শীতে কাঁপতে কাঁপতে ছাদে আসে প্রিয়ম। ঠান্ডা হাতে পরীর গালে চিমটি দিয়ে বলে,
“কীরে তুই ছাদে কেন?”
পরী ব্যথায় চোখমুখ কুঁচকে ফেলে। গালে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
“খবিশ! এভাবে চিমটি দিলা কেন?”
“ওমা! গাল লাল হয়ে গেছে নাকি?”
“হুশ! যাও সরো।“
প্রিয়ম লুকিয়ে রাখা অন্য হাতটা পরীর মুখের সামনে ধরে। প্রিয়মের হাতে দুটো কোণ আইসক্রিম। পরীর চোখমুখ খুশিতে চকচক করে ওঠে। কিন্তু প্রিয়মের সামনে রাগী ভাবটা ধরেই রাখে। প্রিয়ম হেসে হেসে বলে,
“আম্মুর রাগিণী কি আমার উপর রাগ করেছে?”
“একদম রাগিণী ডাকবা না আমায়। এটা শুধু আম্মু ডাকবে।“
“এজন্যই তো বললাম আম্মুর রাগিণী।“
“তুমি আমার সাথে কথাই বলবা না।“
“আচ্ছা আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বল। তাহলে আর তোর সাথে কথা বলব না যা।“
পরী অন্যদিকে মুখ রেখেই বলে,
“পারব না।“
প্রিয়ম খুব ভালো করেই জানে পরী একবার ওর মুখের দিকে তাকালেই এই মেকি রাগটা ধরে রাখতে পারবে না। খলখলিয়ে হেসে ওঠবে। এজন্যই পরী প্রিয়মকে ফায়দা লুটার সুযোগ দিচ্ছে না। প্রিয়ম বলে,
“চল একটা গেম খেলি।“
পরী নিশ্চুপ।
“কীরে কথা বলবি না?”
পরী এখনো নিরব। প্রিয়ম বলে,
“যে আমার সাথে কথা বলবে না সে গাধার বউ।“
পরী এবার দুমদাম কিল বসায় প্রিয়মের কাঁধে আর পিঠে। প্রিয়ম হাসতে হাসতে বলে,
“ভালোই লাগছে। মার তো নয় মনে হচ্ছে কেউ ম্যাসাজ করে দিচ্ছে।“
প্রিয়মের হাসি দেখে পরী আরো রেগে যায়। প্রিয়ম হাসতে হাসতেই পরীর দু’হাত চেপে ধরে আইসক্রিম দেয় আর বলে,
“পরে মারিস। আগে খা।“
“খাব না।“
“তাহলে ফেলে দে।“
“তুমি দাও।“
“আচ্ছা যে আইসক্রিম না খাবে সে বলদের বউ।“
পরী রাগে প্রিয়মের হাতে খামচি দিয়ে বলে,
“আরো বলবা গাধা, বলদের বউ?”
“ওরে বাবা! ছাড়।আর বলব না। নোখ নাকি কোদাল!”
পরী হাত ছেড়ে দিয়ে চোখ পাকিয়ে বলে,
“কী বললে?”
“কিছু বলিনি। বলেছি নোখগুলো সুন্দর।“
পরী ভেংচি কেটে আইসক্রিম খাওয়া শুরু করে। প্রিয়ম বলে,
“আচ্ছা এই শীতের মধ্যে যে আমি তোকে আইসক্রিম এনে দিলাম এটা যদি আব্বু বা আম্মু জানে তাহলে তো আমার বারোটা বাজবে।“
“না বললে জানবে কী করে?”
“তা ঠিক। কিন্তু আমি যে আইসক্রিম এনে দিলাম কেন সেটা তো জিজ্ঞেস করলি না?”
“কেন আবার? আমি পছন্দ করি তাই।“
প্রিয়ম এবার পরীর মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
“যা ভাগ! আসছে।“
“এভাবে বললে ক্যান?”
“আইসক্রিম হচ্ছে ঘুষ।“
“কীসের ঘুষ?”
“তোকে আমার একটা কাজ করে দিতে হবে।“
“কী?”
“আব্বু-আম্মুকে আমার বিয়ের কথা বলতে হবে।“
পরী চোখ বড় বড় করে বলে,
“কী! বিয়ে?”
“হু।“
“প্রেম-পিরিতি যে করো তা তো সারাক্ষণ তোমার ফোনে ফুসুরফাসুর করে কথা বলা দেখেই বুঝেছি। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বিয়ে কেন?”
“ওর বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দিতে চাচ্ছে।“
“ভাইয়া এখনই বিয়ে কইরো না তুমি। তোমার বিয়ে নিয়ে আমার কত স্বপ্ন। নাচব,গাইব। কত মজা করব।“
“করবি। বারণ করল কে?”
“ধুর! সামনেই পরীক্ষা। টেনশন নিয়ে কি আনন্দ করা যায়?”
“সমস্যা নাই। ফেইল করলে বিয়ে দিয়ে দেবো।“
“ভাইয়া!”
প্রিয়ম হেসে বলে,
“শোন না! আব্বু-আম্মুকে বল প্লিজ। আমি তো আর নিজের বিয়ের কথা নিজে বলতে পারব না।“
“উমম! আচ্ছা ঠিকাছে কাল আম্মুকে বলব।“
প্রিয়ম খুশিতে পরীর গাল টেনে দিতে গেলে পরী দু’কদম পিছিয়ে যায়।বলে,
“খবরদার! একবার ব্যথা দিছো।“
প্রিয়ম গা দুলিয়ে হাসা শুরু করে। হাসতে হাসতেই বলে,
“আচ্ছা ভেতরে চল।“
“চলো।“
শীতের ঘন কুয়াশায় সূর্যটা ঢেকে আছে। আজ শীতের পরিমাণটা খুব। লেপের নিচ থেকে মাথাই বের করতে ইচ্ছে করছে না। ফোনের ডাটা অন করা। তখনই ফোনটা শব্দ করে একটা ম্যাসেজ ভেসে ওঠে। সব আলসেমি ত্যাগ করে তুর্য লেপের ভেতর থেকে মাথা বের করে বালিশের পাশ থেকে হাতরিয়ে ফোন বের করে। লক খুলতেই ভেসে ওঠে পরীর ম্যাসেজ।
“কে আপনি?”
মনে মনে তুর্য ভীষণ খুশি হয়। আবার একটু অভিমানও হয়। মেয়েটা কি আমার ভয়েসও ভুলে গেছে? পরেই আবার এটা শান্তনা দেয় যে, গানের ভয়েস আর এমনিতে ভয়েস তো অনেকটাই আলাদা। তাই না বোঝাটাই স্বাভাবিক। তুর্য মজা করে লিখে,
“বলো তো আমি কে?”
সাথে সাথেই সীন করে পরী। রিপ্লাই করে,
“আমি কী করে বলব?”
“গেজ করো।“
“আইডি তো ফেক মনে হচ্ছে।“
“কিন্তু মানুষটা রিয়েল।“
“তো কে আপনি শুনি?”
“যদি বলি তোমার মনের রাজকুমার?”
পরী হাসির ইমুজি দিয়ে রিপ্লাই করে,
“তাই নাকি? কোন রাজ্যের রাজকুমার?”
“তোমার মনের রাজ্যের।“, লিখে শেষে একটা লাভ ইমুজি দেয়।
পরী লেখে,
“আই নো হু ইউ আর! বাট ইউ আর সো লেট। আ’ম অলরেডি এঙ্গেজড উইথ মাই প্রিন্স। সো বাই ফরেভার।“
তুর্য ম্যাসেজটা দেখে কিছুক্ষণ নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে। যখনই টাইপ করতে যাবে তখনই পরী ব্লক করে দেয়।
তুর্য চোখ মেলে লাফিয়ে ওঠে। শোয়া থেকে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে আশেপাশে তাকায়। পরিস্থিতি ও সময় বোঝার চেষ্টা করে। এটা কী ছিল? স্বপ্ন? তুর্য দ্রুত বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নেয়। ডাটা অন কিন্তু পরীর কোনো ম্যাসেজ আসেনি। এমনকি ম্যাসেজটা তো সীনই হয়নি। তাহলে এটা কেমন স্বপ্ন ছিল! গলাটা শুকিয়ে গেছে তুর্যর। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে ৩:৫৮ বাজে। পরীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার কোনো দিগ-দিগান্তই খুঁজে পাচ্ছে না তুর্য। হয়তো কাল ওকে নিয়ে একটু বেশিই ভেবেছে তাই স্বপ্নেও দেখেছে। আচ্ছা ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়?
তুর্য বিছানা ছেড়ে ওঠে এক গ্লাস পানি পান করে। কিছুক্ষণ রুমের মধ্যে পায়চারি করে।মনটা ভীষণ ছটফট করছে। অজানা আশঙ্কায় ঘচঘচ করছে ভেতরটা। এমন হওয়ার মানে কী? এটা স্বপ্ন ছিল নাকি দুঃস্বপ্ন! তবে যাই হোক না কেন, এবার অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে যেতে হবেই। সময় বিলক্ষণ না করে আকুপাকু করা মন নিয়েই তুর্য আবার বিছানায় গড়িয়ে পড়ে।
.
.
সকালে ঘুম থেকে ওঠেই মায়ের পিছুপিছু ঘুরছে পরী। কয়েকবার করে প্রিয়মের কথাটা বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। মনে হচ্ছে ভাইয়ের না বরং নিজেরই বিয়ের ঘটকালি করতে যাচ্ছে। নয়ছয় বুঝিয়ে নিজের মনকে ধাতস্থ করে পরী বলে,
“মা একটা কথা বলতাম।“
রেহেনা বেগম তরকারি নাড়তে নাড়তে বলেন,
“বল।“
“ভাইয়ার বিয়ে দেবে কবে?”
তিনি পরীর দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে মুচকি হেসে বলেন,
“কেন? তাহলে তোর পথটা ক্লিয়ার হয়ে যায় এজন্য?”
“ধুর না! কী যে বলো তুমি।“
“আরে লজ্জা পাচ্ছিস কেন? কেউ থাকলে বল।“
“কেউ নেই। তুমি আমার কথাটা সিরিয়াসভাবে নাও প্লিজ।“
“আচ্ছা বল শুনছি।“
“ভাইয়া একটা মেয়েকে ভালোবাসে। মেয়েটার বাড়ি থেকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে।তাই ভাইয়া আমায় বলেছে তোমাদের বলতে।“
“মেয়ে কী করে?”
“তা তো জানি না আমি। তুমি ভাইয়ার থেকে ডিটেইলসে সব জেনে নাও। তবে ভাইয়ার পছন্দ তো! খারাপ হওয়ার কোনো চান্স নেই।“
“ঠিকাছে। ওর সাথেই কথা বলব আমি। কলেজে যাবি না আজ?”
“হ্যাঁ।“
“যা রেডি হয়ে নে।আমি খাবার দিচ্ছি টেবিলে।“
“আচ্ছা।“
পরী কিচেন থেকে বের হতেই প্রিয়ম হাত টেনে ড্রয়িংরুমে নিয়ে যায়। বলে,
“বলছিস আম্মুকে? কী বলল? রাজি?”
“এত উতলা হচ্ছো কেন? আম্মু বলেছে তোমার সাথে কথা বলবে। ভয় পেয়ো না তুমি। আম্মু রাজি হবে দেখিও।“
“তুই যখন বলেছিস মা রাজি হবে তার মানে ৯৯% শিওর রাজি হবে।“
“কেন বলো তো?”
“কারণ তুই আম্মুকে অনেক ভালো বুঝিস।“
উত্তরে পরী ভাব নিয়ে হাসে। প্রিয়ম পরীর কাঁধে হাত রেখে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
“যদি বাড়িতে সবাই রাজি হয়ে যায়। তাহলে তুই যদি কখনো কাউকে ভালোবাসিস তো তোর বিয়ের ব্যাপারেও সবাইকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।“
পরী হেসে বলে,
“কথাটা মাথায় রাখলাম।“
তিথি কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল। তাহমিনা বেগম রুমে এসে বলেন,
“আজ কলেজে যাওয়া লাগবে না।“
“কেন?”
“তুর্য ফোন দিয়েছিল। বলল আজকে আসবে।“
তিথি খুশিতে লাফিয়ে ওঠে বলে,
“সত্যি?”
“হ্যাঁ। একবার আসুক। আর যেতে দিব না।“
“ভাইয়াকে এবার বিয়েটা করিয়েই দাও। তাহলে দেখবে আর বউ রেখে যাবে না।“
মেয়ের কথায় হেসে ফেলেন তাহমিনা বেগম। এতদিন পর তুর্য আসবে বলে ভালোমন্দ রান্নার ব্যবস্থা করেন।
.
শীতের সময় বলে কুহেলিকায় আকাশ গুমোট মেরে আছে। আকাশ দেখে বোঝাই যাচ্ছে না দুপুর নাকি বিকেল। ক্লাসে জানালার পাশেই বসেছে পরী। গায়ে সুয়েটার থাকলেও জানালা দিয়ে আসা বাতাস শিরশির করে শরীরে প্রবেশ করছে। পরী বেঞ্চে হাত রেখে হাতের তালুতে গাল রেখে বাইরে আকাশের দিকেই তাকিয়ে আছে। তুর্যর কথা মনে পড়ে শুষ্ক ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুঁটে ওঠে।
মেহনুবা কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
“পাপা খাবি পরী?”
পরী আকাশ থেকে দৃষ্টি নামিয়ে পাশে থাকা মেহুর দিকে তাকায়। কপাল কুঁচকে বলে,
“পাপা খাব মানে?”
“পাপা কাপ কেক।“, বলে ব্যাগের চেইন খুলে পরীকে দেখিয়ে বলে,
“এই দেখ কতগুলো নিয়ে আসছি।“
“ক্লাসে বসে বসে কেক খাব?”
“তো কী হইছে? এমন ভাব ধরতেছিস যেন কোনোদিন ক্লাসে খাস নাই তুই।“
মেহুর গলার স্বর বেড়ে যাচ্ছে শুনে পরী মেহুর মুখ চেপে ধরে বলে,
“আস্তে বল শালী! স্যার শুনলে মাইর মাটিতে পড়বে না।“
মেহু পরীর হাত সরিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলে,
“রাখো মিয়া! তোমার ভাবসাব তো সুবিধার লাগে না। প্রেমে-ট্রেমে পড়ছোস নাকি হ্যাঁ?”
“হ। তোর জামাইর প্রেমে পড়ছি। সতীন বানাবি?”
“ধুর! যা। আমার ছোট দেবর আছে। ওর বউ হলে বল।“
“হুস।“
“হুস ফুস না করে কেক খা।“
তিনটার দিকে কলেজ ছুটি হয়। কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়ে মহা মুসিবতে। কোন মন্ত্রী নাকি আসছে তাই এদিকে সব গাড়ি বন্ধ। হাতে গোনা কয়েকটা বাস আসে তাও যাত্রীভর্তি। ছেলেরা ওভাবেই ঝুলেঝুলে যেতে পারলেও মেয়েরা পড়েছে বিপাকে। তবুও সবাই আশা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে যদি কোনো গাড়ি পায়। কিন্তু বিধিবাম! গাড়ির কোনো খবর নেই। কয়েকজন দল বেঁধে হাঁটা শুরু করে। এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে হাঁটাই ভালো। মেহু ও পরী ওদের ক্লাসমেট বেশ কয়েকজন মেয়েও একটা দল বানিয়ে গল্প করতে করতে হাঁটা শুরু করে। কিছুক্ষণ সময়টা ভালো লাগলেও এরপর আর পা চলতে চায় না। কয়েকজন রাস্তায় বসেই পড়ে। হাঁপিয়ে আবার হাঁটা শুরু করে। ওদের মধ্যে সোনালী বলে,
“চল ডেয়ার গেম খেলি। তাহলে দেখবি ফাইজলামি করতে গিয়ে মনেই থাকবে না পায়ে ব্যথার কথা।“
কয়েকজন রাজি হলো। যারা একটু বিপক্ষে ছিল তাদেরও অবশেষে রাজি হতে হয়। প্রথম ডেয়ার সোনালীই নেয়। সামনেই একটা বাদামের দোকান। একজন বিক্রেতা ভ্যানে করে বাদাম ভাজা, বুট ভাজা, ছোলা ভাজা বিক্রি করছে। তো ডেয়ারটা হলো বিক্রেতার সাথে কথা বলতে বলতে তার দৃষ্টির অগোচরেই বাদাম চুরি করতে হবে। কী সাংঘাতিক ডেয়ার ভাবা যায়? ধরা পড়লে নিজের সাথে কলেজের মান-সম্মানও যাবে। সবাই আতঙ্কে থাকলেও সোনালী সেটা পানিভাত মনে করে সত্যি সত্যিই এপ্রোনের পকেট ভর্তি করে বাদাম ভাজা নিয়ে আসে। সবাইকে বাদাম ভাগ করে দিয়ে বলে,
“আমি ডেয়ার পূরণ করেছি। এবার মেহুর পালা।“
মেহনুবা আমতা আমতা করে বলে,
“ভাই আমি পরে। বাকিরা আছে। ওদের দে।“
বাকিরা জোর গলায় বলে,
“হবে না। তোকেই এখন ডেয়ার নিতে হবে।“
মেহু অসহায় চাহনী মেলে ধরে বলে,
“আচ্ছা। ডেয়ার দে।“
ওদের মধ্যে লিমা বলে,
“ঐযে চায়ের দোকানে কালো শার্ট পরা কিউট ছেলেটাকে দেখছিস। ওর নাম্বার এনে আমায় দিবি।“
“এটা কেমন ডেয়ার ভাই? আমি ঐ পোলার নাম্বার চামু?”
“এইটাই ডেয়ার। যাও সোনা।“
মেহু অসহায় চোখে তাকায় পরীর দিকে। পরী মুখ টিপে টিপে হাসছে। তা দেখে মেহু রাগে ফুঁসতে থাকে। মনে মনে বলে,
“তোর হাসি আমি ছুটাচ্ছি দাঁড়া।“
মেহু এগিয়ে যায় ঐ ছেলেটার দিকে। দোকানে তেমন মানুষজন নেই। মেহু মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলে,
“একটু কথা বলতে পারি আপনার সাথে?”
ছেলেটা মেহুর দিকে তাকিয়ে বলে,
“জি।“
“ইয়ে মানে! আপনি অনেক সুন্দর।“
ছেলেটা অবাক হয়ে বলে,
“মানে?”
নিজের বোকামির জন্য নিজেকে মনে মনে নিজেই গালি দিচ্ছে মেহু। ছেলেও পটাতে পারিস না ছিহ্! নিজেকে এভাবে আরো বিভিন্ন কিছু বলে ধিক্কার দিচ্ছে। মেহু হাতের আঙুল মোচড়াতে মোচড়াতে বলে,
“আপনার নাম্বারটা দিবেন?”
“আপনি কে বলুন তো? কোন কলেজের ছাত্রী?”
মেহু এবার এপ্রোনের পকেট হাত দিয়ে ঢেকে বলে,
“কলেজ দিয়ে কী করবেন? যা চাইছি দেন।“
“অদ্ভুত মেয়ে তো আপনি।“
“কী করেছি আমি?”
“আমার নাম্বার দিয়ে কী করবেন?”
মেহু মনে মনে বলে,
“তোর নাম্বার গুলিয়ে ঐ বেয়াদব লিমাকে খাওয়াব। আমার বয়ফ্রেন্ড আছে শালা। ডেয়ার যে নিছি সেটাও তো বলতে পারছি না বাল!”
মনে মনে ভেবেও কোনো উত্তর পেল না। অবশেষে মেহুর বুদ্ধির ভাণ্ডার খোলে। চিন্তিত মুখে বলে,
“মিস্টেক হয়েছে। আসলে নাম্বার না। ফোনটা লাগবে।“
“কেন?”
“বাড়িতে একটু ফোন দিতাম। আসলে গাড়ি চলছে না তো। তাই ফোন দিয়ে বলতাম যে আসতে লেট হবে।“
এবার ছেলেটা কিছু না ভেবেই সাহায্যের জন্য ফোনটা এগিয়ে দেয়। মেহু ছেলেটার নাম্বার বের করে পটাপট মুখস্থ করে নেয়। ফোনটা ছেলেটার দিকে এগিয়ে দিয়েই হাসি দিয়ে চলে আসে। ছেলেটা কিছু না বুঝেই তাকিয়ে থাকে। মেহু তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে কলম বের করে জপতে থাকা নাম্বারটা হাতের তালুতে লিখে নেয়। তারপর ওদের কাছে গিয়ে লিমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“এই নে ধর ঐ ছেলের নাম্বার। আমারও ডেয়ার ডান।“
লিমা খুশিতে মেহুর গালে চুমু খায়। মেহু পরীর দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“এবার আমি ডেয়ার দেবো।“
লিমা জিজ্ঞেস করে,
“কাকে?”
“পরীকে।“
পরী অবাক হয়ে তাকায়। মেহু পাত্তা না দিয়ে বলে,
“চল হাঁটতে থাকি। তারপর ডেয়ার দিচ্ছি।“
বেশ কিছুদূর এগিয়ে মেহু নিজে থেমে সবাইকে থামতে বলে। পরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“ঐযে মুদি দোকানটা দেখছিস। তার পাশেই যে হ্যান্ডসাম পুলিশটা আছে তাকে আই লাভ ইউ বলে ফ্লাই কিস ছুঁড়ে দিবি। আর এই ডেয়ারটা পূরণ করতে হবে হেঁটে যেতে যেতে।“
এমন ডেয়ারের কথা শুনে শুধু পরীই নয় বরং উপস্থিত সকলেরই চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। পরীর তো অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা। আর কোনো ডেয়ার পেলো না হারামিটায়? সবশেষে পুলিশ! পরী কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
“তুই আমার বেষ্টু হয়ে এমন বিপজ্জনক ডেয়ার দিতে পারলি?”
মেহু বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বলে,
“তখন আমায় বিপাকে পড়তে দেখে মুখ টিপে হাসার সময় মনে ছিল না?”
“না হয় একটু হেসেছিই! তাই বলে এমন ডেয়ার?”
“জি ম্যাম।“
“এই ডেয়ার চেঞ্জ করে দে ময়না পাখি প্লিজ। ঐ পুলিশে ধরতে পারলে আমায় জেলে নিয়ে যাবে রে।“
“নিয়ে গেলে যাবি।“
“তোর দিলে কি দয়ামায়া নাই?”
“ডেয়ারের সময় আবার কীসের দয়ামায়া? কীরে লিমা, সোনালী তোরা কিছু বলিস না কেন? আমরা তো ডেয়ার ঠিকই পূরণ করছি।“
এই পর্যায়ে সোনালী বলে,
“তাই তো! ঢং বাদ দিয়া যা ডেয়ার পূরণ কর।“
পরী চোখমুখ শক্ত করে বলে,
“আল্লাহ্ তোদের বিচার করবে দেখিস।“
এবার সকলেই মুখ টিপে হাসে। মেহু বলে,
“আমরা আগে আগে যাচ্ছি। তুই পেছন পেছন এসে ডেয়ার ডান করবি।
এই চল তোরা।“
সবাই সামনের দিকে এগোতে থাকে। পরী অসহায় হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। যাই হোক, না হোক ডেয়ার তো পূরণ করতেই হবে। দোয়া-দরুদ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে পরীও হাঁটা শুরু করে। দোকানের পাশাপাশি আসতেই পুলিশটার দিকে তাকিয়ে বলে,
“হেয় লাভ ইউ!”
তারপরই একটা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিয়ে যেই দৌঁড়াতে যাবে ওমনি থমকে যায় পরী। মাটি যেন পা দুটো আঁকড়ে ধরে রেখেছে। পুলিশের পাশে উল্টো পাশ ফিরে দাঁড়ানো ছেলেটা তুর্য ছিল। লাভ ইউ বলার সময়ই তুর্য ফিরে তাকিয়েছে আর তখনই পরী ফ্লাইং কিসটা দিয়েছে। পুলিশ আর তুর্য দুজনই হতবাক হয়ে পরীর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।