার প্রেমে পড়ে যাব বা প্রেমে পড়ে গেছি। আমি বলি শুনুন,প্রেমে তো বহু আগেই পড়েছিলাম আমি। ভালোবেসেও ফেলেছি আমি। আর এখনও ভালোবাসি আমি।” বলে, চোখ মেরে হেসে দৌঁড়ে চলে যায়।
তুর্য অবাক হয়ে যায়। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায় পরীর এহেন কথা ও কাণ্ডে।