১৬ বছর বয়স | পর্ব – ১৭

12 Min Read

সুইটি অনেক রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমাকে কাচা চিবিয়ে খেয়ে নিবে। মেয়েটাকে সুন্দর মনে করেছিলাম। কিন্তু এখন মোটেও তা মনে হচ্ছে না। সুইটি দাতে দাত চিপে বলল, How dare you?!
কথাটা বলেই সুইটি আমাকে থাপ্পড় মারার জন্য হাত তুলতেই শাওন আমার হাত ধরে টেনে সরিয়ে নিল।
সুইটি আরো রেগে গেল। কিন্তু সেই রাগের সাথে একটা ব্যঙ্গ হাসি দিল। অর্থাৎ তার সহ্য হচ্ছেনা এসব। আমি শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন স্থির দৃষ্টিতে সুইটির দিকে তাকিয়ে আছে। সুইটি কিছু বলার আগেই সুমনা এসে আমার পাশে দাড়াল আর বলল, সুইটি দয়া করে এখানে সিন ক্রিয়েট করো না। অনেক হয়েছে। তোমার না এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে? তাও কেন শাওনের লাইফে নাক গলাচ্ছ?
আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম। তাহলে বিষয় টা কি দাড়ালো? কয়দিন পরই ত মনে হয় বিয়ে হবে। তাও এই অবস্থা!
সুইটি রাগে গজগজ করে সুমনার দিকে তাকালো। তারপর একবার আমাদের হাতের দিকে তাকালো কারন শাওন আমার হাত এখনো ধরে আছে। আমি সুইটির দৃষ্টি বরাবর খেয়াল করে নিজের হাতের দিকে তাকালাম। তারপর শাওনের দিকে তাকালাম। শাওন ত সোজা রাগী চোখে সুইটির দিকে তাকিয়ে আছে। সুইটি আর কিছু না বলে চলে গেল। আমি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম কিন্তু শাওন আরো শক্ত করে ধরল। আমি ধরে থাকা শাওনের হাতটা অন্য হাত দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম, কি করছেন আপনি! লাগছে আমার।
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে এসবের মধ্যে জড়াতে কে বলেছে?
আমি কিছু বলার আগেই সুমনা বলল, ও ত ঠিক ই করেছে।
শাওন আমার হাত ছেড়ে দিল। সুমনা বলল, অনেক হয়েছে এখন চল যাওয়া যাক।
গাড়িতে উঠে শাওন নিজের কোটটা খুলে পিছনের সীটে রাখল। আর টাই টা ঢিলে করে নিল। কারন পানিতে কোট সহ শার্টও কিছুটা ভিজেছে। সুমনা এসে আমার পাশের কাচে টোকা দিল। শাওন কাচ নামালো। সুমনা আমাকে বলল, আবার দেখা হবে। আজকের জন্য অনেক সরি। কি থেকে কি হয়ে গেল।
আমি হালকা হেসে বললাম, আবার দেখা হবে।
সুমনা শাওনের দিকে তাকিয়ে বলল, তোর মাথা ব্যথা গেছে? নাকি আমি ড্রাইভ করে দিয়ে আসব।
শাওন বলল, লাগবে না। পারব।
সুমনা আমার দিকে তাকিয়ে বলেন বলল, নিজের বরের খেয়াল রেখো।
আমি এই কথাটা শুনে বিব্রতকর দৃষ্টিতে সুমনার দিকে তাকালাম আর শাওন সুমনার দিকে ভ্রুকুচকে তাকালো।
তারপর সুমনা হাসিমুখে গুডনাইট বলে নিজের গাড়ির কাছে রওনা হলো। শাওন আবার কাচ উঠিয়ে দিতে যাওয়ার সাথে সাথে আমি ওনার হাত ধরে বললাম, এটা খোলা থাকুক না!
শাওন আমার দিকে তাকিয়ে তারপর নিজের হাতের দিকে তাকালো। আমি হাত সরিয়ে নিলাম। উনি আমার গায়ের দিকে তাকালেন। আমি বুঝতে না পেরে বললাম, কি?
“সীট বেল্ট” শাওন বলল।
আমি খেয়াল করলাম যে সীট বেল্ট পরিনি। তাড়াতাড়ি সীট বেল্ট লাগিয়ে নিলাম। শাওন গাড়ি স্টার্ট দিলো। যাক আজ জালানা খোলা পাওয়া গেল। অনেক সুন্দর বাতাস। বাইরে হাত বাড়িয়ে বাতাস অনুভব করতে লাগলাম। শাওন গম্ভীর গলায় বলল, হাত ভিতরে রাখো।
আমি ভ্রুকুচকে ওনার দিকে তাকালাম। শাওন আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার সামনে তাকালো। তারপর কাচ উঠিয়ে দিতে যেতেই আমি হাত ভিতরে রেখে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললাম, হ্যা রেখেছি। অফ করবেন না।
তারপর জালানা দিয়ে বাহিরে তাকালাম। বাতাস এসে নাক মুখে লাগছে। সত্যি অনেক ভাল লাগছে আজ। খোলা চুল গুলো বাতাসের কারনে উড়ে মুখে পরছে।
বাসায় ঢুকতেই স্নোবেল সোফা থেকে লাফ দিয়ে নেমে আমার কাছে দৌড়ে এলো। খুশিতে সে লেজ নাড়ছে আর লাফাচ্ছে। আমি হাটু ভাজ করে স্নোবেলকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। শাওন স্নোবেলের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিলো তারপর নিজের কোর্টটা সোফার উপর রেখে সোফায় বসে পরল। কিছুক্ষণ কপালের দুই পাশ দুই হাতের চার টা আঙুল দিয়ে চেপে ধরে তারপর সোফার পিছনে মাথাটা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল। আমি খেয়াল করে বুঝলাম যে এখনো মাথা ব্যথা আছে।
স্নোবেলকে ইশারায় চুপ করে বসতে বললাম। কিন্তু সে এটা বুঝতে পারছেনা। এটা শিখাই নি যে। সে ওভাবেই লাফাচ্ছে। তাও ভালো মুখ দিয়ে ঘেউ ঘেউ করছে না। আমি শাওনের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
তারপর সাত পাঁচ চিন্তা না করেই ওনার কপালে হাত দিলাম। শাওন ফট করে আমার হাতটা ধরে নিয়ে ওভাবেই চোখ খুলল।
আমি থমকে তাকালাম। শাওন আমার চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর বলল, কি করছ তুমি!
আমি একটা ঢোক গিলে থেমে থেমে বললাম, এটা… ক…করলে ঠিক হয়ে যায়… মাথা ব্যথা।
শাওন বলল, no need.
বলেই মাথা তুলতে গেল আমি সাথে সাথে ওনার দুই কাধ টেনে সোফার সাথে লাগিয়ে দিলাম। উনি মাথা আবার পিছনে হেলিয়ে বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, what the hell! কি করছ তুমি?
আমি ভ্রুকুচকে বলে উঠলাম, আপনার বাবা মা জন্মের সময় আপনার মুখে মধু দেয় নি? খ্যাটা খ্যাট ছাড়া কিছুই করতে পারেন না! তাই চুপ চাপ থাকুন।
শাওন কি বলবে বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইল। ওনার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে আমার নিজেরই ত কেমন কেমন লাগছে। শাওন ভ্রুকুচকে বলল,”কি করতে চাচ্ছ!”
আমি একটা ঢোক গিলে বললাম, “চোখটা একটু বন্ধ করেন ত!”
শাওন বলল, কেন?
আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, তাহলে আর কি! তাকিয়েই থাকুন।
বলেই এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। উনি মাথা তুলে বসলেন। এদিকে স্নোবেল এত সময় আমার মনোযোগ পাওয়ার জন্য পায়ের কাছে গা ঘেঁষে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। তাই আমি বসে স্নোবেলকে আদর করতে লাগলাম। শাওন উঠে নিজের রুমে চলে গেল। আমি আড়চোখে তাকালাম তারপর আবার স্নোবেলকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
রাতের দিকে টেলিফোন বেজে উঠল। আমি তখন ঘুমানোর জন্য মাত্র সোফায় বসেছি। ফোন তুলে কানে দিলাম। সুমনা ফোন করেছে।
“ঘুমাচ্ছিলে?” সুমনা জিজ্ঞেস করল।
আমি বললাম, “না। এখনো ঘুমাই নি।”
“আমাদের ট্যুরের বিষয় বলেছিলাম মনে আছে?”
আমি ফোনটা অন্য কানে নিয়ে বললাম, হ্যা আছে।
এই শুক্রবার যাব। রিসোর্ট বুক করে নিয়েছি। সব ফ্রেন্ডও ফ্রি। ভালো মত ব্যাগ গোছাও। আর আমি তোমার জন্য ড্রেস কিনব। মানে একসাথে কাল শপিং যাব, ওকে?
“কিন্তু…!”
সুমনা বলল,”কোনো কিন্তু না। কাল যাচ্ছি ব্যাস। কাল ছুটি আমাদের অফিস তাই শপিং যাব এটা ফিক্সড।”
পরদিন সকালে সুমনা এসে বাসায় কলিং বেল চাপ দিল। আমি সোফাতেই বসে স্নোবেলকে চুপ করতে বললে কিভাবে চুপচাপ বসে থাকতে হয় সেটা শিখাচ্ছিলাম। শাওন গিয়ে দরজা খুলে দিল। সুমনাকে দেখে শাওন বলে উঠল, তুই এখানে কেন?
-কেন? আসতে পারিনা নাকি!
বলেই সুমনা ঢুকে পরল। আমি সুমনাকে দেখে হাসিমুখে তাকালাম আর বললাম, কেমন আছ?
সুমনা আমার পাশে বসে স্নোবেলকে আদর করতে করতে বলল, আমি ভাল। এখন বলো, রেডি?
শাওন বুকের কাছে হাত গুজে তাকিয়ে আছে। আমি শাওনের দিকে তাকিয়ে আবার সুমনার দিকে তাকালাম।
শাওন সুমনাকে বলল, কিসের জন্য রেডি?
“শপিং এর জন্য রে। আজ আমরা শপিং যাচ্ছি।” সুমনা বলল।
শাওন কিছু বলতে যাবে এর আগেই সুমনা আবার বলল, তোর আপত্তি থাকলেও যাচ্ছি। না থাকলেও যাচ্ছি। বেশি সমস্যা হলে তুইও চল।
শাওন বলল, আমার যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।
সুমনা একটা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তাহলে আর কি! চল মিলা। আজ তোমাকে বসুন্ধরা ঘুড়ে দেখাব।
শাওন নিজের রুমে চলে গেল।
আমি সুমনার সাথে রওনা দিলাম। গিয়ে সেই বড় বসুন্ধরা শপিং মলে ঢুকলাম। বাবা গো এত বড় শপিং মল! আমি হা হয়ে গেলাম। অনেক সুন্দর।
সুমনা অনেক ওয়েস্টার্ন ড্রেস দেখাতে লাগল। কিন্তু আমি তার কোনোটাই নিতে রাজি না। আমি সুমনাকে থ্রি পিসের কথা বললাম। সুমনা তাতে রাজি না। আমি অনেক কষ্টে সুমনাকে বুঝিয়ে থ্রি পিস কিনলাম। কিন্তু সেগুলোর দাম শুনে আমার মরে যাওয়ার মত অবস্থা।
সুমনার একটা কার্ড ব্যবহার করেই সব কিনে নিল। আমি চোখ বড়সড় করে তাকিয়ে রইলাম।
বাসায় আসার সাথে সাথে টেবিলে আমরা দুপুরের খাবার প্রস্তুত পেলাম। স্নোবেল আমাদের দেখে খুশিতে দৌড়ে এলো। আমরা সোফার উপর সব ব্যাগ রেখে আমরা ফ্রেস হয়ে বসে পরলাম। সুমনা খাবার টেবিলে বসে গল্প আরম্ভ করল যে সাজেক গিয়ে কি কি করবে।
আমি অনেক আগ্রহের সাথে শুনছি। শাওন চুপ চাপ খাচ্ছে। আজ মেনুতে কুমড়ো পেলাম না এখনো। মনে হয় রাতে কুমড়ো হবে।
সুমনা খাওয়া শেষে বলল, এখন আমরা মুভি দেখব।
শোনার সাথে সাথে শাওন বলে উঠল, নিজের বাড়ি গিয়ে দেখ।
সুমনা বলল, কেন? তোর কি সমস্যা?
– ওসব মুভি এখানে চলবে না।
সুমনা ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, কোন সব মুভি?
শাওন সুমনার দিকে রাগী চোখে তাকালো। সুমনা বলল, “বেবি’স ডে আউট দেখব। এতে কি সমস্যা আছে তোর আবার?”
বলেই সুমনা হাসল লাগল। আমি শাওনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বুঝিনা ওনার আমার মুভি দেখাতে এত নাক গলানো লাগে কেন!
খাওয়া শেষ করে সুমনাকে চলে যেতে হলো। ওর নাকি কাজ আছে। আমি সব গুলো শপিং ব্যাগ খুলে ড্রেস গুলো বের করে করে সোফায় সাজাতে লাগলাম। তারপর একসাথে করে নিয়ে শাওনের রুমে উঁকি দিলাম। উনি বাথরুমে! যাক ভাল।
আমি তাড়াতাড়ি নিজের ল্যাগেজে খুলে সব গুলো জামা কাপড় রাখলাম। স্নোবেলও আমার পেছনে পেছনে চলে এসেছে। আমি ল্যাগেজ আবার ড্রেসিং টেবিলের সাইডে সরিয়ে রাখলাম। কিন্তু বের হতে যাব এমন সময় শাওনের টি-টেবিলে রাখা ফাইলটার দিকে চোখ পরল।
আমি অবাক হয়ে সেটা হাতে নিলাম। সেই হেয়ারস্টাইল এর লগো ডিজাইন এর ফাইল। নিউ কয়েকটা লগো এঁকেছে শাওন। তার মধ্যে লাস্ট এর দিকের টা তে একটা মেয়ে মাথার চুল পিছনে সব ঝুলিয়ে দিয়ে বসে আছে এমন একটা ডিজাইন। আমি সিওর এটা আমি। আমার মত চুল। তারচেয়ে বড় কথা আমি এভাবে চুল শুকাই ফ্যান ছেড়ে। ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎ পিছন থেকে শাওন বলল, আমার জিনিস তোমাকে ধরতে মানা করেছি।
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আমার মত করে আকা ডিজাইন দেখিয়ে বললাম, এটা আপনি আমাকে এঁকেছেন, তাই না?
শাওন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে আঁকতে যাব কেন?
বলেই ফাইলের দিকে হাত বাড়ালো। আমি সাথে সাথে ফাইল নিয়ে সরে এসে বললাম, মিথ্যুক।
শাওন কড়া চোখে তাকিয়ে বলল, এদিকে দাও ফাইল।
স্নোবেল আমাদের দুইজনের মাঝ বরাবর বসে একবার আমার দিকে একবার শাওনের দিকে তাকাচ্ছে।
আমি বললাম, আমাকে কেন এঁকেছেন?
“shut up.” শাওন রেগে বলল
আমি বললাম, কিসের Shut up!
শাওন আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে টান দিতেই আমি মাঝখানে বসে থাকা স্নোবেলের সাথে পায়ে বেধে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেললাম। কারন স্নোবেলের গায়ে যেন পা না লাগে সেই ভাবে পা ফেলতে গিয়েই শাওনের বুকে এসে পরলাম।

চলবে…

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।