তুর্য অবাক চোখে পরীর দিকে তাকিয়ে আছে। তাতে পরীর চেহারার বিশেষ কোনো ভাবান্তর হলো না। দূর থেকে একটা বাস আসতে দেখে তুর্যকে বলে,
“সন্ধ্যায় রেডি থাকিয়েন। আর বাড়ির সামনে এসে কল দিয়েন।“
বাসটা সামনে এসে থামার পর পরী চলে যাওয়া ধরে। তুর্য তখন পরীর হাত চেপে ধরে বলে,
“তুমি কি আমার সাথে মজা করছ?”
পরী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
“মজা করতে যাব কেন?”
“তাহলে কী করে বলছ রিনির বিয়েতে যেতে? তুমি কি আমার অবস্থাটা বুঝতে পারছ না?”
পরী এদিক-সেদিক তাকিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে তুর্যর হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়ায়। বলে,
“শুনুন, আপনার প্রাক্তন যদি পারে বিয়ের দাওয়াত দিতে পারে তবে আপনি যেতে কেন পারবেন না? ভালো তো দুজনই দুজনকে বেসেছিলেন। তাহলে সে যদি এখন আপনায় ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে হ্যাপি থাকতে পারে তবে আপনি কেন চিল মুড নিয়ে তার বিয়েতে গিয়ে তাকে কংগ্রেস করতে পারবেন না?”
“তুমি বুঝতে..”
পুরো কথা বলার আগেই পরী থামিয়ে দিয়ে বলে,
“আমি বুঝতে চাচ্ছি না। আর শুনুন, আপনি পুরুষ মানুষ এটা ভুলে যাবেন না। প্রেমিকার বিরহে দেবদাস হওয়ার ইচ্ছে নাকি? এত ঢং বাদ দিয়ে রেডি হয়ে আসবেন সন্ধ্যায়।“
পরী আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত বাসে ওঠে। তুর্য ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে চলতি বাসটির দিকে।
.
বিকেলের দিকে কলেজ ছুটির পর মুখোমুখি হয়ে যায় তিথির। আবার কোন নাটক করবে কে জানে। তিথি সম্পূর্ণ পরীর কাছে আসতেই পরী বলে,
“দয়া করে আর কোনো সিনক্রিয়েট করিও না প্লিজ! অন্তত রাস্তায় তো না-ই।“
তিথি মেকি হেসে বলে,
“আমি কোনো সিনক্রিয়েট করতে আসিনি পরী।“
পরীর কপালে এবার সূক্ষ্ম ভাঁজ পড়ে। জিজ্ঞেস করে,
“তবে?”
“ক্ষমা চাইতে এসেছি।“
পরী তাচ্ছিল্য করে হেসে বলে,
“এটা কোন নাটকের শুরু তিথি? নিশ্চয়ই বড় কোনো পরিকল্পনা করে এসেছ?”
তিথি আচমকা পরীর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
“জানি তোমার বিশ্বাসের যোগ্য আমি নই। আমি যা করেছি এরপরও আমায় বিশ্বাস করা যায় না। কিন্তু সত্যিই আমি অনুতপ্ত।“
“দেখো তিথি, আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি। আমার কোনো রকম ঝামেলা পছন্দ না। তুমি প্রথম রাস্তায় এত বড় সিনক্রিয়েট করার পরও আমি তোমায় কিচ্ছু বলিনি। তোমার ওপর আমার রাগ সেদিন থেকেই যেদিন আমার অনুপস্থিতিতে তুমি বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর করেছ। তোমার মাকে দিয়ে আমার মাকে অপমান করিয়েছ।“
“আমি এজন্য আন্টির কাছে ক্ষমা চেয়েছি। তোমার বাড়িতে গিয়েছিলাম আমি।“
পরী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তিথি নিজেই বলে,
“তোমার সম্পর্কে আমার সব ভুল ধারণা পাল্টে গেছে পরী। তুমি যে একটা আদর্শ মায়ের সন্তান তা আমি আজ আন্টির সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছি।
ছোটবেলা থেকেই একগুঁয়ে, বদরাগী আমি। যা চেয়েছি তাই দিয়েছে বাবা-মা। তুর্য ভাইয়ার সাথে প্রান্ত যখন বাড়িতে আসতো তখন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম। একটা সময় আমাদের সম্পর্ক ভালো হলো। সেই ছোট থেকে আমি মনে মনে প্রান্তকে ভালোবাসি। যখন বুঝতে পারি প্রান্ত তোমায় ভালোবাসে তখন নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি আমি।
আমি স্যরি পরী, আমায় তুমি ক্ষমা করে দাও।“
“যেখানে মা তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে সেখানে তোমার ওপর আমার কোনো রাগ, অভিযোগ থাকতেই পারে না।
তবে একটা কথাই বলব, যাকে ভালোবাসো তাকে পাখির মতো মুক্ত আকাশে উড়তে দাও। যদি সেই পাখি তোমার মায়ায় জড়িয়ে থাকে তাহলে সে দিনশেষে তোমার কাছেই ফিরে আসবে।“
“আমি বুঝতে পেরেছি ভালোবাসা জোর করে হয় না। আমি আমার সম্পর্ক আগের মতোই রাখব প্রান্তর সাথে।“
পরী স্মিত হেসে বলে,
“আমি প্রান্তর লাইফে কখনো জড়াব না এতটুকু শিওর থাকতে পারো।“
তিথি হাসে। পরী বলে,
“চলো যাওয়া যাক।“
বাসায় গিয়ে ব্যাগটা টেবিলের ওপর রেখেই ওমনি বিছানায় শুয়ে পড়ে পরী। রেহেনা বেগম রাগ দেখিয়ে বলেন,
“আরে সারা দুনিয়ার ধুলাবালি নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লি!”
পরী উপুর হয়ে শুয়েছিল। মায়ের কথায় মাথাটা তুলে বলে,
“সারা দুনিয়ার ধুলাবালি নিয়ে আসছি?”
“তাছাড়া আর কী? যা কলেজের ইউনিফর্ম খুলে ফ্রেশ হয়ে আয়। তারপর খেতে দিচ্ছি।“
“আমার খিদে নেই।“
“তোর খিদে ছিল কবে?”
পরী এবার শোয়া থেকে উঠে বসে বলে,
“দুপুরেই তো টিফিন খেয়েছি মা।“
“দুপুরেরটা দুপুরে খেয়েছিস। এখন বিকেলেরটা খাবি।“
“মানে কী? মানুষ খায়ই তো তিনবেলা। সকালে, দুপুরে আর রাতে।“
“তুই চার বেলা খাবি। তোর যেই শরীর! একটু তো মোটাতাজা হ।“
“উহ্ মা! তুমি সবসময় আমার শরীর নিয়ে পিঞ্চ মেরে কথা বলো কেন?”
“তো যা সত্যি তাই তো বললাম। গলার হাড় কেমন বেরিয়ে গেছে দেখছিস?”
এই পর্যায়ে পরী একটু ভাব নিয়ে বলে,
“তুমি জানো না মা এমন হাড় ছেলেদের উইকনেস?”
রেহেনা বেগম চোখ বড় বড় করে বলেন,
“কী? উইকনেস?”
পরী ঠোঁট উল্টে দুই ভ্রু কিঞ্চিৎ উঁচু করে বলে,
“হুম।“
“আরে ধুর! কীসের উইকনেস? এগুলা হচ্ছে অপুষ্টির ফল।“
পরী কোমরে হাত দিয়ে বলে,
“তুমি বলতে চাইছ আমি অপুষ্টির শিকার?”
“আমার দুঃখ তো এই জায়গাতেই। তোরে আমি সারাদিনই বলি এটা খা, ওটা খা। খেয়ে একটু মোটা হ। আমার কথা তো শুনিস না। মানুষ দেখলেই বলে, ‘কী ভাবি? মেয়েকে খেতেটেতে দেন না নাকী?’ তখন ইচ্ছে করে তোকে তাদের বাড়িতে একদিন পাঠিয়ে তাদের দেখাই, খেতে দেই না নাকি আমার আম্মাজানে খায় না।“
পরী এবার ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,
“উফ! মা! তুমি যে কী দারুণ অভিনয় করো গো!”
“হয়েছে। এখন যা ফ্রেশ হয়ে আয়।“
“আচ্ছা।“
.
.
পরী ফ্রেশ হয়ে এসে মায়ের রুমে যায়। রেহেনা বেগম পরীকে দেখে বলেন,
“টেবিলে ভাত বেড়ে রেখেছি দেখ।“
“পরে খাব। আগে কয়টা শাড়ি দেখাও।“
“শাড়ি দিয়ে কী করবি?”
“শাড়ি দিয়ে মানুষ কী করে মা? পরব।“
“কারো বিয়ে?”
“হু। কাল বিয়ে। আজ গায়ে হলুদ। কোন শাড়িটা পরে যাই বলো তো?”
রেহেনা বেগম আলমারি থেকে বেশ কয়েকটা সুতির শাড়ি বের করে বিছানার ওপর রাখেন।
“দেখ কোনটা পরবি।“
“তুমি চয়েস করে দাও।“
রেহেনা বেগম শাড়ি বাছতে বাছতে বলেন,
“কার বিয়ে সেটা তো বললি না।“
“তুর্যর প্রাক্তনের।“
রেহেনা বেগম চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,
“কী বললি?”
“ঠিকই শুনেছ।“
“তুই ওর প্রাক্তনের বিয়েতে যাবি কেন?”
“শুধু আমি একা নই। সাথে তুর্য আর তিথিও যাবে। তুর্য তো আসতে চাইবে না আমি জানি।হাজার হোক এক্স তো! তাই তিথিকে বলেছি যেভাবে পারো নিয়ে আসবে।“
“তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?”
“আমি একদম ঠিক আছি। ওহ্ ভালো কথা। আজ তিথি এসেছিল বাসায়?”
“হ্যাঁ। তোকে তো বলতেই ভুলে গেছি। মেয়েটা কান্নাকাটি করে মাফ চাইল। তোর সাথে দেখা হয়েছিল?”
“হুম। ওই তো বলল বাড়িতে এসেছিল। এখন বলো প্লিজ কোনটা পরব।“
অনেকগুলো শাড়ি ঘেটেঘুটে কলাপাতা কালার একটা শাড়ি বের করেন তিনি। পরীর গায়ে রেখে বলেন,
“এই শাড়িটায় তোকে অনেক সুন্দর লাগবে।“
পরী হেসে বলে,
“তাহলে এটাই কনফার্ম।“
.
সন্ধ্যার আজানের পর রেডি হয়ে নিয়েছে পরী। রেডি বলতে শুধু শাড়িটা পরেছে। মুখে হালকা পাউডার, চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপস্টিক। রেহেনা বেগম খোঁপা করে দিয়ে তাতে গাজরা পরিয়ে দিয়েছেন। পরী বারণ করলেও তিনি শোনেননি। উপরন্তু দু’হাতে কাঁচের কালো চুড়িও পরিয়ে দিয়েছেন।
এখন শুধু তুর্যর আসার অপেক্ষা। বেশ অনেকক্ষণ মায়ের সাথে গল্পগুজব করার পর পরীর ফোনের স্ক্রিনে তিথির নাম্বারটা ভেসে ওঠে। পরী ফোন রিসিভ করে বলে,
“বলো।“
“আমি আর ভাইয়া তোমার বাড়ির নিচে আছি। আসো তাড়াতাড়ি।“
“আমি আসছি এখনই।“
কল কেটে পার্সটা বিছানার ওপর থেকে নিয়ে মাকে বলে,
“আমি আসছি মা।“
“সাবধানে যাস। আর বেশি রাত করিস না।“
“আচ্ছা। তুমি ভাইয়াকে একটু ম্যানেজ করে নিও।“
“ঠিকাছে।“
পরী দপাদপ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। বাড়ির বাইরে গিয়ে দেখে তিথি তুর্যর হাত পেঁচিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তিথির পরনে কালো একটা গাউন। তুর্য কালো প্যান্ট আর সাদা হাফ স্লিভ টি-শার্ট পরে আছে। চোখেমুখে রাগ আর কষ্টের ছাপ। পরী এগিয়ে বলে,
“দেবদাসের মতো মুখ করে আছেন কেন?”
তুর্য চোখ রাঙিয়ে বলে,
“তুমি কি প্রতিশোধ নিচ্ছ?”
“কীসের প্রতিশোধ?”
“তোমাকে হার্ট করেছিলাম বলে তারই প্রতিশোধ নিচ্ছ এখন।“
পরী হালকা হেসে বলে,
“এইসব প্রতিশোধ আমার ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না। আমি শুধু চাই, আপনি রিনির কাছে হেরে না যান। নাহলে আমারও এত দায় পড়েনি যে ঘটা করে আপনার এক্সের বিয়েতে যাব।“
তুর্য কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। পরী তিথির হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
“এই শার্টটা কি তোমার?”
“আরে না! ভাইয়ার। সেই যে পেছনে নিয়ে ঘুরছি। পরছেই না।“
“দাও আমায়।“
পরী তিথির থেকে শার্টটা নিয়ে তুর্যর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“কোনো রকম টুশব্দ করা ছাড়াই শার্টটা পরে নিন।“
আশ্চর্য হলেও সত্যি তুর্য বিনাবাক্যে শার্টটা পরে। আহা! সাদা শার্টে কী সুন্দরই না লাগছে! বোতাম লাগাতে গেলে পরী ধমক দিয়ে বলে,
“বলদ! বোতাম লাগান কেন? এক্সের বিয়েতে যাচ্ছেন কই পাঞ্জাবি পরে আসবেন তা না! এসেছেন শার্ট পরে। তাও আবার এখন আনস্মার্ট সাজতে চাইছেন। ভেতরে তো টি-শার্ট আছেই।“
তুর্য এবারও কোনো কথা বলল না। পরীও আর সময় নষ্ট না করে হাঁটা শুরু করে। মেইন রোডে গিয়ে বাসে ওঠে তিনজনে।
রিনির গায়ে হলুদের জন্য জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করা হয়েছে। প্যান্ডেলের আশেপাশে মানুষজন গিজগিজ করছে। রিনির মেয়ে ফ্রেন্ডস, কাজিনরা সবাই হলুদ শাড়ি পরেছে। ছেলেরা পরেছে হলুদ পাঞ্জাবি। রিনি হলুদ শাড়ি আর হলুদ ফুলে সেজেছে। দেখতে সত্যিই ব্রাইট লাগছে। বান্ধবীদের সাথে হাসাহাসি করছিল রিনি।
প্যান্ডেলের মুখে তুর্য, পরী আর তিথিকে দেখে রিনির হাসি উবে যায়। চোখগুলো বড় বড় সাইজের হয়ে যায়। বিশ্বাসই করতে পারছে না ওরা রিনির গায়ে হলুদে এসেছে। রিনির মুখ এমন ফ্যাকাশে হতে দেখে পাশের মেয়েরা ওর দৃষ্টি লক্ষ্য করে সামনের দিকে তাকায়। এদের মধ্যে রিনির কয়েকজন বান্ধবী শুধু তুর্যকে চেনে। তারাও বেশ অবাক হয়। পরী হাসি হাসি মুখে তুর্যকে নিয়ে এগিয়ে যায়। রিনির সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আপু।“
রিনি জোরপূর্বক হাসে। পরী লক্ষ্য করে রিনির অস্থিরতা। বলে,
“আরে আপু তুমি ঘাবড়ে যাচ্ছ কেন? তুমি কি আশা করোনি আমরা আসব?”
রিনি আমতা আমতা করে বলে,
“না, না। তা কেন!”
পরী হেসে বলে,
“তা না হলেই ভালো। তাছাড়া তুমি প্রাক্তন হয়ে যদি বিয়েতে তুর্যকে ইনভাইট করতে পারো। তাহলে তুর্য তোমার প্রাক্তন হয়ে আসতে পারবে না কেন বিয়েতে?”
পরীর এই কথায় রিনি বেশ অপমানিত হলো বোঝা গেল। পরী মুখে হাসি বজায় রেখেই বলে,
“যাই হোক! বেশি কিছু না বলি।“
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়। একে একে সবাই রিনিকে হলুদ মাখাচ্ছে। রিনির মুখের হাসিটা কৃত্রিম। বারবার তুর্যর দিকে তাকাচ্ছে সকলের দৃষ্টির অগোচরে। সেটা ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়। রিনির মা হাসি হাসি মুখে পরীর দিকে তাকিয়ে বলো,
“এসো তোমরাও হলুদ দাও।“
তিথি এগিয়ে যায় রিনিকে হলুদ মাখানোর জন্য। পরী তুর্যকে ফিসফিসিয়ে বলে,
“চলুন।“
তুর্যও ফিসফিস করে বলে,
“তোমার যেতে হলে যাও। আমি এখানেই থাকব।“
তিথির হলুদ দেওয়া শেষ হলে তিনি আবার পরীকে ডাকেন। পরী এবার তুর্যকে জোর করেই টেনে নিয়ে যায়। পরী আগে রিনির গালে হলুদ মাখিয়ে তুর্যকে বলে হলুদ দিতে। তুর্য এবার নিজের ওপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে সবার সামনেই বলে,
“কোনো বেঈমানের গায়ে হলুদ দিতে আমার রুচিতে বাঁধে। আমি আজ ওর গায়ে হলুদে এসেছি শুধু তোমারই জন্য। না হলে ওর মুখও দেখতাম না আমি।“
কথা শেষেই তুর্য বেরিয়ে যায় বিয়ে বাড়ি থেকে। উপস্থিত সকলেই নিশ্চুপ। অপমানে, লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে রিনি। পরী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রিনির উদ্দেশ্যে বলে,
“তোমাকে অপমান করার উদ্দেশ্য আমার ছিল না আপু। তবে তুমি অনেক এক্সেস করে ফেলেছ। বিয়ে করছ ভালো কথা! কীভাবে আবার তুর্যকে তোমার বিয়েতে ইনভাইট করো? এতে যে সে কতটা হার্ট হয়েছে তুমি বোঝো না? অবশ্য তোমার ইনটেনশন তো এটাই ছিল তুর্যকে হার্ট করা। কিন্তু ফলাফল কী হলো দেখলে তো? তুর্য তোমায় এত ঘৃণা করবে জানতাম না। তাহলে অন্তত ওকে সত্যিই এখানে আনতাম না। কাল তোমার বিয়েতেও আসতে পারছি না দুঃখিত। আমার আর তুর্যর পক্ষ থেকে উপহার পাঠিয়ে দেবো।
সর্বশেষ বলব, নতুন জীবন শুরু করছো। অন্তত যার জীবনের সাথে জড়াচ্ছ তার সাথে প্রতারণা কোরো না। শুভকামনা রইল তোমাদের জন্য।“
এরপর পরীও নিশ্চুপে বেরিয়ে এলো। তুর্য একটা গাছের সাথে কনুই ঢেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরী আর তিথিকে দেখে বলে,
“চলো।“
সারা রাস্তা তিনজনই নিশ্চুপ ছিল। গাড়ি থেকে নেমে তুর্য আর তিথি পরীকে পরীর বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। বাড়ির সামনে এসে পরী তুর্যর দিকে তাকিয়ে বলে,
“যে ভালোবাসায় প্রতারণার ছোঁয়া থাকে সেই ভালোবাসা আগলে রেখে কষ্ট পাবেন না। সেই ভালোবাসাকে আগলে রাখতে শিখুন যে আপনার ভালোবাসা আগলে রাখার যোগ্য। সঠিক মানুষটির সঠিক ভালোবাসা চিনে নিতে শিখুন।
আসছি। ভালো থাকবেন।“